বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৮

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৮
রানী আমিনা

পরদিন সকাল, আনাবিয়া ঘুম থেকে উঠে চিতার বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পায়চারী করছে ঘরময়৷ ফালাক ফেরিশা ঘুমিয়ে আছে এখনো।
চিতার বাচ্চাটা এখনো দুধের শিশু, কাঁচা মাংস ছোট ছোট পিস করে দিলেও খেতে পারবে কিনা সন্দেহ।
অন্য বাচ্চারা কেউ একে দেখেনি এখনো, একমাত্র ফারিশ ছাড়া এর অস্তিত্বের কথা আর কেউ জানতে পারেনি। কিন্তু ফারিশ বেচারা এসেই সেই যে ঘুমিয়েছে তার আর ঘুম ভাঙেনি।ভয় টয় পেয়ে ঘুম জমেছে ভালো তার৷
চিতা টা মেয়ে, আনাবিয়া ওর নাম রেখেছে লায়রা। লায়রার জন্য দুধ গরম করতে হবে শিগগিরই, ও উঠেই খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি জুড়ে দিবে নিশ্চিত।
এমন সময় নক পড়লো ওর দরজার কামরায়, বাইরে থেকে কোকোর আওয়াজ এলো,

“আসবো আম্মা?”
“আয় ”
অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথেই ভেতরে ঢুকলো কোকো, আনাবিয়া হাতের ইশারায় বসতে বললো ওকে। কোকো আনাবিয়ার কোলে থাকা চিতার বাচ্চাটিকে একবার দেখে নিয়ে বলল,
“আম্মা, মেয়েটার সম্পর্কে অ্যানিম্যাল টাউনে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই মেয়েটি প্রায় বছর দশ আগে জঙ্গলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলো, এরপর আর কখনো ফিরে আসেনি। এবং তাকে জঙ্গলে অনেকবার খুঁজেও কখনো আর পাওয়া যায়নি। সবাই ভেবেছিলো সে হয়তো কোনো হিংস্র পশুর পেটে চলে গেছে।
আর সাথের ছেলেটির বর্ণনা আপনি যেমন দিয়েছিলেন তেমনই বলেছিলাম কিন্তু ওরা এমন কাউকে চিনেনা বলল।”
আনাবিয়া নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ, বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ঠিক আছে, তুই যেতে পারিস এখন। বাইরে গিয়ে ফাতমা কে ডেকে দিবি, ও হয়তো রান্নাঘরে আছে।”
কোকো মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো বাইরে। কিছুক্ষণ পরেই শব্দ হলো দরজায়। আনাবিয়া ‘এসো’ বলতেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো ফাতমা। আনাবিয়ার কোলে এমন গোলগাল একটা চিতার বাচ্চা দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো ও, উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠলো,
“কি গোলুমোলু বাচ্চা! একে আপনি কোথায় পেয়েছেন শেহজাদী?”
“গতরাতে পেয়েছি জঙ্গলে, পায়ে আঘাত পেয়ে জঙ্গলের ভেতর পড়ে ছিলো। লায়রা নাম ওর। ঘুম থেকে উঠেই দুধ খুজবে নিশ্চয়, ওর জন্য একটু দুধ গরম করে রাখো ফাতমা।”
“ঠিক আছে শেহজাদী, আমি এখনি যাচ্ছি।”
বলেই চলে যেতে নিলো ফাতমা, কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
“ভুলে গেছিলাম শেহজাদী, আপনি যে বলেছিলেন জঙ্গলে পাওয়া মেয়েটি ঘুম থেকে উঠলে ডেকে দিতে, সে উঠেছে। আপনি বললেই আসতে বলবো এখানে।”
মেয়েটির কথা শোনা মাত্রই মুখের হাসিটা হঠাৎ মিলিয়ে গিয়ে সেখানে এসে ভর করলো কাঠিন্যতা। ফাতমা আবারও বলল,

“মেয়েটির ভেতর কোনো সমস্যা আছে হয়তো শেহজাদী। সারাক্ষণ কেমন জানি ভয়ে ভয়ে থাকছে, কারো সাথে কাল থেকে সে কোনো কথাই বলেনি, শুধু যা জিজ্ঞেস করেছি কোনো রকমে হু হা করে উত্তর দিয়েছে। আর আপনার নাম শুনলেই আঁতকে উঠছে ভয়ে। ও নিশ্চয় কোনো অপরাধ করেছে নইলে এভাবে ভয় পাবে কেন?”
আনাবিয়া এ ব্যাপারে কোনো কথা বললোনা। চিতার বাচ্চাটিকে ফাতমার কোলে দিয়ে বলল,
“মেয়েটিকে পাঠিয়ে দাও এখানে।

লায়রার দিকে খেয়াল রেখো, দুধটা দ্রুত গরম করে এনে ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাইয়ে দিও। ফালাক ফেরিশাকে উঠিয়ে নিয়ে যাও বাইরে। শার্লটকে বলো আমাকে এক কাপ কফি দিতে। আর হ্যা, ফালাক ফেরিশা লায়রাকে দেখলে কোলে নিয়ে চেপে টেপে ধরতে পারে, ওদের থেকে সামলে রেখো।”
ফাতমা লায়রাকে নিয়ে আনুগত্য জানিয়ে চলে গেলো বাইরে, একটু পর শার্লট এসে ফালাক ফেরিশাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো ফ্রেশ হতে। কামরা ফাকা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কামরার দরজায় নক পড়লো আবারও, আনাবিয়া ‘এসো’ বলতেই দরজা ঠেলে নম্র পায়ে ভেতরে ঢুকলো মেয়েটি। নত মুখে আনুগত্যের সাথে বলে উঠলো,
“আমায় ডেকেছিলেন শেহজাদী?”

আনাবিয়া চুলে চিরুনী করছিলো। হাত থেকে চিরুনী টা ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে রেখে দিয়ে ঘুরে দাড়ালো ও, মৃদু ঝমঝমে শব্দ হলো ওর চুলে, যেন এক ঝাক রেশমের সুতা বাড়ি খেলো একে অপরের সাথে৷
ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা অটোমান টা টেনে নিয়ে সোজা হয়ে বসলো আনাবিয়া, তারপর শুধালো,
“গতবার তোমার সাথে আমার যখন দেখা হয়েছিলো তখন তোমার সাথে একজন পুরুষ ছিলো, কে হয় সে তোমার?”
“জ-জ্বি আমার স্বামী, শেহজাদী।”
মাথা নুইয়ে রেখে উত্তর করলো মেয়েটি। আনাবিয়া মেয়েটির নতমুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার শুধালো,
“গতপরশু রাতে তুমি একা একা জঙ্গলে এসেছিলে, তোমার স্বামী কোথায় ছিলো?”
“উ-উনি আর বেঁচে নেই, মারা গেছেন!”
ভেজা কম্পিত গলায় বলল মেয়েটি, আনাবিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো, জিজ্ঞেস করলো,
“কিভাবে মারা গেছেন?”

নিরুত্তর রইলো মেয়েটি, শুকনো ঢোক গিলে হাত দিয়ে নিজের পোশাকের অংশবিশেষ প্রাণপণে মুঠি করে ধরে কচলাতে শুরু করলো। সে যে ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝতে বাকি রইলোনা আনাবিয়ার। আনাবিয়া টেবিল ওর ওপর থেকে কফিকাপ নিয়ে তাতে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে ফোশ করে একটা শ্বাস ফেলে শীতল স্বরে বলে উঠলো,
“তুমি যে অ্যানিম্যাল টাউনের মেয়ে নও সেটা তুমি যেমন জানো, তেমন আমিও জানি। পরিষ্কার করে বলো, তুমি কে? তোমার পরিচয় কি? কার হয়ে কাজ করছো? সেদিন জঙ্গলের ভেতর তোমরা কি করছিলে? সেদিন তোমার স্বামীর হাতে থাকা থলি থেকে রক্ত কেন পড়ছিলো? ওই কাঁচা হরিণের মাংস তোমরা কোথায় নিয়ে গেছিলে? তোমার স্বামী মারাই বা গেলো কিভাবে, এবং তোমার এবং তোমার স্বামীর হাতের কামড়টা কিসের কামড় ছিলো?
পর পর এতগুলো স্পষ্ট প্রশ্নে ভড়কে গেলো মেয়েটি, চোখ জোড়া বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেলো, কাঁপলো সে অজানা আতঙ্কে। ভীতসন্ত্রস্ত চোখে আনাবিয়ার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে হঠাৎই ঠোঁট ভেঙে শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। ভাঙা গলায় বলল,

“শেহজাদী…আমি…আমি কিছু বলতে পা…….”
কিন্তু এর বেশি কিছু বলতে পারলোনা সে, হঠাৎই গলা আটকে গেলো তার, এক নিদারুণ, অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা এসে ভর করলো তার চেহারায়৷ চোখ দুটো বিস্ফোরিতের ন্যায় চেয়ে রইলো আনাবিয়ার মুখপানে! ঠোঁট জোড়া মুহুর্তের ভেতরেই ধারণ করলো নীলচে-কালো রঙ। নিদারুণ ভয়, অসহনীয় জ্বালা, আর তীব্র হাহাকারে গুঙরে উঠলো সে। দাঁতে দাঁত পিষে গিয়ে সহ্য করতে উদ্যত হলো ভীষণ যন্ত্রণা! আঁকাবাঁকা শিরা-উপশিরাগুলো চামড়ার নিচ থেকেই ফুটে উঠলো কালো। মুহুর্তেই রক্তশূণ্য হয়ে গেলো তার মলিন চেহারাখানা। আর তার পর পরই চোখ উল্টে সে শব্দ করে আছড়ে পড়লো মেঝেতে।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো আনাবিয়া, উঠে দাড়ালো তৎক্ষনাৎ, দ্রুত পায়ে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে তার। চিৎকার করে ডাকলো ফাতমাকে।
কিন্তু সেই মুহুর্তেই একবার ছটফটিয়ে উঠলো মেয়েটি, বিস্ফোরিত চোখ জোড়া বাঁচার জন্য জানালো তীব্র আকুতি। পরমুহূর্তেই কেশে উঠলো সে, মুখ থেকে স্রোতের মতোন বেরিয়ে এলো কালো রঙা রক্ত সাথে রক্তরঙা ফেনা, আর সঙ্গে সঙ্গেই শরীরটা এক ভীষণ ঝাকুনি দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে৷

মহলের সিঁড়িতে বিচলিত চেহারায় বসে আছে আনাবিয়া, দুহাতের আঙুল ফুটিয়ে চলেছে ক্রমাগত। দৃষ্টি ওর মাটির দিকে নিবদ্ধিত।
বাচ্চারা সব চিন্তিত চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে সিড়ির দুধার ধরে। কোকো লিও বসে আছে সিড়ির সর্বশেষ ধাপে। একটু আগেই মেয়েটির শেষকৃত্য সম্পন্ন করে এসেছে ওরা কজন মিলে।
ফারিশ ওর দুই মেয়েকে নিয়ে বসে আছে বারান্দা চত্বরে। বাচ্চা দুটো ভয় পেয়েছে ভীষণ! বাবাকে জড়িয়ে ধরে তারা বসে আছে চুপচাপ।
ফাতমা শার্লট আর লিন্ডা দাঁড়িয়ে ছিলো আনাবিয়ার পেছনে৷ আনাবিয়া মাটির দিকে দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন ছুড়লো,
“মেয়েটির শরীরে বিষ এলো কিভাবে?”
সকালের খাবার মেয়েটিকে শার্লট দিয়েছিলো, তাই সকলের দৃষ্টি নিমেষেই তার ওপরেই গিয়ে পড়লো।
সবাইকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হলো শার্লট, এলোমেলো চোখে সকলের দিকে তাকিয়ে ও ভীত কন্ঠে বলে উঠলো,

“ত্‌-তোমরা আমার দিকে কেন তাকাচ্ছো? এসবের ভেতরে আমার কোনো হাত নেই বিশ্বাস করো! আর আমি ওকে বিষ কেনই বা দেবো? ওকে তো আমি চিনিনা পর্যন্ত! আর বিষ আমি পাবোই বা কোথায়?”
শেষোক্ত বাক্যদ্বয় বলতে গিয়ে কন্ঠ কেঁপে উঠলো শার্লটের, হয়তো এখনি কেঁদে দিবে৷ আনাবিয়া চুপ রইলো।
কোথাও কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না৷ শার্লট কখনোই মেয়েটিকে বিষ দেওয়ার কথা চিন্তাও করবে না৷ আর এত শক্তিশালী বিষ যেখানে সেখানে পাওয়ার কথাও নয়। এই ধরণের বিষ ও মীরের কাছে দেখেছিলো কোনো একবার, আর দেখেছিলো জায়ান চাচাজানের বাসায়।
মীর ওকে বলেছিলো বিষটা ঠিক কিভাবে কাজ করে। সেবার ও মীরকে জিজ্ঞেস করেছিলো বিষ গুলো মীর কি করে, কিন্তু মীর উত্তরে বলেছিলো আনাবিয়ার এখনো জানার সময় আসেনি। আনাবিয়া জানতেও পারেনি আর, সব ভেঙে চুরে গিয়েছে ওর৷

মেয়েটা মরলো, কিন্তু মরার আগে ওকে কিছুই বলে গেলোনা যা ওর কাজে আসবে। আনাবিয়ার জানা হলোনা কোনো গোপন তথ্য, বা আসলেই গোপন কিছু কোথাও হচ্ছে কিনা!
হঠাৎই কিছু একটা নাড়া দিয়ে উঠলো আনাবিয়ার মস্তিষ্কের ভেতর। কোকোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“লাশটাকে কোথায় মাটিচাপা দিয়েছিস?”
“তাকে তো কফিনে ভরে অ্যানিম্যাল টাউনের গ্রেভ ইয়ার্ডে পুতে রেখে এসেছি আম্মা!”
আনাবিয়া এবার তাকালো ফ্যালকনের দিকে, জিজ্ঞেস করলো,
“তোর কাছে একটা বাগ ডিটেক্টর ছিলো, সেটা কি আছে এখনো?”
ফ্যালকন উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো, আনাবিয়া উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলে উঠলো,
“ওইটা নিয়ে আয় আমার সাথে।”
তারপর কোকো ফ্যালকন এবং লিওকে নিয়ে ও এগোলো অ্যানিম্যাল টাউনের গ্রেভ ইয়ার্ডের দিকে৷

কোকো আর লিও মিলে মেয়েটিকে পুতে রাখা কবরটি আবার খুড়তে ব্যাস্ত। ফ্যালকন বাগ ডিটেক্টরটা হাতে নিয়ে বসে আছে গ্রেভ ইয়ার্ডের এক কোণে। আনাবিয়া পায়চারি করছে এদিক থেকে ওদিক।
আকাশের দিকে তাকালো ও একবার, মেঘ করেছে ভীষণ, উড়ে যাচ্ছেনা সেগুলো, স্থীর হয়ে আছে। বৃষ্টি নামবে হয়তো শিঘ্রই। আনাবিয়া তাড়া দিয়ে বলল,
“দ্রুত হাত চালা কোকো, বৃষ্টি নামতে পারে যেকোনো সময়! আর হ্যাঁ, লাশ বের হওয়ার পর কেউ কোনো কথা বলবি না। যা বলবি ইশারায়৷”

কোকো লিও হাত চালালো দ্রুত। আরও কিছুক্ষণ খোড়াখুড়ির পর কোদালের অগ্রভাগ গিয়ে শব্দ করে আঘাত করলো কাঠের কফিনে। কোকো লিও মিলে দ্রুত হাতে মাটি সরিয়ে বের করলো কফিন, তারপর খুলে দিলো ঢাকনা।
লাশ মাটিচাপা দিয়েছে ঘন্টা তিন হচ্ছে, এর ভেতরেই মারাত্মক বিষক্রিয়ার প্রভাবে লাশটির চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে, মাংস গুলো ভেতর থেকেই পঁচতে শুরু করেছে। পেটের কাছটা থেকে ভয়ানক রকম দুর্গন্ধ আসছে। কুচকুচে কালো রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে মেয়েটার নাভি দিয়ে।

নাক চেপে ধরলো আনাবিয়া, অদ্ভুত মাংস পঁচা গন্ধে ভেতর থেকে সব বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো ওর৷
ফ্যালকনের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলো মেয়েটির সমস্ত শরীর স্ক্যান করতে৷ ফ্যালকন ওয়্যারলেস বাগ ডিটেক্টরটি অন করে কফিনের নিকট এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির শরীর স্ক্যান করতে শুরু করলো মাথা থেকে, ক্রমশ নিচের দিকে নিতে নিতে বাগ ডিটেক্টরটি শব্দ কর‍তে শুরু করলো, আর মেয়েটির উরু সন্ধিতে এসে সেটা ভয়ানক রকম বাজলো।
ফ্যালকন চমকে তাকালো আনাবিয়ার দিকে, কোকো লিও দুজনেই অবাক হলো। আনাবিয়া কোকোকে ইশারা দিতেই কোকো মেয়েটির ঊরুসন্ধি থেকে কাপড় সরিয়ে হাতের ধারালো নখের সাহায্যে একটা খামচা মেরেই উঠিয়ে নিয়ে এলো এক তাল মাংস, আর মাংস উঠাতেই সেখানে নজর পড়লো একটি লিসনিং ডিভাইস৷ লাল রঙা আলো জ্বলছে তাতে মিটিমিটি করে এখনো, অর্থাৎ সেটি এখনো সক্রিয় আছে। কোকো দু আঙুলের সাহায্যে তুলে নিয়ে এলো সেটা। দিলো আনাবিয়ার হাতে।

আনাবিয়া ডিভাইস টিকে এক পলক দেখে নিয়ে আবার কোকোকে ইশারা দিলো লাশটি পুতে ফেলতে। কোকো লিও হাত চালালো তৎক্ষনাৎ।
আনাবিয়া সেটিকে হাতের মুঠিতে নিয়ে চাপ দিলো একটা, ভেঙে গুড়িয়ে গেলো ডিভাইসটি। তারপরেই কবরের নিকট থেকে সরে গিয়ে মাটিতে বসে পড়লো ও।
এই মেয়েটিকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছিলো, এই ট্র‍্যাকারটা সেটিই নির্দেশ করে। কিন্তু এই মেয়েটি কি করতো এখানে? কি কাজ ছিলো তার? কেনই বা সে হঠাৎ করেই বিষক্রিয়ায় মারা গেলো? তবে কি বিষটা তার শরীরেই দাফন করা ছিলো, আর সময় হতেই তাকে অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে?

প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে গেলো আনাবিয়ার মস্তিষ্ক। আর তার কিছুক্ষণ পরেই মেঘ ভেঙে নামতে শুরু করলো বৃষ্টির বড় বড় ফোটা, একটি দুটি ফোটা পড়তে পড়তে অবশেষে রূপ নিলো ঝমঝমে বৃষ্টিতে।
মেয়েটিকে কবরে রাখার কাজ ততক্ষণে শেষ, ভেতরে কিছু পানি ঢুকে গেছে, কিন্তু কোকো লিও যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে যেন পানি না ঢুকে, দ্রুত হাত চালিয়ে কফিনটা মাটি চাপা দিয়েছে দুজনে।
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে গেলো ওরা সকলে। ফ্যালকন নিজের গায়ের শার্টটা খুলে ধরে রইলো আনাবিয়ার মাথার ওপর। তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলোনা, পানিতে ভিজলো আনাবিয়া। তবুও ফ্যালকন ধরে রইলো সেটা।
আনাবিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে ফ্যালকনকে একবার দেখে নিয়ে হাসলো নিজের মনে। ওর বাচ্চা গুলো সব জেন্টেলম্যান হয়েছে। প্রয়োজনে যতটা খতরনাক হতে পারে, ততটা ভদ্র সভ্যও হতে পারে। অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেওয়ার মতো।
কাজ শেষ হলে আনাবিয়া বলল,

“তোরা মাঞ্জারে ফিরে যা, আমার কাজ আছে একটু।”
“এই বৃষ্টির ভেতর আপনি কোথায় যাবেন আম্মা? আপনার পোশাকও ভিজে গেছে। এই ভিজে পোশাকে থাকলে আপনার শরীর খারাপ করবে। আগে মহলে চলুন, পোশাক বদলে শুকনো পোশাক পরে যেখানে ইচ্ছে যাবেন।”
অত্যন্ত সচেতন অভিভাবকটির ন্যায় বলল কোকো। আনাবিয়া ভ্রু তুলে ওর দিকে তাকিয়ে চোখে এসে বলল,
“শাসন করছিস আমাকে?”

“ছিঃ ছিঃ আম্মা! আমি আপনাকে শাসন করবো অতো স্পর্ধা আমার? আমি শুধু আপনার খেয়াল রাখছি যেন আপনি অসুস্থ না হয়ে পড়েন! অসুস্থ হলে তখন কষ্টটা কে পাবে? আপনিই তো পাবেন! তখন হিজ ম্যাজেস্টির অতৃপ্ত আত্মা এসে আমাদেরকে চেপে মেরে ফেলবে, তার আদরের বউকে দেখে না রাখার অপরাধে।”
মীরের কনসার্নের কথা মনে করেই হোক বা কোকোর কথায়, আনাবিয়া হাসলো শব্দ করে। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো আগে মহলে ফিরে যাওয়ার।

বৃষ্টির তোপ কমে এসেছে, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে এখনো। আনাবিয়া গায়ে একটা ফুল স্লিভ শার্ট চড়িয়ে নিয়েছে। বাইরে ঠাণ্ডা বাতাস, শীত শীত লাগছে বেশ।
একটা ডেনিমের প্যান্ট পরণে, পায়ে এক জোড়া হাইকিং শু। ব্যাকপ্যাকে এক বোতল পানি আর কিছু শুকনো খাবার নিলো। বাইরে বের হলেই ওর ক্ষিদে লেগে যায়, তখন খাওয়ার মতো কিছুই পায় না৷ তাই আজ সব গুছিয়ে নিলো।
আকাশে এখনো কালো মেঘ উড়াউড়ি করছে, বৃষ্টি আবারও আসতে পারে। সাথে করে একটা ছাতাও নিলো। বিকেল পড়ে গেছে, কয়েক ঘন্টা বাদেই সন্ধ্যা নামবে। কিন্তু কিছুই করার নেই, ওকে যেতেই হবে।
ফোনটায় ফুল চার্জ, ব্যাগে একটা কম্পাসও ভরে নিয়েছে। যেন দিক না হারায়। টর্চ নেওয়ার প্রয়োজন নেই, রাতে স্পষ্ট দেখার জন্য ওর ঝলমলে চোখ জোড়াই যথেষ্ট।
সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে মহল থেকে বেরিয়ে পড়লো ও। হাটতে হাটতে এগোলো রেড জোনের জঙ্গলের শেষের দিকে। আজ রাতে হয়তো ফিরবে, আবার ফিরবে না! মন যা চাইবে তাই!

“বৃষ্টি তো থেমেছে অনেক আগে
ভিজেছি আমি একাই
আসতো যদি এই বিভীষিকা
খুঁজেও পেতেনা আমায়,
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ কোরোনা
মন চায় তোমায় আজি রাতে…”
রেড জোনের গহীনে এগোতে এগোতে গুনগুনিয়ে গেয়ে চলেছে আনাবিয়া, ওর উদ্দ্যেশ্য আজ আর মশলা নয়, অন্য কিছু। ওর মোহনীয় মৃদু কন্ঠস্বরে সেখানের গাছগুলোর বৃষ্টিভেজা পাতা গুলো থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে এক অদ্ভুত জ্বলজ্বলে সোনালী আলোর কণা।

লাইফট্রি এই এরিয়া থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এদিকে ওর ভয়েসের ইফেক্ট পড়তোনা তেমন৷ তাই এদিকটা রেড জোনের অন্যান্য অঞ্চলের মতোন সুসজ্জিত নয়, ঘন ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ।
কিন্তু আজ ওর কণ্ঠনিঃসৃত সুরের ছোয়ায় ঝলমলিয়ে উঠছে এদিকটা, মধ্যরাতের জমাট অন্ধকারে আজ আর দেখতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না আনাবিয়ার, গাছগুলোর পাতা থেকে বিচ্ছুরিত সোনালী আলোর কণা গুলোর কারণে ঝলমলিয়ে উঠেছে চারদিক, আনাবিয়ার চলার রাস্তাটা ওর সাথে সাথেই ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে এগোচ্ছে। ওর পা বাড়ানোর সাথে সাথে পেছনে ফেলে আসা গাছগুলো আবারও নিমজ্জিত হচ্ছে আধারে৷
এর আগেও বেশ কয়েকবার ঝুম বৃষ্টির পর এদিকে ছুটে এসেছে ও, শুধুমাত্র মীরের গায়ের ঘ্রাণটি পাওয়ার জন্য, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে প্রতিবার। মনের ভ্রমে পাগল হয়ে নিজের ওপর নিজেই হেসেছে বিস্তর।
কিন্তু আজকের উদ্দ্যেশ্য ভিন্ন। আজ ও মশলার রাস্তার দিকে এগোলোনা, ও এগোলো সেই মেয়েটি আর তার স্বামীকে যে রাস্তা ধরে ফিরতে দেখেছিলো সেদিকে।

হঠাৎ গান থামালো আনাবিয়া, চারদিক আবার ডুবে গেলো ঘন অন্ধকারে৷ এদিকেই কোথাও ডার্ক প্যালেসের অবস্থান, কিন্তু ঠিক কোথায় সেটা জানেনা আনাবিয়া। সম্পুর্নটা মাটির তলায় হওয়ায় তার অস্তিত্ব ওপর থেকে বোঝার উপায় নেই। মীরের সাথে অনেকবারই জঙ্গলের গভীরে এসেছে ও, তবে এদিকে নয়। ডার্ক প্যালেসের অবস্থানের কথা জিজ্ঞেস করলেও মীর কখনোই বলেনি ওকে, কারণটা আনাবিয়ার অজানা।

মীর সর্বদাই এড়িয়ে গেছে ডার্ক প্যালেসের ব্যাপারটা। ইলহানের অস্তিত্বও তো আনাবিয়ার জানা ছিলোনা, সেদিন যদি ইলহানের সাথে ট্রি হাউজের কাছে ওর দেখা না হতো তবে ইলহানের অস্তিত্ব হয়তো জানা হতো না ওর আজও।
আনাবিয়া এগোলো আরও ভেতরের দিকে, এদিকটায় কেমন গা ছমছমে পরিবেশ। পাতার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে প্রাণীদের বিচরণের শব্দ, নিঃশব্দে পায়ের ছাপ ফেলছে তারা ভেজা মাটির ওপর।
চারপাশে অদ্ভুত এক সোঁদা গন্ধ—কাঁচা পাতা, পুরনো মাটি, সদ্য বৃষ্টিতে ভেজা গাছের।
চারদিকে কেমন কুয়াশা ঘেরা, গাছে গাছে মাকড়সার জাল, শুকনো ডালে ঝুলছে কাপড়ের মতো কিছু, বাতাসে দুলছে সেগুলো মাঝে মাঝেই। হঠাৎ করে দেখলে মানুষ বলে ভুল করে বসবে যে কেউ।

ঝিঁঝিঁ পোকার তীব্র আওয়াজ আসছে চারদিক থেকে, হাঁটার সময় পা ডুবে যাচ্ছে মাটিতে, কচুরিপানার মতো নরম, ভেজা কোনো স্তরে, কিন্তু কিসে ডুবছে সেটা বুঝতে পারছেনা আনাবিয়া, নিচে লক্ষ্য করছে না ও৷
দূরের গভীর থেকে কোনো মাংসাশী প্রাণীর ক্ষীণ হিংস্র গরগরে গর্জন ভেসে আসছে মাঝে মাঝেই। এই প্রাণীর গর্জনটা আনাবিয়ার চেনা, গতরাতেও লায়রা কে জঙ্গল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় শুনেছে।
ও যখনি সুর তোলে এই হিংস্র গর্জনটা তখনি শুনতে পাওয়া যায়, ও খেয়াল করে দেখেছে, খুব খেয়াল করেছে।
আবারও এগোলো আনাবিয়া। দূরে কোথাও ডেকে উঠছে শেয়ালের আর নেকড়ের দল, তাদের করুণ সুর এসে বাড়ি খাচ্ছে এখানের জমাট বাধা গাছপালাতে।

জঙ্গলের গভীরে এগোতে এগোতে অদ্ভুত অনুভূতি হতে শুরু করলো আনাবিয়ার, নাঁকি সুরে কান্নার আওয়াজ পেলো ও কোনো আড়াল থেকে। ওকে একা দেখে কি এখানের অশরীরী গুলো ওকে দুর্বল ভেবে নিলো?
আলতো হাসলো আনাবিয়া।
সম্মুখে এগোনোর সাথে সাথে নাঁকি সুরে কান্নার আওয়াজটা বাড়লো ক্রমশ, সমবেত হলো অনেক গুলো কন্ঠস্বর, একবার শোনালো পুরুষের মতো, আবার নারীর, আবার কোনো শিশুর কান্না। জঙ্গলজুড়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লো সেই কান্নার তীক্ষ্ণ আওয়াজ, সমস্বরে পাল্লা দিয়ে যেন কান্নার ধরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে সকলে।
কান্নার শব্দের ভেতরেই ঘন আধারে গাছের ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎই একে একে জোড়ায় জোড়ায় জ্বলে উঠলো অসংখ্য চোখ। আনাবিয়া তাকিয়ে দেখলো সেগুলোকে।

মনে হলো যেন উপহাস করছে তারা আনাবিয়াকে, এতটুকুন একটা মেয়ে হয়ে একা একা সে কোন ভুলে এই পথে এসেছে সেটাই যেন তাদের নিকট পরম কৌতুকের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
আনাবিয়া নির্ভয়ে এগোলো আরও, সামান্যতম ভয় হলোনা তার, কাঁপলোনা গলা, বন্ধ হলোনা চোখ। মুখখানাতে লেগে রইলো আগের মতোই দৃঢ়চেতা হাসি।
এবার যেন অশরীরী গুলো অবাকই হলো সামান্য, এত কিছুর পরেও কেন এই শুভ্র রঙা মেয়েটি পিছু হটছেনা, ভয় পাচ্ছে না, চিৎকার দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেনা সেটাই হয়ে উঠলো ওদের ভাবনার বিষয়।
এগিয়ে এলো ওরা যেন আরও, আনাবিয়াকে ঘিরে ধরতে চাইলো। আর সেই মুহুর্তেই আনাবিয়া এদের কর্মকাণ্ড দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে দৃঢ় পায়ে এগোতে এগোতে গলা ছেড়ে উচ্চস্বরে গেয়ে উঠলো,

“আ’ম আনস্টপেবল
আ’ম অ্যা পোর্শে উইদ নো ব্রেক্‌স
আ’ম ইনভিন্সিবল, অ্যান’ আ’ উইন এভরি সিঙ্গেল গেইম
আ’ম সো প্যাওয়ারফুল, আ’ ডোন’ নিড ব্যাটরিজ ট্যু প্ল্যে
আ’ম সো কনফিডেন্ট, আ’ম আনস্টপেবল টুড্যে……”
ওর কণ্ঠনিঃসৃত শব্দের সাথে সাথেই ভীষণ আলোয় ঝলমলিয়ে উঠলো সমস্ত এরিয়াটা, সুর ছুঁয়ে গেলো প্রতিটা গাছের শিরা, উপশিরা, পাতার শ্বাস, মাটির দগদগে স্তর। জমাট বাধা অন্ধকার যেন এক মুহূর্তেই ভেঙে পড়লো ঠক্‌ করে চারদিক ভরে গেলো জমকালো সোনালী আলোর ঝমকানিতে।
গাছের কাণ্ডের ফাঁকে জমা গুমোট অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অশরীরী গুলো কেঁপে উঠলো এই চোখ ধাধানো আলোর হঠাৎ আক্রমণে। মোহনীয় সুরের মূর্চ্ছনা ঠিক তীক্ষ্ণ তীরের ফলার মতো গিয়ে বিধলো তাদের হৃদয়ের গভীরে, যেখানে হয়তো অনুভব বলে কিছুই ছিল না বহু শতাব্দী ধরে।

আলো ছুঁয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই ছুটে পিছিয়ে গেলো তারা, বুক চিরে উঠে এলো চাপা গোঙানির শব্দ, তাদের দীর্ঘ ছায়ারা হঠাৎ করেই আলোর ঝলকানিতে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ছিঁড়ে যেতে চাইলো যেন!
ঝকমকে আলোর দাপটে অবিলম্বে বদলে গেলো জঙ্গল, গা ছমছমে ঠাণ্ডা হাওয়া বদলে গেলো মৃদু স্নিগ্ধ বাতাসে। ঝোপঝাড় যেন দূরীভূত হলো মুহুর্তেই।

গাছেরা আলো গায়ে মেখে হয়ে উঠলো স্বর্ণাভ, পাতার ফাঁক গলে নেমে এলো তারার আলোর ন্যায় মৃদু দীপ্তি।
এই চোখ ধাধানো আলো থেকে বাঁচতে ছুটে পালানো অশরীরী গুলো নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে বিস্মিত চোখে দেখতে রইলো এই অন্ধকারের বুকে আলো জাগানিয়া শুভ্র মেয়েটির দিকে!
গান থামালো আনাবিয়া, আলোর ঝলকানির মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলো ও একাই। আশেপাশে দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করলো তার সদ্য রচিত সৌন্দর্যের দিকে, মুখে ফুটে উঠলো আলতো মিষ্টি হাসি। নাকে ভেসে এলো সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মন মাতানো সুঘ্রাণ!

কিন্তু সেই মুহুর্তেই ফুলের সুঘ্রাণকে ছাপিয়ে ওর নাকে এসে ঠেকলো ওর চিরপরিচিত ঘ্রাণটি!
থমকালো আনাবিয়া ঠিক প্রথম দিনের মতো, চোখ বুজে নিলো ও সঙ্গে সঙ্গে। বুক ভরে দম নিতেই চিরপরিচিত ঘ্রাণটা ওর নাসারন্ধ্র ভেদ করে ঢুকে যেন ছুয়ে দিলো ওর হৃৎপিণ্ড!
ঝট করে চোখ খুলে তাকালো আবার, আর সেই মুহুর্তেই গভীর জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে এলো হাড় হীম করা সেই হিংস্র প্রাণীটির ভীষণ ভয়ানক হুংকার!
আনাবিয়া চমকে তাকালো শব্দের উৎসের দিকে, মস্তিষ্ক জুড়ে আকুলিবিকুলি করতে রইলো এক ঝাঁক প্রশ্ন।
চারদিকে ঘটতে থাকা ঘটনা গুলো কি তবে একইসূত্রে গাঁথা? এত আয়োজন কি শুধু ওর চোখে ধূলো দিতে? তবে কি চারপাশে এতদিন যা হয়ে চলেছিলো, এতদিন সবাই ওকে যা বিশ্বাস করাতে চেয়েছিলো সেসবই মিথ্যা? ঠোঁটের কোণা বেকিয়ে হাসলো আনাবিয়া,

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৭

“সবার চোখে ধুলো দিলেও আমার চোখে আপনি ধুলো দিতে পারবেন না ইলহান চাচাজান।”
বিড়বিড়িয়ে বলল আনবিয়া। আর এগোলোনা সামনে। ওকে ফিরতে হবে, এখুনি ফিরতে হবে৷ ওকে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে, নিশ্চিত হয়ে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে ও।
এক ঝটকায় সেদিক থেকে পেছনে ফিরে মহলে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ালো আনাবিয়া। পেছনে তখনো ওর উপস্থিতি টের পেয়ে গুমরে গুমরে ডেকে চললো হাড় হীম করা গর্জনের মালিক…….

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here