বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২১

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২১
রানী আমিনা

হাটতে হাটতে একসময় ওরা এসে পৌছালো ডার্ক প্যালেসের রয়্যাল গ্রেডের নিকট। ভূমি হতে এটা ঠিক কত টুকু গভীরে তা জানেনা আনাবিয়া। চারপাশটা অদ্ভুত রকমের শীতল।
চারজনে এসে দাড়ালো রয়্যাল গ্রেডের বিরাট দরজার সম্মুখে। দরজার ওপর একটা স্ক্যানার। মাঝে মাঝে বিপ বিপ শব্দ করে লাল রঙা আলো জ্বলে উঠছে তাতে। কোকোদের মাঝে থাকা গার্ডটি বলল,
“শেহজাদী, এই দরজাটি শুধুমাত্র হিজ ম্যাজেস্টির চোখের স্ক্যান দ্বারা ওপেন করা সম্ভব, এ ছাড়া ওপেন করার অন্য কোনো উপায় নেই।”

“ভেতরে কেউ নেই?”
“জ্বি শেহজাদী, হিজ ম্যাজেস্টির কিছু দাসী এখনো এখানে আছে৷”
“ওরা খাবার পায় কোথায়?”
“হিজ ম্যাজেস্টি মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন, এসে ওদেরকে রেশন দিয়ে যেতেন প্রচুর পরিমাণ। গত এক বছরে তিনি এদিকে আসননি। ভেতরের কি অবস্থা আমরা কেউই জানিনা।”
গার্ডের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো আনাবিয়া। একটা হাত রাখলো দরজার উপর, বোঝার চেষ্টা করলো এটা ঠিক কতটা কঠিন পদার্থে তৈরি, ওর পক্ষে ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে কিনা৷ পরক্ষণেই হাত সরিয়ে নিয়ে কোকো আলফাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
“তোরা পিছিয়ে যা।”
কাল বিলম্ব না করে ওরা দুজন গার্ডটিকে নিয়ে পিছিয়ে গেলো। আনাবিয়া নিজেও সামান্য সরে এলো পেছনে৷ তারপর ডান হাত খানা মারমুখী ভঙ্গিতে উঁচিয়ে বাহু শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো৷ কোকো ওকে এভাবে প্রস্তুতি নিতে দেখে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আম্মা, আপনি ব্যাথা পাবেন। আমি চেষ্টা করে দেখি?”
আনাবিয়া ওর কথা পাত্তা দিলোনা, আঙুলগুলো একে একে ভীষণ জোর মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে পরমুহূর্তেই তড়িৎ গতিতে বজ্রনাদের ন্যায় শব্দ তুলে একটা ভীষণ শক্তিশালী আঘাত হানলো দরজার ঠিক মাঝ বরাবর।
আঘাত পড়ার সাথে সাথেই বিকট শব্দ তুলে আঘাতের স্থান হতে কিড়কিড়ে শব্দ তুলে চিড় ধরে গেলো সমস্ত দরজা জুড়ে। বিদ্যুৎখণ্ডের মতোন আলোর রেখা ছিটকে চলে গেলো সে চিড়গুলো অনুসরণ করে৷
পরক্ষণেই আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটা থেকে দরজার এক বিরাট অংশ প্রচন্ড শব্দ তুলে চুরমার হয়ে ছিটকে পড়লো চারদিকে, ধাতব কণা গুলো আছড়ে পড়লো দূর দুরান্ত পর্যন্ত! ধোঁয়া আর ধুলোবালিতে ভরে গেলো চারপাশ।
ভেতরে প্রবেশের জন্য বেশ ভালো রকম খোলা জায়গা পাওয়া গেলো। আনাবিয়া মুষ্টিবদ্ধ হাতখানা সামনে ধরে দেখলো, সামান্য ছড়ে গিয়েছে। হাতটা একবার ঝাড়া দিয়ে আনাবিয়া পেছনে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“বয়েজ, ফল্যো মি।”

একটি সংকীর্ণ ধাতব সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে, দেয়ালজুড়ে পুরনো ধাঁচের ব্রোঞ্জের তৈরি লণ্ঠন, টিম টিম করে আলো জ্বলছে তাতে৷ সিঁড়ির শেষে একটি স্বয়ংক্রিয় স্লাইডিং দরজা, তার ওপর খোদাই করা প্রাচীন নকশা।
আনাবিয়া এসে দাড়ালো সিঁড়ির শেষ ধাপে, সামনেই আরো একটি নকশাদার দরজা, তাতে কোনো লক নেই। আনাবিয়া দরজা ঠেলে ঢুকলো ভেতরে। ও ঢুকতেই আলোকিত হয়ে উঠলো অন্ধকারে ডুবে থাকা রয়্যাল গ্রেড৷
ভেতরে স্বল্প আলোয় নিজেদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম সম্পন্ন করছিলো কতক দাসী। হঠাৎ এতবছর পর নিজেদের অন্ধকার বাসস্থানে আলোর ফোয়ারা দেখে ভীষণ রকম চমকালো তারা, কিয়ৎক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো যার যার স্থানে৷ বিস্ময়াভিভূত চোখে দেখতে রইলো কামরায় অপ্রত্যাশিত ভাবে ঢুকে পড়া এই শুভ্র পরীটিকে।

আনাবিয়া দেখলোনা তাদের, ও ব্যাস্ত হয়ে গেলো দেখতে ইলহান এখানে ঠিক কেমন জীবন যাপন করতো। প্যালেসের হলরুমের দেয়ালজুড়ে কালো মার্বেলের প্রলেপ, মাঝখানে অর্ধচন্দ্রাকৃতির একটি বেশ বড় সাইজের লাউঞ্জ সোফা, মেঝেতে বিছানো মখমলি গাঢ় লাল কার্পেট। দেয়ালে লটকানো একাধিক প্রাচীন পেইন্টিং৷
ডান পাশের এক কামরায় একটি সাউন্ডপ্রুফ কাচঘেরা ড্রইংরুম, সেখানটা বেশ সুন্দর করে সাজানো, কামরা ভর্তি হালকা স্নিগ্ধ আলো, শেলফজুড়ে দামী দামী মলাটের বই, কয়েকটি অতীব সুন্দরী মেয়ে সেখানে বেশ সেজে গুজে বই পড়ছে একমনে।
আনাবিয়া দেখলো তাদের, মনে মনে ইলহানের উদ্দ্যেশ্যে বলল,

“বাহ্‌, বেশ আরামেই তো থাকতো খেকশিয়ালটা। এত আরাম ছেড়ে ওর কেন মরার স্বাধ জাগলো?”
দাস দাসী গুলো এগিয়ে এলো ওর দিকে, এই ভয়ানক সুন্দরী মেয়েটা ঠিক কে সেটা জানেনা ওরা। কোনো এক তীব্র আকর্ষণের বশবর্তী হয়ে ওরা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় এগিয়ে গেলো আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া ওদের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলো, ব্যাস্ত ছিলো চারপাশ দেখতে। মেয়েগুলো ওর দিকে এগিয়ে আসছে টের পেয়ে ঝটিতে পেছন ফিরলো ও। ওর ঝলমলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি খেয়াল করে মেয়েগুলো সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো, আর এগোলোনা৷ শুভ্র মেয়েটিকে ছুয়ে দেওয়ার তীব্র বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেলো।
কোকো আর আলফাদ ঘুরে ঘুরে রয়্যাল গ্রেডের ইনটেরিয়র দেখছিলো, মাটির এত গভীরে এত সুন্দর নকশার কামরা বানানো কিভাবে সম্ভব, রাজা বাদশাহর ব্যাপার স্যাপার! আলফাদ হা হয়ে কামরার ছাদ দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলো,

“আমরা এখানে কেন এসেছি ভাইজান?”
“খুঁজতে।”
“কি খুঁজতে?”
ছাদের দিক থেকে চোখ নামিয়ে কোকোর মুখের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আলফাদ৷ কোকো অন্য কামরার দিকে যেতে যেতে উত্তর দিলো,
“মরা কঙ্কালের বেঁচে থাকা দেহ।”
আলফাদ ওর কথার মানে কিছু না বুঝতে পেরে ভ্যাবলার মতোন তাকিয়ে রইলো। এমন সময় হলরুম থেকে কোকোর ডাক পড়লো, আনাবিয়া ডাকছে তাকে। গিয়ে হাজির হতেই আনাবিয়া চাপা স্বরে বলল,
“আমি এখানে কেন এসেছি সেটা তোর এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা, কিন্তু মনে হয় না আমরা মীরকে সহজে এখানে পাবো। ও এখানে থাকলে আমি নিমিষেই অনুভব করতাম, আমাদেরকে আরও গভীরভাবে খুজতে হবে কোকো। এখানে কত গোপন কামরা আছে কেউই বোধ হয় জানেনা, সেখানের ঠিক কোনটিতে শেহজাদা ইলহান মীরকে রেখেছে বোঝা মুশকিল। তোরা ওদিকটা দেখ আমি এদিকটা দেখছি। কোথাও আনয়ুজ্যুয়াল কিছু দেখলেই আমাকে জানাবি, ঠিক আছে?”

কোকোর একবার বলতে মন চাইলো যে তার আম্মা শুধু শুধু কষ্ট করছে, ভোর বেলায় পাওয়া কঙ্কাল টা যে সত্যি সত্যিই হিজ ম্যাজেস্টির নয় এই ব্যাপারের কোনো শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই। এত খুঁজে যদি শেষে তাঁকে না পাওয়া যায় তবে ওর আম্মার মতোন হার্টব্রেক হয়তো আর কারোরই হবেনা। কিন্তু মনের কথা মনে চেপে রেখে সে উত্তর দিলো,
“ঠিক আছে আম্মা।”

বলে আলফাদকে নিয়ে সে চলে গেলো অন্য দিকের কামরা গুলোতে। আনাবিয়া গেলো তার বিপরীতে। এদিকে কামরার শেষ নেই, এত এত কামরা তৈরির কি প্রয়োজন পড়েছিলো বুঝতে পারলোনা ও।
একটা কামরার ভেতর আবার অন্য একটি কামরা, তার ভেতরে আবার অন্য কামরার দরজা। ঠিক যেন গোলক ধাধার মতোন! আনাবিয়া কোথা থেকে কোথায় চলেছে নিজেও বুঝতে পারলো না, ভেতরে ঢোকার সময়ে প্রতিটা দরজায় ব্যাকপ্যাকে থাকা মার্কার পেন দিয়ে একটা করে মার্ক করে এসেছে যেন ফেরার পথে পথ ভুলে না যায়।
কত গুলো দরজা পার করে এসেছে বলা মুশকিল। যেতে যেতে একসসসময় হঠাৎ একটি দরজার সম্মুখে এসে থেমে গেলো ও। এই দরজা টি অন্য কামরার দরজার থেকে তুলনামূলক বড়, রঙে নকশাতেও ভিন্ন। দরজার ওপর ঠিক প্যালেসের প্রবেশ মুখে থাকা দরজার মতোন লেখা ‘অনলি দেমিয়ানস’। তার নিচে আগের মতোই একটা হাতের চিহ্ন আঁকা।

আনাবিয়া হাত রাখলো সেখানে, মুহুর্তেই দরজা টি স্লাইড করে খুলে গেলো দুদিকে। ভেতরটা গাঁঢ় অন্ধকার, কিছুই চোখে বাধছে না, ঠিক যেন একটা মহাশূন্য! সম্পুর্নটাই যেন ফাঁকা।
আনাবিয়া পা বাড়ালো, সম্মুখে ঠিক কি আছে ওর জানা নেই, কিন্তু আজ এই মুহুর্তে পেছনে ফিরে গেলে আর কখনোই ওর অজানাকে জানা হবে না৷
কেঁপে উঠলো ও সামান্য, হয়তো ঠান্ডায়, কিংবা ভয়ানক মানসিক ক্লান্তিতে। আর তারপর পা ফেললো সামনের দিকে।
কিন্তু মুহূর্তেই ভড়কালো আনাবিয়া, পা নিচে পড়া মাত্রই ও অনুভব করলো শূন্যতা! কোনো মাটি নেই, কোনো বাধা নেই কিচ্ছু নেই, শুধইু শূণ্যতা।

এক ঝটকায় ভারসাম্য হারিয়ে ঝুঁকে পড়লো ও সামনে। ভীষণ ভয়ে বুকের ভেতরটা ধ্বসে পড়লো যেন! তড়িতে দুই হাত ছুঁড়ে দিল পেছনের দিকে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার চেষ্টায়! কিন্তু নিষ্ঠুর পাথরের পুরুষ্টু দেয়াল আঁটলো না ওর ছোট্ট নরম হাতের মুঠিতে! তার আগেই অভিকর্ষের ভয়াল আকর্ষণ ওকে টেনে নিয়ে গেলো তার অতল গহ্বরে!
অতর্কিত পতনের ফলে ভীষণ রকম চমকালো আনাবিয়া, কণ্ঠ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো এক অসহায় দমবন্ধ চিৎকার, কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় গলাতেই আটকে রইলো তা!
শরীরটা ভারহীন হয়ে পড়ে যেতে রইলো নিচে, বিশাল খাদের শক্ত দেহ ওর পাশে পাশ ঘেঁষে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উপরে উঠে গেলো একের পর এক! আর আনাবিয়া ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকলো এক গাঢ় অন্ধকারের গভীরে!
দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো ওর, ঠোঁট জোড়া ভীষণ বিস্ময়ে হা হয়ে উঠলো ক্রমশ, পেটের ভেতরটা হঠাৎই হিম শূন্যতায় ডুবে গেলো ওর, বাতাসের দমকা ঝাপটা মুখের ওপর এসে লাগলো সজোরে! সেই ক্ষুধার্ত খাদ তখনো নীরবে গিলে নিতে ব্যাস্ত তাকে।

তার পরমুহূর্তেই খাদের শক্ত পাথুরে তলায় সজোরে আছড়ে পড়লো আনাবিয়া! পাতলা শরীরটা গুঁড়িয়ে গেলো যেন! ছুরির ফলার মতো হাড় কাঁপানো ব্যাথা বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়লো ওর সমস্ত শরীরে, নিশ্বাস নেওয়ার প্রবল চেষ্টায় বুকটা যেন ফেটে যেতে চাইলো! পাঁজরের নিচে শুরু হলো তীব্র জ্বালা, আর তার পরেই চোখের সামনে সমস্তই অন্ধকার হয়ে এলো ওর, জ্ঞান হারা হয়ে তলিয়ে গেলো ও কোনো গভীর অতলে!

আনাবিয়া যে দিকে গেছিলো সেদিকের কামরা গুলোতে তাকে পাগলের মতোন খুঁজে চলেছে কোকো আর আলফাদ। ঘন্টা তিন হতে চলল তবুও আনাবিয়ার কোনো খোঁজ নেই! সমস্ত স্থান খোঁজ করে অবশেষে আনাবিয়ার দরজাতে রেখে যাওয়া চিহ্ন আবিষ্কার করে, তা অনুসরণ করে একের পর এক দরজা খুলেই যাচ্ছে কোকো, কিন্তু কোথাও ওর আম্মাকে পাচ্ছে না ও! রাগে দুঃখে চোখ জোড়া পানিতে ভর্তি হতে নিচ্ছে ওর বারংবার, কিন্তু তাদেরকে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়া থেকে ভীষণ চেষ্টায় আটকে রাখছে ও।
আলফাদ দিশেহারার ন্যায় চারদিকে চোখ বুলোতে বুলোতে কোকোর পেছন পেছন ছুটে চলেছে, কিন্তু নেই! কোথাও নেই ওদের শেহজাদী, ওদের প্রাণপ্রিয় আম্মা!
ছুটতে ছুটতে একসময় এসে ওরা আটকালো আনাবিয়ার সর্বশেষ ঠিকানায়, ‘অনলি দেমিয়ানস’ লেখা চওড়া দরজাটার সম্মুখে। শেষ চিহ্ন এইটাই, আর নেই!
কোকো নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে উচ্চস্বরে, ভীষণ আকুল গলায় ডাকলো,

“আম্মা…..!”
কিন্তু দরজাটি এক চুল নড়লো না, আর না সাড়া দিলো কেউ ওর ‘আম্মা’ ডাকে। ভয়ানক কান্না পেলো কোকোর, ডুকরে কেঁদে উঠে দরজার ওপর নিজের শক্ত হাতের একের পর এক আঘাত হানতে হানতে ধাতব দরজাটিকে ভাঙার বৃথা চেষ্টা করতে করতে প্রচন্ড আর্তনাদে ডেকে চললো,
“আম্মা….. আম্মা….!”

নিস্তব্ধ অন্ধকার, মাঝেই মাঝেই আঁধার ঘেরা নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসছে সড়সড় ধ্বনি, যেন কিছু নিঃশব্দে চলাচল করছে পাথুরে তলের ওপর দিয়ে।
এমন সময়ে চোখ দুটো ধীরে ধীরে খুললো আনাবিয়া, তখনও সম্পূর্ণ জ্ঞান ফেরেনি তার! কতক্ষণ এভাবে তার কাটলো, এখন দিন কি রাত কিছুই বোধ হলোনা ওর। কিছুক্ষণ ওভাবেই পড়ে রইলো পাথরের ওপর, নিঃসাড়!
মাথার পেছনে ঝনঝন করে উঠলো কিছুক্ষণের জন্য, চোখের সামনের ঝাপসা ভাবটা কেটে গেলো ক্রমশ। শরীরটা তখন অসাড়৷

কিন্তু অসাড়তা কেটে যেতে নিতেই ধীরে ধীরে শরীরের তীব্র আঘাতের ব্যথা গুলো অনুভব করতে শুরু করলো আনাবিয়া। এবার যেন প্রচন্ড যন্ত্রণাতেই শরীর অসাড় হওয়ার উপক্রম হলো ওর!
একবার চেষ্টা করলো ডান হাত খানা নাড়ানোর, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাথায় সম্ভব হলোনা! শূণ্য অন্ধকারের ভেতর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো ও।
হঠাৎ চারপাশে কোনো কিছুর সোঁ সোঁ শব্দ শুনতে পেলো আনাবিয়া, পাথরের ওপর দিয়ে শক্ত, লম্বা আঁশযুক্ত কিছু যেন ঘষা খাচ্ছে। খুব কষ্টে সময় নিয়ে ঘাড়টা সামান্য কাত করে দেখার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু তাকাতেই সমস্ত শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো ওর!

পাথরের শরীরে থাকা ফাটলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে সেন্টিপেডের মতোন এক ঝাঁক প্রাণী! তাদের সাপের মতোন দীর্ঘ শরীরের নিচে কিলবিল করছে শত শত পা! ফসফস শব্দ ভেসে আসছে তাদের মুখগহ্বর হতে, চোখ গুলো জ্বলছে, নীলচে আলো টিকরে পড়ছে তা থেকে। মুখের সামনে থেকে বারবার লম্বা শুঁড়ের মতো অঙ্গটি কাঁপিয়ে চলেছে! যেন বহুদিন বাদে আজ কোনো শিকার পেয়েছে তারা!
হাড় হীম হয়ে এলো আনাবিয়ার! ওর একমাত্র ভয়, একমাত্র ফোবিয়া আজ এই মুহুর্তে ওরই সামনে, ভয়ানক আকৃতিতে! শরীরের ভয়ানক ব্যাথা মুহুর্তেই ভুলে গেলো আনাবিয়া, আঁতকে উঠে নিঃসাড় শরীরটা টেনে উঠালো ও। প্রচন্ড ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো, দম আটকে ধরে এক দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে রইলো ওরই দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকা সেন্টিপেডের ঝাঁকটির দিকে!

প্রাণীটা গুলো তাদের শত জোড়া পা পাথরে ঘষতে ঘষতে অসহনীয় এক ঘর্ষণের শব্দ তুলতে তুলতে এগিয়ে এলো ওর দিকে, শরীর থেকে ধাতব, পচা রক্তের গন্ধ বের হতে লাগলো তাদের!
আনাবিয়া স্থীর হয়ে রইলো, বুকের ভেতর ভীষণ ভয় দামামা বাজিয়ে চলল ওর! চোখ জোড়া প্রচন্ডরকম ভীতিতে পলক ফেলতেই ভুলে গেলো যেন! গলা শুকিয়ে এলো মুহুর্তেই!
কিন্তু হঠাৎই সমস্ত ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে শরীরের প্রচন্ড ব্যাথাকে জয় করে উঠে দাড়ালো ও। পরমুহুর্তেই ডান হাত টা মুষ্টিবদ্ধ করে বুকের ওপর আঘাত করলো, আঘাত করতেই বুকের মধ্যিখানের মাংসের উপরিভাগ থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছোট্ট, উজ্জ্বল সাদা রঙা মেটালিক বল।
সেটা বের হয়েই ওর দেহের সমস্ত পরতে পরতে প্রসারিত হতে হতে ওকে আবৃত করে দিতে রইলো জমকালো সাদা আর সোনালি রঙা নকশাদার মেটালিক আর্মরে।

প্রাণিগুলো সেই মুহুর্তেই চলে এলো ওর একেবারে নিকটে! আতঙ্কিত হয়ে, টালমাটাল পায়ে দ্রুত দু কদম পিছিয়ে গেলো আনাবিয়া, তারপর দুর্বল হাতজোড়া দুদিকে কোনো রকমে মেলে ধরতেই আর্মরটা স্বর্ণালি আলো ছড়ালো চারদিকে, মুহুর্তেই শূণ্যে উঠে গেলো ওর শরীর!
হঠাৎ শিকার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণে প্রাণিগুলো ছটফটিয়ে উঠলো যেন, শুড় ওয়ালা মাথা গুলো উঁচু করে আকড়ে ধরতে চাইলো যেন আনাবিয়ার পা!
দ্রুত বেগে আনাবিয়া উপরে উঠে গেলো আরও, কিন্তু কোথায় যাবে? চারদিকে বদ্ধ! কোথাও এতটুকু ফাঁকা নেই, এতটুকু আলো নেই৷ মাথার ওপরটা পাথরে আঁটা, চারদিকে শুধুই পাথর!
এদিক থেকে ওদিকে গিয়ে দিশেহারার ন্যায় দেয়াল হাতড়ে আনাবিয়া খুজে বের করতে চাইলো একটুখানি জায়গা, একটু খানি আলো! কিন্তু কিচ্ছু নেই কোথাও!

শরীর জুড়ে প্রচন্ড ব্যাথা আরও যন্ত্রণা দিতে শুরু করলো, ব্যাথায় ছিড়ে যেতে যাইলো সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। শরীর বল হারাতে শুরু করলো, যেন এখুনি আবার মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়বে ও। আর ওর দুঃস্বপ্নকে সত্যি করে দিয়ে ভারসাম্য হারালো ওর শরীর, আর তারপর মুহুর্তেই আবার শুণ্য থেকে সজোরে এসে আছড়ে পড়লো পাথুরে জমিনের ওপর!
এবারের আঘাতটা লাগলো কপালে, ডানপাশ ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করলো তৎক্ষণাৎ! চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে এলো সম্পুর্ন! ভোজ বঞ্চিত প্রাণিগুলো ভোজ ফিরে পেয়ে আনন্দে নেচে উঠলো যেন, দ্রুত কিলবিলে পায়ে ওরা এগোলো আনাবিয়ার দিকে!
আনাবিয়া ওর ঝাপসা চোখেই ছুটে আসতে দেখলো ওদের, মুহুর্তেই বুক ফাটানো এক চিৎকার করে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে গেলো কোনো এক দিকে, কিন্তু যেদিকেই যায় সেদিকেই বদ্ধ দেয়াল!

একসময় গিয়ে ও পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো কোন এক দেয়ালের গা ঘেঁষে! পেছনে দেয়াল, সামনে ছুটে আসছে এক ঝাঁক সেন্টিপেড। প্রচন্ড ভয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো ও। তড়িতে দুহাত বাড়িয়ে দিলো দুদিকে, ওর দু হাতের আর্মরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুটি ধারালো, চকচকা নকশাদার সোনালী হাতলের সোর্ড!
দুহাতে সোর্ড উঁচিয়ে ধরে হাফাতে লাগলো আনাবিয়া, ওদের কিলবিলে পা দেখা মাত্রই শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে ওর, তবুও পা শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো! শুকনো ঢোক গিললো একটা। তার পরেই সর্ব প্রথমে এগিয়ে আসা সেন্টিপেডটিকে প্রচন্ড সাহস নিয়ে সোর্ডের আঘাতেই দুখন্ড করে দিলো। কিন্তু হাত চালাতেই তীব্র যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো ও, কনুইয়ের হাড়ে ভয়ানক ব্যাথা! হাত নাড়ানোই যেন ভয়াবহ যুদ্ধের সমান!
আজ এই মুহুর্তে প্রচন্ড অসহায় ঠেকলো ওর! ও জানে না কী করবে, জানে না কিভাবে বাঁচাবে, কে বাঁচাবে ওকে? ভীষণ কান্না পেলো আনাবিয়ার! প্রাণীগুলোর শরীর চোখে ভাসতেই শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো ওর। আজ কেন ওকে এখানেই পড়্যে হলো, এই বিষাক্ত, ঘৃণিত প্রাণীগুলোর মাঝে!

ঝটিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো আনাবিয়া, যেন না দেখলেই সব মিথ্যে হয়ে যাবে। ঠিক ছোট্ট বেলাটার মতোন যখন অনেক রাতে খোলা জানালায় বসে থাকা কাল্পনিক মনস্টারের হাত থেকে বাঁচতে চোখ বন্ধ করে চাদরের নিচে লুকিয়ে ফেলতো নিজেকে, আর মীরি টেনে নিতো ওকে বুকের ভেতর, যেন কোনো মনস্টার আর কখনোই ভয় দেখাতে না পারে ওকে!
আজ এই শেষ মুহুর্তে আনাবিয়া খুব করে চাইলো নিজের ছোট্ট বেলাটিতে ফিরে যেতে, যেন চাদরের তলায় ঢুকলেই সবকিছু মিলিয়ে যায় ওর চোখের সামনে থেকে, আর একজোড়া শক্ত হাত এসে ওকে আগলে নেয় বুকের ভেতর, উষ্ণ আলিঙ্গনে ভুলিয়ে দেয় সমস্ত ভয়!
প্রচন্ড আর্তনাদে ডুকরে কেঁদে উঠলো আনাবিয়া, অসহায়ের ন্যায় একবার নিজের সমস্তটুকু দিয়ে ও ডেকে উঠলো,

“মীরি……!
আনাবিয়ার এই আর্তনাদ কেউ না শুনলেও তার ক্ষীণ শব্দ পৌছে গেলো ডার্ক ফরেস্টের ভেতর! গাছে গাছে ঠোক্কর খেতে খেতে আর্তনাদের প্রতিধ্বনি একসময় গিয়ে পৌছালো হাজার শেকলে বেধে হাটু মুড়িয়ে বসিয়া রাখা জান্তব অবয়বটির নিকট!
অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে পাথর ঘেরা কুঠুরিতে যে দিনের পর দিন পড়ে ছিলো; নীরব, নিষ্প্রাণ! যে জান্তব পুরুষটার বলিষ্ঠ হাত-পা কোমরে বাধা মোটা লোহার শেকল, শরীরের পরতে পরতে শিকলের দাগ খোদাই হয়ে গেছে! শিকল ফেঁড়ে বেরিয়ে আসার মতো শক্তিশালী হয়েও দুনিয়াবি জ্ঞান শূন্য হওয়ায় শুধু ক্রোধ আর শেকলের ঝনঝনানি ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা হয়নি তার!
ঝট করে চোখ খুললো সে, মাটির গভীর নিচ থেকে ভেসে আসা চিৎকারের অর্থ জানা নেই তার, কিন্তু ওই বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা আর্তনাদের কন্ঠ যে তার চিরচেনা!

কন্ঠস্বরটি কর্ণকুহর পেরিয়ে মস্তিষ্ক পৌছে অবশেষে অসাড় হৃদয়ের গহীন কোনো জায়গায় ধাক্কা দিলো যেন! শরীরটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো তার, ঝাকড়া নোংরা, চুলে আবৃত মাথা খানা নিচু করে বসে থাকা জান্তব দানবটা মাথা তুললো ধীরে ধীরে। স্বর্ণাভ চোখ দুটো জ্বলে উঠলো আগ্নেয়গিরির মতোন!
শরীরটা হঠাৎ থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার, কিছু কি মনে পড়লো? কাউকে কি মনে পড়লো?
আচমকা ছটফট করতে শুরু করলো সে, যেন কি এক অসহনীয় জ্বালা ছড়িয়ে পড়লো তার দানব শরীর জুড়ে! ছটফটানির মাঝেই হঠাৎ বজ্র নিনাদের মতোন এক বিশাল গর্জন করে উঠলো সে, যেন যন্ত্রণায় ফেটে পড়তে চাইছে তার জান্তব দগ্ধ আত্মা…..

আরও একবার ভেসে এলো সেই একই আর্তচিৎকার, এবার আর স্থীর রইলো না সে। দাঁতে দাঁত চেপে বিশাল হাতের চওড়া ধাতব শিকল মোচড়াতে শুরু করলো ভয়ানক গতিতে, তার বলিষ্ঠ হাতের টানে বার বার মাটি হতে শূণ্যে উঠে আসতে চাইলো শেকলের অপর প্রান্তে থাকা বিশাল পাথর!
মোচড়ানোর তোপে শেকলের ধারালো ফাঁসে হাতের মাংস কেটে যেতে লাগলো, রক্ত ঝরতে থাকলো কলকলিয়ে, কিন্তু থামলোনা সে!

ক্রমে ক্রমে ভারী হতে শুরু করলো তার গর্জন, তার নিঃশ্বাস! তারপর আরও মোচড়, আরও টান! অতঃপর এক সময় বিশাল এক দানবীয় গর্জনের সঙ্গে ছিঁড়ে ফেললো ডান হাতের শেকল খানা, রক্তের লালিমায় ঢেকে গেলো তার সমস্ত হাত, ফোটায় ফোটায় পড়লো তা মাটির বুকের পরে!
ছটফটিয়ে উঠে ডান হাতের সাহায্য ছিড়ে ফেললো বা হাতের শেকল, অতঃপর এক একটি ভীষণ শক্তিশালী টানে একে একে শরীরের সমস্ত শেকল ছিড়ে ফুড়ে, সর্বেশেষে গলায় বাধা চওড়া বেড়িটা দুহাতে টেনে ভেঙে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটলো সেই চিৎকারের উৎসের দিকে।

আনাবিয়া শ্বাস ছাড়ছে ভীষণ জোরে, পায়ের কাছে পড়ে আছে দ্বিখণ্ডিত, অর্ধখন্ডিত সেন্টিপেডের কয়েকটি দেহ। বাকিরা চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ওকে, সুযোগ খুঁজছে কাছে আসার!
হাত জোড়া অসাড়, এতটুকু নাড়ানোর ক্ষমতা নেই আর! পা জোড়া দুর্বল হয়ে বার বার ভেঙে পড়তে চাইছে, কপালের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে পড়তে শুকিয়ে এসেছে, গলা শুকিয়ে কাঠ! আজ তবে এখানে এভাবেই ওর শেষ হবে?

প্রাণীগুলোর কয়েকটি কিলবিলে পা দিয়ে এগিয়ে এলো আনাবিয়ার কাছে, যেটুকু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তাতেই চোখে পড়ছে তাদের হেলমেট-সদৃশ মাথা আর পশমে ঢাকা পেট। হাড়গিলে চোয়াল ধীরে ধীরে খুলছে, যেন শিকারকে ছিড়ে নিয়ে চিবুতে প্রস্তুত!
আনাবিয়া চোখ বুজে নিলো, চোয়াল জোড়া শক্ত করে জীবনের সমস্ত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলো পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট৷ শ্বাস ছাড়তে লাগলো ভীষণ জোরে, বুকটা ওঠানামা করতে শুরু করলো হাপরের মতোন! বন্ধ চোখ ছাপিয়ে লোনা পানির ধারা নামলো ঝুপঝুপিয়ে! প্রাণী গুলো চলে এলো আনাবিয়ার পায়ের ওপর! ওদের ঠাণ্ডা, কিলবিলে পায়ের স্পর্শে ভয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো ও আবার!

ঠিক এমন সময়ে বাইরে শোনা গেলো ক্ষীণ ভোতা শব্দ, পাথরের ওপর কেউ যেন ঢালছে তার সমস্ত ক্রোধ, সমস্ত যন্ত্রণা! ভীষণ ঝাকুনি অনুভব করলো আনাবিয়া,যেন দূরে কোথাও কেঁপে উঠলো ভূপৃষ্ঠ!
তারপর আরও একবার…… আরও একবার, ক্রমে ক্রমে শব্দটা গাঢ় হলো আরও, ভোতা শব্দটা ক্রমে ক্রমে রূপ নিলো বিকট শব্দে। একের পর এক ভীষণ শক্তিশালী আঘাত পড়লো পাথরটির ওপর!
আনাবিয়া কিছুই শুনলোনা, কিছুই দেখলোনা! তার শরীর তখন ক্লান্ত, ঠান্ডা; আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে গেছে ভয়ঙ্কর রকম! পায়ের কাছে কিলবিল করে বেড়ানো প্রাণী গুলোর একটি উঠে পড়লো ওর পা বেয়ে, আর্মরের ওপর দিয়েও যেন তার শতপদের স্পর্শ টের পেলো আনাবিয়া। প্রচন্ড ভয়ে, আতঙ্কে চোখের সম্মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো ওর, আর তার পরেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়তে নিলো ও।

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২০

ঠিক সেই মুহুর্তেই ধ্বস নামলো পাথরে, বিকট শব্দ তুলে খন্ড বিখন্ড হয়ে হাজার টুকরোয় পরিণত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো তা চতুর্দিকে! দিনের আলো জলদস্যুর মতোন হামলে পড়লো অন্ধকারের বুকে, তারই সাথে সাথে জান্তব পুরুষটি বিকট গর্জন তুলে আছড়ে পড়লো পাথর খন্ডের সাথে৷ আনাবিয়ার শরীর মাটি স্পর্শ করার ঠিক আগ মুহুর্তে ছুটে গিয়ে, চঅতুর্দিকে সাপের মতোন কিলবিলে প্রাণীগুলোকে পাথুরে পায়ের নিচে মাড়িয়ে দিয়ে নিজের রক্তাক্ত দানবীয় শরীরের সাথে জড়িয়ে আগলে নিলো সে!
আনাবিয়ার জ্ঞানহীন, নিঃশব্দ, নিঃসাড় শরীরটাকে রক্তাক্ত দুহাতে অত্যন্ত মূল্যবান, আদুরে বস্তুটির মতোন বুকের সাথে জাপ্টে ধরে বিকট গর্জন তুলে আঁধারের ভেতর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো আলোর ভেতর! আর তাকাল না পেছনে……

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here