বাদশাহ নামা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৭+১৮
রানী আমিনা
রাতের বারোটার দিকে ফারিশ এলো ইম্পেরিয়াল ক্রেস্টে, বোর্ডিং ম্যানেজারের নিকট জানালো আনবিয়ার সাথে দেখা করার কথা। হাতে ওর আনাবিয়ার জন্য সদ্য কিনে নিয়ে আসা নতুন ফোন, এখনো আনবক্সিং করা হয়নি।
ভেবেছিলো সকাল বেলা আসবে কিন্তু হিজ ম্যাজেস্টির আদেশ এই মুহুর্তে গিয়ে তার প্রাণকে ফোনটা দিয়ে এসো! বউ এর সাথে প্রেমালাপ করতে চায় সে।
বোর্ডিং বিল্ডিংয়ের ওয়্যেটিং রুমে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর গুটি গুটি পায়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলো নওমি। মুখ খানা ওর চুপসে আছে আতঙ্কে আর শঙ্কায়!
আনাবিয়ার রুমমেট হওয়ার সুবাদে ফারিশ নওমিকে আগে থেকেই চিনতো। আনাবিয়ার বদলে নওমিকে এখানে আসতে দেখে ভ্রুজোড়া কোচকালো ফারিশ, বসা থেকে উঠে নওমির কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি ব্যাপার নওমি? তোমার চেহারার এমন অবস্থা কেন? আর-আর নূর কোথায়? ও আসেনি কেন?”
“ভাইয়া, ও বোর্ডিংয়ে নেই!”
বলতে গিয়ে গলা কেঁপে গেলো নওমির।
নূর মেয়েটা এগারোটার ভেতরেই চলে আসবে বলেও এখনো এলোনা! বের হওয়ার আগে বলে গেছিলো কাউকে না জানাতে, একটু দেরি হলেও ও কোনোভাবে চলে আসবে বোর্ডিংয়ে। কিন্তু রাতের বারোটা পার হওয়ার পরও তার কোনো খোঁজ নেই!
“নেই মানে কি? কোথায় গেছে? কখন গেছে?”
বিস্মিত, উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো ফারিশ। নওমির কান্না পেলো, জড়ানো গলায় সমস্ত কিছু খুলে বলল ও ফারিশকে।
ফারিশ আর এক মুহুর্ত সময়ও নষ্ট করলোনা, বিল্ডিং থেকে ছুটে বেরিয়ে গাড়ি হাকিয়ে নিয়ে চলল ব্রিউ ব্লিস কফি শপের উদ্দেশ্যে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঝড়ের গতিতে ব্রিউ ব্লিসের সামনে এসে গাড়ি দাড় করালো ফারিশ। আসার পথে সমস্ত রাস্তা ওর সন্ধানী চোখ জোড়া আনাবিয়াকে খুজে ফিরেছে, কিন্তু কোথাও পায়নি!
গাড়ি থেকে বেরিয়ে ব্রিউ ব্লিসের দরজা এক ধাক্কায় খুলে ভেতরে ঢুকলো ও।
কিন্তু ভেতরটা সম্পুর্ন ফাকা, শপের য়্যোনার শপ থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ফারিশকে এতরাতে এখানে দেখে সে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
“সর্যি স্যার, শপ বন্ধ হয়ে গেছে, এখন আর কোনো কফি পাওয়া যাবে না।”
ফারিশ চারদিকে একবার দ্রুত গতিতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে আইলিন নামক একটা মেয়ে ওয়্যেটারের কাজ করে, ওর কাছে দশটার দিকে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে এসেছিলো; মেয়েটা প্রচন্ড সুন্দরী, ধবধবে গায়ের রঙ, পুতুলের মতো দেখতে। ওরা কোথায় গেছে বলতে পারেন?”
লোকটা ফারিশের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করে ভড়কালো, বিস্ময় নিয়ে মনে মনে একবার আওড়ালো, ‘ফারিশ জাবিন!’
পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলে উঠলো,
“জ্বি স্যার, ওদেরকে আমি দেখেছি। কিন্তু ওরাতো অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। কোনো অসুবিধা?”
মাথা খারাপ হয়ে গেলো ফারিশের, আনাবিয়াকে ও এখন কোথায় খুঁজবে সেটাই বুঝতে পারলোনা। কিছুক্ষণ অথর্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে জিজ্ঞেস কিরলো,
“আইলিন মেয়েটার বাসার অ্যাড্রেস দিতে পারবেন?”
লোকটি সুক্ষ্ম চোখে ফারিশকে পরখ করে নিজের ওয়্যেটারদের লিস্ট থেকে আইলিনের বাসার ঠিকানাটা টুকে দিলো।
ফারিশ তখনি ঠিকানাটা নিয়ে গাড়ি হাকালো সেদিকে। ফারিশ চলে যেতেই লোকটা ঝড়ের গতিতে ছুটলো শপের বেইজমেন্টের দিকে।
দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আতঙ্কিত সুরে বেইজমেন্টের এক কোণায় চেয়ারে বসে থাকা ম্যাসনের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
“বস! আমারা হয়তো কোনো বড়সড় ঝামেলায় পড়তে চলেছি!”
চেয়ারে স্ট্যাচুর মতো স্থীর হয়ে বসা, গলায় নেক ব্রেইস পরিহিত ম্যাসন বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় শুধালো,
“এখন আবার কিসের ঝামেলা?”
আনাবিয়ার এক থাপ্পড়ে মুখ টা নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের ওপাশে চলে যাওয়ায় ঘাড় মচকে গেছে ওর, ভয়াবহ অবস্থা! কিছুক্ষণের জন্য ঘাড় সোজা করতে পারছিলোনা, পরে ডাক্তার ডেকে এনে ঠিকঠাক করা হয়েছে, গলায় নেক ব্রেইস পরে মূর্তির মতো বসে আছে সে এখন।
শপ য়্যোনার এগিয়ে এসে হাফানো গলায় বলল,
“ফারিশ জাবিন এসেছিলেন……!
“ফারিশ জাবিন এসেছিলো তো আমি কি করবো?”
“ওই পুতুলের মতো মেয়েটিকে খুঁজতে এসেছিলো! আইলিনের বাসার ঠিকানা নিয়ে গেছে। এতরাতে ফারিশ কোনো মেয়ের খোজে বেরিয়েছে মানে সে নিশ্চয় সাধারণ কেউ হবে না!”
বিস্ময় নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে শপ য়্যোনারের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো ম্যাসন, সামান্য ভড়কানো সুরে বলল,
“ফারিশ জাবিন ওই মেয়েটিকেই খুঁজতে এসেছে তুমি নিশ্চিত?”
“হ্যাঁ বস! আইলিনের নাম সহ পুতুলের মতো মেয়েটির কথা বলেছে, ওদের সাথে একটা ছেলে ছিলো সেটাও বলেছে, একদম স্পেসিফিক ভাবে।”
ম্যাসন ভাবলো কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,
“ফারিশ জাবিনের সাথে এখনো পর্যন্ত কোনো বাইরের মেয়েকে আমি দেখিনি। ওর যেসব বোনেরা আছে তাদেরকে আমি আগেও দেখেছি এবং তাদেরকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। তারা কেউ এসব জায়গায় আসবেনা।
চিন্তা করোনা, মেয়েটা হয়তো ওর পরিচিত কেউ।
আর ফারিশের কেউ হলেও আমি পরোয়া করিনা! মেয়েটা থাপ্পড় মেরেছে আমাকে, এই ম্যাসন ইভান কে থাপ্পড় মেরেছে! এর প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো!”
শেষোক্ত কথা গুলো দাঁতে দাঁত পিষে বলল ম্যাসন। শপ য়্যোনার ম্যাসনের কথায় সায় জানিয়ে দ্রুত গতিতে মাথা নাড়ালো কয়েকবার। ম্যাসন ওর উদ্দেশ্যে বলল,
“বার বার আমার সামনে মাথা নাড়াবে না, অস্বস্তি হচ্ছে। তুমি বাসায় চলে যাও, রোজ যেভাবে বাসায় যাও সেভাবেই চলে যাবে, বাইরে থেকে সুন্দরভাবে লক করে যাবে যেন কেউ বুঝতে না পারে ভেতরে কেউ থাকতে পারে। চাবির একটা এক্সট্রা কপি আমার ছেলেদের কারো কাছে দিয়ে যাও।
আজ আমি এখানে ফুলসজ্জা করবো, ওই পুতুলের মতো পরীর সাথে মনের মতো ফুলসজ্জা! কারো ডিস্টার্বেন্স আমি চাইনা!”
শপ য়্যোনার লোকটা আবার মাথা নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বেইজমেন্টের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। বেইজমেন্টের দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলো ম্যাসনের ছেলেরা।
শপ য়্যোনার শপ বন্ধ করে বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চলে গেলো নিজের বাসায়।
আইলিনের বাসা থেকে বের হয়ে ঝড়ের গতিতে আবার গাড়ি হাকিয়ে শহরের দিকে এগোতে নিলো ফারিশ, তখনি ওর ফোনে কল এলো মীরের।
আনাবিয়ার কলের অপেক্ষায় থাকা মীর এতক্ষণ নিজের কামরায় সাম্রাজ্যের কাগজ পত্রের ভেতর ডুবে ছিলো, ফোনের সাথে একটা বিশালাকার প্রেম পত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলো যেন এক প্রেম পত্রেই তার বেগমের সমস্ত অভিমান গলে পানি হয়ে যায়!
কিন্তু এত রাত হয়ে যাওয়ার পরও আনাবিয়ার কল না পেয়ে নিজেই কল দিয়েছে কয়েকবার, কিন্তু ফোন বন্ধ দেখানোয় এবার সরাসরি কল দিয়েছে ফারিশকে।
ফারিশ গাড়ি থামিয়ে তড়িঘড়ি করে রিসিভ করলো কল, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মীর শুধালো,
“তুমি কোথায় আছো ফারিশ? আমার শিনুকে ফোনটা দিয়েছো? ও কি এখনো রেগে আছে আমার ওপর?”
“ই-ইয়োর ম্যাজেস্টি! শেহজাদীকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা!”
ফারিশের উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত কণ্ঠনিঃসৃত বাক্যটা কানে যাওয়া মাত্রই বুকের ভেতর যেন হৃদপিণ্ডটা থেমে গেলো মীরের! গর্জে উঠে ও জিজ্ঞেস করলো,
“খুঁজে পাচ্ছোনা মানে? খুঁজে পাচ্ছোনা মানে কি ফারিশ? ও কি বোর্ডিংয়ে নেই? না থাকলে কোথায় গেছে?”
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, শেহজাদীকে ফোনটা দেওয়ার জন্য আমি বারোটার দিকে পৌঁছেছিলাম ইম্পেরিয়ালে।
কিন্তু সেখানে শেহজাদীর রুমমেট এসে বলল উনি নাকি তাঁর আইলিন নামক এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে ব্রিউ ব্লিস কফি শপে গিয়েছিলেন।
এগারোটার আগে ফিরে আসার কথা থাকলেও বারোটা বেজে গেলেও ফেরেননি।
আমি তখনি ওই কফি শপে পৌঁছাই, সেখানে গিয়ে জানতে পারি তাঁরা সবাই মিলে নাকি অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে!
ওখান থেকে শেহজাদীর সেই বান্ধবীর বাসার ঠিকানা নিয়ে আমি তার বাসায় চলে যাই, অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় শেহজাদী তাদের বাসায় গেছে কিনা ভেবে।
কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারি সেই মেয়েটিও বাসায় পৌছায়নি!
তার মা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে মেয়ের ফোনে, কিন্তু মেয়েটা কল তোলেনি। আর এরপর কল দিলে নাকি ফোন বন্ধ দেখিয়েছে! এখনো তার ফোনে আর একটাবারও কল ঢোকেনি!
আমি সমস্ত রাস্তা জুড়ে শেহজাদী কে খুঁজতে খুঁজতে এসেছি, কিন্তু তিনি কোথাও নেই ইয়োর ম্যাজেস্টি!”
ফারিশের কথা কানে যাওয়া মাত্রই মীরের এতক্ষণের কুঞ্চিত ভ্রু জোড়া অস্বাভাবিক রকমের স্বাভাবিক হয়ে এলো হঠাৎ! চোয়াল দ্বয় দৃঢ় হয়ে উঠলো ওর মুহুর্তেই। ভারী গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
“তুমি খুঁজতে থাকো, আমি এখনি আসছি।”
কলটা কেটে দিয়েই মীর কামরা থেকে বের হয়ে এলো দ্রুত পায়ে। বাইরের পোশাক পরার মতো সময় হলোনা ওর, পরণের ট্রাউজার আর টি শার্ট পরেই বেরিয়ে এলো ও।
ওকে এত রাতে এভাবে বের হতে দেখে বাইরে দাঁড়ানো হামদান এগিয়ে এসে চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, আপনি এত রাতে এভাবে বের হচ্ছেন! কোনো খারাপ সংবাদ?”
“আমার শিনুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা হামদান! আমি কুরো আহমারে যাচ্ছি।”
মীরের মুখে শেহজাদীর নিখোঁজের খবর শুনে অস্থির হয়ে উঠলো হামদান! চোখে মুখে ওর অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো মুহুর্তেই। শেহজাদী নিখোঁজ কথাটা যেন বিশ্বাস হতে চাইলোনা ওর!
পূর্ণ দৃষ্টিতে সে একবার দেখলো মীরের মুখপানে। হিজ ম্যাজেস্টির মুখখানা এই মুহুর্তে মাত্রারিক্ত শান্ত!
হামদান বেশ ভালোভাবেই জানে হিজ ম্যাজেস্টির মুখ তখনি এমন নিশুতি রাতের ন্যায় শান্ত থাকে যখন তার বুক জুড়ে চলে বিশাল ঘুর্ণিঝড়!
এতগুলো বছর ধরে সে হিজ ম্যাজেস্টিকে দেখে আসছে, এই প্রচন্ড শান্ত মুখোশ্রি ভালো সংবাদ বয়ে আনেনা কখনোই!
আনাবিয়ার চিন্তায় মাথার ভেতর চক্কর দিতে লাগলো হামদানের। মীরকে একা একাই বের হতে দেখে ও উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, আপনি একা একা শেহজাদীকে কীভাবে খুঁজবেন?”
মীর উত্তরে কিছুই বলল না, তড়িতে চোখ তুলে শুধু তাকালো একবার হামদানের দিকে। হামদান দেখলো মীরের দৃষ্টি! ওই হিংস্র শিকারী দৃষ্টি দেখে হামদান পিছিয়ে গেলো দু কদম!
মীরের চোখের দৃষ্টির নিঃশব্দ উত্তর টের পেলো ও, চোখ জোড়া মুহূর্তে বলে দিলো মীর সবকিছুর জন্য প্রস্তুত, সে জানে তাকে কী করতে হবে।
বুক জুড়ে এক অদ্ভুত অশান্তি, অস্থিরতা নিয়ে ভারী, দ্রুত পা ফেলে প্রাসাদের এক্সিটের দিকে এগোলো মীর।
ওর শিনজো বিপদে পড়েছে নিশ্চিত!
ওর শিনুর বিহেভিয়ার ওর পরতে পরতে চেনা, সবাইকে চিন্তায় ফেলে গা ঢাকা দেওয়ার মতো মেয়ে ওর শিনু নয়, কখনোই নয়!
বাইরের দিকে এগোতে এগোতে ওর মস্তিষ্ক শুধু বার বার ওকে জানান দিতে লাগলো ওর শিনু বিপদে পড়েছে, ঘোরতর বিপদ!
হয়তো ওর প্রাণটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মীরের জন্য! কখন তার মীরি এসে তাকে সমস্ত বিপদ থেকে দুহাতে সযত্নে আগলে নিয়ে নিজের বুকে লুকিয়ে নিবে সেই অপেক্ষা!
প্রাসাদের এক্সিট দিয়ে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে মীর ঝড়ের বেগে, বাতাস কেটে এগোলো কুরো আহমারের দিকে।
বের হয়েই কল লাগালো কাউকে।
ওপাশের ব্যাক্তিটা এত রাতে স্বয়ং বাদশাহর ফোন কল পেয়ে আতঙ্কিত হলো, কল রিসিভ করে কানে ধরতেই মীর ক্রোধে পরিপূর্ণ দৃঢ় স্বরে বলে উঠলো
“অ্যান্ড্রু! আমার স্ত্রী, আমার পৃথিবীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, তাঁকে কেউ অপহরণ করেছে নিশ্চিত!
তোমার সমস্ত টিমকে এই মুহুর্তে রাস্তায় নামিয়ে দাও!
রাতের নটা পয়তাল্লিশ থেকে এখন পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল ক্রেস্ট থেকে শুরু করে ব্রিউ ব্লিস কফি শপ এবং এর আশেপাশের প্রতিটা রোড, প্রতিটা বাসা বাড়ি, শপিং মল, বিল্ডিং, প্রত্যেকটা গোপন স্থান, সবগুলোর সমস্ত সিসিক্যাম ফুটেজ চেইক করো।
সবগুলো ফুটেজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে; প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড!
একটা অংশও যেন বাদ না পড়ে, কুইক! পনেরো মিনিটের ভেতরে আমার সমস্ত আপডেট চাই!
আমার স্ত্রীর শরীরে যদি একটা আচড়ও বসে তবে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো শহর ধ্বংস করে দিবো! আমার স্ত্রীকে আমি আমার বুকে ফেরত চাই অ্যান্ড্রু, সম্পুর্ন সুস্থ এবং নিরাপদ অবস্থায়!”
বলেই খট করে কল কেটে দিলো মীর। ওর কথার তীব্রতা, কণ্ঠের ক্রোধান্বিত কম্পনে সিটি সিকিউরিটি হেড অ্যান্ড্রুর শিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেলো!
হার ম্যাজেস্টি নিখোঁজ! কে অপহরণ করেছে তাঁকে? কার এমন বুকের পাটা!
মুহুর্তেই উষ্ণ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো সে, কল লাগালো নিজের সমস্ত অধস্তন কর্মকর্তাদের নিকট। কল করে সবাইকে বের হতে বলে নিজেও বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দ্যেশ্যে।
মীর কল দিলো আবার অন্য কাউকে। ওপাশের ব্যাক্তিটা হিজ ম্যাজেস্টির ফোন কল দেখে আঁতকে উঠলো এক প্রকার!
হিজ ম্যাজেস্টি কোনো গুরুতর কারণ ছাড়া তাকে কখনোই কল দেননা! মুহুর্তেই কল রিসিভ করলো সে! কল রিসিভ হতেই মীর ভারী, দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,
“ফ্রান্সিস, আমার স্ত্রী রাতের দশটার পর থেকে নিখোঁজ! অ্যান্ড আ’ম শিওর তাঁকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।
আ’ ন্যো তুমি কুরো আহমারের প্রতিটা ধুলিকণার খবর রাখো!
আমার স্ত্রীর এক্সাক্ট লোকেশন চাই আমার, যে শু*য়ো*রের বাচ্চা ওকে কিডন্যাপ করেছে তার সমস্ত বায়োডাটা সহ।
রাত পোহানোর আগেই আমার স্ত্রীকে আমি আমার বুকে ফেরত চাই!
আর হ্যাঁ, কুরো আহমারে গিয়ে যদি আমাকেই তাকে খুঁজে বের করতে হয় তবে কুরো আহমার সহ তোমাদের সবাইকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিবো আমি! মাইন্ড ইট!”
বলেই কল কেটে দিলো মীর। ফ্রান্সিস নামক কুরো আহমারের আন্ডারগ্রাউন্ড মাফিয়া লিডারটি হতভম্ব হয়ে বসে রইলো নিজের বিছানায়।
হিজ ম্যাজেস্টি রেগে আছেন, প্রচন্ড রেগে আছেন! অবস্থা খারাপ। ক্রোধে পরিপূর্ণ হয়ে আছেন তিনি। তার এমন ক্রোধের ফলাফল কখনোই ভালো হয়না!
তটস্থ হলো ফ্রান্সিস! হিজ ম্যাজেস্টি যদি এইখানে এসে হার ম্যাজেস্টিকে খুঁজে না পান তবে নিশ্চিতভাবেই ধ্বংস করে দিবেন সবকিছু!
হিজ ম্যাজেস্টি ঠিক কি কি করার ক্ষমতা রাখেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা! হার ম্যাজেস্টি কে খুঁজে না পেলে তিনি সমস্ত পৃথিবী উলটে দিতে প্রস্তুত!
ফ্রান্সিস সাথে সাথেই কল লাগালো তার সমস্ত শাখা প্রশাখায়, নিজের সমস্ত বাঘা বাঘা ছেলেদের লাগিয়ে দিলো হার ম্যাজেস্টিকে খুঁজতে! গুপ্তচর গুলোকে মুহুর্তেই ছড়িয়ে দিলো শহর জুড়ে।
তারা নেমে গেলো শহরের অলিগলি, গোপন আস্তানা, বন্দরের পরিত্যক্ত এলাকা গুলোতে খোঁজ করার জন্য।
মুহুর্তেই কুরো আহমারের সমস্ত নেটওয়ার্ক, ফোনকল, আর গুপ্তচররা ব্যস্ত হয়ে পড়লো! রাত শেষ হওয়ার আগেই জেগে উঠলো ঘুমন্ত শহর! পুরো শহর জুড়ে শুরু হয়ে গেলো তোলপাড়! হার ম্যাজেস্টি নিখোঁজ!
মীর গাড়ি হাকালো ঝড়ের বেগে! যতই দ্রুত এগোচ্ছে সময় যেন ততই আটকে আসতে চাইছে, পথ যেন শেষই হচ্ছে না! ওর শিনু কোথায় আছে, কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে জানার জন্য প্রাণটা বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর;
চোখের কোণ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসতে চাইছে বারবার।
বাচ্চা মেয়েটা একা একা কোথায় কি করছে! ভয় পাচ্ছে হয়তো খুব! অপেক্ষার প্রহর গুনছে হয়তো ওর পৌছানোর!
মীর গতি বাড়ালো গাড়ির আরও। বুলেটের গতিতে টানেল বেয়ে এগোতে লাগলো ওর কালো রঙা রয়্যাল কার খানা।
ব্রিউ ব্লিসের বেইজমেন্টের একটি কামরার ভেতর লোহার শেকল দিয়ে বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে আনাবিয়াকে। হাত পা কোমর সবকিছুই বেধে রাখা ওর চেয়ারের সাথে। চোখ মুখ ওর ভয়ঙ্কর!
শিকারী দৃষ্টি জোড়া স্থীর হয়ে আছে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওকে পাহারা দিতে থাকা ম্যাসনের দুজন ছেলের দিকে।
চার আঙুলের ছাপ পড়ে আছে বা গালে, রক্তিম হয়ে আছে জায়গাটা! ক্রোধে চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে বার বার দাঁতে দাঁত পিষে আসছে ওর।
ছেলেদুটো ওর থেকে একটা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে নিজেদের ভেতর কথা বলছে ফিসফিস করে।
আনাবিয়ার পাশেই হাতপা বেধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে আইলিনকে, জ্ঞান নেই ওর। অন্যপাশে আরিশ পড়ে আছে, কপাল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত আসছে ওর, মেঝে ভিজে উঠছে টকটকে রক্তে!
ওদেরকে পাহারা দিতে থাকা ছেলেদুটোর একজন অন্যজনকে ফিসফিস করে বলল,
“মেয়ে মানুষের গায়ে এমন ভয়ানক জোর থাকতে পারে তা আমি কখনো কল্পনাও করিনি! বাপরে বাপ, এক থাপ্পড়ে বসের ঘাড় ঘুরিয়ে দিলো!
আমরা এতগুলো ছেলে মিলেও ওকে ধরে রাখতে পারছিলামনা, নিকোকে তো এক লাথিতে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিলো! বেচারা এখনো পেটে হাত দিয়ে বসে আছে বাইরে, কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করলাম তা বলল ওর নাড়িভুড়ি সব নাকি গলে গেছে ভেতরে।
দড়ি দিয়ে বাধা গেলোনা মেয়েটাকে, সাথে সাথে ছিড়ে ফেললো সবগুলো! অতো শক্ত দড়ি!”
“ভাগ্যিস এই শেকলটা ছিলো এইখানে, নইলে কি হতো বলতো! আমাদেরকে চ্যাপটা করে দিতো এ মেয়ে!
আমার কি মনে হয় জানিস? এ কোনো ডাইনি ফাইনি হবে, নইলে এতটুকু মেয়ের গায়ে এত জোর কি করে হয়!
আর শালা আমাদের দুজনকেই এইখানে রাখতে হলো? আর কি লোক ছিলোনা এই মেয়েকে পাহারা দেওয়ার জন্য?
এ যদি এবার ঘাপাঘাপি করে এই লোহার শেকল ভেঙে ফেলে তাতেও আমি অবাক হবোনা, আর যদি ভাঙতে পারে তবে আমাদের কি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিভাবে তাকিয়ে আছে দ্যাখ? মনে হচ্ছে ছাড়া পেলেই গিলে খাবে আমাদের।”
“তুই ঠিক বলেছিস রিক, এ মেয়ে ডাইনিই! নইলে এত সুন্দরী হবে কেন? আমি যখন ওকে ধরেছিলাম মনে হচ্ছিলো যেন হাতের ভেতর গলে যাচ্ছে ওর শরীর! আর সেই মেয়ের গায়ে কিনা এত্ত জোর!
বস আমাদের এই মেয়ের ওপর টাস্কি খেয়েছে, নইলে এখনো একে বাচিয়ে রাখতো না, থাপ্পড় মারার সাথে সাথেই সটকে দিতো।
কিন্তু সত্যি বলতে কি জানিস? আমার কেমন জানি মায়া লাগছে মেয়েটার জন্য! এইভাবে একদম দেখতে ইচ্ছা করছেনা একে, মনে বলছে ছেড়ে দিই একে, চলে যাক ও! এত সুন্দর মেয়েটাকে কিভাবে বেধে রেখেছে!”
ওদের কথার মাঝেই বাহির থেকে ডাক আসলো রিক নামের ছেলেটার, ম্যাসন ডেকে পাঠিয়েছে তাকে। রিক যেতে নিলে অন্যজন ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
“আমাকে এই ডাইনির কাছে একা রেখে যাসনা ভাই! এ যদি শেকল ভেঙে আমাকে ধরে তবে আমি মরে যাবো ভাই, আমি ভার্জিন এখনো!”
রিক হেসে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলো,
“আমি বসের কথা শুনেই চলে আসবো। আর যদি তোকে মেরেও ফেলে তবে তুই মরার আগেই তোর ভার্জিনিটি নষ্ট করার ব্যাবস্থা করবো আমি, চিন্তা করিস না।”
রিক বেরিয়ে গেলো ম্যাসনের কাছে। চেয়ারে বসা ম্যাসনের পাশে গিয়ে দাড়াতেই ম্যাসন স্থীর হয়ে বসে বলে উঠলো,
“আমার সামনে এসে দাঁড়া, আমি ঘাড় ঘুরাতে পারছিনা দেখছিস না?”
রিকের হাসি পেলো যেন, একটা মেয়ের জন্য ওদের এতগুলো ছেলের জান প্রাণ একেবারে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে! আর বসের তো এক থাপ্পড়ে ঘাড় ঘুরে গিয়েছে!
প্রাণপণে নিজের হাসিটা চেপে রাখার চেষ্টা করে রিক গিয়ে দাড়ালো ম্যাসনের সামনে, ওর দিকে তাকিয়ে ম্যাসন জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটা এখন আর লাফালাফি করছে?
“না বস, শেকল দিয়ে বাধার পর স্থীর হয়ে আছে। আর কিছু করেনি।”
ম্যাসন স্বস্তির শ্বাস ফেললো একটা, তারপর আবার জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটি ঠিক আছে তো? আঘাত লাগেনি তো কোথাও?”
রিক বুঝলো ম্যাসনেরও মায়া লাগছে মেয়েটার জন্য, নইলে যে ছেলে তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে সাথে সাথে কুপিয়ে দেয় সে একটা মেয়ের আঘাত নিয়ে এত উতলা হবে কেন? রিক ম্যাসন কে আস্বস্ত করে উত্তর দিলো,
“জ্বি বস, ঠিক আছে। আঘাত লাগেনি কোথাও, শুধু……. চোয়ালের থাপ্পড়ের দাগটা স্পষ্ট হয়ে আছে।”
“নরম গাল, তাই লেগে গেছে বেশি, আর আমারও যে কি হয়েছিলো! মাথা গরম হয়ে গেছিলো হঠাৎ, গায়ের জোরে থাপ্পড় মেরে দিয়েছি। এখন খারাপ লাগছে অনেক!”
নরম গলায় বলল ম্যাসন, চোখে মুখে ওর অপরাধবোধ ফুটে উঠেছে।
এমন সময় ম্যাসনের ফোনে কল আসলো ওর বাবা ড্যানিয়েল ইভানের। রিক কে ইশারায় আবার আনাবিয়াকে পাহারা দিতে যেতে বলে কল তুললো ম্যাসন। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ড্যানিয়েল হুড়োতাড়া করে বলে উঠলো,
“ম্যাসন, কোথায় আছিস তুই?”
“আমি ব্রিউ ব্লিসে আছি বাবা। কেন? কোনো সমস্যা? তোমার গলা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?”
“তুই তো তবে কাছাকাছিই আসিস।
শোন, ওপর মহল থেকে প্রচণ্ড চাপ আসছে! একটা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে ব্রিউ ব্লিস কফি শপের আশপাশ থেকে।
ধবধবে ফর্সা, পুতুলের মতো দেখতে একদম। মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে আজ রাতের ভেতরেই নইলে বিপদে পড়তে হবে সবাইকে।
তুই ওখান থেকে এখনি বের হ, বের হয়ে মেয়েটাকে খুজতে লেগে পড়। আমি এদিকটায় দেখছি! খারাপ কিছু হওয়ার আগেই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”
ম্যাসন শুকনো ঢোক গিললো একটা, ওর বাবা কি পাশের রুমে আটকে রাখা মেয়েটির কথাই বলছে? সেও তো ধবধবে ফর্সা, পুতুলের মতো! তবে? ম্যাসন গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কি তাকে দেখেছো বাবা?”
“না, আমাদেরকে শুধু এই ইনফর্মেশন টুকুই দেওয়া হয়েছে। মেয়েটা ইম্পেরিয়াল ক্রেস্টে পড়তো, টেন্থ গ্রেডের স্টুডেন্ট। ব্রিউ ব্লিসে আইলিন নামে একটা মেয়ের কাছে গেছিলো, সাথে আর একটা ছেলেও ছিলো, আরিশ নামে৷ যত দ্রুত পারিস মেয়েটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা কর, একদম অক্ষত ভাবে। তোর পরিচিত যত কিডন্যাপার, বা ওই লাইনে কাজ করা লোক আছে সবার কাছে খোঁজ নে। নইলে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে।”
ম্যাসনের মাথা ঘুরতে লাগলো এবার, কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটি কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ, বাবা?”
“আমি কিছুই জানিনা ম্যাসন, তবে ওপর মহল যেভাবে চাপ দিচ্ছে তাতে মেয়েটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউই হবে।
যতটুকু ধারণা করছি মেয়েটি রাজ পরিবারের সাথে কোনো ভাবে সম্পর্কিত, কারণ কন্ট্রোলার নওয়াস জাবিন আর তার ছেলে ফারিশ জাবিন সমস্ত কুরো আহমার চষে বেড়াচ্ছে মেয়েটির খোজে!”
ম্যাসন এবার ভড়কালো প্রচন্ড, ড্যানিয়েল কল রেখে দিলো ওপাশ থেকে।
ম্যাসন ওর ভয়ে পাংশুবর্ণ ধারণ করা মুখ খানা নিয়ে এগোলো আনাবিয়াকে আটকে রাখা কামরার দিকে।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ওর চোখে পড়লো আনাবিয়ার হিংস্র মুখোভঙ্গি!
শিকারী দৃষ্টিতে সে তখনো চেয়ে আছে রিক আর তার পাশে থাকা গার্ড টার দিকে। ম্যাসন ঢুকতেই আনাবিয়ার দৃষ্টি রিক দের ওপর থেকে সরে গিয়ে পড়লো ম্যাসনের ওপর।
আনাবিয়ার দৃষ্টি দেখে ম্যাসনের শিড়দাড়া বেয়ে বয়ে গেলো একটক ঠান্ডা স্রোত! ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সে দাড়ালো আনাবিয়ার সামনে।
চোয়ালের থাপ্পড়ের দাগটা রক্তিম হয়ে দগদগ করছে, প্রচন্ড চোখে বাধছে সেটা। একটু বেশিই জোরে মারা হয়ে গেছে!
আনাবিয়ার দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে ম্যাসন গলা খাকারি দিয়ে নরম গলায় শুধালো,
“নাম কি তোমার? কোথা থেকে এসেছো? পরিচয় দাও তোমার, সত্যিকার পরিচয়!”
আনাবিয়া ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলোনা, পূর্বের মতো করেই চেয়ে রইলো ম্যাসনের দিকে। ম্যাসন ওর দৃষ্টি দেখে দমে গেলো কিছুটা, নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“ফারিশ জাবিন কি হয় তোমার? জাবিন ফ্যামিলির সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”
আনাবিয়া প্রতিউত্তরে কিছুই বললনা, কিছুক্ষণ স্থীর হিয়ে থেকে হঠাৎই তাচ্ছিল্যের সাথে বাকা হাসলো ও। পরক্ষণেই আবার আগের মতো কঠিন মুখোশ্রি নিয়ে ম্যাসনের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তাকালো অন্যদিকে।
ম্যাসন সরে এলো আনাবিয়ার থেকে, মনের ভেতর ক্যু ডাকছে ওর, সামথিং ইজ রং! হয়তো ও বেশ ভালোভাবেই ফেসে গেছে কোথাও!
ম্যাসন বের হয়ে এলো ওই কামরা থেকে, এসেই কল লাগালো ড্যানিয়েলের কাছে। ও পাশ থেকে কয়েকবার রিং হওয়ার পর ড্যানিয়েল কল রিসিভ করে হন্তদন্ত গলায় বলে উঠলো,
“পেয়েছিস মেয়েটাকে?”
“বাবা! ওই মেয়েটিকে…… মেয়েটিকে আ-আমিই আটকে রেখেছি আমার কাছে!”
কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো ম্যাসন। ড্যানিয়েল কিছুক্ষণ স্তব্দ হয়ে রইলো ওপাশে, কিছুক্ষণ পরেই গর্জে উঠে বলল,
“কি সর্বনাশ কিরেছিস তুই! কেন মেয়েটিকে আটকে রাখতে গেছিস? ওকে দেখে তুই বুঝিসনি ও কোনো বড় জায়গা থেকে বিলং করে?
ফ্রান্সিস নিজে কল দিয়ে সবাইকে বলেছে মেয়েটিকে খুঁজতে! সমস্ত শহর জেগে গেছে মেয়েটিকে খোঁজার জন্য! আর তুই কিনা সেই মেয়েটিকেই আটকে রেখেছিস?
ওপর মহল যদি জানতে পারে তবে কচুকাটা করে ফেলবে তোকে!
কি কি করেছিস তুই ওই মেয়েটার সাথে?”
“বাবা আমি কিছুই করিনি এখনো বাবা, আমি শুধু একটা থাপ্পড় মেরেছি ওকে, এখন ও শেকল দিয়ে বাধা আছে পাশের কামরায়!
বাবা…… আমি এখন কি করবো বাবা? মেয়েটি আমাকে ভালোভাবেই চিনে গেছে! এখন যদি মেয়েটিকে আমি ছেড়ে দিই তবে তো ও চিনে ফেলবে আমাকে! বলে দেবে সবাইকে যে আমিই ওকে আটকে রেখেছিলাম, থাপ্পড় মেরেছিলাম! আমাকে তো মেরে ফেলবে ওরা!”
ড্যানিয়েলের কপালে জুড়ে ঘামের স্রোত বইতে লাগলো। একটা মাত্র ছেলে ওর, যখন যা ইচ্ছা হয়েছে তাই করেছে কখনো কোনো কিছুতে মানা করেনি!
আর আজ একটা মেয়েকে আটকে রেখেই ওর ছেলের প্রাণ হাতে চলে আসতে চলেছে! কি করবে এখন ও?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ড্যানিয়েল বলে উঠলো,
“তুই ব্রিউ ব্লিসে আছিস তাই না? একটা কাজ কর!”
কিছুক্ষণ নিরব থেকে ড্যানিয়েল আবার বলল,
“ব্রিউ ব্রিস থেকে লুমিরা নদী বেশি দূরে নয়। ওখানে একটা পরিত্যক্ত কারখানা আছে।
বেশ বড়সড় পাথর মজুদ করে রাখা আছে ওই কারখানায়, ওইখানে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেলবি, তারপর গায়ে পাথর বেধে নদীতে ফেলে দিবি। খবরদার কোনো চিহ্ন রাখবি না, একটা টুকরোও না!
লুমিরাতে প্রচুর স্রোত, স্রোতেই ডেডবডি ভেসে চলে যাবে সমুদ্রে, আর নয়তো পাথরের ভারে নদীর তলায় গিয়ে আটকে থাকবে। বেশি বেশি করে পাথর বেধে দিবি যেন মরার পর আবার ফুলে উপরে না উঠে আসে৷ বুঝতে পেরেছিস?
“এ-এত সুন্দর একটা মেয়েকে মেরে ফেলবো?”
“তো কি করবি তুই? নিজে মরবি?
সুন্দর ধুয়ে পানি খাবি? তোর জান চলে যাচ্ছে এদিকে সেটা তুই দেখতে পাচ্ছিস না? তুই সুন্দর নিয়ে পড়ে আছিস!
তুই ধরা পড়লে তোর সাথে সাথে আমাকেও মরতে হবে, ধ্বংস হয়ে যাবে আমার সবকিছু!
বেশি কথা না বলে তোকে যেটা বলেছি সেটা কর, আর এক মুহুর্তও সময় নষ্ট করিসনা! জলদি!”
বলেই ফোন কেটে দিলো ড্যানিয়েল। ম্যাসনের গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ও হাক ছাড়লো ওর ছেলেদের উদ্দ্যেশ্যে, আর তার পরেই শেকলে বাধা আনাবিয়াকে সহ আইলিন আর আরিশকে সকলের অগোচরে গাড়িতে ঢুকিয়ে নিয়ে চলল লুমিরা নদীর দিকে।
ম্যাসনের সাথে কথা শেষ করে ড্যানিয়েল নিজেও বের হলো অন্যদের সাথে আনাবিয়াকে খুঁজতে। মেয়েটিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত অন্যদের সাথে ওকেও সার্চ মিশন চালিয়ে যেতে হবে!
কুরো আহমারে পৌছে ইম্পেরিয়াল ক্রেস্টের দিকে গাড়ি হাকিয়ে নিয়ে চলেছে মীর, হাত জোড়া স্টিয়ারিংয়ে, চোখ জোড়া রাস্তার দিকে নিবদ্ধিত, অস্থির মনখানা পড়ে আছে আনাবিয়ার নিকট!
অ্যান্ড্রুর কল আসলো এমন সময়ে, মীর কল রিসিভ করলে অ্যান্ড্রু বলে উঠলো,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, হার ম্যাজেস্টিকে লাস্টবার ব্রিউ ব্লিসের দিকেই দেখা গেছে, তাছাড়া তাকে অন্য কোথাও দেখা যায়নি৷
আপনার কথা মতো আমি ব্রিউ ব্লিসে আজ কারা কারা গিয়েছে সেটার একটা লিস্ট করেছি। লিস্টটা আমি পাঠিয়ে দিয়েছি আপনার মেইলে।
তবে লিস্টের ভেতরে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তি হলো শহরের নিয়নভেল এরিয়ার মাফিয়া ড্যানিয়েল ইভানের ছেলে ম্যাসন ইভান।
হার ম্যাজেস্টিকে ব্রিউ ব্লিসের রোডে যেতে দেখা গেলেও সেখান থেকে ফিরতে দেখা যায়নি। উনি এদিকে আর আসেনইনি।
শপের য়্যোনারকে ঠিক বারোটা পঁচিশে কফি শপের পাশের জিসি রোডে দেখা গেছে, সে ওই সময়েই শপ ক্লোজ করে বাসায় চলে গেছে।
আর তার ঠিক দুঘন্টা পর, আমরা হার ম্যাজেস্টিকে খোঁজার সার্চ মিশন চালু করার বেশ কিছুক্ষণ পর ওই জিসি রোডে পাঁচটা গাড়ি বের হতে দেখা গেছে একত্রে। এ ছাড়া আর কোনো কিছু দেখা যায়নি।
পাঁচটা গাড়ি পাঁচ রোডে চলে গেছে। এর ভেতরে ম্যাসনের গাড়িও ছিলো। ম্যাসনের গাড়িটা জিসি রোড হয়ে চলে গেছে নিয়নভেলের দিকে।
অন্য চারটা গাড়ির একটা গেছে লুমিরা নদীর দিকে, একটা জেসি রোড হয়ে সোলারার দিকে, আর একটা রিভারটনের দিকে, আর অন্যটা নোভারার দিকে।”
“গাড়ি গুলো অন্য রোড দিয়ে কোথায় কোথায় গেছে? কোথায় গিয়ে থেমেছে?”
“সে-সেটা ত-তো দ-দেখিনি ইয়োর ম-ম্যাজেস্টি!”
“তো কি করেছো এতক্ষণ? ওরা ব্রিউ ব্লিস থেকে একসাথে বেরিয়েছে অথচ আমার ওয়াইফ সেখান থেকে বের হয়নি!
আর তুমি গাড়ি গুলোর গন্তব্যস্থল না দেখে এখনো বসে আছো!”
বাঘের ন্যায় গর্জে বলে উঠলো মীর। ওপাশ থেকে অ্যান্ড্রু ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
“এ-এখনি দেখছি ই-ইয়োর ম্যাজেস্টি…..”
বাকি কথা শেষ করতে পারলোনা সে, তার আগেই কল কেটে দিলো মীর। এরপর আবার মনোযোগ দিলো রাস্তায়।
বুকের ভেতর শূন্যতায় ভর্তি এক বিশাল পাথর চেপে আছে ওর। প্রতিটা নিঃশ্বাসে ভারী কষ্ট গুলো যেন বের করে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে ও, কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিবার!
বুকের ভেতররে ধুকপুকানির গতি বেড়ে গিয়েছে! বুক জুড়ে ওর শিনুকে হারিয়ে ফেলার ভয় হাহাকার করে চলেছে বারংবার, দামামা বাজিয়ে চলেছে ওর বক্ষ পিঞ্জরের সমস্তটা জুড়ে!
গাড়ির ভেতর থেকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রতিটা স্থান খুটে খুটে দেখে চলেছে ও, যদি কোনোভাবে ওর শিনজোর উপস্থিতি ও টের পেয়ে যায়!
হাত চলতে চাইছে না আর, বার বার স্টিয়ারিংয়ের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ও!
দিশেহারা হয়ে উঠলো মীর! অন্ধকার মরুভূমির মাঝে পথ হারিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা মুসাফিরের মতো অসহায় বোধ করলো ও, যেখানে কোনো দিকনির্দেশনা নেই!
কোথায় যাবে, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা ও, মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে যেন এই মুহুর্তে!
শুধু বুকের ভেতর বারে বারে ঘূর্ণি পাকিয়ে চলেছে তীব্র এক যন্ত্রণা, যেন ওর আত্মাটাই কেউ টেনে নিয়ে যেতে চাইছে!
বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আনাবিয়ার শ্বেত শুভ্র মুখখানা, ওর মিষ্টি হাসি, কানে বেজে চলেছে ওর শিনুর ফুলঝুরির ন্যায় কথা!
মেয়েটা কি ভালো আছে? ও কি খুব ভয় পাচ্ছে? ও কি ওর নাম ধরে ডাকছে? বার বার ডাকছে? ওরা কি ওর শিনুকে ছুয়েছে? ওরা কি ওর প্রাণকে ব্যাথা দিয়েছে?
প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে উঠলো মীরের মস্তিষ্ক, দম বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন!
গাড়ির গতি আরও বাড়ালো মীর! অশান্তি অশান্তি, সমস্ত বুকে অশান্তি! এই অশান্তির কেন কোনো শেষ নেই?
তীব্র রাগ আর কষ্ট মিলে ঝড় তুলে ফেলতে শুরু করেছে ওর ভেতর! নিজেকে ধ্বংস করে ফেলার মতো একটা অদম্য তাড়না অনুভব করছে ও প্রতি মুহুর্তে! কিন্তু পরক্ষণেই আবার সামলে নিচ্ছে নিজেকে!
চোখ জোড়া ভর্তি হয়ে আসছে বারবার! আজ সকালেই মেয়েটিকে বকেছে ও! বার বার ওই ভয়ার্ত চেহারাটা ভেসে উঠছে ওর মানস্পটে!
কেন বকেছিলো ও তখন, কেন? কেন আরও আদর করলোনা! কেন ওকে নিজের বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে দিলো না! কেন যেতে দিলো নিজের থেকে?
দাঁতে দাঁত পিষলো মীর, তীব্র ক্রোধে নিজের মনে আওড়ালো,
“আমার প্রাণ থাকতে তোমার এতটুকু ক্ষতি আমি হতে দিবোনা শিনজো! আমি খুঁজে পাব তোমাকে, পাবোই!
নইলে ধ্বংস করে দেবো এই সবকিছু, সমস্তকিছু, সবাইকে!
তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, আর সেই অসম্পূর্ণতার যন্ত্রণা অসহনীয়, একেবারেই অসহনীয়!”
গাড়ির গতি আরও এক কাঠি বাড়িয়ে দিলো মীর!
কিন্তু মূল শহরে ঢোকার ঠিক আগ মুহুর্তে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো ওর, কানের কাছে যেন ক্ষীণ ডাক ভেসে এলো একটা, ‘মীরি!”
মুহুর্তেই তড়িত গতিতে গাড়ির ব্রেক কষলো মীর, সামনের চাকা স্থীর হয়ে যাওয়ায় গাড়ির পেছনের অংশ ঝড়ের গতিতে ঘুরে গিয়ে বাড়ি খেলো রাস্তার পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টর গায়ে, ভেঙে পড়ে গেলো সেটা তৎক্ষণাৎ!
মীর বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে, চারদিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থান দেখলো। ওর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের ওপর! লুমিরা নদীর ওপর থাকা ব্রিজ! মনে মনে একবার আওড়ালো ও, ‘লুমিরা!’
আর তার পরমুহূর্তেই তড়িত গতিতে আবার উঠে পড়লো গাড়ির ভেতর, এরপর বুলেটের গতিতে গাড়ি হাকিয়ে নিয়ে চলল লুমিরার প্রধান তীরের দিকে।
লুমিরা নদীর তীরে পাঁচ রোড ঘুরে চলে এলো পাঁচখানা গাড়ি। পরিত্যক্ত কারখানার পাশে গাড়ি গুলো পার্ক করে একে একে বের হলো সকলে। ম্যাসন বের হলো আনাবিয়াকে কোলে নিয়ে।
জ্ঞান নেই আনাবিয়ার, হাত পা গুলো এখনো শেকল দিয়েই বেধে রাখা।
আনাবিয়াকে কোলে নিয়ে বের হয়েই ম্যাসন ওর ছেলেদের উদ্দ্যেশ্যে দ্রুত গলায় বলে উঠলো,
“এই জলদি কারখানার ভেতর থেকে পাথর নিয়ে আয়, বড়সড় দেখে নিয়ে আসবি। দ্রুত!
একে পানিতে ফেলে বাকি দুজনকেও ফেলতে হবে। এক বিন্দু পরিমাণ চিহ্নও যেন কোথাও না থাকে!”
রিক সাথে সাথেই ওর সাথে আরও কজন ছেলেকে নিয়ে ছুটলো কারখানার ভেতর থেকে পাথর নিয়ে আসতে, দুহাতে করে ভারী ভারী পাথর গুলো ভেতর থেকে কোনো রকমে টেনে নিয়ে এলো ওরা।
ম্যাসন আনাবিয়াকে শুইয়ে দিলো মাটিতে, রিকদেরকে বলল পাথর গুলো আনাবিয়াকে বেধে রাখা লোহার শেকলের সাথে বেধে দিতে।
দ্রুত গতিতে কাজে লেগে পড়লো ওরা, দড়ি দিয়ে পাতজর গুলো আনাবিয়ার শরীরে বেধে দিতে দিতে রিক জোরে শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,
“শালার এক মেয়েকে শেষ করতে করতেই জান প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, একে অজ্ঞান করতে গিয়ে বোধ হয় এক লিটার ক্লোরোফর্ম চলে গেছে! মেয়ে মানুষ এত স্ট্রং কিভাবে হয়? একে পানিতে একবার ফেলে দিতে পারলেই বেচে যাই এবারের মতো।”
ওর পাশে থাকা অন্য ছেলে গুলোও সায় জানিয়ে অসহায়ের ন্যায় মাথা নাড়ালো। একটা গ্যাং শেষ করতেও ওদের কখনো এতটা কষ্ট করতে হয়নি শুধুমাত্র একটা সামান্য মেয়ের পেছনে যতটা শ্রম দিতে হয়েছে।
দ্রুত হাতে পাথর বাধতে থাকলো ওরা, আনাবিয়ার কোমরে, হাতে, পায়ে!
এমন সময় ড্যানিয়েলের কল এলো ম্যাসনের ফোনে। ম্যাসন পকেট থেকে ফোনবের করে স্ক্রিণের দিকে একবার তাকিয়ে রিকের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
“পাথর বাধা হয়ে গেলেই মেয়েটাকে ফেলে দিবি, আমি কথা বলে আসছি এখনি।”
ম্যাসন কারখানার ভেতরের দিকে গিয়ে কল রিসিভ করলো, কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ড্যানিয়েলের ভয়ার্ত কন্ঠ,
“ম্যাসন, ম্যাসন বাবা তুই কোথায়?”
“এইতো বাবা আমি লুমিরার এখানে, মেয়েটির গায়ে পাথর বাধা প্রায় শেষ, এখনি ওকে ফেলে দেবো, তুমি চিন্তা করোনা!”
ভয়ে আতঙ্কে আঁতকে উঠলো ড্যানিয়েল, ভীতসন্ত্রস্ত, আতঙ্কগ্রস্ত, উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,
“ওনাকে ওখানেই রেখে চলে আয়, যেভাবে আছেন সেভাবেই রেখে চলে আয়! যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আয় ওখানে থেকে, কিচ্ছু করিসনা ওনাকে!
উনি কোনো সাধারণ মেয়ে নয়, উনি আমাদের শেহজাদী, দেমিয়ান প্রাসাদের শেহজাদী! আমাদের বেগম!
ওনার কিছু হলে বাদশাহ শেষ করে দিবেন সবকিছু, যেভাবে আছেন ওভাবেই রেখে চলে আয়, দ্রুত পালা ওখান থেকে! এদিকে মোটেও আসবিনা, শহর ছেড়ে চলে যাবি সোজা! কিমালেব, ওয়ারদিচা যেদিকে পারবি চলে যাবি, আমি পরে যোগাযোগ করে নিবো তোর সাথে, তুই এখনি চলে যা ওখান থেকে!”
ড্যানিয়েলের কথা শুমে ম্যাসনের মাথা হ্যাং করলো যেন, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ও কিছুক্ষণ। মাথার ভেতর শুধু একটা কথাই এসে ঠোকর খেতে লাগলো বারবার, শেহজাদী’, শেহজাদী’!
ফোন ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এলো ও এদিকে আবার, রিক আর অন্যরা ততক্ষণে আনাবিয়া কে নদীর কিনারে নিয়ে চলে এসেছে, এখন ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, একটা ধাক্কার অপেক্ষা শুধু!
ম্যাসন ছুটে এলো সেদিকে, উচ্চস্বরে রিককে ডেকে চিৎকার করে বলল,
“রিক! ওনাকে ফেলিস না, এখানেই রেখে দে!”
কিন্তু সেই মুহুর্তেই রিকের সাথে দাড়ানো অন্য একজন খেই হারিয়ে ফেলে অসাবধানতা বসত আনাবিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো পানিতে, ভারী পাথরের ভারে মুহুর্তেই হুড়মুড়িয়ে পানির ভেতর পরে তলিয়ে গেলো আনাবিয়ার দেহখানা!
আতঙ্কে, উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলো ম্যাসন!
রিক তৎক্ষনাৎ ঝাপ দিলো পুকুরে আনাবিয়া কে তলিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে। কিন্তু পাথরের ভারে দেহটা দ্রুত গতিতে তলিয়ে যেতে লাগলো নিচে, আরও নিচে, অন্ধকারের ভেতর!
সেই মুহুর্তেই চোখজোড়া খুলে গেলো আনাবিয়ার, কালো রঙা লেন্স জোড়া পানির ঝাপটায় খুলে ভেসে চলে গেলো অন্যদিকে। অন্ধকার পানির ভেতরে রিকের দৃষ্টি গোচর হলো প্রচন্ডরকম দ্যুতি ছড়িয়ে ঝকঝক করতে থাকা হীরকখন্ডের ন্যায় এক জোড়া চোখ!
অসহায়ের ন্যায় পানির ভেতর থেকে পাথর বাধা শরীরটা ঝটপটিয়ে নিজেকে বাচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকা মেয়েটিকে দেখে আতঙ্কে পানির ভেতর থেকে মুহুর্তেই বেরিয়ে এলো ও!
আর ঠিক সেই মুহুর্তে ঝড়ের বেগে উড়ে এসে কেউ ঝাপ দিলো নদীর গভীরে! ঢেউয়ের পৃষ্ঠে তার শক্তিশালী ঝাপটায় কেঁপে উঠলো সমস্ত অঞ্চলটা, নদীর পানি জলোচ্ছাসের ন্যায় তীরে এসে বিশাল ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়লো ওদের গায়ে!
ম্যাসন সহ অন্যরা সেদিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নদীর পাড়ে! মুহুর্তেই কালো হয়ে উঠলো কুরো আহমারের আকাশ, কালো মেঘে ছেয়ে উঠলো ওদের মাথার ওপরে, বাতাস বইতে শুরু করলো তীব্র বেগে!
ঝড় হয়ে পানির ভেতর তীরের ফলার ন্যায় ঢুকে যাওয়া ব্যাক্তিটার শক্তিশালী আক্রোশে যেন ঝড় বইতে শুরু করলো লুমিরা নদীর পাড়ে!
নদীর তীব্র স্রোতকে উপেক্ষা করে নিজের সর্বচ্চ গতি দিয়ে নদীর তলের দিকে যেতে লাগলো মীর।
ওর থেকে ঠিক অল্প কয়েক হাত দূরে ওর শিনু, প্রতি মুহুর্তে তলিয়ে যাচ্ছে নদীর আরও গভীরে! অসহায়ের ন্যায় উঁচিয়ে রাখা ভ্রুদ্বয়ের নিচে ঝিকিমিকি করতে থাকা চোখ জোড়ায় ফুটে আছে প্রাণে বাচার জন্য এক রাশ আকুলতা!
পাথর বাধা হাত জোড়া বার বার ছটফটিয়ে আকড়ে ধরতে চাইছে ওর দিকে সর্বশক্তি দিয়ে ধেয়ে আসতে থাকা মীরকে, কিন্তু পারছেনা!
ভারী পাথর গুলো ওকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে নদীর বুকের ভেতর, একেবারে তলে পলি জমে যাওয়া কাদার ভেতর, চিরকালের জন্য!
সেই মুহুর্তেই নদীর তলদেশের দুপাশ থেকে হুড়মুড়িয়ে সেখানে প্রবেশ করলো শ খানেক সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল!
মুহুর্তে সাতরে আনাবিয়ার নিচে চলে এলো ওরা! আলতো ছোয়ায় চেষ্টা করলো আনাবিয়াকে নদীর তলায় পৌঁছে যাওয়া থেকে বাচাতে!
নিজেদের ধারালো দাঁতের ফাক দিয়ে সন্তর্পণে ধরার চেষ্টা করলো ওর সরু বাহু, টেনে নিয়ে আসতে চাইলো ওপরের দিকে, কিন্তু পাথরের ভার যে অনেক বেশি!
কোমরের কাছটা যে ছিড়ে যেতে চাইছে আনাবিয়ার! কোমর জুড়ে এত ভারী ভারী পাথরের টানে নিচ থেকে শরীরটা আলাদা হয়ে যাওয়ার উপক্রম!
একটি বার বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রাণ টা ওর বেরিয়ে যেতে চাইছে, ফুসফুসটা যেন বিস্ফোরিত হবে এখুনি!
মীর সেই মুহুর্তেই চলে এলো সেখানে! কুমিরদের মুখ থেকে আনাবিয়াকে ছিনিয়ে নিলো ও এক প্রকার, এক হাতে ওকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে অন্য হাতে এক টানে ভেঙে ফেললো লোহার শেকলের বন্ধনী!
দড়ি দিয়ে বাধা ভারী পাথর গুলো ছিড়ে ছিড়ে নিচে ছুড়ে দিয়ে মুক্ত করলো আনাবিয়াকে, অতঃপর ঠান্ডা পানির ভেতর থেকে আনাবিয়াকে আগলে নিয়ে বুকের ভেতর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লুমিরার বুকে ঘূর্ণি উঠিয়ে ঝড়ের গতিতে ও বেরিয়ে এলো পানির ভেতর থেকে! তারপর সোজা উঠে গেলো শূন্যে!
লুমিরার তীরে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাসন আর ওর ছেলেরা বিস্ময়ে আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো শূণ্যে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটার দিকে, যার চোখের ভেতর যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে ভয়ানক আগুন! ঝড়ো বাতাসে উড়ছে তার ভেজা চুল!
সেই মুহুর্তেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো নওয়াস, আর ফারিশ। ওদের পেছন পেছন ফ্রান্সিস আর অ্যান্ড্রু এসে পৌছালো লোকজন নিয়ে!
ওরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেই ধরে ফেললো ম্যাসন সহ অন্যদের, হাত জোড়া পিঠ মোড়া করে হাটুর পেছনে লাথি মেরে বসিয়ে দিলো নিচে!
মীর ওর আগুন ঝরা দৃষ্টি দিয়ে তাকালো একবার নওয়াসের দিকে। ভয়ে চুপসে গিয়ে নওয়াস ঢোক গিলোলো একটা।
মীর আনাবিয়াকে বুকে নিয়ে ঝড়ের গতিতে এগোলো ওর গাড়ির দিকে!
নওয়াস ফারিশের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“ফারিশ, এখনি এ জায়গা ছাড়তে হবে। ওই ছেলে আর মেয়েটাকে সাথে নে, নিয়ে চল এখান থেকে দ্রুত!”
ফারিশ বিস্ময় নিয়ে শুধালো,
“কিন্তু এরা? এদেরকে কিছু করবোনা?”
নওয়াস ফারিশকে নদীর দিকে ইশারা করে বলল,
“ওদিকে দ্যাখ।”
ফারিশ তাকালো, নদীর ধার ঘেঁষে পানির ভেতর থেকে ঝাকে ঝাকে উঠে আসছে বিশালাকার, ভয়ঙ্করদর্শন কুমিরের পাল। ধীর গতিতে হিংস্র চোখে, মুখ থেকে অদ্ভুত শব্দ তুলে একপা একপা করে এগিয়ে আসছে ওরা এদিকে!
ফারিশ আঁতকে উঠলো ওদের দিকে তাকিয়ে, দ্রুত গতিতে আইলিন আর আরিশকে মাটি থেকে এক টানে উঠিয়ে এক প্রকার টেনে নিয়ে এলো গাড়ির নিকট।
ফ্রান্সিস আর অ্যান্ড্রুও ততক্ষনে তড়িঘড়ি করে উঠে গেছে গাড়িতে! দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটে পালালো ওরা সেখান থেকে!
ম্যাসন আর ওর ছেলেরা ভয়ে আতঙ্কে পালাতে ভুলে গেলো, স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ওরা নিজেদের জায়গায়!
কুমির গুলো হিংস্র অঙ্গভঙ্গি করে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে! লক্ষ্যটাযে ম্যাস্ন আর ওর সাথের ছেলেগুলো সেগুলো বুঝতে দেরী হলোনা ম্যাসনের।
হুসে আসলো ও সাথে সাথেই, ভয়ে চিৎকার দিয়ে ও ছুটে পালাতে চাইলো সেখান থেকে, কিন্তু তার আগেই সবার আগে থাকা কুমিরটা চলে এলো নিজের হিউম্যান ফর্মে, তারপর ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গিয়ে ম্যাসনকে পেছন থেকে ধরে এক টানে আছড়ে ফেললো মাটিতে। ম্যাসন সেখানে পড়ে কাতরে উঠলো তীব্র আঘাতের চোটে।
হিউম্যান ফর্মে আসা কুমিরটা অন্য কুমিরদের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
“বয়েজ! কাজে লেগে পড়ো!”
লিডার কুমিরটার কথা কানে যাওয়া মাত্রই ওরা সকলেই একে একে চলে এলো নিজেদের হিউম্যান ফর্মে,
ম্যাসন আর ওর ছেলেরা এমন ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য আর তার পরমুহূর্তেই ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার শুরু করে দিশেহারার ন্যায় রাস্তা খুজতে থাকলো পালানোর।
লিডার কুমিরটি অন্যদের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
“শেহজাদীর শরীরের ঘ্রাণ যার যার শরীরে লেগে আছে তাদের কাউকে ছোবে না, ওগুলোকে হিজ ম্যাজেস্টির জন্য রেখে দিবে! বাকি গুলোকে যাচ্ছেতাই করতে পারো!”
লিডারের কথায় হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো ওরা সকলে, ম্যাসন রিক সহ অন্য কজনকে একপাশে ধরে বেধে রেখে দিলো ওরা, আর তারপর উচ্ছসিত হয়ে এগোলো কারখানার ভেতর। এরপর কাধের ওপর করে বয়ে নিয়ে এলো ভারী ভারী পাথর গুলোর একেকটা।
ওদেরকে পাথর বয়ে নিয়ে আসতে দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো ছেলেগুলো, বাচার শেষ চেষ্টা করতে ছুটে পালাতে চাইলো কেউ কেউ, কিন্তু পালানোর আগেই আবার সবগুলোকে ধরে এনে আছড়ে ফেললো ওরা মাটিতে, আর তারপর পাথর দিয়ে থেতলে দিতে শুরু করলো ওদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত।
.
মীর আনাবিয়াকে গাড়ির ভেতর নিয়ে দ্রুত হাতে ছিড়ে খুলে ফেললো আনাবিয়ার শরীরের ভেজা পোশাক গুলো, নদীর ঠান্ডা পানিতে ডুবে এখন দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার উপক্রম আনাবিয়ার!
মীর ওর শরীর থেকে পোশাক গুলো ছাড়িয়ে তড়িতে নিজের গা থেকে টি শার্টটা খুলে পরিয়ে দিলো ওর গায়ে। দিশেহারার ন্যায় খুজলো গাড়ির ভেতর কোনো শুকনো পোশাক আছে কিনা!
ফ্রন্টের কম্পার্টমেন্ট খুলে পেলো ওর ফিনফিনা শার্টের দুইটা, সেই দুইটা একত্রে নিয়েই জাপটে জড়িয়ে ধরলো ও আনাবিয়াকে, কান্নার চোটে আটকে আসতে থাকা গলায় বলে উঠলো,
“কথা বলো শিনু, কথা বলো আমার সাথে!”
আনাবিয়ার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমে, শরীর কাঁপিয়ে নিয়ে আসছে বারবার!
হাত কোমর পায়ের নির্দিষ্ট স্থানে পড়ে গেছে শেকলের শক্ত ঘর্ষণের দাগ! মুখের বা দিকে ফুটে আছে থাপ্পড়ের রক্তিম চিহ্ন!
মীর দ্রুত হাতে শার্টের একটা তুলে নিয়ে জড়িয়ে নিলো আনাবিয়ার ভেজা মাথা আর চুল, তার পরমুহূর্তেই আনাবিয়ার সমস্ত মুখখানা জুড়ে চুমু খেতে শুরু করলো ও পাগলের মতো! চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো আনাবিয়ার হীম হয়ে যাওয়া মুখখানা।
নিজের শরীরের উষ্ণতা দিয়ে শুষে নিতে চাইলো আনাবিয়ার শরীরের সমস্ত শীতলতা। কানের কাছে মুখ নিয়ে আকুল কন্ঠে শুধালো,
“শুনছো তুমি? প্রাণ আমার! আমাকে শুনতে পাচ্ছো তুমি? সাড়া দাও শিনু, একটাবার সাড়া দাও কলিজা আমার!”
আনাবিয়ার চোখ জোড়া আধোখোলা, হীরকখন্ডের ন্যায় জ্বলজ্বলে চোখ জোড়ার দ্যুতি নিভে এসেছে যেন।অর্ধচেতনে থাকা চোখ জোড়া নিবদ্ধিত মীরের মুখ পানে, যেন প্রাণপণে বলতে চাইছে আমি ঠিক আছি, তুমি আর পাগলামি কোরোনা!
কিন্তু কথা বলার মতো শক্তি জোগাড় করতে পারছেনা! হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর!
মীর এবার আনাবিয়াকে আলিঙ্গন মুক্ত করে বুকের ওপর তুলে নিলো ওর পা জোড়া, দ্রুত হাতে ঘষে উষ্ণ করার চেষ্টা করলো ক্রমে ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকা পায়ের তলা। এক হাতে দ্রুত বাড়িয়ে দিলো গাড়ির ভেতরের টেম্পারেচার!
পায়ের তলায় কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে দিয়ে আবারও নিজের শক্তিশালী বাহুবন্ধনে টেনে নিলো ও আনাবিয়কে, আনাবিয়ার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে জড়ানো গলায় বলে উঠলো,
“চোখ খোলো শিনু, দয়া করো আমার ওপর! দেখো আমি এখানেই আছি, তোমার মীরি এখানেই আছে তোমার কাছে! তোমার মীরি আর কখনোই বকবেনা তোমাকে, আর কখনইো ধমকাবেনা কথা দিচ্ছে!
আমার কাছেই থাকো প্রাণ আমার! তোমার কিছু হলে শেষ হতে যাবো আমি! চোখ খোলো, কথা বলো আমার সাথে, একটাবার কথা বলো শিনু!”
বলতে বলতে চোখ জোড়া ভরে এলো মীরের। অর্ধ চেতনে থাকা আনবিয়ার দৃষ্টিগোচর হলো মীরের কম্পিত দৃষ্টি, কান্না চেপে রাখার বৃথা চেষ্টা!
ফোটায় ফোটায় উষ্ণ লোনা জল ঝরে পড়লো আনাবিয়ার চোয়ালের ওপর!
পরক্ষণেই ফুপিয়ে কেদে উঠলো মীর, আনাবিয়ার নরম হাত জোড়া নিজের দৃঢ় হাতের ভাজে নিয়ে আকড়ে ধরে রইলো, অশ্রুসিক্ত চুম্বনে ভরিয়ে দিলো আনাবিয়ার মুখখানা।
অর্ধচেতনে থাকা আনাবিয়ার মন ভরে উঠলো মীরের আদরে, মুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তির স্নিগ্ধ হাসি! কেশে উঠলো ও, কাশির সাথে পানি ছিটকে বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে।
মীর ওকে দ্রুত এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাতে ওর মুখ খানা আকড়ে ধরলো, কপালের ওপর থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ব্যাকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আনাবিয়ার দিকে, বুকে যেন প্রাণ ফিরে এলো ওর!
আনাবিয়া পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো ওর দিকে, মৃদু হাসিতে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো,
“কিচ্ছু হয়নি আমার, এই দেখো আমি ঠিক আছে! শান্ত হও মীরি, এভাবে কেউ কাঁদে?”
আনাবিয়ার রিনরিনে কন্ঠ কানে আসা মাত্রই নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারালো মীর, ডুকরে কেদে উঠে ও মুখ লুকালো আনাবিয়ার অপরিপক্ক বুকে, পরমুহূর্তেই ওর বুক ফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠলো গাড়ির ভেতরটা!
হকচকিয়ে গেলো আনাবিয়া, দ্রুত হাতে মীরকে আগলে নিয়ে ও মৃদুস্বরে বলে উঠলো,
“কি করছো! আমি ঠিক আছি তো, এই দেখো কথা বলছি, নড়াচড়া করছি, হাসছি! এদিকে দেখো আমার দিকে দেখো, কান্না থামাও! এত বড় ছেলে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে!”
মীরের কান্না থামলোনা তবুও, আনাবিয়াকে নিজের বাহুবন্ধনীর ভেতর আরও শক্তভাবে জড়িয়ে নিয়ে আনাবিয়ার বুকে নিজের মাথাটা আরও দৃঢ় ভাবে স্থাপন করে পড়ে রইলো ও!
আনাবিয়া কিছু বললোনা এবার আর, এক হাতে মীরকে জড়িয়ে নিয়ে অন্য হাতে আলতো করে বুলিয়ে দিতে লাগলো ওর ভেজা চুলের ওপর।
সেই মুহুর্তেই শিরো মিদোরির রাস্তা ধরে আসতে দেখা গেলো দুখানা গাড়ি, দ্রুত বেগে এসে ওরা দাড়ালো মীরের গাড়ির পেছনে।
ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো হামদান, নোমান বেলিন্ডা সহ বেশ কয়েকজন দাসী, সাথে প্রাসাদের হেকিম।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওরা দাঁড়িয়ে রইলো বাইরে। ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে আনাবিয়ার বুক থেকে আস্তেধীরে মুখ ওঠালো মীর।
আনাবিয়া মৃদু হেসে কোমল হাতের মৃদু স্পর্শে মুছে দিলো মীরের চোখ জোড়া! মীর মুখ বাড়িয়ে আলতো করে চুমু খেলো আনাবিয়ার চোখের পাতায়।
বা চোয়ালে থাকা চার আঙুলের দাগটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো একবার, তারপর নাক টেনে মৃদুস্বরে বলে উঠলো,
“গরম কাপড় নিয়ে এসেছে ওরা, হেকিম এসেছে সাথে, বেলিন্ডাও এসেছে ওদের সাথে। তুমি গরম কাপড় পরে এখানে খাওয়া দাওয়া করে পেট ভরাতে থাকো।
আমি কিছুক্ষণের জন্য নিরুদ্দেশ হবো, কাজ শেষ করে দ্রুতই চলে আসবো, এসে আমার মন ভরাবো! ঠিক আছে?”
আনাবিয়া উপর নিচে মাথা নেড়ে সায় জানালো, মীর ওর ঠোটের ওপর ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো বাইরে, মীর বের হতেই ভেতরে ঢুকলো বেলিন্ডা, হাতে ওর আনাবিয়ার পোশাক।
নদীর ধারে কারখানার বাইরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে ভয়ে আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ম্যাসন, রিক সহ ওর সাথের গুটিকয়েক ছেলে।
চোখ জোড়া ওদের বিস্ফোরিত, পলক ফেলতেই যেন ভুলে গেছে ওরা। ওদের সামনে পড়ে আছে ওদেরই সহকর্মীদের থেতলানো মরদেহ। তাজা রক্তে লাল রঙ ধারণ করেছে ধুসর মাটি। মাংসটুকরো, চোখ, দাঁত, হাতের আঙুল, হাড়গোড় গুলো ভেঙে ছিটকে গিয়ে ছড়িয়ে আছে যত্রতত্র! অন্য কুমির গুলো আস্তেধীরে পরিষ্কার করে চলেছে সেগুলো। মরদেহ গুলো নিয়ে জমা করছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো খুটে খুটে জমা করছে এক স্থানে।
ম্যাসন আর ওর সাথের ছেলেগুলোর শরীরের যে যে স্থানে আনাবিয়ার শরীরের ঘ্রাণ পেয়েছে ওরা সে সমস্ত স্থানে পাথরের ঘষা দিয়ে মার্ক করে রেখেছে লিডার কুমিরটি।
এই মুহুর্তে ম্যাসনদের সামনে বসে পাথরের ওপর বালি দিয়ে তাতে অল্প অল্প পানি মিশিয়ে চাপাতিতে ধার দিচ্ছে লিডার কুমির। মাঝেই মাঝেই ম্যাসনের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখছে ও, ম্যাসনের ওই আতঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখতে ওর বড্ড ভালো লাগছে।
এমন সময়ে নদী তীর কাপিয়ে ভয়াবহ ঝড়ের ন্যায় সেখানে আছড়ে লাফিয়ে পড়লো কেউ। আতঙ্কিত ম্যাসন আর ওর সাথের ছেলেগুলো আঁতকে উঠে তাকালো সেদিকে, তাকাতেই হাড় হীম হয়ে হয়ে গেলো ওদের!
গভীর রাত্রির ন্যায় কুচকুচে কালো রঙা রাজকীয় শরীরে বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে সেখানে দাড়িয়ে আছে কেউ। শক্তিশালী পায়ের তীব্র আঘাতে সে স্থানের মাটি টি বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চারদিকে!
ম্যাসন প্রবল আতঙ্কে চোখ তুলে তাকালো বজ্রের ন্যায় মাটিতে আছড়ে পড়া ব্যাক্তিটার চেহারার দিকে।
তীব্র ক্রোধে কুচকে থাকা ভ্রুদ্বয়ের নিচে স্থীর হয়ে এক জোড়া কুচকুচে কালো রঙা চোখ!
ভয়ঙ্কর শিকারীর ন্যায় গভীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে ম্যাসনের দিকে! তার শক্ত চোয়ালদ্বয়ের ক্রোধান্বিত কম্পন স্পষ্ট হয়ে উঠছে বারবার।
মীর এখানে নাম মাত্রই চাপাতি তে শান দিতে থাকা লিডার কুমিরটি প্রচন্ড আনুগত্যের সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো তৎক্ষনাৎ, অন্যান্য মানুষ রূপি কুমির গুলো মুহুর্তেই নিজেদেরকে সংযত করে নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সারিবদ্ধভাবে স্থীর হয়ে দাড়ালো যে যার স্থানে।
চোখের পলকে এতক্ষণের উত্তপ্ত, সরগরম পরিবেশ হয়ে এলো পুরোপুরি শান্ত! মীরের চারপাশ জুড়ে যেন বইতে শুরু করলো এক অদ্ভুত শীতল, ভয়ঙ্কর চাপা শক্তির স্রোত! সে শক্তির অদৃশ্য স্পর্শ যেন কাঁপিয়ে দিলো ম্যাসনের অন্তরাত্মাকে!
ধীর ভারি পা ফেলে, এক হিংস্র ভয়ঙ্কর বন্য প্রাণীর ন্যায়
মীর এগিয়ে এলো ম্যাসনের দিকে, ওর ভারী নিঃশ্বাস গর্জনের ন্যায় ঠেকলো ম্যাসনের নিকট।
ম্যাসনের আর বুঝতে বাকি রইলোনা এই বিশালাকার, সুদৃঢ় শরীরের অধিকারী ব্যাক্তিটা ঠিক কে!
ভয়ে আতঙ্কে পেছনে সরে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করলো ও, কিন্তু পেছনে কারখানার শক্তপোক্ত দেয়াল, জায়গা নেই আর কোথাও এক বিন্দু পরিমাণও!
মীর তড়িতে এসে বসলো ম্যাসনের ঠিক পাশে, হঠাৎ মীর পাশে চলে আসায় আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠলো ও! ওর সাথের ছেলেগুলো ভড়কে গিয়ে বসা থেকে উঠে ছুটে পালাতে চাইলো, কিন্তু লিডার কুমিরটি আর তার সাথের কয়েকজন মুহুর্তেই ওদেরকে ধরে ফেলে হাটুর পেছনে লাথি দিয়ে আবার বসিয়ে দিলো মাটিতে।
মীর বাহাত খানা বাড়িয়ে দিলো ম্যাসনের গলার দিকে, পরমুহূর্তেই বিদ্যুৎ গতিতে নিজের ইস্পাত-দৃঢ় হাতের থাবা দিয়ে শক্ত করে ধরলো ম্যাসনের ঘাড়, মটমট করে উঠলো সে জায়গাটা, যন্ত্রণায় কুকড়ে উঠলো ম্যাসন কিন্তু মুখ থেকে সামান্য পরিমাণ চিৎকার বের করার মতো সাহসও হলোনা ওর!
ঘাড় ধরেই মীর তড়িতে মাটিতে আছড়ে ফেলে ঠেসে ধরলো ওর মুখখানা, ম্যাসন নদী তীরের শুকনো বালির ভেতর থেকে ঘাড় টা কোনো রকমে ঘুরিয়ে মুখ টা উঠিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করলো প্রাণপনে!
মীর ওর ঘাড় চেপে ধরেই চোখ তুলে তাকালো লিডার কুমিরটির দিকে, মীরের চাহনি লক্ষ্য করে সে তৎক্ষনাৎ মীরের দিকে এগিয়ে দিলো একটা ধারালো অমসৃণ শক্ত পাথর। মীর সেটা হাতে নিয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ম্যাসনের কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসে গলায় বলে উঠলো,
“আমার স্ত্রীকে আমি কখনো ফুলের টোকাটা দিতে সাহস করিনা, আর তুই কোথাকার কোন বেজন্মা হয়ে আমার স্ত্রীর গালে থাপ্পড় বসিয়েছিস!”
ম্যাসনের আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো মীরের মুখনিঃসৃত বাক্যে! কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করে নেওয়ার আগেই ওর বা গালে ঘষে গেলো মীরের হাতের ধারালো পাথরটি, মুহুর্তেই কয়েক পর্দা চামড়া উঠে গেলো পাথরের একটা ঘষাতেই!
আকাশ বাতাস কাপিয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো ম্যাসন, কিন্তু ওর চিৎকার কোনো কাজে আসলোনা!
মীরের একের পর এক দৃঢ় ঘর্ষণে ম্যাসনের বা গালের মাংস সরে গিয়ে বেরিয়ে গেলো ওর মাড়ির দাঁতগুলো, গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো সে জায়গাটা দিয়ে!
ম্যাসনের চিৎকারে প্রচন্ড ভয়ে ত্রাস লেগে গেলো বাকি ছেলেগুলোর, দেয়ালের এক কোণায় সেটে গিয়ে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ওরা! দেখতে লাগলো ম্যাসনের শেষ পরিণতি।
বাগালের মাংসটা পুরোপুরি উঠিয়ে ফেলার পর ক্ষান্ত হলো মীর, হাতের পাথরটা ছুড়ে দিলো কোনো একদিকে।
লিডার কুমিরটি এবার চাপাতিটা এগিয়ে দিলো ওর কাছে।
ম্যাসনের দিকে দৃষ্টি রেখেই চাপাতিটা হাতে নিলো মীর, আর হাতে নিয়েই মাটির ওপর ক্লান্ত হয়ে পড়ে থাকা ম্যাসনের হাতের আঙুল গুলোর মাঝবরাবর সাই করে বসালো একটা কোপ, মুহুর্তেই আঙুলগুলো আলাদা হয়ে ছিটকে পড়লো দূরে!
আর তার পরমুহূর্তেই একের পর এক ধারালো কোপ দিয়ে ম্যাসনের হাতটা একটু একটু করে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে করতে ওপরে উঠতে লাগলো মীর, তারপর থামলো গিয়ে ওর ঠিক কনুইতে!
চিৎকার দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট রইলোনা ম্যাসনের শরীরে, গলগল করে রক্ত পড়তে থাকা অনাবৃত বা গালের শূন্যস্থান দিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো ওরে রক্তে লাল হয়ে ওঠা জিভখানা। চোখ জোড়া উলটে যেতে লাগলো ক্রমে!
কোপানো থামিয়ে মীর স্থীর হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে কিছুক্ষণ, পরমুহূর্তেই তড়িতে নিজের মুখখানা ম্যাসনের বুকের কাছে নিয়ে গিয়ে শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নিলো ও।
ভ্রু জোড়া কুচকে তুলে ম্যাসনের মুখটা নিজের সাড়াশির ন্যায় দু আঙুলের ভেতর ধরে উচু করে বজ্র কন্ঠে বলে উঠলো,
“তোর বুক থেকে আমার শিনুর ঘ্রাণ আসছে কেন?”
পরক্ষণেই ম্যাসনের মুখ থেকে হাত সরিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ওর গলা টিপে ধরলো মীর, ম্যাসনের জিভ বেরিয়ে আসলো ওর সে চাপে, মীর ওর মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর চাপা হিংস্র কন্ঠে বলল,
“আমার শিনুর ঘ্রাণ তোর বুকে কেন? জড়িয়ে ধরেছিস ওকে? বুকে নিয়েছিস? কোন সাহসে নিয়েছিস!”
কথা শেষ করেই হাতে ধরা চাপাতি দিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে এলোপাথাড়ি কোপ বসালো মীর ম্যাসনের হৃদপিণ্ড বরাবর, প্রতিটা কোপের সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত উঠে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে! মীরের মুখ, শরীর সব ভিজে যেতে লাগলো ম্যাসনের রক্তে!
চোখ জোড়া স্থীর হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো ম্যাসনের, মুখ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত উঠে ভেসে গেলো চারদিকে। আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই হাপরের মতো জোরে শ্বাস টেনে উপরের দিকে উঠে গেলো ওর বুক। পরমুহূর্তেই হয়ে গেলো পুরোপুরি নিস্তব্ধ!
চোখ জোড়ায় তখনও ভেসে রইলো আতঙ্ক আর তীব্র যন্ত্রণার স্পষ্ট ছোপ!
মীর এবার চাপাতিখানা হাতে নিয়ে একে একে আলাদ করে ফেললো ম্যাসনের বডি পার্টস গুলো, লিডার কুমিরটিকে নির্দেশ দিলো ম্যাসনের বডি টাকে সুন্দর করে প্যাক করে ড্যানিয়েল ইভানের কাছে পাঠিয়ে দিতে।
হাতের চাপাতিটা লিডার কুমিরটির হাতে দিয়ে বাকি ছেলেগুলোর দিকে ইশারা করে মীর বলল,
বাদশাহ নামা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৫+১৬
“যেখানে যেখানে আমার শিনুর ঘ্রাণ থাকবে সেজায়গা গুলো উঠিয়ে নিয়ে এদেরকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেবে!”
লিডার কুমিরটি মীরের কথায় সায় জানিয়ে আনুগত্যের সাথে সরে দাড়ালো পেছনে।
মীর দাঁড়িয়ে নিজের হাতপা গুলো ঝাড়া দিয়ে আড়মোড়া ভাঙলো, তারপর ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো লুমিরা নদীর খরস্রোতের ভেতর!
