বাদশাহ নামা পর্ব ২২
আমিনা
ভোর হয়েছে কিছুক্ষণ আগে, পূব আকাশে সূর্যের আগমনী বার্তা দিয়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। রেড জোনের ভেতরের জঙ্গলে থাকা অসংখ্য রকমের হরেক রঙা পাখি গুলো তাদের মিষ্টি সুরে চিৎকার চেচামেচি জুড়ে দিয়ে দিনের আরম্ভের ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
রোজকারের ন্যায় অভ্যাসবশত ভোরেই ঘুম টা ভেঙে গেলো অ্যানার। কিন্তু চোখ জোড়া মেলতে পারছে না ও, চোখ মেলতে গেলেই সূচের মতো বিধছে যেন চোখের ভেতরে! কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর অগত্যা চোখ না মেলতে পেরে ওভাবেই শুয়ে রইলো ও সেখানে। গায়ের ওপর থেকে কাথা টা কিঞ্চিৎ সরে যাওয়ায় শীত শীত করছে ওর খুব৷ সেটাকে টেনে আবার ওপরে ওঠানোর প্রস্তুতি নিলো অ্যানা৷ কিন্তু সেই মুহুর্তেই ওর মনে পড়ে গেলো কাল রাতের সমস্ত ঘটনা। সর্বশেষ যেটা মনে পড়লো সেটা হলো ও বৃষ্টির মধ্যেই কোনো একটা রেডউড গাছের মাথায় উঠে বসে ছিলো, কিন্তু তারপর? তারপর কি হয়েছিলো? আর ও এই মুহুর্তে আছেই বা কোথায়? আর ওকে এখানে নিয়ে আসলোই বা কে?
চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই নড়ে চড়ে একটু সরতে গেলো অ্যানা আর তখনি ও নিজেকে আবিষ্কার করলো কারো ইস্পাত-দৃঢ় বাহুবন্ধনীর ভেতরে৷ কেউ যেন ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের দৃঢ়, পেশিবহুল বুকের সাথে। ধক করে উঠলো অ্যানার বুকের ভেতরটা। তার তপ্ত কপাল ঠেকিয়ে রাখা বুকের মালিকটা ঠিক কে সেটা চিনতে বেগ পেতে হলো না অ্যানার। সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকালো ও। আর তাকাতেই ওর চোখে পড়লো নামীরের শ্যাম রঙা প্রশস্ত, রোমশ বুক।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নামীরের বা হাত টা অ্যানার গলার নিচ গলিয়ে অ্যানার বা কাধ জড়িয়ে রাখা, আর ডান হাত টা অ্যানার সরু কোমরের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে অ্যানার কোমল পিঠ টা জড়িয়ে রাখা। অ্যানার বা পা টা মীরের বিশাল বিশাল দুই পায়ের ফাকের ভেতরে দিয়ে রাখা, যেটাকে কোলবালিশের ন্যায় ব্যাবহার করে ঘুমিয়ে আছে নামীর।
অ্যানা কে এক্কেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছে নামীর। অ্যানার মুখ দিয়ে বের হওয়া তপ্ত নিঃশ্বাস গিয়ে বাড়ি খাচ্ছে নামীরের বুকে। ওর স্ফিত, সুডৌল বক্ষযুগল চাপাচাপি করে লেপ্টে আছে নামীরের শক্ত পোক্ত পেটের উপরিভাগের সাথে।
আর নিজের অবস্থা পর্যবেক্ষণের ঠিক এই পর্যায়েই অ্যানা টের পেলো যে সে পুরোপুরি অনাবৃত, তার শরীরে পোশাকের সামান্য কণামাত্রও নেই, আর না আছে তাকে নিজের সাথে জাপটে ধরে রাখা নামীরের।
সাথে সাথেই নিজের বাকি থাকা ঘুমের রেশ টুকু চোখ থেকে উড়ে গেলো অ্যানার। দাঁতে দাঁত পিষে দ্রুত গতিতে নিজেকে নামীরের থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলো ও, কিন্তু নামীরের সে ইস্পাত-দৃঢ় বাহুবন্ধনী অনু পরিমানও নড়াতে পারলো না অ্যানা৷ এতে করে রাগের মাত্রা টা আরও বেড়ে গেলো ওর! ক্ষীপ্র গতিতে এবার মীরের বুকে নিজের দুই হাত ঠেকিয়ে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে মীর কে ওর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে চাইলো ও। আর তখনি ঘুম ভেঙে জেগে উঠলো নামীর। চোখ জোড়া মেলে তাকালো ও। ওর বুকের সাথে লেগে থেকে ওর বুকের সঙ্গেই অ্যানাকে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে দেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে ও বলে উঠলো,
— শিনজো! এমন লাফালাফি করছো কেন? তোমার শরীর খারাপ, তিড়িং বিড়িং না করে ঘুমাও, আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।
কথা টা বলে আবারও চোখ বুজে নিলো নামীর। নামীরের এমন দায়সারা কথা শুনে গা জ্বলে গেলো অ্যানার। বাঘিনীর ন্যায় গর্জে উঠে ও বলল,
— তুমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিতে এসেছো?
নামীর চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই হাসলো মৃদু, তারপর আগের মতো করেই উত্তর দিলো,
— উহু, আমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিতে এসেছি।
নামীরের এমন উত্তরে ভ্রু জোড়া কুচকে অ্যানা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো মীরের দিকে।
অ্যানা ওর দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরেই নামীর ঠোঁট বেকিয়ে হাসলো তারপর বলে উঠলো,
— হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই এমন অসভ্যের মতো তাকিয়ে থাকো কেন? আ’ ন্যো আ’ম স্টানিং! তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার নজর লেগে যাবে, আমি আর ড্যাশিং থাকবো না। তাকিয়ো না৷
নামীরের এমন কথা বার্তায় মেজাজ গরম হয়ে গেলো অ্যানার, রেগে মেগে ও মীরের হাত জোড়া নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
— এই ছাড়ো, ছাড়ো আমাকে! এক্ষুনি!
নামীর নিঃশব্দে হেসে বিনা বাক্যব্যায়ে নিজের বাহুবন্ধনী থেকে অ্যানা কে মুক্ত করে দিলো। আর ছাড়া পেয়েই তড়িৎ গতিতে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো অ্যানা, তারপর বিছানার পাশে থাকা একটি হালকা গোলাপি রঙা চাদরে নিজের অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত অনাবৃত শরীর টাকে ঢেকে নিলো ও৷ আর এরপর কামরাটার চারপাশে তাকিয়েই ও বুঝতে পারলো ও ঠিক কোথায় আছে।
রেড জোনের ভেতরে, লাইফ ট্রির অদূরে জঙ্গলের উচু উচু বাদামী রঙা রেডউড গাছের ভেতরে অবস্থিত একটি হালকা বাদামী রঙা, মাঝখান থেকে ভেঙে পড়া রেডউড গাছ, যেটি প্রায় তিন হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। কোনো এক অজানা কারণে দেহের মাঝ থেকে ভেঙে যাওয়ার পর গাছ টা আর বাড়েনি, কোনো ডাল পালাও আর ছাড়েনি৷ প্রায় ত্রিশ ফুটের কাছাকাছি ব্যাসের এই গাছ টি এখনো সেভাবেই নিজের শক্ত পোক্ত শিকড় দ্বারা মাটি আকড়ে ধরে টিকে আছে। আর লোকসমাগম থেকে অনেক অনেক দূরে থাকা এই গাছ টিকেই নিজেদের অত্যান্ত ব্যাক্তিগত সময় পার করার জন্য বেছে নিয়েছিলো ওরা৷
গাছ টি এখানে এত বছর ধরে পড়ে থাকার পরও তার গায়ে বিন্দু মাত্র কাদা মাটি বা শ্যাওলা জমেনি, উপরন্তু অসংখ্য রকম আর শত শত অদ্ভুত সুন্দর রঙের জঙলি ফুল আর অর্কিডে চারপাশ থেকে ছেয়ে আছে সে গাছ টি। আর গাছ টির এমন সৌন্দর্য আর আকৃতি দেখেই এটাকে এই কোলাহলপূর্ণ পৃথিবী থেকে নিজেদের সামান্য বিরতি দিতে বেছে নেয় ওরা।
অর্ধমৃত এ গাছটির কান্ডের ভেতর থেকে সমস্ত কাঠ সরিয়ে ফেলে বসবাসের যোগ্য দুইটি ছোট্ট ছোট্ট কামরা তৈরি করেছিলো ওরা, ঠিক যেন কোনো পাখির বাসা, শুধু আকৃতি টা বিশাল! দুই কামরার একটি হলো ওদের বেডরুম, আর অন্যটি কিচেন আর ওয়াশরুম।
রোজকার হ্যাপহ্যাজার্ড অবস্থা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে দুজনে মিলে এই নির্জন জায়গাটিকে ক্রমে ক্রমে তৈরি করে ফেলেছিলো নিজেদের একটুকরো ইডেনে, যেখানে রাতভর একে অপরের শরীরের সাথে মিশে থাকার পর সমস্ত দিন টা ওরা এই জঙ্গল ঘুরে, জংলি পশু পাখি শিকার করে, দুজনে মিলে ওলট পালট রেসিপি আবিষ্কার করে রান্না অথবা বারবিকিউ করে খেতো; উচ্ছাস আর আনন্দে পার করতো প্রতিটা দিন আর উদ্দাম আদিমতায় কেটে যেত প্রতিটা রাত৷ এই জনমানবহীন জঙ্গলের ভেতরে ওদের মনে হতো যেন কোনো আদিম মানব মানবী, যেন শুধুমাত্র ওদের দুজনকে নিয়েই এই পৃথিবী! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেসব এখন শুধুই স্মৃতি!
নামীর বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে অ্যানা কে পর্যবেক্ষণ করছিলো। অ্যানাকে এইভাবে এক জায়গায় স্থীর হয়ে নিজের ভাবনায় হারিয়ে যেতে দেখে গলা খাকারি দিলো ও। নামীরের গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে হুসে ফিরলো অ্যানা, এরপর চোখ মুখ শক্ত করে কামরায় থাকা নকশাদার কাবার্ডের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় পোশাক নিয়ে কিচেনের সাথে লাগোয়া ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে কাবার্ড থেকে নিয়ে আসা মস রঙা ট্রাউজার আর অফ হোয়াইটের অন্তর্বাস পরে নিয়ে তার ওপির চাপিয়ে দিলো সাদা রঙা ফিনফিনা একটা ঢোলা ঢালা শার্ট। এরপর এলোমেলো হয়ে থাকা ঘন কালো চুল গুলো হাতের আঙুলের সাহায্যে সামান্য গুছিয়ে নিয়ে ক্লাচার এর সাহায্যে বেধে নিলো মাথার ওপরে। ওয়াশরুমে আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে অতঃপর খট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো অ্যানা৷ নামীর তখনো বিছানা ছেড়ে ওঠেনি। আর এই সুযোগে নামীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই কামরা থেকে দ্রুত গতিতে বের হতে নিলো অ্যানা। কিন্তু ও দরজার কাছে পৌছানোর আগেই বিদ্যুৎ গতিতে ওর ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো নামীর। তারপর নরম গলায় বলে উঠলো,
— তোমার শরীর এখনো ভালোভাবে সেরে ওঠেনি। আরও কিছুক্ষণ এখানে বিশ্রাম নাও, তারপর যাবে।
অ্যানা নামীরের দিকে দৃষ্টি দিলো না, মাথা টা সামান্য নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে ও তেজী গলায় বলল,
— আমি এখানে একটা মুহুর্তও থাকতে চাই না, আমাকে যেতে দাও। আমাকে সেইফ জোনে ফিরতে হবে৷
নামীর নিজের ভ্রু জোড়া সামান্য কুঞ্চিত করে কড়া গলায় বলে উঠলো,
— যেটা করতে বলেছি সেটা করো। আমি বাইরে যাচ্ছি, ফিরে না আসা পর্যন্ত এখান থেকে এক পাও নড়বে না।
নামীরের এমন স্বরের আদেশ অগ্রাহ্য করার মতো সাহস অ্যানার এখনো হয়ে ওঠেনি। মাথা টা আগের মতো নিচু রেখেই চোখ মুখ শক্ত করে পেছন ফিরে ধীর পায়ে হেটে ও বিছানায় গিয়ে বসলো। অ্যানা গিয়ে বিছানায় বসার পর ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো নামীর, এরপর স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল,
— গ্যুড গার্ল!
এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে নামীর আবারও বলে উঠলো,
— ন্যাও, মেইক অ্যা উইশ।
অ্যানা স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কার্পেট বিছানো মেঝের দিকে, নামীরের শেষোক্ত কথাটি কানে আসতেই দাঁতে দাঁত পিষলো ও। তারপর শক্ত গলায় বলে উঠলো,
— আই ওয়ান্ট ডিভোর্স
অ্যানার মুখ থেকে এ কথা নির্গত হওয়ার সাথে সাথেই সমস্ত কামরা জুড়ে যেন এক সমুদ্র পরিমাণ নিরবতা নেমে এলো। নামীর দরজার সামনে ওভাবে দাঁড়িয়েই পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অ্যানার দিকে। আর অ্যানা দাঁতে দাঁত চেপে রেখে তাকিয়ে রইলো মেঝের দিকে। কোনো মতেই নিজের মাথা উঠিয়ে নামীরের দিকে দৃষ্টি দিলো না ও। ওভাবেই ঘাড় গুঁজে পড়ে রইলো।
ঠিক কতক্ষণ এমন নিরবে কাটলো তা জানা নেই ওদের কারো। হঠাৎ করেই সেই দুর্ভেদ্য নিরবতা কে ভেঙে দিয়ে নামীর সামান্য শব্দ করে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,
— তোমার আরও সহজলভ্য কিছু চাওয়া উচিত, এই যেমন ধরো অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি!
কিঞ্চিৎ বিরতি দিয়ে নামীর আবার বলল,
— আমি বেরোচ্ছি, কিছুক্ষণের ভেতরেই চলে আসবো। ততক্ষণ এখানে লক্ষী মেয়ের মতো বসে থাকো।
কথা টা বলেই দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে গেলো ও। আর অ্যানা লাল চন্দন কাঠের তৈরি, রুবি বসানো নকশাদার নরম বিছানাটার ওপর ওভাবেই বসে রইলো চুপচাপ। এরপর নামীরের উপস্থিতি ক্রমে মিলিয়ে যেতেই বিছানা ছেড়ে উঠে এসে দরজা খোলার চেষ্টা করলো ও। কিন্তু ব্যর্থ হলো! নামীর বাইরে থেকে দরজা লক করে রেখে গেছে যেন ও চাইলেও বের হতে না পারে৷
অ্যানা রাগে আগুন হয়ে আবার ফিরে এলো দরজার নিকট থেকে। নামীর ফিরে আসার আগেই এখান থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সেটাই ভাবতে লাগলো ও। খানিকক্ষন কামরার ভেতরের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করার পর ওর মনে পড়লো ওয়াশরুমের এক কোণায় থাকা ছোট্ট জানালাটার কথা। কিন্তু সেটা খুবই ছোট, সেখান দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে যদি আটকা পড়ে যায় তখন হবে আর এক বিপদ।
কিন্তু সে বিপদের তোয়াক্কা করলো না অ্যানা। ওই ছোট্ট জানালা টা দিয়েই বাইরে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো ও৷ যদি আটকা পড়ে যায় তো যাবে, ওকে উদ্ধার করার জন্য মীর তো আছেই!
সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত গতিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো ও, তারপর নিজের মাথার সমান উচ্চতায় থাকা সেই ছোট্ট জানালা টার কাছে গিয়ে সেটার ভেতর দিয়ে সাবধানতার সাথে নিজের মাথা টা গলিয়ে দিলো বাইরে, এরপর ঠেলে ঠেলে কোনো রকমে নিজের কোমর পর্যন্ত বাইরে বের করে ফেললো অ্যানা, কিন্তু এর পরেই বাধলো বিপত্তি।
আর একটু টানাটানি করে সামনে এগোতেই ওর হাই হিপ টা আটকে গেলো সে জানালায়। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে লাগলো ওর। বাইরে থেকে গাছের গুড়ির ওপর দুই হাতের ভর দিয়ে আরও কয়েকবার চেষ্টা করতেই হাই হিপ টাকে জানালার বন্ধিন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো ও পুরোপুরি ভাবে, কিন্তু বেরিয়েই ধপাস করে গিয়ে পড়লো নিচের আধভেজা মাটিতে। ঘাড় টা আগে পড়ায় ঘাড়ে ব্যাথা পেয়ে মুখ থেকে একটা অস্ফুট ধ্বনি বের হয়ে এলো ওর। আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো সম্পুর্ণ নতুন কোনো একজনের উপস্থিতি। মুহুর্তের ভেতরেই মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই সচকিত হয়ে উঠলো অ্যানা। আর ঠিক তখনি পাশ থেকে কেউ ওর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান, রাইট?
ক্ষীপ্র গতিতে মাটি থেকে উঠে সে লোকটার থেকে দূরে সরে গেলো অ্যানা, আর উঠে দাড়িয়েই সে লোকটিকে দেখে অবাকতার চরম সীমায় পৌছে গেলো ও৷
তার থেকে পাঁচ সাত হাত দুরত্বে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা হুবহু তার মীরের মতো দেখতে। উচ্চতা, মুখের গড়ন, চোখ, নাক, ঠোঁট, ভ্রু সবকিছু; একেবারে সবকিছুই তার মীরের মতো! শুধুমাত্র গায়ের রঙ টা মীরের থেকে কয়েক শেইড বেশি ফর্সা আর চুলগুলো কেমন যেন কালোর ন্যায় কিন্তু পুরোপুরি কালো নয়, তাতে যেন কিছুটা নীলচে আভা ছড়িয়ে আছে। আর তার চোখের মণি জোড়া গাঢ় পার্পল রঙা, সে চোখের দৃষ্টি নেশাতুর!
অ্যানা সন্দিহান চোখে তার সামনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত মুচকি হাসা ব্যাক্তিটাকে কিছুক্ষণ পরখ করে নিজের হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে কড়া গলায় বলে উঠলো,
— কে আপনি? মীরের বেশ কোন সাহসে ধরেছেন?
অ্যানার এমন প্রশ্নে লোকটি যেন মজা পেলো খুব, আশ পাশ টা কাপিয়ে অদ্ভুত ভাবে শব্দ করে হেসে উঠলো সে। হাসির কারণে গা কেপে উঠলো লোকটার।
অ্যানা তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে আগন্তুকের দিকে।
অ্যানার সিক্সথ সেন্স এই লোকটি সম্পর্কে তার মস্তিষ্কে সতর্কতা বার্তা প্রেরণ করলো, এই লোকটি যে শিরো মিদোরি তে একজন আনওয়ান্টেড এনটিটি এবং সে একদমই সুবিধার নয় সেটাই জানান দিলো ওর সিক্সথ সেন্স। অ্যানা নিজের চোখ মুখ শক্ত করে যে কোনো কিছুর মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করতে শুরু করলো।
সে লোকটি হঠাৎ করেই হাসি থামিয়ে অ্যানার দিকে এগিয়ে এলো দু কদম। এরপর অ্যানার মুখ খানা সহ ওর পরণের সাদা রঙা ফিনফিনে শার্ট টার ওপর দিয়ে অ্যানার শরীর টাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলো সে। তারপর অ্যানার করা প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সে বাকা হেসে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
— এতদিনে বুঝলাম, আসওয়াদ কেন তোমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না!
আর কথা টা বলে অ্যানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে সে লোকটি অ্যানাকে চমকে দিয়ে এসে দাড়ালো অ্যানার একেবারেই সামনে, তারপর নিজের মুখ খানা অ্যানার শক্ত মুখমণ্ডলের দিকে সামান্য ঝুকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
— আফসোস, যে তুমি সম্পর্কে আমার মেয়ে হও, নইলে এইখানেই তোমার সাথে এক রাউন্ড ফুলসজ্জা সেরে নিতাম
আর এই কথা বলার সাথে সাথেই ঝড়ের গতিতে একটা দানবীয় ঘুষি এসে পড়লো সে লোকটির ডান গালে, আর পড়া মাত্রই সে লোকটি ছিটকে নিজের জায়গা থেকে প্রায় বিশ পঁচিশ হাত দূরের একটি রেডউড গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে গেলো। ঘটনা টা এতটাই দ্রুত ঘটলো যে অ্যানা কিছু ঠাহর করার ও সময় পেলো না৷ পরমুহূর্তেই নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চকিতে নিজের ডান দিকে তাকিয়ে নামীর কে দেখতে পেলো ও৷ আর এই মুহুর্তে নামীরের এমন ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে আত্মা শুকিয়ে গেলো ওর। এই নামীর কে ও আগে কখনোই দেখিনি!
নামীরের ঈগলের ন্যায় তীক্ষ্ণ, জ্বলজ্বলে সোনালি রঙা চোখ জোড়া প্রচন্ডরকম উজ্জ্বল হয়ে আছে, মনে হচ্ছে যেন সে চোখ জোড়া দিয়ে আগুনের হলকা বের হচ্ছে! ধারালো চোয়াল জোড়া ভয়ঙ্কর রকম শক্ত হয়ে আছে। দুই হাতের কব্জির উপরে অঙ্কিত কালো রঙা বাঘের প্রতিচ্ছবি দুইটা বার বার উজ্জ্বল সোনা রঙে রাঙিয়ে উঠতে চাইছে, কিন্তু মীর যেন নিজেকে তার ভয়ঙ্কর রূপে পরিবর্তিত না হওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। অ্যানা নামীরের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই শিউরে উঠলো যেন! তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে আবারও তাদের থেকে বিশ পঁচিশ হাত দুরত্বে মাটিতে পড়ে থাকা আগন্তুকের দিকে তাকালো।
মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়া লোকটি মাটিতে শুয়েই শব্দ করে হেসে উঠলো, তারপর দুই হাতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে নামীরের সোজাসুজি দাঁড়িয়ে নামীরের দিকে তাকিয়ে আবারও হাসলো সে। হাসতে হাসতে নিজের ঠোঁটের ডান কোণা থেকে চুইয়ে পড়া রক্ত টা ডান হাত দ্বারা মুছে নিয়ে হাতে লেগে থাকা রক্তের দিকে তাকালো একবার, তারপর আবারও নামীরের দিকে তাকালো।
নামীর অ্যানার পাশ থেকে সরে ভারী ভারী কদম ফেলে সামনের দিকে এগোতে শুরু করলো। কিন্তু নামীরকে নিজের দিকে আগাতে দেখেও সে লোকটির ভেতরে কোনো ভাবান্তর হলো না, সে আগের মতো করেই মুখে এভিল হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। নামীর হেটে সে লোকটির একেবারেই সামনে গিয়ে দাড়ালো, আর তখনি অ্যানা টের পেলো উচ্চতার ব্যাপার টিতে সে ভুল ছিলো, নামীর এই আগন্তকের চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক বেশি লম্বা। কিন্তু হুবহু তার মীরের মতো এখতে এই লোকটি কে সেটা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলো ও৷
নামীর সে আগন্তুকের দিকে সিংহের ন্যায় হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো,
— পঞ্চদ্বীপের এক এবং একমাত্র বাদশাহ নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান এর বিবাহিতা স্ত্রী, পঞ্চদ্বীপের বেগম আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান কে এই ধরনের জঘন্য কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে?
আগন্তুক লোকটির মুখ থেকে এতক্ষনের সেই হাসিটা ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। হাসির পরিবর্তে সেখানে এসে ভর করলো একরাশ ভীতি। কিন্তু নিজের ভীতি কে প্রকাশ করতে চাইলো না সে, মুখের ওপর আত্মবিশ্বাসের এক কৃত্তিম ছায়া ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে সে বলল,
— আসওয়াদ, আমি……
কিন্তু নামীর সাথে সাথেই হাত উচিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বজ্র কন্ঠে বলে উঠলো,
— নট আসওয়াদ, বাদশাহ নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান।
আগন্তুক টি নিঃশব্দে ঢোক গিললো একটা, তারপর নামীর কে কোনো প্রকার সম্বোধন ছাড়াই বলল,
— আমি তোমার চেয়ে দু মিনিটের বড়, সে হিসেবে আমি তোমার বড় ভাই। আমাকে তুই তোকারি করবে না। আমি এখনো দেমিয়ান বংশেরই ছেলে, তাই আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।
আগন্তকের এমন কথা শুনে নামীর চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ তারপর হঠাৎ করেই আকাশ বাতাস কাপিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো ও। কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে সে আগন্তকের দিকে তাকিয়ে নামীর ঝাঝালো গলায় বলে উঠলো,
— পঞ্চদ্বীপের বাদশাহর স্ত্রীকে এমন জঘন্য কথা বলার দুঃসাহস দেখিয়ে আবার নিজেকে দেমিয়ান বংশের ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করা কোনো দেমিয়ান বংশের পুরুষের কাজ হতে পারে না, জাযিব ইলহান।
ইলহান নিজের শুকনো ঠোঁট জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ঢোক গিলল একটা, তার সামনে দাঁড়ানো তার এই দুমিনিটের ছোট ভাই কে যে সে যমের মতো ভয় পায় সেটা সে কোনো মতেই অ্যানার সামনে প্রকাশ করতে চায় না! নামীরের ঝাঝালো কন্ঠ, আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে সে বলল,
— তুমি যে এত এ্যটিকেট অ্যান্ড ম্যানার্সের বুলি আওড়াচ্ছো, তুমি অতীতে কি ছিলে সেটা যদি তোমার এক্সট্রা পজেসিভ প্রিয়তমা স্ত্রী কখনো জানতে পারে তবে কি তোমার সাথে আর একটা মুহুর্তও থাকতে চাইবে?
— অতীত অতীতই৷ অতীত নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় আমার নেই। বর্তমানে আমি কে এবং কি সেটাই মুখ্য বিষয়। আর তোর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার মতো সময়, ইচ্ছা এবং রুচি কোনো টাই আমার নেই। এখন যে জায়গা থেকে এসেছিস সেখানে ফিরে যা। আর একটা মুহুর্ত ও দেরি করলে আমার স্ত্রী কে অসম্মান করার অপরাধে তোকে আমি ডার্ক প্যালেস থেকে সোজা ওশান জেইলে পাঠিয়ে দেবো, সারাজীবনেও আর সূর্যের আলো দেখতে পাবি না।
তীক্ষ্ণ সুরে কথা গুলো বলে থামলো নামীর৷ ইলহান মৃদু হেসে দুকদম পেছন দিকে সরে গেলো। তারপর বলল,
— সাম্রাজ্য আর সম্রাজ্ঞী দুইটাই তুমি পেয়ে গেলে, কিন্তু এর ভেতর থেকে যেকোনো একটা আমার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তুমি হতে দাওনি। একদিন এর কোনো একটা অথবা দুইটাই আমি নিজের করে নেবো।
ইলহানের কথায় নামীর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে হিংস্র গলায় বলে উঠলো,
— আমার সাম্রাজ্য আর সম্রাজ্ঞী দুইটাই আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি, আর এই দুইটাকে পাওয়ার কথা কেউ যদি স্বপ্নেও ভাবে তবে তাকে আমি তার মূল্য বুঝিয়ে দেবো। এখন এইমুহূর্তেই তুই আমার সামনে থেকে চলে যাবি, আর ডার্ক প্যালেস থেকে ভুলেও বের হওয়ার সাহস করবি না।
নামীরের কথায় ইলহাম মৃদু হেসে আরও দুই কদম পেছনে সরে গেলো, তারপর তাদের থেকে বেশ খানিক টা দুরত্বে দাঁড়ানো অ্যানা কে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো,
— আনাবিয়া, তোমার স্বামী যে নিজের বংশ রক্ষার উদ্দ্যেশ্যে একটা সন্তানের জন্য তোমার মতো একটি মেয়েকে উপেক্ষা করে দাসীদের সাথে রাত কাটায় সেটা আমি ভালোভাবেই জানি। কখনো যদি একে ওয়ার্থলেস মনে হয় তবে আমার কাছে চলে এসো, তার থেকে আমি শারিরীক মানসিক সব দিক থেকেই তোমাকে বেশি খুশি রাখবো। তোমার ডাউট থাকলে ট্রাই করে দেখতে পারো, সবভাবে, আ’ হ্যাভ মোর টাইম ফর ইয়্যূ দ্যান ইয়্যোর বিলাভড হাজব্যান্ড!
কথা টা শেষ করা মাত্রই নামীর তার পেশিবহুল, ইস্পাত-দৃঢ় হাতের থাবা দিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে ইলহানের গলা টা ধরে উচু করে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,
— নিজের মায়ের পেটের সহোদরের রক্তে হাত রাঙানো যদি নিষিদ্ধ না থাকতো তবে তোকে আমি এখানেই টুকরো টুকরো করে গেড়ে রেখে দিতাম! এই মুহুর্তেই, আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যাবি নইলে আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলে কোনো নিষিদ্ধের তোয়াক্কা আমি করবো না৷
কথা টা বলেই নিজের হাতের থাবায় ধরে রাখা ইলহান কে গলা ধরেই ঘুরিয়ে ছুড়ে দিলো নামীর। ইলহান তীব্র গতিতে উড়ে গিয়ে দশ পনেরো হাত দূরের মাটিতে পড়ে কয়েকবার বাউন্স করে আরও দূরে গিয়ে মুখ থবড়ে পড়লো। তারপর আঘাতপ্রাপ্ত শরীর টা ধীরে ধীরে মাটি থেকে উঠিয়ে নামীরের দিকে এক পলক তাকিয়ে মৃদু হেসে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে গেলো জঙ্গলের ভেতরের দিকে৷ ইলহান চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত নামীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। আর এরপর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যানার দিকে তাকালো।
অ্যানা হতভম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। নামীরের যে একটা জমজ ভাই আছে, আবার সে হুবহু নামীরের মতোই দেখতে, সেটা তাকে আজ পর্যন্ত কেউই বলেনি! এত গুলো বছরেও সে জানতে পারেনি এই ব্যাপারে কিছুই। অ্যানা যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে ব্যাথিত। নামীর এত বড় একটা সত্যি তার থেকে এতগুলো বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে! কখনোই বলেনি! কিন্তু কেন বলেনি?
নামীর স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যানার দিকে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। নামীর এগিয়ে আসতেই অ্যানা ভ্রু জোড়া সামান্য কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার যে একটা জমজ ভাই আছে সেটা আমাকে এতদিন বলোনি কেন? আমার থেকে কেন লুকিয়েছ?
নামীর অ্যানার দিকে এগোতে এগোতে উত্তর করলো,
— প্রয়োজন হয়নি তাই।
এরপর অ্যানার সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,
— তোমাকে ট্রি হাউজ থেকে বের হতে বারণ করা সত্বেও বের হয়েছো কেন?
অ্যানা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। নামীর ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অতঃপর বলে উঠলো,
— ভেতরে যাও, টেবিলের ওপর খাবার রাখা আছে। সেটা খেয়ে যেখানে খুশি যাবে, আমি মানা করবো না।
কথা টা বলে নামীর প্রাসাদে ফেরার উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ালো। অ্যানাকে ক্রস করে পেছনে যাওয়া মাত্রই অ্যানা পেছন থেকে তাচ্ছিল্যের সুরে প্রশ্ন করে উঠলো,
— দেমিয়ান বংশের সব পুরুষই কি এমন চরিত্রহীন হয়?
নামীর থমকে দাড়ালো, তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,
— সব পুরুষের কথা বলতে পারি না, তবে আমি চরিত্রহীন নই।
নামীরের উত্তরে অ্যানা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, তারপর বলে উঠলো,
বাদশাহ নামা পর্ব ২১
— ওহ আচ্ছা!
নামীর আবার হাটা শুরু করে তার পেছনে থাকা অ্যানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
— বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার, তবে তুমি ছাড়া অন্য কারো শরীরের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই।
আর কথা টা বলেই ঝড়ের গতিতে সে জায়গা থেকে প্রস্থান করে প্রাসাদের দিকে এগিয়ে গেলো নামীর। আর অ্যানা সেদিকে এক পলক তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রি হাউজের কামরায় ফিরে গেলো আবারও৷
