বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৩

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৩
ইশরাত জাহান

মন খারাপ করে বসে আছে দিজা।শোভা কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে,“মন খারাপ কেন?”
“যে জন্য তাড়াহুড়ো করে আজ আসা ওটাই তো হবেনা।”
“মানে?”
“কাল পরীক্ষা নেই।”
“কবে দিয়েছে ডেট?”
“এই তো দুদিন পর।যখন চান্স পেলাম কতই না খুশি হলাম।প্রস্তুতি তো নিলাম দেখলেই তো।এখন পরীক্ষা তাড়াতাড়ি হয়ে যা তা না করে ধুর!”

“সে নাহয় বুঝলাম কিন্তু আমার তো প্রস্তুতি ভালো না।”
“কেন তোমাকে জানিয়েছিলাম যে তোমার জন্য অ্যাপ্লাই করেছি আর তুমি চান্স পেয়েছো।ভাইয়া দেশে না আসলেও তো দাদাজান তোমাকে আমার সাথে আলাদা ম্যাচে পাঠাতো।এই তুমি কি কিছুই পড়োনি?আমি কষ্ট করে রোদে ঘুরে ঘুরে বই কিনে দিলাম একটাও পড়োনি?”
“পড়েছি তো কিন্তু লাস্ট সাতদিন কিছুই তো পড়তে পারলাম না।মাথায় কি কিছু থাকে?”
“তাও ঠিক কথা।আমি যা একটু পড়ার সুযোগ পেয়েছি তুমি তো তাও পাওনি এই এক সপ্তাহ।”
“তাই তো বলছি দুদিন সময় পেয়েছি এতেই ভালো।এখন একটু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবো।ভালো একটা ফলাফল পেলে না ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারব!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হুমমম,মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে এখনো।সুযোগ হাতছাড়া করা যাবেনা।”
দুজনেই বই নিয়ে পড়তে বসলো।দিজা মানবিকের ছাত্রী আর শোভা ব্যবসায়ীকের।দিজা বিছানায় বসেছে আর শোভাকে টেবিলে বসতে দিয়েছে। দিজার ভালো লাগে বিছানায় হেলান দিয়ে পড়তে।দুজনের এখন মনোযোগ পড়ালেখায়।দর্শন এখন অফিসে।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর তুহিন আসে দর্শনের অফিসে।এখন দুই বন্ধু সামনাসামনি বসে আছে।দর্শন ওর অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলেছে দুইকাপ কফি আনতে।তুহিন বলে,“ভাবীকে নিয়ে একদিন আমাদের বাসায় চল।মা দাওয়াত দিয়েছে তোদেরকে।”

“ও এসবে অতটা কমফোর্ট না।”
“কেন?”
“ও একটু ভিন্ন।”
“কেমন?”
“লাজুক,কম কথা বলে আবার আমার সামনে বাচাল।পুরুষ মানুষের সামনে মুখ দেখিয়ে চলে না।পর্দা করে ইসলামিক।”
“এগুলো তো বলেছিস একবার।”
“ওই তো ওরকমই কিন্তু বেশি মানুষ দেখলে আন কমফোর্টেবল ফিল করবে।”
“তুই সামলে নিবি।ধীরে ধীরে পরিবর্তন করবি ভাবীকে।”
“না একদমই না।”
“কি হলো!তোর চোখ এমন গুন্ডাদের রাগান্বিত হলো কেন?”
দর্শন গম্ভীর চাহনি দিয়ে বলে,“ও যেমনই আছে পারফেক্ট আছে বরং ভালো আছে।ওকে পরিবর্তন হবার প্রয়োজন নেই।”

“এমনভাবে কথা বলছিস কেন?মানুষ ধীরে ধীরে ইমপ্রুভ করে জীবনে।”
“আমি চাইনা শোভা পরিবর্তন হোক।আমি চাই ও যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকুক।ভালোই তো আছে।পর পুরুষের সামনে যায়না।নিজেকে পর্দায় রাখে।আমি অন্তত রিল্যাক্স থাকবো।”
“তারমানে তুই ভাবীকে ভালোবেসেছিস?”
দর্শনের কথা বলা থেমে গেলো।তুহিনের দিকে তাকালো।অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে কফি দিয়ে গেলো।দর্শন তাতে চুমুক দিয়ে বলে,“ভালোবাসা কি এতই সহজ?”
“ভালোবাসা অনেক সহজ যদি তুই এক দেখাতেই প্রেমে পরিস।কিন্তু ভালোবাসার পূর্ণতা পাওয়াটা অনেক কঠিন যদি তুই ভালোবাসা অর্জন করতে না পারিস।”
“আমার তো মনে হয়না ভালোবাসা এত সহজ।”

“কারণ তুই তোর মাইন্ডকে অন্যভাবে গুছিয়ে রেখেছিস।একাকীত্ব জীবন কাটানোর মত একটা আলাদা মানসিকতা তোর মস্তিষ্কে গেঁথে রাখা।যেদিন ওই মস্তিষ্ককে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করবি সেদিন মনের কথা শুনে চলবি।দেখবি তুই আলাদা সুখ সাগরে ভেসে গেছিস।”
দর্শন কিছুক্ষণ ভাবলো।অতঃপর তুহিনের দিকে চেয়ে বলে,“তুই কি সত্যিই কারো প্রেমে পড়েছিস?”
তুহিন মাথা উচু নিচু করে বলে,“খুব বাজে ভাবে তার প্রেমে পড়েছি।”
“তার জীবনে যদি কেউ থাকে?”
“উহু,নেই।বিশ্বাস কর আমি প্রতিনিয়ত ওর খোঁজ নেই।ছুটে যাই ওর আত্মীয়ের কাছে।গিয়ে প্রতিদিন খোঁজ নেই।আমি শিওর হয়েছি ওর নেই কোনো বয়ফ্রেন্ড আর নেই কোনো সম্বন্ধ।”
“যদি মেয়েটার পরিবার তোকে না মানে?”

“কেন মানবে না?আমি কি ছেলে হিসেবে খারাপ?আমার কোনো বাজে নেশা নেই নারী চক্কর নেই এমনকি ভালো বেতনের চাকরী করি।সম্মান পাই সবার থেকে।সবথেকে বড় কথা তাদের মেয়েকে আমি রানীর হালে রেখে দিবো।আমার মা বাবার একমাত্র বউমা হবে সে।আমার বোন অনেক সুইট।সে একটা ভালো ননদ পাবে।আর কি চাই?”
দর্শন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখছে তুহিনকে।তুহিন এবার মজা করে বলে,“ডোন্ট ওরি দোস্ত।আমার সাথে যদি মেয়েটার পরিবার না মেনে নেয় তাহলে অপশন হিসেবে তোর বোন তো আছে।তাকে নাহয় পটিয়ে নিবো।”
“খবরদার আমার বোনের দিকে চোখ দিবি না।ওর ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক চিন্তা আছে।তার থেকেও বড় কথা বন্ধুর সাথে বোনের বিয়ে দিয়ে আমি শালা দুলাভাই সম্পর্ক করে সম্পর্কের আলাদা রূপ দিতে চাইনা।আশিককে দেখছিস তো।রোমানের বোনকে বিয়ে করেছিল।আশিকের সংসারে ঝামেলা হলে রোমানের সাথে ঝামেলা।আমার দেখে শিক্ষা হয়েছে।”

“চিল!আমি নিজেই আমার শখের নারী ব্যতীত কোনোদিকে নজর দিচ্ছি না।আমি যদি তাকে নাও পাই সারাজীবন একাকিত্বে কাটিয়ে দিবো।তবুও অপশন খুজবো না।কারণ সে আমার অনেক সাধনার এক নারী।যাকে ভুলবার মন হয়নি তৈরি।”
দর্শন দেখতে পাচ্ছে তুহিনের দৃষ্টিতে সেই নারীটির জন্য আলাদা ভালোবাসা।অপরিচিত এক মেয়েকে নিয়ে বন্ধুর কাছে কেউই মিথ্যা বলবে না।তুহিন মনের কথা বলে একটু হালকা হয়ে নিলো।

রাত দশটার একটু পর বাসার নিচে গাড়ির শব্দ পাওয়া গেলো।দিজা বই বন্ধ করে বলে,“ভাইয়া এসেছে।”
শোভা উঠে দাড়ালো।দরজার কাছে এসে নিচের দিকে চোখ রেখে দেখে দর্শনের গাড়ি।দিজার উদ্দেশ্যে বলে,“হুমম।”
“চলো নিচে যাই।”
“আমি গিয়ে কি করবো?”
“তোমার স্বামী এসেছে আর তুমি জিজ্ঞাসা করছো তুমি গিয়ে কি করবে!”
“তুমি তো সব জানোই।”
“এবং বুঝিও।এত তাড়াতাড়ি হার মেনে নিও না।”
“আমি ক্লান্ত।”
“আমি আছি তো আবারও এনার্জি ফিরিয়ে আনতে।চলো চলো।”

বলেই হাত ধরে শোভাকে নিয়ে নিচে নামলো।শোভা মাথায় কাপড় দেয়ার সময় পেলো না।ওড়নাটা বুকের ওপর মেলে রাখা।দিজার মাথায় ওড়না আছে অবশ্য।ও বুঝতে পারে দর্শন এসেছে তাই আগে থেকেই নিচে যাওয়ার জন্য মাথায় ওড়না দেয়।শোভার ইচ্ছা ছিল না যাওয়ার।নিচে নেমে ওর দাড়াতেই দর্শন গাড়ির চাবি আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে এগিয়ে আসতে ওদের দেখে।দর্শন তাকালো শোভার দিকে।শোভা চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে। দিজার উদ্দেশে প্রশ্ন করে,“কাল পরীক্ষা নেই বলেই কি পড়াশোনা বাদ?”
“পড়ছিলাম তো ভাইয়া।তুমি এসেছো বলেই নিচে নামলাম।”
“রাতের ব্যবস্থা করেছিস নাকি আনব বাইরে থেকে?”
“ভাবী রান্না করেছে।”

শোভা কথা বলার স্থান না পেয়ে উপরে উঠতে নিলে দর্শন বলে,“কেন ওর কি পড়ালেখা নেই?রান্না করে সময় নষ্ট করতে হবে কেন?”
শোভার পা থেমে যায়।এক সিঁড়ি উপরে পা রেখেই দাড়িয়ে পড়লো।দর্শন দেখছে শোভার পিছন পাশ। দিজা মৃদু হেসে বলে,“আছে তো।বিকালে রান্না করেছে।তুমি ডিম কিনে দিয়ে গেছিলে।ওটাই ভুনা করেছে আলু দিয়ে আর ভাত।সময় লাগেনি তো।সন্ধ্যার পর আমরা পড়তে বসেছি।”
দর্শন মাথা নাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে।শোভার পাশ কেটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো।যেতে যেতে জানালো,“আমি চেঞ্জ করে আসছি।”

শোভা আর উপরে গেলো না।রান্নাঘরের দিকে গেলো। দিজা আড়ালে হেসে দেয়।এদেরকে দেখতেও ভালো লাগছে।শোভা ভাত বেড়ে নিয়ে এলো।তারপর তরকারি এনে প্লেট আনলো।দিজা পানি ভরছে জগে।সেও হাতে হাতে সাহায্য করছে টুকটাক।দর্শন নিচে নামতেই তিনজনে মিলে খেতে শুরু করে। দিজা গালে খাবার নিয়ে বলে,“উমমমম ভাবী অনেক মজা। ডিম ছেড়ে দিয়ে আলু দিয়ে এভাবে আবার রান্না করে খাওয়াবে।আমি এমনিতেও ডিম পছন্দ করিনা কিন্তু আজকের রান্নাটা অমৃত।তাই না ভাইয়া?”

দর্শন খেতে খেতে তাকালো দিজার দিকে।এমন প্রশ্ন করায় চোখ চলেই যায়।দর্শন কিছু বলতে নিবে শোভা বলে,“বাধ্য হয়ে খাচ্ছো খাও।আমার হাতের রান্না আহামরি কিছু না।অনেকে তো আমার হাতের রান্না খেতেই চায়না।হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার তাই চুপচাপ মেনে নিলো।এতে চাপা দেওয়ার কিছু নেই।”
শোভার কথাতে ক্ষোভ জমে আছে।বোঝা যাচ্ছে তা। দিজা কিছু ভেবে হতাশ হয়ে আছে।এদের কিভাবে এক করবে!উপায় তো নেই।তাও চেষ্টা চালাতে হবে।মুখ ফুটে বলতে নেয়,“চাপা না…
“রান্নাটা খারাপ হয়নি দিজা।তোর টেস্ট ভালো আছে।”
দিজা হা করে তাকালো।শোভার হাত থেমে গেলো।চোখ তুলে এক পলক তাকালো।আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২২

দর্শন আবারও বলতে শুরু করে,“তোর ইচ্ছা করলে এমন টেস্টের জন্য আবদার করতেই পারিস।”
দিজা তো এবার মনে মনে বলেই দেয়,“মেরে ভাই তো ফাঁস গায়ী।আর কিছু ডোজ দেওয়া লাগবে।এরপরেই আমার ফুফু হবার প্রস্তুতি নিতে হবে।ইশ কবে যে আসবে সেদিন?”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here