বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৯

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৯
ইশরাত জাহান

তুহিন ধীরে ধীরে দিজাকে নিয়ে দর্শনের বাড়ির চৌকাঠ পেরোয়।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে প্রায় নিস্তেজ তবু মুখটা শক্ত করে রেখেছে।এই বাড়ির প্রতিটি স্থানে যেন দিজার সাথে শোভা জড়িত।যেদিকে তাকায় দুজনের হাসিখুশি মুহূর্ত কল্পনা করে।দিজা অনেক বেশি ভালোবাসে শোভাকে।দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।শোভার কিছু হলে মেয়েটাও মানতে পারবে না।নিজ চোখে ঐভাবে শোভাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখে দিজা অনেক ভেঙ্গে পড়ে।রাস্তায় গড়াগড়ি খাবার মত অবস্থা।তুহিন সামলে নিয়ে আসে।

তুহিন ঠিক তখনই বুঝে নেয় এই মেয়ে আসলে দর্শনেরই বোন।দর্শন কখনও ওদের বাড়িতে বন্ধু। নিয়ে যেতো না।তুহিন একবার গিয়েছিল কিন্তু তাও পাঁচ মিনিটের জন্য।ওই সময় চাকরির জন্য চেষ্টা চালায়।দিজা তখন পরীক্ষা দেয়।তুহিনের নজরে আসেনি তখন।অবশ্য সেও কখনও বাড়িতে কে কি আছে দেখার জন্য কৌতূহল দেখায়নি।দর্শন,দাদাজান ও দিদার এদেরকেই চেনে তুহিন।কিন্তু এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই।দর্শন তখনই অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরে আসে।চোখ লাল আর মুখ থমথমে।তুহিনকে এক ঝলক দেখেই কাছে এগিয়ে আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ওরা কি কিছু জানিয়েছে?”
গলা নিচু কিন্তু শব্দে তীব্রতা।তুহিন ধীরে বলে, “পঞ্চাশ লাখ টাকার ডিমান্ড করেছে।এর বেশি কিছু না।কোথায় যেতে হবে,কীভাবে দিতে হবে?এসব কিছুই বলেনি।হয়তো সময় নিচ্ছে।”
দর্শন ঠোঁট চেপে রাগ নিবারণ করে।দুচোখে রক্তিম রাগ খেলে যায়।রাগে কাপতে কাপতে বলে,“শোভার গায়ে কেউ হাত তুললে আমি পুরো শহর জ্বালিয়ে দিব তুহিন!টাকা তো দেবই না উল্টো তার আগে বের করব ওরা কে,কোথা থেকে আসে,কার এত বড় সাহস? আমি টেনে বের করবো কিভাবে ওই চামচা গুলোকে নিজের ক্ষমতার জোর দেখায় জবরুল আহমেদ!”

তুহিন শান্তভাবে বলে,“আমি পুলিশে খবর দিয়েছি।গাড়ির নাম্বার ট্র‍্যাক করছে ওরা।সময় লাগবে তবে ওরা আবার কল করবে নিশ্চিত।তুই শুধু টাকা রেডি রাখ।কারণ কিছুক্ষণের জন্য হলেও টাকাটা দেখিয়ে ওদের মাইন্ড ডাইভার্ট করতে হবে।”
দর্শন ধীরে ধীরে পেছনে হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালের দিকে মাথা ঠেকায়।এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর চোখ খুলে বলে,“ওরা যদি ভাবে টাকা দিয়ে সব মিটে যাবে ভুল ভাবছে।আমি ওদের একটা একটা করে সবাইকে নিজ হাতে শেষ করে দিবো।ওরা জানে না কার আমানতে চোখ দিয়েছে।”
তুহিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।কারণ এই মুহূর্তে দর্শনকে থামানো অসম্ভব।পুরো বাড়িটা ভারি হয়ে আসে।যেন কেউ নিঃশ্বাস ফেলে তাকিয়ে আছে।শোভা অদৃশ্যভাবে ওদের মাঝে।বিশেষ করে দর্শনের সামনে।

ঘড়ির কাঁটা রাত দশটার ঘর ছুঁইছুঁই করছে।হঠাৎ দর্শনের ফোনটা বেজে ওঠে।এক অজানা নম্বর।দর্শন ফোন কানে নিয়েই বলে,“কে?”
ওপাশ থেকে কর্কশ এক গলা,“ভদ্র ভাষায় বলছি পঞ্চাশ লাখ রেডি রাখ।মেয়েটা এখনো ভালো আছে। কিন্তু বেশি চালাকি করলে ওর শরীরের হাড় গুনতে হবে।লোকেশন দিলে পৌঁছাবি।শুধু টাকা হাতে নিয়ে একা আসবি।”
দর্শন সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বলে,“তুই যদি একটা আঁচড়ও দিস আমার বউয়ের গায়ে, তাহলে তোর শরীরের মাংস আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো।”
“চেঁচাস না ভাই।তোর জন্য শুধু টাকা,আর আমাদের জন্য একটা লেনদেন।এবার ঠিক মতো চল না হলে মেয়েটা তোর হাতে ফিরবে না।”

কল কেটে যায়।দর্শন ফোনটা হাতের মুঠোয় এমন করে ধরে যেন সেটা ভেঙে ফেলবে।তুহিন এগিয়ে এসে বলে,“লোকেশন বললো না?”
“বলবে,আবার কল আসবে।”
দর্শন দাঁতে দাঁত চেপে ধরা প্রতিজ্ঞা করে,“আমি ওদের কাউকে ছাড়বো না।আমার বউয়ের দিকে যার যার নজর পড়বে তাদের নজর আমি আগুনে ঝলসে দিবো।”

শোভা চোখ খুলতেই চারপাশের অন্ধকারে ঝাপসা কিছু দেখতে পায়।তার মুখে কাপড় বাঁধা ও হাত বাঁধা।ঘরটা ভাঙা।কোনো গুদামঘর মনে হচ্ছে।পাশে একটা মোটা লোক ফোনে কথা বলছে,“ছেলেটা বড্ড আগ্রাসী।সাবধানে চলতে হবে।”
শোভা আরো শুনতে পায় তার নাম,দর্শনের নাম, টাকা ও পুলিশ সব কিছু।কিন্তু সে কিছু করতে পারে না। কেবল চোখ বুজে ফেলে।ভরসা আছে একজনের ওপর।দর্শন!

রাত সাড়ে এগারোটা।লোকেশন অনুযায়ী দর্শনের গাড়ি গিয়ে থামে একটা পুরনো চাতালে।সঙ্গে তুহিন আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের দল।সাবধানে এগোয় সবাই।জায়গাটা নির্জন।বাতাসে ভিজে গন্ধ যেন কিছু পুরে ফেলা হয়েছে সাম্প্রতিক।দর্শন চারদিকে তাকায়।চোখে পাগলতা।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে একটা পরিত্যক্ত কাঠের চেয়ার,পাশে ছেঁড়া কালো কাপড়।শোভার গায়ের বোরকা!
“শোভা!”

দর্শনের গলা ফেটে যায়।তুহিন এসে বলে,“এখানে কেউ নেই।ওরা পালিয়েছে।সম্ভবত পুলিশ লোকেশন ট্র‍্যাক করেছে জেনে গেছে।আমরা আসার আগেই সরিয়ে ফেলেছে।”
পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে বলে,“আমরা গোপন ট্র‍্যাক করছিলাম,কিন্তু ওরা আমাদেরও ফাঁকি দিয়েছে!মোবাইল এখন বন্ধ।ইন্টেলিজেন্স বলছে ওরা ঢাকা ছেড়েছে।যশোরের দিকে যাচ্ছে।”
দর্শন দুহাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত।তারপর ধীরে ধীরে নিচু গলায় ফিসফিস করে,“ওরা আমার বউয়ের গা থেকে বোরকা ছিঁড়ে নিয়েছে।যে হাত আমার বউয়ের শালীনতা হরণ করতে চেয়েছে সেই হাত আমি টুকরো টুকরো করে কুমির দিয়ে খাওয়াবো।”

তুহিন দর্শনের দিকে তাকায়।দর্শনের চোয়াল শক্ত, চোখ লাল।দর্শন গর্জে ওঠে,“আমার সবকিছু কেড়ে নিলেও আমি কিছু বলতাম না কিন্তু যেই শোভাকে কেউ ছোঁবে,আমি তার বংশ শেষ করে দেব!এবার কারা মরবে জানি না,কিন্তু যেই আমার হাতের নাগালে আসবে সেই বাঁচবে না!”
পুলিশ অফিসার কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে যায়।কারণ এ গলায় কোনো হুমকি নেই এ গলায় মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা বাজছে।তুহিন ধীরে বলে,“দর্শন, প্লিজ!প্ল্যান করে এগোতে হবে।ওরা এখন সতর্ক হয়ে আছে।তুই ভুল করলেই ভাবী!”

দর্শনের ঠোঁট নড়ে না কিন্তু চোখের ইশারা দিয়ে থামিয়ে দেয় তুহিনকে।ধীরে ধীরে কর্কশ কন্ঠে কথা বেরোয়,“আমি যদি মরেও যাই আগে ওদের সবাইকে টেনে কবরের নিচে নামাব।শোভা এখন আমার হৃদপিণ্ড।ওকে হারালে আমার আর কিছুই হারাবার নেই।”
তুহিন দেখছে রাগে ক্ষোভে এক বিধ্বস্ত স্বামীকে।যে এতদিন সহ্য করতে পারত না কোনো নারীকে।বিয়ের পর বউকেও মানতে পারেনা কিন্তু যেই একবার বউয়ের টান অনুভব করেছে সেই তার মাঝে উন্মাদনা তৈরি হয়।দর্শন গর্জে উঠে বলে,“যশোরে যেতে হবে আমাদের।আবারও মুখোমুখি হবো ওই মহিলার।যার জন্য আমার শৈশব মরে গেছে,কিন্তু আমার বর্তমান শেষ করতে দিব না।মিসেস ফারহা!ইউ হ্যাভ টু ফেস মি।”

আজ দেখা যাচ্ছে মায়ের প্রতি সন্তানের ক্ষোভ। নাহ!ক্ষোভ না ঘৃণার সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি।সন্তানের কাছে মা একজন আদর্শ ব্যক্তি।মায়ের অবদান একজন সন্তানের কাছে সবার উপরে।শুধু এই দর্শনের বেলাতেই যেনো ভিন্নতা।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু ভুগতে হয় এক বাচ্চা ছেলেকে।মা তো তার বাবাকে ভালোবাসতো না তাহলে তাকে কেন ছেড়ে গেলো?একবারও কি তার কথাটা ভাবলো না?ওই একটা মহিলার জন্য আজ নারীদের ঘৃণা করে।যখনই একজনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তখনই যেনো আবারও সেই মা মাধ্যম হয়ে তার পথের কাটা হয়ে গেলো।

গাড়িতে বসে হাত মুঠ করে দর্শন জানালার দিকে চোখ রেখেছে।দিজা সামনে বসা পাশে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত তুহিন।দিজার চোখ কিছুক্ষণ পরপর দর্শনের দিকে।বাড়িতে কল করে জানানো হয়েছে ওরা আসছে আজকে।শোভাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। দিজার সবথেকে বেশি ভয় লাগার কারণ দর্শনের পাশে রিভলবার।যেটা লাইসেন্স প্রাপ্ত।দর্শনের ক্ষমতা দেখে দিজার গা কেঁপে উঠলো।এমনিতেই ভীষণ রাগী তারউপর কিনা রিভলবার কাছে রাখে।পুলিশগুলো আবার দর্শনের বামহাত।

শামীম রাতে ঘুমোতে পারছে না।দ্রুত মিতু ও মৌলিকে নিয়ে ছুটে গেলো ফরাজি বাড়িতে।দাদাজান সোফায় বসে আছেন।দুশ্চিন্তা তার মাথায়।কারো চোখে ঘুম নেই।বাচ্চা মৌলি কান্না করে বলে,“পিপি পিপি…
মিতু বুকে জড়িয়ে আগলে রাখছে।শামীমের থেকে শুনেছে শোভাকে কেউ খুন করে দিবে।মিতুকে বলেছিলো কিন্তু ঘুমন্ত মৌলি উঠে বসেই শুনে নেয়।খুন কি এটা বোঝে মৌলি।মিতু ভয় দেখায় যে একা বাইরে গেলে বাজে লোকেরা খুন করে দিবে।তাই এই শব্দটা শুনেই কান্নায় ভেংগে পড়ে মৌলি।শামীম বিধ্বস্ত হয়ে আছে।মায়ের মুখ ভেসে আসছে চোখের সামনে।মাকে স্মরণ করে কান্না করে দিয়ে বলে,“মায়ের আমানত রক্ষা রাখতে পারলাম না।”
দিদার এসে শামীমের কাঁধে হাত রাখে।দীপ্ত ফরাজি নিজের কপালে হাত দিয়ে মাথানত হয়ে আছেন।তার অতীত তার সন্তানদের ক্ষতি করে দিলো।শুনেছে তার রাগী গম্ভীর ছেলেটা আজ কিভাবে পাগলামি করছে।তুহিন তো এটাই বলে দেয়,“দর্শন হয়তো পাগল হয়ে যাবে ভাবীকে না পেলে।”

আসলেই তাই হলো।পুলিশের সামনে দাড়িয়ে পুলিশকে ওয়ারনিং দেয়,“যদি আমার বউয়ের গায়ে একটা আছর লাগে আমি সবকটাকে শেষ করে দিবো।কোনো জেলের ভাত দেওয়ার ব্যাবস্থা করবো না,সোজা কুমিরের মুখে যাবে একেকটার শরীর।”
পুলিশরাই ভয় পেয়ে বলে,“রিল্যাক্স স্যার আমরা দেখছি ব্যাপারটা।”
কিন্তু দর্শন ভরসায় নেই।সে তার মত খোঁজ চালাবে।দাদাজান একটু ভরসা পেয়েছিলেন নাতিটা তার সুখে সংসার করবে ভেবে কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল!

ভোরবেলা ঝুমঝুমপুর ছাড়িয়ে যশোরের মধ্যে এলো গাড়ি।দর্শন এখনও চেয়ে আছে।সারা রাস্তা বাইরে চোখ বুলিয়েছে।যদি কোথাও কিছু নজরে আসে।কিন্তু আসেনি।এটাই সাভাবিক যে আসবে না কিন্তু আশা তো থাকে অনেক।
এই ভোরবেলা বাড়ির সামনে গাড়ির জোরে হর্ণ বাজতে থাকে বলে মিসেস ফারহা ও বাড়ির সকলে উঠে পড়ে।বাড়ির মধ্যে বন্দুক হাতে ঢুকলো দর্শন।মিসেস ফারহা হামি তুলে মুখে পানি দিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো।এসেই দেখে দর্শনকে সাদা শার্ট কালো জিন্স চোয়াল শক্ত ও হাতে রিভলবার। জবরুল আহমেদ আসলেন মিসেস ফারহার সাথে।মৃদু হেসে তাকালেন দর্শনের দিকে কিন্তু দর্শন এখনও চোয়াল শক্ত করে আছে।জবরুল আহমেদ কিছু বলতে যাবে তার আগে দর্শন এই হলরুমে থাকা প্রত্যেকটি দামী জিনিসের দিকে চোখ দেয়।দেওয়াল টিভিতে চোখ রেখে সেখানে শুট করে।টিভির কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো।সবাই কেঁপে উঠলো।টিভির পাশে থাকা দামী একোরিয়ামটাও গুলির আঘাতে টুকরো টুকরো হয়েগেলো।মাছগুলো লাফাচ্ছে পানি না পেয়ে।উপরের ঝাড়বাতিতে শুট করে দেয় টানা তিন চারটে।অতঃপর ঝাড়বাতি খুলে পড়ে যেতে নেয় মিসেস ফারহার উপর।জবরুল আহমেদ সরিয়ে নেন মিসেস ফারহাকে।হুংকার ছেড়ে দর্শনের উদ্দেশে বলেন,“মাস্তানি হচ্ছে আমার বাসায় এসে?পুলিশে দিয়ে দেবো।”

দর্শন হাত উঁচিয়ে কলার চেপে ধরে টেবিলের সাথে তার দেহটা মিশিয়ে গলা চেপে ধরে শাসিয়ে বলে,“অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার স্বাদ পেয়েছিস কিন্তু শাস্তি পাসনি,তাই আমার বউয়ের দিকে নজর গেলো তোর!এখন ভুগবি শাস্তি কাকে বলে।”
মিসেস ফারহা অবাকের সাথে বলেন,“তোমার বউয়ের দিকে নজর মানে?মানুষের বাড়িতে হামলা করো কোন সাহসে?”
দর্শন তাকালো না মিসের ফারহার দিকে।বরং দৃষ্টিতে ঘৃণা ফুটিয়ে বলে,“আপনার ভালোবাসার স্বামী যখন আমার বউকে পুরো ভার্সিটির সামনে থেকে উঠিয়ে এনেছে তখন মনে ছিল না?এই দর্শন ফরাজি কোনো নষ্টা মানুষের সামনে আসতে চায়না কিন্তু তাকে যখন আনা হয় তার ফল কতটা ভয়াবহ এটাও দেখানো হয়।”
“তুমি ওর বউকে তুলে এনেছো?”

মিসেস ফারহা প্রশ্ন করলেও উত্তর পায়না।দর্শন এক লাথি মেরে জিজ্ঞাসা করে,“বল আমার বউ কোথায়?”
মিসেস ফারহা ধমক দিয়ে বলেন,“ভদ্রতা শেখনি নাকি?এভাবে কেউ আচরণ করে?”
দর্শন এবার চোখ লাল করে চাইলো মিসেস ফারহার দিকে।অতঃপর ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,“আমাকে ভদ্রতা শেখাতে যার প্রয়োজন সেই অসভ্য মহিলা ছিলো পরকীয়ায় লিপ্ত।আপনি কিনা খুজছেন আমার ভদ্রতা!”
মিসেস ফারহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।আশেপাশের সবাই দেখছে তাদেরকে।পুরো পরিবারের সামনে মিসেস ফারহার মাথা নিচু হয়।দর্শন আরো একটা লাথি মারে জবরুল আহমেদের পেটে।গলার উপর পা রেখে পিষে ধরে বলে,“আজকে তোর নিশ্বাস চলে যাবে তবুও ছাড়বো না আমি তোকে।তোর জন্য আমার বউয়ের গায়ে ওরা আছর দিয়েছে।তুই আজ শেষ।”

জবরুল আহমেদ হাত উঁচিয়ে অনুরোধ করে বলেন,“আমাকে মাফ করে দেও।আমি বলছি ওই মেয়েটা কোথায়।আমি তোমাদের নিয়ে যাচ্ছি।”
দর্শন ছেড়ে দিলো।জবরুল আহমেদের গলা থেতলে গেলো।তিনি উঠতে পারছেন না।তাই দেখে দর্শন গলা উঁচিয়ে ডাকে,“অফিসার!”
অফিসার আসতেই সবাই আহাম্বক।সাথে পুলিশ তাও ক্রাইম করতে পারছে দর্শন।তার ক্ষমতা তাহলে এত।দর্শন আদেশ দেয়,“ওর কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলুন।”
অফিসার নিয়ে গেলো জবরুল আহমেদের কলার ধরে।পুলিশ চলে গেলে দর্শন একবার তাকালো মিসেস ফারহার দিকে।হুকুম করে বলে,“কালকের মধ্যে বাড়িটা ফাঁকা করবেন।এই বাড়ি নিলামে যাবে।আমার বউকে কিডন্যাপ করে পঞ্চাশ লাখ টাকার দাবী আমি দেখিয়ে দিবো।”

দর্শনের হুকুমে হিসাব করা হচ্ছে বাড়ির সকল অবৈধ কাগজ ও দামী জিনিসের।সবকিছু যে ঘুষের টাকায় তার প্রমাণ বের করা হবে সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে।তার আগে বাড়িটা ফাঁকা করার অনুমতি এলো।মিসেস ফারহা সোফায় বসে নিজের কপাল চাপরাচ্ছেন।মনে করলেন সেদিনের সেই অপমানের কথা যেটা তার ছেলেকেও করেছিলেন,“যে পুরুষের মধ্যে থাকেনা সাহসিকতা যে পুরুষ মিনমিন করে তার সাথে সংসার করে কিভাবে?একটা কথা বললে মাইনকা পুরুষের মত রাজি হয়।কেউ অপমান করলে বলদের মত অপমান হয়ে ফিরে আসে।

যা একটু বয়স মানিয়ে চলতাম এখন দেখি পরিবেশে চলাও যায়না।ছেলেটাকেও তো ওরকম বলদ বানাচ্ছে।বাপ ব্যাটা দুজনেই বলদের কারখানা।আমি পাগল হয়ে যাবো।তার আগেই বিদায় নিলাম।কাপুরুষ বাপ ব্যাটা গলা ঝুলিয়ে সংসার করুক।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৮

আজ নিজের কথাগুলো নিজের কানে বারি খাচ্ছে।কর্মফল ভোগ করছেন তিনি।তারই ছেলে প্রতিশোধ নিলেন আজ।কাউকে আঘাত করলে তা কোনো না কোনোভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসবেই।আজ নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পারল সন্তানেরাও জানে মা বাবার পাপের শাস্তি দিতে।

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here