বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪১
ইশরাত জাহান
গভীর রাতে,
ঢাকার নির্জন রাস্তায় রাতের নীরবতা ভাঙছিল শুধু গাড়ির চাকার শব্দ।দর্শনের চোখে তখন লালচে আভা।পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শোভা ক্লান্তিতে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল।হাত-পা নড়াতে নড়াতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত হয়ে।মাথাটা এলিয়ে দেওয়া সিটের সাথে।সেই মাথাটা আলতো হাতে ধরে নিজের কাঁধে রাখলো দর্শন।ঠোঁটে মৃদু হাঁসি আর চোখেমুখে জেদ ফুটিয়ে শোভার ললাটে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,“তুমি শুধুই আমার,আমার ব্যক্তিগত নারী তুমি। অন্য কারো দৃষ্টি যদি তোমার দিকে পড়ার সাহস দেখায়,সেই সাহস আমি মাটিচাপা দিয়ে মুছে ফেলব। তোমার অস্তিত্বে অন্য কারোর ছায়া পড়ার আগেই আমি তার অস্তিত্ব বিলীন করে দেব।”
অবশেষে ঢাকায় নিজের কেনা বাড়িতে ফিরে এলো দর্শন।ভূতুড়ে সেই পুরনো ধাঁচের বাড়িতে গাড়ি থামিয়েই আশপাশ তাকালো।কোথাও কোনো আলো নেই।থাকবেই বা কিভাবে?আশেপাশে তো কোনো বাড়ি নেই।পিচঢালা রাস্তার একদিকে ঢাকা শহর অন্যদিকে তেমন পৌরসভা হলেও তেমন উন্নত না।পিচঢালা রাস্তা পেরিয়ে ভাঙ্গা রাস্তা পড়ে।রাস্তার দুইদিকে বড় বড় গাছ।যেনো জঙ্গল রয়েছে দুইপাশে।সেখান থেকে একটা গলির মধ্যে ঢুকল পুরাতন বাড়ি।দর্শন এটাই কিনেছিল।এই বাড়িটি দিনের বেলা দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর লাগে রাতের বেলা ঠিক তেমনই ভয়ানক।শোভা এখনও চারপাশ ভালোভাবে দেখেনি।তাছাড়া তার কয়টা দিন কেটেছিল দিজা ও দর্শনের সাথে।তাই তেমন ভয় কাজ করেনি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দর্শন শোভাকে কোলে তুলে নেয়।সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় তার নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল। বিছানায় শোভার শুয়ে দিয়ে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অপলক দৃষ্টিতে।যেন জগৎজুড়ে এই মেয়েটিই তার আসক্তি,তার শিকার,আবার তার প্রাণও।
দর্শনের আঙুল ধীরে ধীরে শোভার হিজাবে গিয়ে থামে।এক টানে হিজাব খুলে ফেলে সে।তারপর কাঁচের গ্লাসে পানি নিয়ে সেখান থেকে পানি ছিটিয়ে দিল শোভার মুখে।শোভার চোখ কাঁপল,গলা শুকিয়ে আছে।উঠে বসতেই তার মাথা ঝিমঝিম করছে।চারপাশ তাকিয়ে কিছু মনে করতেই আতকে উঠলো।দুপুরের কথা মনে পড়তেই ভয়ে আঁতকে দূরে সরে বসলো।জানালার সাথে লেপ্টে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে।ভয় করছে খুব তার।দর্শন এই ভীতু মুখ দেখতে চায়না।সে অভ্যস্ত চঞ্চল মেয়েটার প্রতি।শোভাকে কিছু বোঝানোর জন্য হাত বাড়াতে নিলেই শোভা আরো গুটিয়ে বসে বলে,“না!দয়া করে দূরে থাকুন।আপনি আমার কাছে আসবেন না।”
শোভার কণ্ঠ কাঁপছিল।দর্শন ঠান্ডা হেসে কাছে এগিয়ে এল।শোভা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে।দুপুরে দর্শনের হাতের বন্দুক দেখেই তার প্রাণপাখি পালিয়ে গেছে।এখনও ভয়ে কাপছে।দৃষ্টি দর্শনের চোখজোড়ার দিকে।দর্শনের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ,ভয়ংকর অথচ অদ্ভুতভাবে আকর্ষণীয়।শোভার চোখে চোখ রেখে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,“আমার কথা শোনো,ওয়াইফি।”
শোভা মাথা দুইদিকে দুলিয়ে বিছানা থেকে নামতে নেয়।এক পা যেই এগোতে নেয় ওই পায়ের উপর পা রাখলো দর্শন।শোভা ঘাবড়ে গেলো।কেঁপে উঠলো তৎক্ষণাৎ।শোভা পালাবার জন্য এদিক ওদিক তাকালে দর্শন চোয়াল শক্ত করে বলে,“পালাবার জন্য যত রাস্তাই খোজো না কেন সব বৃথা যাবে,ওয়াইফি।কারণ এটা আমার অস্থানা।এখানে তুমি আমার মর্জিতে এসেছো আর আমার মর্জিতেই বের হতে পারবে।”
শোভার শরীর শীতল ভয়ে জমে গেলেও দর্শনের কণ্ঠে এমন এক অদ্ভুত অধিকার ছিল,যেন সে সত্যিই অন্য কারও নয় শুধু তারই।দর্শন তার চিবুক ধরে উঁচু করল।শোভার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলতে শুরু করে,“ভয় পাওয়ার দরকার নেই।আমি তোমাকে আঘাত করব না কিন্তু তুমি যদি আমার চোখের সামনে থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করো,তখন আমি কি করব নিজেও জানি না।”
দর্শনের কণ্ঠ অস্বাভাবিক শান্ত,অথচ সেই শান্তই ভয়ের।গায়ে কাটা দিয়ে উঠছেড।এই দর্শনকে শোভা চেনে না।রাগী,গম্ভীর,দূরে সরিয়ে দেওয়া সেই লোক এটা না।শোভা ঠোঁট কাঁপিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল দর্শন আচমকা তার ঠোঁটের ওপর আঙুল চেপে দিল।ধমকে বলে,“চুপ।আর কোনো দ্বিমত জানতে চাইনা।সারাদিনে তোমার মুখে অনেক শুনেছি আমার কথার দ্বিমতের কথাগুলো।”
শোভার চোখ বেয়ে পানি।ভয়ে কথা বলা তো দূর ওর এখন দর্শনের সামনে থাকাটাই কষ্ট হয়ে উঠছে।মেয়েটা ঘাবড়ে গেছে প্রচুর।এখানে থাকতে চায়না।কিন্তু কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।একা একা যশোরে ফিরেও যেতে পারবে না।কিছু বলতেও ভয় কাজ করছে।দর্শন শোভার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,“আমি তোমার কান্না দেখতে চাই না।আমি শুধু চাই তুমি তোমার এই কাজল কালো চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকাও।এই চোখে পানি থাকবে না।”
শোভার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল দ্রুত গতিতে। কিন্তু একই সাথে,দর্শনের সেই শীতল অথচ গভীর দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল যা ভাঙা,ভীত হৃদয়েও অদ্ভুত কম্পন জাগিয়ে তুলছিল।শোভার চাহনির মাঝে কোনো ভালোবাসা প্রকাশ পায়না।পেয়েছিল ভয় ও ঘৃণা।ঘৃণা আসাটা স্বাভাবিক।কারণ ওর মস্তিষ্কে এখনো অপমানের ব্যাপারটা এখনও ঘুরছে।
দর্শন এগিয়ে এসে তার গলার পাশে নিঃশ্বাস ছুঁইয়ে বলল,“তুমি যদি আমাকে ঘৃণা করো?তাহলে করো।তাও আমি তোমাকে ঘৃণা কাটাতে বলব না।কারণ আমি তোমাকে ভাঙব,আবার আমিই গড়ব।”
শোভার বুক উঠানামা করছিল দ্রুত শ্বাসে।ঘৃণা,ভয়,আর অদ্ভুত এক অচেনা আকর্ষণ মিশে যাচ্ছিল।ভূতুড়ে অন্ধকার বাড়িটা যেন সাক্ষী হয়ে থাকল দর্শনের উন্মাদ আচরণের।দূরে সরে গিয়ে কাপা কাপা কণ্ঠে বলে, “পা পানি।”
দর্শন এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।শোভা কাপা কাপা হাতে গ্লাস নিয়ে পানি পান করে।পানি পান করার পর মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হয়।সারাদিনে ক্ষুধার্থ পেটে কিছু পড়ল অন্তত।শোভা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,“এখন কিছু বলব না।না জানি কি করে বসে।কোনো একটা সুযোগ বুঝে এখান থেকে পালাতে হবে।কিন্তু এখন কি করব?এই লোককে দেখলেই তো ভয় করছে।অজ্ঞানের অভিনয় করব?পারিও না অভিনয় করতে।”
একটু থেমে আবারও ভাবছে,“ধুর!চেষ্টা করে দেখি একবার।”
অতঃপর শোভা ইচ্ছা করে চোখ বুঝে বিছানায় মাথা এলিয়ে দেয়।শোভার এমন কান্ডে ভরকে গেলো দর্শন।শোভার দিকে ঝুঁকে গালে হাত দিয়ে আলতো চাপড় মেরে বলে, “ওয়াইফি!হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
শোভা ইচ্ছা করেই সাড়া দিলো না। সে সব শুনতে পেলেও অজ্ঞানের অভিনয় করে।দর্শন শোভাকে টেনে ধরে বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দেয়।শোভার বাঙালি ধাঁচের শাড়ি পরা।একপাশের আঁচল খুলে গেছে।হাঁটুর উপর থেকে কাপড় সরে গেছে।দর্শন লাইট জ্বালালো।শোভার চোখ পিটপিট হয় কিন্তু খোলেনা।দর্শন শোভার দিকে চেয়ে আছে।শোভার মুখশ্রীতে ক্লান্তির ছাপ।দর্শন দৌড়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।শোভা চোখ খুলে উঠে বসে।কিছু একটা ভাববার মধ্যেই দর্শন ভেজা গামছা নিয়ে আসে।শোভা দ্রুত অজ্ঞানের অভিনয় করে।
দর্শন এগিয়ে এসে শোভার চোখমুখ মুছে দেয়।অতঃপর চোখ যায় শোভার গলা ওর বুকের দিকে।যেদিকটা অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে আছে।শোভাকে নিজের করে পাওয়ার চাহিদা দেখা দিলো দর্শনের মাঝে।শোভার গলার কাছে ভেজা গামছা ছোঁয়ালো।অজ্ঞান হয়ে থাকা শোভাও কেঁপে উঠলো।তার গলার কাছে উষ্ণ ছোঁয়া তাকে কাপিয়ে দিচ্ছে।দর্শন ধীরে ধীরে শোভার গলা ও ক্লিভেজের উপরের দিকটা ভালোভাবে মুছে নেয়।শোভা কেঁপে কেঁপে উঠছে আর মনে মনে বলে,“এ কোন বিপদে পড়লাম আমি!”
দর্শন গামছাটা মেলে দিয়ে শোভার পাশে শুয়ে পড়ল।ঠিক শোভার দিক ফিরে।লাইট জ্বালানো আছে।শোভাকে দেখে চলেছে দর্শন এক দৃষ্টিতে।শোভার গলার দিক থেকে আঙ্গুল ছুঁয়ে নিচের দিকে নামিয়ে নিচ্ছে।শোভা বামহাত দিয়ে বিছানার কোনায় শাড়ির আড়ালে চেপে ধরে আছে।যেন দর্শন তার অব্যক্ত অনুভূতি বুঝতে না পারে।আচমকা ঘটে গেলো শোভার জন্য সর্বনাশ।দর্শন ঠিক যেখানে যেখানে শোভাকে কামড়েছিল এখন সেখানে সেখানে আলতো চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছে।শোভার ঠোঁটে দর্শনের ঠোঁট বিচরণ করছে।শোভা চোখ মেলে নিলো সঙ্গে সঙ্গে।দর্শন তার কাজে ব্যাস্ত।যেই চোখ তুলে তাকাতে নিবে শোভা আবারও বন্ধ করে নেয়।
শোভার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে শোভার মুখের দিকে চেয়ে আছে।শোভার মাথার চুলগুলোতে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে বুলিয়ে দিচ্ছে।
বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪০
এর মাঝেই দর্শনের চোখ যায় শোভার ক্লিভেজের দিকে।শোভার নিশ্বাসের গতি এই দিকটায় যেনো নেশাতুর করে দিচ্ছে।নিশ্বাসের সাথে বুকের ওঠানামা দর্শনকে শোভার প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।যতই হোক সে পুরুষ মানুষ।নিজেকে দমিয়ে রাখা সবসময় সম্ভব হয়না।কিন্তু শোভার অজ্ঞান অবস্থায় কিছুই করতে চায়না।তাই শোভার বুকের ভাঁজে মুখ গুজে চোখ বুঝলো।ঘুমানোর চেষ্টা করছে। আর শোভার ঘুম যেনো উড়ে গেলো।এভাবে তার গোপন অঙ্গের উপর মুখ দিয়ে ঘুমালে শোভার মধ্যে আলাদা শিহরণ কাজ করে।শোভা নড়তে পারছে না।সরলে ধরা পড়বে।বাধ্য হয়ে চোখ খিঁচে রাখে।