বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৩

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৩
ইশরাত জাহান

মিটিং শেষ হয়েছে মাত্র।দর্শনের কাজ একটু বাকি আছে।ওগুলো কমপ্লিট করেই চলে যাবে।সবাইকে চলে যেতে বলেছে।তাই চারদিক গুছিয়ে সবাই একে একে বেরিয়ে গেল।কেবল দর্শন আর মহুয়া রয়ে গেল।মেয়েটা ইচ্ছাকৃত আছে এখানে।
মহুয়া আজ সেজেছে আলাদা ভঙ্গিতে।সোনালী রঙের শাড়ি তার সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ,যেন অনায়াসে নজর কেড়ে নেয়ার জন্যই পরা।চারপাশের আলো নিভে গিয়ে টেবিলের পাশে রাখা নরম আলোয় ওর চেহারায় এক অদ্ভুত দীপ্তি পড়ছিল।

ল্যাপটপ হাতে নিয়ে হালকা ঝুঁকে দর্শনের সামনে বসল সে।ঝুঁকতেই খোলা চুল কাঁধ বেয়ে নামল সামনে।শাড়ির আঁচল একটু সরে গেল পাশে।মহুয়া ভান করল যেন কেবল অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু চোখের কোণ থেকে বারবার দর্শনের দিকে তাকাচ্ছে।
দর্শন সোজা হয়ে বসে ছিল।তার চোখে পড়ল প্রতিটি সূক্ষ্ম ভঙ্গি।শাড়ির ভাঁজে আলো-ছায়ার খেলা,মৃদু পারফিউমের গন্ধে ভেসে থাকা পরিবেশ।তবুও সে বাহ্যিকভাবে শান্ত।কেবল চোখে একধরনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
মহুয়া ঠোঁট বাঁকালো হালকা হাসিতে,যেনো সে তার কার্যে সফল।দর্শন স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,“মিসেস মহুয়া আপনি যাননি কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মহুয়া ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে,“কাজগুলো আগে কমপ্লিট করে নেই স্যার।”
দর্শন খানিক মুহূর্ত ধরে নীরব থেকে অতঃপর মুখ খুলল,“আপনার কাজগুলো করতে হবে না।আমি সবাইকে ছুটি দিয়েছি তো।আপনিও বাসায় যান।আই হোপ আপনার হাসব্যান্ড আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
মহুয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।কল্পনা করলো,বাড়িতে গেলে তো সেই টাকলা বুড়ো স্বামীর সাথেই সময় কাটাতে হবে।এর থেকে নাহয় হ্যান্ডসাম বসের সাথে আজকের মুহূর্ত কাটানো যাক।এমনিতেও মহুয়ার টার্গেট ছিল দর্শনের নজরে নিজেকে ফুটিয়ে তোলা।সুযোগ পায়না কখনও।আজকে হাতছাড়া করবে না।যদি এই সুযোগে প্রমোশন হয় তো অনেক ভালো।দর্শন টেবিলের উপর অনেক জোরে এক বারি দিলো।কেঁপে উঠলো মহুয়া।তবে নিজেকে সামলে বুকের ভাঁজে হাত রেখে কাপা কাপা ভঙ্গিতে বলে,“আমি তো ভীষণ ভয় পেয়েছি স্যার। যাই হোক ওসব কথা।একচুয়ালি আমার মনে হয় আমাকে কর্মঠ হতে হবে।আর,বেশি তো কাজ নেই।এই তো কিছু ডকুমেন্ট স্ক্যান করতে হবে।”

“এটা আমিও পারি।”
“আপনাকে হেল্প করছি স্যার।”
দর্শনের কাছে মহুয়ার ভাবভঙ্গি সবকিছু ক্লিয়ার।ঘৃণা লাগছে এখানে থাকতে এখন দর্শনের।সিদ্ধান্ত নিলো বাকি কাজ বাড়িতে গিয়েই করবে।উঠে ল্যাপটপ হাতে নিয়ে দাঁড়াতেই মহুয়া তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে দর্শনের সামনে দাঁড়ালো।প্রশ্ন ছুড়লো,“কিছু হয়েছে স্যার?”

দর্শনের সামনে মহুয়া নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত এমন হাবভাব।দর্শন বিরক্তির সাথে বলে,“দূরে সরুন।”
মহুয়ার কাছে এগুলো ছলনা মনে হলো।তার মত অতি সুন্দরী আকর্ষনীয় নারীদের কতশত পুরুষ নিজের মনোরঞ্জনের জন্য চায় এর ঠিক নেই।এর আগের কোম্পানিতেও নিজের শরীর বিলিয়ে মহুয়া উপরের পদে ছিলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোম্পানিটা ইলিগ্যাল থাকায় চাকরি হারালো।সব পুরুষকে একই দাঁড়িপাল্লায় মেপে মহুয়া দর্শনকেও নারী লোভী ভেবে নিলো।প্রথম প্রথম নারীদের টানে পুরুষরা দূরত্ব দেখায় কিন্তু একটু উষ্ণতা পেলেই যেনো গলে যায়।মহুয়া তাই চেষ্টা করে।হাত বাড়িয়ে দর্শনের কপালে রেখে বলে,“আপনার কি শরীর খারাপ করছে?মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আপনার শরীর ভালো নেই।”

দর্শন রেগে গেলো।কপালে পরনারী হাত রাখায় যেনো গা গুলিয়ে আসছে।মহুয়ার স্বামী মিস্টার আনিস ভদ্রলোক বলে তার দিক চেয়ে মহুয়াকে রেহায় দিতে চায়।তবে এই মেয়ে আঠার মত লেগে আছে।দর্শন আশপাশ দেখলো।কেউ নেই।সবাই চলে গেছে।দর্শন মহুয়ার সামনে আঙুল উঁচিয়ে ওয়ার্ন করে,“Stay away from me.”
বলেই দর্শন চলে যায় ল্যাপটপ নিয়ে।মহুয়া ক্ষিপ্ত চাহনি দিয়ে বলে,“একটু বেশি ভাব দেখাচ্ছে এই লোকটা।আমার মত মেয়ে তদের মত পুরুষদের খুব সহজেই মোরগ বানাতে পারি রে ব্যাটা।এতটাও লয়াল পুরুষ দুনিয়াতে নেই,যে ভাব দেখালে মহুয়া হার মানবে।এখনই আমার রূপে তোর সব ভাব আমি উড়িয়ে দিচ্ছি মিস্টার দর্শন ফরাজি।”
সাথে সাথে মহুয়া কল দিলো দারোয়ানকে।দারোয়ান ধরতেই মহুয়া বলে,“পাঁচ হাজার টাকা দিবো বিনিময়ে আমার উপকার করতে হবে।”

দারোয়ান খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠে,“কি কাজ?”
“দর্শন ফরাজির গাড়ির টায়ার পাংচার করে দিতে হবে।”
দারোয়ান যেনো ভরকে গেলো।চোখ দুটো অবাকের সাথে বড় করে বলে,“কেন ম্যাডাম?”
মহুয়া বিরক্তির সাথে বলে,“টাকা চাই নাকি প্রশ্নের উত্তর?”
লোভী দারোয়ান জানায়,“টাকা।”
মহুয়া অর্ধ বিজয়ের হাসি দিয়ে বলে,“তাহলে যেটা বলছি ওটাই করো।”
“আচ্ছা।”
“আর হ্যাঁ,এই ব্যাপারে যেনো কেউ জানতে না পারে।”
“ঠিক আছে।”

দারোয়ান ঠিক মহুয়ার কথামত কাজ করে।এদিকে দর্শন লিফটে করে নিচে নামলো।তার পিছু পিছু আসলো মহুয়া।দর্শন নিজের গাড়ির কাছে এসে দেখে টায়ার পাংচার হয়ে আছে।বিরক্তির সাথে আশেপাশে তাকালো।দারোয়ান নীরবে দেখছে সবকিছু।মহুয়া মৃদু হাসির সাথে এগিয়ে এসে বলে,“আমার গাড়িতে করে চলুন স্যার।”
দর্শন তাকালো মহুয়ার দিকে।সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখে বুঝল এই মেয়ে থামবার না।তবে দর্শন ইগনোর করে হাঁটতে হাঁটতে বলে,“সামনের মোড় থেকেই গাড়ি পাওয়া যায়।আপনাকে ভাবতে হবে না।”

বলেই চলে গেলো।মহুয়া ক্ষেপে গেলো যেনো।দারোয়ান সব দেখে বুঝে নিলো।মহুয়ার কাজকর্ম সম্পর্কে সে আগে থেকেই জানে।বড়লোক দেখে পুরুষদের ধরা তার একটা কৌশল।খুব সহজেই এদেরকে হাত করতে পারে।দর্শন চলে যেতেই মহুয়া পাঁচ হাজার টাকা দারোয়ানকে দিয়ে রাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে।দারোয়ান টাকা নিয়ে বুদ্ধি দেয়,“আপনিও পিছনে পিছনে যান ম্যাডাম।ওই মোড়ে গাড়ি পাওয়া সহজ না।”
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,“তুমি শিওর?”

“হ ম্যাডাম।আমি তো ওই রাস্তা থেকেই অটো খুঁজি।এই সময় চলন্ত গাড়ি সব ডানপাশ থেকে যাত্রী নিয়েই আসে।এদিকে খুব কম যাত্রী তো,তাই গাড়ি এদিকে আসতে চায় না।আপনি এই সুযোগ কাজে লাগান যান।”
মহুয়া মৃদু হেসে নিজের গাড়িতে করে গেলো।রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ক্যাবের জন্য অপেক্ষা করছিল দর্শন।হঠাৎ পেছন থেকে আবার সেই ডাক,“স্যার!”
দর্শনের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।এই নারী শুধরানোর নয়।একে এবার একটা শিক্ষা দিতেই হবে।নিজের স্বামী রেখে কেন এত পরপুরুষের পিছনে ঘুরতে হবে!দর্শন ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল মহুয়া শাড়ির আঁচল খসিয়ে,চোখে ভেজা দৃষ্টি,ঠোঁটে হাসি দিয়ে দাড়িয়ে।

দর্শনের উদ্দেশে আবারও বলে,“আপনি তো এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছেন?তাহলে চলুন আমি পৌঁছে দেই।”
দর্শন কিছু বলল না।শুধু তাকিয়ে রইল।তার দৃষ্টি ছিল নীরব।মহুয়া ভেবেছিল দর্শন এবারও রেগে যাবে তবুও পাত্তা না দিয়ে দর্শনকে আকর্ষিত করার আরো চেষ্টা করবে কিন্তু আশ্চর্য!এখন সে একদম শান্ত।যেন ভেতরে ভেতরে কিছু গোপন খেলছে।
মহুয়া সুযোগ নিল সেই নীরবতার।আরও এক পা কাছে এসে কণ্ঠে আদরের ভঙ্গি নামিয়ে আনল,“স্যার, একসাথে গেলে আপনারও সুবিধা হবে।একা দাঁড়িয়ে থেকে কী করবেন?ক্যাব আসতেও ঘণ্টা খানিক সময় লাগে।এর থেকে ভালো আমরা একসাথে যাই।কাজের কথা হয়ে যাবে ফাঁকে ফাঁকে।”

দর্শনের ঠোঁটে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠল।হাসিটা স্বাভাবিক ছিল না বরং অস্বস্তিকর,শীতল।এটা মহুয়ার মত মেয়েরা ধরতে পারবে না।মহুয়ার কাছে এসে ধীরে ধীরে বলে,“আপনি তো দেখছি কাজের দিকে ভীষণ মনোযোগী।”
মহুয়া ইতস্তত করল না বরং হাসল।মনে হলো যেন তার ছল এবার কাজে দিচ্ছে।কিন্তু সে টের পেল না এই নীরব সম্মতি আসলে ফাঁদ।
দর্শনের চোখ তখন শিকারির চোখের মতো অতল গভীর।সে ঠাণ্ডা স্বরে ফিসফিস করে বলে,“ঠিক আছে এবার আপনি যা চান,সেটাই হবে।তবে মনে রাখবেন,এই রাতটা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত।আর কোনোদিন ভুলতে পারবেন না।”
মহুয়ার শরীর শিরশির করে উঠল।তবু সে পিছু সরলো না।আর দর্শন?সে ভেতরে ভেতরে হাসছে।আজ মহুয়াকে সে শুধু শিক্ষা দেবে না,বরং এমন এক অন্ধকারে পাঠাবে যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়।

গাড়িতে উঠে বসে দর্শন।দৃষ্টি তার জানালার বাইরে।কোনো সাড়া নেই,কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।সেই নীরবতা মহুয়ার সাহস বাড়িয়ে দিল।কণ্ঠ রসালো করে বলে,“স্যার,আপনি কিন্তু খুব কড়া মুডে চলেন।এতদিনে অন্তত একটু কথা বললেন।আপনার বিষয়ে কলিগরা কিন্তু অনেক কমেন্টস করে।”
হঠাৎ দর্শন ঘুরে তাকাল।তার চোখে শীতল দৃষ্টি,ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলে,“তাই!কি বলে ওরা?”
মহুয়া ড্রাইভ করতে করতে বলে,“এই যে আপনার মত হ্যান্ডসাম বস নাকি কোনো মেয়েকে পাত্তাই দেয়না।একদম রুড আপনি।”
দর্শন গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,“আপনার কি মনে হয়?”
“You are a genius”
দর্শন কথা বাড়ালো না।মহুয়া নিজের মত গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত।গাড়িতে সফট গান চালালো।দর্শন শুনছে শুধু।দর্শনের থেকে ওর বাড়ির অ্যাড্রেস নিলো।

বাড়ির লোকেশন অনুযায়ী এসে মহুয়া যেনো থমকে গেলো।চারপাশ ভূতুড়ে।দর্শন মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,“ভিতরে আসবেন না,মিসেস মহুয়া?”
মহুয়া ভরকে গেলেও সম্মতি পেয়ে খুশিতে আগ্রহ দেখালো।বসকে হাতে করতে পারল তাহলে।খুশিতে বলে ওঠে,“আপনি এলাউ করছেন,স্যার?”
“অফ কোর্স,আপনি আমাকে হেল্প করলেন আর আমি আপনাকে সামান্য ট্রিট দিবো না?”
মহুয়া মৃদু হেসে সিটবেল খুলতে থাকে।দর্শন নামলো গাড়ি থেকে। ঘাড় কাত করে বাড়িটির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,“Wellcome for hell.”
দর্শন ওর ল্যাপটপ নিয়ে বলে,“ভিতরে আসুন।”

দর্শনের গম্ভীর পদক্ষেপে মহুয়াকে নিয়ে ঢুকল পুরোনো বাড়ির ভেতরে।চারদিক অন্ধকার,ভেজা দেওয়াল থেকে ঝরে পড়ছে স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ,বাতাসে ঝুলে আছে মাকড়সার জাল।যেগুলো এই এক সপ্তাহ ধরে বাড়িটা অপরিষ্কার রাখার কারণে হয়েছে।অস্বস্তি চাপতে না পেরে মহুয়া ফিসফিস করে বলে,“আপনি সত্যিই এই পরিবেশে থাকেন, স্যার?”
দর্শন হাটা না থামিয়ে ধীর কণ্ঠে উত্তর দিল,“হুমম,কেন?কোনো সমস্যা?”
মহুয়া শুকনো ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বলে,“না… না স্যার।”
মনে মনে বলে,“খাল কেটে কুমিরের কাছে নিজেকে সপে দিলাম না তো!”
কিন্তু আবার ভাবলো,“দর্শন পটেছে যখন এটাই সুযোগ হাতে করা।”

নেটের পাতলা শাড়িটা আঁচল থেকে নামিয়ে আনল, বুকটা ঝুঁকে সামনে এগিয়ে এলো।নাভির কাছে শাড়ি আরও নিচে টেনে দিলো।গলাটা কাত করে মিষ্টি গলায় বলে,“এত বড় বাড়িতে আপনিএকা থাকেন!আপনার অসুবিধা হয়না?
দর্শনের চোখ হঠাৎ শীতল হয়ে উঠল।এক পলকে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা কাঁটা চামচ তুলে নিল। অন্ধকারে মহুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদ্যুতের মতো চামচের ধারালো মাথাটা গলায় ঠেসে ধরল।
“আঃ!”

চিৎকারটা গলার ভেতরেই রুদ্ধ হয়ে গেল মহুয়ার।রক্ত টগবগ করে বেরিয়ে এলো।সোনালী রংয়ের পাতলা শাড়ি মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠল।মহুয়ার দু’হাত দর্শনকে বাধা দিতে ব্যস্ত।চোখ ভয়ে বড় বড় হয়ে উঠল।রগ ফুলে উঠেছে,নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে।
দর্শনের ঠোঁটে তখন অদ্ভুত এক হাসি।গলায় শীতল, ভয়ানক কণ্ঠস্বর,“ঘৃণা করি আমি তোদের মতো নারীকে।স্বামী রেখে যারা পরপুরুষের বিছানায় যেতে চায়…জানিস?এই বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি আমার কাছে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নয়।

চোখের সামনে অন্ধকার নামতে লাগল মহুয়ার।ঠাণ্ডা ঘামে ভিজে গেছে তার কপাল। শরীরটা ঢলে পড়ছে দর্শনের সামনে।আর দর্শন?তার চোখে এক বিন্দুও দয়া নেই,যেন এক নিষ্ঠুর বিচারক নিজের রায় কার্যকর করছে।
পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ,শুধু রক্ত টপটপ করে মেঝেতে পড়ার শব্দ কানে বাজছে।দর্শন জিম ঘর থেকে একটা স্টিলের লাঠি আনলো হাতে করে।সময়টায় মহুয়া পালাতে নেয় কিন্তু পারলো না।দর্শন পিছন থেকেই ওর মাথায় আঘাত করে।মহুয়া গুঙিয়ে ওঠে।চিৎকার করতে নিবে এর আগে দর্শন দ্রুত মহুয়ার শাড়ির লম্বা আঁচল দিয়েই মুখটা বেঁধে দেয়।ফিসফিস করে বলে, “হুশ!ওই ঘরে আমার ওয়াইফি আছে।”

মহুয়া চমকে উঠলেও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে।দর্শন ছাড়ল না বরং মহুয়াকে বেঁধে জিম ঘরে নিয়ে এলো।এরপর কোণায় থাকা হকিস্টিক হাতে নিলো।মহুয়ার সামনে এসে মহুয়ার মাথায় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে।জোরে কয়েকবার আঘাত করার ফলে মাথা ফেঁটে রক্ত ঝরতে থাকে।দর্শন গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখতে পায় হালকা চাঁদের আলোর আগমনের কারণে।তার কলিজা যেনো ঠান্ডা হয়ে এলো।মহুয়ার হাত-পা বেঁধে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।কিছুদূর ড্রাইভ করে নির্জন পরিবেশে গাড়ি থামিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,“এখন আপনার দ্যা ইন্ড হবার পালা।আপনার হাসব্যান্ডের উপর করুণা করে আপনাকে ওয়ার্ন করে বেড়িয়েছিলাম।ভেবেছিলাম কালকে আপনাকে ফায়ার করে দিবো কিন্তু আপনি তো এক গুয়ে।এই স্বভাব আমার মধ্যেও আছে।তবে তফাৎ আছে আমাদের মধ্যে।আপনি শরীর বেলানো কমপ্লিট না করতে পারলে শান্তি পান না,আর আমি নষ্টদের শাস্তি পরিপূর্ণ না দেওয়া অব্দি শান্তি পাইনা।এখন আপনাকে আমার কাছে হার স্বীকার করে ওপারে চলে যেতে হবে।গুড বাই মিসেস মহুয়া।”

মহুয়া লাফাচ্ছে।তার মুখভঙ্গি এখন মিনতির।তবে দর্শন এগুলো মানবে না।তার নিউরনে এই নষ্ট নারীর শাস্তি ছাড়া কিছুই নেই।গাড়ির ডিকিতে করে আনা কেরোসিনের বোতল হাতে নিলো।পুরো গাড়িতে কেরোসিন ঢেলে কিছুটা দূরে গিয়ে দিয়াশলাই জ্বালালো।গাড়ির দিকে ছুঁড়ে মারতেই বিকট শব্দ করে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।চারপাশ ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে আছে।দর্শন তৃপ্তির সাথে দেখছে।
বাড়িতে এসে যেখানে যেখানে মহুয়ার শরীরের রক্ত দেখলো সেসব জায়গা পরিস্কার করে দর্শন।অতঃপর ঘরে ঢুকে অবাক হলো।ঘরের আলো জ্বলছে।জানালা খোলা এমনকি শোভার হাত-পা বেঁধে নেই।দর্শন নিজের হাতটা পিছনে করে ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে,“তোমার হাত-পা খুললে কিভাবে?”

শোভা এক পলক দর্শনের দিকে চেয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে ইশারা করে পাশের ছোট্ট টেবিলে থাকা ছুরির দিকে।সেদিন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আপেল কেটে খেয়েছিল এই ছুরি দিয়ে।সাথে সাথে সরানো হয়না।তাই ছুরিটা ওখানেই থাকে।শোভা নিজের মত এদিক ওদিক তাকাতেই ছুরিটা দেখে বুদ্ধি খাটিয়ে আঙুলের ভাজে অনেক কষ্টে ছুরি নিয়ে দড়ি কেটেছে।হাতের বাঁধন খুলতেই পায়ের বাঁধন খুলে ঘরের লাইট জ্বালায়।কিন্তু দর্শন এই দরজায় ডিজিটাল লক করে রেখেছে তাই খুলতে পারেনি দরজাটা।তাই জানালা খুলে বসে আছে এক কোণায়।দর্শন ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,“কি বুদ্ধিরে বাবা!”

শোভা মুখ ভেংচিয়ে মনে মনে বলে,“এই বুদ্ধি দিয়েই আপনার থেকে দূরে সরে যাবে মিস্টার ফরাজি।”
দর্শন আর কোনো কথা না বলে দ্রুত নিজের টি শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ভালোভাবে গোসল সেরে বাইরে আসে।শোভার উদ্দেশে বলে,“নিচে চলো।”
শোভার চোখমুখ চকচক করে ওঠে।এই রাতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।তবে দর্শন নিচে অন্তত নিয়ে যাচ্ছে তাকে এটাই অনেক।দর্শনের পিছন পিছন নিচে আসলো শোভা।সবকিছু স্বাভাবিক তবে ওর মনে আছে একটু আগেও নিচ থেকে স্টিলের জিনিস নড়াচড়ার শব্দ এসেছিল।শোভার অদ্ভুত চাহনি দেখে দর্শন প্রশ্ন করে,“কি হলো,ওয়াইফি?”
শোভা কেঁপে উঠে সরে দাঁড়ালো।উত্তর দিলো না।দর্শন বিরক্ত হলো শোভার থেকে উত্তর না পেয়ে।রান্নাঘরে ঢুকে আলো জ্বালালো দর্শন। ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে বলে,“রাতে ওমলেট খাওয়া যাক।কালকে থেকে ঠিকমত খাবার পাবে।আজকের মত ভুল হবে না,প্রমিজ।”

বলতেই ঢেকোর বের হলো দর্শনের মুখ থেকে।সারাদিন না খেয়ে আছে।এমনকি কালকেও কিছু খায়নি।শোভা সকালবেলা রুটি খেয়েছিল কিন্তু দর্শন না খেয়েই যায়।অফিসে থাকতে একবার স্যুপ দেওয়া হয় কিন্তু এক চামচ মুখে নেওয়ার পর জানতে পারে বিদেশ থেকে বায়ার চলে এসেছে।তাই আর খাওয়া হয়না।শোভা নীরবে দেখছে।দর্শন ওমলেট বানিয়ে শোভার সামনে ধরে।শোভা চুপচাপ নিয়ে নেয়।দর্শন মৃদু হেসে টেবিলের উপর বসে।শোভাও চুপচাপ বসে খেতে থাকে।কোনো কথা না বলে খাওয়া শেষ করে অন্য ঘরের দিকে যেতে নিলে দর্শন বলে ওঠে,“বটগাছ এখনও কাটা হয়নি।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪২

শোভা থমকে দাঁড়ালো।বটগাছের ভয় আছে শোভার মধ্যে।তাই চুপচাপ চলে গেলো দর্শনের ঘরে।দর্শন উঠে দাঁড়ায়।বিড়বিড় করে বলে,“কোনোদিন কাটবও না এই গাছ।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here