বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৬

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৬
ইশরাত জাহান

দাদাজান কপট রাগ দেখিয়ে বলেন,“বউকে কেউ শশুর বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে আসে?বাপের জন্মেও তো এমন দৃশ্য দেখিনি,যা নাতির জন্মে এসে দেখছি!”
দর্শন জবাবে বলে,“এই জন্যই তো বলছি,যে ব্যাগ বহন করে আমাদের দেখতে এসেছো সেই ব্যাগ নিয়ে দ্রুত এখান থেকে কেটে পড়।তাহলে নিজের জন্মেও যা দেখোনি বাকিগুলো আর দেখতে হবে না।”
দিদার আর দিজা হেসে দেয়।দাদাজান দুজনকে ধমকে থামিয়ে আবারও বলেন,“তোমার বাড়িতে আমি ঘুরতে আসিনি।আমি এসেছি আমার ভোলাভালা নাতবউকে নিয়ে যেতে।”

“আমার বউকে নিয়ে যাওয়ার তুমি কে?”
“আমি তোমার বাপেরও বাপ।”
“বুড়োর বয়স বাড়লেও তেজ কমলো না।”
“এই কে বুড়ো?কে বুড়ো?বুড়ো হবে তোমার বাপ।বুড়ো হবে তোমার বাপেরও বাপ।এই না!সে তো আমি নিজেই।আমি বুড়ো না।বুড়ো আসলে তুমি নিজে।”
দিদার হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে দাদাজানকে সামলে সরিয়ে নিয়ে আসে।সবাই খাবার টেবিলকে ঘিরে বসে আছে।না খাওয়ার জন্য না মিটিং করবার জন্য।কারণ নিচের এই হলরুমে এখনও সোফার ব্যাবস্থা করেনি দর্শন।দাদাজান আশপাশ দেখে জিমঘর দেখলেন।মুখ ভেংচে বলেন,“শুনলাম কোটিপতি হয়েছো।তাহলে সোফা কেনার মুরোদ হলো না কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দর্শন এক পলক চেয়ে দুই ভাইবোনের দিকে দেখলো।ওরা মজা নিচ্ছে।দর্শন জানায়,“মুরোদ থাকলেও সময়ের অভাব হয়েছে প্রচুর।”
দাদাজান বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন,“তোমার বউয়ের কি কানে সমস্যা আছে?কতবার করে ডাক দেওয়া হলো তাকে,এখনও আসার নাম নেই।”
“ও অসুস্থ দাদাজান।”
“হ্যাঁ,সে তো অসুস্থ অবস্থায় এসেছে জানি।”
“আজকে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে।একটু সময় লাগবে আসতে।”
দিজা চিন্তায় পড়ে জিজ্ঞাসা করে,“কি হয়েছে ভাবীর?”

দর্শন স্বাভাবিক ভাবে মেয়েদের সমস্যার কথা না তুলে বলে,“ওই তো একটু দুর্বল হয়েছিল।সকালবেলা বমি আসে এরপর আবার মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয়।এরপর…
দাদাজান চোখ বড় করে বাকি কথা শুনতে না চেয়ে নিজেই বলেন,“ওহে ছোকরা!অসুস্থ বউকে অত্যাচার করতে তোমার লজ্জা করলো না?”
দর্শন কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,“আমি কখন বউকে অত্যাচার করলাম?”
“তাহলে এত দ্রুত বাবা হতে যাচ্ছ কেন?বউটা সুস্থ হবার আগেই তাকে আবারও অসুস্থ বানিয়ে দিচ্ছ।আমিও বুঝিনা আজকালকার ছেলেপেলেদের কেন এত তাড়াহুড়ো!বউকে যেনো হাতের পুতুল মনে করে।এখন যদি মেয়েটা বিছানার রোগী হয়ে পড়ে থাকে,কে দেখবে ওকে শুনি?”
দর্শন সঠিক উত্তর ইচ্ছেকৃত না দিয়ে বলে,“আমার বউকে দেখার জন্য আমি আছি,দাদাজান।তার জন্য তোমাকে না ভাবলেও চলবে।”

“বড় অধৈর্য তুমি।”
শোভা মাথায় হিজাব দিয়ে নিচে নামছে।শরীরটা ভালো থাকলেও দুর্বলতা একই।মেয়ে হয়ে এতগুলো চাবুকের আঘাত আবার মাথায় আঘাত খেয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়াটা মুখের কথা না। দাদাজানের কাছে এসে শোভা সালাম দেয়।দাদাজান উত্তর দিয়ে দিদারের উদ্দেশে বলেন,“এই ছোট ছোকরা এদিকে আসো।”
দিদার এগিয়ে আসতেই দাদাজান পকেট থেকে টাকা বের করে বলেন,“আশেপাশে মিষ্টির দোকান পেলে সেখান মিষ্টি নিয়ে এসো।ভালো দেখে মিষ্টি আনবে।”
দর্শন বিরক্তির সাথে চেয়ে আছে।দিজা এগিয়ে এসে বলে,“দাদাজান গাড়িতে ফলের প্যাকেট আছে।ওগুলো আমি নিয়ে আসি।”

দাদাজান সম্মতি দিতেই দিজা চলে যায়।শোভা নরম স্বরে বলে,“মিষ্টি আনার কি দরকার,দাদাজান?এমনিতেও আপনার মিষ্টি খাওয়া বারণ।”
দাদাজান ভনিতা ছেড়ে বলেন,“তোমরা মিষ্টি খাওয়ার মতো কাজ করলে,আমার তো মিষ্টি খেতেই হবে।”
শোভা একটু ভেবে ধারণা করলো কালকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে।দুই ননদ-ভাবী একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে বলেই মিষ্টি আনতে চাচ্ছেন দাদাজান।তাই সহজ মনে উৎফুল্ল হয়ে বলে,“মিষ্টি খাওয়ার দিন তো আজকে না।কালকে মিষ্টি খাওয়া ঠিক হবে,দাদাজান।”

দাদাজান চমকে উঠলেন।দর্শন নিজেও তাকালো শোভার দিকে।শোভা দুজনের চাহনি দেখে বেক্কল বোনে গেলো।দাদাজান বলেন,“শুভ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই তো মিষ্টি খেতে হয়।এর আবার আজকাল আছে নাকি?”
শোভা খুশি হয়ে বলে,“আচ্ছা দাদাজান,আপনি তাহলে আজকেই তৃপ্তি করে মিষ্টি খান।এরপর কিন্তু এসব খাওয়া বারণ।আম্মাজান বারবার নিষেধ করেছেন।কালকে নাহয় আমি ভালোমন্দ কিছু রান্না করে খাওয়াব।”
দাদাজান শোভাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আছেন।এত উৎফুল্ল হয়ে কথা বলছে অথচ লজ্জার ছিটেফোটাও নেই এই মেয়ের মুখে।তার দেখামতে মেয়েরা তো উল্টো মা হবে জানতে পারলে মুখ লুকিয়ে বসে থাকে।গুরুজনদের সামনে আসতেই লজ্জা লাগে ওদের।এখানে যেনো সব উল্টো।দাদাজান বলেন,“থাক,তোমার আর এই অবস্থায় রান্নাঘরে ঢুকতে হবে না।এখন বিশ্রাম নেও তুমি।”

শোভা আবারও সরল মনে বলে,“এতে কি এমন কষ্ট,দাদাজান?আপনারা এসেছেন আমার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে।দিজাও তো চেয়েছিল এমন সময়ে যশোরে গিয়ে একটা পিকনিকের আয়োজন করতে।যশোরে যখন যেতে পারছি না এখানেই পিকনিক হোক।”
দাদাজান হা হয়ে মনে মনে বলেন,“মা হতে চলেছে বলে নিজে থেকে পিকনিকের আয়োজন করবে!”
দর্শন দুজনের থেকে মজা নিচ্ছে।ইচ্ছা করেই চুপ করে আছে।দাদাজান মনে মনে বলেন,“এই মেয়েও দেখি লাজ শরমের মাথা খাইছে।পোয়াতি হবার সময় কোন মেয়ে এভাবে মিষ্টি খাওয়ার জন্য আদেশ দেয় এটা জানতাম না।”
দর্শন মুখ চেপে হেসে জিজ্ঞাসা করে,“কি হলো,দাদাজান?”
শোভা চলে যায় রান্নাঘরে।দিজা ফল নিয়ে এসেছে।সেগুলো কেটে দিবে।দাদাজান নীরব পরিবেশ দেখে ফিসফিস করে বলেন,“বউকে কি লাজ শরমের মাথা খাওয়ার ঔষধ খাইয়েছো?”

“এমন কেন মনে হলো?”
“নিজের পোয়াতি হবার ব্যাপারটা নিয়ে,এভাবে কোনো মেয়ে লাফায় নাকি,তাও আবার দাদা শ্বশুরের সামনে?”
“আমার বউ তো বলতেই পারে।”
“কালে কালে কতকিছু যে দেখব!”
“তোমাকে কে বলল,ও পোয়াতি?”
“কেন তুমি?”
“কখন?”
“এই তো একটু আগে বললে মাথা ঘুরছে,বমি আসছে,শরীর দূর্বল।”
“আজকাল প্রেগনেন্ট ছাড়াও এসব সমস্যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়।”
দাদাজান চেয়ে আছেন।দর্শন আবারও বলে,“কিছুদিন আগের এক্সিডেন্ট এখনও ওকে সুস্থ করে তোলেনি।তারউপর ওর প্রেশার লো।এই জন্য এমন হচ্ছে।”

দাদাজান মুখ ঘুরিয়ে গ্লাসে পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিললেন।অতঃপর জানালেন,“ভাবলাম মিয়া বিবি মিলছে,এখন দেখি আমার ভাবনায় পানি!”
“সময় লাগবে।”
“সময় নিলে সময় লাগে।বিয়ে কি আর বাকি মানুষেরা করেনা?তারাও কি সুন্দর একে অপরকে মানিয়ে চলে।”
“আমাকে শোভা মানিয়ে নিতে পারবে না,দাদাজান।”
দাদাজানের চোখটা ছলছল করছে।তিনি শুনেছেন দীপ্ত ফরাজির থেকে।দর্শন দেখলো দাদাজানকে মনমরা হয়ে থাকতে।যেটা দেখতে একদমই ভালো লাগেনা দর্শনের।ও চায় ওর দাদাজান প্রাণবন্ত থাকুক।ইচ্ছা করেই দাদাজানকে ক্ষেপিয়ে দেয় দর্শন।অবশ্য দাদাজান নিজেও তার নাতিকে ক্ষেপিয়ে দেন।এটার মাধ্যমেই তো দুজনের সম্পর্ক এক জায়গায় এসে খুনসুটিতে দাঁড়িয়েছে।

শোভা ফল কেটে প্লেটে সাজিয়ে আনলো দাদাজানের সামনে।দাদাজান তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেন,“তা বলি বাপু বরকে কি একটু আঙুলের ইশারায় নাচিয়ে রাখতে পারো না?মেয়েরা তো দেখি রঙ্গ দেখিয়ে বরকে কাবু করে।তুমি এত ভয়ে নেতিয়ে পড় কোন দুঃখে?তোমার স্বামী তো তোমার কারণেই লাই পাচ্ছে।ওটাকে জব্দ করবে তুমি।”
শোভা ইচ্ছা করছে গলা ফাটিয়ে হাসতে।দর্শনের রাগে গাল লাল হয়ে এলো।শোভা মিনমিন করে দাদাজানকে বলে,“আপনার নাতি সকাল বিকাল উঠতে বসতে শুধু ধমক দেয়।হুমকির মধ্যে রাখে এমনকি আমাকে বলেছে তার নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না।”

দাদাজান চোখ রাঙিয়ে বলেন,“এত কড়া!”
দর্শন কপালে ভাঁজ ফেলে শোভার উদ্দেশে বলে,“দাদাজানের সামনে দেখছি কথার খই ফুটছে।পরে একা পরিবেশে আমার সামনে এগুলো দেখাতে পারবে তো?”
দাদাজান নিজেও বীরপুরুষের মত সাহস নিয়ে বলেন,“কেন?বউকে একা পেয়ে কি নির্যাতিত স্বামী হয়ে উঠবে নাকি?তোমার নামে কিন্তু আমি নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে দিব বলে দিলাম।”
“দাদাজান!”

“চুপ!আমাকে ধমকাও তুমি।জানো আমি কে?আমি হলাম সেই দিলদার ফরাজি যে দর্শন ফরাজির বাপেরও বাপ।”
দর্শন তোয়াক্কা করলো না।দাদাজান এতে আরো ক্ষেপে গিয়ে বলেন, “নাতবউ?”
শোভা এগিয়ে এসে বলে,“জি দাদাজান?”
“ব্যাগ গুছিয়ে রেখো।আমি তোমাকে হোস্টেলে ভর্তি করে রাখবো।”
শোভা কিছু বলার আগে দর্শন দাদাজানের দিকে চোখ স্থির রেখে বলে,“তোমার সাহস তো কম না,তুমি আমার বউকে আমার থেকে দূরে সরতে বলো।”
দাদাজান চোখ বড় বড় করে বলেন,“ওড়ে রাজাকারের বংশধর!থুড়ি,বংশধর বললে তো নিজের বংশকে গালি দেওয়া হয়।আসলে আমার বংশে একটা নতুন প্রজন্মের রাজাকাল জন্মেছে,যার নাম দর্শন ফরাজি।একবার বলে বউকে মানি না আবার বউকে নিয়ে যেতে চাইলেও বলবে,বউকে যেতে দিবো না।”

শোভা লজ্জা পেয়ে চলে গেলো।দর্শন একবার ইশারায় শোভাকে দেখে বিড়বিড় করে দাদাজানের কানে কানে বলে,“ওর সামনে এই বাড়ি থেকে ওকে চলে যাওয়ার কথা বলবে না।এমনিতেই ওর স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে একটুতেই চলে যাওয়ার নাম করা।তার মধ্যে তুমি এসে ঝামেলা বাড়িয়ে দিচ্ছ।”
দাদাজান ঠোঁট টিপে গাইতে শুরু করেন,
“ছল ছল নয়নে হাঁসি মাখা বদনে
আনন্দ কাননে মন চলো অনিবার
ছল ছল নয়নে হাঁসি মাখা বদনে
আনন্দ কাননে মন চলো অনিবার
হরি বল গুরু বল মন টি আমার
কালি বল তারা বল মন টি আমার….”

দর্শন খিটমিটে মেজাজে তাকিয়ে আছে।দিদার চলে এলো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে।মুখে হাসি ফুটে আছে।দাদাজান সেটা দেখে জানান,“বেকার মিষ্টি আনা।”
দিদার মিষ্টির প্যাকেটের দিকে চেয়ে বলে,“না দাদাজান,মিষ্টি অনেক ভালো।আমি একটা খেয়ে টেস্ট বুঝে তারপর এনেছি।দামী এটা।”
দাদাজান হাফ ছেড়ে বলেন,“তোমার ভাই তো বাবা হচ্ছে না।মিষ্টি এনে কার মুখ করাবো আমি?”
দিদার মুখ চেপে হেসে বলে,“আমার ভাইয়ের যে মেজাজ!আমার চাচা ডাক শুনতে চাওয়া বিলাসিতা।”
দাদাজান মুখ চেপে হাসলেন।উচিত কথা বলেছে দিদার।দর্শনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই।সেই এক রাগ মাথায় চেপে থাকে।এভাবে চললে শুভ সংবাদ কবে আসবে?দর্শন কপট রাগ দেখিয়ে বলে,“ছোট মানুষের মুখটাকে এভাবে পঁচিয়ে দিলে তুমি,দাদাজান।”
দাদাজান অবাক হবার ভান ধরে বলেন,“আমি কি করলাম?”

“ওর সামনে মুখটাকে সামলে রাখলে আজ এসব বলতো না।”
“উচিত কথা ছাড়া কিছুই তো বলেনি।”
দর্শন এক ভ্রু উচু করে দেখছে দাদাজানকে।দাদাজান এবার দিদারের উদ্দেশে বলেন,“তোমার ভাইয়ের বাড়ির পিছনের যে ভূতের বাগান ওখান থেকে ঘুরে আসো দাদুভাই।”
দিদার চলে গেলো।দর্শন বুঝলো এবার দাদাজান বোমা ফাটাবেন।তাই সেও উঠতে নেয়।কিন্তু দর্শন ওঠার আগেই দাদাজান খপ করে দর্শনের হাতটা ধরে বসিয়ে দেয়।দর্শন বিরক্তিতে চ শব্দ উচ্চারণ করে।দাদাজান শান্তনা দিয়ে বলেন,“আহা,এত বিরক্ত হইলে হয়না।ব্যাটা মানুষের একটু আধটু সমস্যা থাকে কিন্তু সমাধান আছে।তা বলো,শুভ সংবাদ আসবে না নাকি?”

“বর্তমানে সম্ভব না।”
“কেন?কোনো সমস্যা আছে নাকি?”
“আছে তো অনেক সমস্যা।আমি প্রস্তুত নই দাদাজান।”
“বিয়ের বয়স চারমাস সংসারের বয়স প্রায় পনেরো দিন।এরপরও বলো প্রস্তুত নই!এরমানে কি?”
দর্শন কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,“তুমি বুঝবে না।”
দাদাজান আশপাশ ভালোভাবে দেখলো।শোভা বা দিজা কেউ আসছে কি না দেখে দর্শনের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলেন,“তোমার ভিতরে কি কোনো ঘাবলা আছে?তাহলে বলো আমি একটা ব্যাবস্থা করে দিবো।আজকাল কলিকাতা হারবাল খুব কাজে দেয়।ওই তো দেখি সিনেমার মাঝে মাঝে অ্যাড দেয় এসবের।”
দর্শন প্রথমে আন্দাজ করতে না পারলেও যখন ব্যাপারটা বুঝলো ধমকে ডাক দিলো,“দাদাজান!”
দাদাজানের কানে বোধহয় বাজ পড়লো।কান চেপে ধরলেন তিনি।রান্নাঘর থেকে শোভা ও দিজা এসে দাড়ালো।দাদাজান কান চেপে ধরে নাকমুখ কুচকে বলেন,“আমার কানের পর্দা ফেটে গেলো রে….”

“তুমি আজেবাজে কথা বলবে না আমার সাথে।”
দাদাজান দর্শনের রাগকে তোয়াক্কা না করে বলেন, “আহা,রেগে যাচ্ছো কেন?এগুলো আজেবাজে কথা না।আমি দাদা হয়ে যদি তোমার ভালো ব্যাবস্থা করতে না পারি তাহলে কে করবে?বাইরের লোকজন জানাজানি হবার থেকে ভালো তো আমি ঘরের দাদা হয়ে তোমার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেই।”
দর্শন রেগে গর্জে উঠে বলে,“আমার ভবিষ্যৎ আমি নিজেই ঠিক করতে পারি।”
দাদাজান চমকে উঠে বলেন,“তুমি কি এসবে অভিজ্ঞ!”
দর্শন আর কোনো কথা বলল না।উঠে চলে গেলো উপরে।দাদাজান তার নাতিকে রাগিয়ে দিয়ে বেশ মজা নিচ্ছেন।একটু আগে দর্শন তাকে বেক্কল বানিয়েছিল তারই বদলা নিলেন তিনি।কেউ না বুঝলেও সন্দেহের দৃষ্টিতে এগিয়ে এসে দিজা জিজ্ঞাসা করে,“তুমি ভাইয়াকে রাগিয়ে দেও কেন,দাদাজান?”
“রাগী মানুষকে আবার কি রাগাবো?”

“ভাইয়া এমনি এমনি রাগ করেনা।রাগানোর মত আচরণ করলেই রাগ করে।কই আমার সাথে,আম্মাজান-আব্বাজানের সাথে তো এভাবে রেগে কথা বলে না।”
“শোনো মেয়ে,ভাইয়ের বাধ্য বোন হয়ে চলো বলেই রাগ দেখোনি।আমরা অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম।”
“এমন কিছু ভাইয়াকে বলো না যেটাতে ভাইয়া রেগে যায়।”
“কাকে কি বোঝাচ্ছিস?এই বুড়ো বুঝলে তো!”

দর্শন নিচে নামতে নামতে বলে।গায়ে কালো ব্লেজার।দাদাজান তাকে দেখেও মুখ ভেংচে ফল খেতে লাগলেন।এক টুকরো আপেল খেয়ে মিষ্টির প্যাকেটের দিকে হাত দেয়।সেখান থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে পুড়তে নিলেই দর্শন এসে ডান হাতটা ধরে মিষ্টিটা নিয়ে প্যাকেটে রাখলো।যত্ন করে মিষ্টির প্যাকেট বন্ধ করে দিজার উদ্দেশে বলে,“এই বুড়ো অঘটন ঘটাবার আগে সাবধান হ বোন।দ্রুত মিষ্টির প্যাকেট লুকিয়ে রাখ।”
দাদাজান মুখ ভেংচে বলেন,“আমার ঘরের শত্রু।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৫

দিজা মুখ চেপে হেসে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে গেলো।দাদাজান সেদিকে মনক্ষুন্ন নয়নে চেয়ে আছেন।দর্শন অফিসের জন্য তৈরি হয়ে আছে।দিদারকে কল করে হলরুমে আসতে বলে।তাই দিদার নিজেও চলে এসেছে।দর্শন দিদারের উদ্দেশে বলে,“আমার সাথে চল।কিছু বাজার করে দিবো নিয়ে আসবি।আমি ওখান থেকে অফিসে যাবো।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৪৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here