বিকেলের প্রণয় গল্পের লিংক || Arshi Ayat

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১
Arshi Ayat

বিয়ের ছয়মাস পরই আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে বড়ো আপাকে বিয়ে করে।লাল বেনারসীতে আপার হাস্যজ্বল মুখখানা দেখে আমি অবাক হতে ভুলে গেলাম।আপা কি করে পারলো আমার সংসার ভাঙতে!কি দোষ করেছিলাম আমি?হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।তার এমন করার কারণ আমি তখন খুঁজে পাই নি।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি।নিজ হাতে বড়ো আপা আমার সংসারটা ভেঙে ফেললো।
কাঁদতে কাঁদতে সেদিন যখন বড়ো আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,’কেন করলে আমার সাথে এমন?’
বড়ো আপা হাসতে হাসতে বলল,’কেবল তো শুরু তোকে আমি কখনো শান্তি দেব না।তোর সকল সুখের উৎস আমি নষ্ট করে দেব।আমি বেঁচে থাকতে তুই কখনো সুখের মুখ দেখবি না।’

কথাগুলো বলেই বড়ো আপা চলে গেলো।আর আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।ছোটো থেকেই বড়ো আপা কোনো এক অজানা কারণে আমাকে পছন্দ করতো না।আমার খেলনা ভেঙে ফেলতো,বই-খাতা ফেলে দিতো কখনো কখনো মা বাসায় না থাকলে প্রচুর মারতো।আর ভয় দেখাতো মা বাসায় এলে কিছু যাতে না বলি।বললে আরও মারবে।আমিও ভয়ে কিছু বলতাম না।এভাবেই দিন চলছিলো।বয়স হওয়ার পরও বড়ো আপা বিয়ে করতে চাইতো না।বলতো আমাকে আগে বিয়ে দেওয়ার জন্য।বড়ো আপার জেদের কাছে হার মেনে বাবা,মাও আগে আমার বিয়ে ঠিক করেন।ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমার সাইফুলের সাথে প্রেম হয়।সাইফুল আমার থেকে পাঁচ বছরের বড় ছিলো।ওর পড়াশোনা শেষ।চাকরি করছে।আমার পড়ালেখা শেষে আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।বাবা,মাও আমার পছন্দের মূল্য দিয়ে সাইফুলের সাথেই আমার বিয়ে দেন।আমাদের দিন ভালোই চলছিলো।কিন্তু হঠাৎই সাইফুলের আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখছিলাম।ও আমাকে আগের মত ভালোবাসতো না আর একদিন তো কিছু না বলে ডিভোর্সই দিয়ে দিলো।আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেও উত্তর পাই নি।তবে এখন আমার মনে হয় এটার উত্তর আমি পেয়ে গেছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাবা,মা আপাকে চিরজীবনের জন্য ত্যজ্য করেছে।সে আর এ বাড়িতে আসতে পারবে না।তাতেও কি আমার কষ্ট কমবে?আপা আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার থেকে কেঁড়ে নিয়েছে।আর সাইফুল এটা কিভাবে করতে পারলো?ওর কি আমার কথা একটুও মনে পড়ে নি?আমাদের এত সুন্দর সাজানো স্বপ্ন এভাবে ভেঙে ফেললো?একটুও মায়া হয় নি?নিজের হাতে ধারালো ব্লেডের ছোঁয়া দিতে দিতে এসবই ভাবছিলো মিলাত।হঠাৎই মিনারা বেগম মেয়ের রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলেন মেয়ের নিথর শরীর মেঝেতে পড়ে আছে আর বাম হাতে রক্তের ধারা বইছে।মিনারা বেগম চিৎকার করে স্বামীকে ডাকলেন।হারুন সাহেব মাগরিবের নামাজ পড়ে মাত্রই বসেছিলেন তৎক্ষনাৎ স্ত্রীর আর্তচিৎকারে দৌড়ে যান মেয়ের ঘরে।মিনারা বেগম পাগলের মতো কাঁদছেন আর মেয়ের হাতের রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।এই অবস্থা দেখে হারুন সাহেব কাঁপা কাঁপা হাতে অ্যাম্বুলেন্সে কল করলেন দ্রুত।

‘ডাক্তার অনুরুপ,দ্রুত আসুন।একটা পেশেন্ট এসেছে অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল।সুইসাইড কেস।’
একজন নার্সের বলা কথায় অনুরুপ দ্রুত নিজের কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলো নার্সের পেছনে।
মিলাতকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।র’ক্ত ঝরেছে অনেক।অবস্থা খুবই খারাপ।এক ব্যাগ বি নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন।ব্লাড ব্যাংকে আপাতত বি নেগেটিভ রক্ত নেই।হারুন সাহেন নিজের পরিচিত সবার কাছে খোঁজ করেও বি নেগেটিভ রক্তের সন্ধান করতে পারলো না।এদিকে মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে পাগল হওয়ার দশা মিনারা বেগমের।

বন্ধুর মেয়েকে দেখতে এসেছে রেভান।যাওয়ার সময় হাসপাতালে করিডোরে এক মধ্য বয়স্ক মহিলাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গেলো সে।মহিলাটির মুখোমুখি বসে নরম গলায় বলে উঠলো,’আপনি কাঁদছেন কেন?’
মিনারা বেগম চোখ তুলে চাইলো ঠিকই কিন্তু কান্নার দমকে কথা বলতে পারছেন না।তখনই চিন্তিত,দুশ্চিন্তাগ্রস্থ গলায় পেছন থেকে হারুন সাহেব বলে উঠলেন,’কোথাও পাচ্ছি না।কোথাও না!এখন কি করব আমি?’
ওনার কথা শুনে মিনারা বেগমের কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেলো।রেভান উঠে গিয়ে হারুন সাহেবের সামনে দাড়িয়ে বলল,’কি হয়েছে আপনাদের?’
হারুন সাহেব মলিন গলায় বললেন,’বি নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন।নাহলে আমাদের মেয়েকে বাঁচানো যাবে না।’বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন তিনি।রেভান স্বান্তনার স্বরে বলল,’আঙ্কেল আপনি শান্ত হোন।আমার বি নেগেটিভ রক্ত।আমি রক্ত দিতে পারব।’

রেভানের কথা শুনে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যেই আশার আলো ফুটে উঠলো।অবশেষে রক্তের জোগাড় করা গেলো।রক্ত দেওয়া শেষে রেভান যখন চলে যাচ্ছিলো তখন মিনারা বেগম ওর হাত ধরে বলল,’বাবা,তুমি না থাকলে হয়তো মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতাম না।তোমার শুকরিয়া আদায় কিভাবে করব জানি না।’
‘এভাবে বলবেন না আন্টি।মানুষই তো মানুষের জন্য।’
‘তুমি অনেক ভালো মানুষ বাবা।আমাদের বাসায় এসো একদিন।’
‘আসব আন্টি।
‘তোমার নাম্বারটা দাও।’
রেভান ওর নাম্বার দিয়ে চলে গেলো হাসপাতাল থেকে।
মিলাত এখন আউট অফ ডেঞ্জার।যদিও জ্ঞান ফেরেনি এখনও। তবুও ডাক্তার অনুরুপ এখনও বাসায় যান নি।সকালের চেক-আপটা করে তবেই যাবে।

মায়ের মুখ থেকে মিলাতের কথা শুনে আনন্দ হলো চৈতির।এটাই তো চেয়েছিলো সে।তবে ম’রেনি বলে আফসোস হচ্ছে।অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি ম’রলে খেলা জমবে না।তিলে তিলে শেষ করবে ওকে।এইসব ভেবেই পৈশাচিক হাসলো চৈতি।এরমধ্যেই কলিংবেল বাজলো।বিরক্ত হলো চৈতি।নিশ্চয়ই সাইফুল এসেছে।এই লোকটাকে একদমই সহ্য হয় না ওর।শুধুমাত্র মিলাতের জীবনটা নরক বানানোর জন্য এই বিয়েটা করেছে সে।

দরজা খুলে কড়া ভাষায় কিছু বলবে তার আগেই দেখলো সাইফুলের সাথে আরেকজনকে।ছেলেটাকে দেখেই ভালো লাগলো চৈতির।এতো সুন্দর ছেলে সচারাচর কমই দেখা যায়।সাইফুল ছেলেটার পরিচয়ে বলল,’ও হচ্ছে রেভান।আমার বন্ধু।একটা কাজে এসেছে চট্টগ্রাম থেকে।এখানেই থাকবে কিছুদিন।’
চৈতি হেসে স্বাগতম জানালো।আর মনে মনে পুলকিত হলো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২