বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৪
Arshi Ayat
নাইমার এক দেখায়ই পছন্দ হয়ে গেলো অনুরুপকে।এই ছেলের সাথে বিয়ে হলে সে কখনোই ‘না’ করবে না।
এদিকে কনে দেখা শেষে নাইমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়েই হাঁপ ছেড়ে বাচলো অনুরুপ।এত দমবন্ধকর লাগছিলো বলার বাহিরে।কলি বেগমের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে নাইমাকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ হয়েছে তার।কেবল ছেলের ইশারায় তিনি আংটি পরান নি।নাহয় আজই আংটি পরিয়ে ফেলতেন।সেখান থেকে বেরিয়েই কলি বেগম ছেলেকে ধরলেন কেন সে আংটি পরাতে না করলো।এখন জরুরি একটা কাজ আছে রাতে জানাবে এটা কোনোরকম বুঝিয়ে বাবা-মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো অনুরুপ।
সন্ধ্যায় রুজিনা বেগম পাটিসাপটা পিঠা বানালেন।নিরু আর মিলাত দু’জনেরই ভীষণ প্রিয় পিঠা।রান্নাঘরে রুজিনা বেগম গরম গরম পিঠা ভাঁজছেন আর দুপাশে দুই মেয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে আর গল্প করছে।সাথে তাকেও খাওয়াচ্ছে।গল্প করার এক ফাঁকে রুজিনা বেগমের কিছু মনে পড়ে যাওয়ায় তিনি বললেন,’জানিস আজ সকালে যখন নামাজ পড়ে দরজা খুললাম আমি তখন দরজার সামনে চুড়ি আর শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ রাখা ছিলো।সম্ভবত কাল সন্ধ্যায় তোরা ঘরে আসার পর কেউ রেখেছে।রাতে তো আর দরজা খুলি নি তাই সকালেই দেখতে পেয়েছি।’
সবশুনে মিলাত হাসতে হাসতে বলল,’তোমার মেয়ের প্রেমিক রেখে গেছে হয়তো!’
নিরু গাল ফুলিয়ে বলল,’একদম মিথ্যে কথা।আমার কোনো প্রেমিক নেই আপু।’
রুজিনা বেগম মিলাতের কথায় সায় দিয়ে বলল,’হ্যাঁ,আসলেই রে মিলাত।তুই ঠিক বলেছিস।ওর প্রেমিক ছাড়া কে রাখবে এগুলো।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিরু প্রতিবাদ করে বলল,’কেন?আপুর প্রেমিকও তো রাখতে পারে?’
মিলাত নিরুর মাথায় গাট্টা মেরে বলল,’আমার প্রেমিক আসবে কোথা থেকে?সবে ডিভোর্স হয়েছে আমার আর তোদের এইখানে আমাকে চেনেইবা কে?’
যুক্তি সব দিক থেকে উপযুক্ত থাকায়।সব দোষ গিয়ে পড়লো বেচারি নিরুর কাছে।রুজিনা বেগম পিঠা বানানো বাদ দিয়ে মেয়েকে চেপে ধরলেন।মেয়ে কার সাথে লটরপটর করছে সেটা তিনি জেনেই ছাড়বেন।নিরু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,’মা,আমার কোনো প্রেমিক নেই সত্যি।’
‘তাহলে কি এগুলো আমার প্রেমিক রেখে গেছে?’
মিলাত আরেকটা পাটিসাপটা হাতে নিয়ে বলল,’তবে ফুপু তোমার কিন্তু এতটাও বয়স হয় নি।তোমার প্রেমে যদি কেউ পড়ে আমি অবাক হব না।তুমি এখনো কত সুন্দর।’
রুজিনা বেগম কপট রেগে বললেম,’তবে রে!তখন থেকে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছিস তুই।তোকে ছাড়ি কি করে?’
নিরুও এবার উৎসাহ দিলো মা’কে।মিলাত বুঝলো এবার তার পালা।
এমন খুনসুটিতেই কেটে গেলো তাদের তিনজনের সন্ধ্যেটা।
বাসায় ফিরেই জেরার মুখে পড়লো অনুরুপ।কেন তার মেয়ে পছন্দ হয় নি যতক্ষণ পর্যন্ত না কলি বেগম এটা জানতে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার শান্তি নেই।অনুরূপ বাবা মা দু’জনকে সামনে বসিয়ে শান্ত গলায় বলল,’বাবা-মা তোমরা সবসময়ই আমার ভালো চেয়েছো নিঃসন্দেহে কিন্তু আমি এখনই নতুন একটা সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত না।আমার সময় প্রয়োজন।একটু বোঝার চেষ্টা করো।’
কলি বেগম নাছোড়বান্দা গলায় বললেন,’সময় নাও সমস্যা নেই তবে বিয়ের কথা হয়ে থাক।আংটি পরানো থাক।তোমরা দু’জন দু’জনকে চেনো,জানো তারপর বিয়ে হোক।সমস্যা নেই তো এতে।’
‘মা,একটু বোঝার চেষ্টা করো।একটু সময়ই তো চেয়েছি।’
এবার কলি বেগম কঠোর স্বরে বললেন,’তোমার কি পছন্দ আছে অনুরুপ?’
অনুরুপ মায়ের গলায় রাগের আভাস পেলো।সে মাথা নিচু করে না বলল।কলি বেগম ছেলের দিকে একবার চেয়েই উঠে চলে গেলেন।স্ত্রীর পেছনে গেলেন আমিনুল সাহেবও।ড্রইং রুমে অনুরুপ একাই বসে রইলো।প্রচন্ড অসহায় অনুভূত হলো ওর।
আজ সকাল সকালই উঠে পড়েছে মিলাত।রাতে ঘুমন হয় নি ভালো।একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছে শেষ রাতে।তার রেশ এখনো আছে।মনটা কেমন ভার লাগছে।সমুদ্রে যেতে পারলে ভালো লাগতো।তাই নিরুকে ডেকে উঠালো।চোখ ডলতে ডলতে নিরু বলল,’কয়টা বাজে?’
‘আট’টা।’
লাফিয়ে উঠলো নিরু।মাথায় হাত দিয়ে বলল,’ওমাই গড!আমার পরীক্ষা এগারোটায়।যেতেই লাগবে দু’ঘন্টা।’
‘তাহলে ওঠ তাড়াতাড়ি।রেডি হ।ফুপু তো কতবার ডেকে গেলো তুই ই তো উঠিস নি।’
নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো নিরু।মিলাত কিছু একটা ভেবে নিজেও রেডি হতে শুরু করলো।নাস্তার টেবিলে বসে রুজিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,’কি রে,মিলাত কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ভালো লাগছে না।সমুদ্র দেখতে যাব।’
‘পতেঙ্গায় যা।’
‘হ্যাঁ ওখানেই যাব।’
নিরু মুখটা বেজার করে বলল,’আজ পরীক্ষা বলে..’
মিলাত স্বান্তনার স্বরে বলল,’তোর এক্সাম শেষ হোক আমরা সবাই কক্সবাজার যাব।’
নিরু খুশিতে নেচে উঠলো।রুজিনা বেগমেরও ভালো লাগলো।অনেকদিন হয় সমুদ্র দেখা হয় না।ছেলেটা নেই,মেয়েও থাকে না বেশি।তিনি একা গিয়েই বা কি করবেন।
নিরুর সাথে বের হলো মিলাতও।নিরু চলে গেলো ভার্সিটিতে আর মিলাত গেলো সমুদ্রের উদ্দেশ্যে।
অনুরুপ খালি পায়ে হাঁটছিল সমুদ্র সৈকতে।এই পতেঙ্গা সৈকতে চট্টগ্রামে থাকতে অনেকবার আসা হয়েছে।সেগুলো সবই এখন অতীত।গতকাল রাতে একটুও ঘুম হয় নি ওর।মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।হাঁটতে হাঁটতেই হঠাৎ কিছুটা সামনেই দেখতে পেলো মিলাতকে।সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে দু-হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বাতাসের নির্মলতা গভীরভাবে টেনে নিচ্ছিল সে। তার মুখে ছিল এক প্রশান্তির ছাপ, যেন চারপাশের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ভেতরের কোনো এক জগতে হারিয়ে গেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ আর নরম বাতাস তাকে যেন গভীর কোনো অনুভূতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৩
সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে আসা এক টুকরো ভালোলাগার বাতাস অনুরুপের মনেও যেন এক ধরনের প্রশান্তি এনে দিল। সে মিলাতের সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো। সমুদ্রের বিশালতা, তার নীল গভীরতা—সবকিছুই যেন ফিকে হয়ে গেল মিলাতের উপস্থিতির কাছে। এখন সমুদ্রের চেয়েও বেশি শান্ত, স্নিগ্ধ আর অপার গভীর লাগছে এই মেয়েটিকে। মিলাতের চোখ বন্ধ করে রাখা মুখের প্রতিটি রেখায় যেন এক অদ্ভুত মাধুর্য। অনুরুপ চুপচাপ দাঁড়িয়ে অনুভব করলো—কখনো কখনো মানুষই প্রকৃতির চেয়ে বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে।