বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৫

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৫
Arshi Ayat

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় হঠাৎই মিলাতের মনে হলো খুব গভীর দৃষ্টিতে কেউ ওর দিকে চেয়ে আছে।নিজের ভাবনা সত্যি কি না সেটা বোঝার জন্যই মিলাত চোখ খুললো।চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত কাউকে দেখতে পেয়ে চমকে গেলো ভীষণ।চোখ বড় বড় করে চমকিত গলায় শুধালো,’ডাক্তার,আপনি?’
অনুরুপ চমৎকার ভঙ্গিতে হাসলো।বলল,’অবাক হয়েছেন?’
‘হওয়ার কথা নয় বুঝি?হঠাৎ ঢাকা থেকে কি উড়ে চলে এলেন নাকি?’
‘না,আমি দু’দিন ধরেই এখানে।’
‘ও আচ্ছা,কোনো কাজে?’
‘না,চট্টগ্রাম আমার কাজের জায়গা না।চট্টগ্রাম আমার শান্তির জায়গা,আমার প্রাণের শহর।’
মিলাত বুঝতে পেরে ফের প্রশ্ন করলো,’কতদিন আছেন?’
‘আজ রাতের ট্রেনে চলে যাব।’
‘ইশ!আজ দেখা হলো আজই চলে যাচ্ছেন?’
‘থাকলে খুশি হতেন?’

‘না আসলে সেই অর্থে বলি নি।আমাদের দেখা হওয়ার সময়টা সংক্ষিপ্ত তাই বলেছি।’
‘সমস্যা নেই।আপনি তো ঢাকায় ফিরবেনই।সময় করে দেখা করে নেবেন।’
মিলাত হেসে বলল,’আমার সময় তো করা যাবে কিন্তু আপনিই তো প্রচন্ড ব্যস্ত মানুষ।’
‘তা,ঠিক।মানবসেবায় উৎসর্গ জীবন।’বলেই অনুরুপ হাসলো স্বভাবসুলভ।
সৈকতের পাড়ে খালি পায়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেক কথাই হলো দু’জনের।হঠাৎই অনুরূপ বলল,’মিলাত,জীবনে থেমে থাকবেন না।যত খারাপ মুহুর্তই আসুক কখনোই থেমে যাবেন না।থেমে গেলেই হেরে যাবেন আর সবসময়ই সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া করবেন আপনাকে এই সুন্দর জীবন দান করার জন্য।আমাদের প্রত্যেকের জীবন সৃষ্টিকর্তার আমানত।আমাদের উচিত না আমানতের খেয়ানত করা।আর কেউ যদি আপনার সাথে অন্যায় করে তাহলে কষ্ট পাবেন না।সৃষ্টিকর্তা আপনার প্রতি করা এই অন্যায়ের হিসাব নিবেই হয়তো ইহকালে নয়তো পরকালে।অন্যায় করে কেউ ছাড় পায় না।তাই কারো প্রতি অন্যায় করবেন না কখনো,সৎ থাকবেন,কথা রাখবেন আর নিজেকে ভালোবাসবেন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনুরুপের কথাগুলো মিলাতের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলল। তার কথাগুলো যেন একটি নতুন আলো হয়ে মিলাতের মনে জ্বলতে শুরু করল। অতীতের দুঃখগুলো তাকে আর পেছনে টেনে রাখতে পারবে না—এমন প্রতিজ্ঞা করল মিলাত।সে মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করল যে, জীবনের ওই কালো অধ্যায়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে। নতুন করে সবকিছু শুরু করবে, একটি নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটবে।
চট্টগ্রাম এসে খুশিতে আত্মহারা চৈতি।ওরা উঠেছে সাইফুলের মামাতো ভাইয়ের বাসায়।চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেটেই সাইফুলের মামাতো ভাইয়ের বাসা।আর ২ নম্বর গেটেই রেভানের অফিস।ওর একটা ভিজিটিং কার্ড চৈতির কাছে আছে।আর তর সইছে না কখন দেখা হবে প্রাণের মানুষটার সাথে।জার্ণি কারে এসেই সাইফুল ঘুমাচ্ছে কুম্ভকর্ণের মত।চৈতি একটু রেস্ট নিয়েই উঠে পড়লো।দুপুরের খাবার খেয়ে বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বেরিয়ে পড়লো একাই।এখন রেভানের অফিসে যাবার পালা।

রেভান অফিসেই বেশ মনযোগ সহকারে কাজ করছিলো হটাৎ তার সেক্রেটারি জানালো একজন মহিলা এসেছে তার সাথে দেখা করতে।খুবই পিড়াপিড়ি করছে।রেভান পাঠিয়ে দিতে বলল।অনুমতি পেয়ে চৈতি রেভানের কেবিনে প্রবেশ করতেই রেভান ওর দিকে চাইলো আর চমকে গেলো।কিছুটা অপ্রস্তুত গলায় বলল,’ভাবি,আপনি?’
চৈতি মধুমাখা গলায় বলল,’জ্বি,ভাইয়া।মআপনি তো আমাকে ভুলেই গেছেন।’
রেভান অস্বস্তি অনুভব করলো তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ভাবি,বসুন না।সাইফুল আসে নি?’
‘এসেছে।আমরা ওর মামাতো ভাইয়ের বাসায় উঠেছি।আপনার অফিস থেকে দশমিনিটের দুরত্ব।বেচারা ঘুমাচ্ছে।আমি একটু ঘুরতে বেরিয়েছি।ভাবলাম একটু দেখা করে যাই।বিরক্ত হলেন?’
রেভান সত্যিটা বলল না।কৃত্রিম হাসিমুখে বলল,’ না,না একটুও না।চা না কফি?’

‘কফি।’
রেভান ফোন করে এক কাপ কফি দিতে বলল।চৈতি চারপাশে চোখ বুলিয়ে রেভানের অফিসটা একবার দেখে নিয়ে বলল,’আপনার অফিসটা সুন্দর।’
‘ধন্যবাদ,ভাবি।’
এরপর চৈতি আরেকটু ভাব জমানোর চেষ্টা করলেও লাভ হলো না।রেভান মাপা মাপা উত্তর দিলো সবসময়।তাই বেশি সুবিধা করতে না পেরে আজকের মতো চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।এগিয়ে এসে রেভানকে ধন্যবাদ জানাবে তখনই ওর স্ক্রিন জ্বলে উঠলো আর জ্বলে থাকা স্ক্রিনে নিজের চিরশত্রুর হাস্যজ্বল মুখখানা দেখতে পেয়ে ধপ করে মাথায় আগুন ধরে গেলো।রাগে হাত কাঁপছে ওর।রেভান কিছু বুঝতে না পেরে বিচলিত কন্ঠে বলল,’আর ইউ ওকে?’
চৈতি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবার সোফায় বসে পড়লো।পাঁচ মিনিট পর মুখ খুললো।বলল,’আপনি মিলাতকে চেনেন?’
রেভান আগ্রহী হলো।বলল,’হ্যাঁ,চিনি।’
চৈতি মুখটাকে বিকৃত করে বলল,আমি জানি না কিভাবে আপনি ওকে চেনেন তবে ওর সম্পর্কে আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন।’
রেভান আরও কৌতুহলী হয়ে উঠলো।বলল,’ওর সম্পর্কে কি জানেন আপনি?’

‘ও একটা প্রতারক।পরকীয়া করতে গিয়ে ধরা খাওয়ার পর স্বামী তালাক দেয় তাই আত্ন’হ’ত্যার চেষ্টা করে।আর আসার সময় স্বামীর বাড়ি থেকে অনেক টাকা চুরি করে পালিয়ে এখানে এসে বসে আছে।ওর স্বামী নিতান্ত ভালো মানুষ তাই এখনো পুলিশ কেস করেনি।আমার বান্ধবী তো তাই জানি আমি।আপনার সাথে কি সম্পর্ক জানি না আমি তবে আপনাকে সতর্ক করার প্রয়োজন মনে করলাম দেখে বললাম।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৪

চৈতির কথা শুনে রেভান দ্বিধায় পড়ে গেলো।ওর কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না তবুও কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
ফুপুর বাড়ির সামনে এসে যখন অনুরুপ মিলাতকে বিদায় দিচ্ছিলো তখন রুজিনা বেগম ছাঁদের ওপর থেকে দু’জনকে লক্ষ্য করে হাঁক ছাড়লেন।বললেন,’মিলাত,ওকে ঘরে নিয়ে আয়।’
ফুপুর কথা শুনে দু’জনেই লজ্জা পেলো তবুও মিলাত ওকে ঘরে নিয়ে এলো।ঘরে বসে গল্প করতে করতে রুজিনা বেগম জানলেন তার ভাইঝিকে কিভাবে বাচিয়েছে এই ছেলেটা!

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৬