বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৬
Arshi Ayat
চৈতি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করল। দ্রুত বেসিনের কাছে গিয়ে কল ছেড়ে দিল। ঠান্ডা পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটাতে লাগল, যেন মাথার ভেতরের সমস্ত অস্থিরতা মুছে ফেলা যায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। ভেজা চুল থেকে পানি টপটপ করে পড়ছিল, আর উত্তেজিত চোখ দুটো যেন নিজেকে ছাপিয়ে কোনো অজানা দহন প্রকাশ করছিল। রেভানের ফোনে মিলাতের ছবিটা তার মনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বারবার ছবিটার কথা মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল, ছবির প্রতিটা ফ্রেম যেন তাকে উপহাস করছে। নিজের ঠোঁট কামড়ে সে গভীর নিশ্বাস নিতে চেষ্টা করল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। উত্তপ্ত রাগ আর হতাশার মিশ্রণে তার মনে হিংস্র একটা অনুভূতি দানা বাঁধছিল।
সে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই বলল,’আমি এত সহজে আমার ভালোবাসার মানুষ তোকে দেব না,মিলাত।ওকে পেতে যদি তোকে শেষ করতে হয় তবে তাই করব আমি।’
চৈতির ভেতরে যেন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হতে শুরু করেছে। সে শক্ত হয়ে দাঁড়াল, চোখে ভয়ঙ্কর এক দৃঢ়তা।
কিছুক্ষণ সেখানে দাড়ালো চৈতি।নিজেকে সামলে নিতে আরেকবার মুখে পানি দিল। ধীরে ধীরে ভেতরের অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমতে লাগল। কয়েক মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে কিছু না খেয়ে বেরিয়ে যাওয়াটা চৈতির কাছে অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিল। তাই সে একটা কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে কোণার একটি ফাঁকা টেবিলে গিয়ে বসে পড়ল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
টেবিলের ওপর চোখ নামিয়ে রাখতেই এক টুকরো কাগজের মতো মনে হচ্ছিল তার সমস্ত চিন্তা। রেভানের ফোনে মিলাতের ছবির অব্যাহত উপস্থিতি তার মনের ওপর চাপ তৈরি করেছে। কিন্তু আশপাশের হালকা আলো এবং কফির ঠান্ডা গন্ধে কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করল।কফির কাপটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল চৈতি। সময় কাটছিল, তবে মনোযোগ ছিল না সেদিকে—সে যেন কোন এক দুর্বোধ্য দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে গিয়েছিল। কফির প্রথম চুমুকটা নিতেই খানিকটা স্বস্তি পেল, কিন্তু ভিতরে জমে রইল ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ!
চৈতির কথাগুলো শোনার পর থেকে রেভানের মাথায় নানা ভাবনা ভিড় করছে। কিছুই ঠিকমতো মনে ধরছে না, আর তার কাজেও মন বসছে না।ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে সে।মিলাতের সাথে কথা বলাটা জরুরি।রেভান মিলাতকে মেসেজ করলো কাল তার সাথে দেখা করার জন্য।কিন্তু ওপাশ থেকে উত্তর এলো না।তাই সে ভাবলো কাল মিলাতের ফুপুর বাসার সামনে যাবে।
মা’কে কোনোরকম বুঝিয়ে অনুরুপ আজ রাতের ট্রেনেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।কাল থেকে আবার হাসপাতালে যেতে হবে।অবশ্য দু’টো দিন অনুরুপের জন্য সত্যিই খুব ভালো কেটেছে, বিশেষ করে আজকের দিনটি। তবে, আজকের দিনটা আসলেই স্পেশাল কেন, এই প্রশ্নটা নিজেকেই করতে করতে, সে কোনো সঠিক উত্তর পেলো না।কখনো কখনো, এমন অনুভূতিগুলো আসে যখন আমাদের মনের মধ্যে কিছু অজানা পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু তা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে না পারলে, সেই বিশেষ অনুভূতিটা আরও বেশি গোপন এবং রহস্যময় হয়ে ওঠে।
বাসায় ফিরেই চৈতি দেখলো সাইফুলও বাসায় নেই।সে-ও তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে।ততটা গুরুত্ব দিলো না চৈতি।যা ইচ্ছা করুক,এমনিতেও কিছুদিন পর ছেড়েই দেবে ওকে।তাই বেশি মায়া দেখানো যাবে না।ওদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে এসে চৈতি অনেকদিন পর নিজের বাবাকে ফোন করলো।হারুন সাহেব সবে অফিস থেকে ফিরেছেন বাসায়।অকস্মাৎ চৈতির কল পেয়ে চমকিত হলেন।ধরবেন কি ধরবেন না ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেললেন।ওপাশ থেকে চৈতিই প্রথমে কথা বলল।
‘কি অবস্থা,বাবা?ওপস!স্যরি তোমরা তো আমাকে ত্যাজ্য করেছো।এইক্ষেত্রে কি বাবা ডাকা যাবে?এনিওয়ে,কেমন আছো?তোমার বউ কেমন আছে?’
চৈতির কথার ধরন শুনে হারুন সাহেব রেগে গেলেন।রোষপূর্ণ গলায় বললেন,’বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!এসব কিভাবে কথা বলছো?’
‘ভুল কিছু বললাম না কি?অবশ্য আমি যা করি,বলি তাতেই বেয়াদব হই।কি করার জন্মই দিয়েছো বেয়াদব।বেয়াদবি তো করবই।’
‘কি বলার জন্য ফোন করেছো সেটা বলো।’
‘তোমার ছোটো মেয়ে আবার বাড় বেড়েছে।আমার পাখি কেড়ে নিতে চায়।অতো সহজ?ওকে বলো ওর পাখি আমি মুক্ত করে দেব আমার পাখির দিকে যেন না তাকায়।তা নাহলে কপালে দুঃখ আছে মনে রেখো।’
চৈতির এমন সব কথা শুনে হারুন সাহেব রাগে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।তার পাশ বসা মিনারা বেগম স্বামী থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে গমগমে গলায় বললেন,’বেশি বাড় তুই বেড়েছিস।অচিরেই তুই ধ্বংস হবি দেখিস।’
মায়ের কথা শুনে অট্টহাসি দিলো চৈতি।হাসতে হাসতেই বলল,’ধ্বংস হলে আমি একা হবো না তোমাদের আদরের কন্যাকে নিয়ে ধ্বংস হব।এসব ভয় আমাকে দেখিও না।’
বলেই চৈতি ফোন রেখে দিলো।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৫
ফোন কাটার পর থেকেই হারুন সাহেবের শরীরটা বেশি ভালো লাগছে না।ব্লাড প্রেশার বেড় গেছে।মিনারা বেগম রাতের খাবার দ্রুত রেডি করে স্বামীকে খেতে দিলেন পরে ঔষধ খাইয়ে বিশ্রাম নিতে বললেন।কিন্তু রাত বারোটার পর হঠাৎই হারুন সাহেবের শরীর খারাপ হতে শুরু করলো।মিনারা বেগম দিশা না পেয়ে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কল করলেন।একটু পরই হারুন সাহেবকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।
রাতেই মায়ের মুখ থেকে বাবার কথা শুনে মিলাত অস্থির হয়ে পড়লো।এখনই রওনা হওয়ার জন্য পাগলামি করলেও রুজিনা বেগম দিলেন না।সিদ্ধান্ত নিলেন কাল সকালে তিনি আর মিলাত যাবেন।নিরুর পরীক্ষা শেষে একদিন পর ও যাবে।