বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৯
Arshi Ayat
রাতে রেভান মেসেজ চেক করার পর দেখলো স্প্যামে চৈতির মেসেজ।ওপর থেকে ইন্টারেস্টিং লাগার কারণে চ্যাটে ঢুকতেই দেখলো একটা ছবি আর একটা টেক্সট।ছবিটায় মিলাতের চেহারা স্পষ্ট তবে পাশের ছেলেটার মুখে স্টিকার।খুবই ক্লোজ ছবি আর সাথে একটা ডিভোর্সের কাগজও জুড়ে দেওয়া তাতেও মিলাতের স্বাক্ষরও নাম আছে।তবে এখানেও ছেলেটার নাম মুছে দেওয়া হয়েছে।এসব দেখার পর বুকের ভেতর কেমন একটা করে উঠলো রেভানের।নিজের ভাগ্যের ওপর রাগ হলো।কেন বারবার এমন ভুল কাউকেই ভালোবেসে কষ্ট পেতে হবে?জীবনে সঠিক মানুষ কবে আসবে নাকি আসবেই না?তবুও একবার মিলাতের সাথে কথা বলতে চাইলো রেভান।ঘড়িতে চেয়ে দেখলো রাত ন’টা চব্বিশ।ফোনে মিলাতের নাম্বার ডায়াল করলো।কিন্তু রিসিভ হলো না।বেশ কয়েকবার ডায়াল করার পরও রিসিভ হলো না।মেজাজ খারাপ হলো রেভানের।ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে আরামকেদারায় চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।এর মিনিট পাঁচেক পরই সালেহা বেগম একদম তৈরি হয়ে এসে বললেন,’বের হচ্ছি আমরা।তুই বিয়েতে চলে আসিস।নয়তো তোর খালা মন খারাপ করবে।’
‘আসবো।সাবধানে যাও।’
সালেহা বেগম,নাইমা,রেভানের বড় ভাবি আর বাবা বেরিয়ে পড়লো।বাড়িতে কেবল ও আর বড় ভাই আছে।বড় ভাই ছুটি পায় নি তাই যেতে পারছে না।ছুটি পেলে দুই ভাই একসাথেই যাবে।
সালেহা বেগম যাবার পরপরই রেভানের ফোন এলো।দ্রুত ফোনের কাছে এসে দেখলো মিলাতের কল।মুহুর্তের জন্য ভালোলাগা কাজ করলেও মনে পড়ে গেলো চৈতির পাঠানো ছবির কথা।ফোন রিসিভ করেই কর্কশ স্বরে বলে উঠলো,’কোথায় ছিলে?কল রিসিভ করো নি কেন?’
‘বাবা’কে খাওয়াচ্ছিলাম।’
‘মিথ্যা বলো না।প্রথম থেকে তুমি নিজের সম্পর্কে কিচ্ছু বলো নি আমাকে।’
মিলাত অবাক হলো।ছেলেটা এমন করছে কেন?আর ও কি বলবে নিজের সম্পর্কে?মিথ্যাটাই বা কোনটা বলেছে?কিছুই বুঝতে পারলো না মিলাত।ও কিছুটা দ্বিধান্বিত স্বরে বলল,’কি বলছেন এসব আপনি?আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘তুমি বিবাহিত এবং ডিভোর্সি?’
মিলাতের খানিকটা শক লাগলো।এই কথাগুলো এই ছেলেটা জানলো কিভাবে?জানাতে সমস্যা নেই,বরংচ মিলাত নিজেই এসব বলতো ওকে তবে পরিস্থিতিটাই এমন গোলমেলে হয়ে গেলো যে দ্রুত চট্টগ্রাম ছাড়তে হলো।তবে প্রশ্ন হলো ও যদি না বলে তাহলে বলার মতো কাউকেই তো নজর আসছে না।মিলাত অনেক ভেবেও পেলো না কিছু।
ভাবনার ঘোর কাটে রেভানের কর্কশ স্বরে,’কি হলো?বলো?’
‘হ্যাঁ,এটা সত্যি।’
‘আর এইজন্যই তুমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলে?’
‘হ্যাঁ।’মিলাতের বলতে ভীষণ কষ্ট হলো তবুও নিজেকে সামলো নিলো।
এরপর আর কথা হলো না।ফোন খট করে কেটে দিলো রেভান।কেমন একটা যেন লাগছে।দ্বিতীয়বার মন ভাঙার কষ্ট প্রথমবারের চেয়েও তীব্র হচ্ছে।কারণ প্রথমবার মন ভাঙার পরও মনে আশা ছিলো হয়তো পরেরবার ভালো কেউ আসবে কিন্তু দ্বিতীয়বার ভাঙার পর আর কোনো আশা থাকে না।
কেবিনের বাইরের খালি চেয়ারগুলোর একটাতে বসে মাথা নিচু করে কাঁদছিল মিলাত।যেই অতীত মুছে ফেলতে চাইছে সেটা বারবারই কেন সামনে আসছে?কেন সেই অতীত ধরে মানুষ খোঁচা দিচ্ছে?এমন নিঃসঙ্গ কান্নার মাঝেও মিলাত বুঝতে পারলো পাশে কারো উপস্থিতি।বাম হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে পাশে তাকাতেই দেখলো অনুরুপ বসে আছে।মিলাত অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,’ডাক্তার,আপনি?আপনার না ডিউটি শেষ?’
‘হ্যাঁ।কিন্তু মনে হলো একবার এসে দেখে যেতে সব ঠিক আছে কি না!যাইহোক আপনি কাঁদছিলেন কেন?’
‘এমনিই।’
অনুরুপ হাসলো।বলল,’ঠিকাছে,বলতে হবে না।এবার চোখ মুছুন।আঙ্কেল ঘুমিয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘রাতের ঔষধগুলো ঠিকমতো দিয়েছে তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘বেশ।আপনি তো আজ এখানেই থাকবেন তাই না?’
‘হ্যাঁ।সকালে মা আর ফুপু আসবে।’
‘আচ্ছা,চা খাবেন?’
মিলাত এবার একটু স্বাভাবিক হলো।মাথা নেড়ে সায় জানালো।অনুরুপ উঠে দাড়িয়ে বলল,’চলুন।’
মিলাত অনুরুপের সাথেই বের হলো।ওরা হাসপাতাল থেকে একটু হাঁটার পথের দুরত্বে একটা টঙ দোকানের সামনে গেলো।এখন কাস্টমার নেই।দোকানী দোকান বন্ধ করে দিবে।অনুরুপ গিয়ে বলল,’মামা,দু’টো লেবু চা দাও তো।’
অর্ডার দিয়ে এসে অনুরুপ মিলাতের পাশে এসে দাঁড়ালো।মিলাতই প্রথমে প্রশ্ন করলো,’আবার চট্টগ্রাম কবে যাবেন?’
‘সামনে ঈদের ছুটিতে।’
‘ও আচ্ছা।আমার তো ঘোরাও হলো না ঠিক ভাবে।’
‘সমস্যা নেই।চট্টগ্রাম এত বড় যে আমিও এখন শেষ করতে পারি নি ঘুরে।মাঝেমধ্যে গিয়ে ঘুরে আসবেন।যত বেশি প্রকৃতির সাথে কাটাবেন ততবেশি মন ভালো থাকবে।’
‘হ্যাঁ,এবার কয়েকটা জায়গায় গিয়েছিলাম।ভীষণ ভালো লেগেছিলো।’
‘বাহ!শুনে ভালো লাগলো।’
কথা বলতে বলতেই দোকানী ডাক দিলো।অনুরুপ চা নিয়ে এলো।দু’জনে চা খেতে খেতে আরও কিছুটা সময় আড্ডা দিলো।এরপর মিলাতকে হাসপাতালের সামনে পৌঁছে দিয়ে অনুরুপ নিজের ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা চাবি বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,’এটা আমার চেম্বারের চাবি।রাতে ওখানেই ঘুমাইয়েন।’
এটা বলেই অনুরুপ নিজের গাড়ির দিকে এগোলো।মিলাত চাবিটা হাতে এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এটা কল্পনারও বাইরে ছিলো।তবে মুহুর্তেই ভালো লাগার একটা রেশ ছড়িয়ে পড়লো।
আসলে ঘরে বসে অনুরুপ এটাই চিন্তা করছিলো রাতে হাসপাতালে মেয়েটা কিভাবে থাকবে?কোথায় ঘুমাবে?এসব চিন্তা করেই আর বসে থাকতে পারলো না সে।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৮
চৈতি হঠাৎই জেদ ধরেছে ঢাকায় ফেরার।সব দু’দিনও হয় নি ঘুরতে আসার এর মধ্যেই ঢাকায় যেতে হবে!অন্যান্য কাপলরা আসলে যেতেই চায় না।সাইফুল অনেক চেষ্টা করলো বুঝানোর কিন্তু লাভ হলো না।অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো তারা কাল সকালেই ঢাকায় রওনা হবে।ঢাকায় ফিরে প্রথমে সাইফুলকে ডিভোর্স দেওয়াই ওর মুখ্য কাজ।কারণ মিলাতের নামে আজ যা বলেছে রেভান সেটা বিশ্বাস করেছে তাই তো রিপ্লাইয়ে লিখেছে থ্যাংকস।অবশ্য তখন যদি খেয়াল করে সাইফুলো ছবি আর নামটা না লুকাতো তাহলে মিথ্যেটা ধরা পড়ে যেতো।
