বিকেলের প্রণয় পর্ব ২
Arshi Ayat
রুমে এসেই চৈতি সাইফুলের গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ করতে শুরু করলো।সাইফুলও সায় দিয়ে বলল,’কি ব্যাপার,ম্যাডাম?আজকে এত খুশি লাগছে কেন?’
‘তোমাকে দেখলেই তো আমার খুশি লাগে।’
‘তাই নাকি?’
চৈতি সাইফুলের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মাথা নাড়লো।যদিও প্রকৃত খুশির কারণ অবশ্যই এটা নয়।একটু আগে রেভানকে দেখা আর মায়ের কাছে মিলাতের সুইসাইড এটেম্পটের খবর শোনাই এই খুশির কারণ।তবে বোকা সাইফুল এসব কিছুই বুঝতে পারলো না।সে ছলনাময়ীর ছলনায় বুদ হয়ে রইলো কেবল।
মিলাতকে রুটিন চেক-আপ করেই বাসায় ফিরেছে অনুরুপ।তবে একটা বিষয়ে খুব খারাপ লাগছে।জ্ঞান ফেরার পরই মেয়েটা উন্মাদের মতো বলছিলো,’আমি বাঁচতে চাই না।আমাকে বাঁচিয়েছেন কেন?ডাক্তার মে’রে ফেলুন আমাকে।’
অনুরুপ বারবার শান্ত করার চেষ্টা করলেও ফল হলো না।পরবর্তীতে ঘুমের ইনজেকশন দিতে হয়েছে।মানসিক ভাবে গভীর আঘাত পেয়েছে মেয়েটা।হাসপাতালে প্রায়ই দেখে এরকম রোগী যাদের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই।গত দু’বছরে এসব দেখতে দেখতে গা সওয়া হয়ে গেছে তবে এই মেয়েটার পরিণতি দেখে কেন যেনো ভীষণ খারাপ লাগছে।যদিও অনুরুপ জানে না কেন এই মেয়েটার জীবনে এত দুঃখ!
দুপুরের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে প্রথমে রেভানকে ডাকতে এলো চৈতি।রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নক করে বলল,’আসবো?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ট্রাউজার পরে টিশার্ট পরতেই যাচ্ছিলো তখনই চৈতির গলা পেয়ে বলল,’এক মিনিট।’
চৈতি হাসলো।বুঝতে পারলো চেঞ্জ করছে হয়তো।উঁকি দেবে?না,থাক।খারাপ ভাবতে পারে।প্রথমেই বাজে ইম্প্রেশন তৈরি করা যাবে না।এমন কান্ড করবে যে মাল’টা নিজে এসেই ধরা দেবে।আপনমনেই হাসলো চৈতি।রেভান টিশার্টটা গায়ে গলিয়েই দরজা খুললো।সহাস্যে বলল,’জ্বি,ভাবি বলুন।’
‘দুপুরের খাবার খেতে আসুন।আপনার বন্ধু অপেক্ষা করছে।’
‘আসছি,ভাবি।’
চৈতি মাথা নেড়ে চলে গেলো।রেভান রুমে এসে চুলের পানিটা ভালোমতো মুছে নিয়ে ডাইনিং রুমে খেতে চলে গেলো।সাইফুল আর চৈতি আগেই বসেছিলো।রেভান গিয়ে বসতেই সাইফুল বলল,’আজকের এইসব রান্না তোর ভাবি করেছে।ওর হাতের রান্না যে কি মজা!’
রেভান হেসে বলল,’তাই নাকি!তাহলে তো ভালোই।তোর কপাল খুলে গেলো ভাবির মতো বউ পেয়ে।’
রেভানের কথা শুনে সাইফুল গর্ববোধ করলো।তার মানে মিলাতকে ডিভোর্স দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো না।কোনো অংশেই মিলাত চৈতির মতো হতে পারবে না।কোন দুঃখে যে মিলাতকে পছন্দ করেছিলো সাইফুল বুঝতে পারে না।খেতে খেতেই রেভান বলল,’তোদের তো অনেকদিনের প্রেম ছিলো,তাই না?বলেছিলি আমাকে।’
রেভানের কথা শুনে থতমত খেলো সাইফুল।কারণ ওকে চৈতির কথা নয় মিলাতের কথা বলেছিলো।আর ও এখন চৈতিকেই মিলাত ভাবছে।সাইফুল কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতি হেসে বলল,’হ্যা,ভাইয়া।ওর আর আমার অনেকদিনের প্রেম,গভীর প্রেম।’
রেভান হাসলো চৈতির কথা শুনে।এরপর খাওয়ায় মনযোগ দিলো।
সাইফুল চৈতির দিকে তাকাতেই বুঝলো ও এখানে মিলাতের ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে চায় না।তাই আর কিছু বলল না।চুপ করে খেতে থাকলো।
পুরো ওয়ার্ডে হইচই পড়ে গেছে।তিনশো সাতাশ নম্বর কেবিনের রোগীকে পাওয়া যাচ্ছে না।রোগীর নাম মিলাত বিনতে হারুন।বয়স চব্বিশ।উচ্চতা পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি।রোগীর মা কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছেন আর রোগীর বাবা দিগ্বিদিক ছুটছেন মেয়ের খোঁজে।হঠাৎ হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয় এসে বলল বিল্ডিংয়ের ছাঁদের রেলিঙের ওপর মিলাত দাড়িয়ে আছে।সবাই বুঝে গেলো ও আবার সুইসাইড করার চেষ্টা করছে।কেউ কেউ ছাদে যেতে চাইলেও লাভ হলো না।ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে মিলাত।হাসপাতালের সামনে ইতিমধ্যে অনেক মানুষের উপস্থিতি।সবাই বলছে নিচে নামার জন্য কিন্তু মিলাত কারো কথাই শুনছে না।দাঁড়ানো থেকে রেলিঙের ওপর বসে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো।
অনুরুপ হাসপাতালে আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলো তখনই একটা ফোনকল এলো।ওপাশ থেকে জানা গেলো গতকাল সুইসাইড এটেম্পট করা মেয়েটা আবারও সুইসাইডের চেষ্টা করছে।খবরটা জেনে দ্রুতই বেরিয়ে পড়লো ও।আর মনে মনে প্রার্থনা করলো কোনো খারাপ কিছু যেন নাহয়।
হাসপাতালে পৌঁছেই ছাঁদের দিকে চোখ গেলো অনুরুপের।মেয়েটা এখনও একই জায়গায় বসে আছে।মেয়েটার বাবা কাঁদতে কাঁদতে তাকে নামতে বলছেন।অনুরুপ অন্যকিছু ভাবলো।কিভাবে মেয়েটাকে নামানো যায় ওখান থেকে!ছাঁদের দরজা ভাঙা ছাড়া উপায় নেই তবে রোগীর মানসিক অবস্থা ভালো না।এমন করলে যদি লাফ দেয় তাহলে তো সবশেষ।দশতলার বারান্দা থেকে যদি ছাঁদে ওঠা যায় কোনোভাবে তাহলেই হবে।কিন্তু এটা অনেক রিস্কের ব্যাপার।সিনিয়র ডাক্তার,নার্স কেউই সায় দিচ্ছেননা এই ব্যাপারে।অনুরূপ সবাইকে শান্ত করে বলল সে একবার চেষ্টা করে দেখবে।এভাবে কাউকে চোখের সামনে মরতে দেখতে পারবে না কিছুতেই।অবশেষে সবাই নিমরাজি হলো।দশতলার বারান্দা থেকে পানির পাইপ লাইন বেয়ে বহু কষ্টে উপরে উঠে এলো অনুরুপ।ডাক্তারি পড়তে আসার আগে বাবার ইচ্ছায় একবার আর্মিতে যোগ দিয়েছিলো সে কিন্তু একবছর পরই পালিয়ে এসেছিলো।এত ট্রেইনিং নিতে পারছিলো না।তবে জীবনের এই পর্যায়ে এসে এসব কাজে লাগবে একবারও ভাবে নি অনুরুপ।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১
ছাঁদে আলো নেই।চারপাশ থেকে আশা আবছা আলোয় অনুরুপ দেখতে পেলো ছাঁদের রেলিঙের ওপর স্থির চিত্তে বসে আছে একটি মেয়ে।চুপচাপ ওর দিকেই এগুচ্ছিলো।কিন্তু হঠাৎ মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো।হয়তো এখনই লাফ দেবে।বুকের ভেতরটা ছলকে উঠলো অনুরুপের।এতকাছে এসেও কি মেয়েটাকে বাঁচাতে পারবে না?