বিকেলের প্রণয় পর্ব ২১

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২১
Arshi Ayat

দ্রুত নামতে গিয়ে শাড়ি পায়ে পেচিয়ে অসাবধানতায় সিঁড়ি থেকে পড়ে কপাল কেটে গেছে নাইমার।ছয়টা সেলাই লেগেছে।ওর সাথে ওর মা,বাবা এসেছে।তারা অনুরুপকে দেখে কিছুটা বিব্রত হলেন।প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বললেন না।অনুরুপও যেন হাঁপ ছেড়ে বাচলো।প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হলো।হাসপাতালের বাইরে এসে হঠাৎই নাইমা বাবা-মাকে বলল,’তোমরা যাও।আমি আসছি।’
‘কোথায় যাবি?’সালেহা বেগম প্রশ্ন করলেন
‘ওয়াশরুমে।’
‘ও আচ্ছা,যা।’

নাইমা আর দাঁড়ালো না।দ্রুত হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে অনুরুপের কেবিনের দিকে এগোলো।চেক-আপ শেষ করে অনুরুপ আসছিলো বিপরীত দিক থেকে।ওকে দেখে নাইমা পথরোধ করে দাঁড়ালো।ভূমিকা ছাড়াই ঝাঁঝালো গলায় প্রশ্ন করলো,’আমাকে রিজেক্ট করলেন কেন?আমি কি দেখতে খারাপ?’
অনুরূপ কিছুটা বিব্রতবোধ করলো এমন প্রশ্নে।তবুও শান্ত গলায় বলল,’দেখুন,মিস আপনি দেখতে খারাপ নন।যথেষ্ট সুন্দরী তবে আমি তো সুন্দরী খুঁজি নি।’
‘কি খুঁজছেন তাহলে?’
‘মায়াবতী।’
‘পেয়েছেন?’
এক মুহুর্তের জন্য মিলাতের চেহারাটা ভেসে উঠলো অনুরুপের চোখের সামনে।অনুরুপ কিছু বলল না।হাসলো কেবল।নাইমার আর বোঝার বাকি রইলো না।নিশ্চুপে সরে এলো অনুরুপের সামনে থেকে।হাসপাতাল থেকে বের হতে হতে চোখের পানি মুছলো।তারপর বাবা-মায়ের সাথে ফিরে গেলো বিয়ে বাড়িতে।
বেলা সাড়ে তিনটায় চেম্বার থেকে বের হয়ে ফোন চেক করতেই অনুরুপ দেখতে পেলো মিলাতের দু’টো মিসডকল।তড়িঘড়ি করে কল ব্যাক করলো সে।মিলাত তখন নিজের বারান্দার দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিলো আর আকাশ দেখছিলো।ফোনের শব্দ পেয়ে ঘরে এসে বিছানার ওপর রাখা ফোনটার দিকে চাইতেই দেখলো অনুরুপের কল।দ্রুত রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অনুরুপের গলা পাওয়া গেলো।সে কৈফিয়তের ভঙ্গিতে বলল,’স্যরি,স্যারি আসলে হঠাৎ একটা ইমার্জেন্সি পড়ে গিয়েছিলো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ইট’স ওকে।বাসায় যাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ।আপনি কি করছেন?’
‘কিছু না।বোরিং লাগছে।উপন্যাসের বইগুলো সব পড়া শেষ।নতুন বই কেনা লাগবে।’
‘থ্রিলার বই পছন্দ করেন?’
‘হ্যা,থ্রিলারই ভালো লাগে বেশি।’
‘ঠিকাছে আমি কল করলে পনেরো মিনিট বাদে একটু বাসার নিচে নামবেন।’
‘কেন?’
‘নামলেই দেখবেন।’
‘আচ্ছা।’

ফোন রাখার পর পনেরো মিনিটেই চলে এলো অনুরুপ।মিলাতকে ফোন করে নিচে নামতে বলল।মিলাত মাথায় একটা ওড়না পেচিয়ে নিচে নামলো।অনুরুপ গাড়ি থেকে দু’টো বই বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,’নিন,এগুলো পড়ুন।গাড়িতে এই দু’টোই ছিলো।এগুলো পড়া শেষ হলে বলবেন আরও এনে দিব।আমার লাইব্রেরিতে অসংখ্য বই আছে।মেডিকেলে ঢোকার আগে পড়েছি এখন আর পড়া হয় না।’
মিলাত বইগুলো হাতে নিয়ে বেশ খুশি হলো।প্রফুল্ল স্বরে বলল,’অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার।’
অনুরুপ স্বভাবসুলভ হাসলো।মিলাত আবারও বলল,’বাসায় আসুন না!’
‘না,না আজ না।অন্য একদিন।’
‘আসুন না,প্লিজ।’
মিলাতের মুখের দিকে চেয়ে অনুরুপ না করতে পারলো না।ও বাসায় আসতেই মিনারা বেগম আর হারুন সাহেব ওকে চিনতে পারলো।তারা খুব খুশিও হলেন।এই ছেলেটা ভীষণ ভালো।মিলাতের আজ বেঁচে থাকার পেছনেও এই ছেলের হাত আছে।ছেলেটা সেদিন মিলাতকে না নামিয়ে আনলে কি হতো ভাবতেও ভয় লাগে।
ওদের সাথে টুকটাক গল্প করে চলে গেলো অনুরুপ।মিনারা বেগম বেশ কয়েকবর ভাত খেতে বললেও অনুরুপ খেলো না।অন্য একদিনের আশ্বাস দিয়ে চলে গেলো।
সন্ধ্যায় সাইফুল চা খেতে খেতে বলল,’চৈতি,একটু বসবে।কিছু কথা ছিলো।’

‘বলো।’চৈতি বসলো।
‘তোমার কি হয়েছে?’
‘কি আবার হবে?’
‘এই যে কেমন চুপ হয়ে আছো।আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো।কাছে আসতে দিচ্ছো না।কি হলো তোমার?’
‘কিছু না।’
‘বলো,প্লিজ।না বললে বুঝব কিভাবে?’
‘আমি ডিভোর্স দিব তোমাকে।’
সাইফুল চমকে উঠলো।বিষ্মিত স্বরে বলল,’কি বলছো?’
‘হ্যাঁ।আমার তোমাকে আর ভালো লাগে না।তুমি মিলাতের কাছে ফিরতে পারো।’
‘মানে কি?’
‘মানে হলো আমি এখন অন্য একজনকে পছন্দ করি।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২০

‘কাকে?’
‘তোমার বন্ধুকে।’
‘কোন বন্ধু?’
‘রেভান।’
চৈতির কথা শুনে সাইফুলের মাথা ব্যাথা করতে শুরু করল।সে অনেক চেষ্টা করলো চৈতিকে বোঝাতে কিন্তু চৈতি অনড়।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২২