বিকেলের প্রণয় পর্ব ২২

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২২
Arshi Ayat

চৈতিকে বুঝিয়েও যখন কাজ হলো না তখন রেভানকে কল করলো সাইফুল।রিসিভ করেই গালি দিয়ে বলল,’এত্ত খারাপ তুই?শেষ পর্যন্ত বন্ধুর বউয়ের দিকে নজর দিলি?’
আচমকা অপবাদে অবাক হয়ে গেলো রেভান।ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি বলছিস এসব?’
‘তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক।তোর থেকে এটা আশা করি নি।’
রেভান এবার জোরে ধমক দিয়ে বলল,’কি করেছি আমি ক্লিয়ার করে বল।ফালতু অপবাদ দিবি না।’
‘তুই আর চৈতি নাকি প্রেম করছিস।ও এখন আমাকে ডিভোর্স দেবে তোর জন্য।’
রেভান বিষম খেলো।কাশতে কাশতে বলল,’মাথা ঠিকাছে তোর?আমি তোর বউয়ের সাথে কেন প্রেম করতে যাব?’
‘মিথ্যা বলবি না।চৈতি আমাকে বলেছে সব।’
রেভানের মাথা গরম হলো।ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’ঠিকাছে।আমি তোর বাসায় আসছি।তোর সামনেই তোর বউকে জিজ্ঞেস করব তখন শুনে নিস।’

কথাটা বলেই রেভান ফোন কেটে দিলো।ওর মেজাজ এখন তীব্র ঝড়ের মতো। ফোনটা কেটে দিয়েই ঘরের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালো, যেন নিজের রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবার কথাগুলো মনে পড়ছে, ততবার মনে হচ্ছে মাথার ভেতর আগুনের স্রোত বইছে। কী অবিচার! এমন মিথ্যে অভিযোগ, এমন অপবাদ সে কল্পনাও করতে পারেনি।হঠাৎ মাথায় এলো কয়েকদিন আগের কথা।একটু ভাবতেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সক্ষম হলো সে।তারমানে নিজের কুৎসিত আকাঙ্খা পূরণের জন্য চৈতি মিলাতের নামে মিথ্যা বলেছে যেন ও মিলাতকে ভুল বুঝে দূরে সরে যায়!রেভান সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।এই মুহুর্তে নিজেকে জুতো পেটা করতে ইচ্ছে করছে।কেন যাচাই না করে রাগের বশবর্তী হয়ে মেয়েটাকে ওমন কঠিন কথাগুলো শোনালো?এখন কোন মুখে দাঁড়াবে মেয়েটার সামনে?নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই দোষারোপ করতে শুরু করলো রেভান।তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো কাল পৌঁছেই মিলাতকে স্যরি বলবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চৈতি নিজের লাগেজ ঘুছিয়ে ফেললো।এখন মূখ্য কাজ হচ্ছে বাবার বাড়ি যাওয়া।সাইফুলকে বলার প্রয়োজন মনে করলো না সে।বাসা থেকে বেরিয়ে হারুন সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো চৈতি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকালেই ঘুম ভেঙেছে মিলাতের।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই মুখে এসে লাগলো রোদের উষ্ণতা।এক টুকরো হাসি দেখা গেলো ঠোঁটের কোণে।আজ ভার্সিটিতে যাওয়া লাগবে।মাস্টার্সের ফর্ম তুলতে হবে।ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো মিলাত।মা নাস্তা বানাচ্ছে দেখে মিলাত বলল,’দেখি,দাও আমাকে।আমি করছি।’
‘তোর এগুলো করা লাগবে না।তুই একটু চা বসা।আদা,লবঙ্গ আর লেবু দিস।তোর বাবার ঠান্ডা লেগেছে হঠাৎ।’
মিলাত চায়ের পানি বসাতে বসাতে জানতে চাইলো,’কিভাবে?’
‘জানি না।হঠাৎ সকাল থেকে বলছে গলা ব্যাথা।’
‘ঠিকাছে গরম পানি,চা আর সব গরম গরম খাওয়ায়।চলে যাবে।’
‘ওটাই করছি।’
‘আব্বু কি অফিস যাবে?’
‘হ্যাঁ,রেডি হচ্ছে।’
মিলাত চা নিয়ে বাবার ঘরে গেলো।হারুন সাহেব গলার টাই বাঁধছেন।মিলাত এগিয়ে এসে বলল,’আব্বু,আমি বেঁধে দেই?’

হারুন সাহেব আপ্লূত হয়ে বললেন,’দে,মা।’
মিলাত সুন্দর করে বাবার টাই বেঁধে দিলো।হারুন সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’সবসময় খুশি থাকিস,মা।কখনোই নিজেকে ছোটো ভাববি না।বাবা তো আছিই।’
মিলাতের চোখে পানি জমলো।তবুও নিজেকে সামলো নিয়ে কপট রাগের ভঙ্গিতে বলল,’ঠান্ডা বাধিয়েছ কিভাবে?এখানো বাচ্চামি করো কেন?’এই নাও চা খাও।সুস্থ থাকতে হবে।’
হারুন সাহেব হাসলেন।বাবার হাসি দেখে মিলাতও হেসে ফেললো।
হারুন সাহেব নাস্তা খেয়ে অফিসে যাবার পরপরই চৈতি আসলো।ওকে দেখে মিনারা বেগৃ চটে গেলেন।কঠোর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,’কেন এসেছিস?’

চৈতি মায়ের পেছনে দাড়িয়ে থাকা মিলাতের দিকে চেয়ে বলল,’শুনলাম তোমাদের আদরের মেয়ে নাকি কষ্টে ম’রে যাচ্ছে জামাইর শোকে।বোন হয়ে বোনের কষ্ট কি দেখতে পারি?তাই তো ছেড়ে দিয়ে এলাম গাধাটাকে।গিয়ে আবার ঝুলে পড়তে বলো।’
মিনারা বেগম সাথে সাথে চড় লাগালেন মেয়ের গালে।চিৎকার করে বললেন,’চলে যা এখান থেকে।’
‘আমার সম্পত্তির ভাগ দাও তাহলেই যাব।’
‘কিসের সম্পত্তি?তোকে ত্যজ্য করেছি।’
‘ওটা মুখে।কাগজে কলমে হয় নি।এত কথা শুনতে চাই না আমি সম্পত্তির ভাগ চাই ব্যস।’
‘পাবি না।’
‘দেখা যাক।যতদিন আমি আমার সম্পত্তি না পাই ততদিন আমি এখানেই থাকব।’

এটা বলেই মিনারা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে গেলো চৈতি।মিনারা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন।কি এমন অপরাধের শাস্তিতে সৃষ্টিকর্তা তাকে এমন অভিশাপ দিলেন!
মিলাত মা’কে সামলে ঘরে দিয়ে এসে নিজেও নিজের ঘরে গেলো।ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। বুকটা ধড়ফড় করছে, শ্বাস যেন আটকে আসছে। চৈতির কথাগুলো বারবার কানে বাজছে, আর সেই তাচ্ছিল্যের হাসিটা মনে পড়লেই গা শিউরে উঠছে। মানুষ কীভাবে এত নিকৃষ্ট হতে পারে? এক মুহূর্তে চৈতির ব্যবহার মিলাতের মনকে এমনভাবে নাড়া দিয়ে গেল যে, নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না সে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২১

বিছানায় বসে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মিলাত। চোখ বুজলেই মনে হচ্ছে চৈতির কথাগুলো তার আত্মসম্মান আর মানসিক শান্তিতে আঘাত করছে। নিজের বোন হয়েও কীভাবে কেউ এমনটা করতে পারে? রাগ, হতাশা আর কষ্ট মিলে মিশে একটা অস্থিরতা তৈরি করেছে তার ভেতরে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৩