বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৩
Arshi Ayat
বেশ কিছুক্ষণ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো মিলাত।যখনই জীবনে একটু শান্তি খুঁজতে চায় তখনই যেন শান্তি আরও ছুটে পালায়।কেন?
গোসল শেষ করে কোনরকম তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো ও।আজ আর নাস্তা খাওয়ার মন নেই।এই বাসাটাই যেন দমবন্ধ লাগছে এখন।
রেভান দুপুর নাগাদ পৌঁছেছে ঢাকায়।যদিও আজ আসার কথা ছিলো না।দু’দিন পর বিয়েতেই আসবে ভেবেছিলো তবু আসতেই হলো।ট্রেন থেকে নেমে সিএনজিতে উঠে ভাবলো আগে কি করবে?সাইফুলের বাসায় যাবে নাকি মিলাতের সঙ্গে দেখা করবে?ভাবতে ভাবতেই মনে হলো মিলাতের সঙ্গে দেখা করাট বেশি জরুরি।সত্যিটা জানা দরকার।কিন্তু এখন মিলাতকে পাবে কোথায়?রেভান তৎক্ষনাৎ মিলাতকে ফোন করলো।ফোন বাজলো ঠিকই তবে রিসিভ হলো না।এভাবে বেশ কয়েকবার কল করার পরও রিসিভ না হওয়ায় রেভান চিন্তায় পড়ে গেলো?এখন কি করবে?মেয়েটা কি ইচ্ছা করে ফোন ধরছে না?ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠলো ওর।মিলাত ফোন করেছে।তড়িঘড়ি করে রিসিভ করেই বলল,’হ্যালো,মিলাত।একটু দেখা করতে পারবে এখন?’
মিলাত গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলো,’কি দরকারে?’
‘আমার কিছু উত্তর জানার ছিলো।’
মিলাত একটু ভেবে বলল,’ঠিকাছে।কোথায়,কখন?’
‘এখনই।তুমি কোথায় আছো?’
‘আমি ভার্সিটিতে এসেছিলাম।এখন বের হচ্ছি।’
‘তাহলে টিএসসিতে চলে যাও।আমি আসছি।’
‘ঠিকাছে।’
রেভান দ্রুতই আসার চেষ্টা করলো তবে জ্যাম ঠেলে পৌঁছাতে একটু দেরিই হয়ে গেলো।অনেকদিন পর মিলাতকে চোখের সামনে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো।তবে ওর মুখশ্রী কাঠিন্যে ভরপুর।হবে না-ই বা কেন?সেদিন কি কম কথা শুনিয়েছিলো?মনে পড়তেই নিজের ওপর রাগ হয় রেভানের।তবু সাহস সঞ্চার করে মিলাতের সামনে এসে দাঁড়ালো।ওকে দেখেই মিলাত কাটকাট স্বরে বলল,’কি জানতে চান বলুন।’
‘কোথাও বসি?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘আমার দাঁড়িয়ে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে না।আপনার সমস্যা হলে আপনি এখানে বসতে পারেন।’
রেভান একটু মিনতির স্বরে বলল,’মিলাত প্লিজ,একটু সহজ হও।’
‘দেখুন,আমার আপনার সাথে কথা বলার বা দেখা করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না।শুধুমাত্র আপনার একটা উপকারের কথা মনে করে বাধ্য হলাম।’
রেভান দুঃখ পেলেও ধৈর্য ধরলো।যথাসম্ভব নরম কন্ঠে বলল,’ঠিকাছে,তোমার যেটা ইচ্ছা।’
একটা হতাশার শ্বাস ফেলে ফের প্রশ্ন করলো,’আঙ্কেল কেমন আছেন এখন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ,ভালো।’
‘আসলে সেদিন ওভাবে বলাটা আমার উচিত হয় নি।আ’ম স্যরি মিলাত।তোমার বান্ধবীর বলা কথাগুলো শুনে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো তাই…’
‘ওয়েট,ওয়েট।কোন বান্ধবী?’মিলাত ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো।
‘তোমার বান্ধবী চৈতি।’
রেভানের কথা শুনে মিলাত কপালে হাত দিয়ে পাশের বেঞ্চটায় বসে পড়লো।এতটাই বাকরুদ্ধ হয়েছে যে কথাই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।রেভানও ওর পাশে বসে ওকে লক্ষ্য করে চিন্তিত স্বরে বলল,’কি হয়েছে তোমার?’
‘নামটা যেন কি বললেন?’মিলাত কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলো।’
‘চৈতি।’
‘ও মাই গড!’মিলাতের চোখে পানি চলে এলো।রেভান মরিয়া হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি হলো বলো,প্লিজ।চুপ থেকো না।’
মিলাত অশ্রুচোখে ওর দিকে চেয়ে কম্পিত স্বরে বলল,’চৈতি আমার বোন।’
এবার শক লাগলো রেভানের।সে অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,’আসলেই?’
মিলাত মাথা নাড়লো।বলল,’হ্যাঁ,আমি জানি না ও আপনাকে কি বলেছে।তবে ওর জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।ও আমার জীবনটা তছনছ করে ফেলেছে।ওর জন্য আমি আমার সংসার হারিয়েছি।’
‘মানে?’
‘ওর স্বামী সাইফুলের দ্বিতীয় বউ ও।প্রথম বউ আমি।বিয়ের ছয়মাসের মধ্যে সাইফুল আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করে।ওদের মধ্যে পরকীয়া প্রেম চলছিলো আমি জানতাম না।অথচ আমাদের প্রেম ছিলো পাঁচ বছরের।ও এত ভালোবাসতো আমায় যে আমি কল্পনাও করতে পারি নি এমন কিছু ঘটবে।কিন্তু বেশি ভালোবাসা কপালে সয় না!ডিভোর্সের পর আমি ভেঙে পড়ি,আর সবচেয়ে কষ্ট হয় নিজের বোনের বেইমানি দেখে।তাই সুইসাইড করার চেষ্টা করি।’এতটুকু বলে থামে মিলাত।দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালায়।পাশ থেকে রেভান পুরোপুরি থ বনে আছে।
নিজেকে শান্ত করে মিলাত গম্ভীর স্বরে বলল,’আশা করি আপনার যা জানার আপনি জেনেছেন।ও আপনাকে কি বলেছে আমি জানতে চাই না।শুনলে হয়তো ঠিক থাকতে পারব না।আরেকটা কথা আমাকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখবেন না।আমি আর কখনোই ভালোবাসা নামক ভাঙাগড়ার সম্পর্কে জড়াতে চাই না।আসি।’
নিজের কথাগুলো শেষ করে মিলাত আর দাঁড়ালো না।চলে গেলো সেখান থেকে।রেভান এখনও বাক শূন্য।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অনুরুপ ভাবলো আজ মিলাতের সাথে দেখা করা যায় কোন বাহানায়!আঙ্কেলকে দেখতে এসেছি বললে কেমন হয়?এসব ভাবতে ভাবতেই যখন এগুচ্ছিলো তখন ফুটপাত ধরে মিলাতের মত কাউকে ধীর গতিতে হাঁটতে দেখে গাড়ি থামালো।ভালো মত পরোখ করে দেখে বুঝলো এটা মিলাতই।একটু খুশি হয়ে ডাক দিলো,’মিলাত,শুনছেন?’
মিলাত শুনতে পেলো না অনুরুপের ডাক।আসলে সে হাঁটছে ঠিকই তবে ঘোরের মধ্যে।অনুরুপ আরেকবার ডাকলেও যখন শুনলো না তখন ও গাড়ি থেকে নেমে মিলাতের কাছে গেলো।সামনে দাঁড়িয়ে বলল,’এই যে,মিলাত!শুনছেন?’
মিলাতের ধ্যান ভাঙলো।সে বিষন্ন স্বরে বলল,’ওহ!খেয়াল করি নি।’
অনুরুপ চিন্তিত স্বরে বলল,’ঠিকাছেন আপনি?’
মিলাত মাথা নাড়লো।তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছে না ও ঠিক আছে।অনুরুপ নরম কন্ঠে বলল,’চলুন,আপনাকে পৌঁছে দি।’
অন্যসময় মিলাত হয়তো একটু আপত্তি করতো তবে আজ করলো না।শরীরটা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে।ভালো লাগছে না কিছুই।কিন্তু ঘরে গিয়েও তো শান্তি নেই।কি করবে ও?
মিলাতকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে অনুরুপ বলল,’যাই হয়ে যাক ভেঙে পড়া যাবে না।শক্ত হতে হবে।নিজেকে সামলে নিন,প্লিজ।’
মিলাত মলিন হাসলো।বলল,’ধন্যবাদ,ডাক্তার।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২২
এই দৃশ্যটুকু খুব তীক্ষ্ণ নজরে ছাদ থেকে দেখলো চৈতি।হঠাৎই কুটিল হাসি ফুটে উঠলো মুখে।সে বড়বড় কদম ফেলে নেমে এলো নিচে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো মিলাতের জন্য।মিলাতকে উপরে উঠে আসতে দেখে বেশ রসালো গলায় বলল,’তুই দেখি আমাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিস।তোকে এখন থেকে গুরু বলব।সাইফুল ছাড়ার পরই রেভান আবার এখন আরেকটা!তবে যা বলিস এই ছেলেটা মারাত্মক হট!তবে আমার রেভানের থেকে কম।শোন,তোকে আমি ছেড়ে দেব যদি রেভান আমার হয় আর যদি ও আমার না হয় তাহলে তোকে শেষ করব যেন ও তোকে না পায়!