বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৮
Arshi Ayat
সাইফুল সকালে উঠেই তৈরি হয়ে নিলো।আজ অফিসে হাফ বেলা করে মিলাতের ইউনিভার্সিটিতে যাবে।ওকে যেভাবেই হোক মানিয়ে নিতে হবে।ও এখনো বুঝতে পারছে না কেন যে মিলাতকে ছেড়ে প চৈতির মোহে ডুবে গেলো!প্রেম,রুমডেট পর্যন্ত ঠিক ছিলো,বিয়েটা না করলেই হতো।কয়েকমাস মজামাস্তি করে আবার মিলাতের কাছে ফিরতো।ওই যেমন ঘরের খাবারে অরুচি এলে মানুষ বাইরে খেতে যায় কিন্তু দিনশেষে আবার ঘরের খাবারেই ফিরতে হয় তেমনই করা উচিত ছিলো।এবার যদি মিলাতকে মানিয়ে ফেলতে পারে তো এমন ভুল জীবনেও করবে না।
শাহবাগ নেমে পছন্দমত কিছু ফুল দিয়ে ছোটোখাটো একটা তোড়া বানিয়ে নিলো রেভান।এবার খুশিমনে মিলাতের ইউনিভার্সিটির দিকে চললো।ওকে কি কি বলবে সেসব কথা মনে মনে সাজিয়ে নিলো।
মিলাত প্রতিদিনের মত ক্লাস শেষ করে এসে ক্যান্টিনে বসলো।খুদা লেগেছে তাই একটা রঙ চা আর শিঙাড়া অর্ডার দিলো।খেয়ে একটা ইন্টারভিউতে যেতে হবে।বেশ ভালো কোম্পানি।এবার ইন্টারভিউতে ভালো মত দিতে পারলেই হলো।অবশ্য তেমন কোনো প্রিপারেশন নেয়ও নি ও।চা আর শিঙাড়া দ্রুত শেষ করে উঠে পড়লো মিলাত।ক্যাম্পাস ছেড়ে বের হয়ে পা বাড়াতেই কেউ একজন ওর হাত ধরে ফেললো।মিলাত ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরতেই দেখলো সাইফুলকে।সাথে সাথে হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেললো আর রাগত্ব স্বরে বলল,’তুই এখানে কেন?’
‘তোমার সাথে কথা আছে।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘আমি তো ফোনেই বলেছি আমার তোর সাথে কোনো কথা নেই।’
‘প্লিজ,শোনো একটু।আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।’
‘কি বুঝাবি তুই?যে পরকীয়া কিভাবে করেছিস সেটা?’
‘না,তোমার বোন কিভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে সেটা।’
‘আমার শোনার কোনো ইচ্ছে নেই।’
‘না থাকলেও শুনতে হবে।আমার কথা না শুনে তুমি যেতে পারবে না।’
মিলাত কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটা লাগালেই সাইফুল পথ আঁটকে ফেললো।এরমধ্যেই চলে আসলো রেভান।এমন দৃশ্য দেখে সহজেই বুঝতে পারলো সাইফুল কেন এসেছে।ওর রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ হলো।এগিয়ে গিয়ে হঠাৎই নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে বলল,’তোর সাহস কি করে হয় ওকে ডিস্টার্ব করার?’
সাইফুল তেড়ে এসে বলল,’আমি ওকে ডিস্টার্ব করছি না।ও আমার বউ।’
ওর উত্তর শুনে রেভান আরেকটা চড় মারলো সাইফুলের গালে।বলল,’ভুল।শুধরে নে ও তোর বউ ছিলো এখন নেই।এখন ওই চৈতি ডাইনিটা তোর বউ।’
‘না,তুই আমাদের মাঝে আসছিস কেন?’
‘কারণ তুই ওর কদর করতে পারিস নি।নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে সরে পড়।নয়তো বেশি বাড়াবাড়ির ফল একদম বুঝিয়ে দেব।আমাকে তো চিনিসই।’
সাইফুল ভয় পেলো কারণ ও জানে রেভান ও ওর ফ্যামিলি বেশ ভালোই প্রভাবশালী এবং রাজনীতির সাথে জড়িত।ওকে এখন ক্ষেপানো ঠিক হবে না।তাই আর কোনো উচ্চবাচ্য না করে সেখান থেকে সরে পড়লো সাইফুল।ও চলে যাওয়ার পর রেভান বলল,’ও যদি আর কখনো বিরক্ত করে আমাকে বলবে।’
মিলাত দায়সারা ভাবে বলল,’আচ্ছা।’
তারপর হাতঘড়িতে চেয়ে,আমার একটু কাজ আছে।আমাকে যেতে হবে।’
রেভান বলল,’কি কাজ?’
‘ইন্টারভিউ।’
‘কোন কোম্পানি?’
‘শাহজাদী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি।’
‘ও আচ্ছা!ওদের সাথে আমাদের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আছে।আমি বলে দিলেই হবে।’
রেভানের কথা শুনে মিলাতে চোখমুখে কঠোর ভাব ফুটে উঠলো।ও কাঠ কাঠ স্বরে বলল,’আমি চাই না আপনি কিছু বলুন।আমি নিজের যোগ্যতায় পেতে চাই।’
রেভান মৃদু হাসলো।তারপর মাথা নেড়ে বলল,’ঠিকাছে,তাই হোক।অল দ্য বেস্ট।তবে পাঁচটা মিনিট আমাকে দিতে হবে।’
‘বলুন।’
‘তোমার যেহেতু দেরি হচ্ছে হাঁটতে হাঁটতেই বলি।’
‘চলুন।’
‘সবার প্রথমে এই ফুলগুলো নাও।’
মিলাত ইতস্তত বোধ করলো।বলল,’নিতে পারব না।’
‘কেন?ফুল পছন্দ না?’
‘পছন্দ কিন্তু সবার থেকে নেই না।’
‘সবার থেকে নিতে তো বলি নি।’
‘আপনিও সবার কাতারেই পড়েন।’
‘তাহলে কার থেকে নিবে?’
‘ফ্যামিলি মেম্বার’স।’
‘ফ্যামিলি মেম্বার্সের মধ্যে কি আমি আসতে পারি?’
‘না।’
‘কেনো না?’
‘স্কোপ নেই।’
‘আছে।’
‘কিভাবে?’
‘হাসবেন্ডও কিন্তু ফ্যামিলি মেম্বারই।’
‘হ্যাঁ জানি তো!’
‘ওই তো ওটাই হবো।’
কথাটা শুনে মিলাত রেভানের দিকে তাকালো ভালো করে একবার তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,’পারবেন না।’
‘কেন তুমি আর বিয়ে করবে না?’
‘আমি অলরেডি দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছি।’
রেভান ওর কথা শুনে যেন মজা পেলো এমন ভঙ্গিতে বলল,’আমি জানি তুমি এটা কেন বলেছো।আমি যেন আর চেষ্টাই না করি তাই।’
‘বিশ্বাস না করলে কিছু করার নেই।আমরা কোর্ট ম্যারেজ করেছি।আমার হাজবেন্ড চট্টগ্রাম গেছে।ওর বাবা মা’কে জানাতে।দ্রুতই ওরা ঢাকায় আসবে।তখন আবার বিয়ে হবে।’
রেভান এবার গম্ভীর স্বরে বলল,’এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে।’
‘আমি সত্যি বলছি।সবকিছু হুটহাট হয়ে গেছে।’
‘আমাকে একটা প্রমাণ দাও যাতে আমার বিশ্বাস হয়।’
‘এখন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই তাই দেখাতে পারলাম না।তবে দাওয়াতের কার্ড পাঠাবো।আসবেন অবশ্যই।’
রেভান ফুলগুলো ছুঁড়ে ফেল দিলো।তারপর উত্তপ্ত স্বরে বলল,’সেদিন তো খুব বললে আর জড়াবে না সম্পর্কে।তাহলে এটা কি?নাকি আমাকে রিজেক্ট করার কৌশল ছিলো কেবল?আমি কোন দিক থেকে কম?তোমার স্বামী কি আমার থেকে ভালো?’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৭
মুহুর্তেই অজস্র প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে লাগলো মিলাত।কিন্তু কিছু করার নেই এটাই নিয়তি।মিলাত রেভানকে স্বান্তনার স্বরে বলল,’ছাড়ো,তুমি আমার থেকে ভালো….’
বাকিটুকু শেষ করতে পারলো না মিলাত।তার আগেই রেভান চিৎকার করে বলল,’আউট!’
মিলাত আর দাঁড়ানো সাহস পেলো না।দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
