বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩১

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩১
Arshi Ayat

মিলাত লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে হাসলো অনুরুপের এমন দুষ্টু কথায়।অনুরুপ ভীষণ মজা পেলো।হাসতে হাসতে রুমে চলে গেলো।টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে এসে চেয়ার টেনে বসলো।মুখোমুখি মিলাতও বলল।সহজ ভঙ্গিতে বলল,’নুডুলস করেছি।আর কিছু মাথায় আসছিলো না।’
‘আমিও তাই করতাম।আসলে ক্ষুধা লেগেছে বেশি তাই জটিল কিছু রান্না করাও সম্ভব না।’
‘হু,খাওয়া শুরু করুন।’
নুডুলস খেতে খেতে মিলাত বলল,’আমার ফেবারিট ফুড কি জানেন?’
‘কি?’

‘নুডুলস।কারণ এটা পেটে ইন্সট্যান্ট শান্তি দেয়।’
অনুরুপ হাসলো।বলল,’তুমি রাঁধতে পারো না?’
‘পারি তবে এক্সপার্ট না।’
‘সমস্যা নেই আমার মা আমাকে সব রান্না শিখিয়েছেন।’
ওর কথা শুনে মিলাত উৎফুল্ল স্বরে বলল,’ওয়াও!গ্রেট।শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখতে হবে।’
‘স্বামীর থেকেও শিখতে পারো।’
‘স্বামী তো ব্যস্ত মানুষ।’
‘সপ্তাহে একদিন স্বামীটা পুরোপুরি ফ্রী থাকে।সেদিন রান্নার ক্লাসটা করতেই পারো।’
মিলাত হেসে ফেললো।বলল,’কিন্তু আমার বাবা তো এক্সট্রা ক্লাসের পারমিশন দিবে না।’
‘পারমিশন আমি নিয়ে নেবো সমস্যা নেই।’
‘আচ্ছা।’
খাওয়া শেষে অনুরুপ বলল,’তুমি বারান্দায় বসো,আমি কফি নিয়ে আসি।’
‘আমি খাব না।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ওকে আমার জন্যই আনি তাহলে।’
মিলাত অনুরুপের মাঝারি সাইজের বারান্দায় ঝুলন্ত দুলনায় বসলো।দেখতে লাগলো কি কি গাছ আছে ওর কাছে।বেশিরভাগেরই ফুল গাছ।গোলাপ,অর্কিড,বেলি,রেইন লিলি সহ আরও বেশকিছু গাছ আছে।কয়েকটা তো ও চিনতেও পারলো না।
অনুরুপ কফি নিয়ে এসে ওর পাশেই বসলো।কফিতে ছোটো একটা চুমুক দিয়ে বলল,’আমার আজ রাতের ডিউটি।আটটায় ঢুকবো ডিউটিতে।সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এখানেই থাকো।যাবার সময় ড্রপ করে দেব।’
‘বাসায় তো কিছুই বলি নি।’
‘বলে দাও আমার সাথে।’
‘ঠিকাছে।’
মিলাত ফোন করলো মিনারা বেগমকে।তিনি রিসিভ করতেই বলল,’মা,আমার আসতে একটু দেরি হবে।অনুরুপের ফ্ল্যাটে এসেছি।ওনার ডিউটি আট’টা থেকে আমাকে তখন বাসায় নামিয়ে দিতে তারপর যাবেন।তুমি চিন্তা করো না,আর বাবাকেও বলে দিও।’

‘ঠিকাছে।অনুরুপকে বাসায় আসতে বলিস।’
‘আচ্ছা,বলব।’
মিলাত ফোন রেখে অনুরুপের দিকে চেয়ে বলল,’মা,আপনাকে বাসায় যেতে বলেছে।’
‘আসব,বাবা মা আসুক তাদের সাথে আসব।’
‘আচ্ছা।’
অনুরুপ হঠাৎই কফির মগটা মিলাতের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,’আমি কিন্তু কফি ভালো বানাই।টেস্ট করবে?’
মিলাত প্রথমে একটু হকচকালো।পরমুহূর্তেই ঠোঁটের সুন্দর একটা হাসি ফুটে উঠলো।হাত বাড়িয়ে কফি মগটা নিয়ে বলল,’দেখি টেস্ট করে।’
মিলাত এক চুমুক দিয়েই তৃপ্তি পেলো।মাথা নেড়ে বলল,’আসলেই ভালো হয়েছে।’
‘এবার দিন আমারটা আমাকে ফেরত দিন।’
‘কেন?আপনিই তো আমাকে দিয়েছেন।’
‘দিয়েছি শুধু টেস্ট করতে।পুরো খেয়ে ফেলতে না।’
মিলাত মুখ ভেঙচে কফির মগটা দিয়ে দিলো।অনুরুপের চোখে দুরন্তপনা,ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।মিলাত খেয়াল করলো সে যে জায়গাটায় ঠোঁট দিয়েছিলো ঠিক সেখান দিয়েই অনুরুপ কফি পান করছে।মিলাত এতক্ষণে বুঝলো কেন এই লোক হুট করে ওকে দিয়ে কফি টেস্ট করালো।পুরো সেয়ানা পাবলিক।
কফি খাওয়া শেষে অনুরুপ বলল,’আমার না মাথা ব্যাথা করছে ভীষণ।আমি একটু শুয়ে থাকি।তুমি এখানেই থেকো,যেও না।’

‘আপনি আমার কোলে মাথা রাখুন।আমি আপনার মাথা মালিশ করে দিই।’
অনুরুপ একফোঁটা বাক্য ব্যয় করলো না সটান মিলাতের খালি কোলের ওপর মাথা রাখলো।যেন এই অপেক্ষাতেই ছিলো কতকাল!
মিলাত সুন্দর করে স্বামীর মাথা ম্যাসাজ করে দিতে লাগলো।অনুরুপের এত আরাম বোধ হলো যে সে ঘুমিয়েই পড়লো।তবে ঘুমানোর আগে নিজের জীবন নিয়ে শুকরিয়া আদায় করলো।যেন এমন জীবনই চেয়েছিলো সৃষ্টিকর্তার কাছে।মেয়েটা এভাবেই কাছে থেকে যাক,পাশে এসে বসুক,গা ছুঁয়ে দিক।
অনুরুপ যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলো মিলাতও হেলায় দিয়ে ঘুমিয়ে আছে ওর হাত এখনো অনুরুপের চুলের ভাঁজে।অনুরুপ একদম ধীরে উঠে বসলো যেন মিলাতের ঘুম না ভাঙে কিন্তু ওর মৃদু নড়াচড়তেই মিলাতের তন্দ্রা ছুটে গেলো।ও কিছুটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,’আপনার মাথাব্যথা সেরেছে?’

‘হ্যাঁ,এখন নেই।ভালো লাগছে।’
‘যাক ভালো হলো।’
উত্তর দিয়েই মিলাত ঘড়ি দেখলো সন্ধ্যা সাতটা বাজে।অনুরুপ উঠে দাড়িয়ে বলল,’চা বানাবো?’
মিলাতের ভীষণ ইচ্ছে করছিলো চা খাওয়ার।অনুরুপের কথা শুনেই ও মাথা নাড়লো।অনুরুপ মৃদু হেসে চলে গেলো চা বানাতে।
পেছন পেছন মিলাতও এলো।অনুরুপ চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে বলল,’তুমি মাঝেমধ্যে এলে ভালো লাগবে।’
‘আসবো।’
এরপর টুকটাক কথা চললো ওদের মধ্যে।মিলাতকে চা খেতে দিয়ে নিজে ডিউটিতে যাবার জন্য তৈরি হয়ে নিলো।
ফ্ল্যাট থেকে বের হবার সময় অনুরুপ মিলাতের হাতে একটা চাবি দিয়ে বলল,’যখন খুশি এসো।’
মিলাত চাবিটা নিয়ে ব্যাগে রাখলো।মনটা ভালো লাগায় ভরে আছে।মানুষটা একটু একটু ব্যাপারে,কথায় ভীষণ খেয়াল করে তবুও কাঙ্ক্ষিত খুশিটা মিলাত হতে পারে না ভাবে আগের কথা!যদি ফের মন ভাঙে,চোখে আসে জল,যদি হয় আকাশ ছোঁয়া অভিমান!

অনুরুপ বুঝতে পারে সবই তাই জোর করে না।অনুভূতি জোর করে অনুভব করানো যায় না।ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে বুকের ভেতর যেমনটা বেড়ে উঠেছে মিলাতের জন্য ওর।
এসি বন্ধ করে দিয়ে সিগা’রেট ধরালো চৈতি।ওর পছন্দের দু’টো সিগারেটের ব্রান্ড হলো ডানহিল আর মার্লবোরো।আপাতত হাতে এখন ধোঁয়া ওড়াচ্ছে মার্লবোরো।রাত বাজে দেড়টার বেশি।অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাশে ভোস-ভোস করে ঘুমাচ্ছে রেল মন্ত্রী মতিউর হাসান।সে নিজেও উন্মুক্তবসনা।চৈতি উঠে এসে বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়ালো।দেখলো নিজের শরীরের সৌন্দর্য!বিধাতা কি নিপুণ হাতে বানিয়েছেন।তার শরীরে প্রতিটি খাঁজে কামনার আগুন।সে নিজেই মুগ্ধ হয় তাতে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩০

সিগারেটে টান দিতে দিতে নগ্ন শরীরে বাথরোব জড়িয়ে রকিং চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো অনেক কিছু।তারপর হাতের কাছে থাকা টেলিফোন নিয়ে ফোন করলো একটা নাম্বারে।ভেসে আসলো রেভানের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর।চৈতি তন্ময় হয়ে শুনলো সে স্বর তারপর রেখে দিলো।সিগারেটের শেষ অংশ অ্যাশট্রে তে ফেলে দিয়ে কাতর স্বরে বলল,’জান,তোমার ক্ষতি করতে আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার তো এটা করতেই হবে।যতোবারই ভাবি তুমি মিলাতকে ভালোবাসো ততবার তোমার প্রতি আমার দয়া আসে না।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩২