বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৩

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৩
Arshi Ayat

নুহা প্রতাপশালী বাবার একমাত্র মেয়ে।খানদানি পরিবারে বেড়ে ওঠা তার।অনার্স শেষ পর্যায় এখনই তার বিয়ের ঘর আসছে বড় বড় পরিবার থেকে তবে নুহার পছন্দ হয় না কাউকেই।এই সপ্তাহেও কেউ আসবে ওকে দেখতে।এসব ব্যাপার এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।দেখা যায় ছেলের পরিবার পছন্দ করে বসে আছে কিন্তু নুহাই রাজি হয় না।এরকম করে বেশ ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব হাতছাড়া হয়েছে।
মিলাত ভেবেছে সারপ্রাইজ দেবে অনুরুপকে।আগামীকাল বাবা-মা চলে গেলে সে ওর পছন্দের কিছু রান্না করে ওর বাসায় চলে যাবে।সারাদিন একসাথে থাকাও হবে।

এদিকে চৈতি করেছে এক ভয়ানক পরিকল্পনা।পাপিয়াকে আগামীকালের জন্য ছুটি নিয়ে নিতে বলল।পুরো বাসায় মিলাত থাকবে একা।চৈতি তিনজনকে ঠিক করলো বাবা-মা বেরিয়ে যাবার পরই যেন ওই বাসায় যায়।তারপর বাকি কাজ আর তাদের বুঝিয়ে দিতে হয় নি।হিংস্রতা আর ললসায় লকলক করে ওঠা দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে সব কিছু।চৈতি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।ভাবলো কাল একবার রেভানকে ফোন করে তার প্রেয়শীর অবস্থাও দেখাবে।দেখা যাক দুই আশিকের মধ্যে কার কতোটা কষ্ট হয়!
মিনারা বেগম ভোরে উঠে নাস্তা বানালেন।বেলা একটু গড়াতেই স্বামী আর মেয়েকেও ডেকে তুললেন।মিলাত আর হারুন সাহেব ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে নাস্তা খেতে বসলো।মিনারা বেগম খেলেন না কারণ তিনি বাসে বমি করেন তাই আর কিছু খান নি।নাস্তা শেষে মিনারা বেগম বললেন,’মাংস রান্না করে রেখেছি ফ্রিজে।গরম করে খেয়ে নিস।আজ নাকি বুয়া আসবে না।’
হারুন সাহেব জিগ্যাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,’কেন?’
‘ওর মেয়ের নাকি জ্বর।’
‘ও আচ্ছা।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিলাত বাবা মা কে অভয় দিয়ে বলল,’আরে তোমরা এত চিন্তা করো না।আমি কি ছোটো বাবু নাকি!’
হারুন সাহেব হেসে বললেন,’হ্যাঁ তুই তো ছোটোই।এখনও তোর জন্য ভীষণ চিন্তা হয়।সাবধানে থাকিস।’
‘আরে বাবা!সাবধানেই থাকব।এবার তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দাও।’
হারুন সাহেব আর মিনারা বেগম যাওয়ার আগে মেয়েকে বিভিন্ন রকমের সবক দিয়ে গেলেন যেমনটা ছোটো একটা বাচ্চা মেয়েকে তারা বাবা-মা বলে যায়।মিলাত আপন মনেই হাসলো।নিজের জন্য এককাপ চা বানিয়ে টিভি ছেড়ে সোফায় পা তুলে আয়েশ করে বসলো।চা’টা শেষ করেই বিরিয়ানি রাঁধবে ঠিক করলো।রেঁধে গোসল করে সেজেগুজে দুপুরে স্বামীর বাড়ি যাবে ঠিক করলো মিলাত।
চা খাওয়ার এক পর্যায়ে হঠাৎই কলিংবেল বাজলো।মিলাত তখন টিভিতে একটা হিন্দি মুভি দেখছিলো।মনযোগ বিঘ্ন হতেই চায়ের কাপটা সামনের টেবিলে রেখে উঠে গেলো সদর দরজার কাছে।লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখার চেষ্টা করেও পারলো না কারণ দরজার সামনে যিনি উপস্থিত তিনি গ্লাসটা হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন।মিলাত বিরক্ত হয়ে ভেতর থেকেই প্রশ্ন করলো,’কে?’

কোনো উত্তর এলো না।মিলাত ফের প্রশ্ন করলো,’পরিচয় না দিলে দরজা খুলবো না।’
তারপরও কোনো উত্তর এলো না।তবে ব্যাক্তিটি কলিংবেল বাজাতেই থাকলো লাগাতার।কিছুটা বিরক্ত,ভয়ের মিশ্রণে দরজাটা খুললো সে।কিন্তু দরজা খুলে প্রথমেই একটা ভ্যাবাচেকা খেলো।ছ’ফুট উচ্চতা,গৌরবর্ণ,বুদ্ধিদীপ্ত মুখশ্রী,রিমলেস চশমার আড়ালে জোড়া ভ্রু ওয়ালা একজোড়া দুষ্টু চোখ,ঠোঁটে চওড়া এক হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার নিজেরই স্বামী।মিলাতের চেহারাখানা দেখাই বুঝা যাচ্ছে সে সারপ্রাইজড!
অনুরুপ পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,’আজ এখানেই থাকব।ফাঁকা শ্বশুরবাড়িতে বউয়ের সাথে জমপেশ রোমান্স করব।উফ!’
নুহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,’আপনি কিভাবে জানেন বাবা-মা বাসায় নেই।’
অনুরুপ একটু থতমত খেয়ে বলল,’জাদু।’
‘তাই নাকি?’
‘হ্যাঁ।’

বলতে বলতেই সোফায় গা এলিয়ে দিলো অনুরুপ।টেবিলের ওপর আধ খাওয়া চা পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিয়ে চুমুক দিতেই মিলাত মৃদু উচু আওয়াজে বলল,’ওটা আমার এঁটো।’
‘তো?তুমি তো আর তোমার ঠোঁটজোড়া এঁটো করার সুযোগ দিবে না তাই চায়ের কাপই সই।’
মিলাত লজ্জা পেয়ে মুখ আড়াল করে বলল,’খালি ফাইজলামি।উঠুন,ফ্রেশ হোন।নাস্তা দিচ্ছি।’
‘তোমার রুম কোনটা?’
‘সাথে আসুন।’
অনুরুপ মিলাতের পেছন পেছন চললো।মিলাতের রুমে প্রবেশ করেই চারপাশে একবার নজর বুলালো।এত চাকচিক্য নেই।সুন্দর,ছিমছাম পরিবেশ।তবে খাট’টা দু’জনের জন্য একটু ছোটোই লাগছে।তারজন্য মনে মনে একটু খুশিই হলো সে।
মিলাত নতুন একটা তোয়ালে বের করে অনুরুপের হাতে দিতেই অনুরুপ বলল,’তোমারটা কই?’

‘বারান্দায়।’
‘ওটাই আনো।’
‘আমারটা ইউজ করবেন?’
‘তো কি হয়েছে?তুমিসহ তোমার সবকিছুই আমার।’
মিলাত আর কথা বাড়ালো না।নিজের তোয়ালেটাই এনে দিলো।অনুরুপ ওয়ারুমে যেতেই মিলাত দৌড়ে বাবার রুমে গিয়ে আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টিশার্ট বের করে এনে রুমে রেখে গেলো।এখন রুমে থাকা একদমই নিরাপদ নয় কখন অসভ্য লোকটা খালি গায়ে বেরিয়ে পড়ে কে জানে!তাই ও অনুরুপের জন্য নাস্তা তৈরি করতে লেগে গেলো।একটু পর আবার কলিং বেল বাজলো।এবার মিলাত এগিয়ে এসে ব্যস্ত হাতেই দরজা খুললো লুকিং গ্লাসেও দেখলো না।দরজা খোলার পরই দেখলো তিনটে কুচুটে ধরনের লোক দাড়িয়ে আছে।চেহারায় মধ্যে কেমন একটা পৈশাচিক ভাব।মিলাত গলার স্বর কঠিন করে প্রশ্ন করলো,’কাকে চাই?’

‘তোকে।’
ওদের মধ্যে একজন এটা বলেই ওকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ঢুকে গেলো ঘরে।তারপর দরজা আঁটকে দিলো ভেতর থেকে।মিলাত আঁতকে উঠলো।ওর রুম থেকে ভেসে আসছে অনুরুপের গলা,’বউ ও বউ।কে আসলো?’
মিলাতের মুখ দিয়ে কথা ফুটছে না।এরমধ্যেই অনুরুপ নিজেই বেরিয়ে এলো বাইরে।ওকে দেখেই মিলাতের জানে জান এলো ও নিমিষেই লুকিয়ে পড়লো স্বামী নামক শক্ত প্রাচীরের আড়ালে।অনুরুপ ভ্রু কুঁচকে সামনে লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করলো,’তোরা কারা?’
‘তুই কে?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩২

‘চিনবি একটু পর।তোদের চৈতি পাঠাইছে না?’অনুরুপের স্বরে তাচ্ছিল্য।
ওর কথা শুনে লোকগুলো হতভম্ব হয়ে গেলো।ওদের কে বলা হয়েছে একটা আর এখানে ঘটছে আরেকটা।তবুও ওরা ভাবলো ওরা তিনজন আর এই ছেলে একা।ছেলেটাকে টপকে মেয়েটাকে তুলে নিয়ে যেতে পারলেই হলো।ওরা এক এক করে এগুতে লাগলো।অনুরূপ মিলাতকে ওর ঘরে গিয়ে বসতে বলল।ও না ডাকা পর্যন্ত যেন বেরিয়ে না আসে।মিলাত রাজি হলো না।ও কিছুতেই এই মানুষটাকে একা রেখে ঘরে গিয়ে বসে থাকতে পারবে না।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৪