বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৯

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৯
Arshi Ayat

হুট করেই অনুরুপের বাবা মা আজ সকালে ঢাকা চলে এলো।এসেই ছেলের ফ্ল্যাটে ছেলেকে না পেয়ে কলি বেগম ছেলেকে ফোন করলেন।অনুরুপ তখন নাস্তা করছিলো পাশেই স্ত্রী আর শ্বাশুড়ি বসে আছে।শ্বশুর কিছুক্ষণ আগেই নাস্তা করে বেরিয়ে পড়েছে।অনুরুপের আজ দুপুরের শিফট তাই ও সকালের সময়টা বউয়ের সাথেই কাটাবে ঠিক করলো কিন্তু সেই প্ল্যানে জল ঢেলেই মায়ের কলটা এলো।অনুরুপ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মায়ের তীক্ষ্ণ স্বর ভেসে এলো,’কোথায় তুই?’
‘এই তো বাসায়।’
‘কার বাসায়?’
‘আমার বাসায়ই।’
‘মিথ্যে বলার আর জায়গা পাও না?’
মায়ের কর্কশ গলার স্বর শুনেই অনুরুপ বুঝে গেলো কাহিনি কি।ও তড়িঘড়ি করে বলল,’সকালে একটু বেরিয়েছিলাম তো।আসছি এক্ষুনি।’

‘এসো।’
কলি বেগম ফোন রেখে দেওয়ার পরই অনুরুপ খাওয়া রেখে উঠে গেলো।মিলাত ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,’কোথায় যাচ্ছেন?’
‘বাবা,মা এসেছে হঠাৎ।আমাকে খবরও দেয় নি।’
‘ও আচ্ছা।তো খেয়ে যান।’
‘না না।এক্ষুনি যেতে হবে।এমনিতেই মা বুঝে গেছে আমি তোমাদের বাসায়।’
মিলাত হেসে ফেললো।বলল,’আহারে।ঠিকাছে যান।আপডেট দিয়েন।’
অনুরুপ মিলাতের গাল টেনে,কপালে চুমু দিয়ে চোখে চোখ রেখে গাঢ় গলায় বলল,’আপডেট হলো আপনি তৈরি থাকিয়েন খুব শীঘ্রই আপনাকে উঠিয়ে নিয়ে যাব একবারের জন্য।’
মিলাত চোখ নামিয়ে ফেললো লজ্জা।অনুরুপ ওকে ছেড়ে গুণগুণ করে গেয়ে উঠলো,’আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে,
ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধু সানাই বাজিয়ে,
যাবো তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে।’
মিলাতও তাল দিয়ে গাইলো,’তোমার ভাঙা গাড়িতে আমি যাব না,
কারো ঘরের ঘরনি আমি হবো না।
করবো না তো কোনোদিনও বিয়ে।’
‘আরে যাবো তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বউয়ের সাথে একটু খুনসুটি করে বেরিয়ে গেলো অনুরুপ।শেষমেশ সবকিছু ঠিকঠাক করে মেয়েটাকে সবসময় নিজের কাছে রাখতে পারবে ভেবেই ভীষণ ভালো লাগায় মন ছেয়ে যাচ্ছে।
গতরাতে একফোঁটাও ঘুমায় নি রেভান।যে ছেলে ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন ছিলো,সিগারেট পর্যন্ত ছোঁয়াতো না ঠোঁটে সে এখন চেইন স্মোকার।গতকাল রাতে গেস্টরুমের বারান্দায় বসে সিগারেট টেনেছে একটার পর একটা।মনটা এতই বিক্ষিপ্ত যে জগতের সবকিছুই রঙহীন লাগছে।আলো ফোঁটার পর আর টিকতে না পেরে নিজের ঘরে এসে দেখলো বজ্জাত মেয়েটা পুরে খাট জুড়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।রেভান সেদিকে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মাথা ধরেছে গোসল করেই ঘুমাতে হবে।
অনুরুপ বাড়ি পৌঁছানোর পর কলি বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলের পানে চেয়ে প্রশ্ন করলেন,’কোথায় ছিলি সকাল সকাল?’

অনুরুপ চোরের মত গলা নিচু করে বলল,’আসলে মা রাগ করবে না তো বললে?’
কলি বেগম ধমকে বললেন,’ঢং না করে বলো।’
‘আসলে মা আমি দু’দিন মিলাতদের বাড়ি থেকেছি।’
‘কেনো?’
‘ওর বাবা ওকে আমার কাছে আসতে দিচ্ছিলো না তাই।’
কলি বেগম নাক,মুখ কুঁচকে মাথায় হাত দিয়ে প্রচন্ড বিরক্তির স্বরে বললেন,’ছিঃ ছিঃ।মানসম্মান আর রাখলো না।একদম বাপের মত হ্যাংলা হয়েছে।’
স্ত্রীর কথার প্রতিবাদে সোফায় বসে চা পান করা আমিনুল সাহেব উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন।তাকে দেখে কলি বেগম মুখে ঝামটা মেরে বললেন,’কি?তুমি উঠলে কেন?এসব মিথ্যে?তুমিও এমন ছিলে।এক রক্ত না!’
এবার আর প্রতিবাদের সাহস পেলেন না তিনি।আবার আগের জায়গায় বসে পড়লেন।একবয়সে তিনিও এমন ছিলেন।স্ত্রীকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝতেন না এখন যে বোঝেন তাও না।এই মহিলা এমন জাদু করেছে যে একে ছাড়া সবকিছু অসম্ভব।

কলি বেগম কিছুক্ষণ পুত্র এবং স্বামীকে ভৎসনা করে ঠান্ডা হলেন।
সকাল দশটায় ঘুম ভাঙলো নুহার।আড়মোড়া ভেঙে,হাই তুলে উঠে বসতেই দেখলো সোফার ওপর শুয়ে আছে লোকটা দু পা ভাজ করে।বোঝা যাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে।নুহার একটু খারাপ লাগলো বেচারা নিজের খাটে আরাম করে ঘুমাতে পারছে না ওর জন্য।এখন এটা তো ওর দোষ নেই।করলো কেন বিয়ে!
নুহা গোসল সেরে দরজা খুলে বাইরে গেলো।এখনও কেউ ডাকে নি ওদের।নুহা বসার ঘরে আসতেই নাইমা ওকে দেখে সোফা থেকে উঠ এসে এসে হাত ধরে নিজের পাশে এনে বসিয়ে বলল,’ঘুম হয়েছে?’
নুহা সৌজন্য হেসে বলল,’হ্যাঁ।’
‘ভাইয়া উঠেছে?’
‘না,ওঠেন নি।’
‘ও আচ্ছা।চলো নাস্তা করবে।তারপর আবার পার্লারের মেয়েরা আসবে।’
‘তোমাদের নাস্তা হয়েছে?’
‘হ্যাঁ আমাদের অনেক আগেই হয়েছে।’

রাতে অনুরুপ বাসায় ফেরার পর কলি বেগম গম্ভীর মুখে বললেন,’সামনে বসো।কথা আছে।’
অনুরুপ সম্ভাব্য কথার বিষয়টি জানে তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে মায়ের সামনে বসে পড়লো।সেই সময় আমিনুল সাহেবও এসে বসলেন স্ত্রীর পাশে।কলি বেগম স্বামীর দিকে একবার চেয়ে নিয়ে বললেন,’তোমার বাবা আর আমি ঠিক করেছি শুক্রবার মেয়ের বাড়ি যাব।’
মায়ের কথা শুনে অনুরূপ খুশি হয়ে গেলো।কলি বেগম আরও বললেন,’তোর বিয়ে নিয়ে কতকিছু ভেবে রেখেছিলাম আমি কিন্তু তুই সব মাটি করেছিস তবুও আমি করব সেসব যা ভেবে রেখেছিলাম।তোর শ্বশুরের নাম্বার দে।তোর বাবা কথা বলবে।’
অনুরুপ মায়ের কথা শুনে ভীষণ খুশি অনুভব করলো।বাবাকে শ্বশুরের নাম্বার দিয়ে রুমে গিয়েই মিলাতকে ফোন করলো।মিলাত রিসিভ করার সাথে সাথেই অনুরুপ প্রচন্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,’শুক্রবার বাবা-মা আসছে তোমার বাড়ি।আমাদের মনে হয় আবার বিয়ে হবে।’
‘কেনো?’
‘কারণ মায়ের আমার বিয়ে অনেক ইচ্ছে ছিলো কিন্তু সেগুলো তে আমি জল ঢেলে দিয়েছি।তাই মা চাইছে আবার সব করতে নতুন করে।’
মিলাত নিজেও খুশি হলো অনুরুপের কথা শুনে।শ্বাশুড়িকে এখনও দেখে নি সে তবে অনুরুপের কাছে তার কথা শুনে মনে মনে ভীষণ সম্মান করে তাকে।মিলাত বুঝতে পারে কেন অনুরুপ এত ভালো।
অবশেষে চৈতির পরিকল্পনা সফল হলো।ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে মতিউর সাহেবকে বিয়েও করে ফেললো ও।কাবিন নামার একটা ছবি উঠিয়ে অনুরুপকে পাঠিয়ে ভয়েস মেসেজ দিয়ে বলল,’চেকমেট ডাক্তার।পারলে পরের চাল দে।’

আজ বউভাত ছিলো রেভান আর নুহার।দুপুরে নুহার মা,মামারা এসে ওকে আর রেভানকে নিয়ে যায় তাদের সাথে যদিও রেভান যেতে চায় নি তবুও সামাজিকতা রক্ষার জন্য যেতে হয়েছে।বিয়েটা এখন ভীষণ বিরক্ত লাগছে ওর কেন যে মায়ের কথা শুনে বিয়েটা করতে গেলো তাও আবার এই উড়নচণ্ডী মেয়েটাকে!কপালে কি ভালো কিছু কখনোই আসবে না।
নুহার বাড়ি যাবার পর নুহার মামারা রেভানকে ডেকে ইউরোপ হানিমুনের টিকিট দিয়ে দিলেন।রেভান প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে গেলো।বিয়ে হলো সবে দুইদিন এরমধ্যেই হানিমুনের বন্দোবস্ত হয়ে গেছে!এই হানিমুনে গিয়ে করবেটা কি?মানুষ হানিমুনে যায় ভালোবাসার মানুষের সাথে এদিকে এই মেয়েটাকে তো সে দেখতেই পারে না।ছিঃ এর সাথে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না তবুও মামা শ্বশুরদের মুখের ওপর রেভান কিছুই বলতে পারলো না তবে নুহার কাছে গিয়ে রাগী স্বরে বলল,’তোমার মামারা ইউরোপ হানিমুনের টিকিট দিয়েছেন।’
নুহা নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো,’তো?’
‘তো মানে কি?তুমি তোমার মামাদের বলো তুমি এই হানিমুনে যেতে চাও না।’
‘মিথ্যে কেন বলব?আমি তো যেতে চাই?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৮

‘সিরিয়াসলি?’
‘হ্যাঁ।আমার ঘোরাঘুরির নেশা আছে।তাই আমি যাব।’
‘বেশি হচ্ছে কিন্তু!’
নুহা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,’সাহস থাকলে নিজে মানা করুন।এভাবে মেউ মেউ করবেন না।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪০