বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪০
Arshi Ayat
চৈতি আর মতিউর সাহেবের বিয়ের ব্যাপারে জেনে অনুরুপ দূর্বোধ্য হাসলো।মনে মনে আওড়ালো,’নিজের পায়ে নিজেই কুড়ালটা মেরেই দিলি শেষ পর্যন্ত।যাক ভালোই হলো আমার কষ্ট কমলো।’
আজ বুধবার।আর একদিন পরই মিলাতকে দেখতে যাবে অনুরুপের বাবা মা।অনুরুপের থেকে নাম্বার নিয়ে দু’পক্ষ কথা এগিয়ে রাখলো।এদিকে কলি বেগমের কঠোর আদেশ জারি হয়েছে বিয়ের আগে আর বর,বউ যেন দেখা না করে।এই আদেশ শুনে অনুরুপ আর্তনাদ করে বলল,’মা,আমাদের তো বিয়ে হয়েছেই।’
‘ওইসব চোরা বিয়ে আমি মানি না।আমি যা বলেছি তাই হবে।আমার কথার অমান্য হলে বউ উঠিয়ে আনবো না।’
অনুরুপ এবার দ্বিগুণ অসহায় কন্ঠে বলল,’মা,তুমি ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে।’
‘তোমার যদি ব্ল্যাকমেইল মনে হয় তাহলে সেটাই।আমার কথার নড়চড় যেন না হয়।’
অনুরুপ মনে মনে বলল,যাকে না দেখে একদিনও থাকতে পারি না তাকে এতদিন না দেখে থাকলে নিজের প্রতি জুলুম হবে মা।এটা আমি করতে পারি না।দেখা তো অবশ্যই করব কিন্তু তুমি জানবে না এই আর কি!’
রেভান আড়াইদিনের নিয়ম পালন করে আবার নুহাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।পরশু বিকেলে ওদের ফ্লাইট।নুহা ভীষণ খুশি।কি কি নেবে সব লিস্ট করতে শুরু করলো আর এদিকে রেভানের লাগছে বিরক্ত।অবশ্য এই হানিমুনের প্ল্যানটা একা নুহার ফ্যামিলি থেকে করা হয় নি এটা দুই ফ্যামিলির যুক্তি-বুদ্ধিতে হয়েছে।এবার দেখা যাক ফিরে এসে আবহাওয়া কতটুকু পরিবর্তন হয় তাদের মাঝে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনুরুপের নাইট ডিউটি আজ।ও সন্ধ্যায় খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।আজ দু’টো সার্জারি আছে।ভীষণ চাপ যাবে।মিলাতের সাথে দেখা হয় নি আজ একবারও,দুপুরে ফোন করেছিলে মেয়েটা কিন্তু বন্ধুদের সাথে থাকায় ধরতে পারে নি।কে জানে রাগ করেছে কি না!মন আনচান করছে মেয়েটাকে দেখার জন্য কিন্তু এখন গেলে মা জেনে যাবে তাই অনুরুপ নিজেকে সংবরণ করে হাসপাতালেই চললো।যেতে যেতে কয়েকবার ফোন করলো মিলাতকে কিন্তু মিলাত তুললো না ফোন।ব্যস্ত আছে ভেবে আর কল করলো না অনুরুপ শুধু একটা মেসেজ করলো,’মিস ইউ জান।’
মিলাত রাগ করেছিলো তাই ফোন রিসিভ করে নি কিন্তু এই তিন শব্দের বাক্যটা পড়েই সব রাগ উধাও হয়ে গেলো মিলাতের।মিলাত কল ব্যাক করতেই অনুরুপ রিসিভ করলো।নরম স্বরে জানতে চাইলো,’রাগ করেছো,বউ?’
‘না।’মিলাত শুষ্ক স্বরে উত্তর দিলো।
অনুরুপ বুঝতে পারলো স্ত্রী’র মন ভার।সে অনুতাপের স্বরে বলল,’মা বলেছে পুনরায় বিয়ে হওয়া পর্যন্ত আমরা যেন দেখা না করি।দেখা করলে নাকি তোমাকে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে আনবে না।’
‘মিথ্যে কথা।বাহানা বানাচ্ছেন আপনি।’
‘মোটেই না।তুমি তোমার শ্বাশুড়িকে নিজে ফোন করে জিজ্ঞেস করো।’
এবার মিলাতের বিশ্বাস হলো।সে একটু মন খারাপের স্বরে জানতে চাইলো,’এবার কি হবে?এতদিন আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাব না?’
‘না।মায়ের আদেশ মানতেই হবে কিছু করার নেই।’
‘আচ্ছা।’মিলাতের মন খারাপ হলো আবারও।অনুরুপ সেটা বুঝে মুচকি হাসলো।মনে মনে বলল,এখন কিছু বলব না।এসে মন ভালো করে দেব।’
রেভান বিকেলে বাসায় ফিরতেই নুহা সামনে এসে দাঁড়ালো।একটা বড় লিস্ট সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে বলল,’এগুলো লাগবে।’
‘তো আমি কি করব?’রেভান নুহাকে এড়িয়ে গিয়ে সোফায় বসলো।
‘এনে দেবেন।’
‘পারব না।’
‘ঠিকাছে আমি আপনার মা’কে গিয়ে বলছি।’
রেভান বিরক্ত হয়ে নিজের কার্ডটা দিয়ে বলল,’নিজে গিয়ে নিয়ে এসো।’
‘আপনাকেও আসতে হবে আমার সাথে।’
‘আমি পারব না।’
‘যাচ্ছি আমি আপনার মা’কে বলতে।’
রেভান বিরক্তির সুরে বলল,’ঠিকাছে,চলো।’
এই মেয়েটাকে এক দন্ড সহ্য হচ্ছে না ওর।সারাটাক্ষন জ্বালায়।এমন জানলে কখনোই বিয়ে করতো না সে।আস্ত একটা আপদ জুটেছে।বিয়ের প্রতি এতোটাই অখুশি যে আজ অফিসে এক এমপ্লয়ি বিয়ের দাওয়াত দিতে আসার পর ও লোকটাকে বিয়ে না করার পরামর্শ দিচ্ছিলো রিতীমত।কিন্তু লোকটা পাত্তাই দিলো না।রেভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’এখন তো বুঝবা না বাছাধন,বিয়ের পর বুঝবা তখন বুঝেও লাভ নেই।’
দু’টো অপারেশন শেষ করে ভোর চারটায় এসে নিজের কেবিনে একটু রেস্ট নিলো অনুরুপ।আরও ঘন্টাখানেক পর আজান দেবে।তখন বের হবে মিলাতের সাথে দেখা করতে।এত ক্লান্তির পরেও মেয়েটাকে কোনোভাবেই মনের আড়াল করা যায় না।কি সাংঘা’তিক দখল তার!
ফজরের সালাত আদায় করে অনুরুপ গাড়ি নিয়ে সোজা মিলাতের বাসার সামনে চলে এলো।তারপর ফোন করলো ওকে।মিলাত ঘুম ঘুম স্বরে ফোন রিসিভ করে বলল,’হ্যা,ডাক্তার সাহবে।বলুন।’
‘একটু নিচে নেমে আসেন।’
‘কেনো?’
‘আসেন না একটু।’
মিলাতের ঘুম কেটে গেলো।ও বুঝতে পারলো নিচে তার স্বামী এসেছে।মিলাত দ্রুত বাসার জামা পাল্টে ভালো একটা জামা পরে,এলোচুলে হাতখোপা করে, মাথায় ওড়না দিয়ে,কোনোরকম মুখটা ধুয়েই নিচে নামলো।দেখলো অনুরুপ গাড়িতে হেলান দিয়ে ওরই অপেক্ষা করছে।মিলাত দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো।অনুরুপও এগোলো কিছুটা।মেয়েটা এসেই জড়িয়ে ধরলো তার প্রিয় পুরুষকে।অনুরুপও নিজের বলিষ্ঠ দু’হাতে শক্ত করে আগলে নিলো প্রেয়সীকে।একটু পর বুক থেকে মুখ তুলে মিলাত বলল,’আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।’
‘এবার আমাকে খুশি করো।’
‘কিভাবে?’
‘আমি একটুও ঘুমাই নি।দু’টো সার্জারি ছিলো।শেষ করেই তোমার কাছে এসেছি।তোমার বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমাতে মন চাচ্ছে।’
মিলাত লজ্জা পেলো।ওর গালজোড়া ভারি হলো,দৃষ্টি অবনত হলো।তবুও একটু জড়ানো স্বরে বলল,’কোথায় ঘুমাবেন এভাবে?’
‘হাসপাতালে চলো আমার সাথে।আমার এখন আর কোনো কাজ নেই।আট’টা পর্যন্ত শুয়ে থাকবো।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৯
মিলাত বিনাবাক্য ব্যয় রাজি হলো।অনুরূপ ওকে নিয়ে নিজের কেবিনে চলে এলো।মিলাতকে পেছনের ঘরে গিয়ে বসতে বলে অনুরুপ সবকিছু গুছিয়ে ফেললো।তারপর ভেতরের ঘরে গিয়ে শার্ট’টা খুলে,এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে আধোশায়া মিলাতের বুকের মধ্যিখানে মুখ ডুবিয়ে বড় একটা নিশ্বাস নিলো।মিলাত কেঁপে উঠলো প্রিয় পুরুষের এমন অবাধ্য ছোঁয়ায়।অনুরুপ সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো প্রিয়তমার বুকে মাথা রেখে।