বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪১

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪১
Arshi Ayat

স্বামীর সিল্কি চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো মিলাত নিজেও জানে না।ওদের ঘুম ভাঙলো আট’টার এলার্মের শব্দে।অনুরুপ স্ত্রী’র বুক থেকে মাথা তুলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসা’ময় স্বরে বলল,’থ্যাংকিউ পাখি।ভীষণ ভালো হয়েছে ঘুম।এখন আর একটুও ক্লান্ত লাগছে না।’
মিলাত স্বামীর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,’এটা আমার সৌভাগ্য যে আপনি আমার কাছে শান্তি পান।আমি যেন সারাজীবন এইভাবেই আপনার প্রশান্তির কারণ হতে পারি।’
অনুরূপ মিলাতের হাত নিজের হাতে নিয়ে চুমু খেলো।স্ত্রী’র কপালে কপাল ঠেকিয়ে গাঢ় স্বরে বলল,’আমার কিছু শর্ত আছে।’

মিলাত ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,’ কি শর্ত?’
‘প্রথম,প্রত্যেকদিন সকালে চোখ মেলেই যেন তোমাকে দেখতে পাই যেদিন চোখ খুলব না সেদিন থেকে তুমি মুক্ত।’
মিলাত স্বামীর ঠোঁটে হাত রেখে ব্যকুল স্বরে বলল,’এমন মুক্তি আমি চাই না।’
অনুরুপ মিলাতের কপালে একটা চুমু খেয়ে আবার বলল,’দ্বিতীয়,প্রতিদিন একবেলা হলেও আমার হাতে খেতে হবে।’
‘আচ্ছা।’
‘তৃতীয়,প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একদিন অন্তত শাড়ি পরতে হবে।’
‘আর?’
‘এই তিনটাই।’
‘আমারও কিছু শর্ত আছে।’
‘বলো,শুনি।’
‘প্রথম,বাবু লাগবে আমার এই বছরেই।’
অনুরূপ চমকে উঠে বলল,’এই বছরেই?’
মিলাত গলা জড়িয়ে ধরে বলল,’হ্যাঁ,এই বছরেই।’
‘কিন্তু তোমার মাস্টার্স তো শেষ হলো না।শ্বশুর আব্বা তো আমাকে শেষ করে ফেলবো।’
‘কিচ্ছু হবে না।মাস্টার্স শেষ করতে পারব।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘তাও।শেষ করার পরই নাহয়…’
অনুরুপ কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই মিলাত ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’দেখুন,পড়াশোনা,জব এসব তো চলতেই থাকবে তাই বলে বাচ্চা নেবো না?আপনার আপত্তি নেই তো?’
‘আমার কেনো আপত্তি থাকবে!মা,মেয়ে দুজনকে সামলাতে আমার ভালোই লাগবে।’
মিলাত হেসে ফেললো।বলল,’আপনার মেয়ে চাই?’
‘হ্যাঁ,একদম তোমার মত একটা প্রিন্সেস চাই আমার।’
‘আর আপনার মত সুদর্শন একটা পুত্র চাই।’
‘আমি সুদর্শন?’
‘আপনি আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ।’
অনুরুপ হাসলো।স্বামী-স্ত্রীর কথা আপাতত শেষ হলো এখানেই।ওরা এখন বের হবে।অনুরুপ মিলাতকে গাড়ির চাবি দিয়ে বলল,’তুমি গিয়ে বসো গাড়িতে।আমি আসছি।’
‘আচ্ছা।’

অনুরুপ মিলাতকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেলো।মিলাত বাসায় ফিরে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হলে বলল বান্ধবীর নানী অসুস্থ তাই দেখতে গিয়েছিল।যদিও তার এই কথা কেউই বিশ্বাস করলো না তবুও আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না কারণ তারা জানে তাদের মেয়ে এই সাতসকালে কোথায় যেতে পারে।
শুক্রবার বেলা এগারোটা।
সকাল থেকে ঘরের মধ্যে নানা ধরনের আয়োজন চলছে।মিনারা বেগম একটু কাজে হাত লাগাতে দিচ্ছেন না মেয়েকে।তিনি মেয়েকে গোসল করে পার্লারে যেতে বলেছেন।মিলাত গোসল করলো ঠিকই কিন্তু পার্লারে গেলো না ওর ভালো লাগে না আবার অনুরুপও পছন্দ করে না ভারী মেক-আপ করা।মিলাত মণিপুরী একটা শাড়ি পরে হালকা সেজে নিলো।তারপর অনুরুপকে পাঠালো ছবি তুলে।অনুরুপ ছবিগুলো দেখে সাথে সাথেই ফোন করলো।মিলাত রিসিভ করতেই বলল,’মাশাআল্লাহ!ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমাকে জান।আমি কিভাবে তোমার থেকে আজ চোখ সরাবো!’

মিলাত হাসলো প্রিয়তমের এমন আহ্লাদী কথায়।
একটু আগেই মিলাতকে দেখে আঙটি পরিয়ে গেলো অনুরুপের পরিবার থেকে।ওদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে সামনের শুক্রবার।এই একসপ্তাহে অনেক কাজ করতে হবে।দাওয়াত দেওয়া,শপিং করা,ঘর সাজানো,কমিউনিটি সেন্টার বুক করাসহ অনেক কিছু।তবে অনুরুপের আজ ভীষণ ভালো লাগছে অবশেষে আর কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটাকে নিজের কাছে পাবে প্রতিদিন।মন খারাপ লাগলেই জড়িয়ে ধরতে পারবে,গল্প করতে পারবে,ঘুরে বেড়াতে পারবে।

মেয়েদের যখন নতুন বিয়ে ঠিক হয় তখন যেমন অনুভূতি হয় তেমনই হচ্ছে মিলাতের অথচ এটা নতুন না।তবুও অতীতের কিছুই এখন আর ছুতে পারে না ওকে অনুরুপ নামক একজন মানুষের কারণে।এই মানুষটা প্রথম থেকে ছিলো,আছে হয়তো থাকবে আমৃত্যু।মিলাত আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে মনে মনে বলে,’আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য আমার ইহজনম কম পড়ে যাবে।আমাকে এত ভালো জীবন দেওয়ার জন্য শুকরিয়া,আল্লাহ।’
মিলাতের এত সুখ সহ্য হচ্ছে না চৈতির।ও ভেতরে ভেতরে ভয়ানক পরিকল্পনা করলো।তবে এটা মিলাতকে মা’রার পরিকল্পনা নয় এটা অনুরুপের অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ করার পরিকল্পনা।এবার যেহেতু ওর কাছে পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে সেহেতু এবার আর কেউ আটকাতে পারবে না।

প্লেনে ওটার পর নুহা নিজের মত গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো আর রেভান বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে বসে রইলো।একটু পরই একজন বিমানবালা এসে হাসিমুখে বলল,’স্যার,কিছু লাগবে?’
‘জ্বি,না।’
‘লাগলে ডাকবেন আমাকে।’
‘আচ্ছা।’
কিছুক্ষণ পর আবারও মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করলো,’স্যার,নাস্তায় কি খাবেন?’
‘কফি পাওয়া যাবে?’
‘জ্বি,স্যার।’
‘নিয়ে আসুন এটাই।’
‘আর কিছু?’
‘না,আর কিছু না।’
নিজের অর্ডার দেওয়া হতেই রেভান নুহাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,’গেম পরে খেলো।নাস্তায় কি খাবে?’
নুহা ফোন থেকে চোখ না উঠিয়েই বলল,’যা আছে সব নিয়ে আসেন।’
‘ওকে ম্যাম।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪০

বিমানবালা মেয়েটি অর্ডার নিয়ে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর দুজনের নাস্তা নিয়ে ফিরে আসলো।রেভানকে ওর কফি দিয়ে নুহাকে ওর নাস্তার ট্রে দেওয়ার জন্য ডাকলেও ও শব্দ করলো না।এতোটাই গেমে মনযোগ যে পারিপার্শ্বিক কিছুই শুনতে পাচ্ছে না সে।বিমানবালা মেয়েটি রেভানকে বলল,’উনি কি আপনার বান্ধবী হয়?’
রেভানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটলো সে বলল,’না,ও তো আমার ছোটো বোন হয়।’
এতক্ষণ রেসপন্স না করলেও এইবার নুহা চক্ষুশূল দৃষ্টিতে তাকালো রেভানের দিকে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪২