বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৩

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৩
Arshi Ayat

আজ সকালে গার্লস ট্রিপে বেরিয়েছে মিলাত আর তার বান্ধবীরা।তিনদিন থাকবে ওরা কক্সবাজারে।কোন হোটেলে থাকবে সেটা অনুরুপ ঠিক করে দিলো।সুগন্ধা বিচের পাশেই একটা হোটেলে উঠেছে ওরা।এটা অনুরুপের বন্ধুর বাবার।ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই সমুদ্রের মৃদু গর্জন,নোনাজল ছুঁয়ে আসা স্নিগ্ধ হাওয়া আর রঙিন ভোরা দেখা যায়।ওরা যখন পৌঁছেছে তখন সন্ধ্যা।ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো সবাই।অনুরুপের কড়া বারণ যেন দশটার পর বাইরে না থাকে।তাই ওর নাস্তা করে বিচে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ বিচে সময় কাটিয়ে,ডিনার করে দশটার আগেই হোটেলে ফিরবে।

বিচে গিয়ে মিলাত অনুরুপকে ভিডিও কল দিলো।অনুরুপ তখন চেম্বার থেকে বের হয়েছে।বউয়ের ফোন পেয়ে গাড়িতে উঠেই রিসিভ করলো।ওপাশে মিলাতের হাস্যজ্বল মুখ।মিলাত হাত নেড়ে বলল,’দেখুন,বিচে এসেছি আমরা।’
‘পানিতে নেমো মা কিন্তু!সাবধানে থাকবে।আর দশটার আগে ফিরবে।’
মিলাত সব আদেশ মেনে নিয়ে বলল,’ঠিকাছে জনাব।’
অনুরূপ হেসে বলল,’খেয়ে নিও।’
‘আপনিও।আর সাবধানে যাবেন বাসায়।’
‘আচ্ছা,তুমি হোটেলে গিয়ে কল দিও।এখন ইনজয় করো।’
‘আচ্ছা।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেশ কিছুক্ষণ বিচে হাঁটাহাঁটি,দৌড়াদৌড়ি করে মিলাত আর ওর বান্ধবীরা হাঁপিয়ে ওঠেছে।কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে বিচ থেকে এসে ডিনার করে নিলো।মিলাত খাওয়া শেষে হোটেলে এসে গোসল করে তারপর শুতে গেলো।শুয়েই মনে পড়লো অনুরুপকে ফোন করার কথা।সাথে সাথেই ভিডিও কল দিলো ও।অনুরুপ রিসিভ করে ফোনের স্ক্রিনেই বউকে চুমু খেয়ে ফেললো।মিলাত স্বামীর কান্ড দেখে হেসে বলল,’মিস করছেন বুঝি?’
‘ভীষণ!’
‘আহারে,মাত্র তিনটা দিন!’মিলাত আহ্লাদী স্বরে বলল।
‘হ্যাঁ,তারপর আমাদের আবার বিয়ে।তুমি সবসময়ের জন্য আমার কাছে থাকবে।’
মিলাত লাজুক হাসলো।অনুরুপ আরেকটু লজ্জা দিতে বলল,’তারপর আমাদের হানিমুন।কোথায় যেতে চাও?’
‘আপনার যেখানে ইচ্ছা।’

‘উঁহু,তোমার ইচ্ছাগুলোই আমার খুশি।’
মিলাত একটু ভেবে বলল,’মালদ্বীপ যাওয়া যায়।’
‘ঠিকাছে তাহলে মালদ্বীপ ই।বিয়ের দু’দিন পরই যাব আমরা।’
‘আচ্ছা।’মিলাত মৃদু স্বরে বলল।লজ্জায় ওর গাল জোড়া ফুলে উঠেছে।
অনুরূপ গভীর চোখের বউয়ের দিকে চেয়ে থেকে বলল,’প্লিজ এভাবে লজ্জা পেও না।আমার সহ্য হয় না।আদর করতে ইচ্ছে করে।’
মিলাত এবার ফোন ক্যামেরায় হাত রেখে বলল,’আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে!’
‘ইশ!সেদিন বোধহয় ঠিকঠাক লজ্জা ভাঙানো হয় নি।সমস্যা নেই বাসর রাতে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে লজ্জা ভাঙাবো।’
মিলাত লাজুক স্বরে বলে উঠলো,’অসভ্য একটা!’

অনুরুপ মুচকি হাসলো।বউকে লজ্জা দিতে বেশ লাগে ওর।
মিলাতের কক্সবাজার যাবার খবর পেয়ে গেছে চৈতি।বিশ্বস্ত কিছু মাধ্যম কাজে লাগিয়ে ওর হোটেলের খোঁজও বের করে ফেললো।আর ওই মুহুর্তেই রওনা হলো কক্সবাজার।

রেভান আর নুহা হানিমুনে এসেছে তিনদিন হতে চলল।একই রুমে,একই বিছানায় শুয়েও কেউ কারো সাথে কথা বলে না।ঘোরাঘুরি চলছে নিজেদের মতই।তবে নুহা যেখানেই যায় ঘুরে ফিরে রেভানের সাথে ওর দেখা হবেই।আজও ঘোরাঘুরি করে রাত এগারোটায় ফিরলো দু’জনে।খাওয়া শেষ করে যে যার মত শুয়ে পড়লে।শোয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো নুহা এবং অভ্যাসবশত ঘুরে রেভানের গায়ে,হাত-পা তুলে দিলো।গত দু’দিন ধরে একই অবস্থা।সকালে যখন নিজেকে রেভানের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকা অবস্থায় দেখা নুহা।তখন ভ্রু কুঁচকে সব দোষ রেভানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।তাই রেভান আজ ভেবেছে সে ভিডিও করে রাখবে।কিন্তু ভিডিও করতে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ফোনে চার্জ নেই।ফোন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।কি আর করার!ফোন রেখে রেভান চুপচাপ পড়ে রইলো বিছানায়।একসময় তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতেই অনুরুপের ফোন টেক্সট এলো চৈতির নাম্বার থেকে।ও একটা ছবি পাঠিয়েছে কক্সবাজার থেকে।একদম সেই হোটেলের সামনে থেকে যেখানে মিলাত আর ওর বান্ধবীরা উঠেছে।ছবিটা দেখেই অনুরুপের কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো।ও নাস্তার টেবিল থেকে তৎক্ষনাৎ উঠে চৈতিকে ফোন করলো।এই প্রথম অনুরুপ নিজ থেকে ফোন করলো চৈতি।সাথে সাথেই রিসিভ হলো।ওপাশ থেকে চৈতির শয়তানি হাসি ভেসে এলো।
‘গুড মর্ণিং ছোটো বোনের জামাই।আচ্ছা ছোটো বোনের জামাইকে কি যেনো বলে আমি জানি না।বাই দ্য ওয়ে হোটেলটা ভীষণ সুন্দর।সি ভিউ পাওয়া যায় ভালো।’
অনুরুপ শান্ত গলায় বলল,’কক্সবাজার গিয়েছিস সমুদ্র দেখ সমস্যা নেই শুধু মিলাতের দিকে হাত বাড়ালে কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।’

অনুরুপের কথা শুনে চৈতি কটমট স্বরে বলল,’আমার কলিজা ছেঁড়ার আগে দেখবি তোর বউয়ের কলিজ কেটে বারবিকিউ করছি।সমুদ্রের পাড়ে তোর বউয়ের কলিজার বারবিকিউ!ভীষণ টেস্ট হবে কি বলিস?তোকেও দাওয়াত দিলাম।চলে আসিস আজ রাতেই।’
অনুরুপ চাপা রাগান্বিত স্বরে বলল,’এই ভূল করিস না চৈতি আমি তোকে আবারও বললাম।’
‘লাভ নেই আমার যা হয় হোক আমি ওকে শান্তি দেব না।’
এটা বলেই ফোন কেটে দিলো চৈতি।অনুরুপ আবার ডায়াল করেও কাজ হলো না ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।ও এবার মিলাতকে ফোন করলো।মিলাত রিসিভ করেই বলল,’হ্যালো।’
অনুরুপ নিজের ভেতরের অস্থিরতা প্রকাশ না করেই প্রশ্ন করলো,’কোথায় আছো?’
‘হোটেলেই।মাত্র উঠলাম ঘুম থেকে।’

‘শোনো একদমই হোটেলের বাইরে যেও না।আমি আসছি।’
মিলাত এবার ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত স্বরে বলল,’কি হয়েছে?’
‘কিছু হয় নি।তোমাকে মিস করছিলাম।ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে তাই ছুটে আসছি।’
মিলাত বিশ্বাস করলো স্বামীর কথা।আহ্লাদী স্বরে বলল,’অপেক্ষা করুন আরও দুইদিন।এখনই আসবেন না।’
‘উঁহু অপেক্ষা করতে পারব না আমি।আমি আসছি,প্লিজ হোটেল থেকে বের হইও না।’
বলেই অনুরুপ ফোন রেখে নাস্তা না করেই বেরিয়ে গেলো।পেছন থেকে কলি বেগম এত ডাকলো শুনলোই না ও।
ফোনেই চেক করলো পরবর্তী এয়ার ফ্লাইট।এখন বাজে সাড়ে আট’টা।পরবর্তী ফ্লাইট নয়টা পঞ্চাশ মিনিটে।অনুরূপ টিকিট কেটে ফেললো আর আজ হাসপাতাল থেকে ইমার্জেন্সি ছুটি নিলো।

বাসা থেকে বেরিয়েই এয়ারপোর্টের দিকে ছুটলো।ভেতরে অস্থিরতা কেবল বাড়ছেই।
প্লেনে ওঠার পরপরই চৈতির ফোন এলো।অনুরুপ সাথে সাথেই রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে চৈতি বলল,’বাব্বাহ!এত তাড়া!দাওয়াত তো দিয়েছিলাম রাতে।যাক গে যেহেতু চলেই আসছিস সেহেতু এখনই নাহয় বারবিকিউ আয়োজন করি।স্পেশাল গেস্ট বলে কথা!’
‘মানে?’

‘মানে হলো তোর বউকে অলরেডি বারবিকিউ করার জন্য রেডি করছি।’
‘কি যা তা বলছিস!’অনুরূপ চাপা স্বরে বলে উঠলো।
‘বিশ্বাস না হলে ছবি দিচ্ছি দেখে নে।’
এটা বলেই চৈতি কল কেটে দিলো আর সাথে সাথেই ওর ফোনে মিলাতে ছবি এলো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪২

হাত,পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারের সাথে।মেয়েটার চোখ,মুখে আতঙ্ক।কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে রেখেছে।এরমধ্যেই আবারও কল এলো চৈতির।অনুরুপ এবার ঠান্ডা গলায় বলল,’ওকে কিছু করবি না।তার বদলে কি চাস তুই?’
‘গুড কোশ্চেন।এই কোশ্চেনটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’
চৈতি একটু ভেবে বলল,’তোকে আমার সাথে শুতে হবে।জাস্ট একবার।তাহলেই ছেড়ে দেবো।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৪