বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৭

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৭
Arshi Ayat

মিলাত এখন পুরোপুরি সুস্থ।হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে অনুরুপদের চট্টগ্রামের বাসায় ফিরছিলো।সেখানে অনুরুপের আর মিলাতের বাবা,মাও এসেছেন।তারা সবাই কাল ঢাকা ফিরবেন।অনুরুপের বাবা আমিনুল সাহেবের ড্রাইভার ড্রাইভ করছে আর ওরা দু’জন পেছনে বসে আছে।মিলাত অনুরুপের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।অনুরুপ এক হাতে স্ত্রী’কে আগলে রেখেছে নিজের সাথে আর আরেক হাতে স্ত্রী’র হাত।ও ভেবেছিলো মিলাত ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু না!হঠাৎ করেই মিলাত বলে উঠলো,’জানেন,আমি জ্ঞান হারানোর আগে শুধুমাত্র আপনাকে দেখতে চেয়েছিলাম যেন মরে গেলেও আফসোস না থাকে।সেই সময়ে আমি অক্সিজেনের চেয়েও বোধহয় আপনাকেই দেখতে চেয়েছিলাম বেশি।’

কথাগুলো বলেই মিলাত অনুরুপের দিকে তাকালো।দেখলো মানুষ’টা ব্যাকুল নয়নে ওর দিকেই চেয়ে আছে।অনুরুপ ওর হাতে চুমু খেয়ে আফসোসের স্বরে বলল,’আ’ম স্যরি।আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি তোমাকে খুঁজে পেতে।’
‘উঁহু দেরি হয় নি।এই দেখুন আমি আপনার বাহুতে,দেরি হলে হয়তো আপনার পাশের সীট’টা ফাঁকা থাকতো।’
অনুরুপ মিলাতের কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলল,’কখনো ভয় পাবে না।আ’ম অলওয়েজ উইথ ইউ।’
উত্তরার একটা ফ্ল্যাটে আপাতত থাকছে চৈতি।আজ রাতে আসবে রেলমন্ত্রী মতিউর রহমান।চৈতি বুঝতে পারছে কিছু একটা হবে আজ রাতে হয়তো ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবে।ও জনতো আজ হোক কাল হোক মতিউর রহমান ওকে ছুঁড়ে ফেলবে তাই আগেই জাল বিস্তার করে রেখেছিলো।
তৈরি হবার সময় রেভান বলল,’তোমার ফাউন্ডেশন’টা দিও তো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘কেন?মেক-আপ করবেন নাকি?’
‘আজ্ঞে না ম্যাডাম।আপনি আমার গলায় যে কারুকার্য করেছেন সেগুলো ঢাকবো।’
‘উঁহু,ঢাকতে পারবেন না।আপনিও তো আমার শরীরে দাগ বসিয়েছেন।আমি কি ঢেকেছি?’
‘ম্যাডাম আমি আপনার গলায় বসাইনি।যেখানে বসিয়েছি সেটা কভার করা।আপনি না ঢাকলেও চলবে কিন্তু আপনি তো আমার গলাটাও বাদ রাখেন নি।সেইজন্যই লাগবে।’
‘উঁহু,আপনি এভাবেই বের হবেন।এটা বাংলাদেশ নয় যেন কেউ আপনার দিকে ট্যারা চোখে তাকাবে।ওদের এখানে এসব নরমাল।’

‘হ্যাঁ সেটা ঠিক কিন্তু অকওর্য়াড লাগবে।’
কথাটা শুনেই নুহার ভেতরে জেগে উঠলো টিপিক্যাল বউদের আত্না।সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল,’হ্যাঁ,লাগবেই তো।আমাকে তো আর ভালোবাসেন না।আজ যদি ওই মেয়েটা বাইট দিতো তাহলে তো আপনি খালি গায়েও ঘুরতেন দেখানোর জন্য।’
রেভান মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বলল,’এ কেমন মসিবতে পড়লাম মাবুদ?’
তবে বউয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য বলল,’আচ্ছা,ঠিকাছে ঢাকলাম না।আমার বউয়ের দেওয়া ভালোবাসা আমি সবাইকে দেখাবো।দাঁড়াও শার্ট,প্যান্টও খুলে ফেলি।আন্ডারওয়্যার’টা থাক শুধু!তুমি তো আমার গলায় দাও নি শুধু আরও জায়গাও দিয়েছো তো দেখুক সবাই।’

‘না একদম মেরে ফেলবো!’এটা বলে পরক্ষণেই মুখ ভেঙচে বলল,’আচ্ছা,যান ঢেকে ফেলুন।’
যদিও রেভান আর ঢাকলো না তা দেখে নুহা খুশি হলো।
মখমলি বিছানার ওপর স্বল্প বসনে ভারী আবেদনময়ী ভঙ্গিতে শুয়ে আছে চৈতি।এই অবস্থায় যেকোনো পুরুষের নজরই বেপরোয়া হবে আর প্রতিবার এটাই কাজে লাগায় সে।আজও তাই!
মতিউর রহমান ফ্ল্যাটে এসেই চৈতিকে ডাক দিলেন ড্রইং রুমে।চৈতি ডাক শুনলো কিন্তু উঠলো না।ওভাবেই পড়ে রইলো বিছানায়।কয়েকবার ডাক দিয়েও যখন মতিউর সাহেব সাড়া পেলেন না তখন তিনিই চলে গেলেন বেডরুমে।আজ এখানে আসার একটাই উদ্দেশ্য চৈতির কেস ক্লোজ করা।আবেগে পড়ে তিনি চৈতিকে বিয়ে করে ফেলেছিলেন তখন বুঝতে পারেন নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা একদমই উচিত হয় নি।চৈতি নামক আগাছা এখনই পরিষ্কার না করলে ভবিষ্যতে গলার কাটা হয়ে যাবে।সেদিনই তে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলো।একটুর জন্য বেঁচে গেছে।

বেডরুমে এসে যা দেখলেন তাতে যা যা ভেবে এসেছিলেন সব ভুলে গেলেন।ভারী নিতম্ব,সরু কোমড়ের খাঁজ,উন্নত ও সুডৌল বক্ষের ভাঁজে একটি ফুটন্ত গোলাপ গুঁজে রাখা।চৈতি কামাতুর চাহনীতে মতিউর রহমানকে নিজের দিকে ডাকলো।সেই ডাক উপেক্ষা করার মত শক্তি তার নেই,কখনো ছিলোও না।মতিউর সাহেব এগিয়ে যেতেই চৈতি কামাসক্ত কন্ঠে বলল,’এই ফুলটা তোমার জন্য,জান।নিবে না?’
মতিউর রহমান হাত দিতে নিতে গেলে চৈতি আহ্লাদী ভাঙ্গিতে বাঁধা দিয়ে নখরা করে বলল,’উঁহু,এভাবে না।’
‘কিভাবে তাহলে?’

‘এই ফুলটা তোমাকে বিশেষভাবে নিতে হবে।’
‘কিভাবে নিতে হবে?’
‘শুধুমাত্র তোমার ঠোঁটই এটা নেওয়ার অনুমতি পাবে।যদি চাও তো এভাবে নাও।’
মতিউর রহমান লালসার দৃষ্টিতে এগিয়ে গেলো সেদিকে।
রতিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মতিউর রহমানের মনে পড়লো আজ তিনি কেনো এসেছেন এখানে কিন্তু এখনই বলা ঠিক হবে কি না তিনি বুঝতে পারছেন না।এদিকে চৈতির মনে মনে চলছে পৈশাচিক পরিকল্পনা।
মিলাতকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলো অনুরুপ।যদিও বিয়ের আগে তাদের আলাদা ঘুমানোরই কথা কিন্তু ওই ঘটনার পর মিলাত ভয় পেতে পারে তাই ওরা একসাথেই শুয়েছে।

হঠাৎই মাঝরাতে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো মিলাত।ওর বুক ধড়ফড় করছে,এসি চালু থাকার পরও শরীর ঘামছে দরদর করে,চোখ বড় বড় হয়ে আছ,অস্বাভাবিক হাঁপাচ্ছে।অনুরুপও প্রায় সাথে সাথেই উঠে বসলো।বুঝতে পারলো মিলাত হয়তো কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে।বেড সাইডের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে মিলাতের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,’জান,পানিটা খাও একটু।ভালো লাগবে।’
মিলাত কাঁপা আর অসম্ভব ভীত স্বরে বলল,’আমি,,আমি না খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।’
এটা বলেই কেঁদে ফেললল।অনুরুপ ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায়,পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,’এগুলো কিছু না,জান।আমি আছি তো!আমি থাকতে তুমি ভয় কেনো পাবে!’

মিলাত একটু আস্বস্ত হয়ে পানি খেলো।অনুরুপ ওকে নিজের প্রশস্ত বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।আরামে,আদরে কিছুক্ষণের ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়লো মিলাত।
গোছগাছ শুরু হয়ে গেছে আজ থেকেই।কাল রাতে ওদের ফ্লাইট।কালই ওরা বাংলাদেশে ফিরবে।নিজের জামা গোছাতে গোছাতে কখন যে রেভানের জামাও গোছাতে শুরু করেছে খেয়ালই নেই নুহার।যখন খেয়াল করলো তখন খারাপ লাগলো না বরং ভালোই লাগলো।নুহা জানে না ও রেভানকে ভালোবাসে কি না!কিন্তু অদ্ভুত অনুভূতি হয় লোকটার জন্য।এই অনুভূতির প্রকৃত ব্যাখ্যা নেই ওর কাছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই চৈতিকে পাশে দেখলো না মতিউর সাহেব।তিনি একাই শুয়ে আছেন বিছানায়।গায়ে কোনো বস্ত্র নেই।কাল রাতে এভাবেই ঘুমিয়ে গেছিলেন।উঠে হাতড়ে হাতড়ে জামাগুলো নিয়ে পরে ফেললেন।গোসল করাটা জরুরি ছিলো কিন্তু হাতে সময় নেই।তিনি চৈতিকে ডাকতে ডাকতে বের হলেন রুম থেকে।চৈতি কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে আহ্লাদী স্বরে বলল,’ও,তুমি উঠে গেছো!বসো,নাস্তা দিচ্ছি।’
‘খাব না,সময় নেই।তোমার সাথে একটু কথা আছে,বসো।’
‘আরে পাঁচ মিনিট লাগবে।চুপচাপ বসো।বিয়ে করেছি নিজের বরকে কি একটু রেঁধে বেড়ে খাওয়ানোর সুযোগও পাব না?’

মতিউর রহমান বিরক্ত হলেন।ধমকের সুরে বললেন,’বসো তো!তোমার বালের নাস্তা আমি খাব।’
চৈতি হাসলো।হাসতে হাসতেই বলল,’আমাকে ভোগ করতে পারো কিন্তু আমার বানানো নাস্তা খেতে পারো না?কেনো?আমি স্বীকৃত নই বলে?আমি কি তোমার রক্ষিতা?নাহ!তোমার বউ তাহলে কিসের এত দ্বিধা।’
‘এখন এসব বলার সময় না।আমার কথা শোনো।’
‘শুনবো।আগে নাস্তা করো।’
মতিউর রহমান অতিষ্ঠ হয়ে বললেন,’আচ্ছা,আনো।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৬

চৈতি কিচেনে যাবার আগে রিমোট’টা হাতে দিয়ে বলল,’একটু টিভি’টা অন করো তো!একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।নাস্তা খেতে খেতে দেখবে।’
মতিউর রহমান অন করলো না।বিরক্ত মুখে বসে রইলো।চৈতি নাস্তা নিয়ে এসে সামনের টেবিলে রেখে নিজেই টিভি অন করলো।মতিউর রহমান চা টা হাতে নিয়ে টিভির দিকে তাকাতেই বিষম খেলেন।সেখানে তার আর চৈতির অন্তরঙ্গতার ভিডিও চলছে!চৈতির মুখে পৈশাচিক হাসি।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here