বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭
Arshi Ayat

রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ট্রেন চলছে আপন গতিতে।জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ মিলাতের খেয়াল হলো ওর খোঁপা খুলে গেছে।অভ্যস্ত হাতে আবারও খোঁপা করে নিলো।তারপর ব্যাগ থেকে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিতা বহ্নিমান’ বইটা বের করলো।কতদিন বই পড়া হয় না।অথচ একটা সময় পাঠ্যবইয়ের ভেতর লুকিয়ে পড়তে গিয়ে কতো বকা খেতো মায়ের কাছে তবুও যেনো বইয়ের নেশা কাটতো না।
মায়াবতী আর কেশবতী মিলিয়ে রেভান অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম তৈরি করলো ‘মায়াকেশী’।প্রথম দেখায় কাউকে এতটাও ভালো লাগতে পারে রেভান ভাবেই নি।তৃষ্ণা জাগছে কথা বলার তবে শুরু করবে কিভাবে ভেবেই পাচ্ছে না।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে হঠাৎই বলে ফেলল,’চা খাবেন?’

মিলাত চোখ তুলেও চাইলো না।দৃষ্টি বইয়ের পাতায়ই নিবদ্ধ রেখে বলল,’আমি কফি খাই।’
রেভান আর কি বলবে!কেউ যে এভাবেও উপেক্ষা করতে পারে জানা ছিলো না।থাক,তিনবার চেষ্টা করবে সে তারপর ঘুমিয়ে পড়বে সকালে উঠে আবারও তিনবার চেষ্টা করবে,হলে হবে না হলে যেতে যেতে আরও তিনবার।হাল ছাড়া যাবে না।
মিলাত ব্যাগ থেকে খাবার বের করছে আর মনে মনে ভাবছে সামনের মানুষটিকে সাধবে কি না!যদিও সাধা উচিত ভদ্রতার খাতিরে।একবারই সাধবে।আর প্রথমবারে সবাই না না ই করে।মিলাত নিজের ভাবনা অনুযায়ী রেভানের দিকে চেয়ে বলল,’বিরিয়ানী খাবেন?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রেভান রিস্ক নেয় নি।প্রায় সাথে সাথেই বলল,’হ্যাঁ।’
মিলাত ভাবেই নি ছেলেটা প্রথমবারেই হ্যাঁ বলবে।এমনিতেও এতক্ষণ না তাকিয়েও বুঝতে পেরেছিলো ছেলেটা ওর দিকেই চেয়েছিলো।হয়তো কথা বলার বাহানাও খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না তাই এই তরিকা।যাইহোক সেধে যেহেতু ফেলেছেই কিছু করার নেই।তবে সে নিজেকে সংযতই রাখবে।
ঘুমানোর সময় সাইফুল চৈতিকে পরম আহ্লাদে জড়িয়ে ধরলো।যদিও চৈতির একদমই ভালো লাগছে না,রেভানের যাওয়ার পর থেকেই বিষ লাগছে সবকিছু।মন চাচ্ছে এই সংসার সংসার খেলা শেষ করে সত্যিকারের সংসার শুরু করতে ভালোবাসার মানুষটির সাথে।চৈতির এমন ভাবনার মাঝেই সাইফুল ওর গালে চুমু খেয়ে বলল,’এই চলো না!বেবি প্ল্যানিং করি?’

সাইফুলের এমন কথায় চমকে গেলো চৈতি।বলল,’আমাদের বিয়েই তো হলো কয়েকদিন আগে।এখনই বেবি প্ল্যানিং?’
‘তো কি হয়েছে?তাড়াতাড়ি বেবি নিয়ে নেওয়াই তো ভালো।’
সাইফুলের কথা শুনে চৈতি মনে মনে বলল,’আমি আমার ভালোবাসার মানুষের বাচ্চার মা হবো।এছাড়া আর কারো বাচ্চার মা হব না।’
চৈতির উত্তর না পেয়ে সাইফুল বলল,’হানিমুনে যাবে?আমাদের তো এখনও হানিমুনও হয় নি।’
চৈতির হানিমুন নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিলো না তবে এখন হচ্ছে।হানিমুনে যদি চট্টগ্রাম যাওয়া যায় তাহলে রেভানের সাথে আবারও দেখা হবে।আনমনেই খুশি হয়ে উঠলো।সাইফুল ওর খুশি দেখে ভাবলো হয়তো হানিমুনে যাওয়ার কথা শুনেই এই আনন্দ।সে চৈতিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,’কোথায় যাবে হানিমুনে?কাশ্মীর?’
‘না,চট্টগ্রাম যাব।’

সাইফুল ভ্রু কুঁচকে বলল,’চট্টগ্রাম?’
‘হ্যাঁ,আমি কখনো চট্টগ্রাম যাই নি।আমার অনেক ইচ্ছে চট্টগ্রাম যাওয়ার।তুমি আমাকে নিয়ে যাবে না?’
বোকা সাইফুল আবারও ছলনাময়ীর ছলনায় আঁটকে গেলো।ওরা সামনের সপ্তাহে চট্টগ্রাম যাবে।
দু’কামরার এই ফ্ল্যাটে অনুরুপ একাই থাকে।বাবা,মা থাকে চট্টগ্রাম,বাবার পৈত্রিক ভিটায়।আজ সকাল সকাল চোখ খুলে হঠাৎ বাবা,মা’কে দেখে অবাক হয়ে গেলো অনুরুপ।সে-ই সাথে খুশিও হলো।বাবা,মা’কে সালাম করে বলল,’তোমরা হঠাৎ সাত সকালে চলে এলে যে?’
অনুরুপের মা কলি বেগম স্নেহের স্বরে বললেন,’বাঃ রে!তোকে দেখতে ইচ্ছে করে না আমাদের?’
‘তাহলে আমাকেই বলতে।আমিই চলে যেতাম।’
আমিনুল হক হেসে বললেন,’কেনো রে,বাবা।তোর বাসায় আসায় খুশি হস নি?’
অনুরুপ বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,’অনেক খুশি,বাবা।কিন্তু তোমরা দু’জনই অসুস্থ।বেশিদূর জার্নি করা নিষেধ তোমাদের।তবুও এই পাগলামি গুলো কেনো করো?’
‘তো করব না?একটামাত্র ছেলে আমাদের।তোমাকে ঘিরেই তো সব পাগলামি আমাদের।’কলি বেগম ছেলের গালে হাত রেখে বললেন।

‘হয়েছে,হয়েছে।এখন ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।রান্নার খালা একটু পরই আসবে।ততক্ষণে চা বানিয়ে ফেলি আমি।’
‘তুই করবি কি রে?তোর মায়ের এখনও রথ আছে।ছেলের জন্য সামান্য কিছু করতে পারব না এমব অকেজো হই নি।তোর রান্নার খালাকে বল আগামী দু’দিন আসতে না।আমার ছেলেকে আমিই রান্না করে খাওয়াবো।’
‘আহা মা,কথা শোনো।সারাজীবন তো খাওয়ালেই।এবার একটু আরাম করো।’
‘মায়েদের আরাম কিসে জানিস?সন্তানকে চোখের সামনে বসিয়ে খাওয়ানোতে।’
অনুরুপ হার মানলো।তার মা এমনই।ছেলের কষ্ট সহ্যই করতে পারেন নি।
স্টেশনে ট্রেন থামার পর নিজের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে গেলো মিলাত।পেছনে রেভানও নামলো।গতরাতে বেশি না হলেও টুকটাক কথা হয়েছে দু’জনের মাঝে।রেভান একটা হাই তুলে বলল,’ক্ষুধা লাগে নি?নাস্তা খাবেন না?’
‘এত সকালে খেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘আচ্ছা তো!হালকা কিছু খান।নয়তো যেতে যেতে ক্ষুধা লাগতে পারে।’
‘চা পাওয়া যাবে এখানে?’
রেভান চোখ পাকিয়ে বলল,’আপনি না কফি খান?’
কাল রাতে কথা এড়ানোর জন্য বলেছিলো মিলাত তবে কফির চেয়ে সে চা-ই পছন্দ করে বেশি।তবুও দমে না গিয়ে সীনা টান করে বলল,’হ্যাঁ কফি খাই কিন্তু চা খাই না এটা তো বলি নি।’
কথাটা বলেই মিলাত আর দাঁড়ালো না স্টেশনের ভেতর একটা টং দোকানের দিকে এগুলো।হাসতে হাসতে রেভানও আসছে ওর পেছনে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৬

অনুরুপের বাবা,মা মূলত ছেলের বিয়ের কথা বলতেই এসেছেন এখানে।চট্টগ্রামের খানদানি একটা ফ্যামিলিতে বিয়ের কথাবার্তা চলছে ওর যদিও অনুরুপ জানে না এখনও।জানলেও দ্বিমত করবে না।তাই ছেলের এখানে দু’দিন থেকে ছেলেকে নিয়ে ফিরবে তারা।একেবারে বিয়েশাদি দিয়ে তবেই ছাড়বে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৮