বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব ১৮

বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব ১৮
মম সাহা

নীলা অবাক হয়ে বর্ণকে জিজ্ঞেস করে
-‘আপনি কিভাবে জানলেন রাহাত ভাই আমার চুল টান দিয়েছে?’
বর্ণ শক্ত কন্ঠে বলল
-‘যেভাবে আমি এটাও জানি এই থার্ড ক্লাশ ছেলেটাকে তুমি ভালোবাসতে সেভাবেই এটাও জেনেছি।’
নীলার বুক ধক করে উঠে।শরীরে শিহরিণ বয়ে যায় কথাটা শুনে।থমকে যায় তার নিঃশ্বাস। এবার কি হবে ভেবে কেঁপে উঠে অজানা আতঙ্কে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল

-‘কি বলছেন এসব?’
বর্ণের ঠোঁটের কোণে হাসি।সেই হাসি বজায় রেখেই বলল
-‘যা বলছি তা ঠিকই বলছি তাই না নীলাম্বরী?’
নীলা ধপ করে বসে পড়ে ফ্লোরে।বর্ণ নীলার আচরণে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।সোফা থেকে উঠে নীলার সামনে গিয়ে বলে
-‘এভাবে ভেঙে পড়লে হবে নীলাম্বরী? সত্যি কথা শোনার আর সত্যি কথা বলার সাহস রাখতে হবে।’
নীলার চোখে অশ্রু। কিন্তু কিসের অশ্রু সে জানে না।অজানা শঙ্কায় বুক কাঁপছে।বর্ণ যদি এই কথা গুলো তার বাবাকে বলে দেয় তাহলে কি হবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলা টলমলে চোখ নিয়ে বর্ণে দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বলে
-‘প্লিজ আপনি যা জানেন তা আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখুন।আমার পরিবার ইনফ্যাক্ট কেউ জেনো এটা না জানে প্লিজ।’
বর্ণও হাটুঁ ভাজ করে নীলাম্বরীর মুখোমুখি বসে।অবাক কন্ঠে বলে

-‘ভালোবাসেন ওনাকে।তাহলে জানলে এত ভয় কিসের আপনার?আর আপনারই ভালোবাসার মানুষটার সাথে আপনার বড় বোনের বিয়ে হচ্ছে সেটা মানছেন কীভাবে?বলছেন না কেন সবাইকে যে আপনি ওনাকে ভালোবাসেন?’
নীলার ঠোঁট কাঁপছে অসহায়ত্বে।তবে এতটুকু জেনে শান্তি যে বর্ণ সবটা জানে নি।নীলা মাথা নিচু করে বলল
-‘ভালোবাসি না ভালোবাসাতাম।আর সেটা ভালোবাসাও ছিলো না মায়া আর মোহ ছিলো। একটা মানুষকে চোখের সামনে দেখেছি।শৈশব,কৈশর, যৌবন সবটা সময় তার অস্তিত্ব অনুভব করেছি আর সেই মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি আমি ভুল ছিলাম।’

বর্ণ নীলার থুঁতনি ধরে মুখটা উচুঁ করে তারপর বলে
-‘ওটা মোহ ছিলো কিংবা ভালোবাসা যাই হোক সেটা আপনি মাথা উঁচু করে বলবেন কারণ এটা অপরাধ না।কিন্তু আপনার প্রতি ওনার এই আচরণের কারণ কি? সেদিনও বারান্দায় আপনাকে তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে কাঁদতে দেখেছিলাম।আজ দেখলাম সে আপনার চুল ধরে টানছে আর আপনি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠছেন কোনো প্রতিবাদ করা ছাড়া কিন্তু কেনো নীলাম্বরী?’
নীলাম্বরী বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। আর যাই হোক সত্যি কথা বলা যাবে না বর্ণকে।নীলাম্বরী কতক্ষণ চুপ করে থেকে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

-‘একটা কথা শুনেছেন আপনি?
“অতিরিক্ত ভালোবাসাকে মানুষ অবহেলা করে দৈনন্দিন স্বভাবে,,,
দিনশেষে মানুষ হাহাকার করে অতিরিক্ত জিনিসটার অভাবে।”(মম)
রাহাত ভাইয়ার অবস্থাটা হলো একদম এমন।অতিরিক্ত ভেবে যেটাকে লাথি মেরেছিল।আজ সেই অতিরিক্তই তার প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।’
নীলার এমন হেয়ালি কথা বোধগম্য হয় না বর্ণের।কথার মানে জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নীলার ডাক আসে।তার পরিবারের সবাই শপিং করে চলে এসেছে।
নীলা চলে যায়। যাওয়ার আগে জোড় হাতে মিনতি করে বর্ণকে বলে যায় জেনো একথা কেউ না জানে।

সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার মতন ঘুমাতে চলে গেছে।কাল সকালেই সবাই চলে যাবে।আগামী শুক্রবারেই বিয়ে। কাল গিয়েই বিয়ের কাজ শুরু করা হবে।নীলাকে তাদের সাথে যেতে বলা হয়েছিলো কিন্তু নীলা ভার্সিটির কথা বলে বেঁচে গেছে।
নীলা বসে আছে তার নিজের রুমে সাথে নিরুপমাও আছে।নীলা নিরুপমাকে খাটে বসতে বলে ফ্রেশ হতে গেলো।
নীলা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে নিরুপমা কার সাথে জেনো ফোনে কথা বলছে বেশ হেসে হেসে।নীলাকে আসতে দেখে সে ফোনটা কেটে দিলো।
নীলা ভ্রু কুঁচকে বলল

-‘এত রাতে কার সাথে এভাবে কথা বলছো আপু?’
নিরুপমা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল
-‘তোর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম।’
নীলা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘পাশের রুমে দুলাভাই তার সাথে আবার ফোনে কথা বলা লাগে নাকি?’
নিরুপমা হা হা করে হেসে উঠলো। তারপর হাসি দিয়েই বলল
-‘এত কিছু তুই বুঝলে তো হতোই।আর এখন এত রাতে একসাথে বসে কথা বললে মানুষ কি বলবে?’
নীলা “ওহ” বলে চুপ হয়ে থাকে।তারপর কতক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত স্বরে বলল
-‘আপু একটা কথা বলি?’

নিরুপমা বোনের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তারপর তারা হেসে বলে
-‘ওমা তুই কবে থেকে আমার সাথে কথা বলার জন্য পারমিশন নেওয়া শুরু করলি?’
নীলা ছোট্ট শ্বাস ফেলল। তারপর বলল
-‘কখনো কখনো সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে একটা দেয়াল তৈরী হয়ে যায়। তখন এমন বদলই আসে।’
নিরুপমা উঠে আসে।বোনের মাথাটা বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলল
-‘আমার ছোট বোন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে মনে হয়। এত কঠিন কঠিন কথা বলছে কেনো হুম?’
নীলাও বড় বোনকে জড়িয়ে ধরে।কতদিন পর দূরত্ব মিটিয়ে এত কাছে এলো ওরা।নীলা আনমনেই বলে

-‘আচ্ছা আপু তুমি এ বিয়েতে খুশি তো?’
নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘তুই খুশি তো?’
নিরুপমার প্রশ্নে থমকে যায় নীলা।আমতাআমতা করে বলে
-‘ওমা খুশি হবো না কেন? বেশ খুশি আমি।’
নিরুপমা হেসে বলে
-‘তোরা খুশি হলেই আমি খুশি। যেখানে সবাই এই বিয়েটা নিয়ে এত খুশি সেখানে আমার আর কি দ্বিমত থাকবে বল!’
নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কতকথা জমে থাকে বুকের ভিতর বলতে না পারার আফসোস হয়ে বের হয় দীর্ঘশ্বাস। আজও বলতে পারে না রাহাত নামক মানুষটার পৈচাশিকতার কথা।
সবাই সহ্য করতে পারবে না যে সবটা।কি হবে ভবিষ্যতে ভেবে কলিজা শুকায় নীলার।

বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব ১৭

আজ বেশ সকালেই সবাই উঠে পড়েছে।গোছগাছ চলছে বাড়ি ফেরার।নীলা চুপ করে পর্যবেক্ষণ করছে সবটা।
নীলার পাশেই হঠাৎ রাহাত ধপ করে এসে বসলো।নীলা ঘুরে তাকিয়ে রাহাতকে উঠে যেতে নিলে রাহাত নীলার হাতটা খপ করে ধরে বলল
-‘কোথায় যাচ্ছিস?আমি তোর সাথে দরকারী কথা বলতে আসছি। কোনো রকম খারাপ আচরণ ছাড়াই আমার কথা টা শেষ করতে দে।’
নীলা আবার স্থির হয়ে বসল।রাহাত কতক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত স্বরে বলল
-‘নীলু আমাদের সাথে চল।আমি কোন রূপ খারাপ আচরণ করবো না তবুও চল তুই।’
নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল

-‘বাহ্ বাহ্ তা হঠাৎ কোন কুমতলবে এত সমাদর?’
রাহাত রেগে উঠে।তারপর আবার কোনো রকম রাগ দমিয়ে বলল
-‘এত তেজ দেখাইছ না নীলু এতে তোর ক্ষতি।’
নীলা কিছু বলবে তার আগেই তার বাবা আজিজুর রহমান এসে নীলার পাশের সিট দখল করল।রাহাত তার চাচাকে পাশে বসতে দেখে উঠে চলে গেলো।নীলু হাফ ছেড়ে বাঁচল।
আজিজুর রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-‘মা এই কয়েকদিন ভার্সিটিতে যাওয়া কি খুবই জরুরী?বাড়িতে উৎসব মুখোর পরিবেশ তোমাকে ছাড়া বেশ খালি খালি লাগবে।’
নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-‘হ্যাঁ বাবা অনেক বন্ধ দিয়েছি সামনে পরীক্ষা কয়েকটা দিন ক্লাশ না করলে বড্ড খারাপ দেখায়।’
আজিজুর রহমান মেয়ের কথায় মাথা নাড়ায়। তারপর শান্ত স্বরে বলল
-‘তোমার যেখানে শান্তি মিলে সেখানেই তুমি থাকবে।আমাদের মেয়েদের স্বস্তি আগে তারপর সব।’
নীলা মাথা নিচু করে ফেলে।বাবা তহলে বুঝতে পারে তার অস্বস্তি। কিন্তু কীভাবে?

বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব ১৯