বিয়ে থা পর্ব ৩৮

বিয়ে থা পর্ব ৩৮
তাহিনা নিভৃত প্রাণ

সন্ধেবেলা ঘুমানোর কারণে ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো নিনীকার। হাত দিয়ে বিছানা হাতড়ে কিছু একটা খোজলো, পেলো না। নিজের উপর ভারী কোনো কিছু অনুভব ও হলো না। তবে মানুষটা কোথায়?
নিনীকা ফট করে চোখ মেলে তাকালো। দৃষ্টি ঘরের চারিদিকে ঘুরাতেই আটকালো খাটের ঠিক পাশের মেঝেতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পড়োনে শুভ্র রঙের একটি শার্ট। মাথায় একটি শুভ্র টুপি। মেঝেতে নিনীকার একটি পরিষ্কার শুভ্র রঙের সুতির ওড়না বিছানো। মানুষটা সিজদাহ্ দিচ্ছে। নিনীকার মনে অদ্ভুত সুখ সুখ অনুভূতি হলো। বিছানা থেকে ঝটপট নেমে ওয়াশরুমে ঢুকলো। বের হয়ে এলো দ্রুত। ধ্রুবর একটু পেছনে আরেকটা ওড়না বিছিয়ে নামাজে দাড়িয়ে গেলো। সে যখন সবে দাড়িয়েছে, তখনই ধ্রুব সালাম ফিরিয়ে তার দিকে তাকিয়েছে।

ধ্রুবর চোখেমুখে স্বর্গীয় কোনো সুখী ভাব। নিনীকার সালাম ফেরানো পর্যন্ত বসে রইলো। তারপর দুজন একসাথে মোনাজাত ধরলো।
দোয়া শেষ করে ধ্রুব প্রথম স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করলো। নিজের কপালেও অনুভব করলো একটি পবিত্র স্পর্শ।
ধ্রুব জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসালো। গালে হাত রেখে স্ত্রীর মুখশ্রীতে চোখ ভুলিয়ে নিলো। চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। চোখেমুখে আগের মতো আর দুঃখী ছাপ নেই। ধ্রুব আনন্দের সাথে বলল,
‘ সুন্দর সকালের শুভেচ্ছা মিসেস। কেমন অনুভব করছো আজ? মন ভালো? ‘
নিনীকার সুখে চোখ ভরে গেলো। সে কখনো শুনেনি, কখনো দেখেনি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছে ‘মন ভালো? ‘

ধ্রুব চোখের পানি মুছে দিলো।
‘ আমি কি তোমাকে কষ্ট দিলাম? ‘
নিনীকা আছড়ে পড়লো,
‘ না গো, আমার তো সুখে কান্না পাচ্ছে। তুমি এতো ভালো কেন? ‘
ধ্রুব মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলো,
‘ কোথাও একটা পড়েছিলাম তুমি যেমন তোমার জীবনসঙ্গী ও তেমনই হবে। ধরে নাও তুমি ভালো বলেই আমি-ও ভালো। ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানেরা-ও ভালোই হবে। ইনশাআল্লাহ। ‘
নিনীকা খোলা বারান্দার দিকে দেখিয়ে বলল,

‘ কাপড় কে ধুয়েছে, তুমি? ‘
‘ হ্যাঁ কেন? ‘
‘ কষ্ট করতে গেলে কেন? আমিই ধুয়ে দিতাম ঘুম থেকে উঠে। ‘
‘কষ্ট হবে কেন? মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেছিল। তাই ভাবলাম কাজ কিছু টা এগিয়ে রাখি। এতোক্ষণে হয়তো কাপড়গুলো শুকিয়ে গেছে কিছু টা। ব্যাগপত্র ও গুছানো আছে। আমরা বের হয়ে যাবো একেবারে একটু পর। পথে নাস্তা ও করে নিবো। একটু রেস্ট নিয়ে নাও। ‘
নিনীকা গালে হাত রাখলো,

‘ তুমি রেস্ট করো একটু। ‘
ধ্রুব বালিশে মাথা রেখে হাত বাড়ালো,
‘ এসো ঘুমাবো। ‘

চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সামনের একটি কটেজের গেইটের পাশে থামলো জীপ গাড়িটি। ধ্রুব নেমে ব্যাগপত্র হাতে নিলো। চারিদিকে অন্ধকার, আলগোছে চেপে ধরলো নিনীকার একটি হাত।
আজ তাদের দুজন একসাথে ট্রেনে করে এসেছে। ধ্রুব জীপগাড়িটি বাংলাদেশ টু ভারত কিভাবে নিয়ে গেছে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে সেটা সেই জানে।
গেইটের সামনে দাড়ানো অবয়বটা স্পষ্ট হলো। নিরব এগিয়ে এসে দাড়ালো।
‘ আসুন মেজর, আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ‘
‘ না তেমর অসুবিধা হয়নি, জীপগাড়িটা আনতে সময় লেগেছে সেজন্য লেট হয়ে গেলো। তোমার ম্যাম ক্লান্ত, রুম ক্লিন করা তো? রেস্ট নিবে সে। ‘

‘ সব ক্লিন এবং ঠিকঠাক করা আছে। ম্যামের কোনো অসুবিধা হবে না। ‘
ধ্রুব নিনীকার হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
‘ আর কোনো দরকার হলে আমি ফোন করবো, তোমাকে ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন। ‘
নিরব চাবি দিয়ে চলে গেলো। ঘুমের ঘোরে নিনীকা তেমন কিছু শুনতে পাচ্ছে না। ধ্রুব ব্যাগপত্র নিচে রেখে নিনীকাকে কোলে তুলে নিলো। তার মিসেস ঠিকঠাক দাঁড়াতেই পারছে না।

শুভ্র বিছানায় আরামে ঘুমাচ্ছে নিনীকা। ধ্রুব ব্যাগপত্র রেখে দরজা বন্ধ করে পড়োনের শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেললো। ঘেমে গোসল হয়ে গেছে তার। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে তবেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। উত্তপ্ত পরিবেশে এক টুকরো শান্তি কুড়াতে নিনীকা বেছে নিলো ধ্রুবর ঠান্ডা বুক।
পরদিন ভোরে উঠতে দেখা গেলো ধ্রুবকে। যথা নিয়মে সে নামাজ আদায় করলো। নিনীকা যখন চোখ মেললো তখন ধ্রুব মেঝেতে বুক ডাউন দিচ্ছে। উদাম শরীর বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। নিনীকার পড়োনে ঢিলেঢালা একটি সাদা রঙের সিল্কের প্লাজু ও পেট পর্যন্ত ছোট কাপড়। নিজের পোশাকের অবস্থা দেখে সে অবাক হলো না, ধ্রুবই পাল্টে দিয়েছে।

নিজের পাশে আরেকটি মানুষের অস্তিত্ব অনুভব করলো ধ্রুব। থেমে চোখ তুলে পাশে তাকালো। ছোটখাটো একটি পিঁপড়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে বুক ডাউন দিতে চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে পিঁপড়ে টা হাত ফসকে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলো। বুকে ব্যথায় ঠোঁট উল্টে ওভাবেই শুয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে কাছে টানলো। চেক করে বলল,

‘ বেশি ব্যথা পেয়েছো? ‘
নিনীকা কাধে মাথা রেখে গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে গেলো।
‘ আমার মধ্যের বুঝদার স্বভাব কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে মেজর, আমি অতিরিক্ত আহ্লাদী ঢংগি হয়ে যাচ্ছি। ‘
ধ্রুবর মুখ হা হয়ে গেলো।
‘ তোমার আহ্লাদ করার মানুষ আছে আহ্লাদী হতে ক্ষতি কি? ‘
নিনীকা পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো। ধ্রুব মেঝেতে বসে টেনে দু’পায়ের ফাঁকে বসালো। অগোছালো চুলে হাত দিয়ে বলল,

‘ কতো দিন তেল ছোয়াও নি বলো তো? মাথা কি আর এমনি এমনি পাগল হয়? হেয়ার ওয়েল আছে না? নিয়ে এসো। ‘
নিনীকা উঠে হেয়ার ওয়েল নিয়ে এলো। আবারও বসে পড়লো আগের জায়গায়।
ধ্রুব যত্ন করে চুলে তেল দিয়ে দিলো। আরামে নিনীকা কবে যে ঘুমিয়ে পড়েছে জানে না। যখন ঘুম ভাঙলো তখন ধ্রুব রুমে নেই। একটি চিরকুট রেখে গেছে।

‘ কাছেই আছি মিসেস। ঘুম থেকে উঠে গোসল দিবে। তারপর আমাকে একটা ফোন করবে। ‘
নিনীকা গোসল করে বের হয়েই ফোন করলো। ধ্রুব রিসিভ করতেই বলল,
‘ আপনি কোথায় চলে গেলেন আমাকে রেখে? ‘
‘ ডিউটিতে মিসেস, কিছুক্ষণের মধ্যে রুমে নাস্তা পৌঁছে যাবে। খেয়ে রেস্ট নিবে। আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো, সেনানিবাসে আছি। ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ধ্রুব ফোন রেখে দিয়েছে। ফিরলো সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে৷ আর্মি ইউনিফর্ম পড়োনে বুটের শব্দ তুলে রুমে ঢুকলো। নিনীকা একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে গেলো।
‘ তার বউয়ের কি হলো আবার? ‘
ফ্রেশ হয়ে এসে পাশে বসতেই নিনীকা একটু দূরে সরে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ধ্রুব টেনে নিজের উপর বসালো।
‘ গাল ফুলিয়ে রেখেছো যে? ‘

‘ ও….মিসেস? ‘
নিনীকা ফট করে তাকালো।
‘ এভাবে ডাকবে না একদম। তোমাকে আমি ভালোবাসি না। ‘
‘ ঠিক আছে বাসতে হবে না, আমার একার টাই যথেষ্ট। ‘
ধ্রুবর বুকে কিল-ঘুষি পড়লো।
‘ তুমি আমাকে মর্নিং আদর না দিয়ে চলে গেছিলে কেন? ‘
ধ্রুব দু’হাতে মুখ আগলে ধরলো।

‘ আমি দিয়েই গেছি মিসেস, তুমি ঘুমে ছিলে বলে টের পাওনি। ‘
‘ আমাকে একা রেখে গেছিলে, যদি কেউ ঘুমের সুযোগ নিয়ে কিছু করে ফেলতো? ‘
‘ ঘরে ক্যামেরা লাগানো আছে ম্যাডাম, আমি আপনাকে চোখেচোখেই রেখেছি। ‘
নিনীকা চমকে গেলো,
‘ আমি ঘরে কাপড় চেঞ্জ করেছি, তুমি সেটাও দেখেছো? বাজে লোক কোথাকার। ‘
‘ নতুন করে কিছু তো দেখিনি, সবমসময়ই দেখি। ‘
এমন ঠোঁটকাটা উত্তরে নিনীকা চুপ করে রইলো। ধ্রুব অভিমান ভাঙাতে চেষ্টা করলো।
‘ শাড়ি পড়বে? ‘

নিনীকা বিনাবাক্যে শাড়ি বের করে পড়তে শুরু করলো। ধ্রুব কুঁচি ঠিক করে দিলো। নিজেকে ফিটফাট করে বের হলো বউকে নিয়ে কটেজ থেকে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাঁটতে তেমন মন্দ লাগছিল না নিনীকার। অভিমান অনেক আগেই না-ই হয়ে গেছে। দুজন একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে বসলো। পাশাপাশি বসে চা খাওয়া হলো। তারপর ফিরে এলো কটেজে।
ঘরে খাবার দিয়ে যেতেই নিনীকা নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ হোটেলের খাবার খেতে ভালো লাগে না। বাজার করে আনবে, সাথে কিছু রান্না করার আসবাবপত্র। আমি রান্না করবো। ‘

ধ্রুব বিনাবাক্যে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। পরদিন ফেরার সময় সে নিরবকে সাথে নিয়ে সবকিছু কিনে নিয়ে এসেছে। কিছু অনলাইনে ও অর্ডার করেছে। ধ্রুব সব ঘরে সেট করে একটি শর্ত দিলো।
‘ সিলিন্ডার গ্যাস, রিস্ক আছে। আমি ঘরে থাকলেই তুমি রান্না করতে পারবে। যদি আমি দেখি আমার অবর্তমানে তুমি এটায় হাত দিয়েছো তবে তখনই তোমার রান্না বন্ধ হয়ে যাবে। মনে থাকবে? ‘
নিনীকা মাথা নাড়ালো। ধ্রুব বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ প্রতিদিন আসতে বাজার নিয়ে আসবো, ফ্রিজ অর্ডার করেছি এনে দিবে দু এক দিনের ভেতরে। তখন না-হয় একসাথে বেশি করে বাজার করে ফেলবো। হু? ‘

‘ আমিও বাজারে যাবো। ‘
‘ যাবে, সমস্যা কি? ‘
নিনীকা শাক ও ভাত রান্না করলো। প্লেটে তুলে ধ্রুবর হাতে দিলো। ধ্রুব রান্নার সময়টায় এক সেকেন্ড ও এদিক সেদিক তাকায় নি। পাছে কখন তেল ছিটকে আসে আর তার মিসেসের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। প্লেট হাতে নিয়ে ভাত মাখিয়ে প্রথম লোকমাটা নিনীকার মুখে তুলে দিলো। নিনীকা ইশারা করে বলল,
‘ তুমি খাও তো। ‘

ধ্রুব খেলো। সে ভেবেছিল তেমন ভালো হবে না। নিনীকা তেমন রান্না ও করেনি কখনো। কিন্তু ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। পারফেক্ট হয়েছে সব।
‘ ভালো হয়নি গো? ‘
ধ্রুব আরেক লোকমা মুখে তুলে দিয়ে হাসলো।
‘ পারফেক্ট, আমি তো ভেবেছি তুমি রান্না তেমন জানো না। ‘

‘ মায়ের থেকে অনেক রান্না শিখেছি। হোস্টেলে থাকতে রান্না করতে হতো। তোমার কি ভালো লাগছে? ‘
‘ অনেক, বাড়িতে না গেলে আমার সবসময়ই বাহিরের খাবার খেয়ে থাকতে হয়। বিয়ে করে বউ সাথে নিয়ে এসে ভালো করেছি, এখন ভালো মন্দ খেতে পারবো। ‘
নিনীকা হেসে ফেললো,
‘ এবার আমাকে কিছু দাও। ‘
‘ কি নিবে? ‘

‘ এইযে রান্না করে খাওয়াচ্ছি, তার বিনিময়ে যা ইচ্ছে দাও। ‘
ধ্রুব টেবিলের উপর থেকে নিজের ওয়ালেট এনে নিনীকার হাতে তুলে দিলো।
‘ সবই আপনার ম্যাম। ‘
নিনীকা ওয়ালেট খুললো। বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন তুলা তাদের পারিবারিক ছবি এক সাইটে যত্ন করে রাখা। ছবিতে ধ্রুব ও নিনীকা হাত ধরে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের দুজনের একসাইটে ফাহিম মাহবুব ও ধারা, আরেক সাইটে ফারিন ভাবীর কাঁধ জড়িয়ে রীতিমতো ঝুলে আছে।
‘ ছবিটা কবে ওয়ালেটে রাখলে? ‘
ধ্রুব যাওয়ার ফাঁকে বলল,

‘ ডিউটিতে আসার আগের দিন। ‘
নিনীকা ছবিটা বের করতে গিয়ে দেখলো এটার নিচে আরেকটা ছবি। খুবই ঘনিষ্ঠ একটি ছবি। ধ্রুব নিনীকাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালের এক সাইটে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে। এটা বৌভাতের। নিনীকার মুখে হাসি ফুটলো। ধ্রুবর গালে চুমু দিলো ফটাফট কয়েকটা। ধ্রুব হাসতে গিয়ে বিষম খেলো।
নিনীকা পানি খাইয়ে শান্ত করলো।
‘ ঠিক আছো? ‘

ধ্রুব কিছু না বলে খাওয়া শেষ করলো। নিনীকা ধরে নিলো তার হাসবেন্ড রাগ করেছে। কিন্তু হলো তার উল্টো৷ ধ্রুব খাওয়া শেষ করে বউকে কোলে তুলে নিয়ে নরম বিছানায় ফেলেছে।
রাতের শেষপ্রহরে ঘুমে ডুবে যেতে যেতে সে বিরবির করে বলেছে,
‘ আমার বৌ, আমার বৌ…আমার মিসেস। ‘
নিনীকা কানে ফিসফিস করে উত্তর দিলো,
‘ মেজর ধ্রুবর মিসেস। ‘

আর্মি ইউনিফর্মের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলো নিনীকা। প্যান্টের বেল্ট ঠিকঠাক করে দিলো। হাতে ক্যাপ নিয়ে সামনে দাড়াতেই ধ্রুব উঁচু করে উপরে তুললো। মাথায় ক্যাপ পড়িয়ে দিয়ে কপালে গাঢ় করে চুম্বন করে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো সে। ধ্রুব এক হাতে পকেটে ওয়ালেট ঢুকালো। পায়ে আগেই বুট জোতা পড়ে নেওয়ায় ঝামেলা পোহাতে হলো না।

‘ তাকাও মিসেস। ‘
নিনীকা মাথা তুললো।
‘ মন খারাপ করছো কেন? ‘
‘ তাড়াতাড়ি ফিরবে, একা রুমে ভালো লাগে না। ‘
ধ্রুব পুরো মুখশ্রীতে ঠোঁটের স্পর্শ স্থাপন করলো। লাল টুকটুকে হয়ে গেছে মুখ। একটু বেশি চাপ লাগলেই এমন হয়। স্পর্শকাতর স্থানেও বাদ রাখলো না। এতো এতো আদর পেয়ে নিনীকার এবার ধ্রুবকে ছাড়তেই ইচ্ছে করলো না। কিন্তু ছাড়তে হলো। ধ্রুব মুখে মুখ লাগিয়ে রাখলো।

‘ আমার মোমের পুতুল, তোমাকে আদর করতেও ভয় লাগে। যদি মোমের মতো শরীরে দাগ পড়ে যায়। ‘
নিনীকার বলতে ইচ্ছে করলো ‘ আজ যেও না’ কিন্তু বলতে পারলো না। ধ্রুব চলে গেলো। সবসময়ের মতো নিনীকা ফারিন না-হয় ধারার সাথে কথা বললো, কখনো বা নিজের কাছে থাকা পড়ে ফেলা একটা দুটো উপন্যাসের বই আবারও পড়তে লাগলো। ধ্রুব একটু তাড়াতাড়ি ফিরলো আজ।
তখন গোধুলি বিকেল। উপন্যাসে ডুবে যাওয়া নিনীকার কানে এলো একটি আহ্বান।
‘ নিনীকা মেজর হেয়ার..’

নিনীকা সব ফেলে ছুটে বের হলো। সিঁড়ি থেকে এক প্রকার লাফ দিয়ে পড়লো ধ্রুবর উপর। ধ্রুব নিজের উচ্চতার থেকেও উঁচু করে তুলে ধরেছে। নিনীকা মেজরের ক্যাপটা নিজের মাথায় পড়ে নিলো। দু-হাত প্রসারিত হতেই ধ্রুব ঘুরাতে শুরু করলো।
চারিদিকে সবুজের সমারোহ। উপরে নীল রাঙা আকাশ। নিচে আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত একটি যুবক, শুভ্র রঙের গাউন পরিহিত নিজের স্ত্রীকে উপরে তুলে ঘুরছে। আর্মির ক্যাপ পরিহিত স্ত্রীটির খিলখিল হাসিতে মুখরিত হচ্ছে চারিদিক।

তখনই আগমন ঘটে নিরবের। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো তার। আড়ালে দাড়িয়ে দৃশ্যটি মোবাইলে ক্যামেরা বন্দি করে নিশ্চুপে প্রস্থান করলো। সে খুঁজ খবর নিতে এসেছিলো, ফাহিম মাহবুবের আদেশে।
নিনীকা হাসি থামাতে পারছে না। এতো খুশি, এতো আনন্দ শুধুমাত্র এই একটি মানুষই তাকে দিতে পারে। ধ্রুব একসময় ঘুরানো থামালো। বুটজুতোর শব্দ তুলে বউকে কাঁধে তুলে নিয়ে চললো রুমে। নিনীকার তেলে ডুবানো চুলগুলো মাটির দিকে হেলে রয়েছে। যদি লম্বা হতো তাহলে হয়তো মাটি ছুঁয়ে ফেলতো। রাতে তাকে এভাবে কেউ দেখলে পেত্নী ও ভাবতো।

আজ ধ্রুব রান্না করবে। নিনীকা তার এসিস্ট্যান্ট। মুরগী ভালোই রান্না করতে পারে সে। নিনীকা স্পাইসি করে মাংস খাবে বললো। ধ্রুব ঝালঝাল করে রান্না করলো। খেয়ে চোখের জল নাকের জল এক করলো দুজন। পানি খেয়েও যখন স্বস্তি মিললো না তখন সমাধান হিসেবে আঁকড়ে ধরলো দুজন দুজনকে। কে কার ভেতরে ঝাল গুলো ঢেলে দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা চললো।

নিরব ছবিটা ফারিনের মোবাইলে সেন্ড করেছে। ফারিন ছবিটা দেখেই কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো। তারপর চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলেছে। ফাহিম ও ধারা বের হয়ে মেয়েকে লাফাতে দেখে অবাক হলেন না। সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন কবে লাফানো বন্ধ করে ঘটনা খুলে বলবে। ফারিন লাফানো বন্ধ করে মোবাইল এগিয়ে দিলো। ধারার পাশে বসে বলল,

‘ দেখো মাম্মা, ভালো করে দেখো। সাদা গাউনে ভাবিকে প্রিন্সেসের থেকে কম লাগছে না। মাথায় আবার ভাইয়ার আর্মির ক্যাপ পড়েছে। ছবিটা কতো ওয়া-ও। কতো রোমান্টিক। মাম্মা মাম্মা আ’ম সো হ্যাপি। ‘
ফারিন এবার ফাহিম মাহবুবের পাশে গিয়ে বসলো। গলা জড়িয়ে ঝুলে পড়লো।
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ পাপা, তোমার পছন্দ আসলেই সুপার। ইশ কতো সুন্দর সে। একদম পুতুল। ‘
ফাহিম মাহবুব অসহায় কন্ঠে বললেন,

‘ একবার তো ভাইয়ের প্রশংসা ও করতে পারতে মা আমার। ‘
ফারিন পিটপিট করে তাকালো মোবাইল স্কিনে। আর্মির ইউনিফর্ম পড়া ধ্রুব তাকিয়ে আছে নিনীকার দিকে। নিনীকা দুহাত প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে হাসছে। কতো অপূর্ব দৃশ্য। ধ্রুব আছে বলেই ছবিটা এতো সুন্দর হতে পেরেছে।
‘ যাও করলাম প্রশংসা। ব্রো ছবিতে আছে বলেই ছবিটা পূর্ণতা পেয়েছে। তবে তোমার দজ্জাল ছেলেকে বলবে আমার পুতুল কে যেনো একা না ছাড়ে। হুহ! ‘

ফাহিম মাহবুব হাসলেন। ধারা এতোক্ষণে বললেন,
‘ ছবিটা সত্যিই সুন্দর৷ কে তুলেছে? আর তুমিই বা কোথায় পেলে? ‘
ফারিন নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
‘ কে দিবে আবার, ভাইয়ার ওই ক্যাপ্টেন সেন্ড করেছে।’
‘ আমি খেয়াল করেছি তাকে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে তুমি বিরক্ত হও। সে কি তোমার সাথে বিরক্তিকর কিছু করেছে মাই প্রিন্সেস? ‘

বিয়ে থা পর্ব ৩৭

‘ অফকোর্স! মাঝে মধ্যে ফোন দিয়ে বলবে ‘ মিস ফারিন আপনি কি মেজরকে একটু বলবেন তার সাথে জরুরি প্রয়োজন, মোবাইল টা অন করতে? ‘ যদি আমি বিরক্ত হয়ে বলি আমাকে কেন ফোন করেছেন? বাড়িতে কি আর কেউ নেই? তখন ন্যাকা সুরে বলে ‘ আমি দুঃখীত মিস ফারিন। ‘
ধারা হেসে ফেললেন। ফাহিম মাহবুব মেয়ের গাল টেনে দিলেন।
‘ আমার অফিসার কিন্তু ভালো মা, রিটায়ার্ড নেওয়ার পরেও সে এখনো আমি কোনো অর্ডার দিলে তা পালন করে। ‘

বিয়ে থা পর্ব ৩৯