বিয়ে থা পর্ব ৩৯
তাহিনা নিভৃত প্রাণ
তিনমাস অতিক্রম হলো। এই তিনমাসের মধ্যে নিনীকা ভারতে গিয়ে সুমিত্রার বিয়েতে একবার উপস্থিত হয়েছে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানের পর কয়েকদিন ক্লাস করে তবেই চট্টগ্রামে এসেছে। আজ চট্টগ্রামে থাকার দিন শেষ। ধ্রুব ঢাকাতে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। আজ তারা ঢাকাতে ফিরে যাবে। তিনমাসের এই ছোট্ট সংসারে নিনীকা অনেক কিছু পেয়েছে। ধ্রুব তাকে সুখী মানুষের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গেছে।
‘ মিসেস আমার কালো শার্টটা খুঁজে দাও। ‘
ধ্রুব ওয়াশরুমে ঢুকেছে গোসল করতে। নিনীকা গুছিয়ে রাখা ট্রলি থেকে ধ্রুবর শার্ট বের করে বিছানায় রাখলো। নিজের জন্যেও বের করলো একটি কালো শাড়ি। যেটা ধ্রুব ইন্ডিয়া থেকে কিনে দিয়েছে তাকে। ওয়াশরুমে নক করলো সে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ ধ্রুব সাহেব দরজা খুলুন আমিও আসবো। ‘
ধ্রুবের আওয়াজ পাওয়া গেলো,
‘ দরজা আমি কখনোই লাগাই না মিসেস। আপনি ঢুকে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে। ‘
নিনীকা ঢুকে ঠা*স করে দরজা বন্ধ করে দিলো। ধ্রুবর উন্মুক্ত হাত টেনে জড়িয়ে ধরলো তার কোমড়৷
গোসল শেষ করে বের হয়ে দুজন তৈরি হয়ে নিলো। ব্যাগপত্র জীপের পেছনে রেখে উঠে পড়লো গাড়িতে। ধ্রুব নিজের চোখের গগলস খুলে নিনীকার চোখে পড়িয়ে দিলো। মোবাইল বের করে এগিয়ে দিলো। নিনীকা ক্যামেরা অন করে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে ঠোট চোকা করে গালের দিকে নিলো। ওটাই ক্যামেরায় বন্দি হবে। ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাতে চেষ্টা করছে। ক্যামেরায় নিনীকার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। ফুঁসে উঠে বলল,
‘ খুব হাসি বেড়ে গেছে তাই না? ‘
ধ্রুব শরীর দুলিয়ে শব্দ করে হাসতে হাসতে নিনীকার কাঁধে ঢলে পড়লো। নিনীকার রাগী স্বর,
‘ একদম হাসবে না, আমি একটা-ও ছবি তুলতে পারিনি। ‘
ধ্রুব নিজে ক্যামেরা অন করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে ছবি তুলে ফেললো। নিনীকা সেটা ধ্রুবর মোবাইলের হোম স্কিনের ওয়ালপেপারে লাগিয়ে দিলো। ধ্রুব ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘ ব্যক্তিগত অবস্থায় তুলা ছবিগুলো ও সেট করতে পারেন ম্যাাডাম, আপনার হাসবেন্ডের মোবাইলের পাসওয়ার্ড সে আর আপনি ছাড়া কেউ জানে না। ‘
নিনীকা তাদের ব্যক্তিগত ফাইলে ঢুকলো। ছবিগুলোতে চোখ ভুলিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। ধ্রুব একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেছে।
‘ তুমি আর আমিই তো মিসেস, এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন? আচ্ছা যাও একটা ছবি আছে দেখো তুমি আমার বুকে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছো। ওটা সেট করে দাও। যাতে সবসময় দেখে মন শান্ত করতে পারি। ‘
নিনীকা ছবিটা বের করলো। ধ্রুবর উন্মুক্ত বুকে নিনীকা ঘুমিয়ে আছে। কাঁথা উপরে থাকার কারণে নিনীকার উন্মুক্ত পিঠে ঝলমল করা চুল ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। মুখশ্রীর এক সাইড দেখা যাচ্ছে।
ধ্রুব ছবিটা দেখলো। নিনীকার কোমড়ে হাত রেখে বলল,
‘ আমার আবেদনময়ী। ‘
‘ ছবিগুলো কখন তুলেছেন বলুন তো? ‘
‘ আপনি যখন ক্লান্ত হয়ে আমার উপর হাত পা ছড়িয়ে ঘুমান তখন। ‘
‘ অসভ্য মেজর, ঘুমের সুযোগ নিয়ে আর কি কি করেন বলুন তো? ‘
‘ অনেক কিছুই করি, দেখা গেলো অনেক সময় ঘুমের মধ্যেই তোমার সাথে সব করে ফেলেছি। ‘
নিনীকা বড়বড় চোখে তাকালো। ধ্রুব হেসে বলল,
‘ আমিই তো মিসেস। ‘
বিকেল তিনটায় বউ কথা কও এর গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো জিপগাড়িটি। ফারিন সদর দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হলো। চিৎকার করে ডাকলো,
‘ ভাবী…’
ফারিন জাপ্টে ধরলো নিনীকাকে। তার চিৎকারে ফাহিম ও ধারা বের হয়ে এসেছেন। ধ্রুব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল,
‘ আমাকে তো কেউ জড়িয়ে ধরো, আমি ও তো কতোদিন পর এলাম। ‘
ধারা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
‘ কেমন আছিস বাবা? ‘
ধ্রুব উত্তর দিয়ে ফাহিম মাহবুবকে জড়িয়ে ধরলো। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ আমাকে কি ধরবে না? ‘
ধ্রুব বোনকে আগলে নিলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘ পরীক্ষার রেজাল্ট কবে দিবে? ‘
ফারিনের চোখমুখ চকচক করে উঠলো।
‘ ব্রো আমার সব পরীক্ষা ভালো হয়েছে। গোল্ডেন আসবে শিওর। ‘
‘ তাই নাকি? আরও কয়েকদিন বাকি না রেজাল্টের? ভালো কিছুই হবে। ‘
‘ তুমি আমার জন্যে কি এনেছো? ‘
ধ্রুব বোনকে আগলে ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে লাগলো।
‘ অনেক কিছুই এনেছি বনু। নিনীকা সব পছন্দ করে কিনেছে। ‘
পেছনে হেঁটে আসা নিনীকার দিকে ফারিন উজ্জ্বল চোখে তাকালো।
‘ সত্যি? ‘
নিনীকা হেসে মাথা নাড়ালো। ফারিন উচ্ছ্বাসে চিৎকার করলো।
‘ তাড়াতাড়ি দেখাও। নাহলে আমি শান্তি পাবো না। ‘
ধারা গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘ ভাই ভাবীকে একটু রেস্ট নিতে দাও ফারিন, বাচ্চামো করো না। তারা জার্নি করে এসেছে। ‘
ফারিন মুখ কালো করে ফেললো। নিনীকা ফারিনের হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ একদমই ক্লান্ত নই মা। ‘
ধ্রুব ফাহিম মাহবুবের হাত থেকে সব ব্যাগপত্র নিচে রাখলো। নিনীকা সোফায় বসলো ফারিনকে নিয়ে। ধারা ও ফাহিম মাহবুব ও বসলেন। ধ্রুব ফাারিনের জন্যে কেনা জিনিসগুলো একসাথে একটা ব্যাগেই রেখেছে। সেটাই খুললো। সবকিছু বের করে রাখলো।
ফারিন লাল রঙের গাউনটার দিকে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকলো।
‘ মাম্মা এটা কতো সুন্দর। এটা আমার? ‘
নিনীকা সব একটা একটা করে দেখাতে লাগলো।
‘ এখানে সবই তোমার। মা বাবার গুলো আমার ব্যাগে। ‘
নিনীকা নিজের ব্যাগ থেকে ফাহিম মাহবুব ও ধারার জন্য কেনা জামাকাপড় বের করে দিলো। ধারা ও ফাহিমের পছন্দ হলো সব। ধ্রুব হুট করে বলল,
‘ সবার জন্যে কিনলে তোমার হাসাবেন্ডের জন্য তো কিনলে না মিসেস। ‘
নিনীকা হেসে আরেকটা প্যাকেট বের করে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিলো।
‘ এটা আপনার মাই ডিয়ার হাসবেন্ড। ‘
ধ্রুব খুলে দেখলো। লাল, নীল সহ যত কালার আছে সব রঙের একটি করে শার্ট।
‘ আপনি কালো ও সাদা ছাড়া তেমন কোনো রঙেরই শার্ট পড়েন না। সেজন্য কিনেছি এগুলো। মাঝে মধ্যে পড়লে ভালো লাগবে। ‘
এটা সত্যি ধ্রুব চাকরিতে জয়েন করার পর তেমন কোনো রঙেরই শার্ট পড়ে না, হয় সাদা না-হয় কালো। ধ্রুব মাথা নাড়ালো,
‘ অবশ্যই মিসেস, আমি পড়বো। ‘
নিনীকা হাতে পড়া ঘড়ি খুলে নতুন আরেকটি পড়িয়ে দিলো।
‘ এটাও আপনার, সুন্দর না? ‘
ধ্রুবের ঠোঁটের কোণে হাসি,
‘ ফাস্ট ক্লাস মিসেস। ‘
ধারা চিন্তিত হয়ে বললেন,
‘ তোমার জন্যে কিছু কিনোনি মা? ‘
‘ কিনেছি মা, তবে অনলাইনে। ওগুলো আজ দিয়ে যাবে হয়তো। আপনাদের গুলোও কিছু টা অনলাইনে কিছু টা অফলাইনে কিনেছি। ‘
ধারার মুখে এবার হাসি ফুটলো।
‘ এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো দুজন। খেয়ে রেস্ট নিতে হবে। ‘
ধ্রুব ও নিনীকা ফ্রেশ হয়ে যখন নিচে নামলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। খাবার টেবিলে বসতেই নিনীকা অবাক হয়ে বলল,
‘ কেক কেন মা? ‘
ধারা মিটিমিটি হাসলেন। ধ্রুব পাশে বসে হাতের মুঠোয় হাত নিলো।
‘ প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা মিসেস। ‘
নিনীকা এবার সত্যিই চমকালো। একে একে ধারা, ফাহিম ও ফারিন দুজনকে শুভেচ্ছা জানালেন।
‘ কেকটা আমি আর তোমার বাবা মিলে তৈরি করেছি নিনীকা, ফারিন এসিস্ট্যান্ট ছিল। ‘
নিনীকার চোখ ভরে গেলো। ধারা ছু*রি এগিয়ে দিলেন। ফারিন একটি মোম এনে নিনীকা ও ধ্রুবর সামনে রাখলো৷ দুজন ফু দিয়ে সেটা নিভিয়ে দিয়ে কেক কা*টলো। কেক খাওয়া শেষে খাবার খেতে বসলো। দারুণ সব খাবার। ফাহিম মাহবুব বউমার প্লেটে খাবার তুলে দিলেন যত্ন করে।
‘ তোমার মা আর আমি রেঁধেছি। প্রথমে তুমিই টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে। ‘
নিনীকা একটা একটা করে টেস্ট করলো। খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলেন রেস্ট নিতে।
ধ্রুব প্যান্টের বেল্ট বাঁধতে ব্যস্ত। নিনীকা তখনই কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘ প্রথম বিবাহ বার্ষিকির শুভেচ্ছা মেজর ধ্রুব মাহবুব। ‘
ধ্রুব কিছু বললো না। পায়ে বুট জুতোর ফিতে বেঁধে উঠে দাঁড়ালো। কপালে ঠোঁট চেপে রাখলো দীর্ঘক্ষণ।
‘ আমি বের হচ্ছি, তুমি একটু রেস্ট করো ওকে? ফিরে আসবো তাড়াতাড়ি। ‘
নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ এ’বেলায় কোথায় যান? ‘
‘ সেটা সারপ্রাইজ থাক মিসেস। আসছি। ‘
ধ্রুব চলে গেলো। নিনীকা সারপ্রাইজ নিয়ে ভাবতে লাগলো। কি সারপ্রাইজ দিবে ধ্রুব? বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে কিছু?
ভাবতে ভাবতে নিনীকা ঘুমিয়ে গেলো। তার ঘুম ভাঙলো ধ্রুবর ডাকে। তড়িৎ গতিতে উঠে বসতেই ধ্রুব বুকে জড়িয়ে পিঠে হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলো।
‘ কখন এসেছেন? ‘
‘ ফ্রেশ হয়ে তোমাকে ডাক দিলাম মাত্রই। ‘
নিনীকা মাথা তুলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
‘ আমার সারপ্রাইজ? ‘
‘ ফ্রেশ হয়ে আসো ঝটপট, তারপর সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে। ‘
নিনীকা ফ্রেশ হতে চলে গেলো ঝড়ের গতিতে। বের হয়ে এলো সাইক্লোনের গতিতে। ধ্রুব হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো নিচে।
ডোয়িং রুম অন্ধকার। সাবধানে ধ্রুবর সাথে নামলো সে। আচমকা লাইট জ্বলে উঠলো। ধ্রুব ফিসফিস করে কানের কাছে বলল, ‘সারপ্রাইজ মিসেস। ‘
নিনীকা চমকে তাকিয়ে রইলো। ডোয়িং রুমে হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছেন রমজান শেখ ও মিথিলা। দুজন নিনীকার দিকে এগিয়ে এলেন। মিথিলা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ কেমন আছো আমার মা? প্রথম বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা তোমায় নিনীকা। ‘
নিনীকা উত্তর দিলো না। নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো। তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে রমজান শেখ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে আদর দিয়ে বললেন,
‘ বাবার উপর তোমার অনেক রাগ জানি। মানুষ মাত্রই তো ভুল মা। পারলে তোমার এই ঘৃন্য পিতাকে ক্ষমা করে দিও। প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জেনো। সর্বদা হাসিখুশি থাকো। আমি তোমাকে যা দিতে পারিনি, তা তোমাকে এই পরিবার মনপ্রাণ ভরে দিয়ে যাচ্ছে। আমি তোমার এই সুখে আনন্দিত আমার মেয়ে।’
নিনীকা অপলক তাকিয়ে রইলো শুধু। চোখেমুখে অবিশ্বাস্য ভাব। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সামনের মানুষটি তার কাছে ক্ষমা চাইছে। নিনীকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে উপরে উঠে গেলো। ধ্রুব পিছু পিছু যেতে নিলেই মিথিলা আটকে দিলেন।
‘ আমি ওর সাথে কিছু কথা বলতে চাই ধ্রুব। ‘
ধ্রুব মাথা নাড়ালো,
‘ নিশ্চয়ই। ‘
বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে নিনীকা। পিঠের উপর একটি হাত রাখলো কেউ। নিনীকা কান্না থামিয়ে দিলো। মিথিলা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলেন।
‘ তুমি আজ যে মানুষকে দেখেছো সে আমার সেই প্রেমিক পুরুষ, যাকে শুধু ভালবাসা যায় ঘৃণা করা যায় না। ‘
নিনীকার কন্ঠে তাছ্যিল,
‘ তাই নাকি? তবে শুনে রাখো, তোমার এই প্রেমিক পুরুষকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি। ‘
‘ আজ আমি তোমাকে যা বলবো তা শুনলে তুমি তাকে আর কখনোই ঘৃণা করতে পারবে না হয়তো। শুনবে? ‘
‘ কিছুই শুনতে চাই না। তোমার অন্ধ ভালোবাসার গল্প শুনে আমার কাজ নেই৷ ‘
‘ শুনে দেখো, নাহলে এক সময় আফসোস হবে তোমার, যে কেন তুমি আমার কথাগুলো শুনলে না। ‘
‘ তাই নাকি? ঠিক আছে বলুন শুনি। ‘
মিথিলা আরাম করে পা তুলে বসলেন। মেয়ের এক হাত টেনে কোলের উপর রাখলেন। তারপর বলা শুরু করলেন নিজের স্বামীর ঘৃন্য অতীত৷ পুরোটা সময় নিনীকা কখনো থমকে গেছে, কখনো নিজের বাবা নামক মানুষটির কষ্টে কেঁদে ফেলেছে।
‘ তুমি কি তাকে এখনও ক্ষমা করতে পারবে না? মানুষটিকে আমি অনেক কষ্টে সুস্থ করে তুলেছি। সে এখন তার মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনতে চায়। রাত হলে ঘুমায় না, তাকে অপরাধবোধ কুঁড়ে কুড়ে খায়। আজ তোমার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। মানুষটার নিজের জামাতার সাথে দারুণ ভাব হয়ে গেছে। ধ্রুব আর সে মিলে কি কি কথা বলাবলি করেছে আমি জানি না। তবে তাদের আলোচনার বস্তু হয়তো তুমি ছিলে। সে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসতে চায়নি। হয়তো ধ্রুবই আশ্বাস দিয়েছে। সেজন্য আজ ক্ষমা চাইতে এসেছে। কারণ তার মতে নিজের করা অপরাধের ক্ষমা হতে পারে না। তুমি কি তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার অপরাধবোধ কমিয়ে দিতে পারবে না? খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে নিনীকা?
নিনীকা চোখের পানি মুছে বলল,
‘ আমাকে ভাবতে হবে। তাকে ক্ষমা করা যায় কি না আমি ভেবে দেখবো। ‘
মিথিলা উঠে দাড়ালেন।
‘ আরও কয়েক ঘন্টা আছি তোমার শ্বশুরবাড়িতে। এর মধ্যে জানিয়ে দিও কিছু একটা। নাহলে মানুষ টা আশা নিয়ে বসে থাকবে। সাথে আমিও।
মিথিলা যেতেই ধ্রুব ঘরে ঢুকলো। নিনীকা ঝাপিয়ে পড়লো তার বুকে। ধ্রুব বাঁধা দিলো না। কাঁদুক, মন হালকা হবে।
নিনীকা এক সময় কান্না বন্ধ করলো। ধ্রুব তাকে বিছানায় বসিয়ে নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। দুহাত মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ তাকাও আমার দিকে। ‘
নিনীকা তাকালো।
‘ তোমার মনে আছে মিসেস? আমি তোমাকে বলেছিলাম সুমিত্রার সাথে প্লান করে তোমাকে দার্জিলিং নিয়ে আসতে বলেছিলাম। ‘
‘ হু ‘
‘ তোমার কখনো মনে হয়নি? আমি কিভাবে সুমিত্রার খোঁজ পেলাম? ‘
‘ কিভাবে পেয়েছেন? ‘
ধ্রুব একটু সময় নিয়ে বলল,
‘ তোমার বাবা, যাকে তুমি ক্ষমা করতে পারছো না তিনিই আমাকে সুমিত্রার নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন নিজের পালিয়ে যাওয়া বউয়ের খুঁজ পেয়ে যাবে। ‘
নিনীকার মুখ হা হয়ে গেলো।
‘ কি! ‘
‘ হু, আমি বাবার কাছ থেকে তোমার বাবা মানে শ্বশুর মশাইয়ের নাম্বার নিয়ে ছিলাম। তুমি কোথায় থাকতে পারো তার বিষয়ে কিছু জানেন কি না জিজ্ঞেস করেছিলাম। ‘
নিনীকা চুপ করে রইলো। ধ্রুব ফের বলল,
‘ কিছু মানুষ আছে নিনীকা, যারা উপরে নিজেকে একটু কঠোর দেখায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই নরম। তারা ভালো কাজগুলো গোপনে করে। কেন করে সেটা তাদের ভাবনার উপর নির্ভর করে। একেক জনের টা একেক ধরনের। তুমি কি তাকে এখনও ক্ষমা করতে পারবে না মাই ডিয়ার মিসেস? ‘
নিনীকা মাথা নাড়ালো। ধ্রুব তাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো নিচে।
সোফাতে বসে আছেন মিথিলা ও রমজান শেখ৷ ছোট্ট টেবিলে চা নাস্তা দেওয়া হয়েছে। ফাহিম মাহবুব ও ধারার সাথে টুকটাক কথাবার্তা বলছেন তারা। তন্মোধ্যে ধ্রুবর হাত ধরে সিঁড়িতে উপস্থিত হলো নিনীকা। ধ্রুব হাত ছেড়ে দিলো। নিনীকা সিঁড়ি থেকে দৌড়ে নামতে নামতে চিৎকার করে ডাকলো,
বিয়ে থা পর্ব ৩৮
‘ বাবা……! ‘
রমজান শেখ চমকে দাড়িয়ে গেলেন। ধীর পায়ে হেঁটে আসতে লাগলেন। নিনীকা গতি বাড়িয়ে ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়লো তার বাবার বুকে।
‘ বাবা, বাবা, বাবা। আমার হ্যান্ডসাম বাবা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘
রমজান শেখ মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। তার আখিঁদ্বয় ছলছল করে উঠলো। রমজান শেখ বড্ড আদর নিয়ে কাঁপা গলায় করুণ স্বরে ডাকলেন,
‘ নিনীকা, আমার প্রিয় মেয়ে…! ‘