বুকের বা পাশে পর্ব ২১

বুকের বা পাশে পর্ব ২১
written Nurzahan akter Allo

বিয়ের দিনের ঘটনা____!
প্রিয়মের আব্বু আর আম্মু ওদের সামনে, হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।তুয়া চোখ তুলে তাকায় উনাদের দিকে। তখন প্রিয়মের আব্বু, আম্মু তুয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর কাজীর দিকে তাকিয়ে বললো, “অতি শীঘ্রই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে।কারন শুভ কাজে বিলম্ব করাটা উচিত নই।”
একটুপর কাজী এসে তুয়াকে বললো কবুল বলতে। কিন্তু তুয়া চুপ করে আছে।বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর,যখন তুয়া কবুল বলতে যাবে।তখন আবার মেসেজের টোন বেজে উঠলো। তুয়া মাথা নিচু করে আছে।ওর হাতের উপর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।এবার প্রিয়ম ঘাড় ঘুরিয়ে তুয়ার দিকে তাকালো।সবাই তুয়াকে বলছে কবুল বলতে কিন্তু তুয়া চুপ করেই আছে। প্রিয়ম তখন বললো,

–“তুয়া কি হয়েছে?তুমি কাঁদছো কেন?কবুল বলো।” (প্রিয়ম)
–(সাইলেন্ট)
–“তু তুয়া কবুল বলো।” (প্রিয়ম)
তুয়ার আব্বু, আম্মু, তুরাগ, সবাই তুয়াকে বলছে কবুল বলতে।তুয়া হেঁচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে।প্রিয়ম তুয়ার দিকে ঘুরে বসলো।প্রিয়ম তুয়ার মুখটা তুলে কিছু বলবে তার আগেই তুয়া বললো,
–“আ আ আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।আ আমি প্রত্যয়কে ভালবাসি।” (কেঁদে দিয়ে)
–“ম ম মানে ক কি পাগলের মতো বকছো?” (প্রিয়ম অবাক হয়ে)
–“আমি প্রত্যয়কে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না।আমি প্রত্যয়কে খুব খুব ভালবাসি।”(তুয়া কেঁদে উঠে)
তুয়ার কথা শুনে প্রিয়ম সহ সবাই হতবাক হয়ে গেছে।প্রত্যয়ের বাবা মা কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।কি হচ্ছে এসব?কারো মাথায় কিছু ঢুকছেনা। প্রিয়ম নিজেকে শান্ত রেখে আবার তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“এতোগুলো মানুষের সামনে এমনভাবে মজা করাটা ঠিক হচ্ছে না তুয়া।কি হয়েছে তোমার আমাকে বলো?” (প্রিয়ম)
–“বলছিনা তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা!কথা শুনতে পাচ্ছো না তুমি।” (সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে,চিৎকার করে)
তুয়ার বাবাও অবাক হয়ে তুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ তুরাগ এসে তুয়াকে দুইটা থাপ্পড় মারলো।আর তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এতোগুলো মানুষের সামনে কাহিনী করা হচ্ছে? বিয়ে করবি না আগে বললি না কেন?আর নিজেরাই বিয়ে করবে বলে ঠিক করে এখন ঢং শুরু করেছো?তারাতারি বস আর দ্রুত কবুল বল।” (তুরাগ রেগে গিয়ে)
–“না আমি এই বিয়ে করবো না।আমি প্রিয়মকে বিয়ে করতে পারবোনা।আমি প্রত্যয়কে খুব ভালবাসি। প্লিজ তোমরা আমাকে আর জোর করো না।” (তুয়া)
এবার প্রিয়মের আম্মু সহ সবাই তুয়াকে কথা শুনাতে লাগলো।তুয়ার আব্বু আম্মু লজ্জা আর অপমানে মাথা নিচু করে আছে।প্রিয়মের আম্মু বলে উঠলো,
–“আমার ছেলের জীবন নিয়ে খেলা শেষ হলো?আমি জানতাম এই মেয়ে সুবিধার না।এখন তোমার শান্তি হলো আমার সহজ সরল ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে।” (প্রিয়মের আম্মু)
–“জাহিদ এবার তোর শান্তি হলো?এবার তুই আর তোর মেয়ের কলিজাতে পানি নামলো।তোরা এবার খুশি তো আমাদের এভাবে অপমান করে। ছিঃ!এই তুই আমার বন্ধু। (প্রিয়মের আব্বু তুয়ার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে)
–“এজন্য আমি প্রিয়মকে পই পই করে নিষেধ করেছিলাম। কারন এরা এমনই করে থাকে।এদের কাজই হলো সবাইকে ঠকানো। ওরা সবাই খুশি হলোশুধু আমার ছেলেটাই কষ্ট পেলো।” (প্রিয়মের আম্মু)

প্রিয়ম তুয়ার কাছে বসে।আর বার বার তুয়াকে বোঝাতে থাকে। তুয়ার একই কথা সে বিয়ে করবে না!এবার প্রিয়মের ধৈর্য্যের বাদ ভেঙ্গে গেল। প্রিয়ম তুয়ার বাহু ঝাঁকিয়ে বললো।
–“তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?কি সব বলছিস তুই?জান তুই এমন কথা কেনো বলছিস?কেউ কিছু বলেছে?বলনা জান বলনা তুই কেনো এমন করছিস?তোর জন্য সবাই আন্টি আংকেলকেও ভুল বুঝছে।তাদের কথা ভেবে এমন পাগলামি বন্ধ কর।এমন করিস না তুয়াপাখি।তোকে ছাড়া আমি জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো।আর কোন কথা বলিস না,চল আমরা বিয়ে করে ফেলি।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে,চল।” (প্রিয়ম তুয়ার হাত ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
প্রিয়ম তুয়ার হাত ধরে সোফাতে বসতে যাবে। তখনই তুয়া প্রিয়মের হাতের মুঠোয় থেকেওর হাত ছুটিয়ে নিলো।আর চিৎকার করে বললো,
–“তোমাকে আমি বিয়ে করবো না।তুমি শুনতে পাচ্ছো না?আমি এতোদিন তোমার সাথে অভিনয় করেছি।প্রত্যয়ের শূন্যতা দূর করতে সেই জায়গাটা কিছুদিনের জন্য তোমাকে দিয়েছিলো।এর থেকে বেশি কিছু নই।আশা করি তুমি আর আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।” (তুয়া)
প্রিয়ম তুয়ার গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।আর তুয়া গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।আর ছলছল চোখে প্রিয়মের দিকে তাকালো।তারপর দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।প্রিয়ম ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো। প্রিয়ম এমন শক আর সহ্য করতে পারছেনা।তুয়া এমন করবে প্রিয়ম কল্পনাও করতে পারেনি।প্রিয়ম মেঝেতে দুই হাত রেখে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেঁদে দিলো।
তুয়ার বাবা এসে প্রিয়মের কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“আব্বু আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাকে সুখের মুখ দেখাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আমার মেয়ের জন্যই তোমার কষ্টটা দ্বিগুন হারে বেড়ে গেলো।আমাকে মাফ করো আব্বু। আমার মেয়ের কাজের জন্য আমি খুব লজ্জিত।” (তুয়ার আব্বু)
–“না আংকেল আপনি এভাবে বলবেন না।আংকেল প্লিজ তুয়াকে একটু বোঝান।আমি সত্যি বাঁচতে পারবো না ওকে ছাড়া।আংকেল আমি আপনার পায়ে পড়ি।প্লিজ আংকেল তুয়াকে বলুন আমাকে যাতে এভাবে মাঝপথে একা ছেড়ে না যায়।আমি মরে যাবো আংকেল,আমি সত্যিই মরে যাবো।” (প্রিয়ম তুয়ার আব্বুর হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বললো)
–(তুয়ার আব্বু চুপ করে আছে,আর চোখের পানি ফেলছে)
–“না না আমার তুয়া আমাকে ঠকাতেই পারেনা।ও হয়তো ভুল বুঝেছে আমাকে।আমি বোঝালে ও ঠিকই বুঝবে।আমি জানি তো আমার তুয়া আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারেনা।” (প্রিয়ম)

প্রিয়ম কথাটা বলে চোখ মুছে নিলো।আর এক দৌড়ে বাইরে বের হয়ে গেল।তুয়া একটা সিএনজি নিয়ে ওদের বাসার দিকেই যাচ্ছে।সিএনজির ভেতর তুয়া হেচকি তুলে কাঁদছে। সিএনজি ড্রাইভারও কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।তাই সে চুপ করে আছে।তুয়াদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে সিএনজি থামলো।তুয়ার কাছে টাকা নেই এখন ভাড়া কিভাবে মিটাবে?সিএনজি ড্রাইভার বললো,
–“থাক আপা ভাড়া লাগবো না।তয় মুই জানিনা আপনার কি হয়ছে?তবে দোয়া করি সেই সমস্যার সমাধান আপনি খুব তারাতারি খুইজ্জা পান।আল্লাহ যেনো আপনার সহায় হন।” (ড্রাইভার)
–“আমাকে মাফ করবেন ভাই।আমি আপনার প্রাপ্য সম্মানীটা দিতে পারলাম না।(হাত জোড় করে, কেঁদে দিয়ে)
–“থাউক গা টাকা তো জীবনে অনেক আইবো আর যাইবো।আপা আপনি ভেতরে যান।” (ড্রাইভার)
তুয়া এক দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে এলো।লিফ্টের সামনে এসে দেখে লিফ্ট আছে ১২ তলায়।তাই তুয়া আর দাঁড়িয়ে না থেকে সিঁড়ি দিয়েই দোতলায় চলে এলো।প্রত্যয়দের দরজার লক ঘুরাতেই দরজা খুলে গেল।তুয়া এক দৌড়ে প্রত্যয়ের ঘরে ঢুকে পড়ে।তখন প্রত্যয় উপুড় হয়ে “দ “ভঙ্গিতে শুয়ে ছিলো।

প্রত্যয় তখন কাজের বাহানা দেখিয়ে বাসায় এসে পড়েছিলো।কারন ওখানে থাকাটা ওর পক্ষে সম্ভব হয়নি।সত্যি বলতে প্রত্যয় সেই সাহসটা জোগাতে পারেনি ।প্রত্যয় রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলো। সাবধানতার সাথে প্রত্যয় ওর চোখের পানি মুছে নিলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে একবার ঢোক গিলে নিয়ে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। প্রত্যয় ঘাড় ঘুরিয়ে তুয়াকে দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর হুড়মুড়িয়ে উঠে গেলো বেড থেকে।দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিয়ে ধরা গলায় বললো,
–“ক ক কি কি করছিস তুই এখানে?” (প্রত্যয়)
–(তুয়া হেঁচকি তুলে কাঁদছে)
–“ত তু তুয়া!কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?কোনো সমস্যা? প্রি প্রিয়ম কোথায়? তোদের বিয়ে কি সম্পূর্ন হয়ে গেছে?কাঁদিস না দেখবি তোরা খুব সুখী হবি।” (প্রত্যয় ধরা গলায় )
তুয়া কিছু বললো না।বরং দৌড়ে এসে প্রত্যয়ের বুকে হামলে পড়লো।হঠাৎ এমন করাতে প্রত্যয় দুই পা পিছিয়ে গেলো।আর পাশের ওয়্যারড্রপ
ধরে নিজেকে সামলে নিলো।প্রত্যয় বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে তুয়ার এমন কান্ডে।তুয়া শব্দ করে হাউমাউ করে কেঁদেই যাচ্ছে।এতোক্ষণ পর মনে হয় তুয়া ওর মুখ লুকানোর জায়গাটা পেলো।এখন ওর জন্য এই জায়গাটার খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো।প্রত্যয় তুয়ার চোখের পানি দেখে ওর তো পাগল হওয়ার উপক্রম।প্রত্যয় তুয়ার এভাবে কান্না করার কারনটা খুঁজে পাচ্ছে না।
তুয়া প্রত্যয়ের পিঠের শার্ট শক্ত করে খামছে ধরে প্রত্যয়ের গলায় মুখ লুকিয়ে উচ্চস্বরে কেঁদেই যাচ্ছে। প্রত্যয় বার বার জিজ্ঞেসা করছে, কি হয়েছে?কিন্তু তুয়া কিছু বলছেনা,শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।আর যা বলছে সে কথাটাও কান্না করার জন্য জড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে তুয়ার কোন কথাই বোঝা যাচ্ছে না।তুয়ার এভাবে কান্না করা দেখে প্রত্যয়ের চোখ লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এক্ষুণি রক্ত গড়িয়ে পড়বে।যার মুখে হাসি দেখার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে চেয়েছিলো।সেই যদি এখন কান্না করে তাহলে কিভাবে সহ্য করবে?যার সুখের কথা ভেবে নিজের সুখ বিসর্জন দিচ্ছিলো।তাকে এভাবে কিছুতেই কাঁদতে দেখতে পারবেনা।যত যাই হোক না কেন, তুয়ার মুখের হাসি ফোটানোর জন্য প্রত্যয় সর্বদা সবকিছু করতে প্রস্তুত।

বুকের বা পাশে পর্ব ২০

প্রত্যয় ওর এক হাত তুয়ার মাথার উপর রাখলো।আর আরেক হাত দিয়ে তুয়াকে ধরে আছে।তুয়ার চোখের পানিতে প্রত্যয়ের শার্ট ভিজে যাচ্ছে। এখনও তুয়া প্রত্যয়কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে প্রত্যয়ের বুকের ভেতরে লুকিয়ে পড়তে পারলে ওর শান্তি হতো।বাইরের সবকিছু এখন বিষাক্ত আর কাটাযুক্ত লাগছে।নিঃশ্বাস নেওয়াটাও যেন ওর জন্য খুব কষ্টসাধ্য হচ্ছে।প্রত্যয়ের বুকেই আছে এখন তুয়ার মুখ লুকানোর একমাত্র নিরাপদ স্থান।এজন্য তুয়া আপাতত প্রত্যয়ের বুকেই মুখ লুকিয়েছে।কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ করে তুয়া বলে উঠলো!
–“ভ ভা ভা ল বা সি, খুব বে শি ভা ল বা সি।

আম আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব।আমি খারাপ, আমি খুব খারাপ। আম আমাকে মাফ করে দাও। আর আ আমাকে একটু আশ্রয় দাও প্লিজ।আমি তোমার পায়ে পড়ি আমাকে তাড়িয়ে দিও না।তাহলে আমি আর বাঁচবো না,আমি এবার সত্যি মরেই যাবো।একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবো।আমাকে একটু দয়া করো। (তুয়া কান্না জড়ানো গলায়,উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলল)
প্রত্যয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়ম এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে।

বুকের বা পাশে পর্ব ২২