বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৬৯+৭০
রোজা রহমান
বাড়িতে বিয়ের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। সকলে হৈ হুল্লোড় করছে। রাতের খাবার খেয়ে সকলে বসার ঘরে ছোটরা গল্পতে মেতেছে। বিয়ে নিয়ে সব প্ল্যান হচ্ছে। নীহারের বিয়ের লগণ আগামীকাল কেউ নিয়ে যাবে না৷ কথা হয়েছে সকলের একবারের বরযাত্রী যাবে। গায়ে হলুদের তত্ত্ব গাড়িতে করে শুধু শিশির, তুহিন আর হিম গিয়ে দিয়ে আসবে। দূরের রাস্তা এত জার্নি করতে কেউ রাজি না। বড়রা মিলে এটাই ঠিক করেছেন৷ জাকিয়া বোন জিনিয়াকে এমনটাই বলেছেন। উনারা মেনেছেন৷ যদিও শশীর মন খারাপ হয়েছে তবুও শিশির আসবে শুনে খুশি হয়েছে৷ ইশশ, প্রিয় ভাইটাকে কতদিন পর দেখবে!! নীহারও অবশ্য শশীকে বুঝিয়েছে।
বসার ঘরে এইসবই সব কথা হচ্ছে। শিশির রিজভীকে আজই চলে আসতে বলেছে৷ কিন্তু সে জানিয়েছে আজ ক্লান্ত লাগছে আগামীকাল সকাল সকাল স্মৃতিকে নিয়ে চলে আসবে৷ নীহারের ভার্সিটির দুইটা ক্লোজ ছেলে বন্ধুকে শুধু বলেছে। তার মাঝে শান্ত আর নাদিম নামে যে তাদের আঙটি বদলে যেতে পারেনি। মেয়ে বন্ধুদের বিয়ে হয়ে গেছে বলে সেসব ঝামেলায় আর যায়নি নীহার।
বৃষ্টির কোলে বর্ষণ ঘুমিয়ে গেছে৷ ঘরে কেউ নেই রাতে ভয় পাবে ভেবে কোলে নিয়েই বসে আছে। সে জা, দেবরদের সাথে আড্ডাতে মশগুল। বর্ষণ এখন অবধি শিশিরকে ডাকে নি। সকলকে ডেকে ফ্যানা তুলে অথচ শিশিরকে একবারও ডাকল না বিষয়টা খুবই ভাববার বিষয়। সেই হা হুতাশা অবশ্য করেছে শিশির।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আড্ডাতে শিশির কুয়াশা একসাথে বসেছে পাশাপাশি। যেটা অয়ন, অনির কাছে অনেকটা অদ্ভুত লাগছে৷ কারণ আগেরবার এসে তাদের যা সম্পর্ক ছিল আর তারা যেভাবে চলত সেই সবই ভাবছে শুধু৷ সময় মানুষকে কতটা পরিবর্তন করে আর সময় কতটা কথা বলে, ভাবা যায়!! সময়ের সাথে মানুষ সহ মানুষের জীবনও পরিবর্তন হয়৷ এই দুইটা ঝগড়া চুলোচুলি শত্রু থেকে এখন স্বামী স্ত্রী!! অয়ন কথার ফাঁকে ফাঁকেই কুয়াশাকে দেখছে৷ মেয়েটার প্রতি মুগ্ধতা এখনো কাটেনি৷ শিশির অনেক বারই লক্ষ্য করেছে বিষয়টা৷ তবে কিছু বলল না৷
এতটা অভার পজেসিভও ভালো না৷ তার বউ তাকে ভালোবাসে আর সে যানে কুয়াশা অয়নকে একটুও পছন্দ করেনা৷ এটা অনেকভাবেই প্রমাণ পেয়েছে সে৷ তার বউ ঠিক তো সব ঠিক। বউকে কোনো কিছুতে সন্দেহ করার প্রয়েজনই ওঠে না৷ তার বুদ্ধিমতী বউ। আর রইল কথা অয়নের হয়তো আগের ভালোলাগার রেশ এখনো রয়ে গেছে! দুইদিনের জন্য এসেছে আবার চলে যাবে৷ আত্নীয়র সাথে এসব নিয়ে খারাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই৷ এইসবই ভেবে শিশির দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। কুয়াশার দিকে তাকাল৷ কুয়াশাও তাকাল৷ অমায়িক হাসল দু’জনেই। যেটা অয়ন, অনি দুই জনই দেখল৷ তারা সুখী দম্পতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিয়ে তাদের যেমনই হোক তারা মেনে নিয়েছে।
সকলে আগামীকাল গায়ে হলুদের প্রস্তুতি সহ প্ল্যান করে রাত এগারটা বাজাল৷ আর রাত জাগবে ঠিক করল সকলে। যা করার আগামীকাল করবে এই ভেবে সকলে উঠে পড়ল৷ একে একে সকলে ঘরে চলে গেল৷ আজকে রাতটা অয়ন নীহারের সাথে থাকবে। অনি, ঈশা কুয়াশার ঘরে চলে গেল। বাকিরা গেস্ট রুমে গেল৷
রাত এগারটা পাড় হয়েছে। কুয়াশা এসে কিছু জিনিস গুছিয়েছে আর সেগুলো হলো আগামীকালের প্রস্তুতি। শিশির এসে শুয়ে ফোন টিপছে। কুয়াশা কাজ করে এসেছে শুবার পস্তুতি নিল। কিছুক্ষণের মাঝে লাইট বন্ধ করে শুয়েও পড়ল। শিশির আরো কিছুক্ষণ ফোন টিপল। এরপর রেখে কুয়াশাকে ডাকল,
” এদিকে আয়। ”
কুয়াশা বিনা বাক্যে এগিয়ে গেল এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল স্বামীর ডাকের। কতগুলো রাত পর আবার এই বুক পাচ্ছে সে রাতে!! গত রাতগুলোর কথা মনে উঠলে এখনো দম আটকে আসে৷
কুয়াশা শিশিরের বুকের উপর মাথা রাখল। পেট জড়িয়ে ধরল। শিশির একহাতে জড়িয়ে নিল অন্য হাত অন্ধকারে কুয়াশার হাত ধরল। হাতের আঙুলের মাঝে আঙুল গলিয়ে ধরল। কুয়াশা স্বামীর বুকে এতগুলো বছর পর আবার রাত কাটাতে পেরে আবেগী হয়ে উঠল। বলল,
” আমার এই শান্তির স্থান কত যে মিস করেছি আমি! প্রথম কিছু মাস আমি ঘুমাতেই পারতাম না৷ ছটফট করে যদিও ঘুম হতো সেটাও কিছুক্ষণের মাঝে ছুটে যেত। বুক খুঁজতাম অন্ধকারে হাতরিয়ে৷ কিন্তু তোমাকে পেতাম না৷ তোমার হাতটাকে খুব চাইতাম আগলে নেবার জন্য কিন্তু তুমি ছিলে না৷ তড়পাতাম খুব। আল্লাহ আমার শান্তির স্থানকে অক্ষত রেখেছে এতেই লাখ লাখ শুকরিয়া। আমি আমার শান্তির স্থান আবার পেয়েছি, আজ আমি শান্তির ঘুম দেব৷ ”
বলে শিশিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। শিশির শুনল সব। আজ নিজেও সব আবেগ ঢেলে দিল। বলল,
” আমিও খুঁজেছি। রাতে আমার বুকটা শূণ্য হয়ে পড়ে থাকত৷ হাতটা তোকে খুঁজত৷ তোর কিছু জিনিস আমার খুবই বদঅভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে৷ এই যেমন; বুকে শুস, নাক ডলিস, আমার মাথায় বিলি কাটিস, তোর গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে শুই এসব সবই আমার অভ্যাস। বিয়ের পর থেকে শুরু হয়েছে আস্তে আস্তে। আগে আমি কারো পাশে শুতে পারতাম না, বিছানা একারই লাগত৷ অথচ তুই যেদিন থেকে এলি সেদিন থেকে অদ্ভুত ভাবে আমার কারো সাথে শোবার অভ্যাস হয়ে গেল৷ প্রথমদিন তোকে জড়িয়ে শুয়েছিলাম। কেন যেন অদ্ভুত একটা শান্তি বিরাজ করেছিল। যেখানে তোকে কিছুঘন্টা আগেও সহ্য করতে পারতাম না৷ তোর কথা আসলেই আগে বউ কথাটা চলে আসত আর সব কিছু এলোমেলো হয়ে যেত৷ এই বউ শব্দটার জন্য তোকে মানতে পেরেছি৷”
এই পর্যন্ত বলে থামল। কুয়াশা সব শুনছে মুখ বুজে। সে এবার কাৎ হয়ে শুয়ে কুয়াশার দিকে ঘুরল৷আবার বলল,
” তুই আমার সেই অমূল্য একজন যে আমার ছোটবেলা থেকে অভ্যাস। ছোট থেকে মারা মারি, ঝগড়া করে বড় হয়ে সেটা রয়ে গেল যা আমার অভ্যাস। বিয়ে হলো, বিয়ের পরও তৈরি করলি অনেক অভ্যাস৷ তোর সাথে পুরো জীবনটাই আমার অভ্যাসে কাটছে, কাটবে৷ তোকে এখন যে ভালোবাসি সেটাও বোধহয় বুড়ো হয়ে গেলেও অভ্যাসই থেকে যাবে৷ কারণ তুই পুরোটাই আমার অভ্যাস৷ ”
আবার থামল। কুয়াশা মুগ্ধ হয়ে শুধু শুনছে। অন্ধকারেই কুয়াশার কপালে চুমু দিল৷ বলল,
” কুয়াশা তুই আমার সেই অভ্যাস, যেটা আমি আমরণ চেয়েও ছাড়তে পারব না! তুই আমার এক চিরায়ত অমূল্য অভ্যাস।”
কুয়াশা শুনে শিশিরের বুকে মুখ গুঁজে দিল। শিহরণ হলো সর্বাঙ্গ৷ তার চিরায়ত অমূল্য ভালোবাসা এই মানুষটা। এতটা ভালোবাসা স্বামীর থেকে পাবে কখনো কল্পনা করেনি। ওভাবে থেকেই বলল,
” তুমি আমার সেই পাওয়া, যেটা আমি প্রতি ওয়াক্ত নামাজে আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে চাইতাম৷ আমার চিরায়ত অমূল্য ভালোবাসা তুমি। আমার প্রিয় স্বামী তুমি সর্বপরি, তুমি আমার সুখের আস্ত খনি।”
শিশির তা শুনে কুয়াশাকে যতটা পারল ততটা টেনে নিল নিজের মাঝে৷ শক্ত করে ধরল বুকের সাথে৷ কুয়াশা আবার বলল,
” বড় চাচুর মতো জীবনসঙ্গী চেয়েছিলাম আল্লাহ পূরণ করেছেন৷ বাবা মারা যাবার পর বাবার প্রতিচ্ছবি বড় চাচুতে পেতাম৷ তুমি বড় চাচুর মতো করে আগলে রাখতে যানো৷ তুমি আমার আস্ত একটা ভালোবাসা”
” তোর বড় চাচুই শিখিয়েছে বউয়ের দায়িত্ব, যত্ন আর সম্মান করা৷ বাবা আমার হাতে তোকে তুলে দিয়ে বলেছিলেন তোকে যেন আগলে রাখি। বাবার দায়িত্ব দেয়াটা মাথা পেতে নিয়েছিলাম৷”
বলে কুয়াশার গালে চুমু দিল। কুয়াশা আবেশে নাক, মুখ ঘষল বুকে৷ টের পেয়ে হাসল সে। ফিসফিস করে বলল,
” আমার আদুরে বিড়াল ছানা। ”
বলে দুইহাত জড়িয়ে নিল বুকের সাথে৷ কুয়াশা গুটিশুটি হয়ে বুকে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল। শিশিরও চোখ বুজল।
এদের ভালোবাসা সীমাহীন। বিয়ের আগে শত্রুতা ছিল সীমাহীন এখন ভালোবাসা সীমাহীন। কিন্তু এই দুইয়ের মাঝেই তারা চিরায়ত স্বত্ত্বা দু’জনের মাঝেই ধরে রেখেছে আর সেটা ঝগড়া, চুলোচুলি যেটা আজীবন থাকবে।
সকাল সকাল হৈ হুল্লোড় বেঁধে গেছে। সকালের নাস্তা খেয়ে সকলে গায়ে হলুদের আয়োজনে লেগেছে। সকল আত্নীয় স্বজন আসতে শুরু করে দিয়েছে। জাহিদ মালিথা সকাল নয়টার দিকে চলে এসেছেন৷ তুহিন বাবার সাথে সকল কাজ সারছে। তুষারের আসতে আসতে দুপুর হবে৷ নীহার নিজের বিয়ে তুবুও বসে নেই। শিশির বাসর ঘর সাজানোর লোককে বলে দিয়েছে৷ দুপুরে আসবে৷ রিজভী আর স্মৃতি এসেছে সকাল দশটার দিকে। শান্তরা এখনো এসে পৌঁছায়নি।
সকাল দশটার দিকে নীহারকে মেহেদী পড়ানোর জন্য কুয়াশা সহ ঈশা, অনি, বৃষ্টি, ইয়াসমিন খুবই করসত করেছে৷ সে মেহেদী টেহেদী পরবে না বলেছে৷ কিন্তু কুয়াশা ছাড়বে না৷ শেষ পর্যন্ত হার মেনেছে একমাত্র বোনের কাছে৷
বসার ঘরে বৃষ্টি এখন নীহারকে মেহেদী পড়াচ্ছে৷ বাকিরাও নিচ্ছে আবার পড়াচ্ছে। বর্ষণ খেলে বেড়াচ্ছে ফ্লোরে খেলনা নিয়ে। সে-সময়ে শিশির এলো ঘেমে নেয়ে সাথে হিম। তারা বাহিরের কাজে ছিল। এসে বসল সোফায়। কুয়াশা এখনো মেহেদী দিতে লাগেনি।
এমন সময় বর্ষণ খেলনা হাতে করে দুরদুর করে গুটিগুটি পায়ে মা’য়ের কাছে উঠে এলো৷ এসে কেঁদে জেদ করতে লাগল কোলে নেবার জন্য। বৃষ্টি বলল,
” বাবা একটু খেল চাচুকে মেহেদী দিয়ে নিচ্ছি ।”
তা শুনে নীহার কোলে নিতে গেল কিন্তু শিশির বলল,
” ভাই দে আমার কাছে। ”
বলে সে উঠে গিয়ে বর্ষণকে নিল। বৃষ্টি বলল,
” কুশু ওর খিদে পেয়েছে একটু খাইয়ে দাও। তুমি তো এখনো নাও নি মেহেদী। ডিম সিদ্ধ করে রেখেছি দেখো সকালে। ”
কুয়াশা ওকে সময় পেলেই খাইয়ে দেয়। আর বৃষ্টি না পেরে উঠলে সে-ই খাওয়াই। কুয়াশা বিনা বাক্যে সম্মতি দিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে। শিশির আবার আগের জায়গায় বসল। হিম পাশে বসল। শিশির বলল,
“আব্বু, আমাকে তুমি একবারও ডাকলে না? আমি তোমার চাচু হই। বলো চাচু।”
বর্ষণ খেলনা হাতে করে শিশিরকে দেখছে৷ কাল যখন থেকে এসেছে শিশির তখন থেকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে দেখেই যাচ্ছে। সবার সাথে বেশ কথা বলা, আর ডাকে কিন্তু শিশিরকে সে শুধু দেখেই যাচ্ছে। কী দেখছে কে যানে!! সে কান্না করে খুবই কম৷ নয়তো বাড়িতে এত লোকের আনাগোনা অন্য বচ্চারা হলে কান্না করে বাড়ি মাথায় করত। সেখানে সে নিরব৷ কুয়াশা বর্ষণের খাবার নিয়ে এলো৷ ডিম সিদ্ধ দিয়ে ভাত মাখিয়ে শিশিরের পাশে বসল৷ শিশির হঠাৎ ভ্রু, ম্রু কুঁচকে বলে উঠল,
” এ্যাই, কি করেছিস তুই আমার ছেলের সাথে? কি জাদুমন্ত্র পড়ে ফুঁ দিয়েছিস? ও সকলকে ডাকছে অথচ আমাকে কেন ডাকছে না? ”
বর্ষণ ফুপুকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিল। ডাকল,
“পুপি পুপি ”
খাবার দেখেছে। ফুপু এখন খাওয়াবে সে বুঝেছে৷ কুয়শা ভ্রু কুঁচকে তাকাল শিশিরের দিকে। অদ্ভুত!! সে-ও একই স্বরে বলল,
” এ্যাই, বুনো ওল ও তোমাকে ডাকছে না এখানে আমাকে কেন টানছ? এটা তোমার ব্যর্থতা।”
বলে বর্ষণকে নিতে নিতে বলল,
” এ্যাই পুচ্চু এটা তোর কি হয় বল তো? এটা তোর ফুপা হয় বুঝলি। একবার ডেকে দে তো। বল, ফুপা! ”
ব্যস তেলের উপর পেঁয়াজ দিলে যেমন ছ্যানাত করে ওঠে! ঠিক তেমন করে ছ্যানাত করে উঠল শিশির৷ কিড়মিড় করে উঠল। এদিকে কুয়াশা কথাটা বলে ফিক করে হেসে দিয়েছে। কুয়াশার সাথে হেসেছে বসে থাকা সকলে। শিশির কটকট করতে করতে কুয়াশার মাথায় চাটি বসাল জোরে সোরে৷ বৃষ্টিরা সব মুখ টিপে হাসছে৷ অয়ন, অনি অদ্ভুত ভাবে দেখছে৷ এরা এখনো মারা মারি করে? অনি ঈশাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেসও করল,
” ঈশা এরা এখনো মারা মারি করে? ”
” তা আর বলতে! আগের মতোই করে। কিছু একটা পেলেই হয়। শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এর মাঝে ভালোবাসাটাও ততটাই গভীর ওদের।”
অনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শিশির মারাতেই কুয়াশা আহ্ শব্দ করে উঠে ফুঁসে উঠেছে। বলল,
” এ্যাই,!…. ”
শিশির আর কিছু বলতে না দিয়ে বর্ষণের উদ্দেশ্যে বলল,
” এ্যাই চাচু, শুনো এটা তোমার চাচি হয় বুঝলে। তোমার এই ফুপু নামক চাচিকে চাচি ডাকবা ওকে!”
” একদম নাহ্, ও আমাকে ফুপু ডাকবে। তোমাকে ওর চাচু রূপে পছন্দ না বিধায় চাচু ডাকেনি এখনো৷ ফুপা রূপে পছন্দ হয়েছে। তাই না রে পুচ্চু? ”
শেষ কথাটা তার কোলে থাকা বর্ষণকে বলল৷ বর্ষণ ফুপুর কথা পেয়ে বলে উঠল,
” হাম। ”
সে খেতে চাইলে হাম বলে। কুয়াশা পাশে বাটি থেকে ভাত নিয়ে মুখে দিল। বর্ষণ বিনা বাক্যে হা করে তা নিল৷ খাবার পাগল একটা৷ খিদে লাগলে খাবে আর পেট ভরে গেলে আর খাবে না৷ জোর করেও তখন আর খাওয়ানো যায় না। কুয়াশা শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটাল। সামনের সোফা থেকে নীহার বলল,
” বুঝলি শিশির, কুশু বোধহয় ঠিকই বলেছে। বর্ষণ তোকে ফুপা রূপেই পছন্দ করছে ওর চাচু টাচুতে তোকে পছন্দ না৷ তুই বরং ওর ফুপা হয়ে যাহ্। আর জোর করে চাচু হতে চাইস নাহ্।”
ফিক ফিক করে সব হেসে দিল৷ কুয়াশাও হাসল৷ শিশিরকে সকলে মিলে নাস্তানাবুদ করছে? এটা মেনে নিতে হবে? নাকি মানবে শিশির? সে ফুঁসে ওঠে কিড়মিড় করে উঠল। নীহারে দিকে তাকিয়ে বলল,
” মজা নিচ্ছিস নে। সময় কিন্তু আমার সামনে আসছে! ভেবে চিন্তে মজা করিস! তোর বউয়ের ভাই বাদে দেবর হয়ে তোর মজা করার পাওনা মিটাব কিন্তু! তখন আবার হা হুতাশা করিস নাহ্! ”
নীহারের একটুও দেরি হলো না শিশিরের কথার মর্মার্থ বুঝতে। এমনকি উপস্থিত কারোরি হলোনা৷ সকলে জোরে হেসে ফেলল। আর নীহার চোখ দিয়ে শিশিরকে গিলে খাবার মতো করে কিড়মিড় করতে লাগল। শিশির দাম্ভিকের সাথে হাসি দিল।
শিশির যে নীহারের বাসর আঁটকানোর কথা বলেছে সেটা নীহার ভালোভাবেই বুঝেছে। এ ছেলে তাই-ই পারবে৷ বড় ভাই হিসেবে বোন এনে ভাবি বানিয়ে তার বাসর করাটা ডগে তুলবে। সেটা সে কিছুতেই হতে দেবে না। কখনো নাহ্। তার স্বাধের বিয়ে, স্বাধের বউ আর সে কিনা বাসর রাত থেকে বঞ্চিত হবে? এটা মানা যায়!! নীহারের কথা বন্ধ করতে পেরে শিশির হাসল। সকলে ঠোঁট টিপে এদের ঝগড়া দেখছে এক একটার। ভাই, বোনের পক্ষ নিচ্ছে তো ভাই ভাই বউ নিয়ে ঝগড়া করছে। বেশ ভালোই লাগে এগুলো। হিম শিশিরের পাশে থেকে বলে উঠল,
” নীহার ভাই ভয় পেলে নাকি? ডোজ কি একটু বেশি হলো? ”
হিমের কথায় আবারও হাসির রোল পড়ল। শিশির শব্দ করে হেসে দিল। এই ছেলে যে আগা গোড়ায় শিশিরের পাগলা ভক্ত সেটা সকলেই জানে। স্বাধে তো আর কুয়াশা বলে না,
” ভাই কা চামচা!”
নীহার কটমট করে তাকাল। মেহেদী নিচ্ছে তাই উঠতে পারল না। কুয়াশা পাশে থেকে ফুঁসে উঠে বলল,
” এ্যাই ভাই কা চামচা। তোর চামচামি করা বন্ধ কর!”
হিমের হয়ে শিশির বলল,
” এ্যাই ও চুপ করবে কেন? তোরা ভাই বোন মিলে গলাবাজি করছিস আবার বলছিস চুপ করতে? ও আমার একমাত্র শা-লাবাবু ওর সম্পূর্ণ রাইট আছে আমার পক্ষ নেবার। ”
কথা বলতে বলতে হিমের কাঁধে হাত দিয়ে কাঁধ জড়িয়ে ধরল৷ হিম পুরো দাম্ভিকের সাথে হাসল৷ কুয়াশা মুখ ঝামটা দিয়ে বর্ষণকে খাওয়াতে লাগল। বর্ষণ কোলে বসে খাচ্ছে। মুখে ভাত দিয়ে কুয়াশা শিশিরের কথার উচিত জবাব দিতে বলল,
” পুচ্চু ফুপা ডাক তো৷ তোর ফুপার নাকি আফসোস হচ্ছে খুব তোর মুখে ডাক শুনতে না পেরে।”
দিল শিশির আরেকটা চাটি বসিয়ে৷ আবারও একই কথা বলে! ধমকে বলল,
” , আরেকবার ফুপা বলেছিস তোহ্! ”
কুয়াশাও একটা কিল বসিয়ে বলল,
” বলব একশ একবার। ওর ফুপাই তুমি। ”
মানে যা তা! সে ফুপা হতে যাবে কোন দুঃখে। কোনকার না কোনকার দুঃসম্পর্কের ফুপা সেটা শুনতে হবে? ফিলিংস পর পর! বর্ষণকে কোলের উপর বসিয়ে নিল। আজ সে চাচু ডাক শুনেই ক্ষান্ত হবে৷ এই বর্ষণের হয়েছে যত দুনিয়ার জ্বালা জন্মের পর থেকে দেখেছে এই দুটোর ঝগড়া। এখনও দেখছে কিন্তু বেচারা বুঝতে পারছে না কিছুই৷ শুধু গোল গোল চোখ গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। শিশির বলল,
” এ্যাই আব্বু তোর এই ফুপু নামক চাচির কথা একদম শুনিস না তোহ্। চাচু ডাক তো! ”
কুয়াশা শিশিরের কোলের উপর বসে থাকা বর্ষণের মুখে ভাত দিল আবার৷ তার ভাত নিয়ে আবার ধরে রাখার স্বভাব আছে। কুয়াশা বলল,
” পুচ্চু ডেকে দে চাচু বলে। বেচারা নয়তো তোরও গলা চুলকানোর কারণ হয়ে যাবে৷ জানিস তো এটা পুরোটায় আমার গলা চুলকানোর কারণ। ”
সকলে আবার হাসল৷ শিশির কিড়মিড় করছে৷ শিশির বর্ষণের মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলল,
” আব্বু, ডাকো তো চাচু, চাচু। বলো চাচু। ”
বর্ষণ এবার শিশিরের কথায় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বার কয়েক বলল,
” তাতু তাতু? ”
শিশির বিশ্ব জয়ের হাসি দিল। বলল,
” হ্যাঁ চাচু। ”
কুয়াশা মুখ ঝামটাল। শিশির বর্ষণের গালে চুমু দিল। খাবার সময় চুমু দেয়াতে একটু বিরক্ত হলো সে৷ তবে আবার খেলনা নিয়ে খেলতে লাগল৷ বলল,
” ভুমমম।”
হাতের খেলনা গাড়িটা নিয়ে বলল সে৷ শিশির তা শুনে বলল,
” তোমার জন্য যেগুলো এনেছি খেলনা সেগুলো কই? ”
বলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাবি ওগুলো বের করে দাও নি? ”
” ঘরে আছে ওগুলো। নিচে এগুলো নিয়ে খেলে। ”
শিশির আর কিছু বলল না৷ শিশিরের কোলের উপর বসে ফুপুর হাতে খেতে লাগল৷ কুয়াশা বর্ষণের মুখে ভাত দিতে ঝুঁকলে শিশিরও কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
” বউ আমার দেখি ভালোই এক্সপার্ট হয়েছে! খুব জলদিই বর্ষণের ভাই বা বোন আনার ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। বউ আমার বড় হয়ে গেছে কিনা!”
কুয়াশা শিশিরের দিকে মাথা তুলে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল৷ শিশির ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু চোখে হাসল৷ কুয়াশা কিছু বলল না। তবে রাগলও না৷
দুপুর দুটোর দিকে। সকলে সাজগোছ করছে। নীহারের হলুদ সন্ধ্যার জন্য। মেয়েরা হলুদ শাড়ি পড়ে সাজছে৷ তুষার চলে এসেছে। এসেই আগে ছেলেকে কোলে নিয়ে মনের মতো আদর করল৷ বাবা, মা, ভাইদের সাথে ভালো মন্দ কথা বলল৷ শিশির, নীহারকে জড়িয়ে ধরল৷ ওরাও বড় ভাইকে পেয়ে আনন্দিত হলো৷ বড় ভাইটা কাছে না থেকে এতক্ষণ যেন অপরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল৷ এখন মালিথা ভিলা পূর্নতা পেল৷ বৃষ্টির সাথে ঘরে গিয়ে দেখা করে গোসল করে একবারে নিচে আসল৷ খাবে দুপুরের এখন৷ জাকিয়া ছেলের যত্নআত্তি করলেন৷ বৃষ্টি তৈরি হচ্ছে তাকে আর ঝামেলা করাল না৷ জাকিয়া ছেলেকে খেতে দিল। তুষারের সাথে শিশিরা, চাচুরা সহ রিজভী, অয়ন, আমিনুল হক, অয়নের বাবাও বসল৷ বৃষ্টির বাবাদের বলা হয়েছে কাল আসবেন৷ সব পুরুষরা দুপুরের খাবার একসাথে খেল৷ অভিরা এখনো আসেনি।
কুয়াশার ঘরে সকলে রেডি হচ্ছে। কুয়াশাও তার ঘরেই এসেছে সকলের সাথে তৈরি হতে৷ সাজ প্রায় হয়ে এসেছে৷
নীহারকে তৈরি করতে সকল ভাইরা সাহায্য করল। সকল ছেলের হলুদের ড্রেসআপ, সাদা পাঞ্জাবির উপরে পেস্ট কালারের কোটি সাথে সাদা পাজামা৷ প্রতিটা ছেলেকে এই বেসে দূর্দান্ত লাগছে৷ নীহারকে তৈরি করে সব ভাই একসাথে বলে উঠল,
” মাশাআল্লাহ। ”
তুষার বলল,
“বাহ্ নেভির অফিসারকে তো এই বেসে দূর্দান্ত লাগছে!”
নীহার হাসল। ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” একজন পুলিশ অফিসারকেও এই বেসে দূর্দান্ত লাগছে৷ ”
সকলে হাসল৷ তুষার পিঠ থাবড়ে বলল,
” ফাজিলগুলা সব।”
হেসে ভাইকে ছাড়ল৷ মালিথা ভিলার সকল ছেলের হাইটই প্রায় সমান সমান। তবে হিম আগে ছিল না এখন হিমও অনেকটা এগিয়ে গেছে আরো হবে বয়সের সাথে সাথে৷ আর গায়ের রঙের দিক দিয়ে অবশ্য এক একজন আলাদা৷ তবে শিশির আর নীহারের গায়ের রঙটা সেম সেম একদম৷ দু’জনই হুলুদ উজ্জ্বল ফর্সা৷ তুহিন সকলের থেকে বেশি ফর্সা। ও একদম সাদা ফর্সা৷ সাদা ফর্সা হলেও তুহিনকে অনেক আকর্ষণীয় লাগে। কিছু সাদা ফর্সাকে ভালো লাগে না কিন্তু তুহিনকে তেমন লাগে না৷
নীহার ট্রেনিং থেকে আসার পর ওর বডি ফিটনেস এতটা আকর্ষণীয় হয়েছে যে কোনো মেয়ের চোখে পড়বে৷ আগে যতটা ছিল তার থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। একজন নেভি অফিসারের প্রতিটা দিক ওর চেহারা এবং শরীরে শোভা পায়। তুষার পুলিশ অফিসার হবার জন্য যেমন হবার প্রয়োজন ঠিক তেমনই। এদের মাঝে শিশিরকে ততটাই আকর্ষণীয় লাগে৷ ওর বডি ফিটনেস আগে থেকেই আকর্ষণীয় যেটা তুষার, নীহারের ছিল না৷ এখন বয়সের সাথে ততটাই পারফেক্ট হয়েছে৷
সব ভাইগুলো নামছিল আর মেয়েরা হা করে সেগুলোই নোট করছে। মুগ্ধ হলো এক একজনকে দেখে। কুয়াশারা সব রেডি হয়ে বসার ঘরেই ছিল৷ চোখ যেন ধাঁধিয়ে গেল সব ভাইদের একসাথে দেখে। সাদা পাঞ্জাবির সাথে পেস্ট কালার কোটিতে এতটা মানিয়েছে!!
শিশিররা নিচে নামলে নীহারকে সোফায় বসানো হলো। ভাইরাই বসাল। সেসময়ে নীহারের ফোনের হুয়াট্সআপে কিছু ছবি এলো। ফোন হাতে নিয়ে ছবিগুলো দেখে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটে। আওড়াল,
” বিউটিফুল! পাখিটা আমার। আজকের দিনটা শুধু অপেক্ষা করো আগামীকাল আসছি আমি। ”
শব্দগুলো আওড়াল কিন্তু হুয়াট্সআপে লিখে সেন্ডও করে দিল৷ ওপাশ থেকে লজ্জা পাবার ইমোজি এলো। তা দেখে নীহার আবার হাসল।
শিশির কুয়াশার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ফিসফিস করে বলল,
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউ। ”
কুয়াশা অমায়িক হাসল। সে-ও বলল,
” আমার সুদর্শন স্বামী। দূর্দান্ত লাগছে তোমায়। ”
বলে শিশিরের ডান হাতটা তুলে কনিষ্ঠ আঙুলে আলত কামড় দিল। শিশির ভ্রু কুঁচকাল। সে বলল,
” এটা তোমার নজর টিকা৷ কারোর বদ নজর না লাগুক। কাল থেকে ঐ হা করা অনিটা অনেকবার চোখ দিয়ে গিলেছে তোমায় হুহ্! ”
শিশির হেসে ফেলল। আগের ন্যায় স্বরেই বলল,
” অভার পজেসিভ! গোবর ঠাসা একটা ”
বলেই চাটি বসিয়ে চলে গেল। কুয়াশা মাথা ডলতে লাগল ফুঁসে উঠে। সকলে সকলের কাজে মন দিল৷ জাকিয়া এসে তুহিনকে বললেন,
” গাড়িতে সব ত্বত্ত্ব তুলে দেয়া হয়েছে তোড়া বেড়িয়ে পর।”
তা শুনে তুহিন সম্মতি দিল৷ তুহিন শিশির আর হিমকে নিয়ে চলে গেল৷ তারা বাইক নিল। আর মাইক্রোতে ত্বত্ত্ব দেয়া হলো। সকলকে বলে ওরা বেড়িয়ে গেল। বাড়িতে তুষার জাহিদ মালিথার সাথে এদিকটা সামলাতে লাগল৷ জাকির মালিথা বসেই সব তদারকি সহ নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ভোর থেকে সব আয়োজন শুরু হয়েছে শশীদের বাড়িতে। আত্নীয় স্বজনদের আনাগোনা, পাড়াপ্রতিবেশিদের আনাগোনা শশীদের বাড়িতে। হৈ হুল্লোড়, সোরগোল সহ রান্না বান্নার কাজ চলছে। ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়ে দৌড়ে আনন্দ করছে৷ গ্রামের বিয়ে মানে পাড়া-প্রতিবেশিদের আনন্দ বেশি। শশীর চাচারা, ফুপুরা সকলে এসেছে৷ হানিফ সাহেব কোনো ভাইকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকতে দেননি। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে সকলকে একসাথে ডেকে নিয়ে বিয়ের আয়োজনে লেগেছেন৷
শশীর চাচতো ভাই-বোনেরা সহ জাকিয়ার ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা সকলেই এখানে আনন্দ করছে। সাব্বির, সাবিবও এখানে আছে৷ এটা ওদের ফুপুর বাড়ি ফুপুতো বোনের পক্ষেই আছে৷ মিহিরের সাথে সাব্বির সাবিবও কাজে ব্যস্ত। বরযাত্রীদের জন্য সকল ব্যবস্থা তারা করছে। সৌরজ বাবার সাথে রান্না, বান্নার কাজে তদারকি করছে। জিনিয়া জা’দের নিয়ে, ভাইয়ের বউদের নিয়ে বাড়ির ভেতরটা সামলাচ্ছে। গ্রামের কাজের জন্য তিনটা মহিলা নিয়েছেন তিনি তবুও যেন কাজ তার কাছে বেশি৷ মেয়ের মা কিনা!!
শশীর কাছে শশীর ভাবি সীমি সহ শোভা আরো ওর কাজিনরা আছে। শোভার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী সাথে করেই চাচতো বোনের বিয়ে খেতে এসেছে৷ শশীর আজ রাতে আর ঘুম হয়নি। ও বিয়ে নিয়ে এতটাই উত্তেজিত যে ঘুম পেড়েছে কিনা সন্দেহ। নীহারকেও জাগিয়ে রেখেছিল জেদ করে। কেন যেন নীহার তার ইঁচড়েপাকা পাখিটার বাচ্চা বাচ্চা আচরণ সহ এত স্ট্রোং ভালোবাসা সে চেয়েও উপেক্ষা করতে পারে না। মেয়েটা তা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে প্রতি পলে বুঝিয়ে দেয় তাকে কতটা ভালোবাসে৷ সে যদি কখনো বিরক্ত হয়ে ধমকও দেয় সেটাতে মন খারাপ করে কিন্তু মেনে নিয়ে দ্বিতীয়বার আর করে না৷ শান্ত হয়ে যায় একদম। পরে নীহারই আবার মিস করে তার ইঁচড়েপাকা পাখিটার পাকনা পাকনা কথা আর চঞ্চলতা। তখন সে-ই আবার উল্টে বোঝায়৷
শশী আগে-ই থেকেই নীহারকে খুব মানে। ভালোবাসার মতো বাসে আবার সম্মানের স্থানটাও একদম উপরে দিয়েছে। নীহার যেমনটা চলতে বলে ঠিক তেমনটা চলে। একদম হাতে করে গড়ে নেয়ার মতো। সে তার ইঁচড়েপাকাকে নিজে হাতে গড়ে নিয়েছে৷ শিশিরের কথাই সত্যি করেছে। শিশির বলেছিল নিজে হাতে গড়ে নিতে। শশী ছিল বাচ্চা একটা মেয়ে। সেই বাচ্চাকেই সে যত্নে, আগলে, ভালোবেসে গড়েছে নিজের মতো করে৷
ঐ বয়সের মেয়েরা হয় চঞ্চল। দূরন্তপনা দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। গ্রামের মেয়েরা তেমন স্মার্ট হয়না৷ তাদের মাঝে চঞ্চলতা থাকলেও তারা দেখাতে পারে না একমাত্র কারণ, সমাজ, পাড়াপ্রতিবেশি। এই জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কোনো কিছু করতে গেলেই সবার আগে আসবে সমাজ কি বলবে? প্রতিবেশিরা কি বলবে? মেয়েদের এমন হতে নেই, তেমন হতে নেই হ্যানত্যান, সাত সতেরো নানান কথা।
কিন্তু নীহার শশীর চঞ্চলতাকে একটু ফোঁটাও হারাতে দেয়নি। সে শাসন করেছে কিন্তু বদলাতে দেয়নি। তার বাচ্চা সূলভ আচরণ ক্ষুয়ে যেতে দেয়নি। দেবেই বা কেন? সে তো আটকেছিলই শশীর পাকনামি, চঞ্চলতা, বাচ্চা সূলভ আচরণে। ভালোবেসেছিল শশীর সবরকম পাগলামীকে। নাম রেখেছিল ইঁচড়েপাকা মেয়ে তা থেকে হয়েছে ইঁচড়েপাকা পাখি। শশীর কতটা করসত করতে হয়েছে নীহারকে পেতে? কতটা সেক্রিফাইজ করতে হয়েছে? হয়েছে কি? আরো হবে। এই যে, ক্লাস আট থেকে পছন্দ করত সেখান থেকে একটু একটু করে সঞ্চার করেছে ভালোবাসা। পছন্দ থেকে ভালোবাসা গড়েছে। সেই পছন্দ, ভালোবাসা দুইটা বছর পাড় করে নীহারকে জানাতে পেরেছিল। নীহার তো তাকে রিজেক্ট করেছিল! কতটা কষ্ট তাহলে ছোট্ট মনে পেতে পারে? টিনএজার বিবেক থাকে একটা নরম সুতর মতো। সেটাকে আলতো করে ধরে বেঁধে রাখতে হয় নয়তো একটু টান দিলেই ছিঁড়ে যায়। টিনএজার মনে, বিবেকে যা এসে হানা দেয় তাই করে, আশেপাশে যা দেখে তাই করে। একটু প্রভাব পড়লেই তারা ভেঙে পড়ে। সুতোর মতো ছিঁড়ে যায়।
শশীও ছিঁড়েছিল নীহারের প্রত্যাক্ষাণে। তার ছোট্ট হৃদয় টুকরো টুকরো হয়েছিল। যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা যায় আর সেই স্বপ্ন যদি মিনিটের মাঝে ভেঙে যায় কষ্ট হবে না? নীহার যে যুক্তি খাড়া করে রিজেক্ট করেছিল সেটা ছিল একদম ভিত্তিহীন। যেটা শশী আরোই মানতে পেরেছিল না৷ তবুও ভাগ্যর লীলাখেলা! যার সাথে যার ভাগ্য লিখে রাখা হয়৷ শশীর ভাগ্যে ছিল নীহার তাইতো সে পেয়েছিল নীহারকে৷ এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অবশ্য শিশিরের৷ সে ভাইকে অভয় দিয়েছিল। বোনকে খুশি করেছিল৷ ছেলেটা সব দিকে পারফেক্টলি হ্যান্ডেল করেছিল এখনো অবশ্য করে৷ নীহারকে বুঝিয়েছিল বাস্তবতা, ভালোবাসা, চাওয়া-পাওয়া। তাইতো শশীর নীহার হয়েছে।
নীহারকে পেয়েও যেন পেল না মেয়েটা। খাঁড়া করল পরিবার “বয়স”। বয়সের জন্য দুইটা বছর অপেক্ষা করার জন্য তাদের সম্পর্কের নামকরণ করল। এ্যাঙ্গেজ করে হবুতে নিয়ে গেল৷ আঙটি বদল করে রাখা হলো৷ এরপর এলো শশীর সবথেকে কঠিন মূহুর্ত গুলো। ভালোবাসা কাছে থেকেও সে বঞ্চিত হলো৷ সামান্য নাম দিয়ে চালিয়ে গেল ভালোবাসার সম্পর্ক। আবার তার থেকেও কঠিন সময় এলো যখন শুনল নীহার ট্রেনিংয়ে চলে যাবে। সেই মূহুর্তটা শশীর জন্য খুব সহজ ছিল না। অতিশয় কঠিন ছিল। কঠিন ছিল নীহারেরও।
কারণ সে পুরোটা ডুবে গেছিল শশীর ভালোবাসায়৷ বাচ্চা মেয়েটা তাকে ডুবিয়ে অতলে নিয়ে গিয়েছিল। এখনো অবশ্য সে অতলেই আছে৷ সেখান থেকে তার ওঠার বা তোলার ক্ষমতা কারো নেই। ট্রেনিংয়ে যাবার আগের দিন সে শশীকে ডেকে এনেছিল। শশী অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। নীহার শশীকে সামলাতে গিয়ে শিশিরের মতোই করসত করেছিল৷ মেয়েটা বাচ্চা তাই পরিবারের সামনেও মানছিল না৷ কুয়াশা যেমনটা শিশিরের কথায় মেনেছিল৷ ঐ সময়টাতে সকল ভালোবাসা যুগলকে পুড়িয়েছিল৷ দূরে যাবার কষ্ট সকলে ঠিক পেয়েছে৷ শিশির, কুয়াশা, নীহার, শশী, রিজভী, স্মৃতি এরপর আবার তুষার, বৃষ্টি প্রত্যেকে কষ্ট পেয়েছিল৷ বৃষ্টি নিজেকে শক্ত করেছিল। মেয়েটা কষ্ট পেলেও শ্বশুরবাড়ির সকলকে ধরে রেখেছে।
সেই প্রতীক্ষিত পাওয়া শশীর। নীহারকে সে অনেক প্রতীক্ষার পর পেতে চলেছে। একদম আপন করে, নিজের করে। নীহার বলে গেছিল সে একবার আসতে পারলে আর অপেক্ষা করাবে না। একবারে ঘরে তুলবে। এও বলেছিল সে যেচে পুড়তে আগুনকে সঙ্গী হিসেবে বেঁছেছে কষ্ট তো করতেই হবে!! ডিফেন্স জব খুব সহজ জিনিস না। আপন মানুষ ছেড়ে দূর দূরান্তে পড়ে থাকতে হয়৷ ভাগ্য মিললে পরিবার-পরিজনের কাছে আসতে পারে৷ সেসব সব বলেছিল ঘরে বসিয়ে। যখন মেয়েটা মানতে পারছিল না নীহার ধমক দিয়ে বলেছিল,
” আমাকে ছাড়া থাকতে না পারলে চলে যাহ্ তুই৷ তোকে আটকে রাখব না৷ যেচে এসেছিস আমার জীবনে, কষ্ট তোকে করতেই হবে৷ এসব সব মেনে নিতে হবে এবং বিয়ের পরেও মানতে হবে৷ নিজেকে শক্ত কর আর ভবিষ্যতেও শক্ত থাকার জন্য নিজেকে প্রস্তত কর। কিছু পেতে গেলে সেক্রিফাইজ করতেই হয়। ”
শশী শুনে কেঁদেছিল। এত বড় কথাটা সে মানতে পারছিল না। তাকে চলে যেতে বলছে? তার মানে বিয়ে ভাঙা? এটা কী করে সম্ভব! আদৌও কি সম্ভব? সে এই ছেলেটাকে ছাড়া কাউকে স্বামী রপে চাইনি আর চাইবেও না। মানতে তো আরোই পারবে না। নীহারকে সে ততটাই মানে৷ এইজন্য বলেছিল শুধু,
” আমি অপেক্ষা করব৷ এই বুকে আপনাকে ছাড়া অন্যকাউকে স্বামী রূপে ঠাঁই দিতে পারব না। আমার এই হৃদয়ে আমি একমাত্র আপনাকে স্বামী রূপে পাবার জন্য লালন পালন করি। আপনি জলদি ফিরে আসবেন। আমি শুধু আপনারই হতে চাই আর কারো না৷”
নীহার তখন শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছিল তার বুদ্ধিমতি বাচ্চা পাখিকে৷ রাগের মাথায় সেদিন তুই তুকারি করেছিল৷ কষ্ট হয়েছিল৷ পুরোটা দিন শশীকে রেখে আবার পাঠিয়ে দিয়েছিল৷ পরেরদিন সে পাড়ি জমিয়েছিল নিজের স্বপ্ন পূরণের রাস্তায়, নিজের আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। আর শশী মেয়েটা কান্না করেছিল। অপেক্ষা করেছিল তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য৷ কতটা কষ্ট করেছিল চিন্তা করা যায়!! আর সব শেষে এখন তাকে পেতে যাচ্ছে। আজ নিজের নামে করবে দু’জন দু’জনকে।
শশী নীহারের জব সম্পর্কে আগে জানত না। বুঝেছিল না আগে নৌবাহিনীর কথা শুনেও। পরে নীহার যাবার আগে সব বলে গেছিল। এজন্য এই এতগুলো দিন প্রতিটা সময়ে সে নিজেকে একটু একটু করে শক্ত করেছে। বড় হবার সঙ্গে সে নিজেকে বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখেছে। বিয়ের পরেও যে নীহারকে ছাড়া দিন গুনতে হবে সেটার জন্য সে নিজেকে গড়েছে৷ তার পুরোটা জীবন অপেক্ষাতেই যাবে ভালোবাসার মানুষটির জন্য। তাতে কী? তবুও তো পাবে তার ভালোবাসাকে আপন করে? নিজের নামে করে? তবুও তো সান্ত্বনা দিতে পারবে নিজেকে যে, তার ভালোবাসার মানুষটি কাছে নেই তো কি হয়েছে? তার নামে তো আছে? তার স্বামী রূপে তার অর্ধাঙ্গ হয়ে। দূরত্বের কষ্ট হবে ঠিকই কিন্তু সেটাকে মেনে নিয়ে মানিয়ে নিতে হবে৷ শক্ত হতে হবে। সে যে যেচেই আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে!!
সকাল দশটার দিকে শশীকে ওর ভাবিরা গোসল করিয়ে দিয়েছে। এই গ্রামটা একটু অফসাইট জায়গা তাই ভালো পার্লার নেই। নীহার শহর থেকে পাঠাবে বলেছিল কিন্তু শশী মানা করেছিল৷ তবুও নীহার শুনে নি। এমনকি কুয়াশারাও না৷ বৃষ্টিরা সকলে মিলে পার্লারের মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিজ দায়িত্ব নিয়ে পাঠিয়েছে। বিউটিশিয়ান চলে এসেছে। সাজাতেও লেগে পড়ল৷ শুধু শশীকেই সাজানো হবে। বাকিরা নিজে নিজেই সাজবে।
গতকাল শিশিররা সব দিয়ে গেছে৷ শিশিরকে দেখেই শশী আনন্দে আটখান হয়েছিল। শিশিররা পুরোটা বিকেল সকলের সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যায় চলে গেছিল৷ এসেছিল তারা আবার শশীদের সুন্দর গ্রামে। প্রায় তিনটা বছর পর সেই মনোমুগ্ধকর গ্রামে৷ যে গ্রামে তারা অনেক স্মৃতি রেখে গেছিল৷ যে গ্রাম শিশির আর কুয়াশার অনেক সুন্দর সুন্দর মূহুর্তের স্বাক্ষী হয়েছিল। রাতের আলোআঁধারি তাদের ভালোবাসার স্বাক্ষী হয়েছিল। দুপুরের পুকুর তাদের ভালোবাসার স্বাক্ষী হয়েছিল৷ কুয়াশাকে তুলে দেয়া গ্রামের ছবি যেটা তার গ্যালারিতে আজো শোভা পায়৷ যা সে ঢাকায় থাকতে মাঝে মাঝেই দেখত। তার আহ্লাদী বউয়ের পাগলামি, বাচ্চামি। সেই স্মৃতিগুলো কতটা মুধুর ছিল? চাইলেও আর পাওয়া যাবে না সেই মুগ্ধকর স্মৃতিগুলো৷
মালিথা ভিলার সকলে ব্যস্ততার উপর আছে। বরযাত্রী যাবে সেসবই আয়োজন করছে। মেয়েরা আজান না-ই দিতে গোসল সেরে সাজতে লেগে গেছে৷ এগারোটা থেকে শুরু করেছে সকলে সাজ৷ দূরের রাস্তা তাই জলদি বের হবে বরযাত্রী। নামাজ পড়েই বেড়িয়ে পড়বে৷ কুয়াশারা আজ নিজেরাই সাজছে। আগামীকাল শশীকে যখন বিউটিশিয়ান দিয়ে সাজাবে তখন সাজবে৷ আজকের বিবাহিত মেয়েদের ড্রেসআপ শাড়ি। ঈশা গাউন পরেছে। আর আগামীকাল বউভাতে সকলে লেহেঙ্গা পরবে ঠিক করেছে।
স্মৃতি, ঈশা, অনি সহ আরো কিছু মেয়েরা কুয়াশার ঘরে সাজছে। কুয়াশা ওদের ঘরে। বৃষ্টি, ইয়াসমিনও তাদের ঘরে। এক জায়গায় ভিড় করবে না৷
কুয়াশা শিশিরের দেয়া সেই শাড়িটা পরেছে। হালকা গোলাপির কাতানের উপর সোনালী জরির কলকাকলীর কাজ করা। পাড়ও সোনালী সাথে সোনালী রঙের রেডিমেড কেনা ব্লাউজ। ব্লাজটা কিনে এনেছে পরশুদিন শিশির। সোনালী ব্লাউজ ছিল না বিধায় কিনে আনতে বলেছিল সে৷ কুয়াশার শাড়ি পরা হয়ে গেছে। চুল আগেই শুকিয়ে নিয়েছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে। আপাতত খোঁপা করা৷ সে মেক-আপ করছে৷ মেকআপের পর চোখ সাজাল৷ মুখ সাজানো শেষ। মাত্রই চুল খুলল সে-সময়ে শিশির ঘরে এলো। গোসল করবে। আজান দেবে দেবে হয়ে এসেছে। এতক্ষণ নিচে ব্যস্ত ছিল৷ এসে কুয়াশাকে তার আনা শাড়িতে দেখে টাস্কি খেল। লম্বা শরীর সাথে একহারা গড়ন, হলুদ ফর্সা গোলগাল ফোলাফোলা বদন, চোখগুলো এমনি সুন্দর। সাজিয়েছে আরো সুন্দর লাগছে। এলোমেলো চুলে যেন পরী! শিশির দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। কুয়াশা সেদিকে একবার তাকিয়ে পাত্তা দিল না।
শিশির এগিয়ে এসে কুয়াশাকে হাত ধরে ওর সামনে ঘুরাল৷ কুয়াশা অতিশয় বিরক্ত হলো। ভ্রু ম্রু কু্ঁচকে বলল,
” কি সমস্যা?”
” গোবর ঠাঁসারে… এই রূপে বউকে চুমু খেতে না পারলে জীবন আমার পুরাই বৃথা!”
কুয়াশা পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মানে কতটা ঠোঁট কাটা পাবলিক ভাবা যায়!! কুয়াশা শিশিরের চুল গুলো সুন্দর করে টেনে ঘুরিয়ে দিল। বলল,
” ধুর অসভ্য শয়তান!”
বলে আবার নিজের কাজ করতে যাবে শিশির আবার টান দিয়ে ঘুরিয়ে নিল৷ কুয়াশার চুল টেনে দিয়ে বলল,
” আমি আমার বউকে চুমু খাব এতে তোর কোন পাকা ধানে মই দিলাম?”
কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল৷ হাতের চিরুনী শিশির সামনে তাক করে বলল,
” যাবে তুমি এখান থেকে?”
” এক পা-ও নরব না যদি না চুমু খেতে দিস!”
পুরোই জিদ্দি কথা আর কন্ঠের স্বরও৷ কুয়াশা এবার ফুঁসে উঠল। এতক্ষণ মজা ভেবেছিল সে। কিন্তু এ তো সত্যি সিরিয়াস!! সে কী সুন্দর করে সাজল, লাল-খয়েরি লিপস্টিক দিল আর এ কিনা তার সাজ নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগল! মেজাজ সপ্তম আসমানে চড়িয়ে বলল,
” এ্যাই তেদর লোক সিনেমার হিরো হওয়ার শখ জাগল নাকি তোমার? তুমি দেখছ না ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি? এ্যাই সরো তো সরো! তৈরি হতে দাও। ”
বলে আবার ঘুরে নিজের কাজ করতে উদ্যত হলো। শিশির ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। ভাবটা এমন আজ কুয়াশার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁটে চুমু না খেয়ে যাবে না৷ তার চুমু চায়-ই চায়। বাচ্চাদের যেমন খেলনা না কিনে দিলে জেদ করে ঠিক তেমন ব্যাপারটা।
শিশির কুয়াশাকে এবার কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে নিল৷ কুয়াশা উঁচু হিল জুতো পরে অনেকটাই লম্বা হয়েছে আরো৷ শিশিরের কান বরাবরই উঠে গেছে প্রায়। তাকাল শিশিরের দিকে। বিরক্ত এবার আকাশ ছুঁলো। কুয়াশা কিছু বলবে তখন শিশির ডান হাত দিয়ে কুয়াশার চুল গুঁজে দিতে দিতে বলল,
” আজ একটু সিনেমার হিরো হতেই ইচ্ছে করছে বুঝলি! বউ সাজছে আমিও বিরক্ত করছি। ফিলিংস নটি মাইন্ড। সো সোনা, ডো’ন্ট ইন্টারসেপ্ট মি! ”
বলেই কুয়াশাকে আর কিছু বলার সুযোগ বা মানা করার সময়ই দিল না। চুল গুঁজে দেয়া হাতটা চুলের মাঝে গলিয়ে দিয়ে কুয়াশার মাথা এগিয়ে এনে ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু দিল গাঢ় একটা। কুয়াশা এতটা রাগ হলো বলার মতো না৷ তার এত সুন্দর লাল টুকটুকে করা ঠোঁট জোড়ার বারটা একদম বাজিয়ে দিল। মানে রফাদফা করল! সেই রাগে দিল শিশিরের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে। জোরেই দিল৷ শিশির ছাড়ল না তুবুও। সে আরেকটু টেনে আরো গাঢ় করে চুমু দিল দিয়ে ছেড়ে দিল। কুয়াশা রাগে ফুঁসে উঠল। চিরুনী রেখে শিশিরের উপর হামলে পড়ল। তার সেই বিশ্ব বিখ্যাত মা-র দিল। কি-ল, ঘু-ষি, চাপ্পড়, থাপ্পড়। এরপর শিশিরের চুল গুলো দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে টানতে টানতে বলল,
” শয়তানের হাড্ডি অসভ্য। এ্যাই আমার সাজ নষ্ট করলি কেন? বল কেন করলি? ”
চিন্তা করা যায় এই মেয়ে জাতি সাজ নিয়ে কতটা পজেসিভ? স্বামীর থেকে এখন সাজই তার কাছে বেশি প্রায়োরিটি পাচ্ছে? শিশির ভেবে হাসতে হাসতে কুয়াশার হাত ছাড়াল চুল থেকে। এরপর কুয়াশাকে ঘুরিয়ে পেটে জড়িয়ে ধরল দুই হাতের মাঝে। কুয়াশা আর চুল ধরতে পারল না৷ তবে থেমে থাকল না৷ শিশিরের হাতে খামচি দিল নখ বসিয়ে। এদিকে শিশির কুয়াশাকে ঘুরিয়ে বুকের সাথে পিঠ নিয়ে কুয়াশার ব্লাউজের উন্মুক্ত ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
” আমার বউকে আজ এতটা অপ্সরা লাগছে যে আমি তার সাজ নষ্ট করার মতো বড় রিস্কও নিতে বাধ্য হলাম।”
কুয়াশা থামল শিশিরের কথায়। শিশির এখনো কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে রেখেছে। কুয়াশা কটমট করতে করতে বলল,
” অসভ্য, ছাড় আমাকে। তোর রোমান্সের গোষ্ঠী কি-লায়। ”
” কী ভাষা রে তোর? ”
কাঁধ থেকে ঠোঁট তুলে ভ্রু কুঁচকে বলল কথাটা৷ কুয়াশা কিড়মিড় করতে করতে বলল,
” ঠিক বলেছি! ”
শিশির তা শুনে এতক্ষণ মারা আর তুই তুকারি করার শাস্তি দিল কুয়াশার কাঁধে কামড় বসিয়ে। কামড় দিয়ে সে হাঁটা ধরল বাথরুমে। কুয়াশা আহ্ শব্দ করে শিশিরকে মারতে যাবে কিন্তু আর পেল না। সে পগার ডান্ডি পার। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। কুয়াশা এবার হেসে ফেলল ফিসফিস করে। লিপস্টিক যদিও ওয়াটার প্রুভ। তবুও আরেকটু ভালো করে ঠিক করে নিল। এরপর জাকিয়া, আজমিরার দেয়া সেই সোনার গহনাগুলো একে একে পরতে লাগল৷ মোটা হার, সিতা হার, বালা, বড় দুল আর টায়রাটা কাল লেহেঙ্গার সাথে পড়বে। একে একে সব গহনা পরতে পরতে এখন একটু শিহরণ হচ্ছে স্বামীর দেয়া চুমুর কথা ভেবে। মুচকি হেসে আওড়াল,
” আস্ত শয়তান একটা ”
দুপুরে সকল পুরুষগুলো নামাজ পড়ে চলে এলো। এখন বিয়ের জন্য বের হবে। সকলে বসার ঘরে আছে। নীহার একদম বর বেসেই গেছিল নামাজ পড়তে। এছাড়া সকলেই একবারে তৈরি হয়ে গেছিল৷ নীহারের পরনে অফ হোয়াইট গর্জিয়াস শেরওয়ানি সাথে অফ হোয়াইট চুড়িদার পাজামা। মাথায় পাগড়ি। কাঁধের উপর শেরওয়ানির ওড়না ভাজ করে নেওয়া, পায়ে নাগড়াই জুতো, হাতে মোটা কালো বেল্টের ঘড়ি, চুলগুলো একদম ছোট ছোট। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।
শিশিররাও সকলে শেরওয়ানি পরেছে। শিশিরের পরনে হালকা অরেঞ্জ কালারের এ্যম্ব্রডারী করা শেরওয়ানি সাথে বিসকিট কালারের চুড়িদার পরেছে চুলগুলো চিরুনী করে উপড়ে উঠানো, বাম হাতে কফি কালারের মোটা বেল্টের ঘড়ি সেই হাতে ফোন ধরে রেখেছে উফ পুরাই জোশশ৷ কুয়াশা হা করে স্বামীকে দেখছে৷ শিশির ঠিক পেয়ে সামনে এসে মাথায় চাটি মে-রে বলল,
” হা বন্ধ কর। তোর স্বামী যে সুদর্শন সকলে জানে৷ এভাবে দেখে প্রমাণ দিতে হবে না। ”
বলে চলে গেল নীহারের পাশে৷ আর কুয়াশা মাথা ঘষতে ঘষতে শিশিরের চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগল কিড়মিড় করতে করতে৷ নীহার বসার ঘরে সকল গুরুজনদের উদ্দেশে সালাম দিল। সকলে সালাম নিয়ে জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা তিনজনই নীহারকে দুধ খাওয়ালেন৷ দোয়া করলেন। নীহার মা’য়েদের থেকে দোয়া নিল, বাবা, চাচুর থেকে নিল৷ জাকিয়ারা তিন জা এবং জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা গাড়ির সামনে গিয়ে নীহারকে গাড়িতে তুলে দিলেন৷ জাকির মালিথা যেতে পারবেন না তাই যাবেন না। নীহারের কারের সাথে উঠল, বৃষ্টি, বর্ষণ, ঈশা আর সামনে হিম৷ পুচ্চু বর্ষণকে যাহ্ কিউট লাগছে না। সে একদম চুপচাপ মায়ের কোলে চাচুর বরযাত্রী যাচ্ছে। গাড়িতে উঠে নীহারকে পাশে দেখে ডাকল,
” তাতু তাতু!
নীহার হেসে কোলে তুলে নিল। বৃষ্টি বলল,
” দেখছো কি সভাগ্য তোমার চাচুর কোলে চড়ে চাচুর বিয়ের বরযাত্রী যাচ্ছ। আর নীহার তোমারও সভাগ্য দেখ ভাতিজা কোলে করে বিয়ে করতে যাচ্ছ! ”
বৃষ্টির কথা শুনে নীহার সহ হিম, ঈশা হেসে ফেলল।
শিশির কুয়াশাকে বাইকে নিল৷ রিজভী স্মৃতিকে নিল, তুষার একায় বাইক নিল৷ শান্ত, নাদিম এরা বাইক নিয়েই এসেছে নিজেদের তাই বাইকেই বসল৷ বৃষ্টি বলেছে পিচলা শাড়ি পড়ে বাইকে ছেলে নিয়ে যেতে সমস্যা হবে সে কারে যাবে৷ তুষার মানা করেনি৷ কুয়াশা প্রথমে কারে বসতে চাইছিল কিন্তু ঈশাও বলল বলে ওকেই ছেড়ে দিল৷ তুহিন ইয়াসমিনকে নিয়েছে৷ অয়ন নীহারের বাইক নিল৷ আমিনূল হক, বৃষ্টির বাবারা, অনি এবং ওর স্বামী সব অন্য কারে বসল অভিও ওর বউকে নিয়ে কারে বসল। আরো সব আত্নীরা মিলে নীহারের গাড়ি সহ মোট তিনটা কার আর বাদবাকি সব বাইক৷ সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিল বরযাত্রী বউ আনতে।
সাড়ে তিনটার দিকে বরযাত্রী পৌঁছে গেল শশীদের গ্রামে। বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামতেই হুলুস্থুল বেঁধে গেল৷ হৈ চৈ করে সব চেঁচাতে লেগে গেল৷ সকলের মুখে গ্রামের ভাষায় শোনা গেল কিছু বাক্য,
” এ্যাই বর আইসিছে। বর আইসি পড়ছে, বর আইসি পড়ছে। বরের গাড়ি চইলে আইসিছে ”
এমন সব বাক্য শোনা গেল পাড়া প্রতিবেশী এবং আত্নীদের মুখে৷ সকলে বিয়ের কনের ঘর এতক্ষণ বোঝায় করে ছিল এখন কনেকে একা ফেলে চলে গেল বর দেখতে।
এদিকে শশীর হাত পা পুরোই ঠান্ডা হয়ে গেছে। কারণ সকলের এক বানী তো আছেই সাথে নীহারের ছোট্ট ম্যাসেজেও এসেছে হুয়াট্স আপে। সেটা দেখে আরো জমে গেল। ফাঁকা ঘর, নীহারের ম্যাসেজ আর সকলের হৈহল্লা সে আর সহ্য করতে পারছে না৷ হাত পা ঘেমে উঠে ঠান্ডা হতে লাগল। নীহারের ম্যাসেজ,
” এ্যাই যে আমার ইঁচড়েপাকা! চলে এসেছি বর বেশে তোমায় নিতে। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো দেখব তোমায় বাসর ঘরে।”
ব্যস শশী এইটুকু পড়েই শেষ। পানি খাবার জন্য কাউকে খুঁজতে লাগল কিন্তু ওর আশেপাশে একটা কাকপক্ষীও নেই।
“ধুরর সব বর দেখতে চলে গেছে! ”
আওড়াল কথাটা। সে নিজেই ভারী সাজ, শাড়ি নিয়ে নেমে গেল৷ বসার ঘরে তার ফুপুকে পেল৷ ডেকে একটু পানি দিতে বলল। পানিটা চাইতেও কেমন লজ্জা গ্রাস করল তাকে। লোকে শুনলে কি ভাববে? যে বর আসার কথা শুনে কনের গলা শুকিয়ে তেষ্টা পেয়েছে! হায় রে মান ইজ্জত সব যাবে লোকমুখে এমন কথা শোনা গেলে৷ শশী পানি চেয়েই আবার চলে এসেছে। আগের জায়গায় বসল আবার। তার পরনে লাল-খয়েরি ভারী কাতান, মেসিং ওড়না, ভারী সব পাথরের জুয়েলার্স, ভারী মেকআপ। অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আগের সেই বাচ্চা সূলভ চেহারা একটুও পরিবর্তন হয়নি। চেহারাই এখনো বাচ্চা বাচ্চা ভাব৷ শ্যামবর্ণা গোলগাল মুখটা অতি মায়াবী। আগের সেই চিকন শরীরের একটুও পরিবর্তন আসেনি। এ নিয়ে নীহারের থেকে কম কথা শুনতে হয়না তার৷ কিন্তু কি আর করার? মোটা যদি সে না হয়!! দুরুদুরু বুক নিয়ে বসে রইল চুপটি করে ঘাপটি মে-রে৷
নীহারকে শশীর চাচতো দুলাভাই নামাল। গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির সামনে যেই খোলা ছিল? সেখানে প্যান্ডেল করা হয়েছে সেখানে নিয়ে এলো৷ গেইটের টাকা মিটিয়ে নীহারকে নিয়ে সকলে বসল। সকলে একে একে শশীর কাছে চলে গেল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন, কুয়াশা সহ সকলে শশীর কাছে চলে গেছে। মিহির, সৌরজ সহ ভাইরা, বাবা, চাচারা বরযাত্রীকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হলো।
নীহার এখানে বসে ছটফট করছে। শশীকে সে কতদিন দেখে না৷ ভিডিও কলে, ছবিতে দেখে কী আর শান্তি হয়!
শিশির, হিম, রিজভী, অয়ন,শান্ত, নাদিম নীহারের কাছে বসল৷ তুহিন, তুষাররা চেয়ারে বসেছে। শিশির টিপ্পনী কেটে বলল,
” ভাই আজ কি একটু ফিলিংস বলবি? ”
নীহার শিশিরের বাহুতে চাপ্পড় দিয়ে বলল,
” ফাজিল চুপ কর। ফিলিংস আমার হার্ট অ্যাটাক। যাহ্ জলদি তোর বোন নিয়ে আয় আমার সামনে ”
শুনে সকলে হেসে ফেলল শব্দ করে। এমন আরো ফাজলামো চলল। হিমও বাদ গেল না মজা উড়াতে।
‘
শশী সকলকে আবার তার বাড়িতে কাছে পেয়ে আনন্দ আটখানা হয়ে উঠল। বর্ষণকে নিয়ে আদর করল। কুয়াশারা কাছে বসে অভয় দিল। সকলে ওকে দেখে বলে উঠল,
” মাশাআল্লাহ ”
শশী লজ্জা পেয়ে গেল৷ টুকটাক গল্প গুজব করল। চারটার দিকে বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু হলো৷ নীহারের কাছে কাজী বসে সকল ফর্মালিটি পূরণ করে কবুল বলতে বলল৷ নীহার একদম সেকেন্ড পলও দেরি করল না কবুল বলে দিল তিনবার৷ তা দেখে শিশিররা সব ঠোঁট টিপে হাসতে লাগল৷ নীহার খেয়াল করে বিরক্ত চোখে চায়ল৷ কাজী নীহারের থেকে সই নিয়ে এবার শশীর কাছে গেল৷ কাজীর সাথে যাবার জন্য শিশির উঠতে উঠতে নীহারকে বলল,
” ভাই একটু তোহ্ সময় নিতি?”
আবার হাসল সব। নীহার আজ ভালোমতো বুঝেছে আজ এদেরই সময়৷ তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে নিল। শিশির সহ হিম, তুষার, তুহিন বাড়ির মধ্যে গেল বিয়ে পড়ানোর সাক্ষী হতে। শান্তরা রইল শুধু নীহারের কাছে৷
শশীর কাছেও সব ঠিকঠাক করে কাজী কবুল বলতে বলল। শশীর অবস্থা খারাপ তখনই আরো বেগতিক হয়েছে যখন কাজী নীহারের নাম নিয়ে বিয়ে পড়াতে লেগেছিল৷ নীহারের নাম শুনে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ এত অপেক্ষা, এত প্রতীক্ষা সব আজ পূরণ হতে যাচ্ছে। সে নীহারের বউ হতে যাচ্ছে? সত্যি কী সব সত্য!! এসব বাস্তব! স্বপ্ন না তো? তার হাত পা জমে এলো, বুক কাঁপতে লাগল। কুয়াশারা টের পেয়ে শশীকে জড়িয়ে নিল৷ বৃষ্টি, ইয়াসমিন কবুল বলতে বলল। শশীর চোখে পানি টলমল করছে এখনি গড়িয়ে পড়বে৷ লাল চোখজোড়া করে একবার ডানে ধরে রাখা কুয়াশা, বৃষ্টি কে দেখল আর বামে ইয়াসমিন, ঈশাকে দেখল৷ মা’কে খুজল কিন্তু পেল না৷ সীমি আবার বলল কবুল বলতে। সীমির দিকে তাকাল৷ তারপর চোখ বন্ধ কর নীহারের মুখটা মনে করে তিন কবুল বলল। সকলে বলে উঠল,
” আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ”
শশী সকলের কথা পেয়ে কেঁদে উঠল। সে হতে পেরেছে, পেরেছে সে হতে নীহারের বউ। আজ থেকে নীহারের বউ সে৷ তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। তার স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে৷ নীহারকে সে নিজের করে পেয়েছে তাও আবার স্বামী রূপে। তাদের নামহীন ভালোবাসা থেকে হবুতে গেছিল আর আজ তারা স্বামী স্ত্রী! তাদের সম্পর্কের নাম বিয়েতে পূর্নতা পেল। উফফ এই অনুভূতি তারা কীভাবে ব্যক্ত করবে? আজ পাঁচটা বছরের বেশি সময় সে নীহারকে পেল আর তাদের তিনটা বছরের বেশি সময়ের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল। এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না৷ তারা সারাজীবনের জন্য এক হলো৷
শশী এসব ভেবে কান্না করতে লাগল। কাজীর কথা অনুযায়ী কোনো রকম সইটা শুধু করেছে। এরপর আবার কাঁদতে লেগেছে। কুয়াশারা হাজার অভয় দিয়েও কাজ হচ্ছে না। শিশির তা দেখে এবার এগিয়ে এলো। ঈশা উঠে পড়ল ইয়াসমিন সরে বসল। শিশির শশীর পাশে বসে এক হাতে জড়িয়ে নিল বোনকে। শশী শিশিরকে পেয়ে বাহু জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। শিশির বোনকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
” চুপপ, লক্ষ্মী বোনটা আমার৷ সব ঠিক আছে। তোরা সফল হয়েছিস৷ আর ভয় নেই৷ আমার ভাইয়ের বউ হয়ে গেছিস তুই। সম্পর্ক কি হলো বলতো আমাদের? ”
শশী আস্তে আস্তে কান্না থামাল৷ এরপর শিশিরের দিকে তাকাল। শিশির মুচকি হেসে বলল,
” নীহার ভাই কিন্তু আমার বড়!! ”
তা শুনে ফিক করে হেসে দিল শশী। সকলে মুচকি হাসল শশীর অবস্থা দেখে৷ মেয়েটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল৷ কে বলবে একটু আগে সে হাউমাউ করে কাঁদল! শিশির অবশ্য ও’কে হাসাতেই কথাটা বলেছে। বৃষ্টি, ইয়াসমিন, কুয়াশা এবার একসাথে বলে উঠল,
” আমরা জা হয়ে গেছি শশী! ”
শশী লজ্জায় নূয়ে পড়ল। কুয়াশা বলল,
” তিন জা থেকে চার জা হয়ে গেলাম। আমার গ্যাংয়ের সদস্য বাড়ল। ”
শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকাল৷ এমন ভাবে গোবর ঠাঁসাটা বলছে যেন কিসের না কিসের গ্যাং! শশী মুচকি হাসল। আজ থেকে ঐ মালিথা ভিলার বউ সে-ও। বৃষ্টি কথাটা বললও,
” আজ থেকে তুমিও মালিথা ভিলার বউ। ”
ইয়াসমিন বলল,
” এখন থেকে মালিথা ভিলার পারমানেন্ট সদস্য তুমি। ”
শশীর ভেতরটা শীতল হয়ে উঠল। ঐ বাড়িটাতে সে এতটা শান্তি পায় আজ থেকে ওটা তারও বাড়ি ভেবে শান্তি লাগছে। শশী কথা বলল না৷ শিশির আরো অনেক কিছু অভয় দিয়ে চলে গেল। কুয়াশারা অনেক গল্প করতে লাগল।
বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৬৭+৬৮
পাঁচটার দিকে সকল বরযাত্রী খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারল। আর কিছুক্ষণ পরেই সকলে বউ নিয়ে রওনা হবে৷ নীহারকে শশীর ঘরে নিয়ে যাবার কথা বললেন শশীর ভাইরা, চাচারা। সকলে সম্মতি দিল। নীহারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতে বলল। নীহার উত্তেজিত অনেক বউকে দেখার জন্য। তার স্বাধের বউ। তার পাখিটা আজ থেকে তার। তার ছোট্ট পাখির ছানা তাকে আজ থেকে আগলে রাখবে। তার ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবে।
