ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৭ (২)

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৭ (২)
তাজরীন ফাতিহা

ইনাবা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে পড়েছিল। এরমধ্যে দরজা খোলার শব্দে চোখ মেলে চাইল। মুখ ঢাকা সম্পূর্ণ শরীর আবৃত একজন লোক খাবার নিয়ে এসেছে। টেবিলে প্লেট এগিয়ে দিতেই সজোরে ধাক্কা দিয়ে প্লেট উল্টে ফেলে দিল ইনাবা। জিদে ঠোঁট ক্রমশ কাঁপছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে। লোকগুলোকে মেরে তবেই ক্ষান্ত হবে সে। তাকে হোস্টেল থেকে তুলে এনেছে এই জালিম গুলো। কত বড় সাহস! লোকটা কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তৎক্ষনাৎ বাইরে চলে গেল। ইনাবা আগের ন্যায় পড়ে রইল। বাবা, ভাইয়া কাউকে কিভাবে জানাবে যে সে এই মহা সংকটে পড়েছে? ফোনটাও হাতের কাছে নেই। ওই থাপ্পড় দেয়া লোকটা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। রাগে, জিদে একাকার হয়ে মুখশ্রী কান্নায় রূপ নিল।

আবারও দরজা খোলার আওয়াজে মাথা উঁচিয়ে চাইতে না চাইতেই তাকে আচমকা উঠিয়ে ঠাস করে সপাটে চড় বসানো হলো। ইনাবা হতভম্ব হয়ে সামনে তাকাতেই থাপ্পড় দেয়া সেই লোকটার মুখাবয়ব দৃশ্যমান হলো। ক্রোধে ধরণী যেন ভুলন্ঠিত হলো। থরথর করে কেঁপে উঠে বিগলিত হয়ে উঠল সমস্ত তরুণী কায়াটি। সীমাহীন রাগে পরিবেশ পরিস্থিতি ভুলে সপাং করে পাল্টা চড় বসিয়ে দিল ইনাবা। তীব্র আক্রোশে উন্মাদ হয়ে উঠল যেন। নয়নপক্ষ্ম কাঁপছে বিরতি নিয়ে। লোকটা নিজের জ্বলন্ত চক্ষু জোড়া সুচারু করে ইনাবের দিকে দৃষ্টিপাত করল। তীব্র অপমান, রাগে শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠল। মারাত্মক মাথা পাগল লোক নামেই খ্যাত সে। একবার রাগ উঠলে থামানো মুশকিল। সামনাসামনি দুটো আগ্রাসী চক্ষু। লোকটা হঠাৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে নিজের গালে হাত বুলিয়ে বলল,
“এখন তোমাকে বেশ সময় নিয়ে ছুঁবো। আর ইউ রেডী?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বডিগার্ড নাহওয়ানকে সুজি খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। বাচ্চাটা কিছুতেই সেসব মুখে তুলছে না। আধা ঘন্টা যুদ্ধ করেও যখন এক চামচও খাওয়ানো গেল না বডিগার্ড হতাশ হয়ে বলল,
“একটু খা রে। এমন বাপ ভক্ত বাচ্চা জীবনে প্রথম দেখলাম। বাপরে ছাড়া একবিন্দুও নাড়ানো যায়না। তোমার বাবা এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিজি। খেয়ে নাও বাবু।”
নাহওয়ান বডিগার্ডের কথাকে পাত্তাই দিল না। সে নিজ মনে গাড়ি নিয়ে খেলছে। আশেপাশে অসংখ্য গাড়ির স্তূপ। তাকে শান্ত রাখতে নকল মারওয়ানই এসব আনিয়েছে। অবশ্য পরিকল্পনাটা বডিগার্ডের ছিল। বডিগার্ড ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল। নাহওয়ানের জিদ্দি আচরণ পরখ করতে লাগল। একটু পরে নকল মারওয়ান ধুপ ধাপ পা ফেলে রুমে ঢুকল। নাহওয়ানের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

“বাবা বাবা।”
নকল মারওয়ানের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে চোটপাট করে এসেছে কারো সাথে। রাগে শরীর কাঁপছেও। স্যারের মেজাজ গরম বুঝতে পেরে বডিগার্ড ভয়ে ভয়ে বলল,
“অ্যানিথিং রং স্যার?”
লোকটার কর্কশ স্বরে প্রত্যুত্তর,
“নো।”
আমতা আমতা জবাব এল,
“আপনার ছেলে কিছুই খাচ্ছে না। খাচ্ছে না বলতে খাওয়াতে পারিনি এক চামচও। আপনি কি একবার চেষ্টা করবেন স্যার?”
“জাস্ট শাট ইওর মাউথ।”

ধমক শুনে বডিগার্ড চুপ করে গেল। লোকটা এবার তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলল,
“বারবার ফেইস মাস্ক পড়, খোলো। ত্বকটা নষ্টই হয়ে যাবে। নিজের চেহারার গ্ল্যামার হারিয়ে ফেলব এই নাটকে। তামাশা লাগিয়ে রেখেছে আমার সাথে। কাজটা তাড়াতাড়ি করবে তা নয় কয়েকটা ঝামেলা আমার কাঁধের উপর উঠিয়ে দিয়েছে। যেন সাইফারের না আমারই পানিশমেন্ট। ওই মেয়েকে কেন এখানে আনতে বলল তোমার কোনো আইডিয়া আছে?”

বডিগার্ড মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। অর্থাৎ এবিষয়ে তার মোটেও ধারণা নেই। লোকটা দাঁতে দাঁত ঘষল। চোখ মুখ লালিমা বর্ণ ধারণ করেছে। সম্ভবত মুখে র‍্যাশ উঠেছে। লালচে লালচে দাগ দেখা দিয়েছে। এসব রিয়ালিস্টিক থ্রি-ডি সিলিকন ফেইস মাস্ক আধা ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক। খোলার পর ত্বক চুলকায়, ঘামে। অস্বস্তিবোধ হয়। এই মাস্কগুলি সাধারণত উচ্চমানের সিলিকন দিয়ে তৈরি হয়, যা ত্বকের মতো নমনীয় এবং বাস্তবসম্মত চেহারা প্রদান করে। মাস্কের ডিজাইন থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা মুখের প্রতিটি অংশের বিস্তারিত প্রতিলিপি তৈরি করে। হুবহু অন্যজনের চেহারা নকল করতে এই মাস্কের জুড়ি মেলা ভার। যদিও একেবারে নিখুঁত চেহারা তৈরি করতে পারেনা তবুও এটি মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে।
নাহওয়ান নিজের ছোট্ট শরীরটা নিয়ে জড়িয়ে ধরল নকল মারওয়ানকে। বডিগার্ড সুজির বাটি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“স্যার একবার চেষ্টা করে দেখুন খাওয়াতে পারেন কিনা।”
ভারী গলায় উত্তর এল,

“খেতে না চাইলে চেপে ধরে খাওয়াও। মারার দরকার হলে মারো তবুও একে নিয়ে আমার সামনে থেকে যাও। এখন মেজাজ ঠিক নেই মেরে টেরে বসতে পারি তখন কান্নাকাটি করলে থামাবে কে? এই কুমিরের বাচ্চাকে এখন আমার অসহ্য লাগে। জাস্ট লিভ মি।”
স্যারের কড়া কণ্ঠ শুনে বডিগার্ড নাহওয়ানকে তার থেকে ছাড়িয়ে কোলে তুলে নিতে চাইলে খামচি, কামড় খেল। নাহওয়ানকে জিদ করতে দেখে লোকটা রাগান্বিত হয়ে নাহওয়ানের দুই হাত নিজের পা দিয়ে চেপে হাতে সুজির বাটি নিয়ে জোর করে খাওয়াতে লাগল। নাহওয়ান বাচ্ছাসুলভ ভঙ্গিতে কেঁদে উঠল। কান্নার জন্য হা করতেই সুজির চামচ মুখে ঢুকিয়ে মুখ চেপে ধরে লোকটা। বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। বডিগার্ড বলল,
“স্যার বাচ্চা মানুষ, গলায় খাবার আটকাতে পারে। এভাবে রেগে খাওয়ালে শ্বাসনালীতে খাবার আটকাবে।”
“কথা বলবে না। এইটুকু শরীরের তেজ আজ ছুটিয়ে দেব। বারবার জেদ ধরে কেন? পরশু থেকে অশান্তিতে রাখছে। এরজন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা, খেতে পারিনা, কাজ করতে পারিনা। অসহ্য!”

বিরক্তি উপচে পড়ছে মুখ হতে নিঃসৃত বাক্যে। নাহওয়ান গাল ফুলিয়ে গুনগুন করে কাঁদছে। দুইপাশের ফুলো গাল আরও উঁচু হয়ে আছে গাল ভর্তি খাবারে। নিজের হাত, পা বাঁধা থাকায় নিরুপায় হয়ে প্রথম দুই চামচ গিললেও পরের চামচ মুখে ঢুকানোর সাথে সাথে লোকটার কোলের উপর ফেলে দিল। পুরো জামা মুখের উদগিরিত খাবারে নষ্ট করে ফেলল। নকল মারওয়ান দ্রুততার ভঙ্গিতে নাহওয়ানকে ছেড়ে টিস্যু দিয়ে মুছে নাহওয়ানকে মারতে হাত উঠাতেই ইনাবা সেই হাত ধরে ফেলল। লোকটা ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“তোমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বলে যেখানে সেখানে চলে আসার অধিকার নিশ্চয়ই দেয়া হয়নি? হুটহাট অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়া কেমন ম্যানার্স?”
ইনাবা নির্ভয়ে প্রত্যুত্তর করল,

“একজন যুবতী মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত জোর করে তুলে এনে পৌরুষ দেখিয়ে চড় থাপ্পড় মারা কেমন ম্যানার্স?”
“তুমিও কিন্তু পাল্টা প্রতিঘাত করেছ। ওটার হিসেবে সেখানেই হয়ে গেছে। এখানে অযথা সেসব ইললজিক্যাল কথা টেনে পাশ কাটানোর চেষ্টা করবে না মিস ভুঁইয়া।”
নাহওয়ান তাদের কথার মাঝেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ইনাবার পা আঁকড়ে ধরেছে। বাচ্চাটা বেশ ভয় পেয়ে আছে। চোখ দুটোতে স্পষ্ট তা ফুটে আছে। ইনাবা মুহূর্তের মাঝে বাচ্চাটার ওই গোল গোল অশ্রু ভেজা টুইটুম্বর আঁখি জোড়ার মায়ায় পড়ে গেল। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। নিচে বসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“কাঁদে না বাচ্চা। কে মেরেছে তোমায়?”

নাহওয়ান হাত উঁচিয়ে নকল মারওয়ান আর বডিগার্ডকে দেখিয়ে দিল। বডিগার্ড ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে কখন, কোন সময় আবার মারল? ইনাবা কপাল কুঁচকে বলল,
“এইটুকু মাসুম বাচ্চাকে মারতে আপনাদের হাত কাঁপলো না? কোন মায়ের বুক খালি করে এনেছেন ওকে? কার নাড়িতে টান দিয়েছে আপনার জঘন্য পৌরুষত্ব? এইটুকু অবুঝ বাচ্চার সঙ্গে আপনাদের কীসের শত্রুতা?”
শেষের কথাগুলো নকল মারওয়ানের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিল ইনাবা। লোকটা নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,
“আগেও বলেছি আমার কোনো বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করবে না। তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি। নিজের সীমার মধ্যে থাক নয়তো বসের আদেশ অমান্য করেই নিজের রূপে ফিরে যেতে বাধ্য হব। আমাকে ঠান্ডা থাকতে দাও নয়তো পস্তাবে।”

ইনাবা হাসতে হাসতে বলল,
“তা কি পস্তাবো একটু শুনি? একটু আগের ক্যারাটের কথা ভুলে গেছেন?”
লোকটা রহস্যময় হেঁসে বলল,
“অবশ্যই না। খুব ভালোভাবেই মনে রেখেছি। একেবারে কলিজার ভেতরে সযত্নে তুলে রেখেছি। সময় হলে অবশ্যই সেটা ফেরত পাঠানো হবে।”
ইনাবা তার কথায় বিশেষ পাত্তা দিল না। নাহওয়ানকে কোলে তুলে বলল,
“এরা তোমার কি হয়?”
নাহওয়ান নকল মারওয়ানের দিকে হাত উঁচিয়ে বলল,
“বাবা মাচ্চে। বিশি বিশি মাচ্চে।”
ইনাবা এবার হতবাক হয়ে লোকটার দিকে চেয়ে বলল,
“আপনার ছেলে! নিজের সন্তানকে কোন পিতা এভাবে মারে?”
লোকটা কিড়মিড় করে জবাব দিল,

“ওকে মেরেছি কোথায়? জোর করে খাওয়াতে গেছি এখন সেটার নাম হয়েছে মারা। অসহ্য!”
“এত বিরক্তি কেন এতটুকু বাচ্চার প্রতি? ওর মা কোথায়?”
লোকটার কঠিন ও দৃঢ় গলা,
“জাহান্নামে। যাবে?”
ইনাবা রূঢ় গলায় বলল,
“ওটায় আপনি যাবেন দুইদিন পর। আমাকে সাধছেন কেন? নিজের স্ত্রী, সন্তানের প্রতি এত বিতৃষ্ণা? আপনাকে যে বিয়ে করেছে এবং সন্তান দিয়েছে তার প্রতি এই অসম্মানজনক আচরণ কতটুকু যৌক্তিক? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করেছেন কখনো?”
লোকটা এবার ইনাবার দিকে দুই কদম এগিয়ে এসে বলল,
“আমি করিনি। নাও তুমি এবার প্রশ্ন করে দেখ কি বলে।”
ইনাবা ঘৃণার সহিত পিছিয়ে গিয়ে বলল,

“দূরে থাকুন। নয়তো আবারও আমার হাত চলবে।”
” হ্যাঁ আর আমি তোমার সেই চলন্ত হাতে বসে বসে চুমু খাব।”
কর্কশ ও কৌতুক মিশ্রিত প্রত্যুত্তর। ইনাবা আর কথা বাড়াল না। কথার পৃষ্ঠে কথা। এর চেয়ে থেমে যাওয়াই শ্রেয়। নাহওয়ানকে কোলে নিয়ে বেরোতে নিলে লোকটা বলল,
“এই বাটি নিয়ে যাও। দেখ এই কুমিরের বাচ্চাকে খাওয়াতে পারো কিনা?”
ইনাবা সেই বাটির দিকে তাকালোই না। বডিগার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ভাত, সবজি, চিকেন, ডিম সেদ্ধ আর এক গ্লাস দুধ দিয়ে যাবেন।”
তারপর বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“এইটুকু বাচ্চাকে পালার মুরোদ নেই এসেছে বাপ হতে। বাপ না সাক্ষাৎ আজরাইল।”

ইনাবা ছোট ছোট লোকমা তুলে নাহওয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে। বাচ্চাটা বিনা জ্বালাতনে আরাম করে খাচ্ছে। প্রত্যেক নারীর গায়েই বোধহয় একটা মা মা ঘ্রাণ পাওয়া যায়। মেয়েরা যেমন মায়ের আহ্লাদ দিয়ে খাওয়াতে পারে পুরুষরা সেটা পারে না। তাদের ন্যাচার কাঠখোট্টা টাইপ। বাচ্চারা সেখানে কমফোর্ট ফিল করেনা। তারা নমনীয় ভালোবাসা, আদর বেশি উপভোগ করে। ইনাবা কোমল গলায় জিজ্ঞেস করল,
“আরেকটু খাবে?”
নাহওয়ান মাথা নাড়িয়ে বলল,
“কাব না।”
ইনাবা বলল,
“আরেকটু খাইয়ে দেই?”

নাহওয়ান ঘাড় নাড়িয়ে না বোঝাল। ইনাবা আর জোর করল না। যা খেয়েছে এটাই যথেষ্ট। মুখ ধুইয়ে দিল। দুধ ঢাকা দিয়ে রাখল এক পাশে। পেটটা খালি হলে খাইয়ে দেবে। ওকে দাড় করিয়ে প্লেট রাখতে আর হাত ধুতে গেল। হাত ধুয়ে রুমে ঢুকে দেখল নাহওয়ান খাটের উপর দাঁড়িয়ে রুমের সব স্যুইচ টিপছে। লাইনটা একবার জ্বালাচ্ছে আবার নিভাচ্ছে। জিনিসটা তার কাছে একপ্রকার খেলা। ইনাবা আঁতকে উঠে ওকে সেখান থেকে কোলে তুলে সরিয়ে নিল। নাহওয়ান কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“মায়েল কাচে যাব।”

ইনাবার বেশ মায়া হলো ওইটুকু বাচ্চার অবুঝ আবদারে। আহারে এই মাসুম বাচ্চাটার মা নেই! ভাবলেই কেমন মন খারাপ হচ্ছে। হৃদয়ে যাতনা অনুভূত হয়। সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আলো আঁধারির ওই দেয়ালটার দিকে নজর দিল। তার আর বাচ্চাটার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে মা, ছেলে। ইনাবা ওই মুহূর্তে একটা সুন্দর দৃশ্য কল্পনা করে ফেলল। নিজের ছেলেকে নিয়ে পুরো দেশ, বিদেশ চষে বেড়াচ্ছে সে। ইশ কি আদুরে আর মায়াময় দৃশ্যটা!
সে মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৭

বাচ্চাটার যেহেতু মা নেই। বাবা থেকেও নেই সেহেতু সে এই শিশুটিকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে। এই আদুরে গোলগাল বাচ্চাটা কিছুতেই অনাদরে মানুষ হতে পারেনা। এমন পাষাণ বাপের ছায়াতলে থাকলে অচিরেই বাচ্চাটার কোমলতা খসে পড়ে বিষন্নতা ও কঠোরতার ছাপ ফুটে উঠবে। না এ কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। দরকার হলে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়বে সে। এ লড়াই মাতৃত্বের লড়াই। এক না হওয়া মায়ের লড়াই। ছোট্ট এই মাসুম শিশুকে সুন্দর জীবন দেয়ার লড়াই। এতে তাকে জিততেই হবে। কোনো বাঁধার পরোয়া ইনাবা ভুঁইয়া করে না।

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here