ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ২

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ২
আয়ান আহম্মেদ শুভ

অর্ণবের মা অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বেশ রাগী কন্ঠে বলল
— এই অপয়া মেয়েটাকে আবার বাড়িতে নিয়ে এলি কেনো? ওকে ওর বাড়ি দিয়ে আসতে পারিসনি! ওকে দেখলেই আমার গা জ্বলে উঠে।

অর্ণব নিজের মায়ের মুখের কথাটা শুনে ভিশন অবাক হয়ে যায়। অর্ণব কখনও অস্বীকার করতে পারবে না নবনী তার ভালোবাসার প্রিয়জন। আর আজ তার মা সেই ভালোবাসার মানুষটিকে তার সামনেই অপয়া বলছে! কথাটা শুনতেই অর্ণবের বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা করে উঠল। অর্ণব মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি জবাব দিবে তার মাকে? কিছুই যেনো বুঝে উঠতে পারছে না অর্ণব। নবনী অর্ণবের মায়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। মা নামক শব্দের মানে নাকি মায়া, মমতা, আর ভালোবাসা। নবনী ও তো তাকে মা বলেই ডাকে। তবে কেনো উনি নবনীকে নিজের মায়া, মমতা দিয়ে নিজের বুকে টেনে নিচ্ছে না! অর্ণব কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে নিজের মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। বেসুরো কন্ঠে অর্ণব তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— মেয়েটাকে আর অপমান নাই বা করলে মা! মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার তো! চলে যাবে অনেক দূরে। আর কখনও আসবে না তোমাদের গায়ে জ্বালা ধরাতে। শুধু মাত্র কয়েকটা দিন প্লিজ!
অর্ণবের কথাটা শুনে অর্ণবের মা মুখ ঝামটা দিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে ভিশন তাচলছিল্যকর কন্ঠে বলল
— আমি জানতাম তুই এখন ও এই মেয়েটার পক্ষেই কথা বলবি। ছল করে তোকে বস করে নিয়েছে তো এই মেয়ে। তাই এখন ওর পক্ষে কথা বলা ছাড়া আর কোনো কথা তোর মুখে নেই।
— মা প্লিজ! ওকে নিয়ে আর কোনো কথা বলো না। আমরা অনেক দূরে থেকে এসেছি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই।
— যা ইচ্ছে হয় কর। আমাদের কথার মূল্য তো নাই তোর কাছে। তোকে জন্ম দিয়েছি তো এই দিনটা দেখার জন্য। কর যা ইচ্ছে হয় তাই।

অর্ণবের মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় অর্ণবের সামনে থেকে। অর্ণব একজন হেরে যাওয়া সৈনিকের ন্যায় দাড়িয়ে আছে‌। তার মায়ের বলা যাওয়া কথা গুলো রোজ তাকে শুনতে হয়। তবে আজ কেনো যেনো খুব খারাপ লাগছে কথা গুলো। নবনী নিজের শ্বাশুড়ির কথা গুলো শুনে কিছুই মনে করলো না। কারন এই বাড়ি আসার পর থেকেই এই কথা গুলো শুনতে হয় তাকে। নবনী অর্ণবকে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু কন্ঠে বলল
— মা চলে গেছে। এই সব কথা শুনে খারাপ লাগার কি আছে? চলো ফ্রেশ হয়ে নাও।
— হুম। চলো।

* অর্ণব নবনীকে সাথে নিয়ে রুমে চলে যায়‌। রাতের ডিনার শেষ করে অর্ণব নবনী দুজন নিজেদের রুমে বসে আসে। নবনী জানালার পাশে বসে তারা ভর্তি আকাশের পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। অন্য দিকে অর্ণব ও বিছানার সাথে হেল দিয়ে নবনীর সাথে কাটানো সেই পুরোনো দিনের কথা ভাবছে। একটু একটু করে তৈরি হয়েছে তাদের দুজনের মনের মধ্যে ভালোবাসা। অনেক আশা ছিলো এই ভালোবাসা কখনও ভেঙে যেতে দিবে না তারা‌।

তবে আজ পরিস্থিতির চাপে সেই ভালোবাসাকে হারাতে বসতে হয়েছে তার। অর্ণব ভাবনার আকাশে মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ছে। আজ তাদের দুজনের মাঝে দুরত্ব এতোটাই বেড়ে গেছে যে একে অপরের সাথে কথা বলতে গেলেও অনেকবার চিন্তা করতে হচ্ছে। ভালোবাসাটা যেনো তাদের মাঝে এখন নিরব হয়ে গেছে।অর্ণব আপন মনে নবনীর কথা ভাবছে ঠিখ এমন সময় হঠাৎ করে অর্ণবের ফোনে একটা কল চলে এলো। কলটা আসতেই অর্ণবের ভাবনার আকাশে চিড় ধরলো। অর্ণব ভাবনার অবকাশ ঘটিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিতেই ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল হয়েছে। অর্ণব কলটা পিক করতেই ফোনের ওপার থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এলো। কন্ঠস্বরটা বেশ অচেনা। মেয়েটি অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— হ্যালো মিস্টার অর্ণব। কেমন আছেন?
— জ্বি আমি ভালো আছি। কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না। আপনি কে বলছেন?
— আমি কে! সেটা জানাটা আবশ্যক নয়। ধরে নিন আপনার কোনো সুভাকাঙ্খি। কি করছেন এখন?
— আমার তেমন কোনো বিশেষ মানুষ নেই। আর না কখনও থাকবে। আপনি রং নাম্বারে কল করেছেন। রাখছি।
— আরে শুনুন তো! হ্যালো…!

অর্ণব মেয়েটার কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই কলটা মুখের উপর কেটে দিলো। নিজের কষ্টেই বাঁচতে পারছে না অর্ণব। আবার অপরিচিত সুভাকাঙ্খি! অর্ণব ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিতেই নবনী অর্ণবের কাছে চলে এলো। নবনী অর্ণবের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অর্ণব নবনীকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি জানি না কে কল করেছে। অপরিচিত নাম্বার। বিশ্বাস না হলে তুমি চেক করে দেখো।
অর্ণবের কথাটা শুনে নবনীর সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। অপরিচিত কেউ অর্ণবের ফোনে কল করতেই পারবে তবে অর্ণব কোনো অপরিচিত মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না‌। কথা বললেই নবনী ঝগড়া করবে অর্ণবের সাথে। অর্ণব হয়তো সেই পুরোনো অভ্যাস কে পরিবর্তন করতে পারেনি‌। তাই এমন করে কথাটা বলল। নবনী অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে মিছক হাসির রেখা ঠোঁটের কোনে টেনে বলল

— এতোটা ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুই দিনের অতিথি আমি।‌ আমার অধিকার ধিরে ধিরে কমে আসছে।
— হুম। আচ্ছা রাত অনেক হয়েছে। এখন ঘুমিয়ে পড়ি চলো।
— কেনো তোমার কি খুব ঘুম পাচ্ছে?
— না তেমন কিছু না তবে জেগে থেকে কি হবে?
— হুম কিছু করার নেই। চলো শুয়ে পড়ো।

* অর্ণব নবনীকে নিয়ে বিছানায় চলে যায়। দুজন নিজেদের বিপরীতে মুখ করে শুয়ে আছে। তাদের মাঝে হয়তো কিছু নেই। তবে এই দূরত্বটা চিৎকার করে প্রকাশ করছে যে সত্যি তাদের মাঝে এর থেকেও বেশি দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। নবনী অর্ণবের বিপরীতে মুখ করে রেখে শুয়ে শুয়ে ভাবছে। মানুষটা যদি এখন তাকে তার ঐ পরম শান্তির বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে দিতো! উহু সে দিবে না শান্তিতে তাকে ঘুমাতে। কারন যদি অর্ণব তাকে শান্তিতে থাকতে দিতো তবে কখনোই নবনীকে তার বুক থেকে আড়াল করতো না।

নবনী আপন মনে ভাবছে অর্ণবকে নিয়ে “অর্ণব কি তাকে সত্যি ভালোবেসে নাকি প্রয়োজনে প্রিয়জন বানিয়েছে! যদি সত্যি কারের ভালোবাসা আমাদের মধ্যে থাকতো তবে আমায় কষ্টের মধ্যে রেখে সে শান্তিতে থাকতে পারতো না। হয়তো তার কাছে তার পরিবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছেও আমার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তবে ভালোবাসার জন্য সেই পরিবার ছেড়ে দিয়েছি। অর্ণব পারলো না আমার জন্য, তার নিজের ভালোবাসার জন্য পরিবারের আছে লড়াই করতে”! নবনী কথা গুলো ভাবতেই তার চোখের পাতা ভারী হয়ে এলো।

হাজার ও অপমান সহ্য করেছে নবনী। শুধু মাত্র অর্ণবের ভালোবাসার জন্য। আজ সেই ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারোর হয়ে যাবে। অর্ণবের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করার মতো ক্ষমতা নবনীর নেই। অর্ণব অন্য কারোর হয়ে যাবে! কথাটা ভাবতেই নবনীর চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। নারী এমন এক বোকা মানুষ হয়। যাদের একটু ভালোবাসা দিলেই তারা সেই ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে।

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ১

অথচ দিন শেষে সেই নারী হয় প্রতারিত। নবনী আপন মনে কাঁদছে অর্ণবের কথা ভেবে। কিছু সময় কান্না করার পর আচমকা নবনী অনুভব করলো তার পাশে থাকা লোকটা হয়তো তার পাশে নেই। নবনী অর্ণবের উপস্থিত টের না পেয়ে হকচকিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো ভিশন। নবনী যা দেখতে পেলো তার দেখার জন্য হয়তো সে প্রস্তুত ছিলো না। নবনী দেখতে পায় অর্ণব……………….

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ৩