ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ৪

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ৪
আয়ান আহম্মেদ শুভ

নবনী অর্ণবকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই অর্ণব নবনীর চুল ধরে একটা ধাক্কা দিয়ে নবনীকে বিছানায় ফেলে দিলো। নবনী বিছানায় পড়ে গিয়ে অর্ণবের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই অর্ণব একটা বাকা রহস্যজনক হাসি দিয়ে নবনীকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তোর মতো একটা নষ্টা মেয়েকে আমি নিজের বুকে টেনে নিবো সেটা তুই ভাবলি কেমন করে? আমি জানি তুই মন থেকে এটাই চাস যে আমি যেনো তোকে ছেড়ে দেই। আর তুই অন্য পুরুষের সাথে ভালো থাকতে পারিস। আসলে তুই একটা জঘন্য নারী। তোকে যে না চিনতে পেরেছে সেই ঠকেছে।
— অর্ণব এসব কি বলছো তুমি? আমি ইচ্ছে করে তোমার থেকে মুক্তি কেনো পেতে চাইবো? অন্য কোনো পুরুষের সাথে যদি আমার সম্পর্ক থাকতো তবে কি আমি তোমায় ভালোবাসে নিজের পরিবার…!
— শার্ট আপ। তুই নিজের পরিবার ছেড়ে এসেছিস। দয়া করেছিস আমায়? অন্য কারোর সাথে বিয়ে করলে বুঝি তোর বাবা মা কে সাথে নিয়ে যেতিস!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— অর্ণব তুমি এখন নেশায় ঘোরে আছো। প্লিজ নিজেকে একটু সামলে নাও। তোমার কথা গুলো আমায় কষ্ট দিচ্ছে। প্লিজ!
— আজ আমার কথা গুলো তোকে কষ্ট দিচ্ছে! এতোটা বছর ধরে যে আমি কষ্ট পেয়েছি সেই কথা কি তুই ভেবেছিস? সেটা ভাববি কেনো? তোরা মেয়েরা তো নিজেদেরটাই ভাবিস। অন্য জন মরে গেলেই বা তোদের কি?
— অর্ণব কন্ট্রল ইউওর সেল্ফ। আমার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গ না।
— তাই নাকি? তোর এই সব কথা শুনে কি আমি তোকে ছেড়ে দিবো নাকি? তুই আমার মানে আমার। আমি ছাড়া অন্য কারোর সাথে থাকার কথা যদি তুই চিন্তা করিস তবে আমি খুন করে ফেলবো তোকে। আই লাভ ইউ। অনেক ভালোবাসি তোকে।

* অর্ণব কথাটা বলতে বলতে নবনীর পাশে শুয়ে পড়লো। অতিরিক্ত নেশার কারনে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলো না সে। নবনী অর্ণবের মাথার কাছে বসে আছে। অর্ণবের বলা কথা গুলোতে নবনী হয়তো খানেকটা কষ্ট পেয়েছে ঠিক। তবে নবনী জানে অর্ণব নেশার ঘোরে ছিলো। তাই অর্ণব কি বলছে না বলছে সেটা সে নিজেও জানে না‌। নবনী অর্ণবের নিরব চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

আজ তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব না থাকার পরেও আছে বিশাল দূরত্ব। এতোটা দূরত্ব আছে তাদের দুজনের মাঝে যে একে অপরের থেকে সারা জীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাচ্ছে। নবনী ডিভোর্সের কথাটা ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নবনী অর্ণবের দিকে একটু এগিয়ে এসে অর্ণবের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো। পরম আবেশে ঠিক আগের মতো করে নবনী অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অর্ণবের চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো। অর্ণব বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। নবনী অর্ণবের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাদের এক সাথে কাটানো অতীতের মধুময় স্মৃতির কথা ভেবে ভেবে নিজের চোখের জল ফেলছে। আপন মনেই নবনী বলে উঠছে “বিধাতা কেনো তার জীবনটাকে এমন ভাবে এলোমেলো করে দিলো? একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছে সে! সেই ভালোবাসাটা তার জীবনে এতো বড় কষ্ট নিয়ে কেনো এলো! তিনি কি পারেন না সবটা আগের মতো করে ঠিক করে দিতে”!

* অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে নবনীর চোখের পাতা জোড়া এক হয়ে যায় তার মনে নেই। ভোরের আলো ফুটতেই নবনী জেগে উঠলো। চোখ মেলতেই নবনী দেখতে পায় অর্ণব এখনও ঘুমিয়ে আছে। নবনী অর্ণবের বিরক্ত না করে সোজা চলে যায় ফ্রেশ হয়ে নিতে। ফ্রেশ হয়ে এসে নবনী রান্না ঘরে এলো রান্না করার জন্য। নবনী রান্নার কাজ শুরু করতেই হঠাৎ করে নবনীকে উদ্দেশ্য করে পেছন থেকে নবনীর শ্বাশুড়ি বলে উঠলো

— কি নির্লজ্জ মেয়ে বাবা! ছেলেটার সাথে ডিভোর্স হতে চলেছে তাও ড্যাং ড্যাং করে রান্না করতে চলে এসেছে। কি জানি খাবারের সাথে আবার বিষ মিশিয়ে দিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে নাকি আবার!
নবনীর শ্বাশুড়ির কথাটা শুনে নবনীর ভিশন কষ্ট পেলো। এতোটা দিন তো ঠিক নবনী বাড়ির সব কাজ করেছে। এতোদিন তো নবনীকে নিয়ে উনি এমন কথা বলেনি। তবে আজ কেনো বলছেন? নবনী তার শ্বাশুড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করে মৃদু কন্ঠে বলল

— মা আপনি আমায় নিয়ে কিছু কি বলছেন?
— না, না। তোমায় নিয়ে কি বলবো আমি? তোমায় নিয়ে কিছু বলা যাবে নাকি! তুমি তো মহারানী এই বাড়ির। তোমাকে বলার মতো কোনো কথা আমাদের নাই বাপু।
— মা হঠাৎ করে আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বলছেন কেনো? আমি জানি আমাকে আপনার পছন্দ না। তবে একটু ভালো ভাবে ব্যবহার করলে কি হয়? আমি তো চলেই যাবো তাই না!
— বাহ বাহ এই তোমার বাবা মায়ের শিক্ষা! মুখে মুখে তর্ক করাটা কে শিখিয়েছে তোমায়? ছিঃ ছিঃ ছিঃ..! অর্ণব আমাদের জন্য শেষে কি না এমন একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে!

নবনী তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে ভিশন অবাক হয়ে যায়। নবনী তো তার শ্বাশুড়িকে নিয়ে কোনো প্রকার কটু কথা বলেনি বা ওনার মুখে মুখে কোনো তর্ক করেনি। তবে কেনো উনি নবনীর সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন? নবনী যেনো কিছুই বুঝতে পারছে না। নবনীর শ্বাশুড়ির কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই অর্ণব চলে আসে রান্না ঘরের সামনে। অর্ণব রান্না ঘরের সামনে এসে খানেকটা গম্ভীর কন্ঠে নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— কি হয়েছে কি সকাল সকাল? এতো চিৎকার চেঁচামেচি কেনো হচ্ছে?
অর্ণবের কথাটা শেষ হতেই নবনীর শ্বাশুড়ি অর্ণবের সামনে ন্যাকা কান্না করে দিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— দেখ বাবা দেখ। সকাল সকাল নবনী রান্না করছে দেখে আমি ওকে একটু হেল্প করতে রান্না ঘরে এলাম। তোর বউ আমায় সহ্য করতে পারে না আমি জানি। তাই বলে আমায় অপমান করে কথা বলবে! এটাই তো আমার প্রাপ্য?
নবনী পাথরের মতো থ হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের শ্বাশুড়ির মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নিজের শ্বাশুড়িকে এতো সুন্দর অভিনয় করতে দেখে যেনো নবনী শকড হয়ে গেছে।

নবনী শ্বাশুড়ির কথা গুলো শুনে অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণব নিশ্চুপ হয়ে নিজের মায়ের কথা গুলো শুনছে। নবনী ভাবছে অর্ণব কি তার মায়ের এই মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে তার সাথে রুড বিহেব করবে? যদি অর্ণব এমন কিছু করে তবেও নবনী কোনো শব্দ করবে না। কারন নবনী এমনিতেই এই বাড়িতে এখন শুধু মাত্র অতিথি হয়ে আছে। অতিথি হয়ে কারোর মনে কষ্ট দিয়ে যেতে চায় না নবনী। অর্ণব নিজের মায়ের মুখ থেকে সব কথা শুনে নবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। নবনী মাথা নিচু করে আছে। অর্ণবের ফর্সা উজ্জ্বল মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে। হয়তো অর্ণব ভিশন রেগে আছে। অর্ণব নবনীর কাছে এসে নবনীকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ কন্ঠে বলতে লাগলো

— নবনী আমি যা শুনছি তা কি সত্যি? আমার মায়ের সাথে তুমি বাজে ব্যবহার করেছো?
— মা যখন বলেছে তখন সেটা মিথ্যা হতে পারে না।
— তাই নাকি? তার মানে তো এটাই দাড়ায় যে মা যা বলছে তা একদম সত্যি। আমি তোমায় কি বলবো? একটা রাস্তার মেয়ে হয়ে, একটা বাজে, খারাপ, জঘন্যতম মেয়ে হবার পরেও তুমি কেনো সকলের কথা এখনও মেনে নিচ্ছো? আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ৩

অর্ণবের এই কথা গুলোর মানে নবনী বুঝতে পারলো না। অর্ণব আসলে কি বোঝাতে চেয়েছে? সেটা নবনীর কাছে অপ্রকাশিত। অর্ণব নবনীর দিকে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকাতেই অর্ণব যা বলল তা শোনার জন্য নবনী মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অর্ণব নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল………………..

ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব ৫