ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩১

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩১
লেখিকা:ইশা আহমেদ

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে শাড়ির দোকানে আসে।একের পর এক শাড়ি দেখাতে থাকে দোকানদার।ইরহামও একের পর একটা অর্ষার গায়ে দিয়ে দেখছে।অর্ষা মহা বিরক্ত।২৫ টা শাড়ি হয়তো কেনা শেষ তাও হচ্ছে না।অর্ষা এক প্রকার জোড় করেই বের করে ইরহামকে শাড়ির দোকান থেকে।

—“কি সমস্যা আপনার ইরহাম এতো শাড়ি কে পরবে?”
—“কেনো তুমি।আমার সামনে সব সময় শাড়ি পরে থাকতে হবে বউ তোমাকে”
—“সব সময় শাড়ি কে পরে?পাগল হয়েছেন”
—“হুম হয়েছি তো সেই কবে তোমার প্রেমে”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে বিয়ের লেহেঙ্গা কিনতে চলে যায়।দোকানে ঢুকে একটা একটা করে লেহেঙ্গা দেখছে ইরহাম।অর্ষা ইরহামের কাজে প্রচন্ড বিরক্ত।মানুষ দেখে শুনে ভালো একটা কিনে নেয়।নাহ এই ছেলে একটার পর একটা অর্ষার গায়ে দিয়ে দেখছে।এরপর একটা মেরুন রঙের লেহেঙ্গা অর্ষার হাতে দিয়ে পরে আসতে বলে।অর্ষা বিরক্তিকর চাহুনি দিয়ে ইরহামের দিকে তাকিয়ে চেঞ্জিং রুমে চলে যায়।

অর্ষা বের হতেই চোখ আটকে যায় তার প্রেমিক পুরুষের।প্রেমিক পুরুষের চোখের দিকে তাকালেই অর্ষা এলেমেলো হয়ে যায়।লোকটা এমন কেনো বুঝে না অর্ষা।ইরহামের গভীর চাহুনি অর্ষাকে ছটফট করতে বাধ্য করছে।ইরহাম অর্ষাকে সবার আড়ালে এনে একটা আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,,,
—“তুমি অপুরূপা,তুমি স্নিগ্ধময়ী,আমার হৃদহরনী।তোমার দিকে তাকালে মনে হয় অনন্তকাল তাকিয়ে থাকি”
—“দূরে সরুন এইটা মল লোকজন দেখবে”
—“দেখুক আমি আমার বউয়ের সাথে ঘেঁষাঘেষি করছি অন্য মেয়েদের সাথে না”

ইরহাম অর্ষার জন্য ওই লেহেঙ্গাটাই নেয়।হলুদ মেহেন্দির জন্যও লেহেঙ্গা নেয়।এরপর যায় অর্ষার বাকি সব অর্নামেন্টস কিনতে।ইরহাম পারলে চুড়ির দোকানের সব চুড়িই কিনে নেয়।অর্ধেক কিনেছেও।অর্ষা প্রচন্ড বিরক্ত এতে।অর্ষার সব জিনিস কেনার পর ইরহামের শেরওয়ানি কিনতে যায়।এর মাঝে অর্ষা আরিশা আর ইলমা,উশার জন্যও লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে সব কিনেছে।

ইরহাম শেরওয়ানি দেখছে।অর্ষার একটা শেরওয়ানিতে চোখ আটকে যায়।ইরহামকে ওটা নিতে বলে।ইরহামও সেইটাই নেয়।রুশান রুহান ইয়াদের জন্যও অর্ষা ইরহাম পছন্দ করে পাঞ্জাবি নেয়।শপিং করতে করতে ৩টা বেজে গিয়েছে।শপিংগুলো গাড়িতে রেখে পাশের রেস্টুরেন্টে যায় দুজন।অর্ষার ভীষণ খিদে পেয়েছে।সেই সকালে বের হওয়ার আগে খেয়েছে এখনও কিছু খাওয়া হয়নি।
রেস্টুরেন্টে এসে ইরহাম খাবার অর্ডার দিয়ে অর্ষাকে বলে,,,

—“তোমার আর কিছু প্রয়োজন আছে?”
অর্ষা ইরহামের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,,,
—“আর কিছু লাগবে আপনি পুরো ৫-৬ মাসের শপিং করেছেন।আমার আর কিছু লাগবে না।পাগল লোক,মাথা খারাপ হয়েছে আপনার নির্ঘাত”
ইরহাম হেসে বলে,,,

—“আমার বউয়ের জন্য এগুলো তো কম হয়ে গিয়েছে এখনও মন ভরেনি আমার মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ মার্কেট তুলে নিয়ে আসি”
—“ধূর চুপ করুন তো পাগল ছাগল”

অর্ষা বাড়িতে আসতেই রুশান আরিশা চেপে ধরে অর্ষাকে শপিং দেখানোর জন্য।অর্ষা আর রুশান ড্রয়িংরুমে সব ব্যাগগুলো এনে রাখে।ইরহাম বাড়িতে ঢোকেনি।বাড়ি সাজানো হচ্ছে।প্রায়ই শেষের পথে।কালকে থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হবে।অর্ষার মামা খালারা আসতে শুরু করেছে।অর্ষার ফুপু নেই।তাই ফুপাতো ভাই বোনও আসার কোনো চান্স নেয়।অর্ষার মামাতো ভাই বোনদের সাথে বেশ সখ্যতা।

এখনো আসেনি বাড়িতে কেউ।রাতেই সব হাজির হবে।অর্ষা সবাইকে তাদের জন্য আনা ড্রেস দিচ্ছে।অর্ষাকে আসিফ আহমেদ টাকা দিয়ে দিলেও ইরহাম কিচ্ছু কিনতে দেয়নি সেই টাকাতে।টাকাগুলো অর্ষা বাবার হাতে তুলে দেয়।
রুশানকে রুশানের শপিংগুলো দিয়ে দেয়।আরিশা রুহান তো লাফাচ্ছে।রুশান অর্ষাকে এটা ওটা বলে জ্বালাচ্ছে।অথৈকে বিয়েতে ইনভাইট করতে দেয়নি রুশান।অর্ষাও কিছুটা হলেও অথৈর বিষয়ে কিছু আঁচ করতে পেরেছে।তাই সেও জোর করেনি।উশা নাইম,মুহিব,অর্না সব কালকে এসে হাজির হবে।

—“কিরে শাঁকচুন্নি চইলে তো যাবি তোরে আর জ্বালাইতে পারবো না রে।আমি এই দুঃখে মরে যাচ্ছি”
—“তোর তো আমাকে জ্বালানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই না!বেয়াদপ ছেলে তোর বউ আসলে দেখিস রুশাইন্না তোরে আমি কি পরিমাণে জ্বালাই”
—“তুই জ্বালাবি কিভাবে তোরে এখনই বিদায় করতিছি এর জন্য।যেনো আমার বিয়ের সময় জ্বালাইতে না পারিস।কিন্তু আমার বউ তো তোরই ননদ হবে”

শেষের কথাটা মন খারাপ করে বলল রুশান।অর্ষা হো হো করে হেসে উঠলো।বেচারা ভালোবাসলো বাসলো তসর ননদকেই গিয়ে ভালোবাসলো।মেয়ে পাইলো না আর।অর্ষা সয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,
—“রুশাইন্না নো প্রবলেম বিয়ের সময় তোর বউরে কিডন্যাপ কইরা তোর কাছ থেকে মুক্তিপন চামু তোর কিডনি হি হি”
—“ছিহ অর্ষা ছিহ তুই নিজের ভাইয়ের সাথে এমন করতে পারবি।তোর জীবনেও ভালো হবে না দেখে নিস।এই রুশানকে কাঁদাবি তুই।আর তোর ভালো হবে কি মনে করেছিস”

রুশান নেকা কান্না করার অভিনয় করে বলে কথাটা।অর্ষা রুশানকে বালিশ দিয়ে মেরে বের করে দেয় রুম থেকে।রুশান দরজার বাইরে থেকে বলে,,
—“আমিও তোকে দেখো নেবো বেইমান বেস্টফ্রেন্ড নিজের ভাইয়ের সাথে ধোকা দিবি লজ্জা করা উচিত তোর”
অর্ষা হাসতে হাসতে বিছানায়,গড়াগড়ি খাচ্ছে।রুশান যে তাকে হাসানোর জন্যই এমন উদ্ভট কথা বলেছে বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু একটা কথা ভাবতেই খারাপ লাগছে,কষ্ট হচ্ছে।এই বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।রুশান ছোট চাচ্চু,ছোট আম্মু,আম্মু,বাবাই,আরশি,রুহান সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে।অর্ষার গাল বেয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গরিয়ে পরলো।

ইয়াদ বসে আছে নিজের রুমে।আজকে সকালেই এসেছে।ভাইয়ের বিয়ে।এই বিয়ে নিয়ে অনেক মজা করবে ভেবেছিলো।কিন্তু এখন ইচ্ছে নেই সেই সবের।এখন খারাপ কম লাগলেও অর্ষাকে দেখলে বুকের বা পাশটায় চিনচিন ব্যাথা করে।ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত।
—“ইয়াদ”

কারো গলা শুনে পেছনে ঘুরে তাকায় ইয়াদ।ইরহামকে দেখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।ইরহাম ভাইয়ের পাশে বসে।ইয়াদ তার বিয়ের পর থেকে কেনো এমন করছে বুঝতে পারছে না ইরহাম।তার আগের হাসিখুশি ভাইটাকে সে হারিয়ে ফেলেছে তা বুঝতে পেরেছে সে।

—“বলো দা ভাই”
—“তুই কি কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগছিস”
—“না না দা ভাই এমনিই”
—“আমায় বলতে পারিস ইয়াদ”
—“আমি একজনকে ভালোবাসতাম দা ভাই।তাকে বলার আগেই তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেইটা নিয়েই একটু ডিপ্রেশনে আছি”

ইরহাম চমকায় তার ভাই যে কাউকে ভালোবাসতে পারে তা ভাবতে পারিনি।ইরহাম ভাবে তার ভাই তো বড় হয়েছে অবশ্যই কাউকে ভালোবাসতে পারে।সে ইয়াদের কাঁধে ভরসার হাত রেখে বলল,,,
—“ইয়াদ তোর হয়তো কষ্ট হচ্ছে হওয়াটা স্বাভাবিক।কিন্তু নিজেকে এইভাবে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখিস না।আগের মতো হয়ে যা।মামনি বাবা সবাই কষ্ট পাচ্ছে তোকে এইভাবে দেখে”

ইয়াদ হেসে বলে,,,,”তুমি ঠিকই বলেছো দা ভাই।এখন থেকে সবাই আবার আগের ইয়াদকে দেখবে”
ইরহাম কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়।ইয়াদ মন স্থিরকরে নিয়েছে সে এখন থেকে আগের মতো হাসি খুশি থাকবে।কেনো সে একটা মেয়ের জন্য তার মা বাবাকে কষ্ট দিবে।নাহ এখন থেকে সে নিজের কষ্ট নিজের ভেতরেই রাখবে।ভালোবাসার মানুষকে সুখে দেখারও একটা শান্তি আছে।সে না হয় দূর থেকে ভালোবেসে গেলে।এমন তো কথা নেই ভালোবাসলেই পেতে হবে।দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।

আজকে অর্ষা-ইরহামের মেহেন্দি।ইরহামদের বাড়িতে তেমন অনুষ্ঠান না হলেও অর্ষাদের বাড়িতে অনেক বড় করেই অনুষ্ঠান হচ্ছে।রুশান অর্ষাকে পার্লার থেকে আনতে গিয়েছে।আরিশাও অর্ষার সাথে আছে।ইলমাও অর্ষাদের বাড়িতে মেহেন্দি উৎসব পালন করবে।ইলমাও আরিশা অর্ষা ওদের সাথে ইলমাও গিয়েছে পার্লারে।রুশান তো সেই খুশি ইলমা আসায়।ভালোবাসার মানুষটাকে ভালোবাসার কথা বলতে না পারলেও ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে দেখতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার।

রুশান পার্লারের সামনে এসে অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে।বেচারা মহা বিরক্ত।এতো লেট কেউ করে।কিছুক্ষণ পরই মেহেন্দি সন্ধ্যা শুরু হবে।আর এখনো বউয়ের খবর নেই।মেকাপ করতে এতো সময় লাগে আগে জানতো না রুশান।রুশানের মন চাচ্ছে সব কটার মাথা ফাটাতে।রুশান বিরক্তি নিয়ে পার্লারে ঢোকার জন্য অগ্রসর হলে দেখতে পাই পার্লার থেকে তিন পরি হাসতে হাসতে বের হচ্ছে।

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩০

তিনজনের দিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রুশান।দু’জন তার বোন আর একজন প্রিয়তমা।ইলমাকে এমন সাজে প্রথম দেখছে রুশান।হা করেই তাকিয়ে আছে ইলমার দিকে।ইশ বাচ্চা মেয়েটাকে আজ বড়বড় লাগছে।

ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩২