ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ১১

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ১১
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

পুরো কেবিন তছনছ হয়ে আছে! জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এদিকে-ওদিকে, রক্ত পড়ে আছে এখানে-সেখানে—দুজন পুরুষ ঘরের দুই দিকে পড়ে হাসছে। কী ভয়ংকর দৃশ্য! কোনো আঘাতপ্রাপ্ত অসুস্থ মানুষ এমন পরিস্থিতিতে থাকলে ব্যথায়, যন্ত্রণায় কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যেত, ভয়-আতঙ্কে কাঠ হয়ে যেত।
কিন্তু ওরা যেন ভিনগ্রহের এলিয়েন! হাত থেকে এখনো গলগল করে রক্ত পড়ছে, আর দুজনেই পাগলের মতো হাসছে!

এমন সময় হাসপাতালের স্টাফ কফি নিয়ে আসল। শুদ্ধর কেবিনের দরজায় কয়েকবার নক করল। কোনো উত্তর না পেয়ে সে চলেই যাচ্ছিল, কিন্তু ভেতর থেকে কিছু পড়ার শব্দে সে আবারও নক করল। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ না আসায় দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল।
ভেতরের দৃশ্য দেখেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল!
সারা ঘর এলোমেলো, রক্তাক্ত! দুই পাশে পড়ে আছে দুটি সাইলেন্সার লাগানো রিভলভার। ডাক্তার চৌধুরীর সারা শরীরে ক্ষত, সেখান থেকে তরল গড়িয়ে পড়ছে! অপর পাশে আরেকজন ব্যক্তি পড়ে আছে—উনারও একই অবস্থা! যে কেউ দেখলেই বলে দেবে, এখানে একটু আগে টর্নেডো বয়ে গেছে।
এসব দেখে স্টাফটির হাঁটু কাঁপতে লাগল। চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু পড়ে থাকা দুজন ব্যক্তি তার দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে ভয়ে তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে কী করবে?
কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে চিৎকার করতে নিলে শুদ্ধ রাগান্বিত সুরে ধমকে উঠল, “একদম চিৎকার দেবে না!”
লোকটির কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম পড়ছে। শুদ্ধ একইভাবে বলল, “এই কথা যেন কাকপক্ষীতেও টের না পায়!”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুদ্ধ আবার বলল, “চুপচাপ গিয়ে ডাক্তার রেজাকে ডেকে আনো!”
এই কথা শুনে লোকটি একপ্রকার দৌড় দিল, যেন পালিয়ে গেল।
ডাক্তার রেজা এসে এসব দেখে ঘাবড়ে গেলেন, ভয় পেলেন, কিন্তু মুখে প্রকাশ করলেন না। তিনি বুঝলেন, এই অবস্থা ওরা নিজেরাই করেছে।

তিনি কিছুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বলল, “কি দেখছেন? তুলুন আমাদের!”
শুদ্ধ বলল, “আমাদের হাত থেকে গুলিটা বের করে ড্রেসিং করে দিন। আর হ্যাঁ, এইসব কথা যেন চার দেওয়ালের বাইরে না যায়!”
ডাক্তার রেজা ভেতর ভেতর ভয় পাচ্ছেন তিনি আর কিছু বললেন না। স্টাফের সাহায্যে দুজনকে তুলে কেবিনের সোফায় বসালেন। গুলি বের করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। শরীরের যেখানে যেখানে কাটা-ফাটা, থেতলানো আছে, সব জায়গা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে বললেন, “হাতে বেশি চাপ দেবেন না, নাহলে ব্লিডিং হবে। আর আপনাদের স্যালাইন নিতে হবে!”
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বলল, “এসবের কোনো দরকার নেই! সে ভাবলো এই ড্রেস পরে বাসায় যেতে পারব না!”
তারপর স্টাফটির হাতে টাকা দিয়ে বলল, পাশের মলটা থেকে তার জন্য ড্রেস নিয়ে আসতে। শার্ট-প্যান্টের সাইজও বলে দিল।

শুদ্ধ প্রনয় এর দিকে তাকিয়ে বলল, “শুধু শুধু আমার সাথে লাগতে এসে ব্যথা পেলি!”
প্রণয় তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “এটা কোনো ব্যথার কাতারে পড়ে নাকি? আমার নীলাঞ্জনার জন্য প্রতিদিন যে ব্যথা পাই, এটা সেটার কাছে কিছুই না!”
শুদ্ধর মনের কোণে প্রণয়কে আঘাত করার জন্য সূক্ষ্ম ব্যথার অনুভূতি হলো, কিন্তু সে সেটাকে প্রশ্রয় দিল না। কারণ, প্রণয় ওর সাথে যা করেছে, তার পরে কোনো দিক থেকেই সে সহানুভূতির যোগ্য না।
প্রণয় দেখল, শুদ্ধর অবস্থা অনেকটাই খারাপ। ওর মনেও একটা সূক্ষ্ম ব্যথা হলো, মনে-মনে একটু খারাপও লাগল। কিন্তু যখনই মনে পড়ল, শুদ্ধ ওর সাথে কী করেছে, কীভাবে ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে, কিভাবে ওর থেকে ওর ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে তখনই তার সব খারাপ লাগা সরে গিয়ে ঘৃণা এসে জায়গা নিল।
স্টাফটা চলে এসেছে।

প্রণয় শুদ্ধর অ্যাটাচড ওয়াশরুমে গিয়ে অনেক কষ্টে চেঞ্জ করে নিল। পরপর শুদ্ধও চেঞ্জ করল।
শুদ্ধ ভাবল, বেশিসময় হাসপাতালে থাকা আর ঠিক হবে না। কে জানে, কখন কোথায় ওই ন্যাকামেয়ে দেখে ফেলবে! পরে আবার আরেক ঝামেলা।
প্রণয় বেরিয়ে গেল, পিছন-পিছন শুদ্ধও গেল।
ওদের দুজনেরই হাতের অবস্থা ভালো না, তাই কেউই গাড়ি ড্রাইভ করতে পারবে না।
প্রণয় বাসায় ফোন দিয়ে ড্রাইভারকে আসতে বলল।
শুদ্ধও ড্রাইভার পাঠাতে বলল।
৩০ মিনিট পর ড্রাইভার এলো।
হাসপাতালের বাইরে দুজন দাঁড়িয়ে আছে।
রহমান চাচা প্রণয়কে নিয়ে গেলেন, আর মুকলেস চাচা শুদ্ধকে নিয়ে গেলেন।
রাত ১০:৩০।

সবাই ড্রইংরুমে অপেক্ষা করছে প্রণয় আর শুদ্ধর জন্য।
শিকদার বাড়ির নিয়ম—দিনের বেলা যে যেখানে থাক, রাতের ডিনার সবাই একসাথেই করবে।
চারজন গিন্নির রান্নাবান্না সব শেষ।
বাড়ির ছেলেরা নিজেদের রুমে, মেয়েরা বাবা-চাচাদের সাথে গল্প করছে।
সাদমান শিকদার প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “আম্মু, অনেক দিন তো হলো পড়াশোনা শিকেয় তুলে রেখেছ। কাল থেকে তুমি কলেজে যাবে!”
প্রিয়তা সম্মতি দিয়ে বলল, “ঠিক আছে, বড় আব্বু!”
পরিণীতা মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আব্বু, আমি ও আছি!”
চার ভাই হেসে উঠলেন।

পরিণীতা আর প্রেরণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “তোরা সবাই তো আমার মা!”
ততক্ষণে ছোট্ট থোরি দৌড়ে এসে বলল, “আমি বুঝি কেউ না?”
প্রিয়তার আব্বু সাজিদ শিকদার থোরিকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন, “তুমি আমার আম্মু!”
গিন্নিরা দূর থেকে এই দৃশ্য প্রাণভরে দেখছিলেন।
রাত ১০:৫৫
ছেলেদুটো এখনো ফিরছে না দেখে অনুস্রী বেগম প্রণয়কে ফোন করলেন।
প্রণয় ফোন ধরল না।
পরপর শুদ্ধকে ফোন করলেন।
শুদ্ধও ফোন ধরল না।
ঠিক তখনই তুহিনা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল।
অনুস্রী বেগম বললেন, “তুমি একা? শুদ্ধ কোথায়?”
তুহিনা বলল, “জানি না, মামিমা! শুদ্ধ ভাইয়া আমার আগেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে। আমিও ওকেই খুঁজছি!”

অনুস্রী বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন।
এক এক করে সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে বসল।
প্রেম বলল, “দাদানরা হয়তো বিজি আছে! তাদের জন্য আমরা আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবো?”
অরণ্য তাল মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, ছোট দাদান ঠিকই বলেছে! আমাদের খেয়ে নেওয়া উচিত!”
অর্থি বেগম ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ করো, বেয়াদব দু’টো! বড় ভাইরা এখনো বাড়ি ফেরেনি, তোমাদের খাবারের চিন্তা লেগে গেছে!”
প্রিয়তারও চিন্তা হচ্ছিল— প্রণয় ভাইয়াকে সেই সন্ধ্যার পর আর দেখেনি সে। কোনো বিপদ-আপদ হলো না তো! বিপদের কথা ভাবতেই ছোট্ট মনে ভয় জেঁকে বসলো।
ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠল।
পরিণীতা ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে গেল।
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বললো, “সামনে থেকে সর! ঢুকতে দিবি না নাকি?”
পরিণীতা সরে দাঁড়ালো। তার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেছে— পিছনে শুদ্ধকে দেখে চোখ আরো বড় বড় হলো

ওরা দু’জন সিঁড়িতে পা রাখতেই অনুস্রী বেগম চেঁচিয়ে বললেন, “এই সময় হলো তোমাদের আসার? আর এখন না খেয়ে উপরে চলে যাচ্ছ কেন? আসো, খেয়ে যাও!”
প্রণয় আর শুদ্ধ একসাথে বলল, “খিদে নেই।”
অনুস্রী বেগম রেগে ছেলেদের কিছু শোনানোর জন্য এগিয়ে আসতেই দু’জনকে দেখে অবাক হলেন। পরপরই কেঁদে উঠলেন।

অনুস্রী বেগমের কান্না শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল। তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং টেবিল ছেড়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো। শুদ্ধ আর প্রণয়কে দেখে সবার চোখ কপালে উঠল!
শুদ্ধ আর প্রণয় দু’জনেই ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। মুখের সব জায়গায় আঘাতের দাগ, শার্টের নিচে হাত আর শরীর দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে— শরীরে আরও অনেক বেশি আঘাত লুকিয়ে আছে।
বাকি তিন গিন্নিও “হায় হায়!” করে উঠলেন! সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
শুদ্ধ বললো, “আমাদের রাস্তায় একটা ছোট্ট অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, এখন ঠিক আছি। রুমে যাই?”
সাদমান শিকদার বললেন, “দাঁড়াও দু’জন!”

ওরা ভালোভাবেই জানে, ওদের “অ্যাক্সিডেন্ট” ফেকসিডেন্ট কিছুই হয়নি। এসব ডপ দিচ্ছে, কারণ ওদের শত্রুতার ব্যাপারে কে না জানে! সুযোগ পেলেই একে অপরকে কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।
কিন্তু এত তীব্র ঘৃণা আর শত্রুতা তো প্রথমে ছিল না! ১২-১৩ বছর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। ওরা দুজন একে অপরের আত্মার বন্ধু ছিল, সবকিছু একসাথেই করত। বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ওরা।
যেহেতু দু’জন একদম সময় বয়সি —প্রণয় শুদ্ধর থেকে মাত্র এক দিনের বড়! প্রণয় আর শুদ্ধর জন্মের পর ওরা দুজন একসাথেই বড় হতে থাকে। শুদ্ধর বাবা-মাও এখানেই থাকতেন। দুজনের ভালোবাসা ছিল দেখার মতো।
যত বড় হতে থাকে, দু’জনের বন্ধুত্ব তত গভীর হতে থাকে। সবাই বলত, “ওদের বন্ধুত্ব আজীবন স্থায়ী হবে।”
কিন্তু একসময় এমন অবস্থা এলো—সবসময় দু’জনের মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ লেগেই থাকত! মারামারিও লেগেই থাকত! কেউ কাউকে সহ্য করতে পারত না!

এমন অনেকবার হয়েছে, দুজন মারামারি করে হাসপাতালে পৌঁছে গেছে! আর এমনটা প্রায়ই ঘটত! এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, দুজনকে একসাথে রাখা যাবে না।
অতঃপর, শুদ্ধকে নিয়ে তার বাবা-মা কানাডা চলে যান!
কিন্তু প্রাণের বন্ধু কেন প্রাণের শত্রু হলো?
এটা এখনও সবার কাছে রহস্য।

প্রণয়ের এই হাল দেখে প্রিয়তা আর প্রোহেলিকার চোখ টলমল করে উঠল। বুকটা হুহু করে উঠল। প্রোহেলিকা মনে মনে বলল, “কেন প্রণয়? একটা মেয়ের জন্য আর কত! অনেক তো হলো, আর কত নিজেকে কষ্ট দেবে? এবার ওকে ছেড়ে দাও। আমরা অনেক সুখে থাকব। তোমার এই অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না।”
প্রিয়তার গলায় কান্না দলাপাকিয়ে আসছে। সে ভেবে সময় নষ্ট করল না, ছুটে চলে গেল প্রণয়ের কাছে।
প্রণয়ের হাত চেপে ধরে কান্না মিশ্রিত গলায় বলল, “কি করে? এত ব্যথা পেয়েছ? প্রণয় ভাই, আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? নিজের প্রিয়তমার অন্যের জন্য এত অস্থির হতে দেখে শুদ্ধর ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে! এতটা কষ্ট তো প্রণয়ের হাতে মার খেয়েও সে পায়নি! মনের কষ্টের কাছে বুঝি দেহের কষ্ট কিছুই নয়?”
প্রিয়তা কথা শেষ করতে পারলো না, প্রণয়ের সফেদ শার্টের হাতা ভিজে লাল হয়ে গেছে। প্রণয় টোশব্দ করলো না, সে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার দিকে। প্রিয়তাকে দেখে ওর শরীর ও মনের ব্যথায় যেন একটু ঔষধি পড়লো। প্রিয়তা গুলি লাগা স্থানে চেপে ধরেছিল। অন্য কেউ হলে ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠতো, কিন্তু প্রণয় ব্যথাতুর একটি শব্দও করলো না। বাহিরে যতই যন্ত্রণা হোক, মনের শান্তি আসল। আর প্রণয়ের কাছে সকল ব্যথার একটাই ওষুধ—ওর রক্তজবা।

প্রণয়ের শার্টের হাতা লাল হয়ে গেছে দেখে সবাই আরো অবাক হলো। অনুশ্রী বেগম এবার জোরে জোরে কেঁদে উঠলেন। প্রণয় বললো, “আম্মু, আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ঘরে যাই,
প্রিয়তার ছোট হৃদয় ব্যথায় জর্জরিত হয়ে গেলো। সে কেঁদে বললো, “আপনি কোথায় ব্যথা পেয়েছেন, প্রণয় ভাই? আমি কি আপনাকে ব্যথা দিয়ে ফেলেছি?” কথাটা বলার সাথে সাথেই তার নীল চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।
প্রণয় বহু কষ্টে হাত দিয়ে প্রিয়তার চোখ মুছে দিয়ে বললো, “একটুও ব্যথা পাইনি, সত্যি।”
প্রোহেলিকার আর সহ্য হলো না। সে দৌড়ে এসে প্রিয়তাকে সরিয়ে দিয়ে প্রণয়কে বললো, “তাড়াতাড়ি ঘরে চলো।”
প্রণয় আর কিছু বলার অবস্থায় নেই। ঝরঝর করে ব্লিডিং হচ্ছে। সে চলে যেতে বাধ্য হয়। যেতে যেতে পেছন ফিরে প্রিয়তাকে দেখতে ভুলল না।

তুহিনা কেঁদে দেওয়ার উপক্রম। শুদ্ধর সেদিকে কোনো ভাবান্তর নেই। সে চেয়ে আছে তার সুইটহার্টের দিকে। প্রিয়তার চোখে পানি টলটল করছে। শুদ্ধর ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে এক থাপ্পড় দিয়ে বলতে— “এই মেয়ে, তুমি অন্যের জন্য কেন কাঁদো? তুমি আমার জন্য কাঁদবে! অন্যের জন্য একদম কাঁদবে না।”
তুহিনা ব্যস্ত হয়ে বললো, “কীভাবে ব্যথা পেয়েছো, শুদ্ধ ভাইয়া?”
অনুশ্রী বেগম শুদ্ধর দিকে তাকালেন। এই ছেলেটার অবস্থাও ভালো না! তিনি মাতৃস্নেহে শুদ্ধকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। শুদ্ধ ব্যথাতুর চোখে তাকিয়ে ছিল প্রিয়তার দিকে।
প্রেম পুরো ব্যাপারটাই নোটিস করলো। সে আর কী করবে? শুধু বললো, “এদের ভাগ্যে কী আছে কে জানে! আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।”
কারোর আর গলা দিয়ে আর খাবার নামবে না। তাই কেউ আর খেল না। অর্ধেক শুদ্ধর ঘরে আর অর্ধেক প্রণয়ের ঘরে চলে গেলো।

কিন্তু প্রিয়তা কারো ঘরেই গেল না। সে ছুটে গিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল।
পরিণিতার বড় কষ্ট হলো তার ভাই-বোনের জন্য।
অনুস্রী বেগম শুদ্ধকে বকে উদ্ধার করছেন আর কাঁদছেন। অনুস্রী বেগম বললেন, “তোরা দুই ভাই কেন এমন করিস? মাকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পাস তোরা!”
শুদ্ধ বড় মামির বুকে মাথা রেখে হুট করেই কেঁদে উঠল। অনুস্রী বেগম অবাক হলেন। এই ছেলেকে তিনি কোনোদিন কাঁদতে দেখেননি। কত ব্যথা পেল, কিন্তু কোনোদিনও চোখের কোনা ভিজতে দেখেননি। সেই শুদ্ধই একটু মায়ের মমতা পেতেই আজ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল! অনুস্রী বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কি হয়েছে, আব্বু?”
তিনি শুদ্ধর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বলো আব্বু, কি হয়েছে?”
শুদ্ধ কিছু না বলে কেঁদেই চলল। এমন যন্ত্রণার কথা কি কাউকে বলা যায়? শুদ্ধর হাতে ব্যথা পেয়েছে, তার শার্টও ভিজে যাচ্ছে।

তিনি লাফিয়ে উঠলেন, বুঝলেন—এটা তার ছেলের কাজ। তিনি বললেন, “শার্ট খোলো, আব্বু।”
বলে ছুটে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলেন। জলজল চোখে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। উনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই দুই ছেলেই উনাকে জ্বালিয়ে মারছে। এদের নিয়ে তিনি যে কী করবেন!
শুদ্ধ বলল, “বড় মামি, আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দেবে? অনেক রাত ঘুমাতে পারি না!”
অনুস্রী বেগম বুঝলেন, ছেলেটা কোনো কারণে অনেক কষ্টে আছে। তিনি শুদ্ধকে কোলে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। শুদ্ধর চোখের অবিরাম জলরাশি তিনি দেখলেন, কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।
এদিকে প্রহেলিকা কোনো রকমে প্রণয়কে ঘরে এনে শার্ট পাল্টে, হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল।
শার্ট খুলতেই শরীরের ক্ষতগুলো দেখে প্রহেলিকার মনে হলো, আঘাতগুলো হয়তো ওর নিজের গায়েই লেগেছে! সে প্রথমবারের মতো অনুভব করল, প্রণয়ের থেকে প্রীয়তাকে আলাদা করা হয়তো তার ঠিক হয়নি।
আজকের সব ঘটনার জন্য সেই-ই তো আসল অপরাধী!

কিন্তু তার এক মন বলল, “তুই যা করেছিস, তা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য করেছিস!”
আরেক মন তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, “পেয়েছিস কি? সে কি তোকে এতটুকুও ভালোবাসে? ছলোনা করে বউ হওয়া যায়, হয়তো ঘনিষ্ঠও হওয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না! কথা আছে না, ছেলেদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজন হয় না! তাই প্রণয় তোকে স্পর্শ করলেও সেই ছোঁয়ায় ভালোবাসা থাকে না। প্রণয় তোকে এক চুল পরিমাণও ভালোবাসে না! তার সর্বকায়া জুড়ে প্রীয়তা ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে!” অন্যকে কষ্ট দিয়ে কোনদিনই নিজে সুখী হওয়া যায় না। এই সত্য তুই যত তাড়াতাড়ি মেনে নিবি তোরই মঙ্গল
প্রহেলিকা মন চিৎকার করে বলে উঠলো, “না! আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, প্রণয়কে আমার হয়েই থাকতে হবে! আমি বেঁচে থাকা কালীন সে অন্য কারো নয়!”

প্রণয় শুয়ে পড়লো। হাতে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে, কিন্তু তবুও হাসছে।
সে নিজের জন্য প্রীয়তার চোখে কষ্ট দেখেছে। এমন কষ্ট দেখার জন্য সে হাজারবার নিজেকে কষ্ট দিতেও রাজি!
প্রহেলিকা প্রণয়ের মাথায় হাত দিলো।
প্রণয় বললো, “ঘুমিয়ে পড়ো তুমি!”
প্রহেলিকা বললো, “আমি জেগে আছি। যদি তোমার কিছু দরকার হয়?”
প্রণয় বললো, “হবে না। ঘুমিয়ে পড়ো!”
প্রহেলিকা আর কিছু না বলে পাশে শুয়ে পড়লো। ওর ইচ্ছে করছে প্রণয়ের বুকে মাথা রাখতে, কিন্তু আজ আর সাহস হচ্ছে না।

কিন্তু ঘুম ও আসছে না।
প্রণয় এত ব্যথা আর চাপ নিতে পারলো না। পাশের ড্রয়ার থেকে স্লিপিং পিল বের করে দুইটা খেয়ে নিলো। এমনিতে সে এটা ছাড়া কোনো রাতেই এখন আর সে ঘুমাতে পারে না!
২০ মিনিট পর প্রহেলিকা ঘর থেকে বেরিয়ে শুদ্ধর ঘরে গেল। শুদ্ধও বেহুশ মতো ঘুমাচ্ছে। পাশের টেবিলেই পড়ে আছে বড় এক পাতা—স্লিপিং পিলস! যার পুরোটা খালি, শুধু শেষের দিকে একটা পড়ে আছে!
প্রহেলিকা একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে বেরিয়ে প্রীয়তার ঘরের বাইরে দাঁড়ালো। দরজায় হাত দিতেই খুলে গেল!

সে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে—প্রীয়তা অবুঝ শিশুর ন্যায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, ভারী চোখের পল্লব ভিজে একটার সাথে আরেকটা লেপ্টে আছে। চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া জলের স্পষ্ট চিহ্ন!
প্রহেলিকা ধীর নিঃশ্বাস ফেললো। মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“বোনু, এটা সত্যি যে আমি তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম! কারণ, তোর ওপর আমার চরম হিংসা কাজ করে! দেখ, তুই কত ছোট! তারপরও প্রণয় আর শুদ্ধ তোকে কতটা ভালোবাসে! শুধুমাত্র তোর জন্য নিজেদের সহ সবাইকে শেষ করে দিতে পারে! অথচ আমি ছোটবেলা থেকে প্রণয়কে ভালোবাসি, তবুও সে আমায় দেখেও দেখতো না, শুনেও শুনতো না! আমার আকাশসম ভালোবাসা সে অতি অবহেলায় পায়ে ঠেলে দিতো!
বিশ্বাস কর, বোন, আমি সহ্য করতে পারতাম না যে প্রণয় তোকে এত ভালোবাসে!”

“আমি জানি, আমি তোর সাথে অন্যায় করেছি! আর তোর থেকেও বেশি অন্যায় করেছি প্রণয়ের সাথে! আমি ভেবেছিলাম, কোনোভাবে যদি ওকে বিয়ে করে নিতে পারি, তবে ও আমার হয়ে যাবে! ধীরে ধীরে তোকে ভুলে যাবে! শুদ্ধও নিজের ভালোবাসা পাবে!
কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম। প্রণয় আজও আমায় ভালোবাসেনি! তার মনে এক চুল পরিমাণও জায়গা আমার জন্য খালি নেই, রে বোন! ওর মনে নিজের জন্য টুকু জায়গা ও করে নিতে পারিনি আমি। আমাকে বিয়ে করা তার জন্য শুধুমাত্র একটা ঢিল! আমার সাথে সুখের সংসারটাও অভিনয়!”
“কি করবো আমি? যাতে করে সে আমায় একটু ভালোবাসে? আমি কিছুতেই প্রণয়কে ছাড়তে পারবো না ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না আর পারছিও না! তুই প্লিজ চলে যা আমাদের জীবন থেকে।
প্রহেলিকা কথাগুলো ভেবে চাপা নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট।

শিকদার বাড়িতে স্কুল-কলেজ ভাঙ দেওয়ার নিয়ম নেই। পৃথার বিয়ের জন্য সকলের ১০ দিনের ছুটি ছিল, তাই আজ থেকে আবার সবার পড়াশোনা শুরু হবে।
পরিণিতা কলেজের জন্য তৈরি হয়ে এসে আব্বুর পাশে বসে আছে। মুখটা তার বাংলা পাঁচ বানিয়ে রেখেছে। তার মতে, এই বালের পড়াশোনা কোন হালায় যে আবিষ্কার করেছিল, তাকে একবার সামনে পেলেই হতো!
পরিণিতা নিজ দায়িত্বে ১০০ কেজি কাঁচা মরিচের সাথে ৫০ কেজি গুঁড়া মরিচ মিশিয়ে তাতে হালকা নিমপাতা আর করলা দিয়ে ব্লেন্ড করে নিজের হাতে খাওয়াতো!
এই পড়াশোনা নিয়ে সে মহাবিরক্ত!
পড়াশোনা তার কাছে ইউজলেস একটা টপিক!

সাদমান শিকদার বললেন, “কি হয়েছে আমার ছোট আম্মুর?”
পরিণিতা জানে, আব্বুকে মনের কথা বলে লাভ নেই! তাই পরিণিতা বললো,
“আমাকে ৫০০ টাকা দাও, আব্বু!”
সাদমান শিকদার হেসে বললেন, “নিশ্চয়ই!” বলে মেয়ের হাতে হাজার টাকা গুঁজে দিলেন।
এই কাহিনি দেখে থিরা থরি তন্ময় আর প্রেরণা ছুটে এলো! তাদেরকেও দিতে হবে!
সাদমান শিকদার হেসে সবাইকে টাকা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “আমার আম্মাজান কই?”
পরিণিতা বললো, “এখনও রেডি হয়নি!”

ইতিমধ্যেই সবাই ব্রেকফাস্টের জন্য হাজির!
প্রেম, প্রীতম, রাজ ফর্মাল লুকে হাজির! তারা অফিসে যাবে!
শুদ্ধ আর প্রণয় কিছুদিন কাজে যাবে না। শুদ্ধ হাসপাতালেও জানিয়ে দিয়েছে!
প্রহেলিকা মা-চাচিদের সাথে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।
তনুস্রী বেগম বললেন, “কি ব্যাপার, আম্মু! মুখটা এত শুকনো কেন?”
অনুস্রী বেগম বললেন, “হয়তো বরের জন্য!”
প্রহেলিকা কিছু বললো না!

প্রিয়তা ঘুম থেকে উঠতেই তার গতকালের কথা মনে পড়ল!
কিশোরীর বুক ভারী হলো! মন ছটফটিয়ে উঠল প্রিয় পুরুষের অবস্থা দেখার জন্য!
প্রিয়তা ঘর থেকে বেরিয়ে ওপরে থেকে নিচে তাকাল। না সবাই নিচেই আছে!
প্রিয়তা পা টিপে টিপে প্রণয়ের ঘরের দরজায় উঁকি দিল!
নিঃশব্দে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। বিছানার ওপরে প্রণয় উল্টো হয়ে খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে!
পুরুষালি, বলিষ্ঠ, ফরসা শরীরের দাগগুলো বড় বেশি চোখে লাগছে!
তার নীলাভ চোখে পানি টইটম্বুর হয়ে গেল!
সে ব্যথাতুর নয়নে চেয়ে রইল প্রণয়ের পানে!
তার ইচ্ছে করছিল, ক্ষতস্থানে একটু হাত বুলিয়ে দিতে!
সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না!
প্রণয়ের পাশে বসল!

চোখ থেকে গড়ানো এক ফোঁটা নুনাজল টুপ করে প্রণয়ের পিঠে পড়ল!
সে তার নরম হাতে আঘাতের জায়গায় হাত বুলাল!
তার ভীষণ জোরে কান্না পাচ্ছে!
ডান হাতে ক্রমাগত ভরে ওঠা চোখ জল মুছছে।
ডান হাতের সাদা ব্যান্ডেজের ওপর হাত বুলানো মাত্রই দেখল—সেখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ!
সে সেখানে আলতো হাতে স্পর্শ করে নিভিড় ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে বিড়বিড় করল—
**”নিষিদ্ধ পুরুষ তুমি,

জানো, কী দারুণ ব্যথার ওষুধ তুমি?
জ্বলন্ত বারুদ ছুঁয়ে বানাও তুষারভূমি!
কী দারুণ ব্যথার ওষুধ তুমি!
যে রোগে কেউ বাঁচে না, সে রোগের ওষুধ তুমি!
তোমাকে ভালোবেসে গোপন কলঙ্কে কলঙ্কিত আমি!”**
নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়া টুপটাপ অশ্রুকণা প্রণয়ের পিঠে পড়ছে!
সে সেই নিষিদ্ধ পুরুষের চুলের ভাঁজে হাত রাখল!
ঠোঁট কামড়ে কান্না নিয়ন্ত্রণ করে ছুটে বেরিয়ে গেল!
প্রণয় চোখ মেলল!
সে-ও বিড়বিড় করল—

“কলঙ্কবিহীন আকাশের চাঁদ সেও তো অসম্পূর্ণ। সেই জায়গায় তুমি মস্ত কলঙ্কিত পুরুষকে ভালোবেসেছো, তাই কলঙ্কিত হবে না— তা কি করে হয়?”
শুদ্ধ ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে!
অনুস্রী বেগম তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন!
প্রণয় এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি!
শুদ্ধ যতবার বলছে, “বড় মামী, আর খেতে পারব না!”
অনুস্রী বেগম চোখ রাঙাচ্ছেন!
বাকিরা সবাই প্রিয়তার জন্য অপেক্ষা করছে!
তন্ময় বলল, “ওই তো আপু আসছে!”
শুদ্ধ সেদিকে তাকাল!

কলেজ ইউনিফর্মে নীল চোখের মেয়েটাকে আজ ভীষণ মায়াবী লাগছে!
হাটু পর্যন্ত লতানো চুলগুলো দুই বেনি করে সামনের দিকে আনা!
মুখে কোনো প্রসাধনী নেই!
ফর্সা গোলাপি বর্ণের ওপর আকাশি কলেজ ইউনিফর্মটা ভীষণ মানিয়েছে! নীল চোখ আর লাল পদ্মের মতো ঠোঁট যে কোনো পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে!
প্রিয়তা এসে পরিণীতার পাশে বসল।
পরিণীতা ঝাঁঝিয়ে বলল, “তোর জন্য যদি ক্লাসে ঝাড়ি খাই, তাহলে দেখিস তোকে কী করি!”
প্রিয়তা ঢং করে ফিসফিস করে বলল, “কি আর করবি! যা করার তো আমি করব!”
পরিণীতা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি করবি?”

প্রিয়তা বলল, “রাতবিরেতে পাঁচিল টপকে হাওয়া খেয়ে যাও, কী ভাবো? আমি কিছু দেখি না?”
এই কথা শুনে পরিণীতার কাশি উঠে গেল।
প্রিয়তা তাড়াহুড়ো করে পানির গ্লাস দিল।
অর্থি বেগম ধমক দিয়ে বললেন, “খাওয়ার সময় এত গুজুরগুজুর ফুসুর ফুসুর কিসের?”
পরিণীতা চোখ বড় বড় করে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে!
প্রিয়তা ভাবলেশহীনভাবে রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরছে!
এইসব ছোটখাটো খুনসুটি দুজন পুরুষ মুগ্ধ হয়ে দেখছে!
শুদ্ধ বিনা বাক্যে খাবার শেষ করে নিল!

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ১০

প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে
দোতলার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল প্রণয়!
নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে সে বলল—
“নীল চোখের মেয়ে, তুমি নীলাঞ্জনা!
যার জন্য হাসি মুখে কবুল করি সকল যাতনা!”
প্রিয়তা আর পরিণীতা কলেজ যাবে প্রীথমের সাথে, থিরা আর থরি যাবে রাজের সাথে।
প্রেরণা বাড়ির গাড়ি নিয়ে যাবে। ভাই-বোনদের ড্রপ করে ওরা অফিসে চলে যাবে।

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ১২