ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩৩

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩৩
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

হাঁটা দিল সামনের দিকে প্রিয়তা ও দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরলো। কী যে ভালো লাগছে কোলে চড়তে পেরে! আজ কতগুলো দিন পর আবারও এই মানুষটা কোলে নিলো। নিজেকে পাখির মতো হালকা লাগছে প্রিয়তার। পরম আবেসে মাথা এলিয়ে দিলো সেই শান্তি নীড়ে।
—এভাবেই তো খুন করেছেন মিস্টার আবরার শিকদার প্রণয়।
সে বুকের কাছের শার্টটা মোঠো করে ধরে চোখ বন্ধ করলো। সাথে সাথে স্মৃতির পাতায় ধরা দিল অতীতের কিছু সুখকর, মায়াময় দৃশ্য।

তিন বছর আগে—
এমনি কোনো এক বৃষ্টিস্নাত দিনে প্রিয়তা স্কুলের পিছনের মাঠে বান্ধবীদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে পা মচকেছিল।
তখন প্রণয় ভাইয়ের সে কী বকা! প্রণয় সেদিন কোলে নিতে নিতে সাশিয়ে বলেছিলেন,
— “আমার প্রাণকে আমি ছাড়া আর কারো আঘাত করার অধিকার নেই। তোরও নেই। নেক্সট টাইম যদি এমন কিছু শুনি, তবে আমি নিজেই মেরে তোর হাড়গোড় পাউডার বানিয়ে বাড়িতে বসিয়ে রাখবো। মনে রাখবি, আমার প্রাণকে আমি ভালোবাসবো, আবার আমি আঘাত করবো। আর অন্য কারো কোনো অধিকার নেই।”
হঠাৎ প্রণয়ের কথায় ঘোর ভাঙলো প্রিয়তার।
প্রণয় হাঁটতে হাঁটতে রুক্ষ কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “আগে যতটুকু ওজন ছিল, তার থেকে গুনে গুনে আড়াই কেজি কমেছে। কীভাবে?”
প্রিয়তার ভাবনায় ছেদ পড়ল প্রশ্ন শুনে। তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। সে অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— “কীভাবে বুঝলেন?”
প্রণয় জবাব দিল না। মনে মনে বললো—
“যার প্রতিটা নিঃশ্বাসের হিসাব রাখি, যাকে অনুভবে নিয়ে বাঁচি, তাকে কোলে নিয়ে এইটুকু বুঝবো না?”
পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া এখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে। একটু পরপর আকাশে তীব্র আলো ছটা দেখা যাচ্ছে, সাথে বিকট শব্দে মেঘ গর্জন করে উঠছে।
তারা বর্তমানে যেখানে আছে, সেটাকে মোটেও জঙ্গল বলা চলে না—এটা একটা সুবিশাল চা-বাগান। দক্ষিণের তীব্র হাওয়ার তালে তালে দুলছে গাছগুলো।

প্রিয়তার ভীষণ ভালো লাগছে এই আবহাওয়া। প্রবল বাতাসে তার ঘন ঢেউ খেলানো চুলগুলো হাওয়ার তালে দুলছে। চুলের ক্লিপটা প্রণয় ভাই যে কোথায় ছুঁড়ে মেরেছেন, কে জানে! আবারও তখনকার ওই সবের কথা মনে পড়তে লাগলো প্রিয়তার আবারও মনের মধ্যে জেকে বসতে লাগল সেই দম বন্ধ কর অনুভূতিগুলো আবারো প্রিয়তার গলা শুকিয়ে কাঠ হতে লাগলো, গা কাটা দিয়ে উঠলো।
এখনও কানে বাজছে প্রণয় ভাইয়ের সেই ছন্নছাড়া ভালোবাসা মিশ্রিত কথাগুলো সেই নিষিদ্ধ আবদার গুলো। এখনো গালে গলায় লেগে আছে সেই অপরিচিত স্পর্শগুলো, যার সাথে বর্তমানের স্পর্শের কোনো মিল নেই।
প্রিয়তার সকল হিজিবিজি ভাবনাচিন্তাকে ছাপিয়ে একটা প্রশ্ন প্রবলভাবে মনে উঁকি মারছে। প্রণয় ভাইকে প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করার জন্য মনটা খচখচ করছে।
সে কোমল কণ্ঠে ডাকলো,

— “প্রণয় ভাই…”
প্রণয় ছোট করে জবাব দিল,
— “হুম।”
প্রিয়তা এবার বেশ কৌতূহলী কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
— “আচ্ছা, প্রণয় ভাই, হাসপাতালের বাইরে ওই লোকটা হিন্দিতে কী বলছিল? আমি তো বুঝতে পারিনি। কিন্তু আপনি তো বুঝেছেন, কী বলছিল লোকটা?”
থমকে দাঁড়ানো প্রণয় তখনকার লোকটার বলা কথাগুলো মনে পড়তেই তার মেজাজটা চিড়বিড়িয়ে উঠলো, রাগ ধরে গেল মস্তিষ্কে শিরায় শিরায়।
সে কঠিন চোখে তাকালো প্রিয়তার দিকে। মুখের ভাবখানা এমন, যেন প্রিয়তা মহাভারত অশুদ্ধ কিছু জিজ্ঞেস করে ফেলেছে।
সে দাঁত চেপে বললো,

— “সমস্যা কী তোর?”
প্রিয়তা আহাম্মক হয়ে গেল। মনে মনে বলল,
— “অদ্ভুত লোক! আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আবার ঘুরিয়ে আমাকেই প্রশ্ন করছেন?”
সে একটু আশ্চর্য কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করল,
— “আমার আবার কিসের সমস্যা হবে?”
প্রণয়ের কেন জানি না, এই মেয়েটার উপর খুব রাগ হচ্ছে। সে ঝাঁঝিয়ে বললো,
— “সমস্যা তো তোরই! তুই যদি একটু অন্যরকম হতিস, তাহলে আজ এত সমস্যাই হতো না।”
প্রিয়তার বিস্ময় এবার আকাশ ছুঁয়ে গেল। সে হতভম্ব গলায় শুধালো,
— “সব দোষ এখন আমার হয়ে গেলো? বাহ, বাহ! আর এই অন্যরকমটা কী রকম?”
প্রণয় কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। আবার হাঁটা ধরল সামনের দিকে। কিছুক্ষণ পর আদেশের সুরে বললো,
— “কাল থেকে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে ঠাঁটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকবি। এভাবে এক মাস চললেই কাজ হয়ে যাবে।”
এমন আদেশ শুনে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে গেল। সে কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— “কী কাজ হবে?”
প্রণয় বললো,
— “সব সমস্যার সমাধান।”
প্রিয়তা এবার বিরক্ত হলো। নাক-মুখ কুঁচকে বললো,
— “কোন সমস্যা? কী সমস্যা, সেটাই তো বুঝলাম না। তার আবার সমাধান!”
প্রণয় গম্ভীর কণ্ঠে, পুনরায় আদেশের সুরে বললো,
— “এত কথা তোকে জানতে হবে না। যা বললাম, তাই করবি। এক মাসের মধ্যেই আমি সুফল চাই। আগামী এক মাসে যদি তোর এই মূলার মতো ধলা চামড়া কয়লার মতো কুচকুচে কালো না হয়, তাহলে আমি নিজে তোকে সকাল-বিকেল কয়লা পিষে মাখাবো।”

প্রিয়তার চোখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল।
— “কী বলছে এই লোক! মাথা ঠিক আছে তো?”
সে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলো, কুচকুচে কালো চেহারায় তাকে দেখতে কেমন লাগবে! কল্পনায় নিজের প্রতিচ্ছবি দর্শন করতেই ধড়ফড়িয়ে চোখ খুলে তাকালো প্রিয়তা, বুকে থুথু দিলো। মনে মনে প্রণয়ের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো, তবে সেটা নিজের গুষ্টি বলে বেশি গালি দিতে পারল না। সে নাক-মুখ কুঁচকে মনে মনে বললো,
— “কোন দুঃখে আমি নাইজেরিয়ান হতে যাবো শুনি!উহহহু ঢঙ দেখে বাঁচি না। আমার ভালোবাসা খেয়ে দিয়ে মন ভরে নি ব্যাটার, এখন আমার কিউটনেস খেয়ে দেওয়ার ধান্দায় আছে, হুহ!”
প্রিয়তা মুখ ভেংচিয়ে একইরকম ঝাঁঝিয়ে বললো,

— “আপনি বললেই যেন আমি আমার এত সুন্দর স্কিন খারাপ করে ফেলবো!”
সে আবার ও ঝগড়াটে স্টাইলে বললো,
— “কই, আপনি ও তো মেয়েমানুষের মতো ফেটফেটে সাদা! আমি কি কখনো এটা নিয়ে আপনাকে খোঁটা দিয়েছি?”
প্রণয় চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো। ওর মনের কথাগুলো না বললেও সে ভালোই বুঝেছে। সে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,

— “তোর সাদা পছন্দ নয়?”
প্রিয়তা নাক সিটকে বললো,
— “ঠিক ধরেছেন। একদমই আমার সাদা চামড়ার পুরুষ পছন্দ নয়। পুরুষ মানুষ হবে একটু শ্যামবর্ণের, ব্রাউন স্কিনটোনের… উফফ, একটু শ্যামলা শ্যামলা ছেলেদেরকে ওয়াও ওয়াও লাগে!”
প্রণয়ের হিংসেয় ভিতরটা জ্বলে গেল। সে মনে মনে বললো,
— “আর কতভাবে কষ্ট দিতে চাস, তুই।
আমার কোলে থেকে অন্য পুরুষের প্রশংসা করছিস! আজ আমার হাত-পা বাঁধা না থাকলে তোকে বুঝিয়ে দিতাম, তোর প্রতিটি নিঃশ্বাসের উপরও শুধু আমার অধিকার!”
প্রিয়তা আবারও বলল,
— “রোদে দাঁড়ালে আমি একা দাঁড়াবো না, আপনাকে সাথে নিয়েই দাঁড়াবো। রোদে পুড়ে আমি কালো হব আর আপনি ধলা থাকবেন, এটা তো আর আমি হতে দিতে পারি না।”
প্রণয় শান্ত কণ্ঠে বলল,

— “আমি কালো হই বা সাদা, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তুই ফর্সা থাকবি না — ব্যাস! তোর এই সাদা রঙ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
প্রিয়তা অবাক হলো হতবাক কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
— “আমি ফর্সা হলে আপনার সমস্যা হবে কেন?”
থমকালো প্রণয়। ভারি নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,
“আমার নাহলে আর কার সমস্যা ? তোর এই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের জন্য আজ আমি সর্বস্বান্ত। আমি হারিয়েছি আমার সব কিছু, হারিয়েছি আমার ভালোবাসা। হয়েছি জঘন্যতম ষড়যন্ত্রের শিকার।
আমি তো সুন্দরী চাইনি। আমি যাকে ভালোবেসেছি, সে সুন্দরী হয়ে গেছে — এটা কি আমার দোষ?
একটু কম সুন্দর হতে পারতি না তুই?
একটু কম সুন্দর হলে কী হতো তোর?
যদি একটু কালো, মোটা, বেঁটে হতিস — খুব কি সমস্যা হতো?
হতো না।
তোকেই পাওয়ার জন্য মানুষ এতটা হিংস্র হয়ে উঠত না। আমার কাছ থেকে তোকে কেড়ে নেওয়ার কামনাও করত না।

তুই শুধু আমারই থাকতিস… আমি শুধু তোকে ভালোবাসতাম… তুই আমার বউ হতি।”
প্রিয়তা হাত ঝাঁকিয়ে বললো,
— “কি ভাবছেন, প্রণয় ভাই?”
প্রণয় সামনের দিকে এগোতে এগোতে শীতল কণ্ঠে বললো,
— “কিছু না, চুপ করে থাক।”
প্রিয়তা ও আর বেশি ঘাটালো না, তবে চুপ করেও থাকতে পারলো না।
এমন সুন্দর আবহাওয়া, সাথে ভালোবাসা… কে জানে এমন মুহূর্ত জীবনে আবার কখন আসবে কিনা!
তার মনে এক চিলতে সুপ্ত ইচ্ছার জন্ম হলো।
সে একটু মিষ্টি করে ডাকলো,

— “প্রণয় ভাই?”
প্রণয় ছোট করে জবাব দিল,
— “হুম।”
— “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
— “অপাতত এমন কোথাও, যেখানে ঝড়-বৃষ্টি লাগবে না।”
কথাটা মনে হয় প্রিয়তার একদমই পছন্দ হলো না।
মনে মনে বলল, “গায়ে একটু বৃষ্টি লাগলে কী জাত যাবে!”
সে আবার বললো,
— “একটা কথা বলি?”
— “বল।”
প্রিয়তা উৎসাহ নিয়ে বললো,
— “অনেক দিন আপনার গলায় গান শুনিনি, প্রণয় ভাই! খুব ইচ্ছে করছে এই মাতাল বাতাসের সাথে আপনার কণ্ঠ মিশিয়ে শুনতে। একটা গান গাইবেন, প্লিজ?”
প্রণয় আশেপাশে তাকালো।

যতদূর চোখ যায়, শুধু বিশাল বিশাল চা-বাগান — কোথাও কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই।
প্রণয়ের উত্তর না পেয়ে প্রিয়তার অভিমান হলো।
সে বুকের কাছের শার্টটা টেনে ঝাঁকিয়ে অভিমিশ্রিত কণ্ঠে ডাকলো,
— “ওহ, প্রণয় ভাই!”
প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর দিকে মাথা নিচু করে তাকালো। শান্ত কণ্ঠে বুঝিয়ে বললো,
— “এই ঝড়ো আবহাওয়া আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তোর গান শুনতে ইচ্ছে করছে?”
প্রিয়তা সাথেসাথেই জবাব দিল,
— “হুম, অনেক!”
বিজলির ঝলকানিতে প্রণয় তাকালো প্রিয়তমার উচ্ছ্বাসিত নীল চোখের দিকে।
মনে মনে বললো,
“তোর আবদার আমার কাছে আদেশের মায়াবতী।”
সে শান্ত চোখে প্রিয়তার নীল চোখের দিকে চেয়ে মনে মনে আওড়ালো ‘নীলাঞ্জনা’ :

“এর পর বিষণ্ণ দিন বাজে না মনোবীণ
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন
হাজার কবিতা বেকার সবই তা
হাজার কবিতা বেকার সবই তা
তার কথা কেউ বলে না —
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা…”
“তখন উদাস মন ভোলে মনোরঞ্জন
দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনতে চায়
তখন নীলাঞ্জনা প্রেমিকের কল্পনা —
ও মনের গভীরতা জানতে চায়
যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে
তাকাত সে অবহেলে দু’চোখ মেলে
হাজার কবিতা বেকার সবই তা
হাজার কবিতা বেকার সবই তা
তার কথা কেউ বলে না —
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা…”

প্রিয়তা মুগ্ধচিত্তে বুকে মাথা রেখে শুনছিল। তার কেন যেন মনে হচ্ছিল, এই গানটার সাথে তার গভীর সম্পর্ক আছে।
তার ভাবনার মাঝেই প্রবল কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেল।
সাথে টুপটাপ করে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি এসে আছড়ে পড়তে লাগলো তাদের চোখে-মুখে।
প্রণয়ের ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে— এখন কী করবে সে, কোথায় যাবে?
চারদিক নিকষ কালো আধারে নিমজ্জিত।
ঝড় আর বৃষ্টির তোড়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুজনেই ভিজে সপসপে হয়ে গেল।
বাতাসের ঝাপটায় মনে হচ্ছিল, প্রণয় ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে।
দুজন মিলে প্রায় ১৩১ কেজি, তার পরও ব্যালেন্স রাখতে পারছিল না।
বৃষ্টিটা ভালো লাগলেও এমন ভয়ংকর ঝড় দেখে ভয় পেয়ে গেল প্রিয়তা।
সে আরেকটু চেপে ধরলো প্রণয়কে।
প্রণয় দ্রুত পা চালাতে শুরু করলো।

এত বড় চা-বাগানে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ থাকে, একেবারে জনমানবশূন্য হতেই পারে না।
কিন্তু ঝড়ের জন্য সামনে এগোনোও কষ্টকর।
হঠাৎ আকাশে তীব্র আলোর ছটা দেখা গেল,
তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রূহ কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো জোড়ালো শব্দ কানে এলো!
সাথে সাথে আঁতকে উঠলো প্রিয়তা।
আরও শক্ত করে প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলো।
প্রণয় বুঝলো তার প্রান ভয় পাচ্ছে।
সে কপালে ঠোঁট চেপে আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— “ভয় পাচ্ছিস, জান?”
প্রিয়তা কাঁপা কণ্ঠে নিচু স্বরে বলল,
— “আপনি আছেন তো।”
হেসে ফেললো প্রণয়।
হাতের বাঁধনটা আরও একটু শক্ত করে এগিয়ে গেল সামনে।
কিছু দূর এগোতেই তার চোখ পড়ল বাঁদিকে।
সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সেইদিকে।
কাছে গিয়ে বুঝতে পারলো — বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটা মাটির বাড়ি।
সে দ্রুত বাঁশের বেড়ার দরজাটা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।
তার মনের মধ্যে সংকোচ কাজ করছে— এত রাতে অনুমতি ব্যতীত অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করাটা ঠিক দেখাচ্ছে না।
কিন্তু কী আর করার!

এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাইরে থাকাটা চরম বিপজ্জনক।
সে একা থাকলে হয়তো কিছুই যেত-আসত না, কিন্তু এখন সঙ্গে তার প্রাণ আছে— প্রাণটাকে তো সুরক্ষিত রাখতে হবে!
সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ঘরের দরজার কাছে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করতে লাগলো— ডাকবে কি না ।
কিন্তু এত ভাবার সময় কই!
ঝড়ের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।
সে একটু দ্বিধান্বিত হয়ে দরজায় টোকা দিল— একবার, দুইবার, কয়েকবার।
কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া আসলো না।
প্রণয় এবার বাধ্য হয়ে ডাকতে শুরু করলো,

— “কেউ কি আছেন? প্লিজ, আমাদের একটু সাহায্য করুন! কেউ কি শুনছেন?”
প্রিয়তা নিচু গলায় বললো,
— “এত রাতে মানুষকে বিরক্ত করা কি ঠিক হচ্ছে?”
কিন্তু প্রণয় তার কথায় কান দিল না।
আবারও ডাকলো।
আরও দু’বার ডাকার পর অবশেষে দরজাটা খুলে গেল।
হ্যারিকেন হাতে দরজা খুললেন প্রায় ষাট ঊর্ধ্ব এক ভদ্রলোক।
তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন সমবয়সী ভদ্রমহিলা— সম্ভবত উনার স্ত্রী।
দুজনের চোখেই ঘুম ঘুম ভাব।
ভদ্রমহিলা একটু বিরক্ত কণ্ঠে তেতো সুরে বললেন,

— “তোমরা কে হে বাচা? এত রাতের বেলায় ডাকাডাকি করছো কেন?”
বলতে বলতেই তিনি সামনের দিকে তাকালেন।
সামনে একজোড়া যুবক-যুবতী ছেলে-মেয়েকে দেখে উনার কথা বন্ধ হয়ে গেল।
ছেলে-মেয়ে দুটোকে এত কাছাকাছি দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল ওনার ।
তিনি কপালে ভাঁজ ফেলে প্রণয় আর প্রিয়তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।
ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন,

— “তোমরা কারা হে? আর এত ঝড়-বৃষ্টির রাতে এখানে কী করছো?
প্রিয়তা কিছু বলবে, তার আগেই প্রণয় বললো,
— আমি আর আমার স্ত্রী খুব বিপদে পড়েছি, চাচা। বাইরে অবস্থা খুব খারাপ। এর উপর আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। আজকের রাতটা যদি কোনভাবে আমাদের একটু আশ্রয় দিতেন, অনেক উপকার হতো।”
প্রণয়ের কথা শুনে প্রিয়তার কাশি উঠে গেল।
সে চমকে তাকালো প্রণয়ের মুখের দিকে।
তার চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে গেল, মুখটা আপনাআপনি হাঁ হয়ে গেছে!
কিন্তু প্রণয়ের চোখেমুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
সে মাত্রাতিরিক্ত স্বাভাবিক — যেন এটাই পৃথিবীর চরম সত্য!
ভদ্রমহিলার কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল।
মেয়েটা গর্ভবতী শুনে উনার মায়া হল ।
তিনি তার স্বামীকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,

— “তোমার বউ পোয়াতি, তাহলে বাইরে ভিজছো কেন? তারাতারি ভেতরে এসো। পোয়াতি মেয়েমানুষ, এই অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে বাচ্চার সমস্যা হবে।”
প্রণয় উনার কথা মতো ভেতরে প্রবেশ করে প্রিয়তাকে কোলে থেকে নামিয়ে দিল।
ভদ্রমহিলার মুখে বাচ্চার কথা শুনে প্রিয়তার বুক কেঁপে উঠলো।
সে সকল বিস্ময় ভুলে গিয়ে কেমন এক অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতিতে তলিয়ে গেল।
মনে মনে বলল, “প্রণয় ভাইয়ের সন্তান!”
আপনাআপনি হাত চলে গেল পেটে।
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
সে ঢোক গিলে প্রণয়ের দিকে দীপ্তিময় চোখে তাকালো।
মনে মনে বললো,

“সত্যিই কি আমি আপনার বউ?”
প্রণয়ও গভীর চাহনিতে তাকিয়ে ছিল প্রিয়তমার মুখের দিকে।
প্রিয়তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে প্রণয় মনে মনে জবাব দিল,
“হ্যাঁ, তুই আমার বউ।
যেদিন তোকে এই দুই চোখে প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন থেকেই তুই আমার বউ।
আর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুইই থাকবি।”
ভদ্রমহিলা সন্তুষ্ট দৃষ্টিতে ছেলে-মেয়ে দুটোর দিকে তাকালেন।
প্রণয় ও প্রিয়তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে দেখে মনে মনে আল্লাহর সৃষ্টির তারিফ করে বললেন,

— “মাশাল্লাহ! দেখে মনে হচ্ছে আল্লাহ নিজ হাতে জোড়া বানিয়েছেন। কী সুন্দর মানিয়েছে!”
ভদ্রলোক প্রণয়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন,
— “বাবা, তোমরা এই জনমানবহীন জায়গায় এলে কী করে?”
প্রণয় উনার দিকে তাকিয়ে অতঃপর ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা সংক্ষেপে খুলে বললো।
ওনারা স্বামী-স্ত্রী হতবাক হয়ে সব শুনছিলেন।
ভদ্রমহিলা বললেন,
— “আল্লাহ সহায় ছিলেন বলেই আজ তোমরা বেঁচে ফিরেছো।
নাহলে ওই উপরের জঙ্গলে তোমরা দ্বিতীয়বার কোনো সন্ত্রাসীর হাতে পড়ো নি।
আরও ভয়ংকর কিছুর হাতে পড়ে ছিলে।”
প্রণয় আর প্রিয়তা অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকালো।
ভদ্রমহিলা আবার বললেন,

— “ওরা এক দল উপজাতি।
কিন্তু এদেরকে সাধারণ আদিবাসী ভেবে ভুল করো না।
এরা সাধারণ আদিবাসীদের মতো নয়।
এরা সমাজ থেকে বহু বছর পিছিয়ে পড়া মানুষ।
তারা আধুনিক সমাজের সাথে মেশে না একেবারেই।
আদিম মানুষের মতো জীবনযাপন তাদের।
জঙ্গলের নির্দিষ্ট একটা সীমানাকে তারা তাদের জগৎ মনে করে।
আর যারা তাদের সীমায় ঢুকে পড়ে, তারা আর কখনো প্রাণে রক্ষা পায় না।”
প্রণয় আর প্রিয়তা বিস্ময়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল।
আসলেই, হায়াতের মালিক আল্লাহ।
না হলে আজ তারা বেঁচে ফিরতে পারতো না।
আরো কিছু কথাবার্তা শেষে –

ভদ্রমহিলা তাদের দুজনকে নিয়ে পাশের আরেকটা ছোট ঘরে প্রবেশ করলেন।
সেখানে একটা মৃদু হলুদ আলো জ্বলছে।
ঘরটা বেশ ছোট — একটা ছোট খাট আর দুটো বেতের মোড়া ছাড়া কিছু নেই।
ভদ্রমহিলা বললেন,
— “তোমাদের জন্য শুকনো কাপড় এনে দিচ্ছি।
তোমরা তাড়াতাড়ি কাপড় বদলে নাও।”
তিনি প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আবার বললেন,
— “এই যে মেয়ে, এই সময় সাবধানে থাকতে হয় জানো তো। তা তোমার কয় মাস চলেছে?”
এমন প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে গেল প্রিয়তা।
প্রণয় ভাইয়ের সামনে এমন প্রশ্নে তার মন চাচ্ছে মাটি ফুঁড়ে ঢুকে পড়তে!
ভদ্রমহিলা আবার পেটের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— “পেট দেখে তো মনে হচ্ছে না বাপু, বেশি দিনের পোয়াতি। তা কয় মাস? এক মাস, না দুই মাস?”
প্রিয়তা বেশ ভালোই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। এখন কী জবাব দেবে সে?
সে আশা করে আছে, প্রণয় কিছু বলবে…
কিন্তু ওর আশায় এক বালতি ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়ে প্রণয় একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা আর না পেরে কাঁপা কণ্ঠে ছোট করে বলল,
— “জি… এক মাস।”
মহিলা বেশ সন্তুষ্ট হয়ে মুখটা ওপরে তুলে বললেন,
— “মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর মুখখানা! মুখ দেখেই মনে হচ্ছে ছেলে হবে।”

লজ্জায় প্রিয়তার কান গরম হয়ে যাচ্ছে।
পুরো মুখ রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে।
ভদ্রমহিলা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন কাপড় আনতে।
প্রণয় ভাইয়ের সামনে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে প্রিয়তার মরে যেতে ইচ্ছে হলো।
এতবার “বাচ্চা, বাচ্চা” শুনতে শুনতে এখন তার নিজেকে গর্ভবতী মনে হচ্ছে!
সে শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে প্রণয় ভাইয়ের দিকে তাকাল।
সাথে সাথেই চোখে চোখ আটকে গেল।
প্রিয়তা আবারও মাথা নিচু করে নিল।
ওই চোখে সে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারে না — ওই গারো বাদামি চোখের গভীর চাহুনিতে কিছু একটা আছে, যা প্রিয়তাকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।
প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল,

— “একগাদা মিথ্যে বললেন কেন?”
প্রণয় ধীর কণ্ঠে জবাব দিল,
— “কী মিথ্যে বলেছি?”
থমকাল প্রিয়তা।
কী কী মিথ্যে বলেছেন, সেগুলো এবার নিজের মুখে বলতে হবে নাকি?
সে মাথা নিচু রেখেই বলল,
— “ওই… চাচিকে যেগুলো বলেছিলেন।”
প্রণয় দুষ্টু হেসে বলল,
— “কী বলেছি?”
প্রিয়তার এবার আরও লজ্জা পেয়ে গেল ।
গাল দুইখানা পাকা লাল টমেটো হয়ে গেছে।
সে আবারও গলা ভিজিয়ে নিয়ে ছোট করে বলল,

— “কিছু না… সরেন।”
ঠোঁট কামড়ে হাসল প্রণয়।
সে একটু এগিয়ে এসে প্রিয়তার কানের কাছে ঠোঁট ছুইয়ে তপ্ত কণ্ঠে বলল,
— “স্বামী-স্ত্রী না বললে থাকতে দিতো না, আর সন্তানের কথা না বললে হয়তো এতো সহজে রাজি হতো না।”
প্রিয়তা চোখ তুলে তাকাল।
তার চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে।
সে মনে মনে বলল,
“এই মিথ্যাগুলো কি আমার জীবনে সত্যি হতে পারতো না?”
এর মধ্যেই ভদ্রমহিলা হাতে শুকনো কাপড় নিয়ে এলেন।
ওরা দু’জন একটু দূরে সরে দাঁড়াল।
তিনি প্রিয়তার হাতে একটা চাপা শাড়ির, সঙ্গে লাল রঙের ব্লাউজ ও পেটিকোট দিলেন।
আর প্রণয়ের হাতে একটা নতুন লুঙ্গি ও উনার স্বামীর একটি শার্ট দিয়ে তারাহুরো করে বললেন,

— “রাত তো দুটো বেজে গেল, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পাল্টে শুয়ে পড়ো।
ভেজা কাপড়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
তিনি চলে যেতে নিলে, প্রণয় পেছন থেকে ডেকে বলল,
— “চাচি, কিছু মনে করবেন না, একটা বড় কাপড় পেলে ভালো হতো।”
তিনি ফিরে তাকালেন।
প্রণয় আবার বলল,
— “আসলে ওর চুল অনেক বড় ।
এই ভিজে চুল শুকোতে না পারলে চুলের পানিতে ঘর ভিজে যাবে আর ঠান্ডা ও লেগে যাবে।”
এবার ভদ্রমহিলার সত্যিই খেয়াল হলো — মেয়েটার চুল অনেক বড়!
তিনি চুলের দিকে তাকিয়ে আবারও সন্তুষ্ট হলেন। লম্বা চুল উনার অনেক পছন্দ।
কিন্তু আজকালকার মেয়েদের চুলের যা ছিঁড়ি!
তিনি মৃদু হেসে বললেন,

— “একটু দাঁড়াও, এনে দিচ্ছি।”
প্রিয়তা মুগ্ধ চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“এত খেয়াল না রাখলেও হতো, প্রণয় ভাই!
আপনার এই ছোট ছোট যত্নগুলো আমাকে একদিন শেষ করে দেবে।”
প্রণয় ওর কপালে টোকা দিয়ে বলল,
— “কি দেখছিস?”
প্রিয়তা চোখ সরাল না।
মুচকি হেসে মনে মনে বলল,
“মানুষ কী অদ্ভুত!
প্রথমে অনেকটা কাছে এসে, একেবারে হারিয়ে যায়…
ঠিক ডিসেম্বর আর জানুয়ারির মতো।”
ভদ্রমহিলা বড় একটা গামছা এনে প্রণয়ের হাতে দিয়ে বললেন,
— “দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ো।”
বলেই চলে গেলেন।
প্রণয় সম্মতি জানিয়ে দরজা বন্ধ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল প্রিয়তার কাছে।
বেতের মোড়াটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— “বস।”
প্রিয়তা আপত্তি জানিয়ে বলল,
— “আমি নিজেই করে নেবো, আমাকে দিন।”
কিন্তু প্রণয় ওর কথা কানে নিলো না।
প্রিয়তার ঘাড় ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল,
— “চুপচাপ বস।”
চুলগুলো তিন-চার ভাগে ভাগ করে যত্ন সহকারে ধীরে ধীরে মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
— “এটা তোর হেয়ার ড্রায়ার নয় যে ৪৫ মিনিটে শুকিয়ে ফেলবি!”
প্রিয়তার ঠোঁটের কোণে অদৃশ্য হাসির রেখা ফুটে উঠল।
মনটা আবারও একটু ভারী হল — মনে হয় ভালোবাসা আরেক পাউন্ড বাড়লো।
প্রণয় যত্ন করে কিছুক্ষণ চুল মুছে দিল।
তারপর ভালোভাবে গামছাটা পেঁচিয়ে চুলসহ খোপা করে দিল।
এখন আবার আরেক চিন্তার উদয় হয়েছে —
প্রিয়তা শাড়ি ও ব্লাউজ হাতে নিয়ে অসহায় গলায় বলল,

— “এটা বদলাবো কোথায়?”
প্রণয় লুঙ্গি হাতে নিয়ে হাঁ করে সেটার দিকে তাকিয়ে ছিল।
প্রিয়তার কথা বলতে বলতে দৃষ্টি পড়লো প্রণয়ের হাতে ধরা লুঙ্গির দিকে।
মনে মনে ভাবলো,
“প্রণয় ভাই লুঙ্গি পরবেন নাকি?”
প্রণয়কে লুঙ্গিতে কল্পনাতেই আচমকাই ফিক করে হেসে উঠলো প্রিয়তা।
প্রণয় ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত গলায় বলল,
— “আমার দুঃসময়ে হাসছিস?”
প্রিয়তা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম হলো।
সে প্রণয়ের হাত থেকে লুঙ্গিটা নিয়ে উলটে-পালটে দেখতে দেখতে আবারো প্রাণোচ্ছল হাসিতে ফেটে পড়লো।
হাসতে হাসতে চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে।
প্রণয় স্থির চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।
আজ পুরো দুই বছর পর সে তার প্রিয়তমাকে সে এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখছে।
হাসতে হাসতে প্রিয়তা বিছানার কোণে বসে পড়লো।
প্রণয় বলল,

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩২

— “হাসা শেষ হয়েছে? এবার লুঙ্গিটা দে।”
প্রিয়তা হাসি চেপে লুঙ্গিটা বাড়িয়ে দিল।
কিন্তু এখন প্রণয় বিরাট চিন্তায় পড়েছে —
তারা কীভাবে কাপড় পাল্টাবে?
ছোট্ট একটা ঘর, পূর্বদিকে একটা জানালা ছাড়া আর কিছুই নেই।
এদিকে আবারও প্রণয়ের মনে ঝড় শুরু হয়েছে।
হারিকেনের মৃদু, নরম আলোয় ভেজা শরীরে মেয়েটার রূপ চাঁদের মতোই ঝলমল করছে।
প্রণয়ের চোখ বারবার ঘুরে ফিরে সেই দিকেই নিবদ্ধ হচ্ছে।

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩৪