ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

এবার প্রিয়তাকে ও না আসতে দেখে সবাই বিরক্ত হলো।
প্রেরণা বললো, “দাদান হয়তো বাড়িতে নেই, আর ওরা দুজন নিশ্চয় গল্প জুড়ে দিয়েছে।”
ইনায়াও বললো, “আপু ঠিক বলেছেন।”
থীরা বললো, “তাহলে মেজো দাদান আগে হলুদ দেবে।”
সবাই রাজি হলো প্রিথম হলুদ দেবে।
ঠিক তখনই, কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে তন্ময় দু’গাল ভরে হলুদ লাগিয়ে দিলো!
এই কাণ্ড দেখে সবাই হেসে উঠলো।

প্রেম চিৎকার দিয়ে বললো, “আমাদের ছোট খোকা চ্যাম্পিয়ন প্রথম হলুদ দিলো!”
এক এক করে সবাই হলুদের আনন্দে মেতে উঠলো।
কিন্তু ইনায়ার মনে কেমন সন্দেহ হলো।
প্রিয়তা এমনি হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে ছাদ থেকে নেমে পুরো বাড়ি, প্রতিটা ঘর খুঁজলো।
পরিণিতা আর প্রিয়তাকে কোথাও না পেয়ে শেষে রক্তপদ্ম পুকুরপাড়ে গেলো।
সেই জায়গাটা খুব সুন্দর করে লাইটিং করা, কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।
হঠাৎ করেই কেউ তার কোমর চেপে ধরে পাশের গাছের সাথে ঠেসে দিলো!
পিট পিট করে চোখ খুলে দেখলো—তার প্রিয় পুরুষটি দু’হাতে চেপে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে আছে!
ইনায়া দেখলো সেই সমুদ্র-নীল চোখ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যেমন চোখ প্রিয়তার।
ইনায়া চোখ মেরে বললো, “কি ব্যাপার, পেয়ারেলাল? আমার কথা আপনার যে মনেই পড়ছে না ? আমি ভাবলাম, বিয়েবাড়ির সুন্দরীদের ভিড়ে আমি আপনার চোখেই পড়ছি না!”
এতক্ষণে প্রীতম বাঁকা হাসলো। সে তো স্টেজেই এই মেয়েটাকে দেখে থমকে গিয়েছিলো!
কিন্তু দুষ্টু হেসে ইনায়ার গালে নাক ঘষে দিয়ে বললো, “ঠিকই বলেছো। জানো, একটা মেয়েকে দেখেছি, তাকে দেখেই যেন ফিদা হয়ে গেছি!”
ইনায়া এই কথা শুনেই রাগে টমেটোর মতো লাল হয়ে গেলো। রাগে প্রিতম এর বাহুতে জোরে সোরে একটা কামার বসালো ।

প্রিতম সামান্য উফ পর্যন্ত করল না আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ঠোঁটের নিচের কালো তিলটায় আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, “আমার এমন টাটকা রসগোল্লা থাকতে আমি কেন বাইরে বাসি খাবারে নজর দেবো?”
ভ্রু উঁচিয়ে বললো প্রিথম।
মুহূর্তেই রাগ গলে গেলো তার।
গোলু-মোলু মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
প্রীতম বললো, “এই রসগোল্লা! আমার সামনে লাল হওয়া বারন!”
না হলে এখুনি খেয়ে ফেলব I swear
এই কথা শুনে ইনায়া প্রীতমের বুকের সাথে আরও একটু লেপ্টে রইলো। প্রীতম গভীর চোখে তাকিয়ে টুপ করে গালে একটা চুমু দিলো।
এই হালকা গোল গাল মেয়েটাকে তার রসগোল্লা লাগে।
আরও পাঁচ বছর আগে—

প্রিয়তাকে যখন হাইস্কুলে ভর্তি করানো হচ্ছিল, তখনই এই মেয়েটার সাথে প্রথম দেখা। কী যে আদুরে! তখন থেকেই মেয়েটার প্রতি একটা আলাদা মায়া কাজ করতো, যা ধীরে ধীরে প্রখর প্রণয়ের রূপ নেয়।
ইনায়াও আবিদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।
ইনায়ারা দুই বোন, সে ছোট। তার বাবা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। কোনো দিক দিয়েই শিকদারদের লেভেল পড়ে না। তবুও মেয়েটা শুধু ভালোবাসায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আবিদের মতো এতটা বোঝ নেই ওর।

মেয়েটা জানেই না, শিকদাররা কুল-মর্যাদা রক্ষা করতে ছেলে-মেয়েকে কেটে ফেলে দিতেও রাজি।
শিকদাররা দানশীল, উদার—কিন্তু তারা পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করে না।
শিকদার বাড়ির চার গিন্নি আর মির্জা বাড়ির চার গিন্নি বসার ঘরে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
মিসেস রোহিনী মির্জা প্রণয়ের মাকে বললেন, “ভাই, আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে।”
অনুস্রী বেগম হেসে বললেন, “অবশ্যই ভাবি, বলুন কী বলবেন?”
রোহিনী বেগম বললেন, “আপনার বড় মেয়ে প্রেরণাকে আমি আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই, যদি আপনার অনুমতি থাকে।”

অনুস্রী বেগম অবাক হয়ে বললেন, “প্রেরণা?”
রোহিনী বেগম বললেন, “হ্যাঁ, কালকেই আমি আর নিরবানের আব্বু কথা বলছিলাম যে, নিরবানের বিয়ের বয়স হয়েছে। আর প্রেরণার চেয়ে উপযুক্ত মেয়ে তো আর হতে পারে না!”
অনুস্রী বেগম হেসে বললেন, “কথা আপনি মন্দ বলেননি, ভাবি। কিন্তু এই বিষয়ে প্রেরণার আব্বু যা বলবে, সেটাই শেষ। নিরবানের আব্বু বড় ভাইসাহেবের সাথে কথা বলবেন।”
অনুস্রি বেগম একটু আশ্বস্ত হলেন হলেন
এভাবেই তাদের আলাপ চলতে থাকলো।

প্রণয় তিন তলার মাঝারি ছাদের রেলিং ধরে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিকষ কালো অন্ধকার। আকাশের কোণে ঝুলে থাকা অর্ধচন্দ্রের ম্লান আলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে। ছাদের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রণয় উদাস চোখে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে বললো,
“পৃথিবীর এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না, রক্তজবা?
আমি যে বড় ক্লান্ত…
এমন জীবন আমি কখনোই চাইনি…
মানলাম, আমি পাপী ছিলাম…
কিন্তু আল্লাহ আমাকে অন্যভাবে শাস্তি দিতে পারতেন…
এমন শাস্তির থেকে … মৃত্যু স্রেও ছিল …
আমি যে সেটা সহ্য করতে পারছি না, রক্তজবা…”

আমার প্রিয় জবা ফুল…” একটি বার তুমি যদি আমার অশান্ত বক্ষে মাথা রাখতে তাহলে বুজতে পারতে…….. এই ভেবে প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো।
চোখ বন্ধ করে কিছু স্মৃতির পাতায় হাত বুলালো প্রণয়।
চোখ বন্ধ রেখেই গান ধরলো—
Dil mein jo bhi hai~
Tera hi toh hai~
Chahe jo maang lo~
Roka kisne hai~”
“Qatl agar karna ho
Karna dheere se
Uff bhi nahi niklegi
Mere honthon se”

গান গাওয়ার মজেই প্রিয়তাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ করে প্রণয়কে ছাদের রেলিংয়ে দেখে সে ধীরে এগিয়ে যেতেই থমকে গেল। প্রণয়ের গানের লাইন শুনে নেশাগ্রস্তের মতো অপলক চেয়ে রইলো। প্রণয়ের প্রতিটি গানের লাইনের মাঝে অসীম বেদনা নিহিত, তিন বছর হলো সে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
বলিষ্ঠ দেহী, অসাধারণ সুদর্শন পুরুষটি নিজের মনের ভাব প্রকাশে ব্যস্ত, কিন্তু তার সর্ব-কায়া জানে, যেই নারীর নীলাভ অক্ষিতে চোখ রাখলে মনে চলতে থাকা চাপা ঝড়ের গতি ক্ষীণ হয়ে আসে, সেই নারীই তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এই নারীর উপস্থিতি সে বহু দূর থেকেই অনুভব করে। মুখে কিছু না বলে ভেতরের সবকিছু গানের মাধ্যমে নারিটিকে বলে একটু হালকা হওয়ার প্রচেষ্টা করলো জানে সে এই বোকা পাখি কিছুই বুঝবে না, না বোঝানোই ভালো।

কিন্তু মানুষের মন তো সান্ত্বনা খোঁজে।
তিন বছর পর এমন দৃশ্য দেখে প্রিয়তার নীলাভ চোখের অক্ষি কুটোর ভরে উঠলো। সে চলে যেতে নিল, কিন্তু প্রণয় সামনে চোখ রেখেই হাত ধরে নিলো। এই অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে প্রিয়তার গায়ের লোমকূপ খাড়া হয়ে গেল, রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে গেল।
প্রণয় ফিরলো প্রিয়তার দিকে, প্রিয়তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সেই নীল সমুদ্রের মতো চোখে নিজের গাঢ় বাদামি চোখ রাখলো। সেই সেই দৃষ্টি দেখেই প্রিয়তঃ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো,,
প্রণয় দেখল ওই নীল চোখের গভীরতা খুব কম প্রণয়ের কাছে চোখ দুটি খোলা বইয়ের মতন কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেই সে সবকিছু বুঝতে পারে যথা রীতি, সব বুঝে ও গেলো সে। একটুকরো শুকনো হাসি ফুটে উঠলো, যা মুখের ভাবে বুজা জায়নি।

নিজের বলিষ্ঠ হাত দিয়ে পানপাতার মতো সুন্দর মুখের নরম তুল তুলে গাল থেকে সযত্নে চোখের পানি মুছে দিলো। কোনো প্রশ্ন ছাড়াই, মুছার সাথেই তার সাগরের ঢেউ এর ন্যায় চোখ দুটি আবার নতুন উদ্যমে ভরে উপচে পড়ছে । কথায় আছে না মন যার কাছে প্রশ্রয় পেতে চায়, তার কাছেএকটু প্রশ্রয় পেলেই বেহায়া হয়ে ওঠে।
কিন্তু প্রিয়তাকে তো শক্ত হতে হবে। এই সুখী লোকের কাছে সে কিছুই বুঝতে দেবে না। ফিরে দৌড় দিতে চাইলেই শাড়ির কুঁচি বেঁধে পড়তে নিতেই প্রণয় আবার এক ঝটকায় ধরে ফেললো। প্রনয় না ধরলে মুখ থুবড়ে পড়ত সে নিশ্চিত । হাত ধরে সোজা করার জন্য টান দিতেই প্রিয়তা প্রণয়ের বুকে ছিটকে পড়ল ।

হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত নারীর অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়ায় প্রণয়ের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। প্রিয়তা জমে গিয়েছে। অবাধ্য অশ্রুর ধারা আরো বেশি উপচে পড়তে লাগলো । প্রাণটা কেমন ছটফটি উঠলো প্রিয়তার অতিপ্রিয় পুরুষের গা থেকে ছুটে আসা সেই পরিচিত ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই যেন মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো । নিঃশ্বাসে শুষে নিতে থাকলো সেই অতিপ্রিয় গন্ধ, যা মাদকের মতো টানে।
কয়েক মুহূর্ত পর প্রিয়তাকে সোজা করে দাঁড় করালো প্রণয়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করলো, তারপর কিছু না বলেই প্রিয়তাকে ঘুরিয়ে নিলো। পিঠ থেকে অতিরিক্ত সেফটিপিন খুলে নিয়ে, পেটের পাশ থেকে সরে যাওয়া শাড়ির আঁচল দুই ধিক ধরে আবার পিনাপ করে দিলো।

যতবার প্রণয়ের হাত তার পেটে স্পর্শ করছিল, ততবার কেঁপে উঠছিল প্রিয়তা। শাড়ি ঠিক করে আবার ঘুরিয়ে দিয়ে হাঁটু অবধি খুলা লতানো চুলগুলো ভালো করে পেঁচিয়ে নিজের হাতে খোঁপা করলো। ছাদের সাদা গোলপ গাছ থেকে একটি ডাঁটা-সহ ফুল তুলে খোঁপায় গেঁথে দিলো, যাতে চুল খুলে না যায়।
পকেট থেকে রুমাল বের করে ঠোঁটের লিপস্টিক তুলতে লাগলো,, প্রিয়তা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো প্রিয়তা তার, কিছু বলার ভাষা নেই। হয়তো ইচ্ছেও নেই।
তার জীবনে এমন মুহূর্ত অসম্ভব স্বপ্নের মতো। প্রণয়ের সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো— আল্লাহ, যদি এমন কিছু সময় আমাকে উপহার দেন, খুব একটা ক্ষতি হবে না।
প্রিয়তা মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এগুলো কি তার নিষিদ্ধ অনুভূতি,,
প্রিয়তা জানে, সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির ওপর তার এক চুল পরিমাণও অধিকার নেই। সে সম্পূর্ণ অন্য কারো। হয়তো সত্যিই তার মনের ভালোবাসাটা পাপ!
কিন্তু তার মন চিৎকার করে বললো—

“মিথ্যে কথা! আমার ভালোবাসায় কোনো পাপ নেই। কোনো খাদ নেই। সে অন্য কারো, সেটাই তার সমস্যা, আমার নয়। আমার ভালোবাসা কলঙ্কিত নয়!”
এমন হাজারো ভাবনার অতলে হারিয়ে গেল প্রিয়তা।
প্রণয় অনেকক্ষণ ঘষাঘষি করেও লিপস্টিক তুলতে পারছে না। ঠোঁট হালকা ফুলে গেছে। বিরক্ত হলো সে। যতটুকু উঠেছে, ততটুকুই থাক। এরপর পা পর্যন্ত চোখ বুলালো প্রিয়তার ওপর, তারপর গম্ভীর স্বরে বললো—
“যা, এখন।”

প্রিয়তা আর এক মুহূর্তও না থেকে সোজা চলে গেল নিজের ঘরে।
প্রণয় সেখানে দাঁড়িয়ে প্রথমে নিজের পাঞ্জাবির গন্ধ নিলো, যেখান থেকে একট সুমিষ্ট, মেয়েলি পরিচিত গন্ধ নাকে আসছে এটা শুধু গন্ধ নয় এটা তার জন্য ড্রাগ । কিছু একটা ভেবে একটু হাসলো। তারপর হাতের রুমালটা মুঠো করে দেখে নিজের পকেটে রেখে আবার আকাশের দিকে তাকালো…
ইচ্ছামতী নদীর তীরের বালিতে খালি পায়ে হাতে হাত রেখে হেটে চলেছে একজোড়া কপোত-কপোতী। নারীটির মুখে একরাশ লজ্জাময় গোলাপি আভা , অতঃপর পুরুষটির চোখে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা।
চশমা চোখের শ্যামবর্ণ পুরুষটি অপলক তাকিয়ে আছে—এই মেয়েটার মাঝেই যেন তার প্রাণবোমরার বাস।
পরিণীতা বলল, “কি দেখছেন , মাস্টার মশাই?”
আবিদ বলল, “আমার অ্যাঞ্জেলকে ।”

পরিণীতা তার প্রিয় পুরুষটির বাহু জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো। তখন প্রণয় কুঞ্জের করিডোর থেকে আবিদ পরীর মুখ চেপে ধরে একটি রুমে নিয়ে যায়। পরিণীতা মুটে—অহ! ঘাবড়ায়নি, কারণ সে জানে, এই হাতের মালিক তার বড্ড আপন। এই স্পর্শ তার বড্ড চেনা।
আবিদ দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগী গলায় বলল, “এই সব কি পড়েছো?”

পরিণীতা মুখটা একটু খানি কোরে বলল, “শাড়ি পড়েছি। কেন, আপনার সুন্দর লাগছে না, মাস্টার মশাই?”
আবিদ তাদের দুজনের সেন্টিমিটার দূরত্বও ঘুচিয়ে দিয়ে একদম কাছে চলে এলো। কপালে গভীর এক চুমু দিলো। এমন আদুরে স্পর্শে পরিণীতার চোখ বন্ধ হয়ে গেল, তার ছোট্ট শরীরটা তির তির করে কেপে উঠল।
আবিদ তার চোখে নির্বিকার তাকিয়ে থাকলে ও সে ঐ চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে কখনোই পারে না।
আবিদ গালটা দু’হাতের আজলায় নিয়ে নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলল, “আমি কখনো চাই না, তোমার এমন রূপ আমি ব্যতীত অন্য কেউ দেখুক। তুমি কারো জন্যই আর এমনভাবে সাজবে না।”
পরিণীতা মাথা দুলিয়ে আবিদের বুকে নাক-মুখ গুঁজে দিয়ে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো।
আবিদ তীব্র প্রশান্তিতে এক টুকরো হাসল।

পরিণীতাকে বলল, “অ্যাঞ্জেল, ঘুরতে যাবে?”
পরিণীতা কিছু না ভেবেই ‘হ্যাঁ’ বলে দিলো, কারণ সে জানে, এই মানুষটিই তার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান—যার সাথে নির্দ্বিধায় চোখ বন্ধ করে যে কোনো জায়গায় চলে যাবে।
আবিদ বলল, “এভাবে যাওয়া যাবে না।”
পরিণীতা বলল, “কীভাবে যাবো তাহলে?”
“চলো, আমার সাথে।”
আবিদ পরিণীতাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, “যাও, একটা চেঞ্জ করে নরমাল কিছু পরে আসো।”
পরিণীতা বিনা বাক্যে ওয়ার্ড্রোব থেকে একটি সুন্দর ম্যাজেন্টা কালারের ফুল স্লিভ প্রিন্টেড থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে বেরিয়ে দেখে, আবিদ প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পরিণীতাকে দেখে একটু হেসে বলল, “বসো।”
পরিণীতা বসতেই তার চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে নিলো। তোয়ালে সরাতেই কোমর ছাড়িয়ে গেলো রিবন্ডিং করা চুলগুলো।
আবিদ নিজের হাতে চুলে একটা বেনুনি করে দিলো, যদিও ওটা তেমন ভালো হয়নি। তবে, এটাই পরিণীতার কাছে সবচেয়ে সুন্দর বেনুনি।
কানে ছোট ছোট স্টার ইয়ারিংস আর কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ পরিয়ে দিলো। ব্যস! এতেই যেন সত্যিকারের পরি লাগছে!

আবিদ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বাঁ হাতটা নিজের হাতে মুটে নিয়ে বলল, “চলো।”
এরপর দু’জন প্রণয় কুঞ্জ থেকে বেরিয়ে ইচ্ছামতী নদীর তীরে ঘুরতে লাগলো। সবাই একবার হলেও ঘুরে দেখছে, কারণ তাদের সত্যিই একসাথে অপূর্ব মানিয়েছে।
প্রণয় কুঞ্জে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এখনো চলছে। রাত প্রায় ১১টা।

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩

বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে আসর বসিয়েছে তরুণ শিকদাররা।
বাপ-চাচা আর বড় ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রেম, প্রীতম, সমুদ্র, অরণ্য, রাজ আর তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা গ্লাস খালি করছে একের পর এক।
আর বিজ্ঞের মতো মতামত দিচ্ছে—যেন তারা প্রত্যেকেই এক একজন এক এক দেশের প্রেসিডেন্ট!

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৫