ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪৪

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪৪
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

থিরা চোখ দুটো বিশাল আকৃতি করে, মুখ হা করে সামনের পানে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা অধৈর্য। প্রণয় ভাইয়ের মত ভালোবাসা ময় পুরুষকে মাত্র দুটো চুমু খেয়ে কি মন ভরে?
প্রণয় ভাই তার সর্বশ্রেষ্ঠ সুখের আঁধার, ভালোবাসার মানুষ, যাকে মনের কথা বলে বুঝাতে হয় না, যার সামান্য স্পর্শে মন, মস্তিষ্ক, চিত্ত, চেতনা সব শান্ত হয়—তাকে এতোটুকু চুমু খেয়ে কি আর মন ভরে?
তাই প্রিয়তা অধৈর্য, অশান্ত। প্রণয় ভাইকে ভালবাসতে মরিয়া।
দুই হাতে শক্ত বাঁধনে চেপে ধরেছে প্রণয় ভাইয়ের শার্টের কলার। ভালোবাসা মিশ্রিত গভীর চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে প্রণয় ভাইয়ের সর্বকায়া।

তার এক একটা চুমুর শব্দ আশেপাশে ধ্বনিত হচ্ছে। তার স্পর্শ হতে বাদ যাচ্ছে না—গাল, গলা, নাক, ঠোঁট, বুক, কিছুই।
সে কত খুশি হয়েছে, সেটা প্রণয় ভাইকে আর কিভাবে বুঝবে?
আর তার কাছে ছোটবেলা থেকেই প্রণয় ভাইকে ভালোবাসা বোঝানোর একটাই পন্থা—দীর্ঘ চুম্বন।
ছোটবেলার খাবার খাওয়ার মতো প্রণয় ভাইকে তিন বেলা চুমু খেত প্রিয়তা, এটা তার অভ্যাস ছিল। যদিও ওটা বড় হতে হতে কমে গেছে।
কিন্তু প্রণয় ভাইয়ের দেওয়া এই গিফটটা প্রিয়তাকে সেই ছোটবেলায় নিয়ে গেলো।
তাই প্রিয়তা নিজের বর্তমান অবস্থান ভুলে গিয়ে, ননস্টপ প্রণয়ের দেহে চুমু খেয়েই চলেছে। তাও আবার, যে সে চুমু নয়—গভীর চুমু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়তার মাঝে মাঝে মনে হয়, এ প্রণয় ভাইয়ের দেহের লোমে লোমে ভালোবাসার নদী বয়। না হলে এত আসক্তি কেন ছড়ায় সে?
প্রিয়তার অবস্থা দেখে প্রণয় ঢোক গিলল।
প্রিয়তার এমন অশান্ত ছোঁয়াতে, প্রণয়ের দেহের শিরাশিরা উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ছে।
আবেশে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এই মেয়েটা কি তাকে মেরে ফেলতে চায়? তাকে এভাবে পাগল করে দিচ্ছে কেন?
প্রণয় নিজেকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। প্রিয়তাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, তার দুই গাল ধরে আহত কন্ঠে বললো,

“প্লিজ জান, এবার থেমে যা।”
কিন্তু প্রিয়তা তার কথা কানেই তুললো না।
ঝড়ের বেগে তার গলার উঁচু হাড়ে ঠোঁট চেপে ধরল। ব্যস্ত হাতে সফেদ শার্টের প্রথম বোতামটা খুলে, উন্মুক্ত বুকে ভালোবাসা খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠলো।
নরম কোমল ঠোঁটের স্পর্শে, প্রণয়ের শরীরের রক্তের ফোটায় ফুটায় আগুন ধরে গেল।
সে প্রিয়তার কোমর আঁকড়ে ধরে, ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে নিলো, মাথা এলিয়ে দিল গাড়ির সিটে।
এসব দেখে থিরার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম হলো।
এমন অবাস্তব দৃশ্যের সম্মুখীন হতে হবে, সে তার এত বছরের জীবনে একটাবারের জন্য কল্পনা করেনি।
সে এই দৃশ্য বেশিক্ষণ হজম করতে পারলো না। তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
আকস্মিক চেতনা হারিয়ে, মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু নিজেদের ভালবাসা বিনিময়ে তৎপর প্রণয়-প্রিয়তা সেটা লক্ষই করলো না।

প্রিয়তা ‘হাম হাম’ করে আরও ২৫ থেকে ৩০টা চুমু খেয়ে শান্ত হলো।
প্রণয়ের দুই গাল, গলা, বুক—সব লালায় ভিজে আছে।
প্রণয় কিছু না বলে, শুধু নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে।
প্রিয়তা মিশন চুমু শেষ করে, বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ধাতস্থ হতে ব্যস্ত।
কিন্তু আচমকাই প্রিয়তা কেঁপে উঠলো। তার সম্ভিত ফিরলো।
স্মরণ হলো—এতক্ষণ সে কী কাণ্ড করেছে!
সে এতক্ষণ কিভাবে কিভাবে প্রণয় ভাইয়ের বাধা নিষেধ না মেনে, তাকে এতগুলো চুমু দিয়েছে!
ভয়ে, লজ্জায় প্রিয়তা গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই পুরো মুখশ্রীতে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো অপার্থিব রক্তিম লালিমা।
নিজের প্রাণপাখিকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে, আরো দুর্বল হয়ে পড়লো প্রণয়।
প্রিয়তা মনে মনে ভাবলো—যা আকাম করার তো করেই ফেলেছি, এখন বাঁচতে চাইলে ভাগতে হবে!
প্রিয়তা ভাবনাচিন্তা ফেলে, গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত পালাতে নিলে, নিজের অজান্তেই প্রিয়তার হাত টেনে ধরলো প্রণয়।

থমকালো প্রিয়তা।
প্রণয় তাকে একটানে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। হঠাৎ টান দেওয়াতে, প্রিয়তার বক্ষপিঞ্জর কেঁপে উঠলো।
প্রণয় তাকে দুই হাতে উপরে তোলে, নিজের কোলের উপর বসালো।
প্রণয়ের পরিচিত স্পর্শ তার আবার অচেনা লাগছে। সে অস্থির, এলোমেলো চোখে তাকালো প্রণয়ের দিকে।
কি ভয়াবহ, মারাত্মক চোখের চাউনি!
এক দৃষ্টিতেই ঝড় তুলে দিল প্রিয়তার ছোট দেহে, ঘায়েল করে ফেলল মন।
চোখে চোখ পড়তেই, প্রিয়তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো।
ওই দুটো গভীর বাদামী চোখের চাহুনি—বেসামাল, ভয়াবহ, বিধ্বংসী।
যে চোখে বেশিক্ষণ তাকালে, মৃত্যু নিশ্চিত।
যেন কেউ ওই চোখ দুটোতে রেড ওয়াইন মিশিয়ে দিয়েছে।
প্রণয় প্রিয়তার হাত চেপে ধরেছিল নিজ বক্ষে।

অতি সন্নিকটে থাকার দরুন, প্রিয়তা অনুভব করলো প্রণয়ের হৃদস্পন্দন—অস্বাভাবিক, ডিপ ডিপ শব্দ।
প্রণয় প্রিয়তার চোখের উপর পড়ে থাকা দু’একটা চুল কানের পিঠে গুঁজে দিল।
মুখ নামিয়ে নিলো প্রিয়তার গলদেশে।
তার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ির অস্তিত্ব অনুভব করছে প্রিয়তা নিজের গলায়।
প্রণয় সেথায় নিজের পুরুষালী গাল ঘষে দিয়ে নেশালো গলায়, কিছুটা ক্রোধ মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমাকে উন্মাদ বানিয়ে দিয়ে আমার থেকে দূরে চলে যাবি, দূরেই যদি চলে যাবি,তবে প্রত্যেকবার কেন এতটা কাছে আসিস?

কেন প্রত্যেকবার ছুঁয়ে দিয়ে অশান্ত মনকে তৃষ্ণার্ত বানিয়ে দিস?
তৃষ্ণার্ত যেভাবে বানাস, ওভাবে একটু পিপাসাও তো নিবারণ করে দিতে পারিস,
একটু শান্তিও তো দিতে পারিস !
আমাকে একটু স্বস্তি দে জান,
আ… আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি, জান?”
প্রণয়ের কথা বলার তালে তালে তার ঠোঁট অনবরত স্পর্শ করছে প্রিয়তার কোমল গলা।
প্রণয়ের হঠাৎ পাল্টে যাওয়া স্পর্শে ও কণ্ঠে প্রিয়তা থরথর করে কেঁপে উঠলো,
নিঃশ্বাসটুকু আটকে আসলো কণ্ঠনালীতে।
প্রণয়ের আসক্তি বাড়ছে।
প্রিয়তা ঢোক গিলে কিছু বলার উদ্দেশ্যে প্রণয়ের দিকে তাকাতেই,
প্রিয়তার রক্ত চলকে উঠলো—ওই দুটি গভীর নেশাগ্রস্ত চোখ প্রিয়তার সর্বাঙ্গ অচল করে দিচ্ছে।
প্রিয়তা কিছু বলার আগেই, আলতো হাতে তার দুই গাল স্পর্শ করলো প্রণয়।
নরম গালে ধীরে ধীরে আদর দিতে দিতে বলল,

“Shhhhh… don’t talk..
একদম চুপ।”
সত্যি সত্যি একদম চুপ হয়ে গেল প্রিয়তা।
নিঃশব্দে চেয়ে রইলো প্রণয়ের চোখে।
প্রণয়ের হার্টবিট সেকেন্ড‌‌ে সেকেন্ডে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
তার গলার অ্যাডাম’স অ্যাপল ক্রমাগত উঠানামা করছে।
আচমকাই প্রিয়তার থ্রি পিসের নিচে হাত ঢুকিয়ে মেদহীন উন্মুক্ত উদর চেপে ধরল প্রণয়।
পুরুষালী রুক্ষ হাতের স্পর্শ, স্পর্শকাতর শরীরে অনুভব করতেই প্রিয়তার শরীর অবস হয়ে এলো।
সে করুন চোখে তাকালো প্রণয়ের গভীর বাদামি চোখে,
যেটাকে প্রিয়তার কাছে এই মুহূর্তে ওয়াইনের সমুদ্র ছাড়া অন্য কিছু মনে হলো না।
প্রণয়, তার কালচে লাল ঠোঁট জোড়া প্রিয়তার ঠোঁটের নিকট এগিয়ে নিতে নিতে হাস্কি কন্ঠে বলল,
“I want to taste your lips my jaan… I can’t control my self… do you want my lips?”
প্রিয়তা ঢোক গিলল,

প্রণয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে পেরে নিজের আখি পল্লব খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে
শক্ত করে খামছে ধরল প্রণয়ের বাহু।
প্রণয় ওই রক্তিম ঠোঁটের নেশায় বুঁদ হয়ে গেল।
অধৈর্য হাতে দু’বার স্লাইড করল নরম ঠোঁটে।
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে,
প্রিয়তার কোমল ওষ্ঠ জোড়া নিজের পুরো পুরুষালী ওষ্ঠের ভাজে নিয়ে নিল।
প্রিয়তার দেহ অসার হয়ে আসলো।
এই পুরুষের গভীর স্পর্শ ভয়ঙ্কর—যা সহ্য করে নেওয়ার মতন অত ক্ষমতা এখনো তার হয়নি।
প্রিয়তা দুই একবার মুছরে ওঠে, নখ দাবিয়ে দিল প্রণয়ের ঘাড়ে।
কিন্তু সেসব তুচ্ছ ব্যথা ছুঁতে পারল না প্রণয়কে।
সে বড্ড বেপরোয়া।

এতক্ষণ দমিয়ে রাখা অনুভূতিগুলো উথলে উঠছে, যেন উন্মত্ত ওর সমগ্র সত্তা—
যার ভার প্রিয়তা বহন করতে অক্ষম।
প্রিয়তা আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো প্রণয়ের শার্ট।
প্রণয় অধীর হয়ে উঠলো,
অসংযত হাতে স্পর্শ করতে লাগল প্রিয়তার অস্তিত্ব।
কয়েক মিনিট পর,
দম বন্ধ হয়ে এল প্রিয়তার।
সে কোলেই বসে ‘চটফট’ করে উঠলো।
বিরক্ত হলো প্রণয়।
এক হাতে প্রিয়তার দুই হাত চেপে ধরলো।

প্রিয়তাকে আরো গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে দিতে, ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“Shhhhh… don’t move”
হার মেনে নিল প্রিয়তা।
প্রণয় আরও কয়েক মিনিট নিজের রাজত্ব চালালো প্রিয়তার কোমল ঠোঁটে।
প্রিয়তার এবার সেন্সলেস হওয়ার উপক্রম দেখে, ঠোঁট সরিয়ে নিলো প্রণয়,
প্রিয়তার মাথাটা বুকে চেপে ধরে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে ব্যস্ত।
প্রণয়ের বেপরোয়া হাতের স্পর্শ বন্ধ হতেই,
প্রিয়তা যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল।

প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো।
কিন্তু প্রণয় যে শান্ত হতে পারছে না।
তার যে তার প্রাণপাখিকে যে কোন মূল্যে এক্ষুনি চাই,
একেবারে নিজের করে চাই—
না হলে মরে যাবে সে।
এবার আর কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না।
কিন্তু এত বড় পাপ ও সে নিজের প্রাণের সঙ্গে কিছুতেই করতে পারবে না।
তাই আচমকাই প্রিয়তাকে নিজ থেকে এক ঝটকায় আলাদা করে দিল।
নিজের সমস্ত অনুভূতি কয়েক সেকেন্ড ধামাচাপা দিয়ে,
জ্বলন্ত কণ্ঠে বলল,

“দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে!”
প্রিয়তা মাথা তুলে তাকালো।
প্রণয় এবার খানিকটা চিত্কার করে বলল,
“যাবি নাকি?
তোর সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করে দেবো!”
প্রণয়ের চিৎকারে কেঁপে উঠল প্রিয়তা। ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দৌড় দিল।
প্রিয়তা যেতেই প্রণয় গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে বা হাতে জুড়ে বাড়ি মারলো।
পুরুষালী হরমুনেরা বেপরোয়া ভাবে ছুটে চলেছে প্রতিটি রক্ত কণিকায়।
প্রণয় ঢোক গিলে নিজের পার্সোনাল ব্যাগটা হাতে নিল।
পুরো ব্যাগ উলটপালট করে একটা ইনজেকশন আর একটা সিরিঞ্জ বের করল।
মেডিসিনটার গায়ে ইংরেজি অক্ষরে লেখা Midazolam।

প্রণয় ব্যস্ত হাতে ওষুধটা সিরিঞ্জে ভরে নিজের হাতের শিরায় পুশ করে দিল।
এ ছাড়া সে আর কিছুতেই এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না, নিজের প্রাণপাখিকে ছুঁয়ে দেওয়া থেকে নিজেকে থামাতে পারবে না।
প্রণয় খালি সিরিঞ্জটা পাশে ফেলে সিটে মাথা এলিয়ে দিল।
কয়েক সেকেন্ড এভাবে থেকে গাড়ি নিয়ে আবারো শিকদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল…
গাড়ি থেকে নেমে চোখ বন্ধ করে দৌড় দিল প্রিয়তা।
তার সমগ্র শরীর অনবরত কাঁপছে। পুরুষালী স্পর্শগুলো এখনো মনে হচ্ছে শরীরে লেগে আছে।
সে সামনে আরেক পা এগোতেই থমকে গেল।
তার দুই হাত দূরে থিরা উল্টে পড়ে আছে।
প্রিয়তা থিরাকে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ছুটে এলো।
দ্রুত থিরার পাশে বসে,গাল চাপড়ে দিয়ে ডাকলো,

— “থিরা! এই থিরা!”
কিন্তু নড়লো না থিরা।
প্রিয়তা আশ্চর্য হলো, মনে মনে বলল,
মেয়েটা কি অসুস্থ?
প্রিয়তা গালে, কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখলো — না, শরীর তো বরফের মতো ঠান্ডা।
তাহলে ওভাবে উল্টে পড়ে আছে কেন?
প্রিয়তা আরও দুইবার ডাকলো,
— “থিরা! এই বোন, থিরা!”
এবার অল্প চোখ মেলে তাকালো থিরা।
থিরাকে চোখ মেলে দেখে একটু স্বস্তি পেল প্রিয়তা।
গালে হাত ঠেকিয়ে নরম কণ্ঠে বললো,

— “কি হয়েছে বোন? এভাবে অজ্ঞান হলি কিভাবে?”
থিরা চোখ মেলে প্রিয়তাকে সামনে দেখে ভয় পেয়ে গেল।
চোখ গোল গোল করে তাকালো প্রিয়তার দিকে।
থিরাকে চমকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হলো প্রিয়তা।
ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

— “কি?”
থিরা লাফিয়ে উঠে বসলো।
প্রিয়তাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বড় বড় চোখে দেখে আতঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
— “তুমি ঠিক আছো ছোট আপু? তোমাকে জিন টিন ধরেনি তো?”
থিরার কথায় পুনরায় আশ্চর্য হলো প্রিয়তা। খানিকটা রাগান্বিত হল।
মৃদু ধমকে বললো,

— “মাথা খারাপ হয়েছে তোর? আমাকে জিন-পরি কেন ধরতে যাবে?”
থিরা আবার আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো,
— “তাহলে ওইসব করছিলে এত সাহস কোথায় পেলে?”
প্রিয়তা ভুরু কুঁচকে বললো,
— “মানে?”
থিরা গলা ঝেড়ে বললো,
— “আমি সব দেখে ফেলেছি। তুমি বড় দাদানের সাথে কি করছিলে!”
থিরার কথায় প্রিয়তার শান্তচিত্ত ছলকে উঠলো। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো থিরার দিকে।
থিরা আবার বললো,
— “সত্যি বলো আপু, তোমাকে জিনে ধরেছে, তাই না?”
প্রিয়তা ভয় পেয়ে গেল।
ঢোক গিলে তাকালো থিরার দিকে, মনে মনে ভাবলো — সব দেখে ফেলেছে নাকি? এবার যদি সবাইকে বলে দেয়!
প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে তুতলিয়ে বললো,

— “ক-কী দেখেছিস তুই?”
থিরা আবার ভয়ার্থ চোখে তাকিয়ে বললো,
— “চুমু খেতে দেখেছি! তুমি বড় দাদানকে চেপে ধরে চু…”
কথা শেষ করার আগেই প্রিয়তা ওর মুখ চেপে ধরলো।
বিশাল জোরে ধমকে বললো,
— “একদম চুপ! কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস! লুকে শুনলে কী ভাববে?”
থিরা প্রিয়তার হাত মুখ থেকে ছাড়িয়ে বললো,
— “লুক কী ভাববে সেটা ছেড়ে দাও। আগে বলো তুমি এত সাহস কোথায় পেলে? আমরা তো দুঃস্বপ্নের এমন কিছু দেখলে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবো হাজারবার।”
প্রিয়তা ঘামতে শুরু করেছে, তবু সে নিজেকে দৃঢ় রেখে বললো,
— “সকালে কী খেয়েছিস? নিশ্চয়ই তোর পেট গরম হয়েছে, তাই দিবাস্বপ্ন দেখছিস। এখন সর সামনে থেকে।”
থিরা প্রিয়তার কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো,

— “একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করো না, ছোট আপু। আমি একদম ঠিক দেখেছি! তুমি বড় দাদাকে চু…”
আবার কথা শেষ করার আগেই পরিনীতা ছুটে এল।
দু’জনের মাথায় দুটো চাটি মেরে বললো,
— “তোরা এখানে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছিস, আর ওদিকে আম্মু তোদের খুঁজছে!”
থিরা পরিনীতাকে কিছু বলতে নিলে প্রিয়তা ওর হাত চেপে ধরে চোখ রাঙালো — যার মানে “একটা কথাও মুখ দিয়ে বের করবি না!”
পরিনীতা আবার থিরাকে ধমকে বললো,

— “তোকে তো বলেছিলাম প্রিয়তাকে নিয়ে আসতে, আর তুই এখানে ওর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিস!”
থিরা আবার কিছু বলতে গেলে প্রিয়তা বললো,
— “থিরা পড়ে গিয়েছিল আপু, তাই হাত পা ঝেড়ে দিচ্ছিলাম।”
চল, থিরা, বলেই থিরাকে টেনে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
কিন্তু পরিনীতা নড়লো না।
সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও তার মনটা সারাদিন থেকে কেমন চটফট করছে।
কেন করছে এমন, বুঝতে পারছে না পরিনীতা।
পরিনীতা তার কললিস্ট খুলে পঞ্চমবারের মতো আবিদের নম্বরে ফোন দিল।
কিন্তু এবারও গত চতুর্থ বারের মতো একই বাক্য কানে এল,

— “আপনি যে নম্বরে ফোন করছেন সেটি বর্তমানে উপলব্ধ নয়।”
পরিনীতার এবার তীব্র দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
কাল রাতের পর থেকে আর একবারও মাস্টারমশাইয়ের ফোন আসেনি, আর তার ফোনও যায়নি।
যতবার ফোন করেছে, ততবারই এই এক বাক্য শুনেছে।
গোটা একটা দিন পেরিয়ে বিকেল হতে চললো, অথচ মাস্টারমশাই একটাবারও তার খোঁজ নেননি।
এমনটা আগে কখনও হয়নি।
আপনি কোথায় মাস্টার মশাই?
আপনার পরি আপনাকে মিস করছে।
আরও কিছুক্ষণ ভেবে পরিনীতা নিজেকে বোঝালো —
সে হয়তো ওভার থিংকিং করছে। হয়তো উনি ব্যস্ত।
একটু পর তো এমনি পড়াতে আসবেন। তখন সব জানা যাবে।
তবুও মন থেকে সেই খচখচানিটা দূর হলো না।
তবু সে আর না ভেবে উঠে বাড়ির দিকেই রওনা দিল।
শুদ্ধ একটা লম্বা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠলো, তবুও সারাটা শরীর আলস্যতে মেজ মেজ করছে। এখনই বড় এক মগ স্ট্রং ব্ল্যাক কফি লাগবে।

সে কফির অর্ডার দিয়ে বিছানা থেকে উঠতেই তার দৃষ্টি পড়লো বেডসাইড টেবিলে, যেখানে একটা টিস্যু পেপারের মধ্যে লাল রঙের কিছু একটা নজরে পড়ল, যা দেখে শুদ্ধ ভ্রু কুঞ্চিত করল, কারণ যতদূর মনে পড়ে আগে এটা এখানে ছিল না।
সে চিন্তা-ভাবনা বেশি দূর না নিয়ে টিস্যুটা হাতে নিল। ফোল্ডেবল টিস্যুর ভাঁজটা খুলে সামনে ধরতেই শুদ্ধর কপালের সূক্ষ্ম ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে ফুটে উঠলো।
সাদা রঙা টিস্যু পেপারের ওপর লাল একটা ঠোঁটের ছাপ, যার নিচে ইংরেজি অক্ষরে লেখা —
“Welcome me into your life and your heart.”
লেখাটা দেখে শুদ্ধ মোটেও বিচলিত হলো না। বরং সামান্য বিরক্ত হল টিস্যুটা দুমড়ে মুছরে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলল। কাঁধ বাঁকিয়ে বললো —

“Only my sweetheart is allowed in my heart and life, no one else.”
কিন্তু একটা জিনিস ভেবে কিছুটা আশ্চর্য হলো শুদ্ধ। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, দরজাটা ভিতর থেকে লক। তাহলে এটা এলো কীভাবে?
তবে এটা নিয়ে বেশি গবেষণা করলো না শুদ্ধ, কারণ পর নারী নিয়ে চিন্তা করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করার মত এত সময় নেই ডক্টর আবদ্ধ চৌধুরী শুদ্ধের কাছে। অন্য কোনো মেয়ে কী করলো না করলো, তা নিয়ে সুদ্ধর বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই।
শুদ্ধ লাগেজ থেকে ট্রাউজার-টি-শার্ট বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরোলো। ততক্ষণে কফিও এসে গেছে।
সে কফির মগে চুমুক দিয়ে দিতে গিয়ে ব্যালকনিতে বসলো। ফোনের গ্যালারি ওপেন করে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ষোড়শী কিশোরীর পানে। ফোনের স্ক্রিনে ঠোঁট চেপে ধরে বললো —

“দেখো সুইটহার্ট, তুমি নেই বলে মেয়েরা নজর দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, সবাই আমাকে চায়, অথচ আমি কাউকে চাই না। তুমি হীনা, অথচ তুমি আমার কাছে থেকে ও কত দূরে। প্লিজ সুইটহার্ট, একবার আমার হয়ে দেখো, একবার আমাকে ভালোবেসে দেখো। আমার আর অপেক্ষা করতে ভালো লাগেনা —
আমার এই অপেক্ষার কি কোনোদিন অন্ত হবে না, sweetheart? তোমার প্রেমানলে জ্বলে পুড়ে যে হৃদয়ের ডাক্তার আজকাল নিজের হৃদয়টা ফিল করতে পারে না… আমার পুরো অস্তিত্বে এমন ভাবে মিশে আছো sweetheart, যে আমি নিজেকে ফিল করতে পারি না তুমি ছাড়া। Please, দূর থেকে জ্বালিয়ে মেরো না, প্রয়োজনে কাছে এসে শেষ করে দাও। তবুও… কাছেতো এসো… এই দূরত্ব আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি তোমাকে চাই সুইটহার্ট, খুব করে চাই… I need you sweetheart… I want you completely.”
“I want you both physically and mentally. I want to feel you in my very bones, sweetheart.”
শুদ্ধ এবার একটু দম নিয়ে বলল —

“এই জীবনে তোমাকে পেতে কম তো নিচে নামিনি… ফাইনালি তুমি আমার হবে… তার জন্য যদি আমাকে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়, কষ্ট হলেও আমি সহ্য করে নেব সুইটহার্ট। আমার শুধু তোমাকে চাই… তোমাকে পাওয়ার এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখে মানুষ ভাবতে পারে তুমি হয়তো আমার জেদ…”
“কিন্তু না সুইটহার্ট, এটা সত্যি নয়। তুমি আমার জেদ নও, তুমি আমার সত্তা… You are my soul. I love you sweetheart. I love you, I love you, I love you.”
শুদ্ধ এবার কফির মগে চুমুক দিয়ে দুষ্টু হেসে বললো —
“তোমায় দেবো বলে অনেক ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি। একবার শুধু তুমি আমার হও… তার পর দিনরাত পরিশ্রম করে সব তোমার উপর উসুল করব, আর তোমাকে ও সব নিতে হবে। নিতে না চাইলে ও জোর করে নিতে হবে। তখন কিন্তু আমি না শুনবো না। তোমার জন্য এত বছর যাবৎ ইজ্জতের হেফাজত করে রেখেছি… একবার বিয়ে হোক, তারপর আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই… সব ঢালবো তোমার ওপর…”
সে অনেকক্ষণ প্রিয়তার ছবির সঙ্গে কথা বলে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল চেক করতে লাগলো।
প্রথমেই ইনস্টাগ্রামে ঢুকলো। কফির মগে চুমুক দিয়ে দিতে দিতে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। ইনস্টাগ্রাম ইনবক্সে ঢুকতেই বিরক্তিতে তার চোখ মুখ কুঁচকে গেল — একদিনে হাজার হাজার শুধু মেয়েদের মেসেজ, যার বেশির ভাগই মেডিকেল স্টুডেন্ট ও বিদেশি।

শুদ্ধ এসব জাস্ট ইগনোর করে ফোন রেখে দিতে নিতেই, সেই সময় স্ক্রিনে ভেসে উঠলো “Mom”।
মা নামটা দেখে শুদ্ধের ঠোঁটে মুচকি হাসি খেলে গেল। সে ফোন রিসিভ করে মৃদু কণ্ঠে সালাম দিল —
“আসসালামু আলাইকুম।”
মেহজাবিন চৌধুরী হেসে সালামের উত্তর দিলেন, অভিমানী কণ্ঠে বললেন —
“আজকাল মমকে মনে পড়ে না, আমার সানের?”
শুদ্ধ আবারও মৃদু হেসে বললো —
“মম, তুমি তো জানো কাজের কতটা প্রেসার… একদম টাইম পাই না।”
মেহজাবিন চৌধুরী আবার অভিমানী কণ্ঠে বললেন —
“তাই তো… আমার ছেলে মস্ত ডাক্তার… তার সময় কোথায় মায়ের সাথে কথা বলার? আর যা-ও বা পায়, তা ও তো আমার হবু বউমার চিন্তায় পার করে দেয়!”
শুদ্ধ হাসলো।

মেহজাবিন চৌধুরী এবার কিছুটা সিরিয়াস কণ্ঠে বললেন —
“আমি একটা ফাইনাল ডিসিশন নিয়েছি, যেটা তোমাকে মানতেই হবে।”
শুদ্ধ ও সিরিয়াস হলো —
“কি ডিসিশন?”
মেহজাবিন চৌধুরী বললেন —
“আমি নেক্সট মান্থেই বাংলাদেশে আসবো এবং সাজিদের সঙ্গে কথা বলে তোমাদের বিয়ের ডেট ফিক্স করে দেব।”
শুদ্ধ হাসলো, শান্ত কণ্ঠে বললো —
“মম, এখনই নয়…”
মেহজাবিন চৌধুরী অসন্তুষ্ট হলেন, কিছুটা আদেশের সুরে বললেন —

“হ্যাঁ, এখনই! আমি টিকিট কনফার্ম করে ফেলেছি। আমি নেক্সট মান্থেই আসবো, আর তোমাদের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলবো। তোমার আর কোনো না আমি শুনবো না। তোমার বয়সের দিকে খেয়াল আছে? তোমার বয়সি ছেলের বাচ্চাকাচ্চা আছে, আর তুমি এখনো অবিবাহিত ব্যাচেলর! লজ্জা করে না তোমার? তোমার বয়সী প্রণয় বিয়ে করেছে দুই বছর আগে, আর তুমি — যেহেতু প্রিয়কে এতটাই ভালোবাসো, তবে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? তার কাছাকাছি থাকবে বলেই তো কানাডার এত সাকসেস ফেলে বিডিতে গেলে?”
শুদ্ধ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল, মনে মনে বললো —

“সত্যি, যদি এখনই তাকে আমার করে ফেলতে পারতাম, তবে আমার থেকে বেশি সুখী আর কেউ হতো না মম…”
সে নিজেকে কন্ট্রোল করে মেহজাবিন চৌধুরীকে বুঝালো —
“Come on, Mom, try to understand. I know I’m over 29, but she’s only 16 — she’s under 18, just a teenager.”
“ঠিক আছে, আগে ওকে একটু বড় হওয়ার সময় দাও মম, না হলে সে তোমার ছেলেকে কীভাবে সামলাবে?”
মেহজাবিন চৌধুরী কিছুটা গম্ভীর হলেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন —
“ঠিক আছে, ফাইন, এটাই যদি মূল সমস্যা হয় তবে এর সমাধানও আমার কাছে আছে।”

শুদ্ধ কপাল কুঁচকে বলল —
“কি? মেহজাবিন চৌধুরী নাছোড়বান্দা?”
তিনি বললেন —
“ঠিক আছে, এখনই তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। তবে নিশ্চিত থাকো আমি আগামী মাসেই বাংলাদেশে আসছি, আর সজিদের সাথে বিয়ের খুঁটিনাটি সব কথা চূড়ান্ত করে রাখবো। ওর আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার সাথেসাথেই তোমাদের বিয়ে হবে। এর পর আর একদিন ও অপেক্ষা করবো না। তোমাকে আরও দুই বছর সময় দিলাম, এর পর আর একদিনও পাবে না।”
শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল —
“কিন্তু মম…”
মেহজাবিন চৌধুরী এবার কিছুটা চিৎকারে দিয়ে বললেন —

“No excuse! তোমার হাতে মাত্র দুই বছর সময় আছে, এর পরে তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। Now take care beta.”
বলে ফোন কেটে দিলেন।
মেহজাবিন চৌধুরীর কথায় শুদ্ধ কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল — প্রণয় কি রাজি হবে? সে তো বলেছে, গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার পর যা হবার হবে।
তবে শুদ্ধ আর বেশি ভাবলো না, কারণ মেহজাবিন চৌধুরী ঠিকই বলেছেন। বিয়ে তো দুই বছর পরেই হবে, আর সেই বিয়ে যেহেতু তার সাথেই হবে, সেহেতু দেরি করে লাভ কী?
সে ঠিক করলো, এই বিষয়ে প্রণয়ের সঙ্গে কথা বলবে।
শুদ্ধ বসা থেকে উঠে রুমে চলে গেল।

সন্ধ্যা ৭টা। শিকদার বাড়ির অন্দরমহল কথাবার্তার মৃদুগুঞ্জনে গম গম করছে। কাল শিকদার বাড়িতে শিন্নি উপলক্ষে পাড়ার অনেক মহিলাই কাজে সাহায্য করতে এসেছেন।
এটা গ্রামের নিয়ম—গ্রামের কোনো বাড়িতে বিয়ে, মিলাদ যা-ই হোক, তাতে গ্রামের মহিলারা সাহায্য করেন। শিকদারদের অবশ্য এসব প্রয়োজন হয় না তবে, যেহেতু বাড়ির মহিলারাই আয়োজন করছেন, তাই বাড়ির চারজন গিন্নি পাড়ার অনেক মহিলাদের আগেভাগে দাওয়াত করে রেখেছেন।
কারণ কাল শুধু রুটি-শিন্নিই নয়, পাশাপাশি প্রায় ২০০ জন হুজুরকে দাওয়াত করা হয়েছে দোয়া পড়ানোর জন্য।
প্রেরণা, পরিণীতা, প্রিয়তা, উষা, থিরা, পাড়ার আরও অনেক মেয়েরা মিলে ৪০ কেজি চাল ৫টা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে চালের গুঁড়া বানাচ্ছে। এগুলো দিয়ে কাল রুটি বানানো হবে।
অনুস্রী বেগম, তনুস্রী বেগম, অনন্যা বেগম বাজারের সবকিছু মিলিয়ে দেখছেন—কতটা লাগবে, আর কতটা কি আনতে হবে।

অর্থি বেগমসহ আরও অনেক মহিলারা মিলে বিশাল বড় পাত্রে আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি কেটে ধুয়ে রাখছেন। অন্য পাত্রে কাঁচা মাছ-মাংস ধুয়ে ধুয়ে ফ্রিজে তুলে রাখা হচ্ছে।
প্রণয়, প্রেম রাজ আর পৃথম বাজারের ভারী ভারী ব্যাগগুলো অন্দরমহলে দিয়ে এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে। অভ্যেস না থাকায় বাজার করতে গিয়ে মাছের বাজারের বিচ্ছিরি গন্ধে, মাংসের বাজারের ভিড়ে, সবজির বাজারের গরমে তাদের নাজেহাল অবস্থা ফর্সা ছেলেগুলোর মুখ অতিরিক্ত গরমে টকটকে লাল হয়ে আছে।
তারা এসব করতে চায়নি, কিন্তু অনুস্রী বেগমের কড়া হুকুম—এসব কাজ কাজের লোকদের দিয়ে করানো হবে না, এসব বাড়ির ছেলেরাই করবে।

অনুস্রী বেগম মৃদু চিৎকার করে মেয়েদের উদ্দেশে বললেন, “মেয়েরা, ভালো করে বরফ দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে ভাইয়াদের দিয়ে আসো। ওদের খুব গরম লাগছে। কিন্তু খেয়াল থাকবে, ফ্রিজের জুস-টুস দেবে না, ফ্রেশ লেবুর শরবত বানিয়ে দাও। আর বাইরে যারা প্যান্ডেলের কাজ করছেন, তাদের জন্য চা বানিয়ে দাও।”
অনুস্রী বেগমের কথায় তারা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। যদিও ওদের খুব ভালো লাগছে—বাড়িতে একটু উৎসব উৎসব ব্যাপার হলে ওদের খারাপ লাগে না।

উষা, পরিণীতার উদ্দেশে বলল, “মিস্টি আপু, আমি তাহলে জুসটা বানিয়ে নেই?”
পরিণীতা ব্লেন্ডারের মাথা চেপে ধরে বলল, “না ভাবি, তুমি বরং চা বানাও। কারণ তোমার হাতে চা ফাটাফাটি।”
উষা হেসে সম্মতি জানালো, হাত ধুয়ে গ্যাস অন করে চায়ের পানি বসালো।
পরিণীতা এবার প্রিয়তার উদ্দেশে বলল, “প্রিয়ো, তোর হাতে লেবুর জুস সবথেকে বেশি টেস্টি হয়। একটা কাজ কর, জুসটা বরং তুই বানাস।”
প্রিয়তা রাজি হলো। ভেজা চালগুলো হাত থেকে ঝেড়ে হাত ধুয়ে নিল।
ফ্রিজ খুলে বড় ৫টা লেবু আর ৪টা কমলা বের করল। বড় বাটিতে লেবু চিপে, চিনি মিশিয়ে একটা বড় জগে লেবুর শরবত বানালো।

বাকি ৪টা কমলা ব্লেন্ডারে দিয়ে জুস বানিয়ে নিল, কারণ প্রণয় ভাই লেবুর শরবত খান না।
প্রিয়তা বড় গ্লাসে লেবুর শরবত ঢেলে নিয়ে যেতে নিল।
তখন থিরা এসে কানে কানে বলল, “আপু, আমি কিন্তু সব জানি।”
প্রিয়তা ওর কথায় পাত্তা দিল না, জুসের ট্রে নিয়ে ড্রয়িং রুমে গেল।
প্রণয়, প্রিথম, রাজ আর প্রেমের নাজেহাল অবস্থা দেখে মায়া হলো প্রিয়তার, সে সবার হাতে বড় এক গ্লাস জুস ধরিয়ে দিয়ে হাতে জুসের জগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রিথম, প্রেম আর রাজ ঢকঢক করে গ্লাস খালি করে দিল, একসাথে বোনকে ধমকে বললো, “ভেবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আরো দে! এতটুকু পোলিও আমার গলা অব্দি পৌঁছায়নি ছ্যাহ দে দে তাড়াতাড়ি দে।”
প্রিয়তা মুখ বাকিয়ে তাকালো ভাইদের দিকে, মনে মনে বললো, “মীরজাফরের দল! এই গরমের মধ্যে বানিয়ে দিয়েছি, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে ধমকাচ্ছে।”
যদিও ও মুখে কিছু বললো না, সবার গ্লাসে পুনরায় জুস ঢেলে দিলো। তিন ভাই মিলে পুরো বড় এক জগ জুস খালি করে শান্ত হলো।

প্রিয়তা ভেংচি কেটে বললো, “ভাইয়ারা কলিজা ভিজেছে।”
রাজ বড় শ্বাস নিয়ে বললো, “নুন কম হয়েছে।”
পৃথম ও ছোট করে বলল চিনি কম হয়েছে।
প্রেম ও তাল মিলিয়ে বললো, “ইসস! কিসের পানি দিয়ে বানিয়েছিলি! কি বিচ্ছিরি গন্ধ করছিলো ওয়াক।”
অরণ্য আর সমুদ্র এসে পাসে বসতে বসতে বললো, “নিশ্চিত মাছ ধোয়া পানি খাইয়েছে তোমাদের।”
রাজ আবার বললো, “উফ! কী বিচ্ছিরি স্বাদ!”
প্রিয়তা তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইলো ভাইদের দিকে, এরা কি আসলেই তার ভাই!
রাজ আবার কিছু বলতে গেলেই ধমকে উঠলো প্রণয়, “আহ! চুপ কর,!”
চুপ মেরে গেলো পুরো ড্রয়িংরুম। প্রণয় পুরো চোখে তাকালো প্রিয়তার দিকে। রান্না ঘরের ভিড় বাট্টা আর গরমে ফর্সা সুস্রী মুখখানা রক্তাভ হয়ে আছে। প্রণয় শান্ত কণ্ঠে ডাকলো, “এদিকে আয়।”
প্রিয়তা চোখ তুলে তাকালো প্রণয়ের দিকে। সাথেসাথেই তাকে আকাশ পরিমাণ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো, তবুও ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রণয়ের সামনে।

প্রণয় নিজের হাতে থাকা অরেঞ্জ জুসের গ্লাসটা প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “খা।”
প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে তাকালো প্রণয়ের দিকে, নিচু কণ্ঠে বললো, “কিন্তু এটা তো আপনার জন্য।”
প্রণয় গ্লাসটা ওর মুখের সামনে ধরে বললো, “তোকে বেশি বলতে বলিনি। খেতে দিয়েছি, খা।”
প্রিয়তা ঢোক গিলে মনে মনে বললো, “যা-ই হোক, এই বেটাকে চটানো যাবে না কারণ এই ব্যাটাকে সে নিজে ও বিরাট ভয় পায়, তাই বেশি পাঁকামো না করে গ্লাসের অর্ধেকটা ঢকঢক করে খালি করে ফেললো।”
“আহ! শান্তি লাগছে এবার। সত্যিই গরমে অনেক অস্থির লাগছিলো,”—ভাবলো সে।
প্রণয় ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বললো, “এখন একটু ভালো লাগছে?”
প্রিয়তা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে উপরে-নিচে মাথা ঝাঁকালো।

প্রণয়ের ভেতরটাও গরমে হাঁসফাঁস লাগছিলো, তাই গ্লাসের বাকি অর্ধেকটা সে খালি করে ফেললো।
এই দৃশ্য প্রিথম, প্রেম, রাজ, অরণ্য, সমুদ্র সবাই দেখলো, কিন্তু কেউ মাইন্ড করলো না। কারণ এটা দেখতে দেখতে তারা অভ্যস্ত। এটা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়।
তাদের বড়দাদান যে প্রিয়তার প্রতি অতিরিক্ত পজেসিভ, সেটা তারা প্রিয়তার জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে।
প্রিয়তা জগ আর গ্লাস নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।
তন্ময় কোথা থেকে ছুটে এসে প্রণয়ের কোলে বসলো, গালে হ্যামি খেয়ে বললো, “বাইরে গেছিলে আর আমার জন্য কিছু আনোনি, বড়দাদান?”
প্রণয় মৃদু হাসলো, প্যান্টের পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দিলো।
খুশি হলো তন্ময়।

এবার প্রণয়ের কোল থেকে নেমে প্রিথমের কোলেও গিয়ে বসলো, একইভাবে গালে হ্যামি খেয়ে আদুরে কণ্ঠে বললো, “আমার জন্য কিছু আনোনি, মেজ দাদান?”
প্রিথম হাসলো, পকেট থেকে আরেকটা চকলেট বের করে তন্ময়ের হাতে দিলো।
এভাবেই প্রেম আর রাজের কাছ থেকেও চকলেট নিলো তন্ময়।
প্রণয়ের দেওয়া চকলেটের র‍্যাপার খুলে খেতে খেতে সে অরণ্যের পাশে বসলো।
অরণ্য শয়তানি হাসি দিয়ে তাকালো সমুদ্রের দিকে।
তন্ময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ওর চকলেটের অর্ধেকটা হাঙরের মতো হাঁ করে গিলে ফেললো অরণ্য।
সাথে সাথেই তন্ময়ের চোখ নোনা জলে ভর্তি হয়ে গেল, “বড় দাদান!” বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে নিলেই, অরণ্য আর দুইটা চকলেট বের করে তন্ময়কে দিলো, ভয়ার্ত কন্ঠে বলল, “বকা খাওয়াস না ভাই।”
সাথে সাথেই চোখের জল মিলিয়ে গেলো তন্ময়ের।

সমুদ্র ফুরফুরে গলায় বললো, “খা খা, আরো বেশি করে চকলেট খা। এমনিতেই তো দাঁত নেই, সব পোকায় খেয়ে নিয়েছে। এর পর তোর জিভ থেকে শুরু করে মুখ—সব খেয়ে নেবে। তারপর দেখবো তোকে কে বিয়ে করে। এখনো সময় আছে, চকলেটগুলো আমার দিকে পাস কর! আমি না হয় খেয়ে নিজের সর্বনাশ করি। বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইয়ের জন্য এতটুকু করতে পারব না?”
কিন্তু সমুদ্রের কথায় পাত্তা দিলো না তন্ময়, নিজের মতো খেতে লাগলো।
সমুদ্র আরো কিছু বলতেই প্রিথমের ফোন বেজে উঠলো।
চুপ হয়ে গেলো সমুদ্র।

প্রিথম পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো—অজানা নাম্বার।
সে বেশি কিছু না ভেবে ফোন রিসিভ করলো।
ওপাশ থেকে ইনায়া ডুকরে কেঁদে উঠলো, ক্রন্দনরত কন্ঠে মিনতি করে বলল, “প্রিথম, প্লিজ আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই না। প্লিজ প্রিথম! তোমার জায়গায় অন্য কারো স্পর্শ আমি মেনে নিতে পারব না। তোমার জায়গায় অন্য কেউ যদি আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে, আমি আত্মহত্যা করবো!”
ইনায়ার বলা বাক্যে প্রিথমের হুঁশ উড়ে গেলো।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো, “এই! এই! রসগোল্লা! কী হয় তোমার? এসব কি বলছো?”
প্রিথমের উত্তেজিত কণ্ঠে সবাই অবাক চোখে তাকালো প্রিথমের দিকে।
প্রিয় পুরুষের কণ্ঠে ইনায়ার ছোট্ট মন ভালোবাসা হারানোর বিষে নীল হয়ে গেল, সে আরও জোরে কেঁদে উঠল।
শুধু ক্রন্দনরতো কণ্ঠে বলল, “আম্মু, আমায় বিয়ে…” —আর কিছু বলতে পারল না, এর আগেই ফোন কেটে গেল।
প্রীথম এবার চিৎকার দিয়ে ডাকল, “রসগোল্লা!”
সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল প্রীতমের দিকে।

প্রীতম তড়িৎ বেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল, ছুটে উপরে চলে গেল।
রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র—বিস্ফোরিত চোখে একে অপরের মুখের পানে তাকাল।
কেউ কিছুই বুঝতে পারল না।
তাদের ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই প্রীতম রিভলভার হাতে নেমে এলো।
তার চোখ-মুখে ক্রুদ্ধের অগ্নি দাউ দাউ করে জ্বলছে, মন গহীনে জেকে বসেছে প্রিয়তমা হারানোর তীব্র আশঙ্কা।
রাগের পাশাপাশি বুকের ব্যথাটা ও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
প্রীতমের হাতে বন্দুক দেখে লাফিয়ে উঠল বাড়ির বাকি লোকজন, সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল প্রীতমের দিকে।

প্রিয়তা, পরিণীতা, অনুশ্রী বেগম, তনুশ্রী বেগম—সবাই ছুটে এলেন।
অনুশ্রী বেগম আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন, “কি হয়েছে মেজো আব্বু?”
প্রীতম কারোর কথার কোনো উত্তর দিল না, হনহন করে বেরিয়ে গেল শিকদার বাড়ি থেকে।
প্রণয় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না, শুধু ভ্রু কুঁচকে দেখে গেল ভাইয়ের পাগলামো।
রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র—সবাই ভয়ার্ত চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছুট দিল।
প্রীতমের পেছন পেছন পরিণীতা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, “মেজদার কী হল?”
প্রিয়তা ও চিন্তায় পড়ে গেল।
প্রীতম পাগলের মতো গাড়ি বের করল।
তার রসগোল্লার বলা কথাগুলোতে যা বুঝল, তা যদি সত্যি হয়, তবে প্রীতমের মৃত্যু ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।

সে পণ করে নিলো, তার বুকের ভালোবাসা যদি তার না হয় তাহলে সে আর পৃথিবীর কারো হতে দেবো না। নিজের হাতে শেষ করে দেবে তাকে।
প্রীতম শিকদার প্রয়োজনে তার ভালোবাসার খুনি হবে, তবু তাকে অন্যের হতে দেবে না।
প্রীতম গাড়ি স্টার্ট দিতেই প্রেম, রাজ, অরণ্য, সমুদ্র—সবাই চেপে বসল।
ইনায়ার সৎ মা, রুকসা খাতুন ইনায়ার তুলতুলে নরম গালে একের পর এক থাপ্পড় মেরে চলে, আর একের পর এক অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেই চলে যাচ্ছেন।
ইনায়া রুকসা খাতুনের পা জড়িয়ে ধরে বলল, “আম্মু প্লিজ, আমি তোমার ভাইয়ের ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না। আমায় এভাবে হুট করে বিয়ে দিয়ে দিও না। আমি মরে যাব।”
রুকসা খাতুন ইনায়ার চুলের মুঠি ধরে বললেন, “অপয়া মেয়ে, তোকে এতদিন খাইয়েছি, পরিয়েছি—তার বিনিময়ে কি পেয়েছি? কিছুই পাইনি!

তুই আমার সংসারের বাড়তি বোঝা ছাড়া কিছু না।
তবুও তোকে আদর, যত্নের কমতি রাখিনি। আর আজ যখন তোকে বলছি আমার ভাইয়ের ছেলেকে বিয়ে করে নিতে, তখন তোর কোথায় টান পড়ছে?
আমার ভাইয়ের ছেলেকে যখন তোর রূপ দেখিয়ে পাগল করছিলি—তখন তো কিছু মনে হয়নি!
এখন তোকে আহাদ কেই বিয়ে করতে হবে। তোকে আহাদের সাথে দিলেই ভাইজান দশ লক্ষ টাকা দেবে। সেই টাকায় তোর বড় বোনকে ভালো ঘরে বিয়ে দেব।
কিন্তু তুই তো আমার মেয়েকে—হিংসে করিস, তাই এমন করছিস।”
ইনায়া আরও শক্ত করে রুকসা খাতুনের পা জড়িয়ে ধরে বলল, “এমন কোরো না আম্মু, ওই নেশাখোরটার সাথে আমায় বিয়ে দিও না।

আমি আজীবন তোমার বাড়িতে কাজের লোক হয়ে থাকব, তবুও এমন কোরো না।”
রুকসা খাতুন ঝাড়া মেরে পা ছাড়িয়ে নিলেন।
সিনথিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, “ওকে দুই মিনিটের মধ্যে বাইরে নিয়ে আসো, এখনই বিয়ে পড়াতে হবে। বেশি লোক জানাজানি হলে পুলিশ কেস হয়ে যাবে।”
ইনায়া সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল, “প্লিজ, আপু, তুমি আমায় বাঁচাও।”
সিনথিয়া ইনায়ার লেপ্টে যাওয়া কাজল ঠিক করে দিতে দিতে বলল, “এখানে আমার কিছু করার নেই। তোকে আহাদ ভাইয়াকেই বিয়ে করতে হবে। চল।”
বলে ইনায়াকে টেনে নিয়ে গেল বাইরে।
বাইরে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিছু লোক, বর আর বর ছাড়া তেমন কেউ নেই।
ইনায়াকে নিয়ে বসানো হল এক ৩০ থেকে ৩৫ বছরের লোকের সামনে।
লোকটা লোলুপ চোখে ইনায়ার শরীরের দিকে তাকিয়ে যেন এত লোকের সামনেই শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে চাচ্ছে।
এই মেয়েটাকে সে আজই প্রথম দেখেছে।
দেখেই মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
রুকসা খাতুনের কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে, উদ্দেশ্য একটাই—ওর সুন্দর, নরম দেহটা ইচ্ছামতো ভোগ করা।

যদি ইনায়ার বাবা এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে না থাকতেন, তবে এসবের কিছুই ঘটতো না।
ইনায়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
প্রথমেই ইনায়াকে ‘কবুল’ বলতে বললেন।
ইনায়া চোখ বন্ধ করে প্রীতমের চেহারাটা মনে করল।
প্রীতমের মুখটা মানসপটে ভেসে উঠতেই ইনায়ার বুক ভেঙে কান্না এল।
সে সবার সামনে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।
কাঁদতে কাঁদতে বলল…
“আমাকে খুন করে ফেললে ও আমি প্রিথম ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। আমি প্রিথমকে ভালোবাসি। আমাকে প্রিথম-এর কাছে যেতে দাও।”

ইনায়ার কথায় সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ইনায়ার দিকে।
ইনায়ার মুখে অন্য ছেলের কথা শুনতেই আহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
সে তীব্র ক্রোধে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, ছুটে এসে সকলের সম্মুখীন ইনায়ার নরম তুলতুলে গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিলো।
দুই গাল চেপে, চুলের মুঠি ধরে, বিশ্রী গালি দিয়ে বললো, “বেশ্যা, তোর এই শরীর দেখিয়ে তাহলে আরও ছেলের মাথা নষ্ট করেছিস? সত্যি করে বল, যে ছেলেটার নাম নিলি—ওকে সব বিলিয়ে দেস নি তো?”
ইনায়া চোখ দিয়ে অনর্গল নুনা পানির বর্ষণ হচ্ছে। ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠছে, তাকে মেরে ফেললেও সে অন্য কাউকে কবুল বলবে না। আহাদ আবারও থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠাতেই বিকট শব্দ হল, সাথে সাথেই একটা গুলি এসে তার ডান হাতের বাহুতে লাগলো।

গুলির শব্দে চমকে উঠলো সবাই। ইনায়ার চোখে আশার আলো জ্বলকে উঠলো, সে বিদ্যুৎ বেগে তাকালো পেছনে। প্রিথম বন্দুক হাতে, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। পেছনে রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র।
প্রিথম-কে দেখে ইনায়া সব ভুলে গেলো, তার প্রাণ ভোমরা ফিরে পেল সে, সবাইকে উপেক্ষা করে দৌড়ে ঝড়ের বেগে গিয়ে আঁচড়ে পড়লো প্রিথম-এর বলিষ্ঠ বুকে। গলা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বললো, “আমাকে মরে যেতে হলে মরে যেতাম প্রিথম, তবু ওহ তুমি ছাড়া অন্য কাউকে কবুল বলতাম না।”
ইনায়ার কথায় প্রিথম-এর দৃষ্টি নরম হলো। এতক্ষণ হৃদয়ে চলা ধ্বংস লীলা শান্ত হলো, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হলো। সে নিজের দেহের সর্বশক্তি দিয়ে নিজের প্রাণকে নিজ বক্ষে পিষে নিল। কপালে দীর্ঘ চুম্বন একে ভেজা কণ্ঠে বললো, “আমি এসে গেছি রসগোল্লা, তুমি শুধু আমার। তোমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব কিছুর উপর শুধু আর শুধুমাত্র এই প্রতিক শিকদার প্রিথমের অধিকার। এই প্রতিক শিকদার প্রিথম কাপুরুষ নয়। সে তোমাকে অন্য কারো হতে দিতো না। এখানে এসে যদি দেখতাম তুমি অন্য কাউকে কবুল করে নিয়েছো, তাহলে আল্লাহর কসম, এখানে আগে তোমাকে শেষ করে দিতাম, তারপর নিজেকে।”

ইনায়া শব্দ করে কেঁদে উঠে আরো শক্ত করে খামচে ধরলো প্রিথমের শার্ট। উপস্থিত সবাই ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে প্রিথম-এর দিকে। এখানে কারোই প্রিথম-কে চিনতে ভুল হয়নি। এ শিকদার বাড়ির ছেলে। তার মানে ইনায়া এই ছেলের কথাই বলছিলো! ভয়ে সবাই ফাঁকা ঢোক গিলতে লাগলেন, কারণ এই শিকদাররা আসলে কি রকম সেটা মুখে না বললেও প্রায় অনেকেই জানে। কিন্তু রুকসা খানম-এর ভাই জালাল উদ্দিন আর আহাদ যেহেতু এখানকার নয়, তাই তারা স্বাভাবিক ভাবেই চিনতে পারলো না প্রিথম-কে।
ইনায়া-কে প্রিথম-এর সাথে এভাবে লেপ্টে থাকতে দেখে আহাদের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। সে ছুটে এসে ইনায়া-কে মারতে উদ্যত হলে প্রিথম এক হাতে ধরে ফেললো আহাদ-এর হাত। চোখ মুখে তার ভয়াবহ হিংস্রতা জাগ্রত হলো।

অরণ্য ইনায়া-কে ভালোমতো দেখে বললো, “মেঝো ভাবি, তোমার গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ কেন? কেউ কি মেরেছে?”
অরণ্যর কথায় আতকে উঠলেন সবাই। প্রিথম-এর নজর পড়লো এবার ইনায়ার গালের দিকে। ফর্সা চামড়ায় পাঁচ আঙুলের দাগ ঝলমল করছে। প্রিথম রক্তচক্ষু করে তাকালো আহাদের দিকে। ইনায়া-কে এক পাশে সরিয়ে, সাদা শার্টের হাতা গুটাতে শুরু করলো।
উপস্থিত সবাই ভয়ে, থরথর করে কেঁপে উঠলেন। আহাদ প্রিথম-কে দেখে আরও রেগে গেলো, প্রিথম-কে মারতে উদ্যত হওয়ার আগেই প্রিথম ওর নাক বরাবর পাঞ্চ মেরে দিলো। সাথে সাথেই কয়েক পা পিছিয়ে গেলো আহাদ। বলিষ্ঠ হাতের আঘাতে নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত আসতে শুরু হলো।

প্রিথম হিংস্র বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো আহাদের উপর। সবার সামনে গরুর মতো পিটাতে শুরু করলো। প্রত্যেকটা মার-এর সাথে ইনায়া কেঁপে কেঁপে উঠছে। রুকসা খানম-এর ভাই বাধা দিতে গেলে রুকসা খানম আটকে দিয়ে চোখের ইশারায় বারণ করলেন। সময়ের সাথে সাথে প্রিথম আরো হিংস্র হয়ে উঠছে। অমানবিকভাবে মারতে মারতে পুরো রক্তাক্ত করে ফেলছে।
সবাই ভয়ভীত, অথচ রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্রের কোনো ভাবান্তর নেই। তারা বেশ সিনেমা দেখার ভঙ্গিতে সব উপভোগ করছে।

প্রিথম মারতে মারতে চিৎকার দিয়ে বললো, “বাস্টার্ড! তুই আমার রসগোল্লাকে আঘাত করেছিস। যাকে এই প্রিথম সিকদার প্রাণ দিয়ে আগলে রাখে, যাকে ব্যথা পাবে বলে জোরে কখনো চেপে ধরে না, তুই তাকে আঘাত করেছিস! তুই প্রিথম সিকদার-এর কলিজায় আঘাত করেছিস! তুই আমার ভালোবাসাকে বিয়ে করতে চাস! আজ তোর এমন অবস্থা করবো, বেঁচে থাকবি কিনা সন্দেহ। আর বেঁচে থাকলেও কখনো বিয়ে করার মতো অবস্থায় থাকবি না।”
আহাদ গগনবিদারী চিৎকার দিচ্ছে, কাজী ভয়ে ‘টক টক’ করে কাঁপছেন। এবার আর আহাদের বাবা স্থির থাকতে পারলেন না। ছুটে এসে প্রিথম-এর পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইতে লাগলেন, “বাবা, আমার ছেলেটারে এবার ছেড়ে দাও, মরে যাবে ও!”

প্রিথম তাকে পাত্তা না দিয়ে মেরেই চললো। অরণ্য আহাদের বাবাকে টেনে সরাতে সরাতে বললো, “আহা, আঙ্কেল! এটা মার খাবার বয়স নয়। এখন হাড় ভাঙলে আর জোড়া লাগবে না। আর দেখছেন তো, আমার বড়দা মেজদার হাতে একবার যে মার খায়, সে আর তার বাকি জীবনে উঠে দাঁড়াতে পারে না। আপনি, ও কি সেটা ছাড়া যদি না চায়, যা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যান।”
প্রিথম মারতে মারতে প্রায় অর্ধমৃত করে ফেলেছে। কিন্তু তার রাগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সে বিশ্রী গালি দিয়ে বললো, “তুই আমার রসগোল্লাকে তোর হাত দিয়ে আঘাত করেছিস!” বলেই, ডান হাত উল্টো মচকে ধরে হাড় ভেঙে দিলো।

তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠলো আহাদ। ঠিক একইভাবে অপর হাতও ভেঙে দিলো, তারপর জোরে লাথি মারলো আহাদের বংশের বাত্তিতে। সাথেসাথেই চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলো আহাদ।
আবার লাথি দিতে গেলো, নিলে রাজ আর প্রেম দৌড়ে এসে প্রিথম-কে চেপে ধরলো। রাজ ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো, “আর মেরো না মেজদা, মরে যাবে তো!” কিন্তু প্রিথম শান্ত হচ্ছে না। মাথায় সম্পূর্ণ খুন চেপে গেছে। এক ধাক্কায় রাজ আর প্রেম দুই ভাই দুই দিকে ছিটকে পড়লো। প্রিথম আবার জোরে লাথি মারলো একই জায়গায়।
এবার রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র—চার ভাই এসে ঝাঁপটে ধরলো। প্রেম চিৎকার দিয়ে বললো, “হা করে কী দেখছে! বাঁচাতে চাইলে ওকে তাড়াতাড়ি এখান থেকে নিয়ে যান!” সাথে সাথে ছুটে এসে রুকসা খানম ও তার ভাই ধরা ধরি করে আহাদ-কে সরিয়ে নিলেন।

প্রিথম-এর রাগ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, শরীরের রক্ত টকবক করে ফুটছে। তার চোখ মুখ রক্তিম। সে ইনায়া অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে প্রিথম-এর দিকে।
প্রিথম নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এগিয়ে গেলো ইনায়ার কাছে। দুই গালে হাত রেখে বললো, “আমি নিজেকে শান্ত করতে পারছি না রসগোল্লা, না জানি কখন কাকে মেরে দেবো, যেভাবে পারো আমাকে শান্ত করো।”
ইনায়া গভীর চোখে তাকালো প্রিথম-এর রাগান্বিত মুখের দিকে। কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই প্রিথম-এর পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়ালো। প্রিথম ওর কোমর ধরে উঁচু করে তুললো।
সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ইনায়া এবার তাদের বিস্ময়কে আকাশে তুলে দিতে প্রিথম-এর আরো খানিকটা ঘনিষ্ঠ হলো , দুই গালে হাত রেখে সর্বসম্মুখে প্রিথমের পুরুষালী ঠোঁটের বাজে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।

এই দৃশ্যে চোখ বড় বড় করে ফেললেন সবাই। রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরে গেলো। উপস্থিত সকলে ওহ লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলেন।
প্রিথম অতন্ত্য ক্রুদ্ধ, তাই মনের সমস্ত ক্ষোভ, ক্রোধ, রাগ সব ঝাড়তে লাগলো ইনায়ার কোমল ঠোঁটে উপর। কোমর চেপে ধরে রুডলি কিস করতে লাগলো। ব্যথায় টনটন করে উঠলো, ইনায়ার ঠোঁট কেটে ছিড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল মুহূর্তে। তবুও ও টু শব্দ করলো না। সকল ব্যথা-ধাঁতে দাঁত চেপে গিলে নিয়ে নিঃশব্দে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিলো।

প্রিথম একটানা বেশ কয়েক মিনিট রুডলি কিস করে কিছুটা শান্ত হলো। এবার ধীরে ধীরে তার ঠোঁটের স্পর্শ কোমল হল, আদুরে স্পর্শ একে দিতে লাগলো ঠোঁটে। আরো কয়েক মিনিট চুমু খেয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো। কপালে দীপ্ত চুমু খেয়ে বললো, “তুমি এই প্রিথম শিকদার-এর জীবন, আজকের পর তুমি হবে শুধু আমার।”
ইনায়ার ঠোঁট কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। প্রিতম সেই রক্তটুকু শুষে নিয়ে, কাটা ঠোঁটে হাত বুলালো, শব্দ করে চুমু খেলো। ইনায়া-কে টেনে নিয়ে গিয়ে কাজীর সামনে বসে পড়লো।
কাজী প্রিথম-কে দেখে ঠকঠক করে কাঁপছে। প্রিথম কাজীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বললো,

“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। আমি প্রতিক শিকদার প্রিথম, সাজিদ শিকদার-এর একমাত্র ছেলে।”
কাজী ভয় ভয় বললেন, “জি বাবা, আগে মহরানা লিখবো।”
প্রিতম ইনায়ার দিকে তাকালো, ইনায়া নিচু কণ্ঠে বললো,
“আমার মহরানা লাগবে না কাজী সাহেব, আমার শুধু স্বামী হলেই হবে।”
কাজী আবার ভয় ভয় বললেন, “এটা হয় না মা, বিয়েতে মহরানা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিধি। এটা ছাড়া বিবাহ সম্পূর্ণ হয় না।”
প্রিতম ইনায়ার দিকে চোখ রেখেই বললো,
“আপনি লিখুন, এই প্রীতম শিকদার প্রীতম তার এই জীবনকালে যা রুজি রোজগার করেছে বা করবে, তার ১০০ ভাগ ইনায়া তাবাসসুমের।
প্রীতম শিকদার প্রীতম তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইনায়া তাবাসসুমের।”
কাজী এমন উদ্ভট মহরানা ধরা দেখে তাজ্জব বনে গেলেন, তবু প্রাণের মায়ায় আর কিছু বললেন না।
বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পাত্র: প্রতিক শিকদার প্রিতম
পিতা: সাজিদ শিকদার
পাত্রী: ইনায়া তাবাসসুম
পিতা: মহিনুর হক
আমি (নিকাহ্‌ পড়ানো ব্যক্তি), ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী এখন এই বিবাহের কার্যক্রম সম্পাদন করছি।
প্রথমে আমি পাত্রীকে জিজ্ঞেস করছি:
হে ইনায়া তাবাসসুম, আপনি কি প্রতিক শিকদার প্রিতম ওরফে সাজিদ শিকদারের একমাত্র পুত্রকে, তার পুরো জীবনের উপার্জিত সম্পদ ও প্রতীক শিকদার প্রীতম নিজে মহরানা হিসেবে ধার্য করিয়া, ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী স্বামী হিসেবে স্বীকার করতে সম্মত আছেন?
সম্মত থাকিলে “আলহামদুলিল্লাহ” তিনবার কবুল করুন।
ইনায়া, প্রিতমের গভীর নীলাভ চোখে চোখ রেখে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“হ্যাঁ, আমি গ্রহণ করছি।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।”
এরপর কাজী সাহেব প্রীতমকে বললেন:
হে প্রতিক শিকদার প্রিতম, আপনি কি ইনায়া তাবাসসুম, মহিনুর হকের কন্যাকে, আপনার পুরো জীবনের উপার্জিত সম্পদ ও আপনি নিজে মহরানা হিসেবে ধার্য করিয়া, ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করিতে সম্মত আছেন?

যদি সম্মত থাকিয়া থাকেন, তাহলে তিনবার “আলহামদুলিল্লাহ কবুল” বলুন।
প্রিতম ইনায়ার কোমল হাত চেপে ধরে, চোখে চোখ রেখে এক নিঃশ্বাসে বললো,
“হ্যাঁ, আমি গ্রহণ করছি।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।”
এবার কাজী সাহেব, সহ রাজ, প্রেম, অরণ্য, সমুদ্র সভায় একযোগে বলে উঠলো:
আলহামদুলিল্লাহ!

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪৩

এবার কাজী সাহেব বললেন:
“উভয় পক্ষের সম্মতিতে, শরিয়ত মোতাবেক প্রতীক সিকদার প্রীতম ও ইনায়া তাবাসসুম-এর মাঝে বিবাহ সম্পন্ন হলো।
আজ থেকে আপনারা আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী, শরীয়ত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী।
আল্লাহ আপনাদের বৈবাহিক জীবনে সুখ ও শান্তি প্রদান করুন। সকলে বলুন আমিন।”

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৪৫