ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬১ (২)
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
গভীর রাত। রাতের নিস্তব্ধতা পায়ে মাড়িয়ে তীব্র ঝড়ের প্রকোপে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে ধরণী। বাহিরে শুঁশুঁ শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে প্রলয় নৃত্যে মেতেছে তুষারে ঢাকা তৃণভূমি। তীব্র প্রতিকূল অবস্থা ও ঝড়ের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। আশপাশে যতদূর অবধি চোখ যায়, সবকিছু নিকষ অন্ধকারে ঢাকা। কেবল মাঝেমধ্যে তীব্র বিদ্যুতের ঝলকানিতে আকাশ গর্জে উঠছে।
প্রণয় ঘুটঘুটে অন্ধকার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কাতর চোখ দুটো তার বাইরের তুষারঝড়ে, নিবদ্ধ সাদা ভেজা তুলোর মতো তুষার ঝরে পড়ছে।
বাহিরে যেমন ঝড় উঠেছে, ঠিক তেমন ঝড় উঠেছে প্রণয়ের হৃদয়ে।
চাওয়া-পাওয়ার জীবন তরী একই ঘাটে নুমুর করে, চাওয়ার খুঁজে হন্যে জীবন পাওয়াটাকে ব্যর্থ করে।
সে খুব জানে, তার হাতে সময় আর বেশি দিন নেই। যা করার, তা এই কয়েকদিনের মধ্যেই করে ফেলতে হবে। কারণ, তার জীবনটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। কখন কি হয় তা বলা মুশকিল। তবে স্বস্তির বিষয় একটাই—এখন আর তার থাকা না-থাকাতে কারো কিছুই যায় আসে না।
এখন আর তার অনুপস্থিতি কাউকে পোড়ায় না। কেউ আর ভাবে না তার কথা। পরিবার তো তাকে মৃত ধরে নিয়েছে চার বছর আগেই। এখন সে একা, সম্পূর্ণ একা। তার মৃত্যুতে সুখ পালন করার জন্যও হয়তো কেউ নেই।
যে কাঁদবে, সেও অন্য কারো হয়ে যাবে। অন্য কেউ তার সর্বোচ্চ ভালোবাসায় ভুলিয়ে দেবে তাকে। তবে সে তো তাই চায়। কিন্তু মন তার হিংসুটে কিছুতেই একমত হতে চায় না।
প্রণয় মাঝে মাঝে ভাবে, এই মন ধরা যেতো, ছোঁয়া যেতো, স্পর্শ করা যেতো—তাহলে সবার আগে ওটাকে ধরেই গুলি করে দিত প্রণয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তবে এখন সে একেবারে নিশ্চিন্ত। এখন আর এমন কেউ নেই, যে তার অনুপস্থিতিতে তার প্রাণপাখির উপর আঘাত আনবে। তাকে কষ্ট দিতে চাইবে। কারণ, তার প্রাণের জীবনে আসা সকল বিপদের মূল কান্ডারী তো সে নিজেই ছিল। তার জন্যই তো তার ছোট্ট প্রাণটাকে এইটুকু বয়সে এত সহিংসতা সইতে হয়েছে।
অদৃশ্য বুকের ব্যথায় হাঁসফাঁস করে উঠল প্রণয়। দীর্ঘ যন্ত্রণা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে দিল বাতাসে।
কণ্ঠে আফসোস মিশিয়ে বলল,
— আমি না থাকলে কারো কিছু যায় আসবে না, ঠিকই। কিন্তু তুই অনেক বড় লস খেয়ে যাবি জান। এই ক্ষতি তোর আজীবনেও পূরণ হবে না। তুই নিঃশব্দে হারিয়ে ফেলবি এমন একজন মানুষকে, যে কখনো তোকে ছাড়া নিজেকে ভালোবাসেনি।
হ্যাঁ, আমার পর তোকে হয়তো অনেকেই ভালোবাসবে। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমার মতো করে কেউ পারবে না।
প্রণয় বুকভরে শ্বাস নিয়ে পুনরায় বলল,
— সবার প্রাপ্তির খাতায় কিছু না কিছু আছে। কিন্তু আমার প্রাপ্তির খাতায় কি বিরাট একটা শূন্য?
উত্তরটা প্রণয়ের ভেতর থেকেই আসলো। অন্তর আত্মা তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠে গর্জে উঠলো—
— না, আমার প্রাপ্তির খাতা শূন্য নয়। আমার প্রাপ্তির খাতায় অসম্পূর্ণতা নেই, অপূর্ণতা নেই। আমি পূর্ণ। আমি জীবনে সব পেয়েছি—মা, বাবা, পরিবার, ভালোবাসা, সুখ, শান্তি, যন্ত্রণা, বেদনা—সব পেয়েছি। আর পরিশেষে আমার রক্তজবাকে পেয়েছি, তার ভালোবাসা পেয়েছি।
আমার ভালোবাসায় কোনো অপূর্ণতা নেই। ভালোবাসলে জরুরি নয় যে তার শরীরটাও পেতে হবে, তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিচরণ করে ভালোবাসার প্রমাণ করতে হবে।
কি আছে ওই রক্তমাংসের শরীরে? কি আছে ওই মাখনের মতো মোলায়েম ত্বকে? কিছুটা জৈবিক তৃপ্তি ব্যতীত কিছু নেই। কিন্তু আমি তো এসব দেখে ভালোবাসিনি। আমি ভালোবেসেছি তার আত্মাকে, ভালোবেসে মন ছুঁয়েছি খুব নিবিড়ভাবে। তাহলে অপূর্ণতা কোথায়?
কিন্তু এসব জ্ঞানের বাণী যেন মন শুনল না। ভিতরের পুরুষ সত্ত্বাটা কাতর কণ্ঠে গর্জে উঠলো—
— আমাকে মিথ্যে বলে কি লাভ,কেউ না জানুক আমিতো জানি তুই কি চাস। তুই শুধু ওর মনকে না, ওর শরীরকেও ভালোবাসতে চাস। আপন করতে চাস। ছুঁয়ে দিতে চাস। ভেজা চুলের ঘ্রাণে নিজেকে হারাতে চাস। শরীরের নেশায় মাতাল হতে চাস। তুইও তো চাস, সে তোর ভালোবাসায় অতিষ্ঠ হয়ে কাঁদুক, চিৎকার করুক।
গলে যাক, নিঃশেষ হয়ে যাক। তুইও তো ওই কোমল ত্বকের নিচে জমা ভালোবাসার কাঙাল হয়ে আছিস। ছুঁয়ে দিতে না পারার অক্ষমতায় পুড়ে মরছিস প্রতিক্ষণে। দীর্ঘশ্বাসে জমা অস্থিরতাকে বিষের মতো পান করছিস। তুই ঈশ্বর নস। কেবল ঈশ্বরের ভালোবাসতে শরীরের প্রয়োজন পড়ে না।
মনের বিরোধিতা হার মেনে নিল প্রণয়।
যন্ত্রণার মিশ্রিত ভারী নিশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। টলটলে চোখ দুটো বন্ধ করতেই বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জমে ওঠা অশ্রুদানা। সে অস্পষ্ট কণ্ঠে ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করল—
— তুমি আমার কামনা নও, রক্তজবা। তুমি আমার সাধনা, আমার অনন্ত সুখ।
তোমাকে বুকে নেওয়ার মাধ্যমে আমি যে শান্তি পাই, তা আমাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলিয়ে দেয় আমি কি, কি আমার পরিচয়। তখন তোমাকে বুকে জড়িয়ে আরো কিছুটা সময় বেশি বাঁচতে মন চায়। তুমি জানো, আমার একটা তীব্র ইচ্ছা আছে। আমি জানি, তা অবাস্তব। সে ইচ্ছা আমার কোনোদিনও পূরণ হবে না।
তবুও চাই, আমার নিঃশ্বাসটা যখন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তুমি আমার পাশে থাকো, আমার সাথে থেকো। তোমার বুকটা যেন হয় আমার শেষ নিঃশ্বাসের ঠিকানা। আমি যেন তোমাকে দেখতে দেখতে পৃথিবী ছাড়তে পারি। মৃত্যুর পর যেন আমার এই আফসোসটা না থাকে যে আমি শেষবারের মতো আমার ময়নাপাখিটাকে দেখতে পেলাম না।
তোমার ভালোবাসা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। জানো, আমাকে হারে হারে বুঝিয়েছে প্রেমের জ্বালা কি, আমাকে রগে রগে উপলব্ধি করিয়েছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা কতটা ভয়াবহ।
গোটা পৃথিবীর মানুষ আমার পিছে পড়ে আছে।
তারা চায় আমার কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি।
কিন্তু তারা যদি আমার গত ছয় বছরের একটা রাতও দেখতো, তাহলে কখনোই আমাকে মেরে ফেলতে চাইতো না। আজীবনের জন্য বন্দি করে রাখত অন্ধকার কুঠুরিতে, আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করত তুই না থাকার এক একটা ক্ষণ।
প্রণয়ের নিকট এই বন্ধ ঘরের বাতাসকে বিষাক্ত মনে হল। আজ চারটা বছর সে ঘুমাতে পারে না। রাতের পর রাত তাকে নির্ঘুম পার করতে হয়। দিন যেমন তেমন, রাত হলে আর সহ্য হয় না—
প্রণয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে লাগলো। শরীরটা তার নেশা চাচ্ছে। পুরুষালী শরীরের রগে রগে দৌড়ে বেড়াচ্ছে টেস্টোস্টেরন হরমোন। আজকাল রাত হলেই যেন পুরুষত্ব জেগে ওঠে। সে বুঝে পায় না এতো যৌবনের কামড়ানি কোথা থেকে আসে। প্রণয় তীব্র অস্থিরতায় এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও ঘামছে। মাদকতা মিশ্রিত শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। শরীর তার মনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বলে উঠছে
— I want to drug or physical intimacy.
প্রণয় কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না নিজেকে।
সেকেন্ড অপশনটা সে কখনোই চুজ করতে পারবে না। কারণ, ওটা তার জন্য নিষিদ্ধ সুখানুভূতি, যার সাদ আস্বাদনের অধিকার প্রণয়ের নেই। আর ফার্স্ট অপশনটা ভয়ংকর। আজ ওটা কিছুতেই নেওয়া যাবে না। কারণ, একবার ড্রাগের নেশা শরীরে ঢুকতে পারলে মস্তিষ্ক একদম আউলিয়ে যায়। তখন আর নিজের কৃতকর্মের উপর কোন কন্ট্রোল থাকে না।
এই গড়াগড়ি খাওয়ার মাঝেই অন্ধকারে ঘরের মেঝেতে ধপ করে কিছু পড়ার শব্দ হলো। সাথে সাথেই সব ছটফটানি স্থির হয়ে গেল প্রণয়ের। চোখ খুললো না। ঠোঁট কামড়ে ধরে পড়ে রইল। কারণ, সে মেয়েটার গন্ধ পাচ্ছে। উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে। এটাও বেশ বুঝতে পারছে, মেয়েটা এখন তার জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালতে এসেছে। ছুঁয়ে দিয়ে কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে এখন। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে এই রাতে।
ভাবনার অন্তে নিঃশ্বাসটুকু ফেলার সময় পেলো না প্রণয়। তার আগেই কামুক শরীরে কোমল নারী দেহের স্পর্শ অনুভব করলো। ধীরে ধীরে কেউ যেন এসে চড়ে বসলো পেটের উপর।
গলা শুকিয়ে কাঠ হলো প্রণয়ের। সে চোখ মেলে দ্রুত পাশের টেবিল ল্যাম্পটা অন করতে গেলেই কোমল দুটো হাত আচমকাই তার বলিষ্ঠ বাহু চেপে ধরলো। আগন্তুকের শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণে ঘোর লেগে আসছে প্রণয়ের। সেই রমণী মধুর কণ্ঠে ধমকে উঠে বললো—
— হুসস, একদম নড়বেন না বলছি। কি পেয়েছেন আমায়? আপনি যা বলেন আমাকে তাই শুনতে হবে। হু।
কোমল স্পর্শে আবেশিত প্রণয় পুরুষত্বের কঠিন খোলস ঝেড়ে ফেলল। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল—
— এত রেগে আছেন কেন ম্যাডাম? আমি কি বললাম আপনাকে?
প্রিয়তা এবার আরো তেতে উঠল। কোমল হাতে বলিষ্ঠ হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে ধরল। এতে অবশ্য বেশ আরাম পেলো প্রণয়। প্রিয়তা কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো—
— ২৮ বছরের বুড়ো বাম ঢং করেন আমার সাথে? জানেন না, আমি অপরিচিত জায়গায় একা ঘুমাতে ভয় পাই? তার উপর এই ঝড়ের রাতে একা একটা রুমে আমায় ফেলে আসলেন?
ঠোঁটে এক চিলতে বাঁকা হাসি খেলে গেল প্রণয়ের। সে হাত উঠিয়ে প্রিয়তার সামনে পড়া চুলগুলো আলতোভাবে কানের পেছনে গুঁজে দিল। ফিচেল কণ্ঠে বলল—
— তো ম্যাডাম, এইজন্য এত রেগে আছেন? তা আপনার মনের বাসনা কি ছিল শুনি, আমার সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলেন?
প্রিয়তা অন্ধকারে মুখ বাঁকালো—
— হুহ! আপনার সাথে ঘুমানোর জন্য দেখছেন না আমি কেঁদে মরছি? আপনি কে হন আমার? সরুন তো!
প্রিয়তার কথার কোন দ্বিমত প্রকাশ করলো না প্রণয়। বাধ্য ছেলের মতো উঠে যেতে নিলো। সাথে সাথেই তার হাত ছেড়ে শার্টের কলার চেপে ধরলো প্রিয়তা। এক ধাক্কায় পুনরায় শুইয়ে দিলো। এবার একদম প্রণয়ের মুখের কাছে মুখ নামিয়ে রেগে আগুন হয়ে বললো—
— ওই শালা, সব বুঝে ও না বুঝার ভং ধরে থাকিস? জানিস না তোকে কতটা ভালোবাসি? তার পরও ওই চুন্নি নাগিনকে কিভাবে বিয়ে করলি?
মুখের কাছে মুখ আনতেই প্রিয়তার মুখ থেকে ঝড়ের বেগে অ্যালকোহলের কড়া একটা গন্ধ ছুটে এসে নাকে লাগলো প্রণয়ের।
মদের গন্ধ নাকে লাগতেই কপাল কুঁচকে গেল তার। দুই হাত উঠিয়ে প্রিয়তার কোমরের ভাজে রাখলো। আচমকা একটা হ্যাচকা টান দিতেই হুড়মুড়িয়ে বলিষ্ঠ বুকে আছড়ে পড়লো প্রিয়তা। প্রণয় এবার শক্ত হাতে কোমর চেপে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল—
— কি খেয়েছিস?
প্রিয়তা জবাব দিলো না। হঠাৎই খিলখিল করে হেসে উঠলো। ঝংকার তোলা সেই হাসির শব্দ প্রণয়ের বুক ছিঁড়ে গিয়ে হৃদপিণ্ডে লাগলো। এই মেয়েটাকে কি মরণে টানছে।
প্রণয় কোমরের চামড়ায় হালকা চাপ প্রয়োগ করে রেগে বললো—
— বল, কি খেয়েছিস?
— আউচ! — বলে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো প্রিয়তা। গাল ফুলিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললো—
— একটুখানি গ্রেপস খেয়েছি, বলে এভাবে মারছেন?
প্রিয়তার কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো প্রণয়। মখমলে পেটের চামড়ায় আরো একটু জোরে চাপ প্রয়োগ করে বললো—
— এই বাড়িতে গ্রেপস কোথায় পেলি?
এবার ব্যথার তীব্রতায় আহ করে উঠলো প্রিয়তা। নরম হাতে প্রণয়ের বাধন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে আহতো কণ্ঠে বললো—
— আহ্! ব্যাথা পাচ্ছি প্রণয় ভাই…
প্রণয় আরো জোরে চেপে ধরল। কপট রাগ দেখিয়ে বললো—
— বল, কোথায় পেয়েছিস?
প্রিয়তা আর সইতে না পেরে মুচড়িয়ে উঠলো।
প্রণয় দগ্ধ কণ্ঠে ধমকে বললো—
— কোথায় পেয়েছিস বলবি, নাকি অন্য মেডিসিন এপ্লাই করব?
প্রণয়ের কণ্ঠে অন্যরকম আগুন।
প্রিয়তা আচমকাই প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরল। বুকে মুখ খুঁজে নেশালো কণ্ঠে বললো—
— সত্যি বলছি, খুব লাগছে।
— তাহলে বল।
প্রিয়তা তপ্ত নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বুক থেকে ধীরে ধীরে গলার কাছে উঠে আসলো। শার্টের দ্বিতীয় বোতামটা খুলে পুনরায় উষ্ণ ত্বকে মুখ ডুবালো। কিন্তু এবারও কোন প্রত্যুত্তর করলো না।
প্রিয়তার কোমল ঠোঁটের স্পর্শে শিরশিরে অনুভূতি খেলে গেলো প্রণয়ের শরীরে। রক্তে আগুন ধরে গেল। এক প্রকার ত্বকে গরম নিশ্বাসের আবেশে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল। তবুও কঠোর সংযমী সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। কাঁপতে থাকা ঠোঁটে বললো—
— বল।
প্রিয়তা এবার মুখ খুলল। প্রণয়ের গলার অ্যাডামস অ্যাপলে একটা ভেজা চুমু এঁকে দিয়ে বলল—
— আমাকে যে ঘরে থাকতে দিয়েছিলেন, ওখানে পেয়েছি। সেন্টার টেবিলের উপর।
— ওখানে কি ভাবে আসবে? সারা বাড়ির কোথাও কোন গ্রেপস নেই।
প্রিয়তা অসংযত ঠোঁট বুলিয়ে দিল প্রণয়ের উষ্ণ ত্বকের ভাজে ভাজে। ঠোঁট নামিয়ে সময় নিয়ে ডিপ কিস করলো প্রণয়ের গলার কলার বোনে। অবুঝ কণ্ঠে বললো—
— উঁহু, ওখানে গ্রেপস ছিলো।
— তাই?
— হুম। ওখানে সেন্টার টেবিলের উপর গ্রেপস লেখা একটা পারপেল কালারের বোতল দেখেছি। তাই খেয়ে নিয়েছি। জানেন, একদম অন্যরকম টেস্ট ছিল। একদম আপনার মতোন, একটু ঝাঁঝালো। কিন্তু এক চুমুকেই শরীর চাঙ্গা হয়ে গেছে।
প্রিয়তার উল্টাপাল্টা স্পর্শে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো ছেলেটা। তবে ওর বর্ণনায় সবটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো। ঠোঁট চেপে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। কণ্ঠে হতাশা মিশিয়ে বললো—
— তোকে শুধু শুধু আমার এত টাকা-পয়সা খরচা করে এতদূর অবধি লেখাপড়া করালাম। পুরোটাই ওয়েস্ট অফ মানি।
প্রণয়ের কথায় দুঃখ পেলো প্রিয়তা। এতো আদর দিচ্ছে তবুও ব্যাটার ঝাঁঝ কমছে না। সে প্রণয়ের শরীরের ঘ্রাণ নিতে নিতে অভিমানী কণ্ঠে অভিযোগ করল—
— পচা লোক! দিন-রাত এত বকেন কেন, হু? আমার মতো এত কিউট একটা মেয়ে বকতে আপনার একটু-ও কষ্ট লাগে না? নির্দয় লোক! আপনি জানেন না, কিউট মেয়েদের বকতে হয় না, শুধু আদর করতে হয়।
প্রিয়তার কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসলো প্রণয়। প্রিয়তার কোমল ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে নেশালো কণ্ঠে বললো—
— আমার আদরে যন্ত্রণা বেশি প্রিন্সেস। তোমার সহ্য হবে না,খুব ব্যথা লাগবে । তখন তুমি চিৎকার করে বলবে, “মেরে ফেলো আমায়, শেষ করে দাও।”
অবাক হলো প্রিয়তা। চোখ পিটপিট করে বলল—
— যাহ! এমন আবার হয় নাকি? কে নিজের ইচ্ছায় মরতে চায়? আমি তো শুধু একটু আদর চাই।
প্রিয়তার অবুঝতায় প্রণয়ের শিরায় উত্তেজনার পারদ খেলা করতে লাগলো। ভারী হয়ে উঠছে নিশ্বাস, এই মেয়েটার স্পর্শে যেন বিষ।
প্রিয়তা প্রণয়ের গালের খোঁচা-খোঁচা দাড়ি আলতো হাতে বুলিয়ে দিলো। মাথা উঁচু করে সেথায় শব্দ করে গাঢ় চুমু খেলো। পর পর অন্য গালেও খেলো। এবার নজর পড়লো কালচে লাল ঠোঁটে।
প্রিয়তার মতলব বুঝতে পেরে নিজেদের স্থান পরিবর্তন করে ফেললো প্রণয়। প্রিয়তা কিছু বুঝার আগেই তাকে ঘুরিয়ে নিজের বালিশে শুইয়ে দিলো।
হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিল ল্যাম্পটা অন করতেই পুরো রুম নরম হলুদ আভায় ভেসে গেলো।
প্রণয় এবার ঘোলাটে নেশালো চোখে তাকালো প্রিয়তার সুশ্রী চেহারার দিকে।
প্রিয়তার শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন। ধীরে ধীরে ওঠানামা করছে তার বুক। কোমল রক্তলাল ওষ্ট যুগল কাঁপছে থিরথির করে। রক্তিম লালিমাতে ছেয়ে গেছে গাল, গলা, শরীরের সর্বত্র থেকে ছুটে আসছে সেই চেনা পরিচিত সুঘ্রাণ।
এসব দেখে শুষ্ক ঢুক গিলল প্রণয়। নিষিদ্ধ জিনিসের সৌন্দর্য এতো তীব্র হয় কেন!
প্রণয় টেনে-হিছড়ে নিজের দৃষ্টি নামালো। কঠোর সংযমী মনোভাবে সরে যেতে নিলে।
প্রিয়তা পুনরায় টেনে ধরল প্রণয়ের শার্টের কলার।
প্রণয় সংযমের কণ্ঠে তেতে উঠে বলল—
— ছাড়!
ছাড়লো না প্রিয়তা। বরং হ্যাঁচকা টানে তাকে আবার নিজের উপর ফেলল। অন্যমনস্ক ছিল প্রণয়। আচমকা টান খেয়ে তাল সামলাতে পারলো না। মুখ থুবড়ে পড়ল অতিরিক্ত নরম কিছুতে। তুলতুলে জিনিসটা ঠোঁটে লাগতেই ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো প্রণয়ের শরীর। শিরদাঁড়া বেয়ে এক ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।
স্পর্শকাতর অঙ্গে পুরুষালী ছোঁয়া পেতেই জমে গেল প্রিয়তার শরীর। যেন অবশ হয়ে আসলো নিমিষেই। মদের নেশা থেকে অন্য কোন নেশার তীব্রতা ছড়াতে লাগল রক্তে। বুকে জেগে উঠলো অতৃপ্ত কামনা বাসনা।
সে প্রণয়ের সিল্কি চুলে হাত রেখে ধীরে ধীরে চুল টানতে থাকলো।
আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে গেল প্রণয়ের। সে আর সরে যাওয়ার চেষ্টা করল না, কারণ এখন সরে গেলে মরে যেতে হবে।
প্রণয়ের পুরুষালী ওষ্টের আদরে ডুবে যেতে লাগলো প্রিয়তার তুলোর শরীর । ঠোঁট কামড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল প্রিয়তার। কাঁপতে থাকা বাঁকানো শরীরের এক একটা বাক যেন প্রণয়ের ভেতরের আগুনকে টেনে বের করছে।
সে আলতো করে প্রিয়তার গলার দিক থেকে আরো দুটো বোতাম খুলে দিল। নিষিদ্ধ আসক্তির তাড়নায় পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে পড়ল প্রণয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখ ডুবালো প্রিয়তার উন্মুক্ত বুকে।
সাথে সাথেই কলিজা লাফিয়ে উঠল প্রিয়তার। অসহ্য সুখানুভূতিতে নিঃশ্বাস আটকে দম বন্ধ হয়ে এলো এক মুহূর্তে। শরীর জ্বলে গেল উষ্ণতায়। নরম ঠোঁট আর গরম জিভের স্পর্শে ছটফটিয়ে উঠল মেয়েটা। চোখের কোনায় জমে উঠল নিষিদ্ধ অশ্রু।
এই অসহ্য সুখ সইতে না পেরে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে খামছে ধরলো প্রণয়ের চুল।
প্রণয় খেতে খেতে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত অ্যাগ্রেসিভ হয়ে কামড়ে দিচ্ছে। এবার জোরে একটা কামড় দিল।
প্রিয়তা কাতর কণ্ঠে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো—
— আউচ! লাগছে প্রণয় ভাই…
অমৃত সুধা পান করতে করতে প্রণয়ের দৃষ্টি আটকালো বাঁ পাশের স্ত*নে। সাথে সাথেই মাথা ঝিনঝিন করে উঠলো প্রণয়ের।
উঁচু ফর্সা ত্বকের উপর টকটকে লাল তিলটা হীরের মতো চমকাচ্ছে। এই তিলটা প্রণয় অনেক ছোটবেলায় দেখেছিল একবার। কিন্তু এটা এখন এত সুন্দর হয়ে গেছে, তা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি প্রণয়।
প্রণয় বৃদ্ধাঙ্গুল উঠিয়ে ছুঁয়ে দিল তিলটা,অবুঝ কন্ঠে বলল –
-এটা কি? আই ওয়ান্ট টু ইট। প্রিয়তার যেন মরণের উপক্রম হলো। প্রণয় এবার ডান পাশ ছেড়ে বাঁ পাশের তিলটায় মুখ ডুবালো। গভীর হাস্কি কণ্ঠে বলল—
— এটা এত সুন্দর আগে দেখাস নি কেন আমায়? আমি তো পাগল হয়ে যাবো জান! তুই এতো সুস্বাদু কেন, এতো সুন্দর কেনো? আমার তকেই চাই! I want to eat you…
প্রিয়তার হৃদপিন্ডের ধকধক শব্দে প্রণয়ের নেশা বাড়ছে চড়চড় করে। এই শরীরে কত মধু জমা আছে আজ সে দেখতে চায়।
প্রণয় ধীরে ধীরে নিচে নামতে নিলে তার চুল টেনে ধরল প্রিয়তা। অসহ্য কণ্ঠে বলল—
— Kiss me…
প্রিয়তার পাগলামো অবলোকন করে ঠোঁট কামড়ে ধরল প্রণয়। মাথা উঠিয়ে চলে আসলো প্রিয়তার মুখ বরাবর। প্রিয়তার খিচে রাখা চোখ আর কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। একটা শয়তানি বুদ্ধি উঁকি দিল মাথায়।
সে অল্প ঝুঁকে তপ্ত নিশ্বাস ফেলল প্রিয়তার মুখে। গালে নাক ঘষতে ঘষতে হাস্কে কন্ঠে বলল—
— আরাম পেয়েছো, জান?
এই কথায় প্রচন্ড লজ্জায় প্রিয়তার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। আরো জোরে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
প্রণয় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। রক্তিম ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে উত্তপ্ত কণ্ঠে বললো—
— আমার চোখে চোখ রেখে বলো, কেমন ফিল করেছো?
প্রিয়তা লজ্জায় চোখ মেলতে পারলো না। কারণ এই মুখ সে কিছুতেই প্রণয় ভাইকে দেখাতে পারবে না।
প্রণয় লোভাতুর নয়নে তাকিয়ে প্রিয়তার রক্তিম ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। নিজের ৮৫ কেজির পুরো ভার ছেড়ে দিল প্রিয়তার উপর।
ঠোঁটে ঠোঁট পড়তেই শরীর বাকিয়ে কেঁপে উঠলো প্রিয়তা। দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল প্রণয়ের পিঠ। যদিও প্রশস্ত পিঠ তার দুই হাতের মধ্যে এলোনা।
তবে অদ্ভুতভাবে এই ৮৫ কেজি ওজনের ভার প্রিয়তার ৪৯ কেজির শরীর সয়ে নিলো অনায়াসেই।
সুখের দহনে দগ্ধ হতে থাকলো দুটো মন। মিনিট দশেক পর প্রিয়তার ওষ্ট ছেড়ে দিলেও প্রণয় কাতর কণ্ঠে বলল—
— আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না, জান। প্লিজ আমায় আটকা। নাহলে আমার এতো বছরের সব সাধনা, যন্ত্রণা বিফলে যাবে। আমার দেওয়া নিষিদ্ধ স্পর্শ কখনোই তোর জন্য সুখ বয়ে আনবে না। প্লিজ আটকা আমায়।
প্রিয়তা প্রণয়ের কথার মর্মার্থ কিছুই বুঝল না। আর তার কিছু বুঝতে ইচ্ছেও করল না। প্রণয়ের মাথাটা পড়ে আছে তার বুকের উপর। ৩৩ বছরের পুরুষ সে। সবসময় রুঢ় ব্যক্তিত্বের আবরণে ঢেকে রাখতে হয় নিজেকে। এভাবে কারো বুকে মাথা রেখে সুখের নিঃশ্বাস ফেলা হয় না তার। সে যে বুকে শুয়ে আছে, সেই বুকটা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও সে শান্তি পায় না। কোথাও না। এই নারীতে, এই স্পর্শে, এই গন্ধে, এই ভালোবাসায় জড়িয়ে তার মৃত্যু হোক—তবুও সুখের। তাই তো সেই পথকে বেছে নিয়েছে সে।
সে না চাইলে তার কেউ কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু সে কাউকে বাধা দিচ্ছে না। কারণ সে চায় সত্যি তার কিছু হোক যাতে সামনের মৃত্যুরসম দিনগুলো তাকে আর দেখতে না হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে সরকারের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যুবরণ করা অনেক সুখের। এসব চিন্তা মনে আসতেই প্রণয়ের সকল উত্তেজনা নিভে গেল। সে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল প্রিয়তার কোমল দেহ,যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।
প্রিয়তা আলতো হাতে প্রণয়ের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো আলগোছে সরিয়ে দিল। পরম ভালবাসায় ঠোঁট রাখলো সেখানে। একটা দুটো করে অজস্র ছোট ছোট চুমু আঁকতে লাগলো প্রণয়ের কপালে।
প্রচণ্ড সুখানুভূতিতে প্রণয়ের চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো। মন বলল—
— সময়টা এখানেই থেমে যাক, জান। আমি হারিয়ে থাকি তোর ভালোবাসায়।
প্রিয়তা চুমু খেতে খেতে নাক ডুবাল প্রণয়ের মাথায়। প্রণয়ের চুল থেকে একটা অনেক সুন্দর হেয়ার জেলের ঘ্রাণ আসছে।
প্রিয়তা প্রণয়ের চুলের ভাঁজে আঙুল ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে মাসাজ করতে করতে ডাকলো—
— প্রণয় ভাই…
— হুম…
— আপনি সত্যি কি এত বোকা?
— কেনো বলতো?
হ্যাঁ, বোকাই তো! একদম ফুল নাহলে আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি!
প্রণয় কণ্ঠ খাদে নামিয়ে আশ্চর্য হওয়ার ভান করে বলল,
— সত্যি ভালবাসিস?
প্রিয়তা তৎক্ষণাৎ অসম্মতি জানালো। আবেশিত কণ্ঠে বলল—
— উঁহু, শুধু আপনাকে নয়। আপনার সবকিছুকে ভালোবাসি—
প্রিয়তার নরম হাতের মাসাজে প্রণয়ের প্রচণ্ড রিলাক্স ফিল হচ্ছে। আরামের তোড়ে চোখ খুলতে মন চাচ্ছে না। সে মিচে আগ্রহ দেখিয়ে বলল—
— আচ্ছা, বল সবকিছু কি কি?
প্রিয়তা বাচ্চাদের মতো বলল—
— আপনার সবকিছু মানে আপনার সবকিছু! আপনার হাত, পা, নাক, মুখ, গলা, বুক, চোখ… সব আমার খুব খুব খুব প্রিয়! আর বিশেষ করে—
প্রিয়তাকে হুট করে থেমে যেতে দেখে অধৈর্য হলো প্রণয়। হাস্কে কণ্ঠে বলল—
— বিশেষ করে কী পাখি?
প্রিয়তা উষ্ণতায় কাঁপল। প্রণয়ের চুলের ভাজ থেকে হাত নামিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিল প্রণয়ের ডার্ক রেড ঠোঁট। মোহনীয় কণ্ঠে বলল—
— I’m the most addicted to this. Even I want this…
প্রিয়তার কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসল প্রণয়।
প্রিয়তাকে নিয়ে আবার সাইট চেঞ্জ করল। এবার নিজে নিচে শুয়ে প্রিয়তাকে পুনরায় বুকে জায়গা করে দিল। প্রিয়তার দীঘলকেশে হাত বুলাতে বুলাতে স্নেহ মাখা কণ্ঠে বলল—
— নিষিদ্ধ জিনিসের জন্য এত বায়না করিস কেন, জান? এতো কিসের টান তোর? বুঝিস না, তোর এই পাগলামি আমায় কতটা পোড়ায়!
প্রণয়ের গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পড়ল কানের লতিতে। সে এত ভারি ভারি শব্দের মর্মার্থ খুঁজল না।
প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরে আবদারের সুরে বলল—
— আমাকে বিয়ে করবেন প্রণয় ভাই? আমার না খুব ইচ্ছে আপনার বউ হওয়ার… আপনার সংসার করার।
প্রিয়তার এমন আবদারে কলিজা পুড়ে গেল প্রণয়ের। প্রিয়তার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে আবার বলল—
— বলুন না প্রণয় ভাই, বিয়ে করবেন আমায়?
প্রণয়ের বুকের ভেতর তুলপাড় শুরু হলো। সে কোনো জবাব দিতে পারল না, কেবল নিঃশব্দে প্রিয়তার ছোট্ট মাথাটা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল।
প্রিয়তা বুকে মাথা রেখে হঠাৎ বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল—
— আপনি ওই শকচুন্নিকে কেন বিয়ে করলেন, প্রণয় ভাই? ও কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর? ওই শালী চুন্নি কেন আমার থেকে আপনাকে কেড়ে নিল? আমার না হওয়া বাচ্চাদের বাবাকে ও কেন কেড়ে নিল?
প্রিয়তার মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিল প্রণয়। কপালে দীর্ঘ চুম্বন এঁকে বলল—
— ভাষা খারাপ করো না, জান পাখি।
প্রিয়তা একদম গুটিয়ে গেল প্রণয়ের বুকে। পুরুষালি বুকে পশম পশমে ভালোবাসা খুঁজে পেল মেয়েটা। বুকের গন্ধে মিশে গিয়ে আকুল কণ্ঠে প্রশ্ন করল—
— একটা প্রশ্ন করি প্রণয় ভাই?
_হুম…
প্রিয়তা কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করল। জড়িয়ে যাওয়া আহত কণ্ঠে বলল—
— আপনি ওই চুন্নিকে অনেক আদর করেন, তাই না প্রণয় ভাই? খুব খুব আদর করেন? অনেক অনেক ভালোবাসেন? যেভাবে কখনো আমাকে আদর করেননি, ওভাবেও করেন? রাতের গভীরে আপনার আদরে আদরে ভরিয়ে দেন তার দেহ?
এই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দিতে পারল না প্রণয়। চুপ করে রইল।
প্রণয়ের নীরবতায় আগুন ধরল প্রিয়তার কলিজায়। প্রিয় পুরুষের গলায় মুখ গুঁজে ঢুকরে কেঁদে উঠল প্রিয়তা। এই পুরুষ তার নয়, তবুও এই পুরুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বাঁচতে পারবে না প্রিয়তা। রক্ষিতার পরিচয়ে হলেও তাকে এই পুরুষের সাথেই থাকতে হবে।
এমন বিলাপে প্রণয়ের হৃদপিণ্ড জ্বলে গেল। জ্বালিয়ে দিতে মন চাইলো নিজের সর্বাঙ্গ। সে প্রিয়তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল—
— কাঁদিস না, জান। তুই এখনো অনেক ছোটো, অনেক কিছুই বুঝিস না। চুপ কর।
কিন্তু এতে প্রিয়তার কান্নার বেগ আরও বাড়ল। মুহূর্তেই ভিজে গেল প্রণয়ের শার্ট। প্রিয়তার এক একটা অশ্রুকণা প্রণয়ের বুকে ছুরির মতো আঘাত করছে।
— আপনি আমায় ভালোবাসেন না, সেটা আমি জানি। তারপরও খুউউব হিংসে হয় জানেন… যখন দেখি আপনি বড়ো আপুকে ভালোবাসছেন, আদর দিচ্ছেন। সহ্য করতে পারি না! আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।
— আচ্ছা প্রণয় ভাই, আমি কি আপনার কেউ না? আমাকে কি একটু-ও ভালোবাসা যেত না? আমি আজ নাহয় ছোট, কিন্তু সব সময় তো আর ছোটো থাকতাম না। এক সময় ঠিক বড়ো হয়ে যেতাম। তাহলে কেন আপনি আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলেন না? কেন অন্য কারো হয়ে গেলেন প্রণয় ভাই? শরীরটাই কি সব?
প্রিয়তার এত এত অভিযোগেও কোনো রকম প্রতিবাদ করল না প্রণয়।
শুধু বুক ভাঙলো এটা কথা ভেবে যে, পাঁচ বছর আগে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তার প্রাণপাখিটা কী পরিমাণ অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে।
কই, সে তো পারত না! তাইতো তার জীবনে এমন দিন আসার আগেই সে এই পৃথিবীকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। কারণ, সে তার জানকে এক মুহূর্ত ও অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না। অপরাধবোধের আগুনে তীব্র রক্তক্ষরণ হচ্ছে হৃদয়।
সে কিছু বলল না, শুধু প্রিয়তার ছোট্ট শরীরটা নিজের সবটুকু দিয়ে আড়াল করে ফেলল। প্রিয়তার নাকের ডগায় আদুরে স্পর্শ এঁকে মোলায়েম কণ্ঠে বলল—
— রূপ আর শরীরের মোহে পড়ে মানুষ, প্রেম তো হৃদয় অন্তঃপুরের জিনিস। কামের বসে তো রাতের রূপসীরাও সুন্দর। আর প্রেমের বসে শুধুই তুমি।
প্রিয়তার মাদক-আচ্ছন্ন অচল মস্তিষ্ক কথাটা ধরতে পারল না। তবে জেদ ধরে বলল—
— সে যাই হোক, যত শাঁকচুন্নিই থাকুক, আমি আপনার সব! আমি আপনার বউ। একবার মিষ্টি করে বউ ডাকুন!
প্রিয়তার কথায় হেসে ফেলল প্রণয়। ওর চিকন খাড়া নাক টেনে দিয়ে বলল—
— আমার বউ হলে আজীবন দুঃখ-ব্যথিত কিছুই মিলবে না, রক্তজবা।
কিন্তু প্রিয়তা নাছোড়বান্দা। এসব শুনলই না। জেদ ধরে বলল—
— না! প্রয়োজনে আপনাকে এক্ষুনি বিয়ে করব, তবু আপনার মুখে “বউ” ডাক শুনেই ছাড়ব!
প্রণয় মৃদু হাসি দিয়ে বলল—
— আচ্ছা, বিয়ে করবি কীভাবে শুনি?
প্রিয়তা প্রণয়ের খুঁচা খুঁচা দাড়িযুক্ত গালে কষে একটা চুমু খেয়ে আগ্রহ নিয়ে বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল—
— আপনি কবুল বলবেন, আমি কবুল বলব, ব্যাস! বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর বাসর করব। তারপর আমি আর আপনি মিলে মুরগির বাচ্চার মতো একঝাঁক ছানা ফুটাবো।
প্রিয়তার কথায় শব্দ করে হেসে উঠল প্রণয়। প্রিয়তার গাল টেনে দিয়ে বলল—
— পাকা বুড়ি!
প্রিয়তা নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল—
— পাকা বলবেন না! যা বলছি তাই বলুন… বলুন!
প্রণয় ওর হাতের উল্টো পৃষ্ঠে চুমু খেয়ে বলল—
— বলব না, কারণ মুরগির বাচ্চার মতো একঝাঁক বাচ্চা পয়দা করার মতো অত জোর তোমার গায়ে নেই, বেবি।
প্রিয়তা প্রণয়ের বুকে কিল মেরে বলল—
— কখনো আদর দিয়ে দেখেছেন পারব কি না? ছ্যাহ! আপনাকে বলেই বা কী লাভ! বাচ্চা পয়দা করার জন্য আদর করতে হয় বলতে বলতে থেমে প্রিয়তা ভ্রু বাঁকিয়ে বলল—
— আমার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে!
— কী?
প্রিয়তা আবারও ভ্রু নাচিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে বলল—
— সত্যি বলুন, আপনার মেশিনে সমস্যা, তাই না? আমি আগেই বুঝতে পেরেছি।
প্রিয়তার কথায় হুট করে কাশি উঠে গেল প্রণয়ের।
লাফিয়ে উঠল প্রিয়তা। প্রণয়ের পিঠে আলতো চাপড় দিতে দিতে বলল—
— আরে আরে, কী হয়েছে? পানি খাবেন?
প্রণয় নিজেকে ধাতস্থ করল। আচমকাই প্রিয়তার ঠোঁট চেপে ধরে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলল—
— আমার মেশিনে সমস্যা তাই না? আয় তোকে দেখাই!
প্রণয়কে রাগাতে কথাটা বলেছিল প্রিয়তা। কিন্তু ব্যাটা এভাবে ক্ষেপে যাবে, ভাবতেই পারেনি।
বেচারি ভয়ার্ত চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে দ্রুত দুই পাশে মাথা নাড়ল। ভয়ে পিত্তি মাথায় উঠে গেছে মেয়েটার। সে তোতলিয়ে বলল—
— না, না, না… থাক! আজ দেখব না!
এই কথায় প্রণয় আরো চটে গেল। প্রিয়তাকে চেপে ধরে বলল—
— এখন দেখবি না কেন? আজ তোকে দেখতেই হবে!
প্রিয়তা—
— নাআআআআআ! বলে প্রণয়ের বুকে মুখ লুকাল।
ছেলেরা সব সহ্য করতে পারলেও কেউ তাদের পুরুষত্বের দিকে আঙুল তুলবে এটা তারা কখনোই মেনে নেয় না।
প্রিয়তার অবস্থা দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল প্রণয়। হুঁশিয়ারি বলল—
— মেশিন নিয়ে আর দ্বিতীয় দিন খোটা দিবি না! নাহলে এমন আদর করব যে ১০ সেকেন্ড পরে কান্না করে দিয়ে বলবি “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি!”
প্রণয়ের কথায় এবার আর কোনো জবাব দিল না প্রিয়তা। সে সত্যি “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি” অবস্থায় যেতে চায় না। তাই বুকের উপর চুপচাপ ঘাপটি মেরে পড়ে রইল। সময় গড়ানোর সাথে সাথে প্রিয়তার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে, আর কেমন শীত শীতও লাগছে। বাহিরের তুষারঝড়ের তাণ্ডব বাড়ছে ক্ষণে ক্ষণে।
শীতের হাত থেকে বাঁচতে বুদ্ধি করল প্রিয়তা। একটু শান্তিতে ঘুমানোর লোভে বিড়ালছানার মতো শুঁরশুঁর করে ঢুকে পড়ল প্রণয়ের শার্টের ভেতর। উষ্ণ বুক-পেট আর শরীরের তাপ গায়ে লাগতেই ভীষণ আরাম বোধ করল প্রিয়তা। সাথে সাথে একটা শির শিরে-কম্পন ও ছড়িয়ে পড়ল শরীর জুড়ে।
এই ছোট্ট কাজে প্রণয় বুকের ভেতর চরম সুখ অনুভব করল। ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকল প্রিয়তার মাথায়।
প্রিয়তা আরো কিছুক্ষণ উল্টোপাল্টা বকাবকি করে একসময় গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে গেল। প্রণয় পরম স্নেহে আরো দুটো চুমু খেল প্রিয়তার কপালে। মনে মনে বলল—
— তুই ভুল জানিস, জান। আমার মন আর শরীর কোনোটাই অন্য কারো নয়। সব তোর! তোর প্রণয় ভাই পুরোটাই তোর। আমাকে কবরে না শোয়ানো পর্যন্ত এই মন-শরীরের একমাত্র মালকিন তুই!
— তুই আমার সকল সুখের আধার। আমার বেঁচে থাকার কারণ, মরে যাওয়ার কারণ! আজকের রাতটাই হয়তো আমাদের সুখের অন্তিম রাত। এমন রাত হয়তো আমার জীবনে আর কোনো দিনও আসবে না। কিন্তু তোর এই উপহার দেওয়া রাতটা আমার বুকে পুষে রাখব শেষক্ষণ পর্যন্ত।
বলে বহু বছর পর একটা সুখের নিঃশ্বাস ফেলল প্রণয়। এই ছোট্ট দেহের ভারটা অস্তিত্বে পেলে অন্য সকল ভার আপনাআপনি সরে যায়।
মানসিক শান্তিতে প্রণয়েরও চোখ লেগে আসছে। জানা নেই, এমন ঘুম আর কখনো আসবে কিনা! তাই প্রণয় এই শেষ শান্তিটুকু মিস করতে চায় না। এক হাতে প্রিয়তাকে বুকে আগলে, অন্য হাতে পাশে সেন্টার টেবিল থেকে ফোনটা নিল।
ঘুমঘুম চোখে বাঁ হাতে কিছু একটা টাইপ করে পুনরায় ফোন যথাস্থানে রেখে দিল।
নিজের বলিষ্ঠ পুরুষালি দুই হাতে নরম শরীরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল।
এবং ১ মিনিটের মধ্যে সে-ও ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
কত সুখী দুজন! কিন্তু এই সুখ কি তাদের কপালে সইল?
— জামাই বাবু! জামাই বাবু! ও জামাই বাবু, উঠে পড়ুন! বিশাল কাণ্ড ঘটেছে!
শুদ্ধ পাশ বালিশ বুকে জড়িয়ে মটকা মেরে পড়ে আছে। প্রিথমের চেঁচামিচির সবই সে শুনতে পাচ্ছে, কিন্তু জবাব দিতে মন চাচ্ছে না।
প্রিথম এবার বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। শুদ্ধর কানের কাছে মুখ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল—
— ও জামাই বাবু, উঠুন না! না হলে হাতে হারিকেন আর পিছনে বাঁশ হয়ে যাবে!
কানের কাছে এমন চিৎকার দেওয়ায় ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো শুদ্ধ। থতমত খেয়ে তাকালো প্রিথমের দিকে। কণ্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলল—
— কী শালা! এই মাঝ রাতে চেঁচাচ্ছ কেন? বউকে কাছে না পেয়ে কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
প্রিথম এবার আসন পেতে বসলো শুদ্ধর সামনে। মুখ বাঁকিয়ে বলল—
— আমি শালা নই, সমন্ধী! আর বউ নিয়ে খোঁটা দিও না। জামাই বাবু, বউয়ের মর্ম তোমার মতো ভার্জিন বাবুরা বুঝবে না।
কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়া মাথা ঝিমঝিম করছে শুদ্ধর। সে বিরক্ত কণ্ঠে বলল—
— এই মাঝ রাতে কি আমার ভার্জিনিটির খিল্লি উড়াতে এসেছ, সমন্ধী?
প্রিথম বিজ্ঞের মতো মাথা দুলিয়ে বলল—
— হাদিসে আছে, অবিবাহিত নারী-পুরুষরা হচ্ছে মিসকিন আর এতিম। মিসকিনদের খিল্লি এই প্রিথম শিকদার উড়ায় না।
শুদ্ধ হাই তুলে বিরক্ত মুখে বলল—
— তোমার হাদিসের বাণী সকালে শুনব, শালা বাবু। এখন ঘুমাতে দাও।
বলে শুয়ে পড়তে নিল শুদ্ধ। সাথে সাথেই তাকে আটকে দিল প্রিথম। রসিকতা ছেড়ে সিরিয়াস মুখে বলল—
— এখন ঘুমানোর সময় নয়, জামাই বাবু। বিরাট ঝামেলা হয়ে গেছে।
প্রিথমের সিরিয়াস কণ্ঠ শুনে সোজা হয়ে বসলো শুদ্ধ। ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল—
— কী ঘটেছে?
প্রিথম শুদ্ধর হাতে নিজের ফোনটা তুলে দিল। মোবাইলের দিকে ইশারা করে বলল—
— দেখো।
শুদ্ধ চোখ কচলে ঝাপসা চোখে তাকালো মোবাইল স্ক্রিনে।
চোখের সামনে জরুরি সংবাদে ঝলসে উঠল। নিচে লাল ব্যানারে মোটা অক্ষরে লেখা উঠল—
“NATIONAL EMERGENCY – ASR LOCATED”।
কানাডিয়ান প্রেসিডেন্ট দাঁড়িয়ে আছেন মাইকের সামনে। মুখ থমথমে, চোখে রাগের জমাট বাঁধা ক্ষোভ। চারপাশে সশস্ত্র মিলিটারি অফিসাররা প্রস্তুত অবস্থায় দাঁড়িয়ে। পেছনে সাইরেন বাজছে নিরবচ্ছিন্ন।
প্রেসিডেন্টের গম্ভীর কণ্ঠস্বর চারদিকের কোলাহলমুখর পরিবেশ নিস্তব্ধ করে দিল। তিনি গর্জে উঠে বললেন—
— “দেশবাসী… আজ আমি এমন এক খবর নিয়ে হাজির হয়েছি, যা বিশ্ববাসীকে জানানো আমার কর্তব্য। মাত্র কুড়ি মিনিট আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বারো জন শীর্ষ বিজ্ঞানীর কাটা মাথা… আর শরীরের টুকরো টুকরো অংশ… আমার ভবনের সামনে ফেলে গেছে কেউ।”
এক মুহূর্তের নীরবতার পর স্ক্রিনে ভাইরাল ফুটেজের ব্লার করা ছবি ফুটে উঠল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সাদা চাদর। ভিড়ের মধ্যে চিৎকার, আতঙ্ক। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে দাউ দাউ আগুনের মতো শিরোনাম— #JusticeFor12Scientists।
প্রেসিডেন্ট টেবিলে মুষ্টি মেরে দাঁত চেপে বললেন—
— “ASR-এর দুঃসাহস সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। আজকে আমাদের মিলিটারির পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করেছে।”
স্ক্রিনে হঠাৎ দৃশ্য পাল্টে গেল। আকাশে যুদ্ধবিমান গর্জে উঠছে। আর্মড হেলিকপ্টার বরফে ঢাকা পাহাড়ের দিকে শোঁ শোঁ করে উড়ে যাচ্ছে। ট্যাঙ্কের সারি এগিয়ে চলেছে। এ যেন মৃত্যুর নীরবতা, এক ভয়াবহ ধ্বংসের পূর্বাভাস। বড়সড় GPS স্ক্রিনে লাল বিন্দু ফ্ল্যাশ করছে— ASR-এর অবস্থান শনাক্ত।
প্রেসিডেন্টের চোখে তখন আগুন।
— “দেশবাসী, শুনে রাখুন! ASR-এর লোকেশন আমরা ডিটেক্ট করেছি। স্পেশাল ফোর্স ইতিমধ্যেই আক্রমণে নেমেছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এর পর এই দুনিয়ায় ASR-এর অস্তিত্ব থাকবে না। আতঙ্কমুক্ত হবে প্রতিটা দেশ। আজ রাতের পর দুনিয়া মুক্তির স্বাদ পাবে। অপেক্ষা করুন। সুখবর খুব শিগগিরই আসছে।”
তার কণ্ঠ যেন বজ্রের মতো কেঁপে উঠল—
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬১
— “এবার শেষ হবে সব।”
স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে এল। হঠাৎই নিস্তব্ধতা নেমে গেল কক্ষে। পর মুহূর্তেই ফোন স্ক্রিন ঝাঁকুনি খেয়ে অন্ধকারে ঢেকে গেল। নিস্তব্ধতার মধ্যে কেবল একটিই শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো—
ভিডিওটা শেষ হতেই শুদ্ধর হাত থেকে ফোনটা আপনা-আপনি পড়ে গেল। বুকে রক্ত জমাট বেঁধে গেল ভয়ে।
— Ohhhh shittt!