ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৩ (২)
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
কয়েক মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরও আবির্ভাব কোনো সাড়া দিচ্ছে না দেখে অবাক হলো শ্বেতা।
শাড়ি পরা শেষে, আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজার চিটকিনি খুলে দিলো।
সাথে সাথেই কোমরে হেঁচকা টান অনুভব করলো শ্বেতা।
ভয়ে চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো।
১ সেকেন্ডের মধ্যেই পিঠ ঠেকলো ঠান্ডা দেওয়ালে।
ভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠলো তনু শরীর।
সেকেন্ড মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কিছু হলো না, তখন ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো শ্বেতা।
সাথে সাথেই একজোড়া গভীর নেশালো চোখের দৃষ্টি সরাসরি গিয়ে শ্বেতার বুকে বিধল।
আবির্ভাবের চোখের চাহুনি বর্তমানে মারাত্মক নেশালো।
সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্বেতার দিকে।
শ্বেতা ওই চোখে এক সেকেন্ডও তাকিয়ে থাকতে পারলো না।
শ্বেতার থরথর করে কাঁপতে থাকা গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট দুটো যেন পাকা লাল আঙুর।
গাল দুটো রক্তাভ, বন্ধ চোখের ভারী পাপড়ি, পানপাতা মুখ আর অরূপ রূপের বাহার।
খোলা চুলে, লাল পাড় সাদা শাড়িতে, মোলায়েম ফর্সা শরীরটা মাখনের মতো লোভনীয় লাগছে।
আবির্ভাবের মন চাচ্ছে মাখনের মতো শরীরটার যত্রতত্র বিরাট বিরাট কামড় বসাতে।
আবির্ভাব নিজের ভাবনা দেখে শুষ্ক ঢোক গিললো।
মনে মনে আর্তনাদ করে বলল—
“মারাত্মক জ্বালাময়ী নারী, তুমি এত সুন্দর হতে কে বলেছিলো তোমায়? এখন যে আমার নিজেরকে সামলানো মুশকিল!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শ্বেতা আবির্ভাবকে ওভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় মিইয়ে গেলো।
ফলে রক্তিম গাল দুটোতে আরো খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত লালিমা লেপ্টে গেলো।
আবির্ভাব এসব অবলোকন করে দিশেহারা হচ্ছে।
সে আর সহ্য করতে পারলো না।
শ্বেতার মসৃণ গালে বৃদ্ধাঙ্গুলি বুলিয়ে আকুল কণ্ঠে বললো—
“তোমাকে যদি একটু ছুঁয়ে দিই, তুমি কি খুব বেশি রাগ করবে, মাই লাভ? বিশ্বাস করো, বেশি না, একটুখানি!”
আবির্ভাবের কথায় আকস্মিক বোকা বনে গেল শ্বেতা।
অবুজ চোখে তাকালো আবির্ভাবের নেশা-জড়ানো চোখে।
আবির্ভাবের চোখ-মুখে কামনার জোয়ার।
আবির্ভাব আর নিজের মনের বাসনা চাপতে পারলো না।
নিজের ডার্ক ব্রাউন ঠোঁট জোড়া ধীরে ধীরে ডুবিয়ে দিলো শ্বেতার তুলতুলে গলায়।
শাড়ির ফাঁক গলিয়ে হাতের আঙুলগুলো আলতো করে চালিয়ে দিলো উন্মুক্ত উদরে।
আচমকা এমন আক্রমণে আতকে উঠলো শ্বেতা।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সারা শরীরের রক্তপ্রবাহে তীব্র বিদ্যুতিক শিহরণ ছুটে গেলো।
পুরুষালী ছোঁয়ায় নাজুক শরীরখানা মিইয়ে গেলো।
হাত-পা সহ সারা শরীর অনুভূতির তোড়ে কাঁপতে লাগলো থরথর করে।
নিজের অজান্তেই হাত চলে গেলো আবির্ভাবের চুলের ভাঁজে।
আবির্ভাবের অসংযত ঠোঁটের স্পর্শে নিঃশ্বাসটুকু নাকের কাছে এসে আটকে গেলো।
শ্বেতার তীব্র অস্থিরতায় ছটফট করে উঠলো মেয়েটা।
এমন অনুভূতি সে তার ১৯ বছরের জীবনে আগে কখনো অনুভব করে নি।
আবির্ভাবকে জড়িয়ে ধরেছে বহুবার, তবু এমন করেনি।
শ্বেতার শরীরের মৃদু কাঁপুনিতে পুরুষালি উন্মাদনা ছড়াচ্ছে সংযমী দেহের শিরায় শিরায়।
আবির্ভাব দুই হাতে দেওয়ালের সাথে কোমর ঠেসে ধরলো।
শ্বেতার কম্পনরত গোলাপি ঠোঁটজোড়া আবির্ভাবের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
সে গালে হাত রেখে বুড়ো আঙুল দ্বারা শিমুল তুলোর মতো কোমল ঠোঁটে দুই একবার স্লাইড করলো।
মনে মনে বলল—
“এত সফট কিছু হয়? ওই আকর্ষণীয় গোলাপি ঠোঁটজোড়ার ক্রমবর্ধমান কম্পন দেখে প্রলুব্ধ হলো আমার মন।”
কোনো এক অদৃশ্য চুম্বকীয় আকর্ষণে ঠোঁট ডুবালো শ্বেতার কোমল ঠোঁটের ভাজে।
এতো গভীর স্পর্শে শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো শ্বেতার।
শরীর অবস হয়ে আসলো এক নিমিষে।
আবির্ভাবের চুলের ভেতর থাকা হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো আবির্ভাবের চুলের মুঠি।
শ্বেতা মাত্র দুই মিনিটে হাড়েহাড়ে বুঝে গেলো, এই মানুষটার ভালোবাসার ধরন অনেক বেশি অ্যাগ্রেসিভ।
তাই লাভ বাইটগুলো একটু বেশি যন্ত্রণাময়।
তবু ঠোঁট কামড়ে হজম করে নিলো শ্বেতা।
আবির্ভাবের পাগলামো বাড়ছে।
সে বেশি পাগল হতে চায় না।
নয়তো এই কোমল শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে মুহূর্তেই।
আবির্ভাব হেঁচকা টানে শ্বেতাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে জ্বলন্ত কণ্ঠে বললো—
“আজ ছেড়ে দিচ্ছি মাই লাভ, কিন্তু একদিন এমন আসবে, যেদিন এক চুল পরিমাণও আর ছাড় পাবেনা তুমি। ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যাবে আমার মধ্যে।”
“আজকের টুকু ট্রেইলার ছিলো, মুভিটা তোলা রইলো।”
শ্বেতা লজ্জায় মুখ লুকালো আবির্ভাবের বুকে।
আবির্ভাব শ্বেতাকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।
ঘরের উজ্জ্বল আলোয় দেখতে পেলো স্বর্গরাজ্যের কোনো এক অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে তার ঘরে।
যার কোমল স্নিগ্ধ চেহারার মাধুর্যে আবির্ভাবের সাদা-কালো রঙের ঘরটা আজ রঙিন লাগছে।
গলায় জল জল করছে আবির্ভাবের আঁকা ক্ষত চিহ্নগুলো।
তবে কিছু একটা ভেবে তৎক্ষণাৎ ভ্রু কুঁচকে ফেললো আবির্ভাব।
মনে মনে বললো—
“এতো ভারী অন্যায়! আমি কিছু দিলাম, বিনিময়ে আমি কিছু পাবো না?”
শ্বেতা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তৎক্ষণাৎ ঝড়ের বেগে সামনে এসে দাঁড়ালো আবির্ভাব।
নিচু হয়ে নিজের শার্টের কলার সরিয়ে গলা ইশারা করে বললো—
“Now bite me.”
এমন উদ্ভট কথায় আহাম্মক বনে গেলো শ্বেতা।
মৃদু আওয়াজে বললো—
“Whatt?”
“Yes, bite me my love.”
শ্বেতা আবির্ভাবের বুকে মৃদু ধাক্কা দিলো।
কণ্ঠে চাপা তেজ ফুটিয়ে তুলে বললো—
“পাগলের সাথে থাকতে থাকতে আপনারও কী পাগলামি দেখা দিচ্ছে? দিলে বলুন, পাগলা গারোদের দিয়ে আসবো।”
আবির্ভাব এই ভোল বদল দেখে পুনরায় ভ্রু কুঁচকালো।
একটু আগেই তো লজ্জায় মিশে যাচ্ছিল, এখন আবার ধমকাচ্ছে!
আসলে মেয়েমানুষের মন বোঝার থেকে জিলাপির প্যাচ ছাড়ানো অনেক সুজা।
আবির্ভাব একটু ভাব নিয়ে বললো—
“আমি কাউকে ফ্রি-তে কিছু দিই না। তুমি আমার কাছ থেকে কিছু নিয়েছো, তাই আমাকেও কিছু তোমায় ফেরত দিতে হবে।”
শ্বেতা কপাল কুঁচকে বললো—
“কি নিলাম আপনার কাছ থেকে?”
আবির্ভাব আবার লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গ ধরে বললো—
“ইশশশ! এর মধ্যেই ভুলে গেলে মাই লাভ? একটু আগে যা যা করলাম, তা কি আবার রিপিট করবো? আমার কিন্তু কোনো প্রোবলেম নেই।”
শ্বেতা পুনরায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আবির্ভাব ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
শ্বেতার চারপাশে ঘুরঘুর করতে করতে বললো—
“লজ্জা পেলে তো হবে না মাই লাভ। আমার কাছ থেকে কত কিছু নিয়েছো, তা না হয় না-ইবা চাইলাম লাভের অংশ, না-দাও, কিন্তু মূল তো দেবে!”
শ্বেতা বললো—
“আপনি আসলে কি চান, বলুন তো?”
“Love bite.”
“কীইই?”
“হ্যাঁ, কড়া করে দাও।”
এই যে এখানে বলে, নিজের গলা দেখিয়ে দিলো আবির্ভাব।
শ্বেতা নিজের অবাকত্ব ছেড়ে বাঁকা হাসলো।
ভ্রু নাচিয়ে বললো—
“আমাকে হালকা ভাবে নেবেন না ডক্টর রায় চৌধুরী। আমার কামড় দিলে মাংস তুলে নেবো।”
“উফফ! মনজুর, আমার রক্তমাংস সব খেয়ে ফেলো।”
শ্বেতা পুনরায় বাঁকা হাসলো।
আবির্ভাবের চোখে চোখ রেখে একদম কাছে চলে এলো।
আবির্ভাবের পায়ের পাতায় পা দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ালো।
আবির্ভাব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্বেতার চোখের গভীরে।
শ্বেতা দুই হাতে আবির্ভাবের শার্ট চেপে ধরে মাথা নিচু করলো।
বিশাল একটা “হা” করে দাঁত বসিয়ে দিলো আবির্ভাবের গলায়।
আবির্ভাব ব্যথার তীব্রতায় চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো।
ব্যালান্স করতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শ্বেতার কোমল দেহ। তবে বেশি জুড়ে ধরল না, যদি ব্যথা পায়।
শ্বেতা কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে তো ধরেই রেখেছে, যেন মাংস তুলে নেওয়ার অপেক্ষা।
তবু এতো ব্যথা পেয়েও ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবির্ভাব।
ব্যথাতুর কণ্ঠে বললো—
“I like it.
সাথে সাথেই ছেড়ে দিলো শ্বেতা, ব্যস্ত হয়ে পড়লো আবির্ভাব কতটা ব্যথা পেয়েছে দেখতে।
শ্বেতার তারাহুরো দেখে আবির্ভাব মুখ বেঁকিয়ে বললো—
“ব্যথা দিয়ে আদর দেখাচ্ছো মাই লাভ?”
আবির্ভাব অনেক ব্যথা পেয়েছে বুঝতে পেরে অনুশোচনায় শ্বেতার চোখ টলমল করে উঠলো। সে আবির্ভাবকে ব্যথা দিতে চায়নি।
আবির্ভাব হেসে বললো—
“সব ব্যথায় ব্যথা থাকে না মাই লাভ। বাট আরেকটু জোরে দিতে পারতে।”
শ্বেতার ভীষণ অভিমান হলো আবির্ভাবের উপর।
“কি দরকার ছিল কামড়াতে বলার? এখন কত ব্যথা পেয়েছো…”
আবির্ভাব আরো কিছু বলতে চাইলো, তবে শুনলো না শ্বেতা। মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লো বিছানার উপর।
অভিমানে উঁচু হওয়া গাল দুটো দেখে আবির্ভাবের ভীষণ আদর আদর পেলো, তবে নিজেকে সামলে নিলো সে।
আরেকটু এগিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখা আরেকটা কাগজে মুড়ানো প্যাকেট হাতে নিলো।
এক টানে কাগজের টুকরাটা ছিঁড়ে ভিতরের বস্তুটা হাতে নিলো। ধীরে পায়ে এগিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসলো শ্বেতার পায়ের কাছে।
আচমকা পায়ে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো শ্বেতা। তড়িৎ বেগে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো।
আবির্ভাব ওর বা-পাটা নিজের উরুতে রেখে যত্ন সহকারে আলতা পরিয়ে দিচ্ছে।
আবির্ভাবের গায়ে নিজের পা দেখে হতচকিয়ে গেলো শ্বেতা। ঝটপট সরিয়ে নিতে চাইলে পা টেনে ধরলো আবির্ভাব।
চাপা বিরক্তি প্রকাশ করে বললো—
“ডিস্টার্ব করোনা মাই লাভ।”
শ্বেতা অনুরোধ করে বললো—
“প্লিজ, পা ছাড়ুন আবির্ভাব। আপনি আমার গুরুজন, আপনাকে দিয়ে পা ধরালে আমার পাপ হবে।”
আবির্ভাব মৃদু হেসে বললো—
“অতচ এই পায়ে চুম্বন করা আমার সাধনা।”
আর কিছু বলতে পারলো না শ্বেতা। আবির্ভাব ফর্সা দুই পায়ে সুন্দর করে গাঢ় লাল রঙের আলতা পরিয়ে দিলো।
দুই পা একত্র করে ঠোঁট চেপে ধরলো, সময় নিয়ে শব্দ করে চুমু আকলো।
চুমুর শব্দে কেঁপে উঠলো শ্বেতা।
আবির্ভাব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শ্বেতার হাত ধরলো। কোমল কণ্ঠে বললো—
“আজ যদি তোমার কাছে কিছু চাই, আমায় দেবে মাই লাভ?”
শ্বেতা অবুঝ চোখে তাকালো আবির্ভাবের দিকে।
আবির্ভাব হাতের কব্জি চেপে ধরে বললো—
“চলো আমার সাথে।”
শ্বেতাও কোনো দ্বিরুক্তি ছাড়াই আবির্ভাবের পিছু পিছু গেলো।
আবির্ভাব ডাইনিং রুম পেরিয়ে অন্য একটা ঘরে প্রবেশ করলো।
তবে সেই ঘরের চৌকাঠে আটকে গেলো শ্বেতা। ভিতরে প্রবেশ না করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
হাতে টান অনুভব করাতে পিছন ফিরে প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো আবির্ভাব।
শ্বেতা মাথা নিচু করে নিলো, নত কণ্ঠে বললো—
“ক্ষমা করো আবির্ভাব। আমি এজন বিধর্মী হয়ে তোমাদের উপাসনা কক্ষে প্রবেশ করতে পারবো না। এতে হয়তো তোমার উপাসনালয়ের অপমান হতে পারে।”
শ্বেতার কথায় হাসলো আবির্ভাব। শ্বেতার কাছে এসে দাঁড়ালো।
আবির্ভাবদের কুলদেবী মা ভবানীর দিকে তাকিয়ে আবির্ভাব দৃঢ় কণ্ঠে বললো—
“মায়ের কাছে তার সকল সন্তানই সমতুল্য। ধর্ম-বর্ণ মানুষের তৈরি বিভেদ মানুষের তৈরি। কিন্তু মা তার সন্তানদের মধ্যে কখনোই বিচার করেন না। মায়ের নিকট এই সৃষ্টির সকল প্রাণীকুল তার সন্তান সমতুল্য।”
তারপর শ্বেতার দিকে তাকিয়ে বললো—
“তোমার ধর্ম কি বলে আমি জানি না, তবে তুমি নিশ্চিন্তে প্রবেশ করতে পারো।”
তীব্র দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জর্জরিত হলো শ্বেতা।
শ্বেতাকে ভাবনায় তলিয়ে যেতে দেখে আবির্ভাব তাকে হেঁচকা টানে কোলে তুলে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করলো।
হতচকিয়ে গেলো শ্বেতা।
আবির্ভাব তাকে মা ভবানীর সামনে এনে ধর করালো।
শ্বেতা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবির্ভাবের দিকে।
আবির্ভাব শ্বেতার দুই গালে হাত রেখে রুদ্ধ কণ্ঠে বললো—
“আমি জানি না সামনে কি হবে বা কি হতে চলেছে। কিন্তু আমি তোমাকে আমার পূর্ণ সহধর্মিণী হিসেবে দেখতে চাই মাই লাভ। তোমাকে আমার ঘরে আমার বউ রূপে দেখতে চাই। হবে কি আমার ঘরণী? আজ এখুনি মা ভবানীকে সাক্ষী করে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
শ্বেতা চমকে তাকালো আবির্ভাবের দিকে।
“এসব কি বলছে আবির্ভাব?”
শ্বেতা ঢোক গিলে বললো—
“কি বলছো আবির্ভাব? এভাবে কি করে?”
আবির্ভাব ওর চোখে চোখ রেখে কাতর কণ্ঠে বললো—
“আমি জানি না এভাবে বিয়ে হবে কি হবে না, বা এভাবে আদৌ বিয়ে হয় কিনা। কিন্তু আমি তোমাকে এখুনি বিয়ে করতে চাই।”
শ্বেতা তোতলাতে লাগলো—
“কিন্তু আবির্ভাব, এটা হয় না… বুঝার চেষ্টা ক…”
শ্বেতাকে কথা সম্পন্ন করতে দিলো না আবির্ভাব।
তর্জনী আঙুল দ্বারা শ্বেতার ওষ্ঠ চেপে ধরলো।
তীব্র অধিকার বোধে গর্জে উঠে বললো—
“শহহহহ! আমি কিছু শুনতে চাই না। I am aged to marry you right now.”
শ্বেতা অসহায় চোখে তাকালো আবির্ভাবের দিকে।
এবার ওর অরুণ দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলো আবির্ভাব।
মা ভবানীর পায়ের কাছে রাখা শাখা-পলার জোড়া তুলে কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করলো।
অতঃপর সুন্দর করে লাল-সাদা রঙের দুটো দুটো চারটা চুড়ি শ্বেতার হাতে পরিয়ে দিলো।
কিচ্ছু বলতে পারলো না শ্বেতা, কেবল নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো।
মন থেকে সেও হয়তো বাধা দিতে চায় না।
আবির্ভাব এবার মায়ের পায়ে ছোঁয়ানো সিঁদুরের কৌটো থেকে এক চিমটি সিঁদুর তুলে শ্বেতার ফাঁকা সিঁথি রাঙিয়ে দিলো।
এক নিষিদ্ধ প্রাপ্তির সুখে চোখ বন্ধ হয়ে এলো শ্বেতার।
বন্ধ চোখের কর্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুই ফোঁটা সুখের অশ্রু।
আবির্ভাব বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
শ্বেতার হাতে শাখা-পলা, সিঁথি ভর্তি সিঁদুর দেখে আবির্ভাবের বক্ষপিঞ্জর কেঁপে উঠলো।
কেমন অনুভূতি হলো তা হয়তো প্রকাশের ভাষা নেই আবির্ভাবের।
সিঁদুর পরায় পুরো মুখটাই পাল্টে গেছে।
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৩
লাল পাড়ে সাদা শাড়ি, হাতে শাখা-পলা আর সিঁথি ভর্তি সিঁদুরে রাঙানো রমণীকে দেখে আজ প্রথমবারের মতো আবির্ভাবের বউ মনে হলো—নিজের বউ।
শ্বেতা দাঁড়িয়ে থেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ঝড়ের বেগে আঁচড়ে পড়লো আবির্ভাবের বুকে।