ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৪ (২)

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৪ (২)
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

সাজিদ শিকদার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন—”ঠিক আছে আম্মা, আপনার জন্য আমি পাত্রের ব্যবস্থা করে দেবো।”
প্রিয়তা তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বললো—”শুধু পাত্রের ব্যবস্থা নয়, আমার জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”
“ঠিক আছে আম্মা।”
“হুম।” বলে উঠে পড়লো প্রিয়তা। ধপাধপ পা ফেলে যেভাবে এসেছিলো, ওভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
হাফ ছেড়ে বাঁচলেন সাজিদ শিকদার। কিন্তু মেয়ের এমন লাগামহীন জেদের কারণ বুঝলেন না। উনার জানা মতে মেয়ে উনার বিয়েতে রাজি হওয়ার কথা না, সেখানেই নিজেই বিয়ে করার জন্য বাপের গলা টিপে ধরছে।
কিন্তু মনে মনে বললেন—”আল্লাহ সদয়, যা হয় ভালো জন্যই হয়। এখন আমার মেয়ের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে আমার মেয়েটা বেঁচে যাবে। আল্লাহ সব কিছু যেনো ভালোয় ভালোয় হয়ে যায়।”

প্রিয়তা ঘরে ঢুকে ধারাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। রাগে, দুঃখে, কষ্টে, অভিমানে কখনো তার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কখনো প্রণয়কে নিজের হাতে খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে, কখনো আবার প্রহেলিকার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে মন চাইছে, কখনো আবার নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে — অদ্ভুত মোড সুইংস।
প্রিয়তা রাগে নিজেই নিজের চুল টেনে ধরলো, বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলে বললো—
“খুব অহংকার আপনার তাই না মিস্টার আবরার শিকদার প্রণয়? সহজলভ্য বলে মূল্য বোঝেন না, কিন্তু এই আপনি একদিন আমার জন্য কাঁদবেন, খুব কাঁদবেন। দেখে নিয়েন, এটা আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি না, কিন্তু এটা আপনার প্রাপ্য। আমাকে ঠিক কতটা যন্ত্রণা দিচ্ছেন সেটা অন্তত একবারের জন্য হলেও আল্লাহ আপনাকে বোঝার তৌফিক দান করুন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়তা গড়িয়ে পড়া চোখের জল দুই হাতে মুছে বিছানায় গিয়ে বসলো। রাত পোহালেই ঈদ, সকলের কত আয়োজন, কিন্তু প্রিয়তার কোনো আয়োজন নেই, সাজসজ্জার তোড়জোড় নেই। নেই কোনো রং, নেই কোনো আনন্দ। হায় আফসোস! চার বছর আগের প্রিয়তার জীবনে রঙের কমতি ছিলো না, সুখের কমতি ছিলো না, ভালোবাসার কমতি ছিলো না। মনে একটু ব্যথা পেলেই কারো কাছে অভিমানের ঝুড়ি নিয়ে বসতো সে, কিন্তু এখন মন পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ও কেউ দেখতে আসে না, তার যন্ত্রণা দেখে তাতে মলম লাগানোর জন্য কারো হাতে এতো সময় নেই।

প্রিয়তা না চাইতে ও চোখে পানি চলে আসে, বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দেয়।
নিঃশব্দে ফুপিয়ে উঠে হেঁচকি তুলে অভিযোগ জানায়—
“হাত যখন ছেড়েই দিবেন, তখন ধরলেন কেনো প্রণয় ভাই? প্রথম থেকেই এমন দুর ছাই করতেন, তাহলেই তো আপনার প্রতি এত নির্ভরশীলতা আসতো না, ভালোবাসো আসতো না, আর না আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি জ্বলে পুড়ে মরতাম।
ভালোবাসা না পাওয়ার থেকে ভালোবাসা পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা অনেক প্রণয় ভাই।
বুকের ভেতরটা জ্বলে যায়, ভয়াবহ যন্ত্রণা হয়।
আপনার এতো অপমান, এতো অসম্মান, এত কিছুর পরেও আমি আপনাকেই ভালোবাসি প্রণয় ভাই, আপনাকেই ভালোবাসি।

তাই আমি আর ৫ জনের মতো মহান হয়ে বলতে পারি না—আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সুখী হন। তাকে নিয়ে ভালো থাকো। আমি আপনাকে দেখতে পারি না অন্য কারো সাথে, খুব কষ্ট হয়।
আমি চাই আপনি সুখী হন, ভালো থাকুন—কিন্তু সেটা আমার সাথে।
আপনি আমায় ছাড়া ভালো আছেন, সুখে আছেন—এটা আমি মানতে পারি না।”
প্রিয়তার ফুপাতে ফুপাতে দৃষ্টি পড়লো বিছানার ওপর পড়ে থাকা মেহেদির খালি টিউবগুলোর ওপর।
প্রিয়তা অশ্রু-শিক্ত চোখে উঠে বসলো, হাত বাড়িয়ে খালি টিউবগুলো হাতে নিলো।
সাথে সাথেই প্রিয়তার চোখ আবার জলে ঝাপসা হয়ে গেলো। সে নিজের সাদা ফকফকে হাত দুটো নিজের চোখের সামনে মেলে ধরলো।

দুই হাত একদম ঝকঝকে ক্লিন, যেখানে মেহেদির একটা ছোটো দাগ পর্যন্ত নেই।
প্রিয়তা মেহেদির গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে গেলো অতীতে। চোখের সামনে ভেসে উঠল আবছা কিছু স্মৃতি।
“ও প্রণয় ভাই আমাকে মেহেদী পরিয়ে দেবেন না।”
বেবি পিঙ্ক ফ্রক পরিহিত একটা বছর বছর ৫ এক এর ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে হাতে মেহেদি কুন নিয়ে একটা ১৮-১৯ বছর বয়সী ছেলের পিছন পিছন ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

পায়ে তার ছোট ছোট এক জোড়া নুপূর, তার হাঁটার তালে তালে নুপূরের রিনিঝিনি শব্দে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ।
প্রণয় হাঁটছে হাতে ফিজিক্স এর বই, ঘরের এ মাথা থেকে ওমাথা হেঁটে হেঁটে রিভিশন করছে পুরো সিলেবাস কারণ ঈদের পরের দিন তার ফিজিক্স এর এক্সাম, এইচএসসি ফাইনাল চলছে। বিধায় নাওয়া খাওয়া ভুলে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে পড়ে আছে ছেলেটা। কাল কুরবানির ঈদ তাই কাল আর বইয়ের মুখ দেখার সৌভাগ্য হবে না, সেজন্য আজকেই পড়া কমপ্লিট করে রাখতে চাইছে। তাই এত আদুরে আদুরে ডাক শুনেও ও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে প্রণয়, কিন্তু এই পিচ্চিটা তো সুপার গ্লু এর মতো পিছনে চিপকে আছে।
কিন্তু প্রণয় সাবধানি ছেলে তাই ভুলেও ওদিকে দৃষ্টি ফেলছে না।

প্রিয়তা টলমলে চোখে প্রণয় যে দিকে যে দিকে যাচ্ছে সে ও তার পিছেপিছে হাঁটছে আর কিউট করে বলছে—
“ও প্রণয় ভাই আমাকে মেহেদী পরিয়ে দিবেন না।”
থেমে থেমে অস্পষ্ট ভষায় বলা এই একটা ছোট্টো বাক্য প্রতি বার নতুন নতুন ভাবে প্রণয়ের হৃদপিণ্ডকে বিদ্ধ করছে।
পুনরায় সেই একই কণ্ঠ ভেসে এলো—
“ও প্রণয় ভাই আমাকে মেহেদী পরিয়ে দেবেন না। সবাই তো পরে ফেলেছে, আমি পরবো না।”
প্রণয় আর না পারতে অসহায় চোখে ফিরে তাকালো প্রিয়তার দিকে।
বেবি ফ্রক পরিহিত হাঁটুর সমান একটা মেয়ে গাল ফুলিয়ে,ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
কোমল রক্ত লাল গাল দুটো দেখে প্রণয়ের ভয়াবহ ক্রেভিং হলো।
সে ফিজিক্স বই এর দিকে তাকিয়ে বললো—

“চুলয় যা তুই,”
বলে বইটা এক প্রকার ছুঁড়ে মারলো পড়ার টেবিলে।
নিজেকে অনেকক্ষণ কন্ট্রোল করেছে, আর নয়, ভেবে হামলে পড়লো প্রিয়তার ওপর। ছুঁ মেরে কোলে তুলে নিলো।
প্রিয়তা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আধো আধো কণ্ঠে ডাকলো—
“প্রণয় ভাই।”
এতো ইনোসেন্ট,এত সুইট, এতো কিউট দেখতে মেয়েটা প্রণয়ের মাঝে মাঝে মন চায় এটাকে দিয়েই লাঞ্চ ডিনার সেরে ফেলতে ।
প্রণয় নিজের আর ধৈর্যের পরীক্ষা নিলো না, চোখের পলকে তুলতুলে গালে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো, কষিয়ে কষিয়ে দুই গালে চুমু দিলো বেশ কয়েকটা।

ছোট্ট গোলাপি নাকে আলতো একা কামড় দিয়ে রেগে যাওয়ার ভান ধরে বললো—
“এই বাচ্চা, তুই এত জ্বালাস কেন আমায়? দেখছিলি না, পড়ছিলাম?”
প্রণয়ের মিছে মিছে রাগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো প্রিয়তা।
নিচের দুটো দাঁত পড়ে গেছে বলে আরো কিউট লাগছে।
প্রণয় ওর দুই গাল চেপে ধরে বললো—
“খরগোশের বাচ্চা এভাবে হাসিস না? দাঁত দুটো তো ইঁদুরে নিয়ে পালিয়েছে। এভাবে হাসলে যেগুলো আছে ওগুলো নিয়ে ও পালাবে।”

প্রণয়ের কথায় ভয়ে চুপসে গেলো প্রিয়তা, অসহায় মুখ করে বললো—
“আমাকে মেহেদি পরিয়ে দেন না প্রণয় ভাই, দেখুন সবাই পরে ফেলেছে।”
প্রণয় চোখ ছোটো ছোটো করে দেখলো বাচ্চাটার দিকে, ভ্রু বাঁকিয়ে বললো—
“আচ্ছা, সবাই পরে ফেলেছে, তাহলে তুই ধলা হাত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেনো?”
ছোট্টো প্রিয়তা আবার উচ্ছ্বসিত হলো, দুই হাতে প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরে কিউট করে বললো—
“আমি আপনার কাছে পরব প্রণয় ভাই, এই দেখুন আমি মেহেদি নিয়ে আসছি,”
বলে নিজের ছোট্টো হাতের মুঠো তুলে ধরলো প্রণয়ের সামনে।
প্রণয় একটু ভাবার ভান ধরে বললো—

“হুম, বুঝলাম। আমি মেহেদি পরিয়ে দেবো, কিন্তু তোকে ও আমার দুটো কথা শুনতে হবে। বল রাজি?”
প্রিয়তা ঝটপট উপর নিচ মাথা দুলিয়ে বলল- “রাজি।”
প্রণয় বিস্তৃত হেসে বললো—
“চল, ঠিক আছে।
তোর প্রথম শর্ত, হাতে গুনে গুনে ২০ টা চুমু দে,”
বলে মুখ এগিয়ে দিলো।
এটা শুনে প্রিয়তা আরো খুশি হলো, টপাটপ প্রণয়ের এগাল ওগাল দুই গালে টুপুশ টাপুশ করে চুমু দিতে লাগলো।
চুমু কম, মুখের লালা দিয়ে গাল ভেজানো বেশি হচ্ছে, তবু ও প্রণয় এতেই তৃপ্ত।
প্রিয়তা হাতে গুনে চুমু দিয়ে বললো—
“পুরো কুড়িটাই দিয়েছি প্রণয় ভাই, এখন পরিয়ে দিন।”
প্রণয় বাঁকা হাসলো, রুমাল দিয়ে গালের লালা মুছে বললো—
“চল, এখন তোর দ্বিতীয় শর্ত। এটা সব থেকে বড়, এটা শুনলেই তোকে মেহেদি পরিয়ে দেবো, পাক্কা প্রমিজ।”
প্রিয়তা অধীর হয়ে বললো—

“আল কি?”
প্রণয় ওকে বারান্দার দোলনায় বসিয়ে দিয়ে বললো—
“বস, আসছি,”
বলে চলে গেলো প্রণয়।
প্রিয়তা বসে বসে মেহেদির টিউবটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
প্রণয় ৫ মিনিটের মধ্যেই ফিরে এলো, হাতে তার ভাতের প্লেট।
ভাত দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে অন্ধকার করে ফেললো প্রিয়তা, ফেঁচফেঁচ করে কাঁন্না শুরু করে দিয়ে বললো—
“আমি এখন ভাত খাবো না।”
প্রণয় ওর কোনো কথাই কানে নিলো ন , পাশের টুল টেনে প্রিয়তার সামনে বসে পড়লো। প্লেটে সাদা ভাতের সাথে বড় ডিমওয়ালা বিরাট এক টুকরো ইলিশ মাছ।
প্রণয় কাঁটা ছাড়িয়ে ভাতের সাথে মেখে প্রিয়তার মুখে দিলো।
গালে চুমু দিয়ে বললো—

“এক হাতে মেহেদি পরবি নাকি দুই হাতে?”
প্রিয়তা মুখ কালো করা ছেড়ে পুনরায় হেসে উঠলো, ভাত চিবোতে চিবোতে হাতের কনুই দেখিয়ে দিয়ে বললো—
“একটুখানি অবধি পরবো, দুই হাত ভরে।
বড় আপু দেখেছি অনেক সুন্দর করে পরেছে, ওভাবে পরবো।”
“আচ্ছা, দেখ কোন ডিজাইনটা তোর পছন্দ হয়,”
বলে নিজের ফোনটা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিলো প্রণয়।
প্রিয়তা চোখ গোলগোল করে মন দিয়ে মেহেদির ডিজাইন দেখতে লাগলো।
প্রণয় নির্লিপ্ত ভাবে ভাতের লুকমা মুখে দিয়ে চলেছে, আর প্রিয়তা অমনোযোগী ভঙ্গিতে খেয়ে চলছে।
প্রিয়তা ফোন দেখতে দেখতে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো, উৎসুক নজরে একটা ডিজাইন প্রণয়কে দেখিয়ে বললো—
“এটা অনেক সুন্দর প্রণয় ভাই, আমি এটা আঁকবো।”
প্রণয় সমান উৎসাহ নিয়ে দেখে বললো—

“আচ্ছা।”
প্রিয়তা প্রশ্ন করলো—
“আপনি সব কিছু পারেন প্রণয় ভাই?”
“নাতো, তোর কেন মনে হলো?”
প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো—
“না, আপনি সব পারেন। এই যে আমাকে খাইয়ে দেন, সাজিয়ে দেন, আবার মেহেদি ও পরিয়ে দেন, আপনি সব পারেন।”
প্রণয় ওকে পানি খাইয়ে দিয়ে বললো—
“তা তো একটু পারি।”
প্রিয়তা ভালোমতো প্রণয়কে দেখে আজব একটা কথা বললো—
“আমি বড়ো হয়ে আপনাকে বিয়ে করবো প্রণয় ভাই।”
হুট করে এমন আচানক একটা কথায় বিষম খেয়ে গেলো প্রণয়, ফট করে চোখ তুলে তাকালো প্রিয়তার দিকে।
প্রিয়তা সাথে সাথেই টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসলো প্রণয়ের গালে, আল্লাদ করে বললো—
“হ্যা, আমি বড়ো হয়ে আপনাকেই বিয়ে করবো।”

প্রণয় নিজেকে সামলে পুনরায় ভাত খাওয়ানোতে মনোযোগ দিলো। ঠোঁটের চাপা হাসি লুকিয়ে বললো—
“কেন আমায় বিয়ে করবি কেন?”
প্রিয়তা প্রণয়ের মুখে হাত বুলিয়ে বললো—
“আপনি খুব সুন্দর প্রণয় ভাই, এই জন্য আপনাকে বিয়ে করবো।”
প্রণয় ভ্রু বাঁকিয়ে বললো—
“আমার চুল সাদা হয়ে গেলে ও বিয়ে করবি?”
প্রিয়তা ছোট্টো মস্তিষ্কে এই কথার অর্থ বুঝলো না, অবুঝ চোখে তাকিয়ে বললো—
“কেন প্রণয় ভাই?”
প্রণয় মুখ সিরিয়াস করে বললো—
“হ্যা, চুল সাদা হয়ে যাবে, গায়ের চামড়া ঝুলে যাবে। এর পরে ও বিয়ে করবি?”
এই কথায় প্রিয়তার মুখ কাদোকাদো হয়ে গেলো।
ঠোঁট উল্টে বললো—

“এমন কেন হবে প্রণয় ভাই?”
প্রণয় ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো—
“কারণ তুই বড়ো হতে হতে আমি বুড়ো হয়ে যাবো পাগলি, তখন বুড়ো বর ভালো লাগবে?”
প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে বললো—
“বুড়ো?”
“হুম।”
“দাদিমার মতো বুড়ো?”
“হুম।”
প্রণয় হুম বলতেই দেরি, প্রিয়তার ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠতে দেরি হলো না।
প্লেটের ভাত শেষ, প্রণয় ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে ঘরে এলো, নরম বিছানায় আলতো করে বসিয়ে দিলো।

প্রিয়তা সেই যে হা করেছে, এখনো মুখ বন্ধ করার নাম নেই।
প্রণয় হাত মুছে মেহেদির টিউবটা নিয়ে এসে হাঁটু ভাজ করে বসলো প্রিয়তার সামনে।
ছোট্টো ছোট্টো দুইটা হাত, ওই হাতে সে কি মেহেদি পরাবে?
এদিকে কান্নার তোড়ে প্রিয়তার রক্তিম গাল দুটোতে মনে হয় রক্ত জমেছে। প্রণয় আলতো করে কামড়ে দিয়ে বললো
“চুপ কর পিচ্চি।”
প্রিয়তা এবার প্রণয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো—
“আপনি বুড়ো হয়ে গেলে ও আপনাকে বিয়ে করবো প্রণয় ভাই।”
প্রণয় হালকা হেসে বললো—

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৪

“আচ্ছা, এখন সোজা হয়ে বস, মেহেদি পরবি না?”
প্রিয়তা কান্না ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। ২ মিনিট কেঁদে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। প্রণয় দুই হাতে চোখের পানি মুছিয়ে আবারো দুই গালে চুমু খেলো।
প্রিয়তার হাত মেলে ধরে সুন্দর করে ছোট্ট হাতে মেহেদি পরিয়ে দিতে লাগলো।
পুরুষ মানুষ হলে কি হবে, প্রণয় সব শিখেছে, শুধুমাত্র তার রক্তজবার জন্য।

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৬৫