ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৮
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
প্রণয় উদিত সূর্যের দিকে তাকালো। দিনের প্রথম সূর্যকিরণ আছড়ে পড়ছে প্রণয়ের চোখে-মুখে। সেদিকে তাকিয়েই প্রণয় বলল,
“ওগো আকাশ, দেখছো তুমি? সে আমাকে কীভাবে কষ্ট দিচ্ছে? আমি শারীরিক, মানসিক—সকল যন্ত্রণা সয়ে নিচ্ছি, শুধু তার মুখের পানে চেয়ে। শুধুই তাকে নিরাপদ রাখার জন্য, কারণ সে ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি। কিন্তু আমি যে ওর কষ্ট, ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারছি না! সে হয়তো কোনোদিনও জানবে না, আমি ১৫টা বছর অপেক্ষা করেছি শুধুই তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমার ভাগ্য আমাকে আমার ধৈর্যের ফল এইভাবে দেবে, কখনো ভাবিনি।সে আবার ও আকাশের দিকে চেয়ে বলল তুই জেনে রাখিস, প্রিয়তমা—আমার ভঙ্গুর হৃদয়টা যদি কোনো এক সময় ভালোবাসার তৃষ্ণায় মরেও যায়, তবুও সেই ধ্বংসাবশেষেও তোর বাস! তুই ছড়িয়ে আছিস এই দেহ ও মনের সর্বত্র।
আমি যে সর্বহারা, নিঃস্ব একজন মানুষ! হয়তো বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে আমি অত্যন্ত সুখী মানুষ, কিন্তু তারা কি জানে আমি কতটা নিঃস্ব?
কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও আমি তো জানি, আমার রক্তজবা আমাকে কতটা ভালোবাসে! তার ভাষা-ভাষা ওই নীলাভ চোখে আমি নিজের জন্য ভালোবাসার সাগর দেখেছি, যা আমার সকল অসম্পূর্ণতার মধ্যে একটুকরো পূর্ণতার সুখ!”
এটা ভেবে সে এক চিলতে হাসলো। আবার বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এই আবরার শিকদার প্রণয় তার রক্তজবার জন্য সবকিছু করতে পারে! এরকম এক কেন, একশো জন্মও সে দূরে থাকবে, তবু ও তার গায়ে ফুলের টুকাও লাগতে দেবে না! প্রয়োজনে নিজেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেবে, সকল আঘাতে নিজের বুক পেতে দেবে, তবুও তার প্রাণের গায়ে আঘাত আসতে দেবে না!
সে বলল আল্লাহর কাছে আমার একটি চাওয়া—তুমি আমার না হলেও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার চোখের সামনে থেকো। তোমার ওই চাঁদমুখটা দেখে সকল দুঃখ পুষিয়ে নেওয়া যায়! ওরা এমন কেন করলো বলতো? কী হতো আমাদের একসাথে থাকতে দিলে? প্রয়োজনে আমি ওদের কেনা হয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতাম!”
এইসব ভেবেই প্রনয়ের বন্ধ চোখের কর্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা ব্যথাতুর অশ্রুকণা।
প্রণয় ছাদ থেকে যেতে যেতে ফোনটা বের করে সুইচ অন করতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে প্রহেলিকার নামটা জলজল করছে।
প্রণয় একটু বিরক্ত হলো, কিন্তু সে সব পাত্তা না দিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো।
— “হ্যালো,” বললো প্রণয়।
ওপাশ থেকে প্রহেলিকা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো, “প্রণয়!…”
প্রণয় ভাবলেশহীন কণ্ঠেই বললো, “হুম?”
প্রহেলিকা উত্তেজিত স্বরে বললো, “কোথায় তুমি? সারা রাত কোথায় ছিলে? আমি কতগুলো ফোন দিয়েছি, কিন্তু ফোন কেন অফ করেছিলে? তুমি জানো, আমার কত চিন্তা হয়েছে?”
প্রণয় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, “আসছি আমি।”
প্রহেলিকা বললো, “কোথায় তুমি এখন?”
প্রণয় শুধু বললো, “বাগানবাড়িতে।”
বলে ফোন কেটে দিল।
শুদ্ধ আর প্রহেলিকার চোখ-মুখে লেগে আছে হিংস্রতার ছাপ—প্রতিহিংসা আর ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণায়… দুজনেই জলে যাচ্ছে।
শুদ্ধ পাশের দেওয়ালে লাথি মেরে বলে উঠলো, “এত কিছু করেও ওদের আলাদা করতে পারছি না!” সে নিজের মাথার চুল টেনে ধরল।
প্রহেলিকার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো, “তুমি কেমন বউ, হ্যাঁ? সামির মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে পারো? কেমন বউ তুমি? কী লাভ হলো তোমার, সাথে এত কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ে দিয়ে?”
প্রহেলিকা দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বললো, “তুমি কি করেছো? তুমি কেন পারোনি? এতদিনেও প্রিয়তাকে বিয়ে করতে? এখনো সময় আছে! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেকোনোভাবে প্রিয়তাকে বিয়ে করে নাও! একবার বিয়ে হয়ে গেলে প্রণয় আর প্রিয়তা কিছুই করতে পারবে না!”
শুদ্ধ কাঁটকাঁট স্বরে বলে উঠলো, “তুই আমার প্রিয়তা থেকে দূরে থাকবি! তুই বড় বিপদজনক!”
প্রহেলিকা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, “এই একটা মেয়ে আমার গোটা জীবনটাই নষ্ট করে দিল! আমার জীবন থেকে সুখ, শান্তি সব কেড়ে নিল! আমার ভালোবাসার প্রণয়কে কেড়ে নিল! ওর জন্যই প্রণয় আমাকে ভালোবাসে না! কালই সবকিছু শেষ করতাম, কালই সব কিছুর প্রতিশোধ নিয়ে নিতাম! কিন্তু প্রণয় সব নষ্ট করে দিল!”
শিকদার বাড়ির পরিবেশ থমথমে। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রীথার বিদায় হবে। বাবা, মা, চাচা, চাচিদের সালাম করে নিলো প্রীথা। অনুশ্রী বেগম তো কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেন না। প্রীথা ও মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। বাড়ির সবার মন বিষণ্ন।
প্রীথম তার দিকে তাকিয়ে বললো, “কাদিস না, বোনু! তোকে সারাজীবনের জন্য তো পাঠিয়ে দিচ্ছি না তো! আবার আসবি, তো তোই?”
প্রীথা ওর মেজ দাদানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। প্রীথমও বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে। সমুদ্র ও অরণ্য নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারছে না। তারা যে তাদের আপুকে ভীষণ ভালোবাসে!
প্রেমেরও মন কিছুটা খারাপ, কিন্তু সে অন্যদের মতো মেলোড্রামা করতে পারে না, তাই পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো, “তোমরা এত কাঁদছো কেন? এতদিন আমরা কেঁদেছি, এবার সাদিক ভাইয়ের পালা! সে কাঁদবে, তোমরা কেন কাঁদছো?”
সাদিক সহ সবাই এই গম্ভীর পরিস্থিতিতে ঠোঁট টিপে হাসলো,কিন্তু প্রীথা এসব গায়ে মাখল না। সে সোজা গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। প্রেম অহ আপুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আপু, এভাবে কাঁদলে কিন্তু তোর মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে!”
প্রীথা আরও জোরে কেঁদে উঠল। এসব দেখে প্রহেলিকা, প্রেরণা, পরিণীতা, সায়রা, চিত্রা, কুহু—সবারই মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু যা নিয়ম, তা তো করতেই হবে।
প্রীথম গাড়িতে ওঠার জন্য তাড়া দিতে, প্রীথা বলে উঠল, “বড় দাদান কোথায়?”
এবার সবার টনক নড়ল। কালকে ওভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রণয়কে আর দেখা যায়নি। অনুশ্রী বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন, “কোথায় গেল আমার ছেলেটা?”
প্রীথা আবার বলল, “প্রিয় কোথায়? পরী আর প্রিয় আমার সাথে যাবে!”
এবার সবাই অবাক হলো। সত্যি তো, প্রীয়তা কোথায়? তাকেও তো কাল থেকে দেখা যায়নি!
শুদ্ধ বলল, “ওরা দুজন একটু আগেই বেরিয়েছে, এখুনি চলে আসবে।”
এই কথা শুনে সবাই আশ্বস্ত হলো, কিন্তু পরিণীতা ভ্রু কুঁচকালো। ভাবল, শুদ্ধ ভাই মিথ্যে কথা বলছে কেন?
ওদের কথার মাঝেই প্রণয়ের গাড়িটা বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকল—সাথে প্রীয়তা!
ওদের দুজনকে একসাথে দেখে সবাই ভীষণভাবে রাগান্বিত হলো।
প্রীথা ছুটে এসে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। প্রণয়ও বোনের মাথায় স্নেহের হাত রাখল, যার অর্থ— “আমি আছি, তোর পাশে!”
প্রণয় স্বল্পভাষী, তাই মুখে কিছু বলল না।
সে ধরে ধরে প্রীথাকে সাদিকের পাশে বসিয়ে দিল। সবাই চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পরিণীতা ও প্রীয়তা যাবে তার সাথে। পরিণীতা সব আগে থেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচে নেমেছে, কিন্তু প্রীয়তা না যাওয়ার জন্য গাইগুই করতে শুরু করল।
প্রীয়তা বলল, “আমার ভালো লাগছে না, মেজ আপু! পরি আপু তো যাচ্ছে, কিন্তু আমি যাবো না!”
প্রেরণা ধমক দিয়ে বলল, “চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বস!”
প্রীয়তা বলল, “আমি কিছুই রেডি করতে পারিনি!”
পরিণীতা বলল, “আমি যা নিয়েছি, তাতেই আমাদের দুজনের হয়ে যাবে!”
আর কোনো বাহানা খুঁজে পেল না প্রীয়তা। নিরুপায় হয়ে পরিণীতার পাশে গিয়ে বসল।
পরপর দশটা গাড়ি শিকদার বাড়ির সীমানার বাইরে বেরিয়ে গেল। যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, প্রীয়তা মুখ বের করে শুধু প্রণয়কেই দেখছিল…
বর্তমানে শিকদার বাড়ির পরিবেশ একেবারেই শান্ত।
চার পর্দার গিন্নিরা বিষণ্ন মনে নিজেদের ঘরে বসে আছেন। বাড়ির প্রায় সব অতিথি চলে গেছেন। এখন শুধু বাড়ির ছেলে-মেয়েরা আর কিছু সার্ভেন্ট রয়ে গেছে—এটাই শিকদার বাড়ির আসল দৃশ্য।
পূর্ণতা, ইনায়া, কুহু আর চিত্রা থেকে গেছে, কারণ কালকে পৃথার বউভাতে তারা এখান থেকেই যাবে। যেহেতু পরিণীতা আর প্রীয়তা নেই, তাই কুহু আর চিত্রা পরিণীতার ঘরে, আর ইনায়া ও পূর্ণতা প্রীয়তার ঘরে ঘুমাবে সকলে চলে যাওয়ার পর প্রণয় নিজের ঘরে গেল। সে ভীষণ ক্লান্ত। একটা মানুষ আর কতটুকু সহ্য করতে পারে! সে কাল থেকে একটা জামা পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এক্ষুনি তাকে গোসল করতে হবে। গায়ের কালো শার্টটা খুলতেই কাল রাতের সব কথা মনে পড়ল। এই শার্টেই তার প্রিয়তমা লেপ্টে ছিল।
প্রণয় নিজের নাকের কাছে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিল প্রাণভরে, তারপর আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিল। এই সকল দৃশ্যই দূর থেকে দেখল প্রহেলিকা। চোখে তার পানি চলে এলো।
প্রণয় ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই প্রহেলিকা বলল,
“প্রণয়, শুনো।”
প্রণয় দাঁড়িয়ে গেল, পেছনে ফিরে প্রহেলিকার দিকে তাকালো। প্রহেলিকার কাছে এসে টলমলে চোখে বলল,
“কাল রাতে কোথায় ছিলে তুমি? তোমাকে কত ফোন করেছি! কত চিন্তা হয়েছে জানো?”
প্রণয় বলল, “কাল একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে বাগানবাড়িতে ছিলাম।”
প্রণয়ের কথা শুনে প্রহেলিকা মনে মনে ফুঁসে উঠল। সে বলল,
“ওহ! তাহলে চলো।”
প্রণয় ভ্রু কুঁচকে বলল, “কোথায়?”
প্রহেলিকা ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করল।
প্রণয় মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হলো, রাগে জ্বলে উঠল বলা চলে, কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করল না।
“ঠিক আছে, চলো।”
প্রহেলিকা বাঁকা হাসল, মনে মনে বলল, ‘তোমার সবকিছুতেই আমি! আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে রেখেছি। একদিন তোমার মনেও জায়গা করে নেবো।’ এর আগপর্যন্ত না হয় বলে… আবারও হাসল।
শিকদারদের বাগানবাড়ির ব্যাটসমেন্টের অন্য একটি কক্ষে চারজন লোক হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তাদের চোখেমুখে প্রাণভিক্ষার আকুতি। তাদের আশেপাশে গোটা দশেক কালো পোশাক পরিহিত লোক দাঁড়িয়ে আছে। তখন দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল প্রণয়।
তার মুখে ভালোবাসা, হিংস্রতা, দয়া, মায়া—কোনো কিছুরই ছাপ নেই। প্রণয় সামনের চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসল। প্রিয়তাকে প্রথম যে ছেলেটা আঘাত করেছিল, তার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি দিল। ছেলেটা ওই গভীর বাদামি চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল। কিছু একটা ছিল ওই চোখে, যা সে সহ্য করতে পারছিল না।
তারা চারজনই বুঝে গেছে—আজই তাদের অন্তিম দিন।
প্রণয় তার অ্যাসিস্ট্যান্ট জাভেদকে অত্যন্ত শান্ত স্বরে বলল,
“জাও, নিয়ে আসো।”
এতক্ষণ ধরে জাভেদ প্রণয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল। প্রনয়ের কণ্ঠ শুনতেই চমকে উঠল, করুণ দৃষ্টিতে সামনের চারজনের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
প্রণয় এখনো শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জাভেদ একটি পাত্রে গরম ফুটন্ত তেল আর একটি বড় রামদা নিয়ে হাজির হলো। রামদাটি প্রণয়ের দিকে কাঁপা হাতে এগিয়ে দিল। দুজন লোক এসে গরুর হাড্ডি কাটার মুড়োতে লোকটার হাতদুটো চেপে ধরল।
প্রণয়ের চোখের শান্ত ভাবটা কেটে গিয়েই হঠাৎ করে হিংস্রতা জেগে উঠল।
সে হিংস্র কণ্ঠে বলল,
“কে পাঠিয়েছে তোদের?”
লোকটা কিছু না বলেই মাথা নিচু করে রাখল। এতে যেন প্রণয়ের রাগের বাঁধ ভেঙে গেল!
সে এক কুপে লোকটার হাত কব্জি থেকে আলাদা করে দিল। ভয়ানক কণ্ঠে বলল,
“তুই আমায় খুন করার চেষ্টা করলেও তোকে ক্ষমা করে দিতাম, কিন্তু তুই প্রণয় শিকদারের সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিস! যে হাত দিয়ে তুই আমার রক্তজবাকে আঘাত করেছিলি, সেই হাত তোর শরীর থেকে আলাদা করে দিলাম।”
এই দৃশ্য দেখে জাভেদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
প্রণয় তেলের বাটি হাতে নিল। আবারও দুজন লোক এসে সামনের লোকটার চোখের পাতা মেলে ধরল।
প্রণয়ের সুন্দর মুখটা বীভৎস, ভয়ানক দেখাচ্ছে।
প্রণয় লোকটার চোখের মনিতে গরম তেল ঢেলে দিল। লোকটা যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে চিৎকার করে উঠল।
এই দৃশ্য দেখে জাভেদসহ বাকি তিনজন জ্ঞান হারাল!
প্রণয়ের মাথায় তখনো রক্ত চেপে আছে। সে গার্ডদের বলল,
“এদের সবাইকে জাগিয়ে তোলো।”
যেমন কথা, তেমন কাজ। গার্ডরা সবার চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিল।
প্রণয় হিংস্র দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
লোকটা ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে, তার হাত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।
প্রণয় আবারও রামদাটা হাতে তুলে নিল। একে একে বাকি তিনজনেরও একই ব্যবস্থা করল। তারপর নিজের হাতে দেহগুলো টুকরো টুকরো করল। সে তার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।
কাজ শেষ হতেই জাভেদকে বলল,
“ পোষা কুকুরগুলোকে এদের মাংস রান্না করে খাইয়ে দাও।”
এইসব হিংস্রতা দূর থেকে দুজন দেখছিল—
শুদ্ধর মুখে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি, আর প্রহেলিকার চোখেমুখে ফুটে উঠল ভয়, আতঙ্ক।
এই সব দেখে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।
ঘড়ির কাঁটায় দুপুর একটা…
প্রেম পেইন্টিং করছে, ভীষণ মনোযোগ দিয়ে। সে একজন আর্টিস্ট। সামনেই তার আর্ট এক্সিবিশন, এর মাঝে বোনের বিয়ের জন্য সে মোটেই সময় বের করতে পারেনি। মিক্সিং প্লেটে অ্যাক্রিলিক কালার মিশিয়ে, অয়েল পেপারে সুচারুভাবে হাত চালাচ্ছে। ঠিক তখনই তার কানে এলো একজোড়া নূপুরের শব্দ!
নূপুরের শব্দ কানে আসতেই প্রেমের হাত থেমে গেল। কারণ, এই শব্দ তার পরিচিত!
সে পেছনে না ঘুরেই বলল,
“চিত্রা?”
চিত্রা মুখ ছোট করে বলল,
“বুঝে গেছো?”
প্রেম আবার তুলি দিয়ে নতুন করে রঙ মিশাচ্ছে। চিত্রা এসে প্রেমের পাশে দাঁড়ালো। সে প্রেমের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কারণ, প্রেম তার একটা মাত্র ক্রাশ! এই ছেলেটাকে প্রথমবার দেখেই সে ক্রাশ খেয়ে গিয়েছিল!
চিত্রা মনে মনে ভাবলো, উফ! ছেলেটা এত কেন সুন্দর মন চায়? লাল লাল গালগুলো টেনে ধরে সারাদিন চুমু খাই! উফ! সে কি কিছুই বুঝতে পারে না? তাকে এক পলক দেখার জন্য অষ্টাদশী মনে কী রকম উচাটন হয়! চিত্রা আবারও ভাবলো, সুন্দর ছেলেরা হয়তো আসলেই বোকা হয়!
সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে এসব ভাবছে।
তার ভাবনার মাঝেই প্রেম বলল,
“কি ব্যাপার, চিত্রা? তুমি এখানে?”
চিত্রা হকচকিয়ে উঠলো। প্রেমের কণ্ঠের পুরুষালী ধ্বনিতে তার বুকে হাতুড়ি পেটানোর মতো অনুভূতি শুরু হয়ে গেল!
প্রেম আবার গভীর সুরে বলল,
“কিছু বলবে?”
চিত্রা দুই পাশে মাথা দুলিয়ে বলল,
“না…”
প্রেম বলল,
“ওহ!”
চিত্রা একটু ইতস্তত করে বলল,
“আপনি আমার একটা ছবি এঁকে দেবেন?”
প্রেম চশমা ঠিক করে গভীর দৃষ্টিতে চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। মেয়েটি যেন কোনো শিল্পীর শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম! তার গায়ের বরণ হালকা হলুদ ফরসা, গোলগাল টানা টানা দুটি চোখ, হালকা কোঁকড়ানো কোমর অবধি চুল—সব মিলিয়ে মাশাআল্লাহ!
সে একজন গুণী শিল্পী, তাই সে শিল্পের মর্ম বোঝে।
প্রেম বলল,
“সামনের টুলটাতে বসো।”
চিত্রা না বুঝে বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো।
প্রেম ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বলল,
“কি হলো, বসো!”
চিত্রা বলল,
“সত্যি? আপনি আমার ছবি আঁকবেন?”
প্রেম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“তুমি কি বলতে চাও আমি মিথ্যে বলছি?”
এইসব কথায় চিত্রা পাত্তা দিল না। লাফিয়ে উঠে বলল,
“আপনি একটু দাঁড়ান, আমি রেডি হয়ে আসি!”
বলতে দেরি, ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেরি হলো না!
প্রেম গভীর দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
*”কেন আগুন নিয়ে খেলতে চাও, চিত্রা? এই বাড়ির অনেকেই আগুন নিয়ে খেলছে। তাই সেই আগুন জ্বলে, পুড়ে প্রতিনিয়ত ছাই হচ্ছে। ভবিষ্যতের দাবানলে আরও অনেকেই জ্বলতে চলেছে—এই স্পষ্ট ভবিষ্যৎ আমি এখুনি দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি চাই না সেই তালিকায় আমাদের নামও অন্তর্ভুক্ত হোক। কিছু ভালোবাসা, ও প্রকাশিতই সুন্দর—আমি চাই না তোমার এই সুন্দর জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হয়ে যাক।
এই চাকচিক্য আর আভিজাত্যের ভিড়ে মানবতা হারিয়ে গেছে। এই শিকদাররা আসলে যতটা ভালো মানুষ দেখায়, তারা কি আসলেই এতটা ভালো মানুষ?”*
ব্যঙ্গাত্মক হাসলো প্রেম।
“অষ্টাদশী, তুমি শিল্পের চিত্রকর্ম হয়েই থাকো, প্রেমের প্রেমিকা হতে এসো না! তোমাকে নিয়ে আমি সেই আগুনে ঝাঁপ দিতে চাই না, যে আগুনে অনেকে জ্বলছে—আর অনেকে জ্বলতে চলেছে…”
তোমাকে নিয়ে আমি সেই আগুনে ঝাঁপ দিতে চাই না,
যে আগুনে অনেকে জ্বলছে—
আর অনেকে জ্বলতে চলেছে—
মিসেস অনুস্রী শিকদার ও তার তিন জা মিলে দুপুরের খাবার তৈরি করছেন।
তাদের মন-মানসিকতা কিছুই ভালো নেই,
কিন্তু স্বামী-সন্তান দরদী নারীরা কোনো সময়ই তাদের স্বামী-সন্তানদের না খাইয়ে রাখতে পারে না!
অরণ্য ও প্রেরণা
সিঁড়ি দিয়ে নামছিল।
এমন থমথমে ভাব দেখে তাদেরও মন খারাপ হলো।
প্রেরণা অরণ্যকে বলল,
— “দেখ, আম্মু-ছোট আম্মুদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না!”
অরণ্য বলল,
— “চল, তাহলে তোকে অনেকটা মজা দেখাই!”
বলে সে ছুটে গেল তার আম্মুর কাছে।
আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
— “আম্মু, আমি কিন্তু খুব রেগে আছি!”
চার গিন্নি ছোট ছেলের দিকে তাকালেন।
অরণ্য দুষ্টু হেসে বলল,
— “মেজো আপু তো চলে গেছে, কিন্তু তোমরা যদি চাও, তাহলে একটা আইডিয়া দিতে পারি!”
চার গিন্নি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
অরণ্য মুখ ছোট করে বলল,
— “না মানে… তোমাদের খুশির জন্য আমি আমার জীবন না হয় উৎসর্গ করেই দিলাম!”
মিসেস অর্থী বেগম বললেন,
— “কি বলতে চাস?”
অরণ্য বলল,
— “তোমরা চাইলে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েও দিতে পারো! তাহলে মেজ আপুর অভাব আর অনুভব হবে না তোমাদের!”
মিসেস তনুস্রী বেগম রেগে খুন্তি ছুড়ে মারলেন।
প্রেমের এইসব কথা শুনে বাকি তিন গিন্নি মুখ টিপে হাসলেন।
প্রেম পালিয়ে যেতে যেতে প্রেরণাকে বলল,
— “মিশন সাকসেসফুল!”
প্রেরণা আহাম্মকের মতো দেখছিল,
তারপর সেও হেসে বলল,
— “মেজো মা, আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না, ভেবে দেখতে পারো!”
তনুশ্রী বেগম বললেন,
— “আইডিয়াটা আসলেই খারাপ না!”
অনুস্রী বেগম বললেন,
— “কি বলছিস! ও এখনো অনেক ছোট, ওর বড় ভাইরা রয়েছেন!”
তনুশ্রী বেগম হেসে বললেন,
— “আমি পৃথমের কথা বলছি! প্রণয়ের বিয়ের তো প্রায় দুই বছর হতে চললো!”
পৃথমের মা বললেন,
— “যাক, আরও এক-দুই বছর যাক!
ছেলেটার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি!”
প্রেরণা দেখল, মা-চাচিরা অন্য বিষয়ে হাসাহাসি করছেন।
তাই সেও হেসে চলে গেল।
চিত্রা একটা লাল শাড়ি পরলো।
চোখে হালকা কাজল দিলো,
কার্লি চুলগুলো খুলে রাখলো।
ঠোঁটে লিপস্টিক, কপালে লাল টিপ।
ছবি আঁকানো তো বাহানা মাত্র!
আসল উদ্দেশ্য, সে সাজগোজ করে চিত্রকার কে দেখাতে চায়!
তার এমন সাজগোজ দেখে কুহু বলল,
— “কাহিনি কী আপু? ব্যাপারটা কিন্তু সন্দেহজনক!”
চিত্রা গাল টিপে বলল,
— “তোকেও এত গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না!”
বলে চলে গেল।
কুহু ভাবলো,
— “এর আবার কী হলো?”
চিত্রা পা টিপে টিপে প্রেমের ঘরে গেল।
যদিও এটা তার ঘর নয়,
এটা তার পার্সোনাল আর্ট গ্যালারি।
সে পেছনে এসে দাঁড়ালো,
প্রেম না তাকিয়েই বলল,
— “সামনে এসে বসো!”
সে অবাক হলো!
এই লোক বুঝল কীভাবে?
কিন্তু কথা না বাড়িয়ে সামনে টুলে গিয়ে বসল।
প্রেম ক্যানভাসে আরেকটা পেপার আটকে সামনে তাকালো।
তার নয়ন যুগল স্থির হয়ে গেল!
লাল শাড়ি আর লাল টিপে,
তাকে লাল পরী লাগছে!
কিছুক্ষণ দেখে,
চোখ নামিয়ে পেন্সিল হাতে তুললো প্রেম।
সুদক্ষ হাতে পেপারে হাত চালাতে লাগলো, নিপুণভাবে একটি স্কেচ আঁকল!
প্রত্যেকটি ডিটেইলসে সে তার মনের মাধুরি মিশিয়ে এঁকেছে।
স্কেচ শেষ হতেই প্লেটে রঙ মেশাতে লাগলো।
পাক্কা চার ঘণ্টা লাগিয়ে,
সে রঙ সম্পূর্ণ করেছে, আরও দুই ঘণ্টা লেগেছে স্কেচ আর্ট করতে।
সর্বমোট ছয় ঘণ্টা তারা এইভাবে একসাথে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল।
কিন্তু কি আশ্চর্যের ব্যাপার,
এতক্ষণেও কারও হাত ব্যথা বা কোমর ব্যথা করছে না!
চিত্রা ছবি দেখে মুগ্ধ চোখে একবার ছবির দিকে তাকালো,
আর একবার চিত্রকারের দিকে।
কিন্তু প্রেম ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারলো না।
সে কিছু একটা ভাবলো, তারপর কোনো দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই চিত্রার কপালের লাল টিপটা খুলে নিয়ে ছবিতে চিপকে দিলো।
— “এবার পারফেক্ট লাগছে!”
চিত্রা অবাক হলো।
মুগ্ধতা সরিয়ে মুখে লজ্জার লালিমা ফুটিয়ে তুলে বলল,
— “আপনাকে অনেক থ্যাংক ইউ!”
বলে ছবিটাতে হাত দিতে গেলেই প্রেম বলল,
— “Don’t touch it!”
চিত্রা অবাক হয়ে বলল,
— “এটা আমার ছবি, আমি নেবো না?”
প্রেম বলল,
— “না!”
চিত্রা বলল,
— “কেন?”
প্রেম বলল,
— “কারণ, এটা আমি এঁকেছি। এটা আমার!”
চিত্রা বলল,
— “এটা আমার ছবি!”
প্রেম বলল,
— “So what? তুমি আঁকতে চেয়েছো, নিতে চাওনি!”
এইভাবে দুজন কিছুক্ষণ তর্ক করলো।
কিন্তু প্রেম ছবিটা দিলোই না।
শেষে চিত্রা রেগে গিয়ে বলল,
— “লাগবে না আপনার ছবি!”
বলে মুখ জামটা মেরে চলে গেল।
এমন বাচ্চামি দেখে প্রেম ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
ছবিটির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল।
ধরণীতে দিন গড়িয়ে রাতে সূচনা হলো…
প্রণয় তিন তলার মাঝারি ছাদে পাতা চেয়ারে বসে,
ল্যাপটপে দ্রুত হাত চালিয়ে টাইপ করছে।
হাতে তার গরম ধোঁয়া ওঠা কফির মগ।
শিকদার গ্রুপের সকল বোর্ড মেম্বারদের নিয়ে আগামীকাল গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হবে।
শিকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের প্রথম সারির ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে একটি।
শিকদার গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাদমান শিকদার,
সিইও আবরার শিকদার প্রণয়।
এই বংশের প্রত্যেক সন্তানকে মাস্টার্স শেষ করেই কোম্পানিতে যোগ দিতে হয়।
বর্তমানে কোম্পানির দায়িত্বে আছেন—
প্রণয় শিকদার, পৃথম শিকদার, রাজ শিকদার, প্রেম শিকদার।
(অরণ্য আর সমুদ্র এখনো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট!)
প্রণয় ল্যাপটপে ইম্পরট্যান্ট মেইল পাঠাচ্ছিল,
ঠিক তখনই সাদাফ এলো।
সে পাশের চেয়ারে বসে গভীর দৃষ্টিতে প্রণয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
প্রণয় ল্যাপটপের স্ক্রিনেই চোখ রেখে বলল,
“এভাবে দেখছিস কেন?”
সাদাফ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“তুমি কি মেয়ে, যে আমি তোমাকে দেখব?”
প্রণয় ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তাহলে আমাকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে ফেলার মানে কী?!”
সাদাফ মাথায় চাটি মেরে বলল,
“আমার সামনে একদম অভিনয় করবি না!”
প্রণয় বলল,
“যদি তোর সামনেই অভিনয় করতে হয়, তাহলে তুই কেমন বন্ধু?”
সাদাফের মুখটা কালো হয়ে গেল।
সে সব জানে!
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব…
মাঝে মাঝে তার মনে হয়,
“আল্লাহ! মানুষকে এত ধৈর্য দিয়েও দুনিয়ায় পাঠায়?
কই, তার তো এত ধৈর্য নেই!”
সে এসব কোনো দিনও পারবে না!
তার সঙ্গে যদি এসব হয়,
সে সহ্যই করতে পারবে না!
প্রণয়ের চোখ-মুখ অনুভূতিহীন।
সাদাফ বলল,
“সব ভুলে যাওয়া যায় না, প্রণয়!”
প্রণয়ের হাত থেমে গেল।
সে কঠিন চোখে সাদাফের দিকে তাকাল।
সাদাফ শুধু দেখতে চেয়েছিল,
“আগ্নেয়গিরিটা কতটা সক্রিয়?”
প্রণয়ের চোখ-মুখ দেখে সে বুঝে নিল যা বোঝার।
এইসব বলা বা ভাবা বোকামি ছাড়া কিছুই না!
কারণ সে নিজেও তো কারো প্রতি…
বড্ড আসক্ত!
তাকে ছাড়া সাদাফের চলবেই না!
যেভাবেই হোক,
তাকে নিজের করে নিতেই হবে!
এইসব হিজিবিজি ভাবছিল সাদাফ।
প্রণয় ল্যাপটপ বন্ধ করে ছাদের কোণায় গিয়ে,
সিগারেট ধরিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে দিল বাতাসে।
এটা তার গত দুই বছরের অভ্যাস!
ডার্ক রেড কালারের ঠোঁটগুলো পুড়ে কালচে লাল হয়ে গেছে!
সাদাফ পাশে এসে দাঁড়াল।
বলল,
“এরপর কী করবি?”
প্রণয় বলল,
“কি আবার করব?
যা যেমন চলছে, তেমনই চলবে!”
সাদাফ বলল,
“শুদ্ধ যদি প্রিয়তাকে বিয়ে করতে চায়, তখন কী করবি?”
প্রণয় সামনের নিকষ কালো আঁধারে তাকিয়েই উত্তর দিল,
“খুন করে ফেলব!”
“ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে ভাবব না!
ও শুধু আমার! প্রয়োজন হলে আমি নিজেই তার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে মুছে দেব, তবু সে আমার!
ওর প্রতিটি স্পন্দনের ওপর শুধু আমার অধিকার!
কেবল আবরার শিকদার প্রণয়ের অধিকার…” সে যত জীবন পৃথিবীতে বাঁচবে আমি থাকি বা না থাকি তাকে প্রণয়ের প্রিয়তা হয়েই বাঁচতে হবে,,
“সেদিকে নজর দিলেই জ্বালিয়ে দেব সব কিছু!”
“সে আমার না হলে, কারোরই হতে দেব না!”
সাদাফ ভাবল,
“এ কেমন ধ্বংসলীলা শুরু হলো?”
সে জানে না এই বিনাশের শেষ কোথায়!
এই গল্পের শেষ পৃষ্ঠায় কার জীবনের পরিণতি কেমন হবে, সে জানে না!
তবে শুধু এটুকুই চায়—
সবাই যেন ভালো থাকে!
সে আবার বলল,
“প্রহেলিকার কি হবে?
সে তো তোকে সত্যি ভালোবাসে!”
প্রণয় বলল,
কি আবার হবে
“বিয়ে করার কথা ছিল,
বিয়ে করেছি!
সংসার করছি!
সকল দায়িত্ব পালন করছি!
আর কি চাই?”
সাদাফ বলল,
“তাহলে তুই কি ওকে কখনো ভালোবাসবি না ?”
প্রণয় বলল,
“আমার ভালোবাসার জন্যই ওকে বিয়ে করতে হয়েছে!
তাহলে এখানে ভালোবাসার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে?”
সাদাফ বলল,
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৭
“এভাবে কি জীবন চলবে?”
প্রণয় বলল,
“দেখা যাক, না কি হয়!”
সাদাফ বলল,
“তোরা সবাই কষ্টে আছিস!
দেখতে ভালো লাগে না!”
“তোরা সবাই নিজের জায়গায় ঠিক!
শুদ্ধ যা করেছে ,শুধু নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য করছে।
আর এটা অন্যায় নয়!”
প্রণয় কিছু বললো না!