ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি শেষ পর্ব 

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি শেষ পর্ব 
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* ডক্টর অয়নকে বিষন্ন কন্ঠ নিয়ে বলল
— মিস্টার অয়ন আসলে আমরা আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এখনও কিছুই বলা যাচ্ছে না। আপনার স্ত্রীর পাল্সরেট একদম ধির গতিতে পরছে। দোয়া করুন তার জন্য।
ডক্টর কথাটা বলা শেষ করতেই অয়ন ডক্টরের হাত জোড়া ধরে ফেলে। অয়নের চোখ জোড়া ছলছল করছে। বুকের কষ্ট গুলো মনে হচ্ছে আজ চোখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে। অয়ন কান্না ভেজা কন্ঠে ডক্টরকে বলছে

— প্লিজ ডক্টর প্লিজ! এভাবে বলবেন না প্লিজ! আমি অনেকটা আশা নিয়ে বসে আছি আমি আমার স্ত্রীর হাত ধরে এখান থেকে বাড়ি যাবো। প্লিজ! আমার স্ত্রীকে সুস্থ করে দিন‌। যত টাকা লাগে নিয়ে যান। যা চাইবেন তাই দিবো আমি। সব কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি আমার স্ত্রী কে চাই। প্লিজ!
অয়নের কান্না ভেজা কন্ঠে বলা কথা গুলো ডক্টরের কান উবদি পৌঁছায় ঠিক তবে তার বিপরীত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। ডক্টরের কাছে অয়নকে সান্তনা দেয়ার মতো কোনো কথা ছিলো না। তাই ডক্টর নিজের মতো করে অয়নকে এড়িয়ে চলে যায়। ডক্টর চলে যেতেই অয়ন দৌড়ে অধরাকে একটি বার দেখার জন্য ছুটে চলে আসে অধরার কেবিনে। কেবিনে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অধরা নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। অধির দিকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসছে অয়ন। চোখ থেকে জল টপটপ করে গড়িয়ে পরছে। অয়ন অধরার কাছে এসে অধরার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। অধরার চোখ জোড়া কালো হয়ে গেছে। অয়ন অধরার পাশে একদম নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। কোনো প্রকার শব্দ করার শক্তি অয়নের শরীরে নাই। নার্স অধরাকে ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছে। আর অয়ন বিধাতার নিকট প্রার্থনা করছে অধরা যেনো ঠিক হয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— অনু অয়ন কোথায়?
অনুকে উদ্দেশ্য করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল ইরা। ইরাকে হসপিটালে দেখে অনু মনে মনে বেশ বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করলো না। অনু ইরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— অয়ন ভাইয়া অধরা ভাবীর কেবিনে আছে।
— ওহহ! আমি আপুকে দেখবো।
ইরা কথাটা শেষ করতেই অনু ইরার হাত ধরে ফেলল। ইরা অনুর এমন ব্যবহারে একটু অবাক হলো। অনুর দিকে ইরা বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনু ইরাকে উদ্দেশ্য করে একটু বাঁকা সুরে বলল
— ভিতরে ভাইয়া আছে। আর কেউ ভিতরে যাওয়ার পারমিশন নেই।
— অনু আমার বোনকে দেখতে আমি যাচ্ছি। অয়ন আমাকে পারমিশন দিবে। প্লিজ আমাকে যেতে দাও।
— আর কত ইরা? তোমার কি মেরুদন্ড নেই? জানো তো অধরা ভাবী তোমার এই অয়ন ভাইয়ার সাথে মাখা মাখিটা একদম পছন্দ করে না। তারপরও কেনো ওদের জীবনে এসে ঝামেলা পাকাচ্ছো?
— অনু এসব কি বলছো তুমি? আমি…….

অনু ধমকের সুরে চিৎকার করে ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— ব্যাস! ইরা চুপ করো। তুমি কি জন্য কেবিনে যেতে চাইছো তা আমার খুব ভালো জানা আছে। প্লিজ ইরা আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও। অয়ন ভাইয়া আর অধরা ভাবীর জীবন থেকে একটু দূরে যাও। ওদের মাঝে আর বাধা হয়ে দাঁড়িও না। একটু শান্তিতে থাকতে দাও ওদের। প্লিজ!
অনুর কথাটা গুলো শেষ হতেই ইরার চোখে জল চলে আসে। অনুর কথা গুলো ইরার কানে বেজে চলেছে। ইরা দ্রুত অনুর সামনে থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
* রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে। অধরা এখনও নিজের সেন্সে আসেনি। অধরার পাল্স রেট এখনও ধিরে পরছে। অয়ন অধরার পাশে সারা রাত জেগে কাটিয়েছে। অয়ন অধরার হাতে নিজের হাত স্পর্শ করতেই অধরা কেঁপে উঠলো। অয়ন একটু ভয় পেয়ে গেলো। অয়ন অধরাকে মৃদু কন্ঠে ডাকছে।
— অধরা প্লিজ ওঠো! আমাকে একা করে চলে যেও না প্লিজ। আমি আমাদের সন্তান আর তোমায় নিয়ে বাকিটা পথ চলতে চাই। আর কখনও অবহেলা করবো না আমি। তোমাকে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ আমি দিবো না। তবুও একটিবার চোখ মেলে তাকাও। প্লিজ!

অয়ন কথা গুলো বলতে গিয়ে নিজের চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলো না। অয়নের চোখের জল দেখে নার্স ও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে অধরা অয়নকে বেশ চমকে দিলো। অধরা ধিরে ধিরে নিজের চোখ খুলতে লাগলো। পাল্স রেট একটু একটু করে উপরের দিকে উঠছে। অয়ন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। চোখে মুখে আনন্দ স্পষ্ট। নার্স ডক্টরকে কল করতেই ডক্টর চলে আসে। অয়নকে সরিয়ে দিয়ে ডক্টর কিছু ইনজেকশন পুশ করলো অধরার বাহুতে। ইনজেকশন দিতেই অয়ন ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ডক্টর অধরা কি রিকভার করছে?

ডক্টর হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে অয়নের দিকে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন নিজের চোখের জল মুছে অধরার পাশে গিয়ে বসলো। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন অধরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে সমানে পানি পরছে অয়নের। ভিশন কষ্টের মধ্যে ছিলো যে এতো দিন। অধরার সুস্থ হবার কথা শুনে অয়নের সেই কষ্টটা লাঘব হয়েছে। অয়নকে বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদতে দেখে অধরা অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— আরে ঐ পাগল কাঁদছো কেনো? ভেবেছো আর ফিরবো না? মরে যাবো! আরে তোমার এতো সহজে মুক্তি নেই। অনেকটা পথ চলা বাকি আছে এখনও। প্লিজ কান্না করে না। ভালো দেখায় না তোমায়। চোখ জোড়া মুছে ফেলো।

অয়ন অধরাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছে নিলো। অধরাও কাঁদছে। দুজনের কেউই হয়তো ভাবতে পারেনি যে তাদের জীবনের গল্পটা নতুন করে শুরু হবে। এতো অবহেলা, অপমান, দূরত্ব সব কিছুর সমাপ্তি যখন ঘটেছে ঠিক তখনি তাদের জীবনে নতুন বাধার সৃষ্টি হয়েছে। বলতে বলতে সেই বাধাও কেটে গেলো। এখন সুখে শান্তিতে দিন পার করার পালা। অধরার জ্ঞান ফিরেছে এটা জানার পরে অয়নের বাবা মা কেবিনে এসে অধরাকে দেখে যায়। অয়ন অধরার বাবা মা কেও খবর দিলো হাসপাতালে আসার জন্য। অবাক করার বিষয় হলো তারা তো ঠিক হাসপাতালে এসেছে। এবং অয়নকে অবাক করে দিয়ে অধরার বাবা তার ব্যবহারের জন্য অয়নকে সরি বলে। অয়ন ঐ সব মনে না রেখে অধরার বাবাকে অধরার সাথে দেখা করতে নিয়ে আসে। ইরা আসেনি আর অনুর কথাটা ভিশন রকম আঘাত করেছে তাকে। আঘাত করাটা স্বাভাবিক। কারন যাকে নিয়ে এতো‌ ঝামেলা। তার থাকার চেয়ে না থাকাটাই উত্তম।

———————-* ১বছর পর *———————–
— অর্ন এই তুই আমার এতো দামী মেকআপ গুলো পুরো শরীরে মেখে কি করেছিস? আমার এতো দামী লিপস্টিক! হায় আল্লাহ।
অধরার রাগি চক্ষু জুগল দেখে অর্ন কোনো মতে অধরার সামনে থেকে পালিয়ে তার বাবার কাছে চলে আসে। অয়ন সোফায় বসে বসে ফোন টিপছে। ফোন হাতে নিয়ে অর্নর দিকে দৃষ্টিপাত করে অয়ন বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো।
— সাবাস বেটা। মেকাপে একদম গোসল করে এসেছিস। এরকম ভাবেই মেকাপ দিয়ে গোসল করে আমার বাবাটা হ্যান্ডসাম বয় হয়ে যাবে। তো বাবা এভাবে লুকোচুরি করছো কেনো? তোমার আম্মু কোথায়?

অর্ন কিছু বলছে না। সবে মাত্র তুতলিয়ে কথা বলা শিখেছে। অর্ন তার মা এর দিকে ইশারা করতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা লাঠি হাতে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়ন আর অর্নর দিকে। অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হায় হায় এতো বড় লাঠি কোথায় পেলে? এটা দিয়ে কি করবে?
অধরা রাগি কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলল
— তোমার গুনধর ছেলেকে শায়েস্তা করবো। আমার দামী জিনিস গুলো নষ্ট করে ফেলছে।
— আহহহহ সমস্যা নাই। ঐ মেকাপ ছাড়াই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে। ঐ সবের দরকার নাই।
— হুম তা তো বলবেই। নিজেরা তো দিতে পারো না তাই জ্বলে। বাপ ছেলেকে ইচ্ছে করে পিটিয়ে সোজা করে দেই। আমাকে একটু শান্তি দিলো না। জ্বালায়ে মারলো আমায়।
অয়ন অধরার দিকে মৃদু হেসে এগিয়ে আসতেই অধরা কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— ওখানেই দাঁড়ান। এদিকে এগোতে চেষ্টা করলে একটা মার ও মাটিতে পরবে না। এখনি যাও অর্নকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আসো। আমি নাস্তা দিচ্ছি। খেয়ে অফিসে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
অধরা রেগে চলে গেলো। অয়ন মুখটা মলিন করে অর্নকে কোলে নিতে নিতে বলল
— চল বাবা আমাদের দুঃখ কেউ বুঝবে না।
* অর্নকে ফ্রেশ করিয়ে অয়ন নাস্তা করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলো। রেডি হতে হতে অয়ন দেখতে পেলো অধরা রুমে এসেছে। অয়ন অধরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলতে লাগলো
— উফফফ কি ঘ্রান! কোন পারফিউম দিয়েছো গো? হুমমমম
— এই ছাড়ো। আমি কিছু দেই না। অফিসের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে। যাও বলছি।

* অয়ন কি আর অধরার কথা শোনে? নিজের পাওনা ঠিক বুঝে নিয়ে অফিসে চলে যায় অয়ন। এভাবেই অয়ন আর অধরার জীবনে ভালোবাসা চলতে থাকে। সম্পর্কের শেষ থাকলেও ভালোবাসার কিন্তু শেষ নেই। বাধা বিপত্তি থাকবে। তবে সত্যি কার ভালোবাসা কখনও ভেঙে যাবে না। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যা প্রকাশ করা যতটা কষ্ট কর। ঠিক তেমনি তা আগলে রাখা আরো বেশি কষ্টকর। তবে শেষ পর্যন্ত সত্যিকারের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবেই। ভালোবাসায় লুকানোর জায়গাটা তৈরি মানে দূরত্ব তৈরি। স্বামী স্ত্রীর মাঝে গোপনীয়তা বলতে কোনো কিছুই থাকতে পারে‌‌ না। যদি ভালোবাসায় গোপনীয়তা চলে আসে তবে সেই ভালোবাসা কত দূর এগোবে তা ভাববার বিষয়। সবাই অয়ন আর অধরার জন্য দোয়া করবেন। ওরা যেনো সব বাধা অতিক্রম করে জীবনকে আরো সুন্দর করে সাজাতে পারে।
অতঃপর বলতে চাই পূর্ণতা পায় পৃথিবীর সব পবিত্র ভালোবাসা। পূর্ণতা পাক সমস্ত ভালোবাসার অনুভূতি।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৭

————————– সমাপ্ত ———————-
( শুরু থেকে যারা এখন পর্যন্ত পাশে ছিলেন ও গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন। আলোচনা সমালোচনা গুলো সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। গল্পের কাহিনী গল্প হয়। তা নিয়ে বাস্তবতার সাথে যুক্ত করা উচিত নয়। আবার আপনাদের সাথে দেখা হবে নতুন কোনো‌ গল্প নিয়ে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ)