ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৩

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৩
মিথুবুড়ি

সকাল বেলা। বেলা অনেকটাই হয়ে গেছে। জানালার পর্দাগুলো লাগানো তবুও ভেতরে ভালোই আলোকিত হয়ে আছে। প্রার্থ ঘুমের মাঝেই একটু নড়ে উঠলো। শরীরের তাপমাত্রা একই রকম আছে। হয়তো একটু কমেছে। নিজের পিঠের উপর ভার ভার লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ তাকে চেপে ধরে আছে। বিছানায় নয় নরম বা অনেক গরম কিছুর উপর শুয়ে আছে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে খুব সুন্দর স্মেল বের হচ্ছে। নাকে এসে লাগছে এই চেনা গন্ধটা। ঘুমের মাঝে এতকিছু অনুভব হওয়ায় ঘুম আর টিকলো না। মূলত ঘুমটা হালকা হওয়াতেই এতকিছু অনুভব হচ্ছিলো। এখন পুরোপুরি ঘুমটাই উবে গেলো। আস্তে করে গরম চোখদুটো খুললো। বুঝতে পারলো না কিসের উপর শুয়ে আছে। নিজে যে কিছু একটা জরিয়ে আছে সেটা বুঝলে। নিচ থেকে হাত সরিয়ে বিছানায় রেখে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যার্থ হলো। কিছু একটা তাকে আটকে রেখেছে।

প্রার্থ বিরক্ত হলো। একে তো জ্বর এখনো কমেনি ভালোমতো তার উপর মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে কোথায়,কিসের সাথে আটকে আছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি নিয়ে মাথাটা উপরের দিকে তুললো। চোখ গিয়ে পড়লো পুষ্পর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখে।
বিরক্তিমাখা চোখমুখে ভর করলো বিষ্ময়। কুচকে থাকা ভ্রু সোজা হয়ে গেলো। মুখে আওরালো।
“-পুষ্প!
পুষ্প বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ফরসা নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে। বুজে থাকা চোখদুটো পুতুলের ন্যায় নিখুঁত। পুরু গোলাপি ঠোঁট দুটো মসৃন হয়ে আছে। এত সুন্দর নিষ্পাপ চেহারার মেয়েটা প্রার্থকে ভালোবাসে অথচ সে কখনোই বুঝতেই চায় তার ভালোবাসার পরিধি। সে দেখে শুধুই ভালোলাগা। সে ভাবে এটা তার মোহ, মায়া বা ভালোলাগা ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা হলেও তার কিছুই যায় আসে না।
প্রার্থ নিজেকে পুষ্পর মাঝে মিশে থাকতে দেখে দ্রুত সরে আসলো তার উপর থেকে। পুষ্পর ঘুম এখনো ভাঙেনি। প্রার্থ খাটেই বসে রইলো। মাথাটা ভার হয়ে আছে। শরীরের তাপমাত্রা যেমন তেমনই আছে। একটু নিচে নামতে পারে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজেকে একবার ভালোকরে দেখে নিলো। গায়ের জামা কাপড় ঠিকঠাক আছে কিনা দেখলো। আবার তাকালো পুষ্পর দিকে। পুষ্পর গায়ের জামাটাও ঠিকঠাক আছে। দেখে একটু স্বস্তি অনুভব করলো। কারন প্রার্থ জ্বরে থাকলে তার হুস থাকেনা। সে কোথায় কি করে নিজেও জানে না। দুজনে এতটা কাছাকাছি এভাবে ধরে ছিলো যদিই কিছু একটা হয়ে যায় সেই ভয়েই তটস্থ ছিলো। কিন্তু দুজনকেই ঠিক দেখে একটু স্বস্তি পেলো।
পুষ্পর দিকে আবার তাকাতেই দেখলো তার ঘার বেকে আছে। হাতদুটো বেকায়দায় পরে আছে। এভাবে শুয়ে থাকলে ঘাড়, হাত ব্যাথা হতে সময় লাগবে না।
প্রার্থ এগিয়ে গেলো। পুষ্পর মুখের উপর ঝুকে পড়লো। পূর্নদৃষ্টিতে মুখ পানে চাইতে দেখলো চোখের কোন দিয়ে পড়া অশ্রু জলের দাগ বসে গেছে। চোখের পানি শুকিয়ে লেপ্টে আছে মুখে। প্রার্থর চোখ সেখানেই আটকে রইলো কিছুক্ষণ। হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দিতে মন চাইলো সেখানটায়। একহাত উঠিয়ে আলতোভাবে ছুয়েও দিলো সেখানে। এতটুকু ছুতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। এ কেমন অনুভুতি! বুকের ভেতর হঠাৎ এমন করছে কেন? হাতটা সরিয়ে আনলো সেখান থেকে। মাথাটা বেকে আছে দেখেও ভালো লাগছে না। সোজা করে দিতে মন চাচ্ছে বারবার। আজকাল মনটারও কিসব অদ্ভুত কাজ করতে ইচ্ছে করে। যেগুলো সে কস্মিনকালেও করতে চায় না। কিন্তু মন বলে একটা জিনিস থাকে না। সেই জিনিসটার আবার আবাধ্য জিনিসের প্রতি লোভ বেশি। যাকে চোখের সামনে দেখতেও ইচ্ছে করে না তাকে কিনা এতবার ছুতে ইচ্ছে করছে।

পুষ্পর হাতদুটো উঠিয়ে পেটের উপর রেখে দিলো। মুখটাকে দুহাতের আঁজলায় চেপে ধরলো। বাকা থেকে সোজা করে শুয়িয়ে দিলো বালিশে। ঠিক তখনই পুষ্প পিটপিট করে চোখ খুললো।
এমন সময় যে পুষ্প চোখ খুলবে তা মোটেও আশা করেনি সে। দুজনে মুখোমুখি হয়ে আছে। প্রার্থর মুখ পুষ্পর মুখের ঠিক উপরে। প্রার্থ যেন তার উপর থেকে সরে যাওয়া ভুলে গেলো। পুষ্প প্রার্থর চোখে চেয়ে কাতর কন্ঠে বললো।
“-কাছে এসে মায়া কেন বাড়ান? আমি তো দূরে যেতে চাইছি।
পুষ্পর কথা শুনে হুট করে সরে গেলো উপর থেকে। সোজা হয়ে বসে বললো।
“-ভুল ভাবছিস। তোকে ঠিক করে শুয়িয়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার।
পুষ্প হেসে বললো।

“-আমি তো আপনাকে এমন কিছু বলিইনি।
অপ্রস্ততিতে নিজে থেকেই আবোল তাবোল বলে দিয়েছে প্রার্থ। তবুও নিজের অপ্রস্তুত ভাবটাকে প্রকাশ করতে দিলো না। গম্ভীর্যতা বজায় রেখে বললো।
“-তো কি বলেছিস?
পুষ্প উটে বসে বললো।
“-কিছুনা। বাদ দিন। আপনার জ্বর কমেছে?
পুষ্প এগিয়ে গিয়ে প্রার্থ কপালে হাত রাখলো। তাপমাত্রা দেখে হাতটা সরিয়ে এনে বললো।
“-ইশশ! এখনো একই রকম অবস্থা। ওষুধেও তো কাজ হলো না। আমি ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করছি। আপনি শুয়ে থাকুন আমি খাবারের ব্যাবস্থাও করে দিচ্ছি অনেক বেলা হয়ে গেছে।
এক প্রকার এড়িয়ে যাওয়ার মতো চটজলদি উঠে চলে গেলো রুম থেকে।
প্রার্থ দুহাতে মাথা চেপে বসে রইলো সেথায়। কি যে হচ্ছে নিজের সাথে নিজেরই বোধগম্য হচ্ছে না। ভালো লাগছে না কিছুই।

সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। আজ সারাদিনে মেঘের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় নি আকাশে। মেঘমুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ ছিলো। বিকেলের দিকে এখন সূর্যের তেজ কিছুটা কমে এসেছে। কালকের বৃষ্টিভেজা রাস্তাঘাট একদিনের রৌদ্রঝাঁজে শুকিয়ে গেছে প্রায়।
অর্নবরা দুপুরের পর দিয়েই এসেছে প্রার্থদের বাসায়। রুগী দেখতে। তাদের বন্ধু যে জ্বর আসলে আধ মরা রুগী হয়ে যায় তা তাদের ভালো মতোই জানা আছে।
প্রার্থ বালিসে হেলান দিয়ে বসে আছে। গায়ে কাঁথা জরানো। আর তার এপাশে-ওপাশে, সামনে খাটে, চেয়ারে বসে আছে বন্ধুরা। প্রার্থ একটু পর পর হাচি দিচ্ছে। নাক লাল হয়ে গেছে মুছতে মুছতে। ডাক্তার এসে চেক-আপ করে গেছে সকালে। জ্বর মেপে ওষুধ দিয়ে গেছে। এখন তাপমাত্রা আগের থেকে একটু কম। সকালের দিকে আরেকটু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পুষ্প মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিয়েছে। দুপুরের দিকে প্রার্থ নিজে থেকেই সাওয়ার নিয়ে নিয়েছে। এখন একটু আরামবোধ হচ্ছে।
প্রার্থ বারবার হাচি দিচ্ছে বলে রকি বলে উঠলো।

“-ভাই তুই এমন তাগড়া পুরুষ মানুষ। তোর জ্বর হলে এমন মেয়ে মানুষের মতো হয়ে যাস কি করে বুঝিনা।
কার্তিক বললো।
“-এটা হচ্ছে ওর জন্মগত রোগ। এ রোগির জন্য আমাদের ভাবি আছে সমস্যা নেই। মেয়েদের মতো হয়ে গেলে আবার তাকে পুরুষ করে তুলতে পারবে।
প্রার্থ নাক টেনে কপাল কুচকে বললো।
“-ওর জন্যই হয়েছে এগুলো। না ওর এক্সিডেন্ট হতো আর না আমাকে ভিজতে হতো।
কথা শেষে আবারো হাচি দিলো প্রার্থ। হৃদয়ের হাতে মিনি গিটার ছিলো। প্রার্থ এনেছিলো প্রান্তর জন্য। সেটাকে এখন নিজের আয়ত্তে করে নিয়েছে সে। গিটারে টুংটাং দুটো শব্দ করে সুর লাগিয়ে বললো।
“-তোমরা যে যাই বলো আমাদের হিরোর ভালোবাসা কিন্তু বিরল। বেচারা জানে ভিজলে সে আধমরা হয়ে যায় তবুও আমাদের ভাবিকে হিরোর মতো করে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। বাহ! কিয়া সিন হ্যাঁ। সিনটা রিক্রিয়েট করতে পারলো চক্ষুটা মোর শীতল হইয়া যাইত।
হৃদয়ের টিটকারি মূলক কথায় সকলে হেসে দিলো। তখনই ঘরে ঢুকলো পুষ্প। হৃদয়ের কথা সে-ও শুনলো কিন্তু আমলে নিলোনা। কারন সে জানে প্রার্থর মনে কোন ভালোবাসা টালোবাসা নেই।
হৃদয় প্রার্থ পায়ের কাছে বসায় তাকে পা দিয়ে লাথি দিয়ে বললো।

“-বাজে বলা বন্ধ কর।
পুষ্প রুমে ঢুকে সবার উদ্দেশ্যে বললো।
“-আপনারা নিচে চলুন। নিচে আপনাদের জন্য চায়ের ব্যাবস্থা।
রকি পুষ্পকে ডেকে বললো।
“-আরে ভাবি তুমি এখানে না বসে আমাদের জন্য কিছু বানাতে কেন গেলে। আমরা এখন কিছু খাবোনা।
“-বেশি কিছু না তো। শুধু চা-ই তো। আচ্ছা আমি এখানেই নিয়ে আসি তাহলে।
অর্নব আটকে দিলো পুষ্পকে। বসা থেকে উঠে এগিয়ে গিয়ে বললো।
“-লিটেল প্রিন্সেস! তোমার তো পায়ে ব্যাথা। এভাবে হেটে হেটে বারবার উপর নিচে যাচ্ছো কেন? পায়ে সমস্যা হতে পারে। আচ্ছা দাঁড়াও তো দেখি কতটা কেটেছে।
অর্নবকে পুষ্পর কাছে দেখে প্রার্থর কি হলো কে জানে। সে গম্ভীর গলায় ডাকলো পুষ্পকে।
“-পুষ্প!
পুষ্প চমকে তাকালো প্রার্থর দিকে। সাথে বাকি সবাইও তাকালো। পুষ্প সন্দিহান কন্ঠে বললো।
“-হ্যাঁ বলুন। কিছু লাগবে আপনার?
প্রার্থ একই স্বরে বললো।

“-এদিকে আয়।
পুষ্প অর্নবকে ফেলেই খুঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো প্রার্থর দিকে।
“-বলুন কিছু লাগবে?
প্রার্থ কি বলবে? কেন ডাকলো পুষ্পকে? নিজের কাছেও জবাব নেই। কি হচ্ছে এসব? জ্বরে কি একেবারেই পাগল হয়ে গেলো নাকি? কিছু তো একটা বাহানা দিতেই হবে। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“- উমম। হ্যাঁ পানি দে।
পুষ্প ভ্রু কুচকে গেলো। পানি চাওয়ার জন্য এভাবে ডাকলো? যাইহোক সে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়ে দিলো তাকে।
প্রার্থ পানি পান করতে করতে ভাবলো ” শুধু শুধু কেন ডাকলো পুষ্পকে? অর্নবের সাথে দেখে তো ওর এমন করার কথা নয়। ও আগে থেকেই জানে অর্নবের ফিলিংস সম্পর্কে। জানে বলেই কি এমন লাগছে? এতটা অস্বস্তি আগে কখনো হয়নি। তবে এখন কেন হচ্ছে ? প্রশ্ন হাজারটা তবে উত্তর? উত্তর খুজতে গেলে একটাও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
পুষ্প প্রর্থর কাছ থেকে গ্লসটা নিয়ে বললো।

“-আমি আপনাদের জন্য উপরেই চা আনার ব্যাবস্থা করি বরং৷
অর্নব সাথে সাথে বলে উঠলো।
“-তুমি একা সবগুলো আনতে পারবে না। চলো আমি সাহায্য করছি।
পুষ্প বারন করলো।
“-সমস্যা নেই ভাইয়া। নিচে প্রিয়া, রুবি খালা আছে। ওরা সাথে আনবে।
অর্নব নিজের কথায় অটল থেকে বললো।
“-তবুও চলো যেটুকু পারি সাহায্য করে দেবো।
পুষ্প আর কিছু বললো না। চলে গেলো। সাথে পেছন পেছন গেলো অর্নবও। অর্নবের বাড়াবাড়ি দেখে রাগ হলো কার্তিকের। ব্যাটা জানে এখন পুষ্প প্রার্থর বউ তার পরেও কেন পুষ্পর সাথে এভাবে কথা বলতে হবে। কার্তিক চোখ ঘুরিয়ে তাক করলো প্রার্থর পানে। সে-ও শক্ত চোখের দরজার পানে চেয়ে আছে। ধারালো চোয়াল স্পষ্ট জানান দিচ্ছে দাতে দাত চাপার ব্যাপারটা।
রুম থেকে বেরিয়ে একটু সামনে এগোতেই অর্নব ডেকে উঠলো।

“-প্রিন্সেস!
পুষ্প দাড়িয়ে গেলো করিডরেই। পেছনে ঘুরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো অর্নবের দিকে। অর্নব বললো।
“-তোমার সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
“-হ্যাঁ বলুন কি কথা।
অর্নব আগে পিছে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিলো কারো উপস্থিতি আছে কিনা আশে পাশে। জায়গা ফাকা দেখে বললো।
“-তোমাকে বলেছিলাম না কোন ভালো আইডিয়া পেলেই তোমাকে জানাবো।
পুষ্প মনে করে বললো।
“-হ্যাঁ বলেছিলেন। পেয়েছেন কিছু?
প্রশ্ন টুকু উৎফুল্লতার সাথে করলেও পরপর আবার মিয়িয়ে গেলো মেয়েটা।
“-কিন্তু আইডিয়া পেলেই বা কি। এজীবনে উনাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছি।
“-আগে আমার কথা শুনো। এত আগেই হাল ছাড়লে কি করে চলবে। আমার মতে তুমি স্ট্রং, সাহসী মেয়ে। তোমার মতো মেয়ের এত সহজেই হার মানলে চলে? আমি আছি তো তোমার পাশে। বলেছি না তোমার ভালোবাসা পাইয়ে দিবো তারমানে দিবোই।
পুষ্প হেসে বললো।

“-আচ্ছা। তো কি করতে চাইছেন?
“-তুমি একটু আগে কিছু খেয়াল করেছো?
পুষ্প না বুঝে বললো।
“-কখন।
“-একটু আগে যখন প্রার্থ পানি চাইলো।
পুষ্প মনে করতে চাইলো পানি দেওয়ার সময় কি হয়েছে যেটা খেয়াল করার মতো বিষয়। কিন্তু কিছুই মনে করতে পরলো না। এমন কিছুতো হয়নি। মনে করতে ব্যার্থ হয়ে বললো।
“-কি হয়েছিলো তখন? কি খেয়াল করার কথা বলছেন।
অর্নব হেসে বললো।
“-তুমি সত্যিই অনেক বোকা। শুনো আমিই বলি। আমি যখন তোমার পায়ের ক্ষতটা দেখতে চাইছিলাম ঠিক তখনই ও ডেকে উঠলো। আর ডাকার ধরনটা দেখেছো তুমি?
“-ডাকার আবার ধরন হয় নাকি? আপনি কি বলতে চাইছেন একটু পরিষ্কার করে বলুন তো আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।

“-প্রার্থ জেলাস লিটেল প্রিন্সেস। ও জেলাস ফিল করছে আমাকে তোমার পাশে দেখে। আমি খুব ভালো করে ওর চোখ মুখ খেয়াল করেছি। ও জেলাস। আর একজন মানুষ আরেকজনের প্রতি তখনই জেলাস হয় যখন বিষয়টা তার প্রিয় মানুষকে নিয়ে হয়।
পুষ্পর এখনো বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না প্রার্থ ওকে নিয়ে জেলাস। মনে হাজারও প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। সেই প্রশ্নই উগলে দিলো অর্নবের কাছে।
“-কিন্তু উনি কেন আপনার উপর জেলাস ফিল করবে তাও আবার আমার জন্য? আমাকে তো উনি দেখতেই পারেনা। আর তার উপর আপনি উনার বন্ধু আপনার সাথে কথা বললেই কি? আমি তো সবাই সাথেই এভাবে কথা বলি।
এখন পুষ্পকে বোঝাবে কে যে সবাই আর অর্নব এক নয়। অর্নবের অনুভুতি আর সবার অনুভুতি এক নয়। যে অনুভুতি সম্পর্কে পুষ্প অবগত না হলেও প্রার্থ অবগত। পুষ্পকে তো সব খুলে বলাও যাবে না।
অর্নব বুদ্ধি করে সর্টকাটে সব বুঝাতে চাইলো। বললো।

“-দেখো ভালোবাসার অনুভুতি একদিনে অনুভব করা যায় না। অনুভুতিটাকে স্বীকৃতি দিতেও আমাদের সময়ের প্রয়োজন হয়। আমরা যখন প্রথম প্রথম কারো প্রেমে পড়ি তখন সেটা উপলব্ধি করতে আমাদের অনেক সময় লাগে। প্রার্থর ক্ষেত্রেও তাই ধরতে পারো। তুমি এখন ওর বউ। আর বউয়ের প্রতি কোন মানুষের যে একটুও টান থাকবে না এমনটা কিন্তু নয়। যখন তার মাথায় একটা কথা আসবে যে সে আমার বউ তখন হয়তো ভেতরের অনুভুতিটা চেঞ্জ হবে। তবে তাকে তার নতুন অনুভুতিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে আমাদের। তোমাকে এত কিছু ভাবতে হবে না। তুমি শুধু ভাবো প্রার্থ আমাকে তোমার পাশে দেখে জেলাস ফিল করছে। তাহলে এখন আমাদের করনীয় কি?
পুষ্প বোকা বনে গেছে অর্নবের এত কথায়। তবে কথার অর্থগুলো অবশ্যই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু প্রার্থ যে জেলাস এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। তাই অর্নবের প্রশ্নের উত্তরে বোকা বোকা কন্ঠে বললো।

“-কি?
অর্নব কপাল চাপড়ে বললো।
“-এটুকুও বুঝো না। আর তুমি নাকি ভালোবাসো।
“-ভালোবাসা কি এগুলো বুঝলেই হয়?
অর্নব তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো।
“-আচ্ছা আমিই বুঝিয়ে দেই। আমাদেরকে প্রার্থকে আরো জেলাস করতে হবে। শোনো এই জেলাসি থেকেই আস্তে আস্তে ভেতরে ভালোবাসা তৈরী হবে। বুঝেছো তো?
“-বুঝলাম। কিন্তু জেলাস করবো কি করে?
“-আমি আছি না? টেনশন নিচ্ছো কেন? আমি যা যা করতে বলবো তাই তাই করবে। প্রার্থর সামনে আমার সাথে বেশি বেশি কথা বলবে। হেসে হেসে কথা বলবে। তারপর চেক করবে ওর জেলাসি লেভেল কতটা। যদি এতেও কাজ না হয় তাহলে আমরা অন্য পন্থা বাছাই করবো। আমাদের কাছে কি উপায়ের অভাব আছে নাকি? তুমি দেখো প্রার্থকে তোমার প্রেমে ফেলেই ছাড়বো।

পুষ্প হাসলো অর্নবের মাসুম ব্যাবহারে। মানুষটা পুষ্পর জন্য কতটা করছে। আজকাল কেউ কারো জন্য এতটা করে? পুষ্প প্রসন্ন স্বরে বললো।
“-আপনাকে আমার ভাইয়া কম বেস্ট ফ্রেন্ড বেশি মনেহয়।
অর্নব হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
“-তাহলে বেস্ট ফ্রেন্ডই সই। প্ল্যানের প্রথম ধাপ ফ্রেন্ডশিপ দিয়েই হোক। প্রার্থ আমাদের বন্ধুত্ব দেখবে আর লুচির মতো ফুলবে
পুষ্প হাত মিলিয়ে হ্যান্ডশেক করে বললো।
“-তবে তাই হোক।

প্রিয়া করিডরে পায়চারি করে যাচ্ছে। প্রার্থর রুমে হৃদয়রা বসে আছে। একটু আগেই তাদের চা নাস্তা দেওয়া হয়েছে। প্রিয়া একবার ভেতরে ঢুকে কতক্ষণ ঘুরঘুর করে এসেছে কিন্তু হৃদয় তাকে একবার চোখ তুলে দেখেনি পর্যন্ত। সেই নিয়ে তার কত আক্ষেপ। এত সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে এসেছে তার সামনে কিন্তু সে দেখলোই না। রাগ করে রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছে। এখন করিডোর জুরে ঘুরোঘুরি করছে আর ফন্দি আঁটছে কি করে হৃদয়কে তার হৃদয়ের কথা বলা যায়। ছেলেটার নাম রেখেছে হৃদয় অথচ তার মাঝে হৃদয়ই নেই। এত করে ইশারা ইঙ্গিতে প্রিয়া বোঝায় তাকে তবুও সে বোঝে না। সতেরো বছর চলছে মেয়েটার। এখন অব্দি একটা প্রেমও করেনি। তার বান্ধবীরা স্কুল লাইফ থেকেই তিনটে চারটে করে প্রেম করতো আর সে এখন কলেজে উঠে গেছে তবুও একটা প্রেম করতে পারলো না। সেই ষোলো বছর বয়স থেকে হৃদয়কে পছন্দ করে এখনো সেই হৃদয়তেই আটকে আছে।
দুইবোনের হয়েছে মহা জ্বালা। যাদের কে ভালোবাসা থেকে দশ গজ দূরে থাকা উচিত দুইবোন সেই তাদেরকেই ভালোবেসে বসে আছে।

পুষ্প যাই একটু এগিয়েছে প্রিয়া তো সেই সেখানেই আটকে আছে। এখনো মনের কথাটা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। ওইদিন বলতো অথচ অন্ধের বাচ্চার জন্য বলা হলো না। আজ বলা চাইই চাই। যে করেই হোক আজই বলবে সে। কিন্তু কি করে যে বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
এমন সময় সিঁড়ি ভেঙে উপরে আসতে দেখা গেলো অন্তকে। ওকে দেখেই মাথায় বুদ্ধি এসে গেলো। ওর জন্যই তো ওইদিন বলতে পারেনি কিছু আজ ওকে দিয়েই সেটার শোধ তুলবে।
অন্ত হেটে আসলে প্রিয়া তার সামনে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। দু হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বললো।
“-দাঁড়াও।
অন্ত ভ্রু কুচকে বললো।
“- কি হয়েছে? এমন কাকতাড়ুয়া হয়ে দাঁড়িয়েছিস কেন?
প্রিয়া হাত নামিয়ে বললো।
“-,তোমার সাথে কথা আছে আমার।
অন্ত তাড়া দেখিয়ে বললো।
“-কি কথা? বল। সময় নেই আমার।
“-সময় না থাকলে সময় বের করতে হবে।
“-কি হয়েছে বলবি?
প্রিয়া গলা পরিষ্কার করে রয়েসয়ে বললো

“-বলছি। আগে বলো তোমাকে এখন যা বলবো তুমি কাউকে বলবে না। বুবুকে তো না-ই।বলবে না কথা দাও অন্ত ভাইয়া।
অন্তর ভ্রু উচু হয়ে গেলো। কপাল টানটান করে বললো।
“-কি এমন কথা বলবি যার জন্য এত ফর্মালিটি পালন করছিস আবার আমার নামটাও ঠিকঠাক উচ্চারন করছিস? ব্যাপার কি বলতো। কিছু লাগবে তোর? কিনে দেবো?
“-লাগবে তো কিছু কিন্তু কেনার না। তোমার সাহায্য লাগবে।
“-তো কি সাহায্য লাগবে বল?
প্রিয়া ভয়ে ভয়ে বললো।
“-আমি না হৃদয় ভাইকে ভালোবাসি। দেখো তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা। বুবুকে কিছু বলোনা প্লিজ। অমি সত্যিই উনাকে ভালোবাসি। তুমি একটু সাহায্য করোনা আমাকে। আমি আর কখনো তোমার সাথে বাজে ব্যাবহার করবো না প্রমিস। কিন্তু তুমি অন্য কাউকে কিছু বলো না প্লিজ প্লিজ ভাই।
প্রিয়া ভয়ে এটা ওটা বলে যাচ্ছে যাতে অন্ত কাউকে কিছু না বলে। কিন্তু এদিকে অন্ত’র বুকটা পুড়ে যাচ্ছে। হারানোর দাহনে পুড়ে ছাই হচ্ছে বুকের ভেতরটা। মানুষ বলে না ভালোবাসে কষ্ট পেলে নাকি বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা করে। অন্তরও তাই হচ্ছে। এই ভালোবাসা জিনিসটার সাথে বুকের এত কানেকশন কেন? কিছু হলেই বুকের ভেতরটা জলে পু*ড়ে ছা*ড়খা*র হয়ে যায়।

অন্ত কিছু না বলে প্রিয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বলে প্রিয়া আবার বললো।
“-ও অন্ত ভাই কিছু বলো না। একটু সাহায্য করো আমাকে।
অন্ত দুটো ঢোক গিলে সামলালো নিজেকে। প্রিয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দু একবার পলক ঝাপটে বললো।
“-ভালোবাসিস?
প্রিয়া উপর নিচ মাথা দোলালো।
অন্ত আবার বললো।
“-তাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিস কখনো?
“-সমসময়ই তো পাচ্ছি। মনের কথাটা বলতেই পারছি না। কষ্ট লাগবে না?
“-বুকের ভেতরে ব্যাথা অনুভব করেছিস কখনো? চিনচিনে ব্যাথা, পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রনা? অনুভব করেছিস কখনো এগুলো?
প্রিয়া মাথা চুলকে বললো।
“-এরকম আবার ব্যাথা হয় নাকি।
“-হুম হয়। আমার হচ্ছে।
“-কিন্তু আমার তো কখনো হয় নি।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১২

“-তারমানে তুই এখনো ভালোবাসতে পারিস নি। যেদিন ভালোবেসে এমন ব্যাধা অনুভব করবি সেদিন তোকে তোর ভালোবাসা পেতে সাহায্য করবো। সেদিন আমার কাছে এসে শুধু বলবি তোর ভালোবাসা তোকে পাইয়ে দেবো। আমার মতো ভুগতে দেবো না তোকে।
কথাটুকু বলেই হনহনিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো মুখের সামনে ঠাস করে লাগিয়ে দিলো দরজাটা। প্রিয়া ভাবুক হয়ে তাকিয়প রইলো সেদিকে। কি বলে গেলো? এরকম ব্যাথা পেলেই সাহায্য করবে। হুহ্ শখ কতো। লাগবে না তোর সাহায্য। আমি নিজে নিজেই করে নেবো সব। ব্যাটা অন্ধের বাচ্চা। ভালো করে দুটো কথা বলেছি বলে উনি আকাশ দিয়ে উরছে। যত্তসব। লাগবে না তোর সাহায্য।
মনে মনে একশো একটা বকা দিতে দিতে নিচে নেমে গেলো সে।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৪