ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৭
মিথুবুড়ি
‘টুইন পিক পাহাড়টি এক অদ্বিতীয় সৌন্দর্যের স্থান, যেখানে দুটো পাহাড় একে অপরের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে এবং যার শীর্ষবিন্দু দুটি শৃঙ্গের মতো দেখা দূর হতে । এটি সাধারণত পাহাড়ের চূড়ার দিক থেকে একটি প্রশান্ত এবং বিস্তৃত দৃশ্য উপস্থাপন করে। উপর থেকে দৃশ্যটি অত্যন্ত মুগ্ধকর, যেখানে সারা প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা গাছপালা, নদী বা জলাশয়ের প্রতিফলন এবং দূরের পাহাড়-পর্বতগুলোর সমুদ্রের মতো নীলাভ দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ের শীর্ষ থেকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময়, আকাশের পরিবর্তিত রঙ এবং পাহাড়ের আবহাওয়ার পরিবর্তন এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে, যা প্রকৃতির প্রেমিকদের জন্য এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
এলিজাবেথ জিদ ধরে পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যাস্ত দেখবে। সূর্যাস্ত হতে এখনো প্রায় ঘন্টা দু’য়েক সময় লাগবে। তবে মহারাণীর হুকুম বলে কথা। যথাযথ ভাবে রাণীর সেবা না করলে যদি রাণীর মনঃক্ষুণ্ণ হয়? না না বাবা! অগত্যা রাজি হয়ে গেল তাকবীর। এলিজাবেথকে দ্বিতীয় বার উচ্চারণও করতে হয়নি।
” তো একটু হাঁটা যাক এলোকেশী । সন্ধ্যা হতে মেলা দেরি এখনো। ”
‘এলিজাবেথ মাথার সান হ্যাট ঠিকঠাক করতে করতে তাকবীরের কৃষ্ণগহ্বরে তাকাল। রোদের উত্তপে উজ্জ্বল বর্ণের অবয়বে লালচে আভা দেখা দিয়েছে। দৃষ্টিসীমানার ভিতর কোনো বাড়িঘর নেই। শুধু বড় বড় পাহাড়ের টিলা। উপর থেকে নিচে তাকালে গলা শুকিয়ে আসে এলিজাবেথের। শুকনো ঢোক গিলে দৃষ্টি দিল তাকবীরের উপর। অতঃপর বলল, ” নিচের দিক দিয়ে হাঁটি ?এদিকটায় ভয় লাগছে। পা পিছলে পড়তে পারলে আমি একদম চাঁদে চলে যাব। ”
‘ফিঁক করে হেসে দিল তাকবীর। ওষ্ঠপুটে চঞ্চল প্রাণখোলা হাসি। এলিজাবেথের কপাল কুঁচকানো দেখে যথাসম্ভব হাসি চেপে নিল তাকবীব। তবুও একেবারে সফল হয়নি। ঠৌঁট কামড়ে হাসে, সাথে শরীর ঝাঁকুনি দিচ্ছে অল্পস্বল্প হাসি চেপে রাখার কারণে।
“চাঁদ উপরে এলোকেশী, নিচে না। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘জিভ কাটল এলিজাবেথ তাৎক্ষণিক। তড়িঘড়ি করে নিজের ভুল সংশোধন করে নিল, বলল” হ্যাঁ হ্যাঁ ওটায়।”
‘ঠোঁট কামড়ে ভ্রু গুছিয়ে চেয়ে দেখল তাকবীর তার এলোকেশীকে। একটু হেনস্তা করার জন্য আবারও কথার মধ্যে প্যাঁচ ধরল, বলল,” কোনটাই? ”
‘ এলিজাবেথের নিরুদ্বেগ ভাব, নিরুদ্বেগ জবাব,
“একটা হলেই হলো। ” ~ এমন সব বাচ্চাসুলভ আচরণে আঁটকা পরেছিল একত্রিতের এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ষোলোর এক লাস্যময়ী তরুনীর প্রেমে। তাকবীর শুধু চেয়ে দেখে কীভাবে তার ভালোবাসা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতিকে কেন্দ্র করে পাহাড় সমান গড়ে উঠেছে । দিনকে দিন সে তলিয়ে যাচ্ছে অগাধ ভালোবাসার অতলে। তার এই নিগূঢ় অনুভূতির পিছনে একটাই উদাত্ত উদ্দেশ্য, এই মেয়েটিকে ভালো রাখা এবং নিজের পাশে রাখা। এতে নিজেরই ভালো থাকা।
‘রোদের তৎপরতা খুবই বেশি। শরীর থেকে ঘাম চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। এক ফালি বাতাসের উপস্থিতিও টের পাওয়া দায়। হঠাৎ গলা শুকিয়ে তুমুল কাশি ওঠে এলিজাবেথের। ঝুঁকে দু’হাতে হাঁটুতে ভর দিয়ে কাশতে থাকে। অস্থির হয়ে ওঠে তাকবীর।
“এলোকেশী ঠিক আছো? ”
‘চোখ ঝাঁপিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। এলিজাবেথ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,” পানি। ~ তাকবীরের চিন্তিত অবয়বে আঁধার নেমে আসল। ঢালু পাহাড়ে গাড়ি নিয়ে আসা সম্ভবত নয়। গাড়ি নিচে যাতায়াত সড়কের এক কোণে রেখে এসেছে তাকবীর। দূরত্ব মোটামুটি। এই অবস্থায় এলিজাবেথকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আশেপাশে কোনো মানববসতি নেই, যে সাহায্যের জন্য যাবে কারোর কাছে। এই খোলা বিস্তৃত পাহাড়ে এখন পানি পাবে কোথায়? ওদিকে ক্রমাগত এলিজাবেথের কাশির তোড় বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তাকবীরের রক্তাভ চেহারার বর্ণ পরিবর্তন হতে থাকে। দিশাহীন হয়ে এদিকসেদিক তাকাতে থাকল। হঠাৎ চোখ যায় কিছুদূর দূরেই একটা কাঠের বেঞ্চি রয়েছে। জায়গাটা সমতল।
‘ তাকবীর এলিজাবেথকে ধরে বেঞ্চিতে বসালো। ধাতস্থ গলায় আশ্বাস দিল, ” এলোকেশী, পাখি একটু অপেক্ষা কর আমার জন্য হুম? আমি যাব আর আসব। নড়বে না একদম এখান থেকে।”~ টইটম্বুর চোখে এলিজাবেথ তাকাল তাকবীরের পানে। শ্যামলা মুখে উদ্বিগ্নতায় আঁধার নেমে এসেছে । নিরব মাথা নাড়াল শুধু। তাকবীরও একই ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে সড়কের দিকে ছুটল। এলিজাবেথ যথাসম্ভব ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে কাশি থামানোর চেষ্টা করল।
‘ হঠাৎ অতর্কিত আক্রমণে বুক শুকিয়ে এলো এলিজাবেথের। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায় ঘটনাটি। শুধু অনুভব করেছিল কেউ হেঁচকা টান দিয়ে তাকে শূন্যে তুলে নেয়। নিশ্বাস আঁটকে চোখমুখ খিঁচে রাখে এলিজাবেথ। ঘোড়ার ফুৎকার শব্দে স্তম্ভিত হয়ে ফিরে এলিজাবেথ। সচল হয় থমকে যাওয়া মস্তিক। নাকের ডগায় বারি খেতে থাকে পরিচিত সেই পারফিউমের স্মেইল। গতি হারায় হৃদয়স্পন্দন, এই বুঝি বুক ফেটে যাবে।
পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও শ্বাস নিতে পারে না এলিজাবেথ। দম আঁটকে আসছে। চোখ খুলার সাহস হয় না এলিজাবেথের। একটা হৃদয়হীন বৃক্ষপটের সাথে লেগে আছে তার পিঠ। কারোর বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে সে। পঙ্খিরাজের মতো করে ঘোড়া চড়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে এক বিষাদ রাজ্যের রাজা। ঘোড়ার পায়ের প্রতিটি কদম এবং ঝাঁকুনির সাথে সাথে হাত পা ঘেমে ঠান্ডা হতে থাকে এলিজাবেথের। এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিজের আবিষ্কার করল এলিজাবেথ।
‘ঘোড়ার কর্কশ গলার শব্দ কমে আসল। আশপাশ খুবই শান্ত লাগছে। পিটপিট করে চোখে মেলে তাকায় এলিজাবেথ। দেখতে পায় জায়গাটা একটা স্টাড ফার্মের বিশাল মাঠ। চারিপাশে শুধু সবুজ সতেজ ছোটছোট ঘাস। কাঠ দিয়ে তৈরি বেড়া দিয়ে নিদিষ্ট সমপরিমাণ বিস্তৃত জায়গা ঘেরাও করা। মাঠের এক প্রান্তে কিছু আরবীয় প্রজাতির ঘোড়া শো জাম্পিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, অপর এক প্রান্তে কিছু ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। চারিপাশে এক নজর চোখ বুলিয়ে দৃষ্টি গেল ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা শক্ত হাত দুটোতে। ট্যাটু খচিত হাত অবলোকন হতেই পূনরায় গা শিউরে উঠল এলিজাবেথের। রিচার্ড ঘোড়া নিয়ন্ত্রণের লাগাম ছেড়ে দিল। ঝুঁকল এলিজাবেথের উপর। পুরুষালি রুক্ষ থুঁতনি রাখল এলিজাবেথের কাঁধে। কেঁপে উঠল এলিজাবেথের সমস্ত শরীর। হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে ওঠানামা করতে থাকে। শোনা গেল সেই পুরুষালি গুরুগম্ভীর ভারিক্কি কণ্ঠস্বর,
“মাই রেড। ”
‘ বরফের মতো জমে গিয়েছে এলিজাবেথ। টু শব্দ অব্ধি করছে না। অধর এলিয়ে বাঁকা হাসল রিচার্ড। কুটিল হাতে পেঁচিয়ে ধরল এলিজাবেথের পেট। জবুথবু করে কাঁপতে থাকে এলিজাবেথের শরীর। ঘৃণায় গা শিউরে ওঠে। নিজেকে শক্ত করে এলিজাবেথ, দাঁতে দাঁত পিষে বলল,” এই নোংরা হাতে আমাকে ছুঁবেন না আমাকে দয়াকরে।”
“আমার সকল পাপের মধ্যে তুমিই সর্বাধিক প্রিয়।”
‘উগ্র বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ মানুষের এহেন নিকটে ঠান্ডা স্বরে ভয় বাড়তে থাকে এলিজাবেথের মনে । ভিজে যায় চোখের পাতা, কাঁপে গলা। কাঁপা কাঁপা গলায় আওড়ালো এলিজাবেথ,
” কেন এসেছেন আবার?”
‘অধরের ছোঁয়া এঁকে দিল কাঁধে রিচার্ড। পরপর ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে এলিজাবেথের সমস্ত ঘাড়। ভিজে চ্যাট চ্যাটে হয়ে যায় পশ্চাত পাঁজর। নিজ কাজে নিটল থেকে হাস্কি স্বরে আওড়ায়, ” এজন্য। ”
‘ দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করে রেখেছিল এলিজাবেথ। রিচার্ডের অপ্রীতিকর কথায় এবং কান্ডে চিবুক শক্ত হল। মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। তবে তাতে একচুল পরিমাণ লাভও হয়না। রিচার্ডের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে এক ইঞ্চিও সরতে পারে না এলিজাবেথ। তীব্র ঘৃণায় রিচার্ডের এক হাত পেট থেকে টেনে ছাড়িয়ে এনে দন্ত বসিয়ে দেয়। আক্রোশ এতোই ছিল যে শক্ত চামড়া ভেদ করে রক্তপাত হয়। তবুও নিজের কাজে অনড় রিচার্ড। ঠৌঁটের কোণে বক্র হাসি। ওদিকে হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। ভেজা গলায় চেঁচাল এলিজাবেথ, কণ্ঠনালি ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো ভিতরের সকল আক্রোশ,
” আপনার মতো নরখাদকের জায়গা জাহান্নামেও না হোক। মরে যাচ্ছে না কেন আপনি? ”
‘ কাঁধ থেকে মুখ তুলে রিচার্ড। ক্রোধে মটমট করা ধারালো চোয়ালে আজ নেই কোনো হিংস্রতার ছাপ। অভিব্যক্তি অত্যন্ত স্বাভাবিক। ঠৌঁটে রহস্যময় বাঁকা হাসি। এলিজাবেথের কথার পারদে ক্ষিপ্ততা না দেখিয়ে বরং গম্ভীর গলায় জবাব দিল, ”
” মরে গেলেই কি সমাপ্তি? সাম ডেড রোজ স্টিল ক্যারি ফ্রেগ্রান্স। আই’ম ওয়ান অফ দ্যাম। ”
‘ তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসল এলিজাবেথ, দাঁত এলিয়ে। রুষ্ট গলায় শুধালো, “সাম ব্রোকেন হার্টস স্টিল ক্যারি লাভ”
‘ এবার কণ্ঠস্বর পাল্টায়। মস্তিষ্ক টা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশা/চিক আত্মায়। মুষ্টিমেয় করে নিল এলিজাবেথের চুল, হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠলো,
” ব্রোকেন তো তারা হয়, যারা ছিনিয়ে নিতে জানে না। রিচার্ড কায়নাত খুব ভালো করে জানে কিভাবে নিজের জিনিস ছিনিয়ে নিতে হয়। ”
‘ ব্যাথায় কুকড়িয়ে ওঠে এলিজাবেথ। চুলের গোড়ায় অতিক্রম টান পরার কারণে তৎক্ষনাৎ মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। সহসাই সয়ে নিল কষ্ট। শক্ত গলায় বললো,
” আমি অন্য কারোর। কখনোই আমাকে আপনি ছিনিয়ে নিতে পারবেন না। শুধু আমাকে কষ্টই দিতে পারবেন। ”
‘ আরো শক্ত করে টেনে ধরল রিচার্ড এলিজাবেথের চুলের মুঠি। অপর হাত দিয়ে পিছন থেকে ঝুঁকে শক্ত করে চিবুক চেপে ধরে, ক্ষুদার্ত হিংসের মতো গর্জে উঠল, বললো _
“আই অ্যাম নট দ্য বয় হু ফ্লাইটস উইথ ইউ। আই অ্যাম দ্য ম্যান হু ফাইটস ফর ইউ।”
” কেউ তুলোর মতো নরম হওয়ায় তা পায়ের তলে পিষে চলে যাবে, আবার কেউ হাজার বছর ধরে অক্লান্ত চেষ্টা করে, এক মুহূর্তের জন্যও তার ছোঁয়া পাওয়ার আশায়। আপনার ফেলে রাখা জিনিসটাও কেউ সযত্নে বুকে তুলে নিয়েছে , কারণ প্রকৃতি কখনো শূন্যস্থান সহ্য করে না, সে চায় সব কিছু পূর্ণতা লাভ করুক। ”
‘ ক্রোধ তিরতির করে বাড়তে থাকে রিচার্ডের। চিবুক রেখে এবার কণ্ঠনালি চেপে ধরল। আগুন বর্জন করলো কথায়, চোখে জ্বলছে ক্রোধের অগ্নি।
” আপনি সম্ভবত ভুলে যেত চাচ্ছেন কিভাবে হাঁটতে হয়। ”
‘ দম আঁটকে আসে এলিজাবেথের। তবুও বহু কসরতে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়, ” কি পা ভেঙে দিবেন? দেন না, দিন।
‘ পৈশা/চিক আত্মার অবয়বের ওষ্ঠপুটে ফুটে উঠল শয়তানি হাসি। পরিবর্তন হয় দৃষ্টি, ছেড়ে দিল কণ্ঠনালী, চুলের মুঠি। আবারো থুতনি রাখল এলিজাবেথের কাঁধে, ডান হাত দিয়ে বাঁকানো কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। অপর হাত ছুটল এলোমেলো পথ ধরে। শব্দ করে উঠল এলিজাবেথ। এবার অট্টহাসিতে ফেটে উঠল রিচার্ড। কানের লতিতে ঠৌঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল, ” আই হোপ ইউ ইট নাউ।”
‘কাঁদতে থাকে এলিজাবেথ। কর্ণপাত হওয়া কান্নার প্রতিটি শব্দলোপ অপর কান দিয়ে ঝেড়ে সরে আসল রিচার্ড। এক লাফে নেমে গেল ঘোড়া থেকে। নামিয়ে নিল ক্রদনরত এলিজাবেথ কে। এতোক্ষণে রিচার্ড কে দেখল এলিজাবেথ। রিচার্ডের পরণে হোর্স রাইডিং কালো জ্যাকেট, মাথায় রাইডিং হেলমেট এবং পরিশেষে পায়ে রাইডিং বুট। আর বরাবরের মতো শক্ত চোয়াল। দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে এলিজাবেথ, বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না ক্রোধে কটমট করতে থাকা ধারালো চিবুকে। ঘৃণায় বিষিয়ে ওঠে মন।
” যতটা সরল সাজচ্ছেন ততোটাও নন আপনি । ”
‘ রিচার্ডের কাছ থেকে তেড়ে আসে অপ্রত্যাশিত অদ্ভুত কথা। এলিজাবেথ উৎসুক হয়ে তাকাল রিচার্ডের চওড়া তামুকে। চোখাচোখি হতেই চোখ মারে রিচার্ড। তার এই কথা বলার পিছনে কোনো উদ্যম ই ছিল না। যেটা ছিল সেটা সফল হয়ে গিয়েছে। এলিজাবেথ বুঝল অথবা এটা বলা হয়েছে। দৃষ্টি নামিয়ে পিছন ঘুরে চলে যেতে নেয়। খোপ করে হাত ধরে ফেলল রিচার্ড। তেড়ে পিছন ফিরে এলিজাবেথ। রিচার্ড কিছু বলতে যাবে তখনই ভেসে আসে পুরুষালি ভারি কণ্ঠস্বর,
” ইফ ইউ টক টু মাই ওয়াইফ, ইউ ডাই।”
‘ ভয়ে গুটিয়ে গেল এলিজাবেথ। ধ্বংসযজ্ঞের আগাম সংকেত পেয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রর্থনা করতে থাকে, আর কিছু খারাপ না হোক। ভাবনার মধ্যেই অপর হাতে টান অনুভব করল এলিজাবেথ। তাকবীরের শক্ত খসখসে হাতের বাঁধনে এলিজাবেথের হাত। রিচার্ড ঠৌঁট এলিয়ে হেসে ঘাড় বাঁকা করে তাকাল তাকবীরের দিকে। এলিজাবেথের হাত দুই প্রান্তে দু’জন আঁকড়ে ধরে রেখেছে। এলিজাবেথ একবার তাকবীরের কৃষ্ণগহ্বরে তাকায়, যেখানে এখন নেই কোনো প্রকার হিম শীতল হাওয়া, আগুনের লেলিহান দাউদাউ করে জ্বলছে তাকবীরের চোখে। এলিজাবেথ আবার তাকাল রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত৷ দু’জনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরব যুদ্ধ চলল । হঠাৎ ঠৌঁট কামড়ে হাসল রিচার্ড, হেসে ছেড়ে দিল এলিজাবেথের হাত। এলিজাবেথ দ্রুত সরে গিয়ে দাঁড়ায় তাকবীরের নিটক। তাকবীর এলিজাবেথের সামনে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ আড়াল করে দিল ওকে।
” এলোকেশী গাড়িতে গিয়ে বস। ”
‘ তাকবীরের এহেন বজ্রপাতের মতো গম্ভীর শব্দে চমকালো এলিজাবেথ। তবে আর দাঁড়ায় না এক মূহুর্ত। ফার্মের গেটে তাকবীরের গাড়ি দেখা যায়। এলিজাবেথ দৌঁড়ে গেল গাড়ির অভিমুখে। তাকবীর তখন পানি নিয়ে এসে এলিজাবেথ কে কোথায় খুঁজে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। পাগলের মতো এদিকসেদিক খুঁজতে থাকে। হঠাৎ মাথায় আসে এলিজাবেথের কাছে তো ফোন আছে৷ তাকবীর দ্রুত এলিজাবেথের লোকেশন চেক করল। ফার্মটি টুইন পিক পাহাড়ের খুব নিকটেই। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে তাকবীর।
‘ রিচার্ড পকেটে হাত ঢুকিয়ে সরাসরি এসে দাঁড়ায় তাকবীরের সামনে টানটান হয়ে । তাকবীর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাখে রিচার্ডের উপর। সাপে নেউলে সম্মুখীন। হয় চোখে চোখে সংঘর্ষ। প্রথম বাক্য রিচার্ডের পাশ থেকেই আসে।
” তাহলে দেখা হয়েই গেল। ”
” আমার ওয়াইফের আসেপাশেও যেন না দেখি।
‘ রিচার্ডের কথার বিপরীতে তাকবীরের কাঠকাঠ গলা। তুষ্ট হাসে রিচার্ড। দুই কদম এগিয়ে আসল, ফিসফিসিসে বললো,” যদি দেখা যায়? ”
‘ তাকবীরের তাৎক্ষণিক বেপরোয়া জবাব, ” যুদ্ধের ঘোষণা হবে। ”
‘ রিচার্ড নিচের ঠৌঁট উপরে ঠেলে বাঁকা হেসে বললো,
“ওকে চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড”
‘ জিভ দিয়ে গালের ভিতর ঘুরিয়ে অধল এলিয়ে হাসল তাকবীর। তবে সব সময়ের মতো সেই হাসিতে ছিল না অমায়িকতা। রিচার্ডের সর্দপে প্রশ্ন ছুড়ল দাপুটে গলায়,
” আদৌতেও কি কোনো লাভ হবে? দু’টি মন এক হতে চাইলে তাদের আলাদা করার ক্ষমতা কারোর নেই। এলিজাবেথের স্বয়নে-স্বপনে শুধু আমিই ছিলাম আর আমিই থাকব। ”
” স্বপ্নেও? ~ কিছুটা হচকিয়ে যায় তাকবীর। বুঝতে পারে না রিচার্ডের অদ্ভুত কথার মানে। তাকবীরের অবয়বে বিভ্রান্ত দেখে হেসে ঠৌঁট গোল করে গরম নিশ্বাস ছেড়ে দিল রিচার্ড তাকবীরের মুখের উপর । রক্ত চোখে তাকায় তাকবীর। কেঁপে উঠল এক হাত। নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে তাকবীর। রিচার্ডের গলায় স্পষ্ট বিদ্রুপ, ”
” স্বয়নে কি-না জানি না। তবে আমার কাছে থাকা অবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়নি। কজ আই ডোন্ট ইভেন লেট হার স্লিপ হোল নাইট৷ ”
‘ সংযম হারায় তাকবীর। চেপে ধরল রিচার্ডের কলার। বাঁধা দেয় না রিচার্ড। বরংচ হাসল। শোনা যায় তাকবীরের দাঁতে দাঁত পিষার শব্দ। যা রিচার্ডের মনে প্রশান্তিময় হাওয়া বইছে দিচ্ছে।
” আমার জমিতে কিছু দিন গোলামি করে নে , বাকি জীবন তো আমারই। ওপারে না হোক, এপারে তো হবেই। ”
‘ ঝাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিল রিচার্ডের কলার তাকবীর। কণ্ঠনালী বেয়ে হাসির উদগীরণ ঘটলো ঠৌঁটে। ফিচলে হেসে বললো,
” সেটা তো সময়ই বলে দিবে জমিতে বিচ বুনে কে।”
‘ তাকবীরের কথার মার ফোঁকরের প্যাঁচ ছাড়িয়ে মানে বুঝতে পেরে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে রিচার্ড। তাকবীর বাঁকা হেসে ঘুরে ফিরে। গাড়ির অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। কয়েক কদম যেতেই পিছন থেকে ভেসে আসে রিচার্ডের জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর, ”
” অবশ্যই আমি প্রতিশোধ নিবো। তবে সেটা ভিন্ন ভাবে এবং ভয়ংকর রুপে। যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়ায়। ”
‘ থেমে যায় তাকবীরের পা। বুঝতে পারে না রিচার্ড কিসের প্রতিশোধের কথা বলছে। তবুও পিছন ফিরে না আর। হনহনিয়ে চলে যায়। রিচার্ডের ঠোঁটের আগায় জড়ো হয়েছে রহস্যের ঘনঘটা। হাসতে থাকল একাই। বিদঘুটে হাসি।
‘ সারা রাস্তায় একটাও কথা বলেনি তাকবীর। এলিজাবেথ নিজেও তটস্থ হয়ে ছিল তাকবীরের বেপরোয়া গাড়ি চালানো দেখে। বার বার নিজেকে গালি দিতে থাকে। তারজন্য সকল কিছু। তার অভিশপ্ত জীবনের সাথে জরিয়ে যাওয়া সকলের জীবনের আঁধার নেমে আসে। এজন্যই সে চাইনি ধ্বংসযজ্ঞ, পাপাচারে নিবিষ্ট এক অন্তহীন মরিচীকাময় জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে। ভিতরে ভিতরে আবারো ভেঙে যেতে থাকে এলিজাবেথ। তাদের হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে হয় । এই হোটেলও দুই রুমের এপার্টমেন্ট নেয় তাকবীর।
‘ নিজেদের এপার্টমেন্টে পা রাখতেই শব্দ করে দরজা আঁটকে দিল তাকবীব। ধরা দিল এলিজাবেথের সামনে বদ রুপে। কোমল খোলসের ভিতর থেকে বেরিয়ে উগ্র ভাবে চেঁচিয়ে উঠল এলিজাবেথের উপর। কেঁপে ওঠে এলিজাবেথের সর্বাঙ্গ। তার থেকেও বেশি অবাক হলো তাকবীরের এহেন আচরণে। হাত থেকে ফোনটি পা পরে যায় পায়ের উপর । দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে নেয় এলিজাবেথ। অবিশ্বাস্য নজরে অনড়ভাবে চেয়ে থাকে তাকবীরের পানে। যাকে এখন হিংস্র জ/ন্তুর মতো লাগছে। কৃষ্ণগহ্বরে ফুটে ওঠে ক্রোধের পাহাড়। চেহারা আচ্ছাদিত নমনীয়তার অন্তরালে থাকা এই কঠোরতা সোজে গিয়ে বিঁধছে বৃক্ষপটে এলিজাবেথের। নিষ্পলক দ্বিধাহীন নজরে তাকিয়ে থাকল এলিজাবেথ। তীব্র রাগে ফুলদানি মেঝেতে ছুঁড়ে মারে তাকবীর। যথাসম্ভব চেষ্টা করছে নিজের ক্রোধ দমিয়ে রাখতে। তার কথা ধারা যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় তার শখের এলোকেশী। তবুও শেষ কক্ষে আর হলো না । সোজা তর্জনী তুলে তেড়ে আসল এলিজাবেথের সম্মুখে। কাঠকাঠ গলা,
” ইউ ফরগেট, ইউ আর মাই ওয়াইফ। নট হিজ, নট এনি ওয়ান এলসেস। আই ডোন্ট গিভ আ ফা*ক হাউ হ্যান্ডসাম হি ইজ। ইউ আর মাইন অ্যান্ড নোবডি টাচেস হোয়াটস মাইন আন্ডারস্ট্যান্ড? ওর থেকে দূরে থাকবে।
‘ নিজের ক্রোধের কবল থেকে এলিজাবেথ কে বাঁচানোর জন্য হনহনিয়ে এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যায় তাকবীর। এলিজাবেথ তখনও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ভাঙা কাচের টুকরো গুলোতে। চোখে জমে থাকা জলের বাঁধ ছেড়ে দিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে এলিজাবেথ। অতঃপর ভাঙা কাচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে ফেললো। সে আবার আহামরি কি? যে সবার তার সাথে সবসময়ই ভালো আচরণ করবে। তার জীবন সংগ্রাম ই তো এমন। এলিজাবেথ কষ্ট পায়নি। একটুও না। সে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে এমন তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সাথে।
‘ রাত তখন এগারোটা। তাকবীর তখনও ফিরেনি। এলিজাবেথ মনের অভিমান মনেই পুষে রেখে ফোন দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই সুইচ অফ দেখায়। এলিজাবেথ বুঝতে পারে তাকবীর তার উপর রাগ করে ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে এলিজাবেথ। আজ অনেকদিন পর নিজের জীবনের অমীমাংসিত হিসেব মেলাতে শুরু করে আবার। তবে বরাবরের মতোই ফলাফল আজও শূন্য। অজান্তেই ভাবতে শুরু করে রিচার্ডের কথা। যার ছোঁয়া প্রতিটি জায়গা এখনো ব্যাথা দিয়ে দিয়ে তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যার ছোঁয়ায় নেই কোনোরূপ ভালোবাসা, নৃশংসতা ছাড়া। এলিজাবেথ ভাবতে থাকে তাকবীরের কথা। যে মানুষটা,,,, ভাবার মধ্যেই পায়ে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেলে কেঁপে উঠে এলিজাবেথ। ধ্যান ভেঙে হতচেতন হয়ে ফিরে।ওঠে বসে এলিজাবেথ। বাইরে থেকে কাচের গ্লাস গলিয়ে আসা সোডিয়াম লাইটের আলোতে দেখা যায় তাকবীর কে। তাকবীরের বেডের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে এলিজাবেথের পায়ে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। তখন ফোন পরার কারণে কিছুটা ফুলে গিয়েছিল জায়গাটা।
‘ এলিজাবেথ এতোটাই ধ্যানমগ্ন ছিল যে তাকবীরের উপস্থিত টেরই পায়নি। এলিজাবেথ তড়িঘড়ি করে পা সরিয়ে নেয়। বললো, ” আরে আরে! কি করছেন, পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?”
‘ তাকবীর আবারও এলিজাবেথের পা টেনে নিয়ে বরফ লাগাতে থাকে। খাদযুক্ত কণ্ঠে আওতায়, ” প্রয়োজন তাই। ”
‘ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলো এলিজাবেথ। ভিজে আসে গলা, ” আর কি প্রয়োজন? ”
” ক্ষমা চাওয়া। ” ~ তাকবীরের দ্বিধাহীন তাৎক্ষণিক জবার। মাথা তুলে তাকায়। চোখে একরাশ আত্মগ্লানি। শোকে মুর্ছা যাচ্ছে এমন বানিয়ে রেখেছে শ্যাম বর্ণের মুখশ্রী। দু’টো খাদযুক্ত দৃষ্টি মিলে গেল। তাকবীরের কণ্ঠে অনুশোচনার জলধারা। ভঙ্গিমা স্থির রেখে বললো,
” সরি এলোকেশী। আমাকে ক্ষমা করে দাও। বিশ্বাস কর আমি তখন ঐভাবে কথা বলতে চাইনি তোমার সাথে। আ,,
” আমি কিছু মনে করিনি। ~’ এলিজাবেথের কণ্ঠে অস্পষ্ট অভিমান। বুঝতে পারে তাকবীর। মাথা নুইয়ে ফেলে তাকবীর।
” কিভাবে বুঝলেন ব্যাথা করছিল? ”
‘ তাকবীর নত দৃষ্টি নিবিষ্ট রেখেই প্রত্যুত্তর করে, ” আমি সবই বুঝি। ~ ` বরফ রেখে একটা মলম দিয়ে ম্যাসাস করে দিল তাকবীর। পরপর ওঠে দাঁড়ায়। এলিজাবেথের চোখের চোখ রাখতে পারছে না আত্মগ্লানির জন্য। অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে রেখে বললো, ” খাবার সার্ভ করে দিয়েছি। চল।
‘ কথা বাড়াতে চাইলো না এলিজাবেথ। খাট থেকে নামার জন্য পা নিচে রাখতে গেলে তার আগেই তাকবীর বেডের নিচ থেকে স্লিপার বের করে এলিজাবেথের পায়ের নিচে রাখে। অভিমানী মনে এক পশলা শীতল হাওয়া বয়ে গেল। তবুও অটল থাকল এলিজাবেথ।
” যেগুলোই ভালোবাসা প্রকাশ পায় তা কখনো করবেন না।
” কেন?”
” হঠাৎ কেউ যত্ন করলে অস্বস্তি বোধ করি, অবহেলায় যে অভ্যস্ত, তার জন্য ভালোবাসা বিব্রতকর। ”
‘ তাকবীরের বুকে অসহ্যকর যন্ত্রণা দিচ্ছে এলিজাবেথের এহেন আচরণ। আবারো হাঁটু গেঁড়ে বসল এলিজাবেথের মুখোমুখি। কাতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এলিজাবেথের পানে, বললো,
” শুনেছি অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই সবচেয়ে বড় ম্যাচুরিটি। আফসোস পয়ত্রিশ বছর বয়সেও সেই ম্যাচুরিটি আনতে পারিনি নিজের মধ্যে। আমাকে ক্ষমা করা যায় না? ”
‘ এলিজাবেথ এবার পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকবীরের উপর। চোখে সন্দেহ সংকুচিত হলো। ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো, ” পয়ত্রিশ মানে? ”
‘ তাকবীর এলিজাবেথের বাচ্চাদের মতো এমন অবুঝ কথায় এবং ভাবভঙ্গিতে ঠৌঁট কামড়ে হাসল, বললো,
” তুমি কি আমাকে বুড়ো ভেবেছ? ”
‘ নাক কুঁচকায় এলিজাবেথ, ” তো আপনার বয়স তো কম করে হলেও চল্লিশ হবেই । ”
‘ তাকবীরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল এহেন গুজব মার্কা কথায়। মৃদু চেঁচিয়ে উঠল, ” কিহ !! আমাকে দেখে চল্লিশ মনে হয় তোমার? ”
‘ রাগ পরে যেতে থাকে এলিজাবেথের। কোমর বেঁধে তর্কে নামে, ” তো? আপনার রাজনীতির বয়সের সাথে হিসেবে করলেই তো হিসেবে হয়ে যায়। হ্যাঁ মানছি দেখতে একদমই মনে হয় না।”
‘ তাকবীর এতোক্ষণ বুঝতে পারে আসল রহস্য। ঠৌঁট কামড়ে হেসে নাক টিপে দিল এলিজাবেথের। পরপর বলতে শুরু করল, ” সব জায়গায় জালিয়াতি চললে রাজনীতিতে কেন চলবে না? যেখানে জালিয়াতির নাট্যমঞ্চে ই রাজনীতি।
‘ তাকবীরের কথায় এলিজাবেথের ছোট ছোট চোখ আরো ছোট হল। প্রশ্নবোধক চাহনি দিল। তাকবীর হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো, ” হুম। আমার বয়স বাড়িয়ে দেওয়া জাতীয় সনদে। ”
‘ একসাথে দু’জনেই ফিক করে হেসে দেয়। এভাবে কথা বলতে বলতে রাগ পরে যায় এলিজাবেথের। কক্ষ জুড়ে বিরাজ করে দুজনের প্রাণ খোলা খিলখিলে হাসি। হঠাৎ কথার মাঝেই এলিজাবেথের হাসি থেমে যায় তাকবীরের কথায়।
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৬
” তুমি চাইলে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি হয়ে এসো আমার জীবনে, ধীরে ধীরে আমাকে নিঃশেষ করে দাও। কিন্তু প্রার্থনা একটাই—যখন বিদায় নেবে, আমায় একা রেখে যেয়ো না। সঙ্গে নিয়ে যেয়ো, যেন তোমার অনুপস্থিতি আর সহ্য করতে না হয়। তোমার পাশে থাকাই যদি মৃত্যু হয়, তবে সেই মৃত্যুকেই আমি বরণ করে নেব এলোকেশী। ”
‘ স্তব্ধ হয়ে যায় এলিজাবেথ কিছুক্ষণের জন্য। তাকবীর চলে যায় খাবার রুমে নিয়ে আসার জন্য। এলিজাবেথ বেগতিক দোটানার স্বাক্ষী। মনে মনে বিরবির করে,
” এতো ভালো বাসবেন না ভালো মানুষ। ভেঙেচুরে যাবেন। ”