ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩২ (২)

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩২ (২)
মিথুবুড়ি

‘আরন, এরিক, আসমান, ভিক্টর এবং তাকওয়া এই পাঁচ জন দক্ষ এজেন্ট নিয়ে তৈরী হয় সোয়াট ট্রিম। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন নারী। এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছে এরিক। জন্মসূত্রে কোরিয়ান হলেও এরিকের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং জীবনের সব অভিজ্ঞতা আমেরিকাতেই। বর্তমানে এরিক একজন দক্ষ আমেরিকান নাগরিক। এরিকের কোরিয়ান নাম ‘কিম জি হা’। কোরিয়ান বংশোদ্ভূত হওয়ায় এরিকের গায়ের রং দুধের মতো ফর্সা এবং অসাধারণ উচ্চতায়ও খুবই আকর্ষণীয়। এরিকের চৌকস ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্বের গুণ তাকে টিমের এক অনন্য সম্পদে পরিণত করেছে।

‘এরিক দক্ষতার সঙ্গে এই টিমকে পরিচালনা করবে এই মিশনে। আর ওর অন্যতম সহযোগী হবে প্রেম। প্রেম ডিরেকশন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে এরিককে সহায়তা করবে। তবে প্রথম সাক্ষাতে প্রেম ও এরিকের মাঝে একটি অদ্ভুত দূরত্ব লক্ষ করা যায়। এতেই ধারণা করা যায়,তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা, যেটা তাদের সম্পর্কটি এতো সহজ করে তুলবে না।
‘বাংলাদেশ সোয়াট কার্যলয়ে এই মুহূর্তে অবস্থান করছে আরন, আসমান এবং তাকওয়া। টিমের বাকি দুই সদস্য, এরিক এবং ভিক্টর, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাদের পরিকল্পনা স্পষ্ট। এই টিমে এরিক বাদে সবাই আমেরিকান। তবে প্রতিটি সদস্যের দক্ষতা আর বৈশিষ্ট্যে টিমটি অনন্য। ভিক্টর টিমের মধ্যে আইটি এক্সপার্ট। তার দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় যে কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান নিমেষেই হয়ে যায়। আসমান, যার শরীর একটু ভারী হলেও ছুরি চালনায় অতুলনীয়। আসমানের প্রতিটি আঘাত নিশ্চিত এবং নির্ভুল। আরন, যার নিশানা কখনো মিস হয় না। বন্দুক আরনের হাতে এক জাদুকরী অস্ত্র।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘এরিক এই টিমের চালিকাশক্তি। এরিকের সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা আর তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা টিমকে সবসময় সঠিক পথে পরিচালিত করে। তবে তাকওয়া এই টিমের সবচেয়ে চমকপ্রদ একজন সদস্য। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার সোনালি দীপ্তিতে আলোকিত এই নারী যেন ভুবনমোহিনী এক রূপকথার চরিত্র। তাকওয়ার সৌন্দর্য এতটাই মায়াবী যে কেউ সহজেই ওকে বিপজ্জনক মনে করবে না,ভাবতেই পারে না সে এতো ডেঞ্জারাস কাজে যুক্ত। তবে তাকওয়া শুধু রূপে নয়, গুণেও অনন্য। হিপনোটিজমে তাকওয়ার দক্ষতা এমন যে ও মুহূর্তেই শত্রুকে বশ করতে পারে। টিমের অন্যরা মজা করে বলে, তাকওয়ার সৌন্দর্যই তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাকওয়ার গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল, চুলে আর ব্যক্তিত্বে এমন দীপ্তি যে তাকওয়াকে দেখে মনে হয়, পৃথিবীর কোনো অপূর্ণতা তার মাঝে নেই।
‘এবার এই পাঁচজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শুরু হবে এক গুপ্ত রহস্য উন্মোচনের অভিযান। যেখানে দক্ষতা, বুদ্ধি, আর সাহসের চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে। তাকওয়া তার ডেস্কে বসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে, কিন্তু মাঝে মাঝে চোখ চলে যাচ্ছে ডেস্কের সামনের । যেখানে তাকবীর বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ, মাথা নিচু করে। তাকবীর এ পর্যন্ত একবারও তাকওয়ার দিকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যাপারটায় একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না তাকওয়া। নিজের কাজেই মনোযোগ রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মনে মনে চলছে এক অদৃশ্য খেলা। তাকবীরও নড়ছে না, তাকওয়াও নিজের অবস্থান বদলাচ্ছে না। যেন দুজনেই একে অপরের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। নীরবতার এই প্রতিযোগিতায় কে জিতবে, তা বলা মুশকিল।

“এই যে মিস্টার,আপনার উকিল কখন আসবে?”
‘ধৈর্য পরিক্ষায় জিতল তাকবীর। তাকওয়া আর চুপ থাকতে পারল না। তাকওয়ার কথা শুনে পাশের ডেস্ক থেকে ভ্রু কুঁচকে আসমান তাকাল তাকওয়ার দিকে। তাকবীর তপ্ত শ্বাস ফেলল। জবাব দিল, তবে তখনও দৃষ্টি উপরে নিল না।
“ট্রাফিকে ফেঁসে গিয়েছে।”
‘তাকওয়া এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখতে থাকল তাকবীরকে। নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল তাকবীরের প্রতিটি ভঙ্গি, অবয়ব। শ্যামবর্ণ, যা তাদের কালচারে বরাবরই নস্যি বলে বিবেচিত। তবে আজ তাকবীরের উপস্থিতিতে তাকওয়ার সেই ধারণায় ধাক্কা দিল। তাকবীরের গায়ের রঙে নেই কোনো কৃত্রিম দীপ্তি। তবুও এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি আছে। তাকবীরের মুখের স্থিরতা, নত দৃষ্টি আর নির্লিপ্ত ভঙ্গিমা তাকওয়াকে অস্বস্তিতে ফেলছে। তাকওয়া রিয়েলাইজ করল সৌন্দর্যের সংজ্ঞা শুধু বাইরের চকচকে খোলসে সীমাবদ্ধ নয়। তাকবীরের মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন কিছু, যা তার সংস্কারের সমস্ত শিকড়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

“এমন সম্মানীয় পেশায় থেকেও দুনম্বরি করতে লজ্জা লাগে না?”
‘তাকওয়ার তিক্ত স্বরে তাকবীর এতোক্ষণে গিয়ে মাথা তুলল। তাকাল প্রথম বারের মতো তাকওয়ার দিকে,যে আগে থেকেই চেয়ারে পিঠ হেলিয়ে ঠৌঁটের কোণে বক্র হাসি ঝুলিয়ে চেয়ে ছিল। ভুবনমোহিনী নারীের সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় ডুবে যাওয়ার পরিবর্তে শক্ত হলো তাকবীরের চিবুক। রুষ্ট কণ্ঠে বলল,”কি প্রমাণ আছে আমি কালো ব্যবসার সাথে জড়িত? সামান্য এডিট করা কয়েকটা ভিডিওর উপর ভিত্তি করে আপনারা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন না।”
‘তাকওয়া অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,”ওহ তাই? তাহলে কি ষোলশ মিলিয়ন ডলার আপনার বাপদাদার সম্পত্তি বিক্রি করে জমিয়েছিলেন?”

“বিজনেস! বুঝেন বিজনেস? ছয়টি দেশে আমার এক্সপোর্ট ইমপোর্টসের বিজনেস আছে। আশা করি এতোটাও নির্বোধ নোন, যে এই বিজনেস সম্পর্কে ভেঙে ভেঙে বুঝাতে হবে।”
‘সোজা হয়ে বসল তাকওয়া। তাকবীরের শ্যাম বর্ণে চেয়ে সরু গলায় বলল,”পুলিশ প্রমাণে বিশ্বাসী।”
‘ফিচলে হাসল তাকবীর। অতঃপর ঘাড় বাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”বিজনেসের সকল ডকুমেন্টস আমার পি.এ নিয়ে আসছে। তারপর আপনাদের প্রমাণ টাও আশা করি বাক্য ছাড়ায় দিয়ে দিবেন।”
‘ললাটে ভাঁজ পরলো তাকওয়ার।”কিসের প্রমাণ?”
“আমার দুনম্বরী ব্যবসার সকল প্রমাণ।”

‘থমকে গেল তাকওয়া। তবুও অবয়বে তাকে বিচলিত হতে দেখা গেল না। সত্যিই তাদের কাছে কোনো ভ্যালিড প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র আজকের ভিডিও ক্লিপ গুলোর উপর ভিত্তি করে তাকবীরকে ডাকা হয়েছে।
‘হঠাৎ করেই চৈত্র মাসের হাওয়ায় ঝড়ে পড়া পাতার মতো উড়ে এসে কিছু পিন্টেড ছবি গিয়ে পড়লো তাকওয়ার মুখে। চারপাশে বিস্ময়ের এক চাপা গুঞ্জন বয়ে গেল। তাকওয়া মাথা ঝেড়ে গর্জে উঠে দাঁড়াল। যেন মাটির গভীর থেকে উঠে আসা কোনো অগ্নিগিরি। তাকওয়ার অগ্নি দৃষ্টি সরাসরি গিয়ে পড়ল লাড়ার মুখে। তাকওয়ার অগ্নি দৃষ্টির বিপরীতে লাড়ার ঠোঁটে এক চেনা বাঁকা হাসি।
“হু দ্য হেল আর ইউ বি°চ।”
“এই আস্তে,,!আওয়াজ নামিয়ে।”

‘লাড়া তর্জনী তুলে ধীর ভাবে নিচে নামাতে নামাতে শাসিয়ে বলল। তাকওয়াও কম যায় না। দাঁত দাঁত চেপে ডেস্ক থেকে বেরিয়ে সরাসরি লাড়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দু’টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি একে-অপরের উপর নিক্ষেপ করা।
“গার্ল অফ গ্যাংস্টার জেমস রাইট? বেশি লাফিও না সোনা। বাপের পাপের শাস্তি তোমাকে দিয়েই শুরু করবো৷”
‘খানিকটা অবাক হলো লাড়া, তবে দমলো না। তেড়ে কিছু বলতে যাবে তখনই শোনা যায় কারোর ভারি কণ্ঠস্বর।
“হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং অন হেয়ার?”

‘দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এরিক। চিবুকে গাম্ভীর্যের ছাপ। পাশেই রয়েছে ভিক্টর। এরিককে দেখামাত্রই তাকওয়া দূরে সরে গেল। এতক্ষণ ধরে নিরব দর্শক তাকবীরও এরিকের কণ্ঠস্বর শুনে পিছনে ঘুরল। তাকবীরের দৃষ্টি এরিকের চোখে পড়তেই এরিক তীক্ষ্ণভাবে তাকাল তাকবীরের দিকে। তাকবীর কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না, প্রথম সাক্ষাতেই এরিকের এই দৃষ্টির মানে কী। এরিক এসে লাড়ার সামনে দাঁড়াল। লাড়া দম নিয়ে সোজাসুজি হয়ে দাঁড়াল এরিকের।
“কি হচ্ছে এখানে?”
‘লাড়া ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “ওটাই, যেটা আপনারা করছেন।”
“হোয়াট?”
‘এরিকের ভ্রু কুঁচকে উঠল। লাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে তর্জনী তুলে ভিক্টরের দিকে ইশারা করে বলে উঠল,”হি ফাক°ড মি।”
‘মুহূর্তেই সোয়াট কার্যালয়ে বিস্ফোরণ হলো। সকলের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। ভিক্টর তো যেন আকাশ থেকে টপকে পড়েছে। একটুর জন্য মাটিতে পড়েনি। এরিক ভিক্টরের দিকে তাকালে ভিক্টর চুপসানো মুখে ঘন মাথা নাড়ালো দু’পাশে। এরিক শান্ত চোখে লাড়ার দিকে তাকাল।
“কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে?” এরিক প্রশ্ন করল দৃঢ়স্বরে।’

“প্রমাণ ঐগুলো,” ডেস্কের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছবিগুলোর দিকে ইঙ্গিত করল লাড়া। ওর চেহারায় শয়তানির ছাপ স্পষ্ট। এরিক এবং অন্যান্যরা আবারো ছবিগুলোর দিকে তাকাল। সেখানে দেখা যাচ্ছে ভিক্টর আর লাড়া একে-অপরকে কিস করছে। ভিক্টরের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে চোখ যেন এবার কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। এরিকের স্বর এবার বেশ শক্ত হলো,বলল,
“এগুলো যে এডিট করা, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ভিক্টর এতক্ষণ আমার সাথেই ছিল।”
‘লাড়া সাথে সাথে কঠিন গলায় প্রতিরোধ করল,
“এগুলো যদি এডিট হতে পারে, তাহলে ঐ ভিডিও ক্লিপগুলো এডিট হতে পারে না কেন? প্রশাসন কি নিজের মর্জিমতো সত্য তৈরি করে?”
‘এরিক চোখ সরু করল। ভারি কণ্ঠে বলতে লাগল,”ভদ্রভাবে কথা বলুন। ভুলে যাবেন না আপনি কার সাথে কথা বলছেন।”

“তার আগে আপনি ভুলে যাবেন না, আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে একজন মেয়ে। আর আমাদের দেশে মেয়েদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়। এটা আপনার আমেরিকা না, বস।”
‘ভেসে এলো আরেকটি নতুন কণ্ঠস্বর। প্রেম গায়ে চাপানো লেদারের জ্যাকেট খুলতে খুলতে ভিতরে প্রবেশ করছে। প্রেমকে দেখেই লাড়া এবং এরিক দু’জনের মেজাজ চটে গেল। প্রেম কারোর বিরক্ত চাহনি পাত্তা না দিয়ে লাড়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। লাড়া কঠোর চোখে প্রেমের দিকে তাকাতেই প্রেম হেসে চোখ টিপল। পরপর লাড়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“লাড়া জান্স।”
‘চোখ রাঙালো লাড়া প্রেমকে। এরিকের কণ্ঠ স্থির, অথচ দৃঢ়,“আপনি আমাদের কথার মধ্যে একদম ঢুকবেন না, অফিসার প্রেম। আমি আমার ডিউটি পালন করছি।”
‘প্রেম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, “আমিও আমার ডিউটি পালন করছি।”
‘এরিকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ক্রমেই তপ্ত হয়ে উঠল। গলায় কটাক্ষের ঝাঁঝ, “মানে?কোনটা আপনার ডিউটি মনে হচ্ছে ?”
‘প্রেম নির্ভীকভাবে উত্তর দিল, “একজন নারীর সম্মান রক্ষা করা।”

‘এরিক রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, “অফিসার প্রেম, এখানে কাউকে অসম্মান করা হচ্ছে না।”
‘প্রেম শান্ত, তবুও দৃঢ়ভাবে বলল, “তাহলে এত কাছে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? দূরে সরুন।”_’এই বলে হালকা ধাক্কায় এরিককে পেছনে সরিয়ে দিল। চারপাশ স্তব্ধ হয়ে উঠল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে বিস্ময়ের ছায়া। এরিকের চোখে অগ্নি জ্বলে উঠল। তেড়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই তার চার সহকর্মী তার ঢাল হয়ে তেড়ে যায় প্রেমের দিকে। প্রেম তবুও নির্বাক, অধর কোণে বাঁকা হাসি। বিস্ফোরণ হওয়ার আগ মুহুর্তে দৃশ্যপটে প্রবেশ করল তাকবীর। তাকবীর কঠিন গলায় বলল,“আপনারা নিজেদের মধ্যে কি শুরু করেছেন? থামুন। এই-যে, আমার উকিল এসে গেছে।”
‘তাকবীরের কথায় মুহূর্তেই উত্তেজনার পারদ নেমে এলো। রেয়ান তাকবীরের উকিল নিয়ে তাকবীরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতায় দ্বন্দ্বের জট খুলে গেল। তাকবীরের দৃঢ় উপস্থিতি এবং সময়োচিত সিদ্ধান্ত উত্তপ্ত পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটাল। তবুও প্রেম আর এরিকের শক্ত দৃষ্টি এক বিন্দুও নরম হলো না।
‘উকিল ইতিমধ্যে তাকবীরের ব্যবসার সমস্ত ডকুমেন্টস বের করে তাকওয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। তাকওয়া এগিয়ে গিয়ে বাকি তিন সদস্যের কাছে নথিপত্রগুলো জমা দিল। তিনজন একত্রে নথিগুলো দ্রুত হাতে নিয়ে ঘটঘট করে পাতা উল্টাতে শুরু করে। দৃষ্টি তাদের তীক্ষ্ণ। এরিক তখনও প্রেমের দিকে তাকিয়ে ছিল। কপালে ক্রমে ঘামের ফোঁটা জমতে শুরু করেছে। প্রেম এরিকের উপর বিদ্রুপের হাসি ছুঁড়ে তাকাল লাড়ার দিকে। যে আগে থেকেই নাকমুখ কুঁচকে মুখ বিকৃত করে চেয়ে চেয়ে দেখছিল তার কান্ড। প্রেম আবারো লাড়ার দিকে তাকিয়ে ঠৌঁট গোল করে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল নিঃশব্দে।

‘এরিকের টিমমেটরা ডকুমেন্টস গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে মলিন মুখে তাকায় এরিকের দিকে। এরিক আগে থেকেই ওদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। দৃষ্টি মিলতেই তাকওয়া দু’পাশে মাথা নাড়ল। এরিকের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল মুহূর্তেই। অন্যদিকে তাকবীর ঠোঁটের কোণে তুষ্ট হাসি টেনে বলল, “বলেছিলাম, বিশ্বাস করেনি। এবার হলো হতো? একজন মিনিস্টারকে অহেতুক হ্যারাসমেন্ট করার অপরাধে আপনারা কী শাস্তি পেতে পারেন, কোনো ধারণা আছে?”
‘সোয়াট টিমের সদস্যরা কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। ক্ষোভ তাদের চোখে স্পষ্ট থাকলেও, সকলে নত দৃষ্টিতে নীরব দাঁড়িয়ে রইল। এরিক দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তাকবীরের মুখোমুখি। উচ্চতায় এরিক তাকবীরের চেয়ে অধিক। তাকবীর মাথা উঁচু করে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। এরিক স্মিত হাসল,তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
“তাহলে আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন মিনিস্টার তাকবীর দেওয়ান। আমরা ভাঙি, পথ হারাই, তবে গন্তব্য ভুলি না।”
‘তাকবীর নির্ভীক হাসি দিয়ে জবাব দিল,”আপনাদের গন্তব্য যদি ন্যায়ের পথ হয়, তবে আমিও অপেক্ষা করব। কিন্তু যদি অন্যায় হয়, তবে মনে রাখবেন, আমি শুধু দাঁড়িয়ে থাকব না, আমি প্রতিরোধও করব।”
‘এরিক ঠোঁট কামড়ে নিজের ক্রোধ সংবরণ করল। তার পেছনে থাকা সোয়াট টিমের সদস্যরা মাথা নিচু করে রেখেছে। তাদের প্রত্যেকের চোখে অপমানের তীব্র ছায়া।

“তাকবীর দেওয়ান,আপনার এই আত্মবিশ্বাস একদিন ভেঙে যাবে। আর তখন আপনাকে আর কোনো নথি বা আইন রক্ষা করতে পারবে না।”
‘তাকবীর ফিচলে হেসে ধীর স্বরে, দৃঢ়ভাবে বলল,
“আত্মবিশ্বাস সঠিক হলে তাকে ভাঙা যায় না। তবে আপনি চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন।”
‘তাকবীরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেম হালকা হাসি দিয়ে বিটলামির স্বরে বলল, “আপনার ধৈর্য এবং সাহস দুই-ই প্রশংসনীয়, মিনিস্টার।”
‘তাকবীর মৃদু হেসে প্রেমের দিকে চেয়ে উত্তর দিল, “যে পথ সত্যের, সেখানে ধৈর্যই প্রধান অস্ত্র। আর সাহস? সেটা আমার রক্তে।”
‘আর কথা বাড়ালো না তাকবীর। হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। সাথে গেল রেয়ান আর উকিল সাহেব,গেল লাড়াও প্রেমকে চোখ রাঙিয়ে। ওরা বেরিয়ে যেতেই এরিক ক্রোধে ফোন ছুঁড়ে মারল মেঝেতে।

“এই মিস্টার দাঁড়ান।”
‘তাকবীর বিরক্ত মুখে থেমে দাঁড়াল। গাড়ির ডোর ধপধপ শব্দ করে লাগিয়ে পিছন ঘুরে ঝাঁঝালো স্বরে বলল,”কি সমস্যা?”
‘লাড়া ততক্ষণে ছুটে এসে তাকবীরের সামনে দাঁড়িয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “আরে ভাই! আমি আপনাকে সাহায্য করলাম, আর আপনি আমাকে বলছেন কি সমস্যা। পুরো কাউয়ার্ড একটা!”
“এই মেয়ে,একদম জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব। তাকবীর দেওয়ানের কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। আমার ঢাল আমি নিজেই।”
‘এই বলে তাকবীর আবার গাড়িতে উঠতে উদ্যত হয়। কিন্তু ঠিক তখনই পেছন থেকে ভেসে এলো লাড়ার সুরসুরে কণ্ঠ,
“অন্যের বউ নিয়ে টানাটানি একজন মিনিস্টারের চরিত্রে যায় না।”
‘তাকবীর থমকে গেল। পা যেন জমে গেল মুহূর্তের জন্য। ধীরে ধীরে পিছন ফিরল। চোখে এক অদ্ভুত অগ্নি ঝলসে উঠল। স্থির স্বরে বলল, “যার জন্য পুরো ব্যক্তিত্ব পাল্টানোর কথা ভাবতে পারি, তাকে পাওয়ার চেষ্টা করায় লাজ-লজ্জার কি আছে?”

‘লাড়া বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “তাহলে ডিল করা যাক?”
“কিসের ডিল?”
“রিচার্ড আমার, এলিজাবেথ আপনার। আই ওয়ান্ট হিম অ্যাট এনি কস্ট। আমরা দুজনেই এক পথের পথিক।”
‘তাকবীর হেসে বলল, “তাকবীর দেওয়ানের কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমি একাই যথেষ্ট আমার এলোকেশীকে নিজের করার জন্য।”
‘লাড়ার মুখ অপমানে চুপসে গেল।” তাহলে দেখা যাক মিস্টার মিনিস্টার। কে আগে তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারে।”
‘তাকবীর একটুও বিচলিত হলো না। গম্ভীর মুখে বলে উঠল,”খেলা জমুক, মিস লাড়া। তবে আমার জয় নির্ধারিত।”
‘তাকবীর লাড়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়িতে উঠে বসে দরজা টেনে দিল। ড্রাইভিং সিটে বসা ছিল রেয়ান। রেয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে কিছুক্ষণ উসখুস করে বলল,
“বস, এত বড় সত্য জানার পরেও কীভাবে সামনে এগোনোর কথা ভাবছেন? এটা তো এক প্রকার আত্মঘাতী।”
‘তাকবীর ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কণ্ঠে দৃঢ়তা, অথচ বিষাদমাখা।
“ভালোবাসার কোনো বিশ্লেষণ হয় না, রেয়ান। মানুষ প্রেমে পড়ে বারবার, কিন্তু মায়ায় পড়ে শুধু একবার। আর সেই মায়া যখন প্রকৃত হয়, তখন তা মানুষকে অমরত্ব দান করে, আবার ধ্বংসের দ্বারেও নিয়ে যায়। প্রকৃত প্রেমিক কখনো ক্লান্ত হয় না। পারলে প্রিয়তমাকে হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়ে, জীবনের মাথার তাজ বানিয়ে রাখে। আমি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত চেষ্টা করব।”

‘রেয়ান উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল, “বস, এটা আপনার জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক। কোম্পানি থেকে একের পর এক হুমকি আসছে। আর ঐ শালা গ্যাংস্টারটাও এখন আঠার মতো পিছনে লেগে আছে। এ মায়া আপনাকে ধ্বংস ছাড়া কিছুই দেবে না।”
‘তাকবীরের চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি জ্বলে উঠল। কণ্ঠে একান্ত অভিজ্ঞান, “আমি জানি, রেয়ান। আমি জানি যে বিষময় মায়ায় জড়িয়েছি, তার শেষ গন্তব্য ধ্বংস। মৃত্যু এখানে শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবুও আমি অপারগ। এই মায়া আমাকে বন্দী করে রেখেছে।”
তাকবীর এক মুহূর্ত থেমে দূরের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, “চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠে আমার নিজের পতনের দৃশ্য। ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি আমাকে প্রতিদিন তাড়া করে। রেয়ান, তুমি কি কখনো নিজের ধ্বংস কল্পনা করেছ? আমি করেছি। জানি, তা কতটা তীব্র, কতটা বেদনাদায়ক। তবুও এ মায়া থেকে বের হওয়ার শক্তি আমার নেই। হয়তো এটাই আমার নিয়তি। হয়তো এই মায়াই আমার জীবন, আর এই ধ্বংসই আমার চূড়ান্ত মুক্তি।”
‘রেয়ান আর কিছু বলল না। তাকবীর একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে বাইরে।

‘রিচার্ড কায়নাত—গ্যাংস্টার বস, যার পাথরের মতো কঠোর চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে পাহাড় সমান কষ্ট। মাথার উপর একমাত্র বটছায়া ‘ফাদার’ কে হারিয়ে ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ছে গেলেও কিন্তু বাইরে থেকে সে আগের মতোই অটল। তবে অভিব্যক্তির ভাব আজ অন্যরকম। প্রকাশ না করলেও বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে ভিতরের ভাঙন। নিজের দুঃখকে ভুলে থাকার জন্য বিষাক্ত পদার্থের আশ্রয়ে বাঁচতে শিখেছে। সেই কখন থেকে ক্যাসিনোতে বসে রিচার্ড একের পর এক মদের বোতল খালি করে যাচ্ছে।

‘সেই রয়াল ক্যাসিনো,যার উৎস ধরে এক দর্শনার্থে চলে গিয়েছিল লাল চুলের সেই মায়াবীর খুঁজে। রিচার্ড আজ একাই। কষ্টের সময় গ্যাংস্টার বস নিজেকে একা রাখতেই পছন্দ করেন। ভয় হয়,যদি কেউ তার এই ভাঙা রূপ দেখে ফেলে। ন্যাসো আর লুকাস ফাদারের শেষকৃত্যে যাওয়ার ইচ্ছা জানালেও তাদের যেতে দেয়নি রিচার্ড।
‘রাত তখন মাঝরাত ছুঁই ছুঁই। রিচার্ড ক্যাসিনোতে ঢোকে চকচকে অন্ধকারে, সময় ছিল এগারোটার আশপাশ। সেই থেকে নিজের ভেতরে হারিয়ে রয়েছে। টেবিলের উপর ফেলে রাখা বোতলগুলো একের পর এক খালি করে যাচ্ছে। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে ড্রাগের প্যাকেট আর ইনজেকশন। চারপাশ ভরে আছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর তীব্র গন্ধে, যেখানে নিঃশ্বাস নেওয়াই দুষ্কর। কিন্তু রিচার্ড? তার মুখে প্রশান্তির ছায়া। অস্থির পরিবেশও রিচার্ডকে ছুঁতে পারছে না। কারণ এই বিষাক্ত পৃথিবীটাই তার স্বস্তির আশ্রয়।
‘রিচার্ড ভিআইপি লাউঞ্জের নীরবতায় ডুবে ছিল। চারপাশ নিস্তব্ধতা। কাচের দরজার বাইরে স্নিগ্ধ আলোর ঝলকানিতে জ্বলাচ্ছিল। কোনো পায়ের শব্দ নেই, নেই কোনো কোলাহল। শুধু নিস্তরঙ্গ শূন্যতা। হঠাৎ নির্জনতার বুক চিরে ভেসে এলো এক মোলায়েম মেয়েলি স্বর। গানের সুর বাতাসে ঢেউ তোলে ধীর। শব্দটা আসছে কাছ থেকে।

_Gimme boy, gimme boy
_i am your lady I got you here
_what you want_? Feel to crazy,,,
_I am your girl, i am your Girl
_I am your mamma
_Come on boy, Don’t be shy
_Don’t want drama…
‘পায়ে চার ইঞ্চির হিল ঝুলিয়ে হেলেদুলে ভিতরে প্রবেশ করল লাড়া। শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ঢাকা পাতলা কাপড়ে। যতটুকু লুকানো, ততটুকু খোলামেলা। রিচার্ড লাড়াকে দেখেও যেন দেখল না। এমনকি মুখাবয়বেও কোনো ক্রোধের ছাপও দেখা গেল না। উল্টো, নতুন আরেকটা বোতলের মুখ খুলে নির্লিপ্তভাবে মদ খেতে থাকল। লাড়া, আগের বারের ঘটনা মনে রেখে এবার আর রিচার্ডের তেমন কাছ ঘেঁষল না। পাশের কাউচে গিয়ে বসল, তবে অঙ্গভঙ্গি ছিল যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন রিচার্ড,লাড়ার দিকে একবারের জন্যও ফিরল না, তখন আর চুপ থাকতে পারল না লাড়া।
“কাম অন রিদ। আমি জানি, এখন তোমার কারোর সঙ্গের প্রয়োজন। লুক, আই’ম হেয়ার। এই দেখো,জামাটা বিশেষভাবে তোমার জন্য কিনেছি।”

‘রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটল। অল্প বিরক্তি এবং বিষাদ মেশানো। দু আঙুলের মাঝে রাখা সিগারেটের আগুন ধরালো রিচার্ড। অতঃপর জ্বলন্ত সিগারেটের টান দিয়ে কাঠকাঠ কণ্ঠে বলল,
“আমার ব্যক্তিগত নারী ছাড়া, পৃথিবীর সমস্ত নারীও যদি আমার সামনে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকে, তবুও আমার অনুভূতিতে এক বিন্দু কম্পন আনতে পারবে না। আমার মেশিন এতো নড়বড়ে না। আমার নিয়ন্ত্রণ ইস্পাতের মতো অটুট।”
“সুযোগ পেলে বুঝি কোনো পুরুষ কখনো ছেড়ে দেয়?”

“আমি সেই চিকন পেন্সিল না,যেটা সব সার্পনারের ভিতর ঢুকে যাবে। আমার পেন্সিলের নিজস্বতা আছে।
যেটা যেকোনো সার্পনার নিতে পারে না। ইউ হ্যাভ টু আন্ডারস্ট্যান্ড লাড়া বেবি।”
‘অপমানে থমথমে হয়ে গেল লাড়ার মুখ। ক্ষোভে চেঁচিয়ে বলল,
“ঐ মেয়ের থেকে কি কম সুন্দরী আমি? কোন দিক দিয়ে কম আমি? কখনো চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেছো?”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবল। পরপর ভণিতাহীন নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
“সৌন্দর্য তো শুধুমাত্র নজর কাড়ে, আর ব্যক্তিত্ব হৃদয় ছুঁয়ে যায়।”
‘লাড়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“কাম অন, রিচার্ড। এসব প্রেমের বুলি এখন পুরোনো হয়ে গেছে। আই ডোন্ট ইভেন রিমেম্বার, আমাদের প্রথম দেখা কবে হয়েছিল। আর তুমি? তোমার তো আরো আগে ভুলে যাওয়ার কথা।”
“২৩শে অক্টোবর ২০২৪, বৃষ্টি ঝরেছিল সেই সকালে।”
‘রিচার্ড শূন্যে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অবিলম্বে আওড়ালো। স্তব্ধ হয়ে গেল লাড়া। এক মুহূর্তের জন্য মুখে কোনো শব্দ এলো না। থেমে, গভীর শ্বাস নিয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠল লাড়া,,
“হোয়াট দ্য হ্যাক! তুমি কি সত্যিই ওই তারিখ মনে রেখেছ?”
“এই মেয়ে, আমাকে তুমি বলার অধিকার তোকে কেউ দেয়নি। সাবধান।”
‘লাড়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল রিচার্ড। এতো নেশা করার পরও শরীরে অটুট দৃঢ়তা, একবারের জন্যও টলল না রিচার্ড। লাড়া হতাশায় মেঝেতে পড়ে ক্ষোভে চিৎকার করতে করতে নিজের চুল টেনে ধরল।

“হেই লাড়া ! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?”
‘লাড়া মদ খেয়ে টাল হয়ে টলতে টলতে ঘাড় বাকিয়ে পিছন ফিরল। ঝাপসা চোখে প্রেমের চেহারা অবলোকন করে আবার সামনে ফিরল। ছেলেটার মাথা বার কাউন্টারের আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“ফা°ক প্রেম। উই আর ওমেন। ম্যানিপুলেট দেম, দ্যাটস হোয়াট উই ডু।”
‘রিচার্ড চলে যাওয়ার পর থেকে লাড়া তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বেদনায় মদ গিলেই যাচ্ছিল। হঠাৎ এক তরুণ তার পাশে এসে ফ্লার্ট করতে চাইলে লাড়া ছেলেটাকে ধরে কাউন্টারে মাথা চেপে ধরে। গ্যাংস্টারের মেয়ে বলে কথা! শরীর পাতলা হলেও শক্তি অসাধারণ। প্রেম এগিয়ে এসে লাড়ার হাত থেকে ছেলেটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছনে লাথি মেরে পাঠিয়ে দিল। অতঃপর লাড়ার পাশের টোলে গিয়ে বসল। ফ্লার্ট করতে শুরু করল।
“এটা তো ম্যানিপুলেশন না, পুরোপুরি অ্যাটাক ছিল। মাঝেমধ্যে আমাকেও তো এভাবে করতে পারো, লাড়া জান্স। একটুও মাইন্ড করবো না।”
‘লাড়া ঢুলুমুলু চোখে প্রেমের দিকে তাকিয়ে ম্লান স্বরে বলল,

“আবার ফ্লার্ট করছ?”
‘প্রেম চুল ঠিক করে, ঠোঁট কামড়ে মুচকি হেসে বলল,
“Kya karu, O ladies main hoon, adat se majbur।”
‘লাড়াও হেসে গানের তালে তালে চিবিয়ে বলল,
“Ham kisi ko asani se miltay he nehi hain।”
‘প্রেমের তৎক্ষনাৎ জবাব,”আমি নাহয় একটু কষ্ট করেই পেলাম তোমাকে।”
“কিরে ভাই, আজ আমার হাসি সুন্দর না বলে পিছে পড়ে গেলি।”
‘মুহূর্তের জন্য প্রেমের মুখ থেকে উজ্জ্বলতা মুছে গেল। প্রেমের নিরবতা দেখে লাড়া উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
“বাহ! এত তাড়াতাড়ি সব বুঝে গেলে?”
_থেমে,
“আর কে বলেছে তোমার হাসি সুন্দর না? বাসায় কি আয়না নেই?”
‘প্রেমের কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসল লাড়া। কিন্তু সেই হাসি দ্রুত মিলিয়ে গেল। মুখে নেমে এতো আঁধার,কণ্ঠ ডুব গভীর খাদে।
“যাকে আমি ভালোবাসি, তার কেন পছন্দ হলো না আমার হাসি? আমি তো তাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি।”
‘প্রেমের অভিব্যক্তি এবার গম্ভীর হলো। সোজা হয়ে লাড়ার দিকে ঘুরে বসল। নরম গলায় বলে,”কারণ সে তোমার জন্য নয় তাই। তোমার জন্য যার সৃষ্টি তার কাছে দুনিয়ার সব নারী তুচ্ছ হয়ে তুমি হবে একমাত্র। এই ধরো_’যেমন আমি’। এই প্রথম কোনো মেয়ের হাসিতে আমার হৃদয়ে ঝড় উঠেছিল, হিংস্রতার বদলে স্নেহের ঝড়। মেরি জান বান যাও, লাড়া জান্স।”
‘লাড়া প্রেমের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঢুলতে ঢুলতে সামনে এগিয়ে যায়। যেতে যেতে গলা ছেড়ে বলে গেল,”কুইন’স ডোন্ট ফল ফর ডগস হু হ্যাজ আইজ অন এভরি বিচেস।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ লাড়া জান্স। আমি প্রেম আহসান। খানদানি বংশ আমার, কুত্তা বংশ না। আমার বংশের কেউ কুত্তাও পালে। তবে এখন থেকে তোমার পিছু আমি কুত্তার মতোই ছুটবো। লেট মি ড্রপ ইউ বেবি।”

“হ্যাপি থ্রি ইয়ার লাভ অ্যানিভার্সারি মাই বিলাভড হাজব্যান্ড।”
“হোপ মহিলা।”
‘অতিরিক্ত মদে পানে এমনিতেই মাথা ধরে আছে রিচার্ডের। তার উপর একের পর এক ঝামেলা এসে জুটেছে। সেই কখন থেকে অনবরত একটা নাম্বারে কল আসছে। শেষপর্যন্ত বিরক্ত হয়ে এইবার রিসিভ করল রিচার্ড, আর শোনা গেল এমন আজব কথাবার্তা। বিরক্তিতে, তিরিক্ষি মেজাজে ফোনটা পাশের সিটে ছুঁড়ে ফেলতে যাচ্ছিল রিচার্ড ঠিক তখনই ওপাশ থেকে ভেসে এলো এক মিহি স্বর,
“আপনি কি আমার স্বামী না?”
এক মুহূর্ত থেমে আবার বলে,”ওহ! সরি, সরি ভুল নাম্বারে কল দিয়ে দিয়েছি মনে হয়। কিছু মনে করবেন না হুহ?জানেন, আজ খুব মন খারাপ। আচ্ছা, আপনার সাথে কি দুই মিনিট কথা বলা যাবে?”
‘রিচার্ড ফোনটা কানে নিল,কাঠকাঠ গলায় জবাব দিল,”না।”

“প্লিজ… আচ্ছা, সময় দিতে হবে না। শুধু বলুন তো স্বামী আগে, নাকি বন্ধু?”
‘গম্ভীর গলায় উত্তর দিল রিচার্ড,”চরিত্রহীন মেয়েদের কাছে বন্ধু আগে।”
‘কিছুক্ষণ নীরবতা,ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এলো না। কয়েক সেকেন্ড পর মেয়েটি মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“তাহলে বউ আগে, নাকি জিদ?”
‘রিচার্ড কান আর কাঁধের মাঝে ফোন চেপে ধরে স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,”আন্ডারস্টান্ডিং আগে।”
‘মেয়েটি যেন লাইন পেয়ে গেল এবার। দ্রুত বলে উঠল,
“জানেন, আমার স্বামী খুব ভীতু। এতো বছরেও বিয়ের কথা প্রকাশ করতে পারেনি। একটা বিবাহ বার্ষিকিতেও আমাকে শুভেচ্ছা জানায়নি।”
“ডির্ভোস হিম।”

‘রিচার্ডের গা ছাড়া জবাবে যেন ওপাশের অজ্ঞাত মেয়েটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। বিস্ফোরিত কণ্ঠে গদগদ করে বলতে লাগল,”তওবা, তওবা, তওবা এসব কি বলছেন আপনি? আচ্ছা মশাই আপনি তো খুব খারাপ। আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইলাম আর আপনি আমায় ফালতু পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বামীকে ডির্ভোস দিলে আমি থাকব কিভাবে?মানছি লোকটা একটু পাষাণ।”
‘কথার মাঝে থামল মেয়েটা। আবার থমথমে গলায় বলল,”একটু না অনেকটাই পাষাণ।”
“বললাম ই তো লিভ হিম।”
‘রিচার্ডের ভারিক্কি কণ্ঠস্বর কর্নপাত হবার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ঝড়ের বেগে কথা ছুটে আসলো,”কিন্তু কিভাবে, আমি যে তাকে ছাড়া থাকতে পারি না। ”
‘রিচার্ড নিশ্চুপ।
‘ফোনের অপর পাশের মেয়েটা আবার বলতে লাগলো,”আচ্ছা আপনি কি আমাকে একটু সঙ্গ দিবেন, তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য।”

‘এবারও নিশ্চুপ রিচার্ড। ছটফটিয়ে উঠল অপরপ্রান্ত।
“আচ্ছা বন্ধু হবেন প্লিজ?”
“রিচার্ড কায়নাত কোনো মেয়ে বন্ধু বানায় না।”
“ওহহহ! আপনার নাম বুঝি রিচার্ড। একদমই সুন্দর না। আমি আপনাকে ছোটখাটো করে অন্য কিছু বলে ডাকব হুহ?”
‘নিস্তব্ধ রাস্তায় বিষণ্ণ মনে রিচার্ড, চাইলেও ফোনটা কেটে দিতে পারছে না। অচেনা মেয়েটার সাথে কথোপকথনটা অবচেতনে চালিয়ে যাচ্ছে। কণ্ঠে কোনো তেজ নেই, অভিব্যক্তি স্বাভাবিক। মেয়েটির প্রতিটি বাক্যে একধরনের স্নিগ্ধতা মিশে আছে, যা রিচার্ডকে বিরক্তি ভুলিয়ে দিচ্ছে। রিচার্ড চুপচাপ শুনছে মেয়েটির বকবক। বাইরের নিস্তব্ধতা আর ফোনের ওপাশের মেয়েটির কণ্ঠ মিলেমিশে এক আশ্চর্য মায়ার জাল বুনছে চারপাশে।
“হ্যাঁ ভাবা শেষ। “টুকি”। আপনাকে আমি আজ থেকে টুকি ডাকব।”
“হোয়াট দ্য হেল।”

‘শোনা গেল ওপাশ থেকে মেয়েটির খিলখিল হাসির রিনঝিনে শব্দ। সেই রিনঝিনে শব্দ নিস্তব্ধ রাতটাকে একটু প্রাণবন্ত করে তুলল। হাসতে হাসতে মেয়েটি বলল,
“রাগলেও আমি আপনাকে এটা বলেই ডাকব! আজ থেকে আপনি আমার টুকি বেস্টু। আপনি না ভাবলেও আমি ভাবছি।”
‘রিচার্ড বুঝতে পারে মেয়েটা একটা বাঁচাল। কিছু বলার আগেই মেয়েটি হালকা শ্বাস নিয়ে আবার শুরু করল,”দেখুন, আপনিও নিশ্চয়ই খুব একা। তা না হলে এতো রাত পর্যন্ত সজাগ থাকতেন না। আর আমিও একা। চলুন, আমরা একে অপরকে সঙ্গ দিই। আজ থেকে আমি প্রতিদিন রাতে, ঠিক এমন সময় কল দিব। ঠিক আছে?”
“আই’ম হ্যাপিলি ম্যারিড, ড্যামেট!”
‘রিচার্ডের ঝাঁঝালো স্বর মেয়েটির গায়েই লাগল না। বরং গমগমে গলায় হেসে বলতে থাকল,”তো, এতে কী হয়েছে? আমারও তো হাসবেন্ড আছে। আর আমার হাসবেন্ডের মতো আপনার ওয়াইফও নিশ্চয়ই আপনাকে সময় দেয় না। তাই তো এখন আমার সাথে কথা বলছেন।”

‘রিচার্ড কিছুক্ষণ চুপচাপ শুনল। তারপর গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল,”আমার ওয়াইফ খুবই ডেঞ্জারাস।”
‘মেয়েটি যেন রিচার্ডের কথা শুনে আরও উদ্দীপ্ত হলো। দাপুটে গলায় বলতে শুরু করে, “ইসসস! আমি কি কাউকে ভয় পাই নাকি? আপনি জানেন না মশাই, আমার হাত কতো বড়। ফ্রেন্ডশিপের মধ্যে ঝামেলা করতে এলে কিডন্যাপ করে চাঁদে পাঠিয়ে দেব আপনার ওয়াইফ কে ৷”
‘রিচার্ড হালকা হাসি হেসে বিদ্রুপ করে বলল,”ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে নাকি?”
‘মেয়েটি গলায় জোর এনে দৃঢ়ভাবে বলল, “হ্যাঁ, করছি। চিনেন না এখনো আমাকে!”
‘এবার পরিবর্তন হলো রিচার্ডের কণ্ঠস্বর,”আর ইউ প্রিটি?”
‘ থতমত খেয়ে গেল মেয়েটা। এবার কণ্ঠটা নরম শোনাল,”ব্ল্যাকমেলারের সাথে সুন্দর অসুন্দরের কি সম্পর্ক?”
“আচ্ছা তুমি কি দেখতে সুন্দর?”
‘মেয়েটির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বিস্মিত স্বরে বলল,
“এই আপনি কি ফ্লার্ট করছেন? আপনি না একজন ম্যারিড পার্সন!”
‘রিচার্ড ঠৌঁটে কামড় বসাল। অতঃপর গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে বলল,”আমার ওয়াইফ এখন ঘুমাচ্ছে। সঙ্গ দেওয়ার জন্য তো একজন না একজন লাগবেই, তাই না?”
‘মেয়েটির কণ্ঠ এবার আর শোনা গেল না। তবু মনে মনে রিচার্ডকে বিশ্রি একটা গালি দিয়ে চুপ করে রইল।
রিচার্ড এবার আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩২

“তোমার নাম কী?”
“কেন?”
“তোমার নামে কল্পনায় রঙ সাজাবো, আর নাম জানবো না? সেই সময়গুলোতে নামের প্রয়োজন হয় মেয়ে।”
“ছিঃ! আপনার চিন্তা-ভাবনা এত বাজে?”
‘রিচার্ড মৃদু হেসে বলল,”আমি তো এখন তোমাকে নিয়েই চিন্তা করছি। তাও খুব গভীরভাবে।”
“ছিঃ। অসভ্য, অসভ্য।~সঙ্গে সঙ্গে কল কাট হয়ে গেল। রিচার্ড ঠৌঁট কামড়ে হেসে ফোন পাশের সিটে ছুঁড়ে মারলো।’

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৩