ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৩
মিথুবুড়ি
‘রিচার্ড, তাকবীর, এলিজাবেথ, আর লাড়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিল চূড়ান্ত হবে। ওদের সাথে উপস্থিত আছেন বায়ার স্ট্রিফেন এবং তার ম্যানেজার। শর্ত অনুযায়ী, জে.কে. এম্পায়ার ও বীর টেক্সটাইল—এই দুই কোম্পানির মধ্যে যেকোনো একটিকে ডিলটি দেওয়া হতো। তবে লাড়ার উপস্থিতি ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ছোটবেলা থেকেই লাড়ার বেড়ে ওঠা আমেরিকায়। তাই আগে কখনো রিচার্ডের সঙ্গে দেখা হয়নি। আমেরিকায় পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর, বাবা মায়ের স্নেহ ছাড়া বেড়ে উঠা লাড়া, বাবার চাহিদা অগ্রাহ্য করে নিজের মতো করে এক নতুন কোম্পানি গড়ে তোলে। নিজের স্বাধীনতায় বাঁচতে চেয়েছিল লাড়া, এবং জেমসের বাধার বিপরীতে গিয়ে যা করেছে। আর তাতেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল সাফল্য অর্জন করে।
‘কথায় আছে, পিরিতি কাঠালের আঠা,একবার লাগলে আর সহজে জোড়া ছাড়ে না। লাড়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। প্রেমের অদম্য টান তাকে ইতালি থেকে এখানে টেনে এনেছে। নিজের গড়ে তোলা সাম্রাজ্য আর ব্যক্তিত্বের শক্তি ভুলে, সে প্রেমের জোরে এই লড়াইয়ে উপস্থিত। তবে এই ভালোবাসার টান কি শুধু হৃদয়ের, নাকি এর সঙ্গে জড়িত আছে আরও গভীর কোনো উদ্দেশ্য? লাড়ার চোখে যে ঝলক, তাতে বোঝা দায় আসলে সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে এসেছে নাকি এই ডিলকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার পরিকল্পনায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘এদিকে এলিজাবেথের উপস্থিতি ছিল তাকবীরের কারণে। তাকবীর শুধু বাড়ি নই, নিজের সকল বাবর অস্থাবর সম্পত্তির অর্ধেক এলিজাবেথের নামে করে দিয়েছে। সেই সুবাদে এই বড় ডিলের চূড়ান্ত পর্বে এলিজাবেথের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই ডিল শুধু ব্যবসার নয় বরং ক্ষমতা আর নিয়ন্ত্রণের এক জটিল লড়াই।
‘এলিজাবেথ একদম চুপসে দাঁড়িয়ে আছে তাকবীরের পিছন। নিজের অস্তিত্ব আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। লাড়া ও তাকবীর স্ট্রিফনের সাথে ডিলের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করছে। মিটিং শুরু হওয়ার আর বেশি দেরি নেই, তবে রিচার্ড অন্য জগতে। রক্ত গরম চোখে তাকিয়ে আছে এলিজাবেথের দিকে। এই ব্যস্ততার মধ্যেও তাকবীরের তীক্ষ্ণ নজর এড়ায় না এই অস্বস্তিকর মুহূর্তের। নিজের অবস্থান বদলে এলিজাবেথকে আরো আড়াল করে দাঁড়াল তাকবীর।
‘অন্যদিকে, লাড়া কথার ফাঁকে ফাঁকে রিচার্ডের দিকে তেরছা চোখে তাকাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে অজানা হাসি। যেনো চোখে চোখে প্রেমের সমীকরণগুলো তার এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা সহজ। এখানে শুধু ডিল নয়, চলছে অগোছালো, জটিল এক প্রেমের যুদ্ধ। চারটি হৃদয়ের বিপরীত হৃদয়ের প্রতি টান।
‘কথার মাঝেই স্ট্রিফেন লাড়ার সাথে কথা বলতে বলতে কনফারেন্স রুম থেকে বাইরে গেল। এখন রুমে উপস্থিত আছে শুধু এলিজাবেথ, তাকবীর আর রিচার্ড। রিচার্ড এখনো পর্যন্ত এলিজাবেথের দিক থেকে দৃষ্টি ভঙ্গ করেনি, আর না এলিজাবেথ মাথা তুলেছে। তাকবীর এলিজাবেথকে কিছু বলতে যাবে তখনই রেয়ান এলো। তাকবীরের কানে কিছু বলতেই চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয় তাকবীরের কৃষ্ণগহ্বরে। তাকবীর জিভ দিয়ে শুষ্ক অধর ভিজিয়ে চোখ বুলালো পুরো রুমে, পরপর তাকাল রিচার্ডের দিকে, তাকাল এলিজাবেথের দিকে। আজ তারা ডিল ফিক্সড করার জন্য যেই ফাইভ স্টার হোটেলে উঠেছে, সেই হোটেলের আপস্ট্রেয়ারে পার্টি হচ্ছে। অনেক ধরনের মানুষের আনাগোনা। তাকবীর এমন পরিবেশে এলিজাবেথকে বাইরে নিতে চাইল না।
“এলোকেশী! একটু ঐ কর্ণারে গিয়ে দাঁড়াও, আমি আসছি দুই মিনিট। স্টে কনফিডেন্ট।”
‘এলিজাবেথ ভিতরে ভিতরে তটস্থ হলেও তা প্রকাশ্যে আনল না। ফোঁস নিশ্বাস ছেড়ে উপর-নিচ মাথা ঝাঁকালো। তাকবীর স্মিত হেসে, রিচার্ডের দিকে শক্ত চোখে চেয়ে বেরিয়ে গেল রেয়ানকে নিয়ে। আচ্ছা এখানে কে পাত্তা দিল কার তীক্ষ্ণ চাহনি_?
‘তাকবীর চলে যেতেই এলিজাবেথও পা বাড়ায় কর্ণারে যাওয়ার জন্য। কিন্ত যেতে আর পারল কই। হেঁচকা টানে ধাক্কা খেয়ে গিয়ে আঁচড়ে পড়ল দেয়ালে। অতর্কিত আক্রমণে বুক পাঁজরে তীব্র চাপ অনুভূত হয় এলিজাবেথ। চকিতে পিছন ফিরতে না ফিরতে আবারো শিকার হলো আরেকটি ধরাশায়ী আক্রমণের।
রিচার্ড এসে সজোরে চেপে ধরল এলিজাবেথের চিবুক। দু’চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে ওর। অকস্মাৎ রিচার্ড ছাড়িয়ে গেল অবাকের উচ্চ পর্যায়। সহসা দন্ত বসিয়ে দিল এলিজাবেথের কাঁধে। ব্যাথায় ছটফটিয়ে উঠল এলিজাবেথ। চিৎকার করার সুযোগও দিল না রিচার্ড। ওর খসখসে শক্ত হাতে চেপে ধরল এলিজাবেথের মুখ। কাঁধ থেকে রক্ত বের করে তবেই মুখ তুলল রিচার্ড। মুখ থেকে সরিয়ে নিল হাত। ঝিরঝিরে রক্ত ভেসে উঠল কাঁধের কোমল মাংসের উপর।
‘এলিজাবেথ কাঁধ চেপে ধরে নিচে বসে পড়ল। কান্না আটঁকে রাখার তুমুল চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলস্বরূপ কাঁপছে ঠৌঁট, নাকের পাটা। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ব্যাথায় টনটনাচ্ছে। রিচার্ডও হাঁটু ভেঙে বসল। ওর উত্তপ্ত ঘন শ্বাসের শব্দ রুমের নিস্তব্ধতা ভেদ করছে। পিনপতন নীরবতার মাঝে একমাত্র শোনা যাচ্ছে এলিজাবেথের নাক টানার মৃদু শব্দ আর রিচার্ডের ক্রোধে ফুঁসতে থাকা শ্বাসের প্রতিধ্বনি। ক্রোধে মটমট করছে গ্যাংস্টার বসের চোয়াল। এই অযাচিত ক্ষুব্ধতার কারণ এলিজাবেথ এখনো বুঝে উঠতে পারল না। রিচার্ড তর্জনী ঠেকানো এলিজাবেথের চিবুকে নিচে। অতঃপর ধীর ভাবে উপরে তুলল এলিজাবেথের নির্মল চেহারা। এলিজাবেথের ঠৌঁট অনবরত কাঁপছে, আঁখি যুগল টইটম্বুর করছে বর্ষার ধারায়। বাঁধ ভাঙতে পারে যেকোনো সময়। রিচার্ডের ক্রোধ এতটাই তীব্র যে কথা বলার সামর্থ্যটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। অবাক করে দিয়ে গ্যাংস্টার বসের কথা ভেজে ভেজে আসছে।
“তুই সুন্দর, তবে সেই সৌন্দর্য শুধুই আমার জন্য। খোদার কসম, তোকে আজ জ্যান্ত মাটি চাপা দিয়ে দিতাম—শুধু আমার অধিকার হারানোর ভয়টাই আমায় আটকাচ্ছে।”
‘এলিজাবেথের বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। বিহ্বল দৃষ্টিতে রিচার্ডের দিকে তাকাল। চোখে ঝলমলে কৌতূহলের ছায়া।
“কিসের অধিকা… আহহ!”
‘কথাটা শেষ করার আগেই কোনো সাবধানবাণী ছাড়াই রিচার্ড আবারো ঝাঁপিয়ে পড়ল এলিজাবেথের উন্মুক্ত অপর কাঁধে। এবার আর মুখ চেপে ধরল না ; বরং এলিজাবেথ নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরল দু’হাতে। চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করছিল নিজেকে সংযত রাখতে। এতক্ষণে গিয়ে এলিজাবেথ বুঝতে পারল রিচার্ডের এতো ক্রোধের কারণ। আজ এলিজাবেথ অফ-শোল্ডার টপ পরেছিল। ঘন লাল রেশমি চুলগুলো তালুর উপরে চুড়ো করে বাধা ছিল। ফলস্বরূপ কাঁধ ও পিঠের বড় একটা অংশ ছিল উন্মুক্ত।
‘যদিও এলিজাবেথের কাঁধে ছিল ওভারকোট, তবুও
ইচ্ছেকৃতভাবে সেটা খুলে পাশে রেখে দিয়েছিল। রিচার্ডকে একটু জ্বালানোর জন্য একপ্রকার খুনসুটির মতো। কিন্তু জ্বালাতে গিয়ে যে নিজেই জ্বলে যাবে, সেটা কল্পনাতেও আনেনি এলিজাবেথ। এখন মনে হচ্ছে, খেলাটা বোধহয় একটু বেশি দূরই চলে গেছে। এবারো রক্ত ঝড়িয়ে ই ছাড়ল রিচার্ড। এলিজাবেথ বিষাদে ভরা চোখে তাকিয়ে আছে রিচার্ডের নীল মরীচিকার মায়াবী চোখে।
‘শান্ত নদীর মতো মন্থর শিথিলতা তলিয়ে গেল রিচার্ডের ক্রোধ মুহূর্তেই। ওর সমুদ্রের গহীন রহস্য লুকানো দৃষ্টি চলে গেল এলিজাবেথের চেরির মতো টসটসে ঠোঁটে। নিস্প্রভ, দ্বিধাহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইল রিচার্ড। চোখে একধরনের নীরব আকাঙ্ক্ষা। ধীরে ধীরে এলিজাবেথের ওষ্ঠপুটের দিকে এগিয়ে গেল রিচার্ড। তৎক্ষনাৎ মুখ ফিরিয়ে নিল এলিজাবেথ। রিচার্ড তুষ্ট এক মুচকি হাসি হাসল। তবে আজ আর জোর করল না।
“দোষ আমার না, দোষ তোমার,রেড। কারণ তুমি একটু বেশিই হট। যা বারবার আমাকে কন্ট্রোল হারাতে বাধ্য করে, মাই ফাকিং ডার্ক রেড।”
‘রিচার্ডের গলায় তপ্ত আক্রোশ আর গভীর আকর্ষণ মিশে আছে। এলিজাবেথের চোখে বিস্ময়ের ছাপ,বুকে ধুকপুক করছে এই বন্য স্বীকারোক্তির সামনে। রিচার্ড উঠে দাঁড়াল অহেতুক কথা না বাড়িয়ে। পরপর এলিজাবেথকেও একটানে তুলে সোজা করল। এলিজাবেথের শরীর তিরতির করে কাঁপছে। বারবার শুধু দরজার দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ অনুভব করল ওর কাঁধ ঢেকে গেল শক্ত ভাঁজের কাপড়ে। এলিজাবেথ তাকাল নিজের কাঁধে। দেখতে পেল রিচার্ডের কোট’টা সযত্নে ওর ক্ষত কাঁধ ঢেকে দিয়েছে।
“আপনি মানুষটা কেমন? বুঝে উঠা খুবই মুশকিল।”
“অযথা বুঝতে গিয়ে নিজের ছোট মস্তিষ্ককে কষ্ট দিও না।”
‘রিচার্ড গা ছাড়া ভাবে মিটিং স্পেসে বসতে বসতে নিরুদ্বেগ ভাব নিয়ে বলল। এলিজাবেথ কোট টা শরীরের সাথে আরো ভালোভাবে মিশিয়ে নিল। অতঃপর রিচার্ডের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে সরু গলায় বলল,
“আমি যেমন খুশি, তেমন জামা পরবো। আপনার এতে সমস্যা কোথায়?”
“পুরুষ মানুষের এই চাঁদটাই একমাত্র প্রতিবাদী অস্ত্র,যেটা খারাপ কিছু দেখলেই রুখে দাঁড়ায়।”
‘রিচার্ড মিটিং রুমেই সিগারেট ধরালো। পা তুলে দিল টেবিলে। থতমত খেয়ে গেল এলিজাবেথ রিচার্ডের কথায়।
“ছিঃ আপনার কথাবার্তা এতো নোংরা। কোনো কথায় গুরুত্ব না দিয়ে উল্টাপাল্টা বলেন। আমি মজা করিনি।”
“তোমার ধারণার থেকেও জঘন্য।”
‘ফোসফাস করে শ্বাস ছাড়ল এলিজাবেথ। এই লোকটা যে এক নম্বরের রগচটা আর ঠৌঁট কাটা এটা তার আগেই জানা হয়ে গিয়েছে। এলিজাবেথ তিক্ততার বাণী ছেড়ে তুষ্ট হাসল। পরপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“এটা বলুন আপনি জেলাস।”
“দ্যাটস ফাকিং বুলশিট।” শূন্যে ধোঁয়ার মেঘ ছড়িয়ে দিতে দিতে তুচ্ছ হেসে বলে রিচার্ড। রিচার্ডের কথাগুলো গায়ে এসে আগুনের ফুলকির মতো পড়ল এলিজাবেথের। দাঁতে দাঁত পিষল এলিজাবেথ।
“ওকে,, তাহলে আমি এখনই এটা খুলে ফেলছি।”
‘বলে এলিজাবেথ গা থেকে কোট খুলে ফেলতে লাগলে ভেসে আসে রিচার্ডের শাসানো কণ্ঠে।
“একদম এসিড ঢেলে দিব, তুই একবার খুলে দেখ শুধু।”
‘চুপসে গিয়ে মলিন হয়ে উঠল এলিজাবেথের অবয়ব। আবারো কাঁধে সুন্দর করে রেখে দিল কোট টা। এই লোকের বিশ্বাস নেই, সত্যি সত্যিই ঢেলে দিতে পারবে।
কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই রিচার্ড তার ফোন উঁচিয়ে সামনে ধরে,অন্য হাতে এলিজাবেথকে থামিয়ে দিল। ব্যস্ত গলায় বলল,
“হুসস! আমার মাঝরাতেের বান্ধবী ফোন দিচ্ছে, একদম চুপ।”
‘অযাচিত কারণেই এলিজাবেথের বৃক্ষপটে বারুদ জ্বলে উঠল। এলিজাবেথ তেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাঝপথে রিচার্ড এক হাতে টাইপ করতে করতে অপর হাত দিয়ে একটা চাবি ছুঁড়ে দিল। এলিজাবেথ চমকালেও ধরতে সক্ষম হয় চাবিটি। কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাড়া, স্ট্রিফেন ওরা ভিতরে চলে আসলে। এলিজাবেথ গুটিয়ে নেয় নিজেকে। তাকবীর আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
‘অপরদিকে ভাঁজ সংকুচিত কপালে দাঁড়িয়ে আছে তাকবীর। পাশের চিন্তামগ্ন রেয়ান। হঠাৎ তাকবীর কিছু মনে হতেই স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“চিন্তা করো না প্রেম। অফিস আমি আগে থেকেই খালি করে রেখেছিলাম। আর বাকিটা আব্বা সামলিয়ে নিবে। ভিতরে চলো, তোমার ম্যাম একা আছে।”
‘এরিক আজ তার ট্রিম নিয়ে বীর টেক্সটাইলে রেট দিতে গিয়েছিল। সেই খবর পেয়েই রেয়ান দ্রুত তাকবীরকে ডেকে এনেছিল। তবে তাকবীর দক্ষ খেলোয়াড়, সে এমন কেউ নয় যে সহজে তার চিহ্ন ফেলে আসে। কিন্তু একজায়গায় তাকবীর এখনো দ্বিধায়—সব কিছু ফেলে বীর টেক্সটাইলকে কেন তাদের প্রথম টার্গেট বানানো হলো?
‘যতই ভাবুক, বেশিক্ষণ সময় নিল না তাকবীর। পায়ের গতি বাড়িয়ে সরাসরি ভিতরে প্রবেশ করল। কিন্তু ভেতরে ঢুকেই চোখ গিয়ে পড়ল এলিজাবেথের কাঁধে ঝুলে থাকা রিচার্ডের কোটের ওপর। মুহূর্তেই হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল। এলিজাবেথও তাকবীরের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এখনো পর্যন্ত বসেনি চেয়ারে। তাকবীর ধীরে এগিয়ে গেল এলিজাবেথের কাছে। নিচু স্বরে বলল, “ওটা খুলে ফেলো, এলোকেশী।”
‘এলিজাবেথ দ্বিধা ও সংকোচের মাঝে একবার চোখ বুলালো সামনে। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের মাঝে লাড়ার চোখে একরাশ তিক্ততা। এলিজাবেথ বুঝতে পারছে, এই মুহূর্তে কোটটি গা থেকে সরানো মানে নিজের ক্ষত স্থান সকলের সামনে উন্মোচন করা। এমন লজ্জাজনক মুহূর্তে সে পড়তে চায় না। তাকবীরের দিকে চেয়ে, এলিজাবেথ জোরপূর্বক মৃদু হাসি দিল এবং বলল, “থাকুক না।”
‘তাকবীর ভিতরে আঘাত পেলেও আর কিছু বলল না। টেবিলের ভিতর থেকে চেয়ারের অর্ধেক অংশ বের করে এলিজাবেথকে সসম্মানে বসতে দিল। এলিজাবেথ চুপচাপ বসেও গেল, তাকবীর বসল এলিজাবেথের পাশে। লাড়া আগেই আগ বাড়িয়ে গিয়ে গিয়ে রিচার্ডের পাশে স্থান দখলে নিয়ে নিয়েছিল। রিচার্ড ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে স্মোক করছিল। স্ট্রিফেন, রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,
“মি. কায়নাত প্লিজ।”
‘রিচার্ড স্ট্রিফেনের কথাকে পাত্তা না দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো। স্ট্রিফেন কিছুটা লজ্জিত হলেও দ্বিতীয়বার কিছু বলল না। বিজনেস ম্যান রিচার্ড কায়নাতের যে আরো একটা পরিচয় আছে। আর সেই পরিচয় যে কতোটা বর্বর আর ভয়ংকর তা সকলের অবগত। দ্বিতীয় বার আরো কিছু বলল না স্ট্রিফেন। যথারীতি মিটিং শুরু হলো। প্রথমেই লাড়া প্রেজেন্টেশন শুরু করল। মিলিয়ন মিলিয়ন টাকার ডিল ছিল এটি, এবং সকলের প্রস্তুতিও ছিল সেরা থেকে সেরা _।
‘লাড়ার পর তাকবীর তার প্রোজেক্টের দেখাতে শুরু করল। সবার চোখে গাম্ভীর্যের ছোঁয়া, তবে রিচার্ড একদমই ভিন্ন। সেই কখন থেকে একমনে ফোনে কিছু না কিছু টিপে যাচ্ছে। এদিকে লাড়া যে তাকে চোখে গিলে খাচ্ছে, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। অন্যদিকে এলিজাবেথ শুকনো মুখে মাথা নিচু করে রেখেছে। এসব কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। নিজেকে পুরোপুরি অবসন্ন, অবসাদগ্রস্ত লাগছে।
‘তাকবীরের চোখেমুখে প্রবল ইচ্ছা স্পষ্ট—এই প্রজেক্টটা পাওয়া। ইতিমধ্যেই তাকবীরের কোটি কোটি টাকা লস করে হয়ে গিয়েছে, শুধুমাত্র একটা সিদ্ধান্তের কারণে। আজ এই ডিলটি না পেলে, তাকবীরকে বড় ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হবে। যে চাপ তার ব্যবসার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
“টুকি বন্ধু।”
‘আবারো সেই রং নাম্বার থেকে মেসেজ। ফোঁস নিশ্বাস ছেড়ে রিপ্লাই দিল রিচার্ড। সে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছে তা যেনো কুল হারিয়েছে। আঙুল চালিয়ে লিখলো,
“হোয়াট?”
‘সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে রিপ্লাই আসল,”কি করো টুকি বেস্টু?”
“বৌকে চোখে গিয়ে খাচ্ছি, আর তোমার সাথে পরকীয়া করছি।”
‘বোম ফাটল ওপাশে। থেমে থেমে টাইপ করে রিপ্লাই আসল,”মানে?”
“মানে ওটাই, যেটা বললাম।”
“পরকীয়া মানে?”
“বউ রেখে পরনারীর সাথে কথা বলা তো পরকীয়া ই তাই না? এখন পরকীয়া করছি। কিছুদিন পর আমরা আমাদের কাপলের আড়ালে হোটেলে গিয়ে দেখা করবো।”
‘ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে অফলাইন হয়ে গেল ওপাশ। ফিরতি কোনো মেসেজ আসলো না। এবার পালাক্রমে প্রেজেন্টেশনের পালা রিচার্ডের। মনিটরে রিচার্ডের প্রোজেক্টের প্রেজেন্টেশন দেওয়া হলো। মুহূর্তের মধ্যে মনিটর থেকে নীল আলোক রশ্মি গিয়ে পড়ল বিশাল স্ক্রিনে। সবাই কে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করে স্ক্রিনে প্রেজেন্টেশনের বদলে ভেজে উঠল গান। সবাই স্তম্ভিত, চোখে বিস্মিত।
Keep you on my
mente siempre mi vida.
I’m a gangster wife
to an anybody killa.
Daddy let me know that ,
I’m your only girl.
The only man that,
I need in this gangster world
‘স্ট্রিফেন রিচার্ডের দিকে চেয়ে ভারি গলায় বলল,”এসব কি মি.কায়নাত?”
‘রিচার্ড হেলান থেকে সোজা হয়ে বসল। ঠৌঁট কামড়ে তুষ্ট হেসে বলল,”শুভ কাজে বউদের স্মরণ করতে হয়। আমার নাহয় প্রেজেন্টেশন আমার বউকে এই গানটা ডেডিকেট করে শুরু করলাম।”
‘একসাথে লাড়া এবং তাকবীরের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। এলিজাবেথ, চোখ বুঁজে ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। মিটিং শুরু হলো যথাক্রমে, পূর্ণ মনোযোগে।
‘এই প্রথম বারের মতো হেরে গেল রিচার্ড, এবং তা শুধুমাত্র পূর্ণ মনোযোগের অভাবে। আজকের প্রেজেন্টেশনগুলো ছিল অসাধারণ, প্রতিটি প্রেজেন্টেশনই ছিল দুর্দান্ত। কাউকে রেখে কাউকে ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল মুশকিল। স্ট্রিফেন মনে মনে তাকবীরের প্রেজেন্টেশনকে বেশি পছন্দ করলেও, রিচার্ডের সামনে সেটা প্রকাশ করতে পারছিল না। শেষমেশ, সে বাধ্য হয়ে টস করল। টসে জিতে গেল লাড়া এবং তাকবীর। তবে রিচার্ড সেই খেলায় থেকেও ছিল, তার পুরো মনোযোগ ছিল এলিজাবেথের উপর। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এলিজাবেথের দিকে। চোখে পলকও ফেলতে ভুলে যায় গ্যাংটার বস।
‘ফলস্বরূপ, রিচার্ড এতো বড় একটি ডিল মিস করল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আজ হেরে যাওয়ার পরও রিচার্ডের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। যেন কিছুই হয়নি। সে শুধু চুপচাপ, নিজের মত মগ্ন ছিল। চেয়ে ছিল তার রেডের দিকে। মিটিং শেষে এনাউন্সমেন্ট করা হয়, সিলেট গ্র্যান্ড সুলতান রির্সোটে একটি বড় পার্টির মাধ্যমে ডিলটি লাড়া এবং তাকবীরের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
‘তাকবীর এলিজাবেথকে রিসেপশনের সামনে বসিয়ে একটু ভিতরে গিয়েছে, স্ট্রিফনের সাথে পার্টির ব্যাপারে কিছু কথা বলতে। মিটিং রুমের অদ্ভুত সব প্রজেক্ট দেখে এবং মনিটরের আলোতে মাথা ধরে গিয়েছে এলিজাবেথের। তর্জনী দিয়ে কপালের পাশ ঘষছিল,একটু স্বস্তির জন্য। ঠিক তখনই হঠাৎ করে লাড়ার আগমন ঘটল। হেলেদুলে এসে দাঁড়াল এলিজাবেথের সামনে। এলিজাবেথ মাথা তুলে লাড়াকে এক পলক দেখল, পরক্ষনেই দ্রুত মাথা নিচু করে ফেলল। এলিজাবেথের ভিতরের অনুভূতিতে অদ্ভুত একটা দ্বন্দ্ব, যা অযাচিতভাবে লাড়াকে পছন্দ করে না। একদমই করে না।
“হ্যালে মিসেস দেওয়ান।”
‘লাড়ার টিটকারিময় স্বরে এলিজাবেথ প্রত্যুত্তর করল না। লাড়া ঠোঁট কামড়ে হাসল এবং আবারো বলল,
“স্বামীর নামে ডাকলাম বলে বুঝি ভালো লাগল না? পরপুরুষকে খুব ভালো লাগে তাই না?”
‘ক্ষিপ্ত হয়ে মাথা তুলল এলিজাবেথ। গম্ভীর গলায় বলল,”মুখ সামলে কথা বলুন।”
‘লাড়া চোখ বড় বড় করে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলে, “আর না বললে?”
‘এলিজাবেথ উঠে দাঁড়াল এবং লাড়ার মুখোমুখি গিয়ে একদম। শক্ত গলায় বলল, “একদম মুখ ভেঙে দেব। আমাকে আর আমার ভালো মানুষকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে।”
‘লাড়া শব্দ করে হেসে উঠল, “আরে ভাই, তোমার ভালো মানুষকে নিয়ে আর কি বলবো? সে তো আস্ত বোকাচোখা।”
“আমি আপনাকে থামতে বললাম। আপনার মতো ফালতু মহিলার মুখে ওনার মতো মানুষের নাম মানায় না।”
“তা অবশ্য ঠিক বলেছ। মানায় শুধু তোমার মতো দুমুখোদের মুখে।”
“কি বুঝাচ্ছেন আপনি?”
“বুঝাতে চাচ্ছি, তুমি একটা চরিত্রহীন, নষ্ট মেয়ে।”
‘লাড়ার কথা শেষ হবার সাথে সাথে এলিজাবেথ রেগে গিয়ে লাড়ার চুল টেনে ধরলো। হোটেলের স্টাফরা সবাই অবাক হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে। লাড়া, সেও কম না, তেড়ে এলিজাবেথের চুল টেনে ধরল। মুহূর্তের মধ্যে লেগে গেল গন্ডগোল।
‘এদিকে, রিচার্ড ন্যাসোর সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছিল। কিন্তু সামনের এই অপ্রীতিকর দৃশ্য দেখে দুজনেরই পা থমকে গেল। ন্যাসো, এলিজাবেথকে এইভাবে দেখে ওর চোয়াল ফাঁক হয়ে যায়। সবসময় সব ধরনের পরিস্থিতিতে শান্ত এবং স্বাভাবিক থাকা ন্যাসোও আজ অপ্রস্তুত। তবে রিচার্ডের অভিব্যক্তি ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে দেখছিল এলিজাবেথ ও লাড়ার মধ্যে মারামারি।
‘এলিজাবেথের শক্তি লাড়ার কাছে নস্যি, লাড়াই এগিয়ে ছিল। রিচার্ড যখন দেখল এলিজাবেথ আর নিজের প্রতিরক্ষা করতে পারছে না, তখন সে বিরক্তের ফোঁস নিশ্বাস ছেড়ে লম্বা কদমে সামনে এগিয়ে গেল। এলিজাবেথের চুল থেকে লাড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল। দু’জনের চুলের অবস্থায় ই পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে এতোক্ষণে। রিচার্ড চোখ গরম করে লাড়ার দিকে তাকিয়ে এলিজাবেথের দিকে এগিয়ে গেল, ওর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য। তবে এলিজাবেথের শরীর থেকে তেজ তখনো পুরোপুরি যায়নি। রিচার্ডকে বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দিল।
“কি হচ্ছে এখানে?”
‘তাকবীর দূর থেকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় শব্দ তুলল। কিন্ত নজর যখন এলিজাবেথের উপর গেল, তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে এলো এলিজাবেথের কাছে। আশপাশে চোখ বুলালে মুহূর্তেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে। তাকবীর শক্ত করে এলিজাবেথের হাত চেপে ধরল। অতঃপর লাড়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে হনহন করে চলে গেল এলিজাবেথকে নিয়ে।
এখানে থাকলে ঝামেলা আরো বাড়বে তাকবীর সেটা জানে। ইতিমধ্যে তাকবীরের লাড়া সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা হয়ে গিয়েছে। লাড়া খুবই ডেয়ারিং আর ডেঞ্জারাস একটা মেয়ে। আর রিচার্ড যেখানে, সেখানে সময় নষ্ট করার তো কোনো মানেই হয় না।
‘তাকবীর ওরা চলে যেতেই লাড়া ঢুলতে ঢুলতে রিচার্ডের কাছে গেল। “রিদ বেবি,” বলে মাথা ঘুরানোর ভান ধরে রিচার্ডের বুকের উপর শরীর ছেড়ে দিল। তবে রিচার্ড তার আগেই সরে যায়, আর লাড়া পড়ল নিচে। ন্যাসো আজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, ফিক করে হেসে দিল লাড়ার পড়া দেখে। এবার সত্যি সত্যিই মাথা ঘুরে যাবে যেনো লাড়ার। কোমরে খুব ব্যাথা লেগেছে, টনটন করছে ব্যাথায়। তবে চারপাশে চোখ বুলাতেই, সেই ব্যথা সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেল। সকলের তার দিকে চেয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে।
‘লাড়া উঠে দাঁড়াল, নির্লজ্জের মতো আবারো রিচার্ডের কাছে এগিয়ে গেল। রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,”রিদ, তুমি চাইলে আমি এই ডিলটা তোমাকে দিয়ে দিব, বেবি।”
‘রিচার্ড বাঁকা হেসে লাড়ার পাশে থুতু ফেলল। দু’কদম এগিয়ে গিয়ে রুষ্ট কণ্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“রিচার্ড কায়নাতের এতোটা খারাপ সময় আসেনি, যে শালিদের কাছে সাহায্য নিতে হবে। ওর থেকে দূরে থাকবি, অকালে মরতে না চাইলে।”
‘আমাদের সোনার বাংলা, ধন্য তুমি,
ধন্য তোমার ট্রাফিক সিস্টেম।
পথে থাকতে চাই না এক মিনিট,
তবে রেখে দেয় বারো শো মিনিট।
রোদের তাপে, মরে যাবো গরমে,
একি রোদ, নাকি প্রেমিকার ছেঁকা?
শরীরে লাগলেই করে খাঁ খাঁ,,,
আমার সোনার বাংলা, তোমার
গরম আমি নিতে পারি না।
‘একই জায়গায় পঁচিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিচার্ডের গাড়িটা। বিরক্তে রিচার্ডের কপালের ভাঁজ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সামনে থেকে একটা গাড়িও নড়ছেও না। না আগাচ্ছে, না পিচাচ্ছে। এবার হয়তো অন্তিম সময়, গ্যাংস্টার বসের ফায়ার হওয়া। আইটাঁয় করতে করতে হঠাৎ রিচার্ডের চোখ গেল একটা শোরুমে। কাচের গ্লাস গলিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা সাদা-কালো সংমিশ্রণের গ্রাউন। হঠাৎ করেই রিচার্ডের দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল জামাটার উপর। ঘাড় ঘুড়িয়ে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকল ড্রেসটা।
‘এরই মাঝে দীর্ঘ সময় পর জ্যামের সমাপ্তি ঘটল। গাড়ি ছুটে গেল বাগান বাড়ির উদ্দেশ্যে। রিচার্ডের মনেও কিছুটা শিথিলতা এলো। তবে ভেতরে কোথাও এক চাপ অব্যাহত রয়ে গেল।
‘পৃথিবীর সবচেয়ে আজব প্রাণী হলো গ্যাংস্টার বস রিচার্ড কায়নাত। যে সময়ের ব্যাপারে খুবই কড়া, কিন্তু অন্যদের সময়ের প্রতি তার কোনো মূল্য নেই। যেমন এখন, রাত তিনটা। এই মধ্যরাতে সবাইকে জরুরি তোলবে ডেকে আনল লিভিং রুমে। এমনকি ইবরাতকেও। ইবরাত হাই তুলতে তুলতে এসে রিচার্ডের পেছনে দাঁড়াল। ওর এক হাত ন্যাসোর হাতের বাঁধনে। ইবরাত এখন রিচার্ডকে খুব ভয় পায়। আগেও অবশ্য ভয় পেত। কিন্তু ন্যাসোর কাছ থেকে রিচার্ডের নামে ভয়ংকর সব কথা শুনে শুনে এখন রিচার্ডকে জমের মতো ভয় পায়। যদিও রিচার্ডের সামনে তার একদমই পড়া হয় না।
‘রিচার্ডের মুখ থেকে প্রথমবার নিজের নাম শুনে ইবরাত আরও চমকে উঠল ইবরাত। ঠান্ডা গলায় ডাক দিল রিচার্ড,”ইবরাত।”
‘ইবরাত ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল,”জি ভাইয়া।”
‘রিচার্ড হালকা ভ্রু তুলে বলল, “তোমাদের বিয়ের তো অনেকদিন হলো। হানিমুনে যাবে না?”
‘মাঝ রাতে রিচার্ডের মুখ থেকে এহেন কথা শুনে লুকাস ধরেই নিল, রিচার্ড হয়তো নেশা চেপে গেছে। ইবরাত অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকাল ন্যাসোর দিকে। ন্যাসো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রিচার্ডের দিকে। ইবরাত শুষ্ক কণ্ঠে বলল,
“আসলে…”
‘রিচার্ড ইবরাত কে থামিয়ে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“কালকে তোমরা হানিমুনে যাবে। যাও, গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নাও। সকালে আমাদের ফ্লাইট।”
‘অষ্টাদশীর মন,চঞ্চল, ছটফটে, উড়ন্ত। রিচার্ডের মুখে এই কথা শুনে ইবরাত যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফাতে লাফাতে রুমের দিকে দৌড় দিল।
‘ন্যাসো অবাক হয়ে রিচার্ডের দিকে চেয়ে বলল,
“আমরা?”
‘রিচার্ডের ঠান্ডা গলা,”হ্যাঁ, আমিও হানিমুনে যাচ্ছি।”
‘পাশ থেকে লুকাস মুচকি হেসে বলল,”কোথায়? কার বউ নিয়ে?”
‘রিচার্ড সঙ্গে সঙ্গে রিমোট ছুঁড়ে মারল লুকাসের গোপন জায়গায়। লুকাস সেখানে চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ল। ন্যাসো গম্ভীর ভঙ্গিতে এসে রিচার্ডের পাশে বসল,বলল,”সবই তো বুঝলাম, কিন্তু যাচ্ছি কোথায়?”
“সিলেট, গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে।”
‘ন্যাসোর তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক দ্রুতই পুরো পরিস্থিতির পাজলটা খুব সহজেই জুড়ে ফেলল। রিচার্ডের আচরণ, গন্তব্যের হঠাৎ পরিবর্তন, আর গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট যাবার পেছনে থাকা উদ্দেশ্য–সবই ওর মাথায় স্পষ্ট হয়ে উঠল। লুকাস যদিও এসব বিষয়ে কিছুই জানে না। তাই তার মধ্যে কোনো উদ্বেগও নেই। বরং সে কৌতুকমাখা মুখে রিচার্ডের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে উপভোগ করছে আর নিজের স্পর্শকাতর জায়গায় চেপে ধরে বসে চুপচাপ দেখছে। ন্যাসো গভীরভাবে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিন্তু বস, আমরা তো সেখানে ইনভাইটেড না। আর ইনভাইটেশন ছাড়া যাওয়া আপনার ক্লাসের সাথে যাই না বস।”
‘রিচার্ড তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “মালিকের নিমন্ত্রণ লাগে না ন্যাসো।”
‘ন্যাসোর চোখ বড় বড় হয়ে গেল, “মালিক? আপনি কি রিসোর্টটা কিনে নিতে চাচ্ছেন শুধুমাত্র সেই পার্টিতে যাওয়ার জন্য ?”
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩২ (২)
‘রিচার্ড হালকা হাসি দিয়ে বলল, “আই অ্যাম অলরেডি দ্য ওনার অফ গ্র্যান্ড সুলতান।”
‘ন্যাসো হতভম্ব, “এত বড় একটা রিসোর্ট একদিনে কিভাবে কেনা যায়?”
রিচার্ড আরাম করে কাইচে গা এগিয়ে অধর এলিয়ে হেসে বলল, “মানি ক্যান বাই এভরিথিং, ন্যাসো।”
‘অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল রিচার্ড । লুকাস এক কোণে মুখ গোমড়া করে বসে আছে, আর ন্যাসো তাকিয়ে আছে অবিশ্বাসে।