ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৪৪
মিথুবুড়ি
‘তাকবীর কেবিনে ঢুকতেই দেখল এলিজাবেথ নিশ্চুপ বসে আছে। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ, দৃষ্টি ফাঁকা। লাল ঘন রেশমি চুল এলোমেলো, তবু তাতে একটা সাজানো সৌন্দর্য লেগে আছে। আঁকাবাকা করে বিনুনি করা৷ তাকবীর গলা খাঁকারি দিয়ে ভিতরে গেল।
“ফিলিং বেটার?”
‘এলিজাবেথ নিঃশব্দে মাথা নাড়াল। কোনো অভিব্যক্তি নেই মুখে। তাকবীর হেসে মিষ্টির প্যাকেট স্ট্রেচারের পাশে রাখল, তারপর একটা মিষ্টি তুলে ধরল ওর সামনে।
“হা কর।”
‘এলিজাবেথ অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই দেরি না করে তাকবীর মিষ্টিটা সরাসরি ওর মুখে পুরে দিল। এরপর নিজেও একটা মুখে দিয়ে নিল৷ টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল,
“এমন চুপচাপ কেন? খাও! কতো খুশির দিন আজ!”
‘এলিজাবেথের গা গুলিয়ে উঠে৷ তবু কষ্ট করে মিষ্টিটা গিলে নিল। কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ তাকবীরের পাঞ্জাবির দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল।
“আপনার পাঞ্জাবিতে রক্ত আসলো কোথা থেকে?”
‘তাকবীর শুষ্ক ঢোক গিলে দ্রুত হাসল৷ এক গাল হেসে গলা গভীর করে বলল,
“আরে আর বলো না! আসার পথে একটা বাচ্চা হুট করে গাড়ির সামনে পড়ে গেল। বেশ কয়েক জায়গায় কেটে গিয়েছিল ওর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ই হয়তো লেগে গিয়েছে।”
‘এলিজাবেথ চোখ সরু করল। ওর দৃষ্টিতে স্পষ্ট সন্দেহ— কথাটা সে বিশ্বাস করেনি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল,
“আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘তাকবীর গভীর শ্বাস নিল। কয়েক সেকেন্ড বাদে শান্ত কণ্ঠে বলল,”পদত্যাগপত্র জমা দিতে।”
‘এলিজাবেথ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মাথা নুইয়ে ফেলল।
“আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”
‘তাকবীর শুনল না। তার হাবভাবে স্পষ্ট ব্যস্ততা। যেন সময় নেই একদমই। এলিজাবেথকে তাড়া দিয়ে বলল,
“সব কথা পরে শোনা হবে। তুমি রেডি হয়ে নাও। তোমার চাচা আসছে তোমাকে নিতে। কাল থানায় যাওয়ার আগে আমি দেখা করে যাবো। কেমন? এর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে জানিও।”
‘এক শ্বাসে বলে, দেরি না করে দ্রুত বেরিয়ে গেল তাকবীর। এলিজাবেথ বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল দরজার দিকে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ কিসের এতো ব্যস্ততা?
‘বিকেল গড়িয়ে গেলেও সূর্যের উত্তাপ কমেনি একটুও। চারপাশ জ্বলছে আগুনের মতো, তার ওপর যদি হয় বেলা ফুরোনো যানজট, তবে তো দুর্ভোগের শেষ নেই। লাড়া একটু বাইক নিয়ে বের হয়েছিল। কিন্তু মালিবাগ পৌঁছাতেই আটকে গেল গলদঘর্ম শহরের থমকে থাকা স্রোতে। সামনে সম্ভবত কোনো ঝামেলা বেধেছে। পুলিশের কড়া নজরদারি চলছে, কয়েকজনকে আটকেও রাখা হয়েছে।
‘গরমে অতিষ্ঠ লাড়া ক্লান্ত হাতে চুল ছেড়ে দিয়ে গভীর শ্বাস নিল। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে লাড়ার শরীর এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি, ঘামে ভিজে যাচ্ছে একেবারে। হঠাৎ চোখ আটকাল সামনে। প্রেম বাইক থেকে নেমে কনস্টেবলদের সঙ্গে কথা বলছে। এক মুহূর্তে লাড়ার ভেতরটা কেঁপে উঠল। অদ্ভুত এক শীতল স্রোত বয়ে গেল তলপেটে। যেন পুরোনো স্মৃতির এক ঝলক ছুঁয়ে গেল ওর মাঝে। আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে দ্রুত বাইক ঘুরিয়ে রাস্তার অন্যপাশে চলে গেল লাড়া। যেন প্রেমের চোখে না পড়ে, এড়িয়ে যেতে পারে প্রেমকে।
‘লাড়ার চোখ না চাইতেও বারবার দূরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেমের ওপর চলে যাচ্ছে। প্রতিবারই চাইলেই হোক বা না হোক মনে ঝলসে উঠছে পাহাড়ের সে অবাঞ্ছিত, অপ্রত্যাশিত কিছু মুহূর্ত। স্মৃতির সেই তীক্ষ্ণ ফলা বুকের ভেতর এখনও বিঁধছে আর নিজের উপরই রাগে দগদগে হয়ে উঠছে লাড়া। কেন এখনো এসব মনে পড়ছে? কেন এখনো ওই এক মুহূর্তের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে লাড়া?
_ফ্লাসব্যাক_
‘প্রেম আর লাড়া দুজনেই এক কোয়ালিটির৷ একদম বদ। নরম মুহূর্তের পেছনে ধাওয়া করলেও শেষমেশ নিজেদের বুনো প্রকৃতিটাই জিতে যায়। সেদিন পাহাড়ের চূড়ায় বসে দুজন কিছুক্ষণ দুঃখ বিলাস করে, শেষে দুঃখ বিদায়ের উল্লাসে মাতাল হয়ে উঠেছিল একসঙ্গে। প্রেম কোনোভাবে কয়েকটা ওয়াইনের বোতল জোগাড় করেছিল। প্রথমে ছোট ছোট চুমুক, তারপর কাঁচের বোতল একসময় ঠোঁটের গর্তে নেমে গেল একেবারে। মধ্যরাত গড়িয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণও গলে পড়ল আঙুলের ফাঁক দিয়ে। দুজনেই ছিটকে গেল সংযমের সীমানার বাইরে। লাড়া ঢলতে ঢলতে প্রেমের কাঁধে মাথা ফেলে দেয়। শরীরটা বেশ ভারী হয়ে এসেছে। প্রেমের গলা শুকিয়ে আসে। ধীরে ধীরে তৃষ্ণার্ত হয় আরেকরকম উত্তাপে।
“লাড়া ক্যান আই কিস ইউ?”
‘লাড়া চোখ খুলে তাকাল প্রেমের দিকে। পরক্ষণেই নত দৃষ্টি নিবিষ্ট করল তৎক্ষনাৎ। নত দৃষ্টির নীরব সম্মতিতে ঠৌঁট কামড়ে হাসল প্রেম। পরক্ষণেই চোখে জ্বলে উঠে অন্ধকার ক্ষুধা। তবে সেটা মোটেও ভালোবাসা নয়, ছিল শুধু দখলের নেশা। প্রেম ঠোঁট কামড়ে তুলে আনল এক বিকৃত হাসি৷ এক পলকের মধ্যে লাড়াকে উপুড় করে ছুঁড়ে ফেলল তুষে ভেজা ঘাসে। এ গ্রাস হয়ে নেতিয়ে পড়েছে শরীর। পাহাড়ের নিচে আসা বন্য শেয়ালের হাহাকার ডাকের সাথে প্রতিধ্বনি দিল তাদের ঘন নিঃশ্বাসের ঝাপটা। উন্মত্ত নেশা ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে৷ কোনো মদ বা কোনো বিষ ও এতটা গভীর হতে পারে না।
“এই আপনার হেলমেট কোথায়?”
‘কনস্টেবলের কথা শুনে ভাবনার ধারা ছিন্ন হয়ে গেল। লাড়া মোটেও কারোর কড়া কথা শোনে অভ্যস্ত নয়। কাঠকঠিন গলায় বলল,
“হেলমেট আনতে ভুলে গেছি। এখন কী? কত টাকা দিতে হবে সরাসরি বলে কিস্সা খতম করুন৷ সময় নেই।”
“ইয়ে মানে! আপনাকে দেখে তো বড় লোক মনে হচ্ছে, পাঁচ…”
“টাকা লাগবে না, আপনার মন লাগবে ম্যাম। সেটা দিলেই সারাজীবন হেলমেট-লাইসেন্স ছাড়া বাইক চালাতে পারবেন।”
‘পিছন থেকে এক পরিচিত স্বর ভেসে এল। কনস্টেবল ভয়ে শিউরে উঠে। লাড়া চিবুক শক্ত করে নেয়। প্রেমের ইশারায় কনস্টেবল স্থান ত্যাগ করল সঙ্গে সঙ্গে।
“শালা, রাস্তাঘাটেও তোর বাঁদরামি?”
‘প্রেম হেসে লাড়ার বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
“উপপপসস বেবি, কুল ডাউন। বাঁদরামি তো রাস্তাঘাটেই করতে হয়। প্রাইভেট জায়গায় গেলে তো না জানি আবার কি থেকে কি হয়ে যায়,,
‘লাড়া শক্ত চোখে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“কি থেকে কি, হুঁ? সজ্ঞানে থাকলে তোকে কাছে আসতে দেওয়া তো দূর, আমার তৃ-সীমানায়ও আসতে দিতাম না।”
‘প্রেম চাপা হেসে বাচ্চাদের মতো ঠৌঁট উল্টে বলল,
“কথায় আছে না—খাওয়া শেষ, খোদা হাফেজ, সোনার বাংলাদেশ। তোমরা মেয়ে জাতও ঠিক তেমনই।”
‘লাড়া একপাশে মাথা কাত করে ম্লান হেসে বলল,
“এই তো বেটা লাইনে এসেছিস। তবে কি জানিস? খাবার যদি মজা হয় তাহলে পেটে ঢুকে গেলেও মুখে স্বাদ থেকে থাকে কিছুক্ষণ। আফসোস, তোকে এখন আমার দেখতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। দেখলেই বারবার মনে পড়ে—’এক্সপেকটেশন ভার্সেস রিয়ালিটি’ কথাটা।
‘প্রেম বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে রইল, “মানে?”
“মানে এইটুকুই।” লাড়া গা ঝাঁকিয়ে হেসে সরাসরি আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল।
‘ইজ্জতে লাগলেও দমল না প্রেম। বরং উল্টে লাড়াকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল, “তাহলে কান্না করেছিলে কেন?”
‘আবারও মেজাজ চটে গেল লাড়ার।
“সালা অসভ্য! তোকে কে সরকারি চাকরি দিয়েছে রে? নষ্ট পুরুষ! রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করছিস!”
‘প্রেম আশপাশ তাকিয়ে এক গাল হেসে লাড়ার দিকে ঝুঁকে বলল,”আর তুমি আমার নষ্ট হওয়ার মূলমন্ত্র।”
‘জ্যাম ছেড়ে দিল, গাড়ি ছুটতে শুরু করে। লাড়া প্রেমের হাঁটু বরাবর পা দিয়ে এক লাথি মেরে সামনে এগিয়ে গেল। চিরচেনা চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছিল সে। তবে আপদ কি এত সহজে পিছু হটে? আবারও তেড়ে এল প্রেমের কণ্ঠস্বর,
“লাড়া জান্স, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি একা কিভাবে থাকব?”
‘লাড়া প্রেমের দিকে তাকাল। ওর বাইকের সমান তালে চলছে প্রেমের বাইক। চাপা গলায় বলল,
“তুমি তো একা না, বেবি। দুই কাঁধের দু’টো ফেরেশতা, সাথে আরেকটা শয়তান আর তুমি মিলিয়ে তোমরা চারজন তো আছোই। এবার সুন্দর করে সংসার কর। আমার পিছু ছাড় ভাই। দয়াকরে।”
‘ঠোঁট কামড়ে হাসল প্রেম। লাড়া স্পিড বাড়িয়ে ওকে ছাড়িয়ে গেল। প্রেমও স্পিড মিটারে কাঁপন ধরাল। জ্যাকেটের ভিতর থেকে একটা আংটির বক্স বের করল। এক হাত গিয়ারে চেপে ধরে অপর হাতে আংটির বক্সটা খুলে লাড়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে গলা ছেড়ে বলতে থাকে,
“লাড়া জান্স, প্লিজ মেরি মি। তুমি বসতে বললে বসব, দাঁড়াতে বললে দাঁড়াব, শুতে বললে তোমাকে নিয়ে শুয়ে পড়ব। মাঝরাতে বাইক রাইডে বের হব, রান্না করে খাওয়াবো—যা বলবে তাই করব, শুধু রোমান্সের মাঝে থামতে বলা ছাড়া।”
‘লাড়া বিরক্ত হয়ে প্রেমের দিকে তাকাল। আংটির দিকে না তাকিয়েই তুচ্ছ করে বলল,
“তোকে বলা লাগে না।”
‘ভরকে গেল প্রেম,”বেবি, এটা কিন্তু পার্সোনাল অ্যাটাক হয়ে গেল!”
‘লাড়া হেসে উঠল,”হাহাহা, এটাই বাস্তবতা। আই হেইট ইউ।”
‘প্রেম আরও গতি বাড়িয়ে লাড়ার সমান তালে ছুটে যাচ্ছে। পিছন থেকে গলা ফাটিয়ে বলছে,
“জান, প্লিজ ছেড়ে যেও না! দরকার হলে আমি ইন্ডিয়া হারবালের শরণাপন্ন হবো, থাইল্যান্ড থেকে অপারেশন করিয়ে আনব! চাকরি থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে শুধু প্র্যাক্টিস ই করব! তাও প্লিজ, এভাবে কাদা ছুঁড়ো না! জনগণ জানলে মুখ দেখাতে পারব না!”
‘লাড়া একই তালে সামনে ছুটতে ছুটতে গলা ছেড়ে বলে,
“জনগণ জানলেও কিছু হবে না! যে-ই হালত দেখলাম, টুনটুনি চোর দেখলেও তোরটা নিবে না! মায়া করে রেখে যাবে!”
‘মুহূর্তের মধ্যে লাড়া ব্লু বাইকটা ভিড়ে মিলিয়ে গেল। প্রেম ওখানেই স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একবার নিচের দিকে তাকায়, তো একবার আকাশের দিকে। তার তো নিজের ওপর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস! খুবই কনফিডেন্ট। তবে… সমস্যাটা আসলে কার?
‘আজ বহু দিন পর বাগানবাড়িতে পা রাখল রিচার্ড। গাড়ি থেকে নেমেই সরাসরি চলে গেল বেজমেন্টের পেছনে সেই অভিশপ্ত জায়গায়, যেখানে তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হককে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল। আজ আবার নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে সেখানে। পাশে পড়ে আছে একটি বাঁধা বস্তা, ভেতরে ছটফট করছে কেউ। নিশ্ছিদ্র নীরবতা ছড়িয়ে আছে চারপাশে। শুধু কোদাল আর হাতুড়ির ভারী শব্দ, আর বস্তার ভেতর থেকে ভেসে আসা দমচাপা গোঙানি ভেদ করে যাচ্ছে ঘন গুমোট বাতাসকে।
‘তিন হাত গর্ত সম্পূর্ণ হতেই রিচার্ডের ইশারায় বস্তাবন্দী লোকটাকে ঠেলে ফেলা হলো সেই অন্ধকার কবরে। মাটি চাপা পড়তে না পড়তেই তার গোঙানি স্তব্ধ হয়ে গেল। আরেকটি প্রাণ নির্বাক হয়ে বিলীন হলো ধুলোয়। রিচার্ড নিস্পৃহ দৃষ্টিতে পুরোটা দেখল। ঠোঁটের কোণে ধরা সিগারেট শেষ হলে অবশিষ্ট অংশ কবরের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বেজমেন্টের দিকে হাঁটা দিল। এটাই সেই লোক, যে সেদিন সেন্টমার্টিনে এলিজাবেথকে অকথ্য কথা বলেছিল। রিচার্ড সেদিন মেরে আধমরা করে ফেললেও প্রাণ নিতে পারেনি এলিজাবেথের জন্য। কিন্তু আজ… আজ আর কোনো ছাড় নেই।
‘ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা বেজমেন্টের গোল খাঁচার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা লাইটের লালচে আলোর নিচে কাদেরের ছেলে, কায়েস সরকার কে হাত-পা শক্ত শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। ধাতব টেবিলে লুকাস ভারী অস্ত্রের বাক্স একে একে এনে ফেলছে আর ন্যাসো ঠান্ডা হাতে বাক্স গুলো থেকে রিচার্ডের পছন্দের অস্ত্রগুলো একে একে টেবিলে রাখছে—ধারা’লো ব্লে’ড, শি’কল, লো’হার হা’তুড়ি। রিচার্ড ধীরে ধীরে গায়ের সব পোশাক খুলতে লাগল। আজ শিকারের সামনে তার রক্তপিপাসু রূপ উদঘাটিত হতে চলেছে। রিচার্ডের শরীরের উপরের অংশে আর একটা সুতোও থাকল না। শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত।
‘ফলস্বরূপ প্রতীয়মান হয় সুদৃঢ় পেশি টানটান হয়ে শক্তির এক জীবন্ত ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে আছে। খাঁচার ভিতর থেকে আসা লালচে আলো ওর গায়ের ওপর পড়ে এমনভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে যেন ও নিজেই এক দানবীয় সূর্যের শিখা হয়ে উঠেছে। কায়েসের ভয়াল চোখের প্রকম্পিত পাপড়ি জোড়ার দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোণে বিকৃত হাসি ঝুলিয়ে সামনে এগিয়ে গেল রিচার্ড চোখের গভীরে নির্মম উন্মাদনা সমেত। কায়েসের আতঙ্কিত চোখ রিচার্ডের ভয়ংকর সৌন্দর্যের দিকে স্থির হয়ে আছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জ্বলন্ত বিভীষিকা দেখে।
“অনেক সময় বাবা-মায়ের পাপের মাসুল সন্তানকে দিতে হয়। এই যেমন ধর, তুই আর আমি—দুইটা অভিশপ্ত উত্তরাধিকার!”
‘নিরেট, বরফঠান্ডা গলায় বলে রিচার্ড কায়েসের ঠোঁটের মাংস বিদীর্ণ করে ঢুকে থাকা স্টেপলারের পিনগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। কোনো কস্টেপ কিংবা কোনো দড়ির আঁটসাঁট শৃঙ্খল ছায়া শুধু হাড়গিলে ধাতব কাঁটার অংশ ঠোঁটের একেকটা তন্তুর মধ্যে গেঁথে পিন আপ রাখা হয়েছিল কায়েসের পুরো ঠৌঁট। রিচার্ডের আঙুলের ডগা ধীরে ধীরে পিনের মাথায় চেপে ধরে ধরে এক ধাক্কায় উল্টো টানে বের করতে থাকে পিন গুলো মাং’সে’র অন্তরাল থেকে। প্রত্যেকটা টানেই মাংস ফেটে পিনের সাথে উঠে আসে রক্তে ভেজা মাং’সের দলা। পিচ্ছিল লালস্রোত ছিটকে গিয়ে আঁচড়ে পড়ে রিচার্ডের সুবিস্তৃত,শক্তপোক্ত সুঠোম বুকে। রক্তের গরম ফোঁটাগুলো বাতাসে ঝরে পড়ে। কায়েসের দেহ ধাক্কায় ধাক্কায় কেঁপে উঠছে।
‘দম বন্ধ হয়ে আসে তবুও মুখ খুলে চিৎকার দেওয়ারও উপায় নেই। কারণ ঠোঁটের চামড়া ছিঁড়ে গেলে সেটাও সম্ভব হবে না। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে অবশিষ্ট আর কোনে শক্তি নেই, শিথিল হয়ে আছে ধীরে ধীরে। এখনও অর্ধ ঠৌঁটে আচ্ছাদিত হয়ে আছে ধাতব ব্লেডের ন্যায় ধারালো তীরের ফলার মতো সরু অংশ। আক্রোশের সাথে টেনে খুবলে খুবলে বের করে আনার জন্য চামড়ার নিচে লুকিয়ে থাকা লাল, কাঁচা শি’রাগুলো প্রকাশ্যে চলে আসে, ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। থুতনির নিচ দিয়ে একেকটা গাঢ় লাল ফোঁটা মেঝেতে পড়ার আগে বাতাসে পাক খায়। চারপাশে র’ক্ত ঝড়ার ছপছপ শব্দ আর শ্বাসরুদ্ধকর গন্ধ। তাজা রক্তের উষ্ণতা ঠান্ডা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে রিচার্ডের চোখে হালকা উন্মাদনার ছায়া খেলে যায়। ন্যাসো, লুকাস নৈঃশব্দ্যে দেখে যাচ্ছে চক্ষুর সামনে হতে থাকা নৃশংস অপ্রীতিকর দৃশ্য নির্বিঘ্নে।
‘চেঁচাতে পারে না কায়েস। ওর শরীর শুধু গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে, থরথর করে কাঁপছে। রিচার্ড অতি সাবধান ও ধৈর্যের সহিত সকল পিন গুলো ঠৌঁট থেকে বের করল৷ অতঃপর উঠে সোজা হয়ে দু’পাশে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। কায়েসের ঠৌঁটের অগ্রভাগে খোদাইকৃত পিনের ছোট ছোট গর্ত থেকে ঝরনার প্রবাতের মতো অঝোরে গাঢ় খয়েরী রঙের তরল ঝরছে। রিচার্ড শরীর টানা দিয়ে আবারও ঝুঁকল চাপা গলায় ফিসফিসে আর্তি করতে থাকা কায়েসের উপর। অসহায়ের মতো গোঙানির শব্দ করছে কায়েস।
“ছেড়ে দিন আমাকে।”
‘চমৎকার হাসি দিল রিচার্ড। সেই হাসিতে ছিল পৈশাচিক উৎফুল্লতা। রিচার্ডের চোখে প্রতিহিংসার দাবানল, শুধু বিস্ফোরণের অপেক্ষা। ছিন্নভিন্ন ধ্বংসস্পৃহা গ্রাস করে নিয়েছে ওর ভিতরের নরখাদক কে। অবিশ্রান্ত প্রতিশোধস্পৃহা মূলক প্রথম থাবা পড়ল চোয়ালে৷ আততায়ী পরিকল্পনা অনুযায়ী তীব্র চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কায়েসের চোয়াল ফাঁক করে মুঠো জিভ টেনে ধরল রিচার্ড। রণক্ষেত্রের গর্জনে কেঁপে উঠল তমসাচ্ছন্ন বেজমেন্ট।
“আমি নিজের হাতে খেতে পারতাম না। বাইশ বছর ধরে আমাকে কেউ খাইয়ে দেয় না। আমি কেবল শূন্যতা গিলি, পেট ভরে না আমার।”
‘গর্জনের সাথে সাথে প্রবল প্রতিঘাতের মাধ্যমে তীব্র টানে ছিঁ’ড়ে নিয়ে আসল কায়েসের জি’হ্বা। রক্তের ঝাপটা গিয়ে ছিটকে পড়ল রিচার্ডের বুকে। আকাশ কাঁপানো নরকযন্ত্রণা দায়ক আর্তনাদে ফেটে পড়ল কায়েস। মুখগহ্বরের অন্তরালে স্থিত থাকা আল্লাহ জিহ্বা এসে পড়ে রিচার্ডের বেল্টে৷ হাত-পা ছুঁড়ো ছুঁড়ি করে গোঙ্গাতে থাকে কায়েস৷ ছাদ থেকে ভরা বালতি উল্টো করে ঢেলে দিয়ে যেভাবে পানি পড়ে,সেভাবে র’ক্ত প্রবাহিত হচ্ছে কায়েসের মুখগহ্বর থেকে। সেই সাথে রিচার্ডের বুক থেকে ফিনকি দিয়ে ছিটকে আসা রক্তগঙ্গার স্রোত ঢাল বেয়ে নামছে নিচে। লুকাস, আর ন্যাসো স্তম্ভির দাড়িয়ে,শূন্যচোখে নিরীক্ষণ করছে সবটা।
‘হাত ছেড়ে র’ক্ত ফেলে দিয়ে রিচার্ড আবারও ঝুঁকল কায়েসের উপর। এতোক্ষণে কায়েসের চোখের সামনে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে। ওর শরীর আর নড়ছে না তেমন। ঠৌঁট গোল করে শিস বাজাতে শুরু করল রিচার্ড। আলগোছে হাত রাখল কায়েসের চোখে। এহেন শীতল স্পর্শে কায়েসের বুকের খাঁচায় বন্দি হৃদপিণ্ড যেন রক্তাভ দাবানলে জ্বলে উঠেছে বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা কোন অগ্নিবোমার মতো। শিরায় শিরায় ছুটে চলে প্রবল ভূমিকম্প। দেহের প্রতিটি কণা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবার প্রতীক্ষায় কাঁপছে, ফাটছে, বিদীর্ণ হচ্ছে!
“আমি আশীর্বাদ হয়ে নেমেছিলাম বাবা-মায়ের কোলে, আর এখন সমাজের চোখে আমি এক অভিশপ্ত দগদগে ক্ষত।”
‘এই বলে সর্দপনে বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে দিল চোখের ভিতর। কার্নিশ কোণ দিয়ে অশ্রুর পরিবর্তে এবার গলিত মনির কালো তরল চুইয়ে পড়তে থাকে। শ্বাসরুদ্ধকর ভীতিতে খেঁকিয়ে ওঠে কায়েস। খামচে ধরল ধীরে ধীরে চাপ বৃদ্ধি করতে থাকা রিচার্ডের হাতে। কায়েসের নখের আঁচড়ে চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার চিরচির শব্দ হয়। ফোঁটা, ফোঁটা র’ক্ত ঝরে পড়লেও গতি থামায় না। অর্ধ আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। অসাড় হয়ে আসল সমস্ত শরীর। শরীরে প্রাণ থাকলেও তা ছুটে পালাতে চাচ্ছে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তবে রিচার্ড তাও হতে দিচ্ছে না, তীলে তীলে নিঃশেষ করছে৷
‘চোখগহ্বরের ভিতর থেকে আঙুল বের করে নিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখে নিল রিচার্ড। অতঃপর হাতে তুলে নিল ধারালো একটা ব্লেড। এতোক্ষণে নিচে লুটিয়ে পড়েছে কায়েসের নিথর দেহ। নড়চে না তবে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। রিচার্ড হাঁটু গেঁড়ে বসল। মৃত্যুর পূর্বের কর্কশ নিঃশ্বাসের ইতি টানতে শুরু করল মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্প। ধারালো ব্লে’ড দিয়ে চোখ বুজে ফুসাতে থাকে মুখে। ব্লে’ডের নির্মম ফুৎ,ফুৎ শব্দ আর মাং’স ছিঁড়ে যাওয়ার করুণ শব্দ নিস্তব্ধতায় আঘাত হানে। ফলা ফলা হয়ে যায় কায়েসের সমস্ত মুখমন্ডল। মাটিতে রক্তের পিচ্ছিল গন্ধ। কণ্ঠচাপা গভীর ঘড়ঘড়ানি দিয়ে র’ক্তা’ক্ত শরীরটা তিন বার ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে গেল। আর্তনাদের চাপা বাতাসের সাথে বিলীন হয়ে গেল প্রাণ পাখি।
‘রিচার্ড হাত বাড়াতেই লুকাস ওর হাতে বড়সড় একটা চাপাতি গুঁজে দিল। রক্তের স্রোতে ওর নীল চোখজোড়া ডুবে গেছে আর কিছুই দেখা যায় না। চোখে শুধু খুনের পিপাসা। চুলগুলো চ্যাটচ্যাট করছে, ঘন জমাট বাঁধা রক্তে। রিচার্ড সোজা হয়ে দাঁড়াল। ন্যাসোকে এক চোখে ইশারা করতেই সে ট্যাব থেকে কায়েসের সমস্ত কূটনৈতিক কারসাজির ফিরিস্তি গড়গড় করে বলে যেতে লাগল।রক্তমাখা চাপাতিটা এক মুহূর্তের জন্য থামল না।
“প্রথম ধর্ষণ—বাসার কাজের মেয়ে। গর্ভে সন্তান এলে রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয়। মাস্টারমাইন্ড ছিল কাদের।”বাক্য শেষ হতেই প্রথম কোপ পড়ল হাঁটুতে, এক নিমিষে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
“দ্বিতীয় ধর্ষণ—ক্লাসফ্রেন্ড। পার্টির নেশার সুযোগ নিয়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল। মেয়েটির পরিবার জেনে গেলে রোড এক্সিডেন্ট সাজিয়ে সবাইকে শেষ করে ফেলা হয়।” দ্বিতীয় কোপ পড়ল কোমরে—অস্থি-মজ্জা ছিন্নভিন্ন!
“তৃতীয় ধর্ষণ—মালির মেয়ে। গরিব ছিল, তাই কেউ মুখ খোলেনি। শেষমেশ মেয়েটা আত্মহত্যা করে।” তৃতীয় কোপে গলা প্রায় ছিঁড়ে গেল, শরীর কাঁপিয়ে উঠে নিস্তেজ হয়ে গেল মাংসপিণ্ড।
“চতুর্থ ধর্ষণ—আপন খালাতো বোন। বিত্তশালী হলেও রেহাই পায়নি। বিয়ের প্রতিশ্রুতির নামে বেইমানি করেছিল।”শেষ কোপে মাথা দুভাগ হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল৷
‘হাঠের পিঠ দিয়ে চোখের র’ক্ত মুছে ন্যাসোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কড়া গলায় বলল,
“এবার ভিডিওটা কাদেরের কাছে পাঠিয়ে দাও। ছেলের জানাজা পড়তে নিশ্চয়ই দেশে আসবে। ছুটোছুটি করতে আর ইচ্ছে হচ্ছে না।”
‘আয়নার সামনে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এলিজাবেথ। কতক্ষণ হয়ে গেছে, জানে না। হাত নিশপিশ করছে, বারবার পেটে স্পর্শ করেও সরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিবারই সেই স্পর্শে ভেতরটা কেঁপে উঠছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এক শিহরণ ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি স্নায়ুতে। এ কেমন অনুভূতি? তার গর্ভে একটা প্রাণ? এক ক্ষুদ্র সত্তা, ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে তার মধ্যে?সে মা হবে। ছোট ছোট হাত তাকে জড়িয়ে ধরবে। কচি কণ্ঠে কেউ একদিন “মা” বলে ডাকবে। বুকের গভীরে এক স্রোতময় প্রশান্তির ঢেউ আছড়ে পড়ছে, ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওকে এক অনাবিষ্কৃত অনুভূতির জগতে। কাঁপা কাঁপা হাতে এলিজাবেথ পেটে স্পর্শ করল। সঙ্গে সঙ্গে কান্না ফেটে এল হুড়মুড়িয়ে, অসংযতভাবে। এটা খুশির কান্না। মাতৃত্ব কি এতটাই অপার? এতটাই স্নিগ্ধ? এতটাই গভীর?
‘এলিজাবেথ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। এবার আর হাত সরেনি পেট থেকে। শরীরে এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি, তবুও ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে যাচ্ছে। গলার কাছে যেন কেমন একটা দলা পাকিয়ে উঠছে। ফিসফিস করে বলল,
“সোনা তুই আসছিস? ঐ স্বার্থপর লোকটার অংশ তুই?
একটা গভীর শ্বাস নিল,”মায়ের কথায় কষ্ট পেও না, সোনা। তুমি পবিত্র, তুমি স্নিগ্ধ, অবৈধ নও তুমি… মায়ের মাথা ঠিক ছিল না।”
‘পেটে হাত রেখেই ধপ করে বসে পড়ল এলিজাবেথ। শ্বাস কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে।
‘একাই কথা বলতে লাগল, “তুমি মাম্মার আর পাপার জীবনের আলো হয়ে আসছো। তুমি তোমার পাপার খুব শখের… সেই শক্ত, কাঠিন্যময় মানুষটার চোখে তোমার জন্য যে অস্থিরতা, যে শিহরণ, আমি তা দেখেছি, অনুভব করেছি।”
‘রিচার্ডের কথা মনে হতেই বুক ভারি হয়ে উঠল এলিজাবেথের। গলার স্বর গাঢ় হয়ে এলো। এবার শুধু নিজের সন্তানকেই নয়, নিজেকেও বোঝাচ্ছে।
“তুমি কিন্তু প্রিন্সেস হয়ে আসবে, কেমন? পাপার প্রিন্সেস। আমার শক্তির দরকার, সোনা। তুমি মাম্মার শক্তি হয়ে এসো। আমাদের যে অনেক কাজ, পাপাকে ঠিক পথে আনতে হবে তো! আমরা একসাথে অনেক সুন্দর একটা পরিবার গড়ব, কেমন? জানি, একটু কষ্ট হবে… কিন্তু আমাদের পারতেই হবে।”
‘বুক ধড়ফড় করে উঠল, শ্বাস ভারী হয়ে এলিজাবেথ হাঁপিয়ে উঠল। তবু থামল না।
“মানুষটা হোক না খারাপ, তবুও তো সে আমাদের! জানি না তার অতীত কতটা কালো, কতটা ভয়ংকর… কিন্তু আমরা তো আলোর দুনিয়া থেকে এসেছি। শক্তিকে শক্তি দিয়ে হারানো যায় না, সোনা। যাদের কঠোরতায় বদলানো যায় না, তাদের কোমলতায় গ্রাস করতে হয়। আর সেই যুদ্ধ জিততে তোমাকে আমার খুব দরকার… মা একটা ভয়ংকর লড়াইয়ে নামতে চলেছে! তুমি জলদি আসো।”
‘থেমে,
“আমরা সারাক্ষণ পাপার কাঁধে উঠে বসে থাকব হুহ? পাপাকে কারোর সাথে মারামারি করতে দিবো না। পাপাকে কেউ মারতে আসলে ডিসুৃম-ডিসুম করে তার নাক ফাটিয়ে দিবো কেমন?”
‘অকস্মাৎ এলিজাবেথের চিবুক শক্ত হয়ে উঠল। রিচার্ডের বারবার “ছেলে চাই” বলার কথাগুলো ওর মাথায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
“তুমি মেয়ে, ওকে? পাপাকে এবার হারানোর সময় হয়ে গেছে! যদি পুত্র সন্তান এক বংশের প্রদীপ হয়, তাহলে কন্যা সন্তান দুই বংশের আলো!”
‘ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল এলিজাবেথ। ইকবাল সাহেব একটু আগে এসে দুধ দিয়ে গিয়েছিল। ও চুপচাপ খেয়ে খাটের কোণে গিয়ে বসে রইল, মনে হাজারো প্রশ্নের ঝড়। হঠাৎ হাত শক্ত করে পেট চেপে ধরল।
“উনি আমাদের আর কখনো ছেড়ে যাবেন না তো? প্রতিবারের মতো…?”
‘ভাবতেই বুক ভারি হয়ে এল। আর ভাবতে পারল না এলিজাবেথ। আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। কাল যে আরেকটা অগ্নিপরীক্ষা। কক্ষের আলো নিভে যেতেই জানালার বাইরে থেকে একটা ছায়া এসে মেঝেতে পড়ল।
“খোদার কসম কখনো ছেড়ে যাব না। ছেড়ে গেলে তো তুইই যাবি।”
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৪৩
‘রিচার্ডের ঠোঁটের ফাঁক গলে শব্দগুলো বেরিয়ে এল৷ শ্বাসের মতো গভীর, প্রতিজ্ঞার মতো দৃঢ়। বাগানবাড়ি থেকে সোজা বাবার কবরের কাছে গিয়েছিল রিচার্ড। সেখানে বসে অনেক কথা বলেছে গর্ব নিয়ে, বুক ফুলিয়ে বলে এসেছে,’সে দেখিয়ে দেবে কিভাবে সন্তান মানুষ করতে হয়! তবে রিচার্ডের বলা সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ছিল একটাই,
“মেয়ে হলেও খারাপ হবে না ব্যাপারটা… মানিয়ে নেব আমি। আমারই তো!”